আমার ব্যথাগুলো আরো ব্যথা নিয়ে মেঘ হয়ে চেপে গেছে চোখে আমি ভালো নেই.....
[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]
রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১২
আমি বৃষ্টি দেখেছি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
নীলুর বৃষ্টি অনেক পছন্দ ছিল । বৃষ্টি হলে আর কোন কথা নাই । ওর মাথায় কি এক অদ্ভূদ চিন্তা ছিল যে বৃষ্টি হলে ওকে ভিজতেই হবে । কোন সময় জ্ঞান নাই । বৃষ্টি মানে ভিজতেই হবে ।
ইনফ্যাক্ট ওকে আমি প্রথম লক্ষ্য করি এই বৃষ্টিতে ভেজা নিয়েই । একদিন ক্লাস করছিলাম । ও আমার পরেই বসে ছিলাম । হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাকল ।
-এই অপু ? এই ?
এমনি চিনতাম ওকে । কিন্তু এর আগে কখনও কথা হয়নি ওর সাথে ।
-এই শোন না !
আমি একটু অবাক হলাম । একটু বিরক্তও । কোন দিন কথা বলি নি । প্রথম কথাতেই তুই ।
-কি ?
-আমার বই আর খাতাটা একটু রাখতো !
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলু বের হয়ে গেল । আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না ! বাইরে ততক্ষনে ঝুম বৃষ্টি আরাম্ভ হয়েছে । একটু পর লক্ষ্য করলাম নীলু বাচ্চা কয়টা ছেলে মেয়েদের সাথে বৃষ্টির ভিজছে । বলতে গেলে নাচা নাচি করছে ।
এতো বড় একটা ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে যে এমন করে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে আমার ধারনার বাইরে ছিল ।
উহু ! নিজের মনকে আবারও একটা ধমক দিলাম । আমি আবারও নীলুর কথা ভাবতে শুরু করেছি । সকালবেলাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে ওর কথা আর ভাববো না । কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ওর কথা আবার ভাবতে শুরু করেছি । আসলে সব দোষ এই হতচ্ছাড়া বৃষ্টিটার । সেই দুপুর বেলা থেকে একভাবে ঝড়েই যাচ্ছে ।
আর আমার কেবল মনে হতে লাগল ঐ বৃষ্টিটা আমাকে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলছে আমি তোমার খুব প্রিয় একজনের খুব প্রিয় ছিলাম ।
আমি চোখ ফিরিয়ে নেই । ঘরের সব জানালা বন্ধ করে দেই । আমি বৃষ্টি দেখবো না । ফুল ভলিউমে টিভি ছেড়ে দেই । বৃষ্টির শব্দও আমি শুনতে চাই না । আমি এমন কিছু করতে চাই না যা আমাকে নীলুকে মনে করিয়ে দেয় । আমি ওকে মনে করতে চাই না ।
কেন মনে করবো ওকে ? যে আমাকে একা রেখে চলে গেছে তার কথা আমি কেন মনে করবো ? আমি মনে করবো না । সোফার উপর বসতে ইচ্ছা হয় না । সবুজ কার্পেটার উপর শুয়ে পড়ি ।
নীলু খুব শখ করে এই কার্পেটটা কিনেছিল । নষ্ট হয়ে যাবে বলে বসার ঘরে এটা বিছায় নি । সোবার ঘরটাতে বিছিয়েছিল । প্রথম যেদিন কার্পেটটা পাড়ে নীলুর আনন্দ দেখে কে !!
বাচ্চা মেয়ে দের মত খুশিতে ওর চোখমুখ আনন্দে ভরে ছিল । আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দেখো না কি সুন্দর লাগছে ! মনে হচ্ছে সবুজ একটা মাঠে চলে এসেছি ।
আমি এখন ভাবছি অন্য কথা । আমি তখন আসসোস করছি এতোগুলো টাকা বেড়িয়ে গেল বলে ! অবশ্য আফসোসের খুব বেশি কারন ছিল না । আমার নিজের টাকা না বাপের টাকা । তবুও নতুন সংসারে এখনও কতকিছু কেনা বাকি ! আগে ব্যাচেলার ছিলাম তাই কোন ব্যাপার ছিল না ।
-কই বল না কেমন ?
-ভাল কিন্তু একটু বেশি বিলাশিতা হয়ে গেল না ?
নীলু মুখ একটু মলিন হল ।
আরে দুর ! যত চাচ্ছি ওকে ভাববো না তত ওর ভাবনা চলে আসছে । আমি সবুজ কার্পেট থেকে বিছানায় উঠে এলাম । ওর কথা কিছুতেই ভাববো না । আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি । ঘুমালে হয়তো ওর ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবো ।
-কি করছ ?
নীলুর কণ্ঠ । কিন্তু ওর কন্ঠ কিভাবে আসবে ? নিশ্চই আমার কল্পনা ।
-কিছু করছি না ।
নীলুর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।
-সত্যি কিছু করছো না ?
-না । তোমার সাথে কোন কথা নাই । তুমি চলে যাও ।
-বাব্ব বাহ আমার উপর রাগ করছ ?
-হুম । রাগ করেছি ।
নীলু আবার হেসে উঠল ।
-হাসছো কেন ?
হাসি মিশ্রিত কণ্ঠ নীলু বলল
-তুমি আমার উপর রাগ করতেই পারবে না । সেই ক্ষমতা তোমার নেই ।
কোন জুটসই জবাব না পেয়ে বলল
-তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল ?
