[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১২

খোদার বরকত যাহাতে রয়েছে

খোদার বরকত যাহাতে রয়েছে
খোদার বরকত যাহাতে রয়েছে
নাই নাই শেষ তাহার নাই,
খোদার বরকতময় গুণগান
দিবানিশি গেয়ে যাই॥


লোকে ভাবে দিলে যাকাত
সম্পদ তার হবে নিপাত॥


এ যে ভুল ধারণা
লোকে বোঝে না ভাই॥


খোদার উপর ভরসা রেখে খাঁটি দিলে
কাজের শুরুতে যে বিসমিল্লাহ বলে॥
জানি খোদার অশেষ
বরকত-ই তো পাবে সেই॥


যে করবে দান খোদার পথে
খোদার দেয়া সম্পদ হতে॥
হবে না তার ভরা ডুবি,
আরো ভরবে গোলা ভাই॥

"তুমি বল" !! "না তুমি বল" !!

 

"তুমি বল" !! "না তুমি বল" !!

-এই কি করছ ?
-কিছু করছ না ।
-ডিস্টার্ব করলাম না তো?
- নাহ । সমস্যা নাই বল ।
তন্নী একটু চুপ করে থাকল । তারপর বলল
-বিকালে কি তুমি ফ্রী আছো ?
-কেন বল তো ?
আহা! প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন কর কেন ? বল না বিকালে তোমার কোন কাজ আছে কি না ?
আমি কিছুক্ষন ভাবলাম । তারপর বললাম
-নাহ । কোন কাজ নাই । বল কি বলবা ?
তন্নী বলল
-আজকে বিকালটা কি আমাকে দেওয়া যায় ?
-মানে ?
-মানে আমার সাথে বিকাল বেলা একটু দেখা করবা ?
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না তন্নী ঠিক কি বলতে চাইছে । বললাম
-দেখো সপিংটপিংয়ে যেতে পারবো না কিন্তু ।
-সপিংয়ে যেতে হবে না । তোমাকে ট্রিট দিবো ।
-খাওয়াবা ?
-হুম ।
-কোন স্পেশাল কারন ?
কারন তো আছে ।
-আমাকে একা খাওয়াবা ?
-হুম ।
আমি বললাম
-এই সুযোগতো আমি কখনও মিস করি না । বল কি খাওয়াবা ?
-তুমি যা খেতে চাও !
-দেখো কিন্তু ।
-আচ্ছা বাবা দেখবো ।
-ওকে দেন , সি ইউ এট ফাইফ পিএম ।
- সি ইউ । তন্নী ফোন রেখে দিল ।
ফোন রাখার পর মনে হল তন্নী হঠাত্ খাওয়াতে চাচ্ছে কেন ? অবশ্য তন্নী এমনিতেই প্রায়ই খাওয়ায় আমাদের । কিন্তু আজ আমাকে স্পেশাল ভাবে খাওয়াচ্ছে ।
আজ কেই বলবে নাকি ? কে জানে ?