-কই গেলাম ? এই তো আমি তোমার কাছে । তোমার সাথে কথা বলছি ।
-না তুমি বলছ না । তুমি আমার কল্পনা ।
-আচ্ছ ? তাই ?
নীলু আবার হেসে উঠল । বলল
-আচ্ছা তুমি যা বল তাই । এখন চল বাইরে খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু ভিজি ! চল না !
বৃষ্টির কথা উঠতেই আমি ভিজতে গেলাম । কিন্তু নীলুকে কোথাও দেখতে পেলাম । নাম ধরে ডাক দিলাম । কিন্তু ও কোন জবাব দিল না ।
ওর নাম নিতে নিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল । পুরো ঘর কেমন অন্ধকারে ছেয়ে আছে । টিভি চলছিল । এখন বন্ধ । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে তুমুল বেগে । আওয়াজ আসছে । কারেন্ট চলে গেছে বোধহয় ।
বাধ্য হয়েই জানালা খুলে দিলাম । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে ।
আমার নীলুর পছন্দের বৃষ্টি !
ঐ দিন পর নীলু পরপর দুদিন ক্লাসে আসল না । তৃতীয় দিন একটা টিউটিরিয়াল ছিল । ঐ দিন নীলুকে আবার দেখলাম । কিন্তু চেহারার একি অবস্থা ? ও কাছে এসে ওর খাতা পত্র চাইল । দিতে গিয়ে বললাম
- চেহারার একি অবস্থা ? শরীর খারাপ নাকি ?
নীলু শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর ।
বই গুলো নিয়ে ও ঘুরতে যাবে ঠিক এমন সময় ও কেমন জানি দুলে উঠল । আমি না ধরলে হয়তো মাথা ঘুরে পরে যেত । ওর গায়ে তখন আকাশ পাতাল জ্বর ।
-একি তোমার গায়ে তো খুব জ্বর !
নীলু আবার শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর । আমাকে একটু বেঞ্চে বসিয়ে দিবে প্লিজ ।
-তোমার গায়ে খুব জ্বর । এখন বসতে হবে না । ডাক্তারের কাছে চল আগে ।
-এখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে । আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না । তুমি পরীক্ষা দাও ।
-আরে এরকম টিউটিরিয়াল আরো হাজারটা আসবে । আগে ডাক্তারের কাছে চল ।
ওকে একপ্রকার জোর করেই ক্যাম্পাসের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম । টিউটিরিয়াল দেওয়া হল না । ডাক্তারের কাছ থেকে যখন বের হয়েছি এখন ওর অবস্থা আরো খারাপ । কেমন যেন লাগছিল । ওকে এই অবস্থা ছেড়ে আসতে কেন জানি মনে চাচ্ছিল না । ও বলল
-আমাকে একটু হলে রেখে আসবে ?
-হুম । কোন হলে থাকো ?
ও হলের নাম বলল ।
-তোমার রুম মেইট আছে এখন রুমে ?
নীলু একটু হাসল ।
-আছে । অন্তত ১০০ আছে ।
-মানে কি ?
-আমি গন রুমে থাকি ।
-ও মাই গড ! এ অবস্থায় তো তোমাকে গনরুমে রাখা যাবে না । ঢাকায় কোন আত্মীয় আছে তোমার ?
-নাহ ।
-তাহলে ?
-তাহলে কিছু না । আমাকে হলেই রেখে আসো ।
-না । তুমি আমার সাথে চল ।
-কোথায় ?
-আমার বাসায় চল ।
নীলু আমার দিকে তাকাল । কি যেন ভাবল ? তারপর বলল
-তোমার বাসায় সমস্যায় হবে না ? মানে আমি একটা মেয়ে !
-কোন সমস্যা নাই । আমি ফ্লাট ভাড়া করে থাকি ।
ও আর কথা বলল না । অবশ্য ওর সে অবস্থা ছিলও না । নীলুকে বাসায় নিয়ে আসলাম ।
মোটামুটি পাঁচ দিন ওর অবস্থা বেশ খারাপ ছিল । একবার ভাবলাম হাসপাতালে নিয়ে যাই । আবারও ডাক্তার ডেকে আনলাম । পাঁচদিন পর ওর জ্বর ছেড়ে গেল ।
ঐ দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলু রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে বললাম
-কি করছ তুমি ?
নীলু খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-রুটি বানাচ্ছি । দেখছ না ?
-দেখতে তো পাচ্ছি । কিন্তু কেন করছ ?
-আশ্চর্য মানুষ রুটি কেন বানায় ? খাওয়ার জন্য !
-আরে বাবা তুমি কেন করছ ? তোমার শরীর খারাপ । তোমার বিশ্রাম নেওয়ার দরকার । আর কাজ করার জন্য বুয়া তো আছে । একটু পরই চলে আসবে ।
নীলু হাসল ।
-অনেক বিশ্রাম করেছি । আর কত ? তাছাড়া জ্বর নেই ।
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর কপালে হাত দিলাম জ্বর দেখার জন্য । আসলেই জ্বর নেই ।
ওর কপাল থেকে হাত সরিয়ে নেবার সময় ওর চোখে চোখ পড়ল । ঠিক তখনই আমার মনের মধ্যে কেমন জানি একটা অস্বস্তি হল ।
আমি কিভাবে এতো সহজে ওর গায়ে হাত দিয়ে ফেল্লাম ? এই পাঁচ দিনে তো কতবার ওর জ্বর মেপেছি, একবারও এই অস্বস্তিটাতো আসে নি ! তাহলে এমন কেন অস্বস্তি লাগছিল ?