তন্নী মেয়েটাকে আমি আগে মোটেই পছন্দ করতাম না । ওর পোষাক ওর কথা বার্তা ওর আচরন কোন কিছুই আমার ভাল লাগতো না । বড় লোকের মেয়েতো সব কাজে একটু বেশি বেশি । আর এতো ঢং , দেখলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যেত । তাই পারত পক্ষে আমি তন্নীকে এড়িয়ে চলতাম ।
তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে তন্নী দেখতে খুব সুন্দর ছিল । তাই আমাদের ক্লাসের ছেলেগুলা সব হ্যাংলার মত ওর আসেপাশে ঘুড়ঘুড় করতো । আমার বন্ধুরাও ছিল । অস্বীকার করবো না যে ওর চেহারা আমার ভাল লাগতো না । কিন্তু যখন ভার্সিটিতে আসতো এক বস্তা মেকআপ আর পারফিউন মেখে আসতো । আর কথা বলত এমন ঢং করে বিরক্তিতে মন ভরে উঠতো । তাই ওর আসেপাশে আমি ঘেসতাম না ।
কিন্তু ভাবতেও কত অবাক লাগে এই মেয়েটার সাথে এখন আমার কত ভাব । অবশ্য ওর সাথে মেলামেশাটা খুব বেশি দিনের নয় । কয়েক মাস আগে আমার ইউনিভার্সিটিতে রিসার্স মোথোডোলজি নিয়ে একটা ওয়ার্ক সপ হয়েছিল । কিছু ভলানটিয়ারের দরকার ছিল । তা কি মনে করে নাম লেখালাম । ওয়ার্কসপে এসে দেখি আমাদের ক্লাস থেকে পনের জনের মত ছেলে মেয়ে এসেছে । তাদের মধ্যে তন্নীও ছিল । ওকে দেখে একটু অবাকই হলাম । এই রকম কাজেও ওর ইন্টারেস্ট আছে ?
যাক ভাল । ওয়ার্কসপের সাতটা দিন কাটল বেশ ভালই । নতুন একটা অভিজ্ঞতা হল । হাসি তামাশা আড্ডাও হল খুব । এ কয়টা দিনে আমার কেন জানি মনে হল তন্নীকে আমি যেমনটা মনে করেছিলাম ও হয়তো তেমনটা না ।
কিন্তু তবুও ওর কাছ থেকে একটু দুরে দুরেই থাকলাম । বড় লোকের মেয়ে কখন কি মনে হয় বোঝা মুশকিল । কাছে না যাওয়াই ভাল । ওয়ার্কসপের শেষ দিনে আমরা সবাই মিলে আড্ডা মারছিলাম এমন সময় আড্ডার মাঝখানে তন্নী উঠে দাড়াল । সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
-এই কয়দিনে তোমাদের সাথে আমার দারুন সময় কেটেছে । কাল আমার জন্য একটা বিশেষ দিন । তোমাদের সবাইকে আমি দাওয়াত করলাম । তোমরা সবাই অবশ্য অবশ্যই আসবে ।
ঠিক হল পরদিন বিকালে সবাই স্টার কাবাবে মিলিত হবে । তন্নী সবাই খুব ভাল করে বলল আসার জন্য । আমাকেও বলল এবং বেশ আন্তরিক ভাবেই বলল ।
কিন্তু আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে যাবো না । আর আমার এ রকম পার্টিফার্টি ভাল লাগে না । কিন্তু ব্যপারটা যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ হল না । তন্নীর ফোন এল পরদিন দুপুর বেলা । রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে তন্নী বলল
-তুমি আসছো তো ? সবাইকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি । কেবল তুমি বাকি ছিলে । পাঁচ টার মধ্যে চলে এসো কেমন !
-ইয়ে মানে আমার হয়তো আশা হবে না ।
তন্নী কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম
-আসলে আমার একটা কাজবেঁধে গেছেতো ।
তন্নী বলল
-আমি জানতাম তুমি এমন কিছু একটা বলবে ?
আরো কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমাকে ?
-বল ।
-তুমি আমাকে পছন্দ কর না কেন বলতো ? শুধু এবার না আমি প্রত্যেক বার দেখেছি তুমি সব সময় আমাকে কেমন যেন একটা ইগনোর কর । কেন এমন টা কর ? আমার জানা মতে আমি কোন দিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি নি । তাহলে কেন এমনটা কর ?
একটানা কথা বলে তন্নী চুপ করলো । আসলে ও যা বলল তা মোটামুটি ঠিক । ওকে ইগনোর যে কেন করি তার কোন সুনির্দিষ্ট কারন আমার নিজেরও জানা নাই । তাহলে কেন করি ?
-আসলে আমি ....
-তোমাকে কোন কৈফত দিতে হবে না । কৈফত চাওয়ার অধিকার আমার নেই । কিন্তু এই আমি খুব আশা নিয়ে তোমাকে দাওয়াত করেছিল । আমার মনে হয়েছিল যে এবার হয়তো তুমি আসবে ।
তন্নীর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছিল যেন ও কাঁদছে । কিংবা এখনই কেঁদে ফেলবে । ও আর কথা বলল না । ফোন রেখে দিল ।
একটা অপরাধ বোধে সারাটা মন কেমন যেন বিষাদ হয়ে রইল । বারবার মনে হতে লাগল যে কিছু নিশ্চয় আমি ঠিক করছি না ।
পরদিন সকাল বেলা ভার্সিটি তে গিয়ে আর এক কাহিনী শুনলাম । কালকে তন্নীর জন্মদিন ছিল । আর কালকের পার্টি ও ক্যান্সেল করে দিয়েছে কেবল আমি যাই নি বলে ।
আমি বড় আশ্চর্য হলাম । এমনতো হবার কথা না । আর আমি এমন কোন ইম্পর্টেন্ট মানুষ না যে আমার না আশাতে পুরো পার্টি হবে না । তন্নীর এক বান্ধবীর কাছে সব কিছু জানতে পারলাম । আসলে আমি যে ওকে পছন্দ করি না এটা ওকে পীড়া দিচ্ছিল । ও কেবল জানতে চাচ্ছিল ঠিক কি কারনে আমি ওকে ইগনোর করি ! আমার কাছাকাছি আসার জন্যই কেবল ওয়ার্ক সপে গেছিল । ও কেবল বোঝাতে চেয়েছিল যে সে খারাপ কেউ না । সবাই যেমন ওর সাথে মেশে আমি কেন তার সাথে মিশি না ।
ওর বান্ধবী আরো বলল যে ও কাল আসলেই অনেক কষ্ট পেয়েছে । কথা গুলো জানার পর আমার আসলেই খারাপ লাগতে লাগল । আসলেই মেয়েটার সাথে একটু অন্য রকম আচরন করা হয়ে গেছে । এখন এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যে ওকে সরি বলা ।
খুজে বের করলাম ও কোথায় আছে । চার তলায় ক্লাস রুমের বাইরে ও বসে ছিল । আমি যেতেই আমার দিকে একটু তাকাল । ওর চোখ গুলো কেমন ফোলা ফোলা লাগল আমার কাছে । নিশ্চই কেঁদেছে । আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম ।
- হাই ! একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
তন্নী শুকনো গলায় বলল
-হাই!
- তুমি পুরো প্রোগ্রাম ক্যান্সিল কেন করলা ? এমন পাগলামো কেউ করে ? মানুষের কাজ থাকতে পারে না ?
-তুমি কি এই কথা বলার জন্য এখানে এসেছ ?
-আসলে আমি কাল কেন আসতে পারি না তা বলতে এসেছি ।
-কেন বলতে এসছো ? আমি কি তোমার কাছে কারনটা জানতে চেয়েছি ?
-না তা না । কিন্তু আমার কারনে কারো জন্ম দিনের প্রোগ্রাম নষ্ট হবে , এটা আমার কাছে ঠিক ভাল লাগছে না । নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী লাগতাছে ।
তন্নী খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-এই বোধটা আছে তোমার ? আচ্ছা একটা কথার উত্তর দিবে ?
-বল ।
-আমি কি কখনও তোমার সাথে থারাপ ব্যবহার করেছি ? অথবা তোমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ কিছু বলেছি ? না ।
-এ কথা কেন বলছ ?
-তাহলে এক্সেক্টলি কি কারনে তুমি আমাকে অপছন্দ কর বল !
-অপছন্দ করি কে বলল ?
-তোমাকে বলতে হবে কেন ? তোমার আচরনে স্পষ্টই বোঝা যায় ।
-না বিশ্বাস কর । এমন টা মোটেই নয় । আমার একটা জরুরী কাজ ছিল ।
-মিথ্যা কথা বলার দরকার নাই । আমি আগেই বলেছি আমার কাছে কৈফত দেবার দরকার নাই ।
-সত্যিই আমি মিথ্যা কথা বলছি না ।
-আচ্ছা তাহলে প্রমান কর ।
-কি করতে হবে বল ।
-আমি এখনও আমার জন্ম দিনের কেক কাটি নি । আমায় সাথে এখন চল ।
-কোথায় ?
-যেখানে আমি নিয়ে যাবো ।
আমি কেবল হাসলাম । তারপর থেকে তন্নীর সাথে সম্পর্কটা কেমন যেন বদলে গেল । খুব চট করেই তন্নী খুব কাছে চলে এলো ।