আমার জানা নেই । ওকে ওভাবে রুটি বানানো অবস্থায় দেখে আমার মনে আরো অদ্ভুদ একটা অনুভূতি হল ।
নাস্তা খাওয়ার সময় অনেক কথা হল ওর সাথে । বলা চলে ওখান থেকে আমাদের মেলামেশা শুরু হল । তারপর থেকে ওর সাথে অনেক সময় কাটাতে লাগলাম । আমরা সবকিছু শেয়ার করতাম ।
বৃষ্টির বেগ মনে হচ্ছে বেড়েছে । এরকম বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই । ওকে কিছুতেই ধরে রাখার উপায় ছিল না । বৃষ্টিতে ও ভিজবেই । আমি জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই । বৃষ্টির ফোটা আমার হাতে পড়তে লাগল ।
-এভাবে ভিজলে কি হয় ?
নীলুর কথা যেন আবার শুনতে পেলাম ।
-কিভাবে ভিজবো ?
-তুমি মনে হচ্ছে জানো না ? মনে নেই এই ছাদটাতে আমরা একবার বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম !
আমার এই বাসাটা একে বারে ফ্লাট বললে ভুল হবে । তিন ইউনিটের বাড়িতে বাড়িওয়ালা কেবল এক ইউনিট কোন রকম করে ফেলে রেখেছে । পুরো ছাদটাই বলতে গেলে ফাকা পরে আছে । নীলুর এই ফাকা ছাদটাও অনেক পছন্দ ছিল । ও প্রায়ই আসতো ।
বাচ্চা মেয়েদের মত ছাদে উপর লাফালাফি করতো । একা একা এক্কা দোক্কা খেলতো । আমি হাসতাম কেবল ।
ঐ দিন সকালবেলা আমার বাসায় এসে হাজির । কাঁদে ছোট একটা ব্যাগ । আমি জিজ্ঞেস করলাম
-ব্যাগে কি ?
ও বলল
-শাড়ি । আজ খুব বৃষ্টি হবে । শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজবো আজ ।
কেমন যেন একটু অন্য রকম লাগছিল ওকে । বুয়া আসলেও ওকে বিদায় করে দিল । দুপুরের রান্না ও নিজেই করল । দুপুরের দিকেই বৃষ্টি আরাম্ভ হল । আমি জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি এমন সময় নীলু এসে হাজির । ওকে দেখে একটু অবাক হলাম । এর আগে কখনও ওকে শাড়িতে দেখি নি ।
কালো ব্লাউজের সাথে কালো শাড়ি আর কপালে কালো বড় একটা টিপ । আমি খানিকটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম এক ভাবেই । নীলু একটা কালো পাঞ্জাবী আমার দিকে এগিয়ে বলল
-নাও এটা পর ।
-কার এটা ?
-তোমার জন্য কিনেছি । নাও জলদি পরো এখন । আজ তোমার সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো ।
কালো পাঞ্জাবী পরে বৃষ্টি নেমে পড়লাম । বৃষ্টির ফোটা গুলো কেমন সিরসরে অনুভূতি জাগাচ্ছিল মনে । কালো শাড়ি পরা নীলু আমার আগে আগে হাটছিল । একটা সময় আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরল । আমার দিকে তাকাল গভীর ভাবে ! নীলুর ঐ গভীর দৃষ্টিতে কি ছিল জানি না আমার পুরো পৃথিবীটা যেন এলো মেলো হয়ে গেল ।
সেদিন ঠিক কি করেছিলাম আমার আজও ঠিক মনে পড়ে না । কি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম ।
কেবল এই টুকু মনে আছে ওকে খুব গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম । আর পাগলের চুম খেয়েছিল ওকে ! বৃষ্টির জলে যেন দুজন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলাম ।
-কি হল ভিজবে না বৃষ্টিতে ?
-না ভিজবো না ।
-কেন ? চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
-তুমি ভিজো ।
-তুমি না ভিজলে আমি কিভাবে ভিজি ?
-সেদিন কিভাবে ভিজেছিলে ?
হঠাৎ আমার কন্ঠস্বর তীব্র হয়ে ওঠে ।
-কেন সেদিন ভিজেছিলে ?