আবার মোবাইলটা বাজছে ! মোবাইল স্ক্রিনে তন্নীর হাসি মাখা মুখটা ভেসে আছে ।
-বল ।
-আসছো তো ?
-আরে বাবা আসছি তো ।
-তোমার কোন ভরসা নাই ।
-আচ্ছা এই কথা কেন বলছ ? আমি কি আগের মত আছি বল ।
-উউউমম ।
- আচ্ছা আজ কি বিশেষ দিন বল তো ? জন্ম দিন তো কদিন আগে গেল । আজকে কি ?
তন্নীর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।
-জন্মদিন ছাড়া কি মানুষের জীবনে আর কোন বিশেষ দিন থাকে না ? আচ্ছা তুমি আসো তোমাকে বলব ।

বিকেল বেলা ওর সাথে দেখা হল । জারুল গাছের নিচে ও দাড়িয়ে ছিল । এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল । আমাকেই খুজতে ছিল বোধহয় । আমি ওর পাসে গিয়ে টুক করে ওকে চমকে দিলাম ।
-এমন করে কেউ আসে ? আমি হাসি কেবল । ওর দিকে তাকালাম । ওকে বেশ সুন্দর লাগছে ।
-তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে । আর .....
ও একটু হাসল । বলল
-আর ?
-আর বেশ উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন মেয়ে মনে হচ্ছে ।
-উচ্চ তাপমাত্রা ? আমি হাসলাম ।
-সহজ ভাষায় বললে তোমাকে আজ হট লাগছে ।
এবার তন্নী একটু লজ্জা পেল । আমি বললাম
-কই বল তোমার বিশেষ দিনটা কি ?
আমরা জারুল গাছের নিচে পেতে রাখা বেঞ্চে বসলাম । ও প্রথমেই কিছু বলল না । কিছুটা সময় নিয়ে ও বলল
-আমাদের বন্ধুত্ব্য টা তোমার কাছে কেমন মনে হয় ?
আমি হাসলাম ।
-এই কথা কেন বলছ ?
-বল না !
ওর চেহারায় কেমন যেন অস্থিরতা দেখলাম ।
-ভাল লাগে । অবশ্যই ভাল লাগে ।
-জানো অপু তোমার প্রতি আমার আলাদা একটা আকর্ষন গোড়া থেকেই ছিল । তারপর তোমার সাথে বন্ধুত্ব্য হবার পর থেকে তোমার সাথে কথা বলার পর থেকে আমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি । হঠাত্ হঠাত্ সব কিছু কেমন জানি লাগে । কোন কারন ছাড়াই হাসি ! আপনা আপনি চোখে পানি আসে । আমি কিছুদিন থেকে আমার এই আচরন কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না ।
-তাই ?
আমি হাসলাম । বললাম
-তোমার তো সাইক্রাটিস দেখানো দরকার । সত্যি বলছি । আমার পরিচিত একজন ভাল ডাক্তার আছে । যাবে নাকি ?
তন্নী একটু যেন আহত হল ।
-যাবে না ?
-অপু তুমি খুব খারাপ । আগেও আমাকে কেবল কষ্ট দিতে আজ দাও ।
এই বলে ও উঠে পড়ল ।
-আমি তোমার সাথে আর কথাই বলবই না ।
-আরে আরে যাও কই ?
ওকে আবার বসালাম । ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি যে কথা কাল রাতে বুঝতে পেরেছ , যে কথাটা বলার জন্য আজ আমাকে এখানে ডেকেছ তা আমি অনেক আগে থেকেই জানি । বুঝেছ ?
তন্নী একটু আদুরে গলায় বলল
-জানো ??
-হুম ।
-সত্যি ?
-হুম ।
-তাহলে বলনা কেন ?
-কেন বলবো ? তুমি বল ।
-তুমি বল ।
-না তুমি বল ।
-তুমি ।
-তুমি ।
-না তুমি বল ।
আমি বললাম
-আমি বলব না । তুমি বলবা !
-না তুমি বলো ।

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

* * অ পূ র্ন * * শেষ পর্ব

 

গল্পঃ * * অ পূ র্ন * * শেষ পর্ব



প্রথম ও ২য় পর্বের পর........................

০৬.
পূর্ন তো কলকাতা চলে গেলো সে জানতে পারলো না সুমিতের কি হলো কিন্তু যখন দেশে ফিরলো সুমিতের চিন্তাটা মাথায় আবার জাগলো..
অপূর্ন বাসায় ফিরে কদ্দিন ঘরে বসে তন্ময় হয়ে অজানা চিন্তার আকাশে ভেবে ভেবে কাটালো।
কি করবে, মাঝখানে কেটে গেছে দেড়টি বছর।
অপূর্ন বাড়ি ফিরে অন্তত এ টুকু বুঝেছে, সুমিতের ব্যাপারে পরিবারের সবার আগ্রহ আর নেই। তাই কদ্দিন চুপ থেকেছে নিজের মনের ব্যাপারটা যেন প্রকাশ পায়। কিন্তু এভাবে তো থাকা যাবে না এটা ভাবতেই অপূর্ন ’র শরীরটা অসার হয়ে যায়।
পুরোনো বন্ধুরা একে একে বাসায় আসতে লাগলো, তাই পুরোনো স্মৃাতিতে ফিরে যেতে অপূর্ন ’র খুব একটা সময় লাগলো না। তবে মাথাটা যে আর আগের মতো কাজ করে না সেটা বুঝে গেছে’সে। আর মাথাটা মনে রাখার খাতায় খুব কম কাজ করে আজকাল।
এই যেমন সকালে ভাবলো, দুপুরে একটু বাইরে বেড়িয়ে আসবে কিন্তু বিকেলে নিজেকে আধভাঙ্গা ঘুমে আবিস্কার করলো।
তবে স্মৃতি যতই দূর্বল হোক সুমিতের কথা কিন্তু মাথা থেকে গেলো না বরং আস্তে আস্তে ফিরে আসতে লাগলো।

এক বিকেলে সব ঝেড়ে ফেলে অপূর্ন বেড়িয়ে পড়লে।
মাধবীলতা বিল্ডিংটার পাশেই ইতি’রা নতুন বাসা নিয়েছে সেটার উদ্দেশ্যে। পথে যেতে সেই বুক হাউসটার বারান্দার দিকে তাকালো; কিন্তু নেই সেই তেলেভাজাওলা। সেই জায়গাতে দাড়াতেই মনে পড়লো সুমিতের সেই সংলাপ; টাকাটা দিতে হবে না।
অপূর্ন ’র সেই এক কথা টাকা আপনাকে দেবই।
কিন্তু না; পারেনি অপূর্ন টাকাটা দিতে হয়তো পারবেও না।

অপূর্ন সোজা চলে এলো ইতিদের বাসায় কিন্তু গেট খুলেই হতাশ হলো ইতি বাসায় নেই। ওর মা এসে ঘরে নিয়ে বসালেন অপূর্ন ঠিক বুঝতে পেরে গেছে এখন কিছু গা গুলানি কথা বলবে। যে সকল কথা রাস্তায় বেরুলেই আজকাল শুনতে হয়; যারা ওকে চিনতো ওরা তো মুখিয়ে থাকে খুব বিরক্তিকর।
ইতি’র মা বলে উঠলেন তোমার লাবন্যমাখা মুখটার এ,কি হাল ও মনে মনে বলে উঠলো ঝড়ের পরে যা হয় আর,কি। ইতি চলে এলো রিকসা নিয়ে সোজা রেল কলোনি এখানেও সেই এক বিপত্তি সবাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে পরিস্থিতি বলে দেয় সুমিতের জীবনটা নষ্ট করে; পোড়ামুখি তোর স্বাদ মিটেনি, আর কার জীবন নষ্ট করতে এসেছিস।

অপূর্ন সোজা সুমিতদের ঘর অভিমুখে গিয়ে থামলো কিন্তু তালা ঝুলছে।
সুমিত কে, এক ঘরে করে দিয়েছিলো সমাজ; কিন্তু ওর বাবা, মা গেল কোথায়? লাল দালানের পাশে একটা মুদি দোকানে এসে অপূর্ন শুধালো আচ্ছা দাদা সুমিতদের ঘরের সবাই কোথায় গেছে বলতে পারেন? দোকানদার বললো তারা তো প্রায় মাস ছয়েক হলো বাসা বদল করে ওপাড়া চলে গেছে। ও সুমিতের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থেমে গেল কথা আর বেরুল না মুখ থেকে।