আমি আবার জানতে চাই চিৎকার করে ।
কোন জবাব আসে না ।
নীলুকে তার কিছুদিন পরেই বিয়ে করে ফেলি । ওকে আর কিছু ভাল লাগতো না তখন । একটা পলক না দেখলে কেমন জানি অস্থির লাগতো । বিয়ের পর আমাদের জীবনটা আরো সুন্দর হয়ে ওঠে । দুজন দুজনকে একটা পলকের জন্য চোখের আড়াল করতাম না ।
একসাথে ভার্সিটি যেতাম একসাথে আসতাম । একসাথে খেতাম , একই প্লেটে খেতাম , গোসল করতাম একসাথে বিকেল হলে ওর সাথে ছাদে ছোটা ছুটি করতাম ।
ওর ছেলেমানুষী যেন আরো বেড়ে গেল । আগে বৃষ্টি হলেতো কেবল ও একা ভেজার জন্য লাফাতো তখন আমাকেও ভিজতে হত ওর সাথে ।
বৃষ্টির প্রতি এমন পাগলামো দেখে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম । বিরক্ত হওয়ার প্রধান কারন টা হল প্রত্যেকবার বৃষ্টি ভেজার পরই ওর জ্বর আসতো । মাঝে মাঝে তো জ্বর গায়ে নিয়েও বৃষ্টিতে নেমে পড়ত । তখন খুব চিৎকার চেচামেচি করতাম । কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হত না ।
ঐ দিন ঠিক একই কাজটা করেছিল । নীলুর গায়ে আগে থেকেই দুদিনের জ্বর ছিল । রাত তখন বারটা কি সাড়ে বারটা হবে । সারাদিন ক্লাস নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম । বিকেল বেলা আবার নীলুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম । ডাক্তার বৃষ্টিতে ভিজতে সাফ মানা করে দিয়েছে ।
তবুও নীলু আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলল
-এই বাইরে না খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
ওকে ধমক দিলাম । ডাক্তার কি বলেছে মনে করিয়ে দিলাম । চুপচাপ ঘুমাতে বলে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকাল বেলা বাথরুমে ভেজা কাপড় দেখে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তারমানে রাতের বেলা ও আমাকে না জানিয়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে । মেজাজটা খারাপ হল ।
নীলুকে বকার জন্য শোবার ঘরে গিয়ে দেখি নীলু প্রায় অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে আছে । ওর গায়ে আকাশ পাতাল জ্বর ।
কি করবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না । জ্বল পট্টি দিয়েও কাজ হচ্ছিল না ।
জ্বর কমছিল না কিছুতেই । উপায় না দেখে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম । স্ট্রাচারে যখন ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন অল্প ক্ষনের জন্য ওর হুস ফিরেছিল । আমি তখন ওর হাত ধরা । ও ফিসফিস করে বলল
-আমার উপর রাগ রেখো না কেমন ! তোমার কথা শুনিনি বলে আমার উপর রাগ রেখো না ।
-তোমার উপর কখনও রাগ করেছি আমি বল ?
-তুমি ভাল থেকো ।
আমি আর কথা বলতে পারলাম না । নার্সরা ওকে আইসিইউ এর মধ্যে নিয়ে গেল । আমি শেষ বারের মত ওর চোখে জল দেখতে পেলাম ।
- কই চল । বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে তো ?
-আমি ভিজবো না ।
-প্লিজ চল না !
আমি চুপ করে থাকি । কেন জানি আমার কান্না আসে !
-কই চুপ করে আছো কেন ? চল ! ঐ কালো পাঞ্জাবীটা পরো । কাবাডের বাম পাশের ড্রায়ারে আছে ।
ওকে কথা দিয়েছিলাম ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি না । ও ভাল থাকতে বলেছিল কিন্তু আমি ভালও থাকতে পারছি না ওকে ছাড়া ।
আমি কালো পাঞ্জাবীটা পরে নিই । বৃষ্টির ফোটা আমার মনে আজও কেমন একটা শিহরন জাগায় ! যেন ও এখনও আমার পাশে বৃষ্টিতে ভিজছে । ওর খুব পছন্দের বৃষ্টি ।
সুন্দর সেই ভালবাসার দিনটির জন্য অপেক্ষা
সুন্দর সেই ভালবাসার দিনটির জন্য অপেক্ষা
কথাটা বলেই শ্রাবণীর মনে হল কি করলাম ! ও তো এখন মন খারাপ করবে । এমন ছোট ছোট কথাতে ছেলেটা মন খারাপ করে ! কিন্তু ছেলেটা কে তো দোষও দেওয়া যায় না । ও তো আর অন্য কেউ না । ওর একটু রুক্ষ আচরনে তো মন খারাপ হবেই । এখন কি করা যায় । শ্রাবণী খুব ভাল করে জানে এখন যদি ও এভাবেই ফোন টা রেখে দেয় তাহলে অপু সারারাত মন খারাপ করে থাকবে । কথার শুরুতে বলেছিল যে এখনও ভাত খাওয়া হয় নি , ফোন রেখে দিলে ভাত না খাওয়ারও সম্ভাবনা আছে । অপুর এই এক দোষ । যদি শ্রাবণীর কোন কথাতে বা আচরনে ও কষ্ট পায় ওকে কিছু বলবে না । নিজেকে কষ্ট দেবে । শ্রাবণী খুব বিরক্ত হয় ওর এই আচরনে । বলে 'তুমি এমনটা কেন কর । আমি যখন তোমাকে কষ্ট দেই তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পার না?? নিজেকে এভাবে কেন কষ্ট কেন দাও ?'
অপু হাসে । বলে 'তুমি আমার একটা মাত্র টিয়াপাখি ।তোমাকে কিভাবে কষ্ট দেই বল?'
শ্রাবণীর চোখে পানি এসে যায় । এই কথা গুলো খুব ভাল লাগে । তখন নিজের উপর খুব রাগ । এমন একটা মানুষকে কিভাবে ও কষ্ট দেয়? মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে এমন টা আর করবে না । কিন্তু তবুও হয়ে যায় । ওর রাগটা এতো বেশি ! যখন মেজাজ খারাপ থাকে তখন কাকে যে কি বলে হুশ থাকে না ।
শ্রাবণী বলল
-কি হল চুপ করে গেলা কেন ? কথা বল ।
-তোমার যখন কথা বলতে ভাল লাগছে না তখন ফোন রেখে দেই ?
-ভাল করে বল ।
-ভাল করেই তো বলছি । আম কি কখনও তোমার সাথে খারাপ করে কথা বলেছি ?