০৭.
বিকেল মরে আসছে।
অপূর্ন ঘরে ফিরে এসেছে ওপাড়া যাওয়া যাবে না বাবা ওখানেই থাকে সন্ধ্যের পর। কলেজ গেটের পাশেই একটা জটলা দেখতে পেল কিন্তুঅপূর্ন সেদিকে গেল না আজকাল আগ্রহ জিনিসটা কাজ করে খুব কম। সেই জটলা থেকে শ্যামলা মতো একটা ছেলে এসে বললো আরে, অপূর্ন যে।
অপূর্ন একটু অবাক হয়েছিলো কিন্তু পড়ে একটা ইচ্ছা উড়াউড়ি করলো অপূর্ন ’র চারপাশ কেননা সেই ছেলেটি সুমিতের একমাত্র বন্ধু রবি।
ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার পর বললো রবি ভাই সুমিত কোথায় আছে বলতে পারেন?
একটা নিরবতা। এক মিনিট পার হয়ে গেল রবি চুপ। ও আবার বললো কি হলে রবিভাই ? অপূর্ন ভাবলো
সুমিত কি তাহলে মরে গেছে ? না,কি সুমিত কে কেউ মেরে ফেলেছে? নাহ্ সুমিত তো জেলখানায় ছিলো; এমন তো হতে পারে না।
রবি বললো সুমিত কে দেখবে চল।
পায়ে পায়ে অপূর্ন রবি’র পিছু হাটছে বুক হাউসটার ঠিক পাশে এসে থামলো রবি ওকে বাইরে রেখে ভেতরে ঢুকলো; কিছুক্ষণ পড় এসে বললো নেই; কাল দেখা হবে।
ও স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো আর যাই হোক সুমিত আছে তাহলে।
ঘরে ফিরে সারারাত বসে ছিলো অপূর্ন । পুরোনো ভাবনা গুলো আবার ওকে উড়ালো আকাশে,বাতাসে। কাল সকালে সুমিত কে পেয়ে কোন কথাটা বলবে? সুমিত কেমন আছো ?
সুমিত আমি এসেছি ?
আমি সেই তোমার পূর্ন ভালবাসার চাঁদ আমি তোমার সেই অপূর্ন ।
অনেক আগে সুমিতের লেখা একটা কবিতা আছে অপূর্ন ’র কাছে; যেটা পড়ে ও ভাবে সত্যি সুমিত তাকে ভালোবাসে ভীষণ ভাবে।
কাল সকালে এই হাত আবার রাখবে হাত সুমিতের সেই হাতে; এবার বাবা,মা কিংবা পরিবারের কেউ আর আটকাতে পারবে না। চলে যাবে দূরে কোথাও।
সকালে ও স্নান সেরে সুমিতের দেয়া শাড়িটা পড়েছে। এ শাড়ি কোনদিন পড়েনি ও। আজ পড়েছে।
বাড়ির বাইরে এসে দেখে রবি দাড়িয়ে। অপূর্ন মনের আঙ্গিনায় পুলকিত হতে হতে পথ মারাচ্ছে। সেই বুক হাউসটার কাছে এসে থেমে গেছে রবি কাল তো এভাবেই থেমে গিয়েছিলো। কিন্তু সুমিত কোথায়?
এই সকালে বাজারে ভীড় নেই। বুক হাউসটাও খালি।
অপূর্ন বললো রবি ভাই কোথায় সুমিত?
রবি বললো দেখতে পারছো না?
অপূর্ন বললো না,তো। পুরোটা পথে দেখবার মতো কেউ নেই শুধু একসাইডে একটা পাগল বসে আছে। রবি হাত উচিঁয়ে বললো তোমার প্রিয় মানুষটাকে চিনতে পারছো না অপূর্ন !!!

না অপূর্ন সেদিন চিনতে পারেনি। অপূর্ন সেদিন মিনিট খানেক স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে ছিলো; কোথায় সুমিত !!!
পাগলটার কাছে গিয়ে দাড়াতেই অপূর্ন অবশেষে চিনতে পেরেছিলো এটাই তার ভালোবাসার জীবন্ত ভাস্কর্য সুমিত। কান্নার আওয়াজে পথের মানুষ ভীড় করে দাড়িয়েছিলো;যেন ম্যাজিক হচ্ছে।
সুমিতের দু হাত জড়িয়ে অপূর্ন কেঁদেছে কিন্তু সুমিত তবুও চিনতে পারেনি ওকে।
পুরো পাগল মুখভর্তি চুলের বাহার। পাগলটা কাঁদেনা ক্ষিদে পেলেও শুধু খাবার চায়। পুরো রাস্তার মানুষ গোল হয়ে দাড়িয়ে। অপূর্ন’র হাত থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছে পাগল সুমিত।
অপূর্ন বলে উঠে,
এই সুমিত আমাকে দেখ আমি তোমার অপূর্ন ?
এই দেখ তোমার শাড়ি পড়ে এসেছি আজ। তুমি না বলেছিলো এই শাড়ি যেদিন পড়বো সেদিন সারাদিন তোমার সাথে ঘুড়তে হবে। আজ আমি সারাদিন ঘুড়বো তোমার হাত ধরে। না সেদির অপূর্ন ’র হাত সুমিত ধরেনি। চিনতেই পারেনি।

০৮.

শ্যামা থেমে গেল।
গল্পটা শেষ।
আমি চোখ মুছলাম। ধূর কি,যে হয়েছে গল্প শেষ করবার পর আমার চোখ থেকেই পানি ঝড়ছে।
আমি ভাঙ্গা গলায় বললাম আচ্ছা; আপনি সুমিত, আর অপূর্ন’র জীবন কাহিনী জানলেন কিভাবে? আপনি ওদের কেউ হন মানে বন্ধু জাতীয়।
শ্যামা ব্যাগটা হাতে উঠিয়ে নিয়ে বললো কি,মনে হয় আপনার?

আমি বললাম প্লিজ বলুন না। না হলে সারারাত ঘুমুতে পারবো না। আর আমার সুমিত কে দেখতে ইচ্ছে করছে আর তার চেয়ে কষ্ট লাগছে অপূর্ন’র জন্য তাকে দেখতে পেলে একটা কথা বলতাম?
শ্যামা বললো কি কথা? আমি বললাম আগে আপনি বলুন আপনার সাথে সুমিতের কি সম্পর্ক?
শ্যামা মাথাটা নিচু করে বললো আমিই সেই অপূর্ন !!

কথাটা কানে যাবার সাথে সাথে ট্রেনটার হুইশেল বেজে উঠলো। গন্তব্যে এসে গেছি শ্যামা নামধারী অপূর্ন হাতে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাড়ালো। আমিও দাড়ালাম ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্মে ।
অপূর্ন আমার পিছু এসে দাড়ালো
আমি বিস্ময়ের ঘোর ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বললাম আপনিই তাহলে সেই গল্পের নায়িকা; আচ্ছা সুমিত এখন কেমন আছে? আর তাছাড়া আপনিই বা কোথায় চলেছেন?
রেল গেটের বাইরে এসে অপূর্ন বললো সুমিত ভালো নেই!! আর আমি যদি এখানে থাকি তাহলে কষ্ট পাবো প্রতিনিয়তই যখনি পথ চলতে সুমিতকে দেখবো তখনই তো কষ্টের আকাশে দগদগে কালো মেঘ ভাসবে।
তাছাড়া আমি থাকলে সুমিত কে ওরা মেরে ফেলবে। আমি তাই দুরে চলে যাচ্ছি পাগল হয়ে ঘুরুক তবুও বেঁচে থাকুক।
আমি আবার বললাম কারা সুমিত কে মেরে ফেলবে ? অপূর্ন বললো কারা আবার আমার বাবা’র লোকেরা।
আর তাছাড়া আমার নামটাই তো অপূর্ন যার নামের মাঝে পূর্নতা নেই সে আর কার জীবনকে পূর্ন করবে বলুন।

আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে; এদিকে অপূর্ন’র রিকসা দাড়িয়ে আছে।
বিদায় নেবার আগে আমার হাতে একটুকরো কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা সুমিতের লেখা সেই কবিতাটা যেটা ছাপাতে পারেনি আপনি একটু চেষ্টা করে দেখবেন। আমি হ্যাঁ বলালাম।
জীবন কখনো কখনো এমন হয়...................
হাজার ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেল অপূর্ন আর আমি কবিতাটা পড়তে পড়তে পথ চললাম


কখনো কি ভাবতাম; এতো লোকের ভীড়ে তোমায় পাবো;
ভাবতে পারতাম না।
কখনো কি ভাবতাম; ; এতোটা পথ হেটে যাবো অবলীলায়
ভাবতে পারতাম না।
এখন ভাবতে পারি নির্ভাবনায়; আর আমি একা নই
আমার শূন্য দু’ হাত পরিপূর্ন তোমার ছোয়ায়
কখনো ছেড়োনা হাত,
করো না সংঘাত
আমি যে থাকবো মিশে তোমারই নিশ্বাসে নিশ্বাসে।