শ্রাবণীর খুব মায়া লাগে । কথাটা খুব সত্যি । শ্রাবণী অপুর সাথে যত খারাপ ব্যবাহরই করুক না কেন অপু কখনও ওর সাথে একটা উচু স্বরে কথা বলে না ।
শ্রাবণী বলল
-আমি ঐ খারাপের কথা বলি নি । ভাল করে বল মানে বুঝিয়েছি একটু হেসে বল । প্রতিদিন ফোন রাখার সময় যেমন করে বল সেভাবে বল ।
-ওভাবেই তো বলছি ।
-না ওভাবে বলছ না । হেসে বল ।
শ্রাবণী ধমক দিয়ে ওঠে । তারপর একটু নরম স্বরে বলল
-প্লিজ একটু হেসে বল । আমি জানি এখন যদি তুমি মন খারাপ করে ফোন রেখে দাও সারারাত তোমার মন খারাপ থাকবে । কালকেও তোমার মন খারাপ থাকবে । বল এটা কি আমার ভাল লাগবে ?
-আচ্ছা বাবা আমি মন খারাপ করবো না । কথা দিলাম ।
শ্রাবণীর একটু ভাল লাগে । অপু যখন ওকে কোন কথা দেয় তা ও সবসময় রাখে । শ্রাবণী বলল
-তুমি বাচ্চা ছেলেদের মত কেন অল্পতে কষ্ট পাও বলতো ? মানুষের সব দিন কি সমান যায় । একটু তো উনিষ-বিশ হয়েই যা্য় ! এতো মন খারাপ করলে কি চলে ? আজ সেই সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছি । মাত্র আসলাম । সারাদিন ক্লাস ট্রেনিং স্যারদের বকবকানি এসব করে যখন বযসায় আসি মন মেজাজ কি ঠিক ঠাকে বল ?
-আমি তো বুঝি । কিন্তু কি করব বল? তোমার দিক থেকে আসা একটু খানি ভালবাসা আামকে যে কি পরিমান আনন্দ দেয় তোমাকে বলে বলে বোঝাতে পারব না । ঠিক তেমনি একটু কঠিন কথা খুব ক|ষ্ট দেয় ।
শ্রাবণীর নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হয় । যত যাই কিছু হক কই অপুতো কখনও ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে না । তাহলে ও কেন করে ? কেন এমন টা করে । অপু বলল
-জানো আমার কি মনে হয় ?
-কি মনে হয়?
-না শুধু মনে হয় না এটা আমার বিশ্বাস যে এমন একটা দিন আসবে যে দিন তুমি চাইলেও আমার সাথে খরাপ ব্যবহার করতে পাবে না । শুধু আমাকে ভালই বাসবে । আমি সেই সুন্দর ভালবাসার দিনটার জন্য অপেক্ষা করি ।
শ্রাবণী লক্ষ্য করল আপনাআপনি ওর চোখে পানি চলে এসেছে । এমন ভাবে কেন অপু ওকে ভালবাসে ! কেন ?
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে অপুকে আর কখনও কষ্ট দেবে না । ওর সাথে আর একটুও খারাপ ব্যবহার করবে না ।
শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১২
ঐ বিষন্ন মুখে হাসি আমি ফোটাবো
ঐ বিষন্ন মুখে হাসি আমি ফোটাবো..
ঈশিতা প্রথমে বুঝতেই পারল না কি হচ্ছে । ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল । ও আসলে ভাবতেই পারে নি যে আমি এই রকম একটা কাজ করবো বা করতে পারি ।
যখন লিফটের দরজা দিয়ে বের হলাম পিছন ফিরে চাইলাম । এতো দিন পর এই প্রথম ওর চোখে আমি বাষন্নতার জায়গায় এক টুকরো বিশ্ময় দেখতে পেলাম । ঈশিতা এতোটাই বিশ্মিত হয়েছে যে হয়তো ও ভুলেই গেছে এই ফ্লোরেই ওকে নামতে হবে । আস্তে করে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল । আমি আমার কেবিনে ঢুকে পরলাম ।
প্রথম যে দিন আমি এই অফিসে যোগদিই সেই দিনই ঈশিতার প্রতি আমি ইন্টারেস্টেড হয়ে উঠি । একনম্বর কারন হল আমার পোষ্টটা টা ঈশিতার আন্ডারে । ম্যানেজার সাহেব যখন আমাকে ঈশিতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল তখন আমার মনে হল এই টুকু একটা পিচ্চি মেয়ের আন্ডারে আমি কাজ করবো ?
এই পিচ্চি মেয়েটা আমার বস ?
দ্বিতীয় কারনটা হল পিচ্চি হলেও মেয়েটা অসম্ভব গম্ভীর । প্রয়োজনের একটাও বেশি কথা বলে না । আমি ভেবে পেলাম না এই টুকু বয়েসে মেয়েটা এতো গম্ভীর্য পেলো কোথা থেকে ?
প্রথম দিনে এই কথাটাই কেবল আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল । এমনটা কেন হবে !