 

তুমি নেই বলে

তুমি নেই বলে

Photobucket
জানালার আতশিতে আটকে রয় চোখ
বিদ্যুতের ঝলকানি ঝলসে দিতে চায় চারিধার,
মেঘের বজ্র হুন্কারেও থাকে মিষ্টি আহবান
এসো ভিজি বৃষ্টিতে দুজনে মিলে।

অঝোর ধারায় ঝরছে শ্রাবণের বারিধারা
টিপটিপ বৃষ্টির ঝন্কারে বাজে মাদকতার সুর
ভালবাসার আহবান প্রতিধ্বনীত হয় সেই সুরে
এসো ভিজি বৃষ্টিতে দুজনে মিলে।

বার বার তাকাই বাইরে
মন ছুটে যেতে চায়,
ইচ্ছে করে সিক্ত করি অশান্ত মনটাকে
তবু বন্দি করি নিজেকে, বির্সজন দিয়ে সব ইচ্ছাকে
কি হবে ভিজে এই বৃষ্টিতে,
কি হবে দিয়ে আহবান সেই মিষ্টি সুরে?

কি করে বুঝায় বৃষ্টিকে,
তুমি নেই বলে থেমে গেছে সব কিছু
থেমে গেছে জীবনের সব সুর গুলি।

বৃষ্টি, সে কি তা বুঝবে কখনো??

নতুন করে...

নতুন করে...


চাইছি তোমায় আপন করে
দাও না ধরা মনের ঘরে,
ফিরে এসো চুপটি করে,
দেখবো তোমায় দু’চোখ ভরে…
এতই কি অবুঝ তুমি!!!
বুঝনা কেন,
তুমি ছাড়া শূন্য এ প্রান,
ভুলে যাও সব মান অভিমান…
আগলে নাও আমায় আবার নতুন করে,
নাড়ছি কড়া তোমার মন দুয়ারে…
ফিরবো না এবার খালি হাতে,
রাঙ্গাবো তোমার মন ভালোবাসাতে…
ভুলে যাও সব মান অভিমান…
আগলে নাও আমায় আবার নতুন করে…

শ্রাবণ বরিষণে কান্নাগুলো ঝরে পড়

শ্রাবণ বরিষণে কান্নাগুলো ঝরে পড়

Photobucket

তোমার একটু সময় চুরি করবো বলে
নিজেকে সাজিয়েছিলাম নীলাম্বরী সাজে,
মাথায় গুজেছিলাম সদ্য ফোটা
হলুদ কদম ফুল,
হাতে পড়েছিলাম নীল রেশমী চুড়ি
যেনো চুড়ির টুনটান সুরে
কাছে আসো তুমি।
তোমার মনকে জয় করবো বলে
শ্রাবণের অঝোর ধারায় ভিজেছিলাম আমি
অপেক্ষার প্রহরগুলোকে সাথী করে,
একপলকের একটু দেখায়
নিজেকে শপে দিতে তোমার বুকে,
যদি ভালবাসো আমায় তুমি।
এক আকাশ ভালবাসা দিবো বলে
বৃষ্টিকে বলেছিলাম আজ যেনো সে না ঝরে,
নীলাকাশের মেঘের ভেলায়
স্বপ্নগুলোকে ভাসাতে,
মেঘকে বলেছিলাম
ধীরে ধীরে বয়ে যেতে
যদি তবু তুমি কাছে আসো আমার।
তোমার চলার পথের সাথী হয়ে
চলতে চেয়েছিলাম আমি,
যেনো পিছিয়ে না পড়ো তুমি,
তোমার কষ্টগুলোকে সাথী করে
আমার সুখগুলোকে তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম
তবু তুমি ভাল থাকো ।
তারপরেও হয়নি তোমার এতটুকু সময়,
তাকাতে আমার পানে, বুঝতে আমার ভালবাসা
যা শুধু তোমার জন্য কেঁদে ঝরে পড়ে
শ্রাবণে প্রতিটি বৃষ্টি কণার সাথে।