আমার বস হওয়ার সুবাধে ঈশিতার সাথে আমার কথা বলার অনেক স্কোপই তৈরি হতে লাগল । কিন্তু ঈশিতা সেই আগের মতই । প্রয়োজনের একটাও বেশি কথা মেয়েটা বলে না । কয়দিন পরই এক কলিগের কাছ থেকে মেয়েটার এমন গাম্ভীর্যের কারন জানতে পারলাম । জানতে পেরে মোটামুটি একটা সক খেলাম ।
মেয়েটা বিবাহিত । ও মাই গড ! এটু টুকু পিচ্চি মেয়ে বিবাহিত । আরো জানতে পারলাম মেয়েটার খুব সুখী একটা সংসার ছিল ।
আগে সবার সাথে খুব মেলামেশা করত ।সবার সাথে কথা বলত , হাসতো । খুব প্রাণ চঞ্চল একটা মেয়ে ছিল । কিন্তু মাস ছয়েক আগে একটা দুর্ঘটনায় মেয়েটার স্বামীটা মারা যায় । তারপর থেকেই মেয়েটা এমন চুপচাপ হয়ে যায় । তারপর থেকেই মেয়েটার উপর আমার আকর্ষন আরো বেড়ে যায় ।
আমি উপায় খুজতে শুরু করলাম কিভাবে ঈশিতাকে আবার স্বাভাবিক করা যায় ! কিভাবে মেয়েটার মুখে হাসি ফোটানো যায় ! এসব ভাবতে ভাবতে একটা সময় আমি লক্ষ্য করলাম আমি সারাটা সময় কেবল ঈশিতার কথাই ভাবছি । যতক্ষন অফিসে থাকি ততক্ষন কেবল ওর আসেপাশে থাকতে ইচ্ছা করে । কোন না কোন কাজের বাহনায় আমি ঈশিতার কেবিনে যেতে লাগলাম । ওর সাথে একটু বাড়তি কথা বলার চেষ্টা করতে লাগলাম । খুব যে বেশি লাভ হল তা বলব না , কিন্তু আমি নাছড়বান্দা । আমি চেষ্টা করতেই থাকলাম ।
কিন্তু সব ভাল কাজে বাধাতো আসবেই । কয়দিন আগে আমার হাতে আমার প্রমোশন লেটার এসে হাজির হল । তাতে বলা হয়েছে আমাকে সিনিয়র অফিসার পদে অধিস্থিত করা হয়েছে । তারমানে ঈশিতার সমান পদ । কিন্তু সমস্যা হল আমার আমার পোষ্টিং হল অন্য শাখায় ।
কিন্তু আমি ঈশিতাকে ছেড়ে কিভাবে যাবো ? মোটেই যাবো না । প্রমোশনের খ্যাতা পুড়ি আমি । লাগবে না আমার প্রমোশন । চুপচাপ বসের কেবিনে গেলাম । গিয়ে বললাম আমার প্রোমোশনের দরকার নাই । আমাকে যেন আগের পদেই রাখা হয় ।
বস শুধু অবাক হল না যেন আকাশ থেকে পড়ল তাও আবার সাত আসমানের উপর থেকে । কিন্তু আমার কাজ করার রেকর্ড মোটামুটি ভাল । তাই বস আমার কথা রাখলেন ।
সেই দিনই ঈশিতা আমার সাথে প্রথম কথা বলল । মানে কাজের বাইরে কোন কথা বলল । ওর কেবিনে গেছিলাম একটা কাজে । কাজ শেষে কেবিন ছেড়ে যাবো ঠিক এমন সময় ও পিছন থেকে ডাকল ।
-অপু সাহেব একটু শুনুন ।
-জ্বি বলুন ?
-আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ? যদি কিছু না মনে করেন ।
-হ্যা অবশ্যই ।
ঈশিতা খানিকটা ইতস্তত করে বলল
-আচ্ছা আপনি প্রমোশনটা রিফিউজ কেন করলেন ?
আমি হাসলাম । বললাম
-আসলে সাভারে পোষ্টিং দিচ্ছিল তো তাই ইচ্ছা করলো না যেতে ।
ঈশিতা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল । কি বিষন্ন সেই দৃষ্টি ! তারপর বলল
-আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা কখনও সম্ভব না । কখনও না ।
আরে মেয়েটা বলে কি ? তার মানে আমার আচরন ওকে কিছুটা ভাবিয়েছে । ও কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে । আমি একটু হাসলাম । বললাম
-যদি লক্ষ্য থাকে অটুত দেখা হবে বিজয়ে ।
-মানে ?
-কোন মানে নেই । আমি আসি । আমি আবার হাসলাম ।
কেবিন থেকে বেরনোর আগে আমি আবার ঘুরে দাড়ালাম । বললাম
-ঈশিতা !
ঈশিতা মুখ তুলে চাইল ।
-আমি আপনার মুখে আমি হাসি ফোটাবোই ।
আর দাড়ালাম না । ঘুরে চলে এলাম ।
তারপর আমি ওর আশেপালে থাকি । প্রত্যেকটা কাজে ওকে জানান দেওয়ার চেষ্টা করি যে আমি আছি তোমার আসেপাশে । যতক্ষন না তুমি হাসছো ততক্ষন আমি নড়ছি না । কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না । ঈশিতা ঠিক আগের মতই রয়ে গেল । আগের মতই চুপচাপ আগের মতই বিষন্ন ।
তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করতাম আমার উপস্থিতিতে ওর চেহারার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনতো । তবে এটা সিওর বুঝতাম না যে ওটা অস্বস্তি ছিল নাকি আনন্দ । এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল । ঈশিতার সাথে দেখা হচ্ছিল কথা হচ্ছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না । মেয়েটার বিষন্ন চেহারায় কিছুতেই পরিবর্তন আনতে পারছিলাম না ।
তারপর আজকের দিন এল । অফিসে আসতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছিল । লিফটের সামনে এসে দেখি ঈশিতা দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখেও যেন দেখল না ।
আরে এটা কেমন কথা হল ? আমরা একসাথে কাজ করি দুএকটা কথাতো বলা যায় !
আমি খানিকটা হেসে বলল
- গুড মর্নিং
ও যথারীতি আমার দিকে না তাকিয়েই বলল
-গুড মর্নিং ।
লিফট চলে এল । মাত্র দুজনই । আর কেউ উঠল না । আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম যেন আর কেউ না ওঠে । দরজা বন্ধ হতেই ঈশিতাকে বললাম
-মানুষের সাথে এরকম ব্যবহার করা কিন্তু ঠিক না ।
-আপনি কি আমাকে বলছেন ?
-না আপনাকে কেন বলব ? আমার পাশের ফ্লাটে একটা পেট মোটা লোক থাকে সে সবসময় মানুষকে খুব হার্ট করে । তাকে বললাম কথাটা ।
ঈশিতা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । আমি আবার বললাম
-এটা কি ধরনের প্রশ্ন হল ? অবশ্যই আমি আপনাকেই বলতেছি ।
-অপু সাহেব আমি এমনই ।
-কিন্তু আপনিতো এমনটা ছিলেন না ।
-কেমন ছিলাম এটা প্রশ্ন না এখন কেমন আছি এটাই প্রশ্ন ।
-আমার খুব খারাপ লাগে আপনার এরকমটা দেখে । আপনি কি পরিবর্তন হতে পারেন না ? নতুন করে জীবন শুরু করা কি যায় না ?
এবার ঈশিতা খানিকটা কঠিন গলায় বলল
-দেখুন আপনার কি ভাল লাগে না লাগে তাতে আমার কিছু যায় আসে না ঠিক আছে । আপনার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।
কি ? মেজাজটা খানিকটা খারাপ হল । এই মেয়েটার কথা ভেবেই আমার সারাটা দিন যায় । আমার কেবল এই চেষ্টা থাকে কিভাবে এর মুখে হাসি ফোটাবো আর এই মেয়ে কিনা আমাকে গোনার মধ্যেই নেই নেয় ।
আমি কি জলের টানে ভেসে এসেছি । ঈশিতার মুখোমুখি গিয়ে দাড়াই । ও কিছু বলার আগেই ওর হাত দুটো চেপে ধরলাম । বললাম
-এই মেয়ে তোমার প্রবলেম কি ? আমার সাথে এমন কেন কর তুমি ?
আমার তখন রাগে শরীর কাঁপছে । নিজের মধ্যে নেই আমি । কি করছি কি বলছি কিছুই ঠিক নেই । তোমাকে আজ আমি মজা দেখাচ্ছি । বলেই ওকে চেপে ধরে চুম খেলাম ওর ঠোটে । বেশ লম্বা করেই ।
যখন হুশ হল ততক্ষনে লিফটের দরজা খুলে গেছে । ভাগ্য ভাল যে দরজার বাইরে কেউ ছিল না । আমি লিফট থেকে বের হয়ে এলাম । যথন পিছনে ফিরে তাকালাম লিফটের দরজাটা বন্ধ হচ্ছে । আর প্রথম বারের মত ঈশিতার চেহারায় বিষন্নতার জায়গায় আমি বিশ্ময় দেখতে পেলাম ।
কাজ টাজ করছিলাম । কিন্তু মনটা ঐ দিকেই পড়ে ছিল । একটু দুষ্চিন্তাও হচ্ছিল । না জানি ঈশিতা কি একশন নেয় । তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল ও কাউকে কিছু বলবে না । সারা দিনে একবারও ঈশিতার কেবিনে যাই নি ।
পরদিনও গেলাম না । কিন্তু পরদিন অফিস ছুটি হবার একটু আগে পিয়ন এসে একটা চিরকুট দিয়ে গেল । বলল ঈশিতা দিয়েছে । চিরকুট টা খুলে দেখলাম
অপেক্ষা করবেন প্লিজ ।
প্রথমে ভেবেছিলাম ঈশিতা হয়তো খুব ঝাড়ি মারবে । কিন্তু ওকে বেশ নরম দেখাল । আর সব থেকে বড় কথা হল ওর চেহারায় বিষন্ন ভাবটা তুলনা মূলক ভাবে কম ।
অফিসের সামনের একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম আমরা । সত্যি বলছি আজ ঈশিতাকে দেখতে খানিকটা অন্য রকম লাগছে । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আজ ঈশিতা হাসবে । আমার এতো দিনের চেষ্টা আজ সফল হবে ।
আমি আগে মুখ খুললাম, বললাম
-তোমাকে সুন্দর লাগছে ।
একেবারে আপনি থেকে তুমি । হাহাহা !!!
-এই কথা কেন বললেন ?
-কারন আজ তোমার চেহারায় বিষন্নতাটা কম । একটু আছে তবে আমার বিশ্বাস এখন আমার সাথে কথা বলার পর তাও থাকবে না ।
-আপনার বিশ্বাসে সমস্যা আছে । আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই হবে না । আমি শুধু একটা কথা জানতে আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি ।
-তাও তো নিয়ে এসেছ ! বল তোমার কথা ।
-আপনি কেন করলেন কাজটা ?
-কোন কাজটা বল তো ?
-শুনুন ঢং করবেন না । আপনি খুব ভাল করেই জানেন কোন কাজটা !
সরাসরি ঈশিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি কি শুধু এই কথাটা জানার জন্যই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ ?
ঈশিতা চট করেই উত্তর দিল না । কিছুক্ষন পর মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ওর আরো কিছু বলার আছে ।
-আগে তোমার কথা শুনি ।
খানিকটা সময় চুপ করে থেকে ঈশিতা বলল
-আপনি যে কাজটা করেছেন ঠিক এমনই একটা ঘটনা আমার জীবনে এর আগেও ঘটেছে ।
-মানে ?
-মানে সজিব । আমার হাজবেন্ড । বিয়ের আগে ও আমাদের পাশে ফ্লাটেই থাকতো । একদিন লিফটের মধ্যে আপনার মতই কথা বলতে বলতে আমাকে চেপে ধরে কিস করেছিল । ওর খুব রাগ করার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু পারি নি । ঐ ছেলেটা কিভাবে যে আমার মনটা নিজের করে নিল বুঝতেই পারলাম না । আমার সব কিছুই যেন ওর ছিল । আমার সব আবেগ অনুভূতি ভালবাসা সব কিছুই ওর ছিল । ও চলে যাবার পর ওর সাথে সাথে এ সব কিছুও হারিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু ...
-কিন্তু কি ?
-আজ আমি আপনার উপর রাগ করতে পারছি না । আপনি যে কাজটা করেছেন অভিয়াসলি আপনার উপর আমার রাগ করা উচিত্ কিন্তু আমি রাগ করতে পারছি না । আমি কাল সারাটা রাত কেবল আপনার কথা ভেবেছি । আপনি এতো দিন যে আমার পিছনে লেঘেছিলেন তার প্রতিটা কথা আমি কাল রাতে ভেবেছি । খানিকটা অবাক হয়েছে ।
তারপর একটু ইতস্তত করে বলল
-খানিকটা খুশিও হয়েছি ।
খুশি ?
ওমাইগড !
এই মেয়েটা কি বলছে !
এই সুযোগ । আমার যা বলার তা বলেই ফেলতে হবে ।
আমি ওর হাত ধরলাম । ঈশিতা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি বললাম
-আমার চেহারাটা তো এতোটা খারাপ না যে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে । জানো কলেজ লাইফে আমার পিছনে কত গুলো মেয়ে ঘুরতো !
ঈশিতা মুখে একটু যেন হাসির আভা দেথতে পেলাম । তবে ওর চেহারার বিষন্নতা পুরোপুরি কেটে গেছে ।
ওকে বললাম
-জীবনটাকে সব সময় সচল রাখতে হয় । এটাই জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট । কিন্তু তুমি তোমার জীবনটাকে থামিয়ে রেখেছ । একটা জায়গায় আটকে রেখেছ । এতে যেমন তুমি কষ্ট পাচ্ছ তোমার আসেপাশের মানুষ গুলোও কষ্ট পাচ্ছে । এটা কি ঠিক হচ্ছে বল ?
ঈশিতা আবার মাথা নাড়াল ।
-তাহলে কেন এমন করছ ? তোমাকে একটা গল্প বলি । একটা ছেলে একটা মেয়ে অনেক ভালবাসত । কিন্তু একদিন মেয়েটা মারা যায় । এতে ছেলেটা খুব বেশি কষ্ট পায় । সারা দিন কান্না কাটি করে মন খারাপ করে থাকে । একদিন ছেলেটা মেয়েটাকে স্বপ্নে দেখলো । স্বপ্নে দেখলো যে মেয়েটার চারিপাশে খুব চমত্কার পরিবেশ । গাছগাছালি রংবেরংয়ের জিনিস পত্রে ভরপুর । কিন্তু কেবল মেয়েটা যেখানে আছে তার আসেপাশে সবকিছু কেমন যেন প্রানহীন বিবর্ণ । ছেলেটা আরো লক্ষ্য করল আসেপাশের সবার ঘরে আলো জ্বললেও মেয়েটার ঘরে কোন আলো জ্বলছে না ।
ছেলেটা জানতে চাইল তোমার এমন কেন অবস্থা ।
মেয়েটা বলল আমার এ অবস্থার জন্য তুমি দায়ী ।
ছেলেটা খুব অবাক হল । বলল কেন ? মেয়েটা বলল তুমি যে আমার জন্য সারাদিন কান্নাকাটি কর তোমার সেই চোখের জল এসে আমার ঘরের মোমবাতি নিভিয়ে দিয়ে যায় । এই জন্য আমাকে অন্ধকারে থাকতে হয় । আর তুমি যে মন খারাপ করে থাকো তোমার সেই বিষন্নতা আমার চারিপাশটাকে প্রান হীন করে তোলে ।
ঈশিতা বলল
-এ গল্প আপনি কোথা থেকে শুনেছেন ?
-কোথা থেকে শুনেছি ইম্পর্টেন্ট না । মুল থিমটা ইম্পর্টেন্ট । তুমি কিন্তু তোমার ভালবাসার মানুষটাকেও কষ্ট দিচ্ছ । যে ঐ উপরে আছে তোমাকে দেখছে তাকে কষ্ট দিচ্ছ আর যে তোমার কাছে আছে তাকেও ।
ঈশিতা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-আচ্ছা আমি তাহলে কালকেই সাভারে পোষ্টিং নিয়ে নিচ্ছি । ঠিক আছে ?
ঈশিতা এবার অবাক হল ।
-কেন ?
-আরে আশ্চর্য আমার বউ যদি আমার উপরে জব করে তাহলে লোকে কি বলবে ? ঘরেও আমি বউয়ের কথা শুনবো আবার অফিসেও তার কথা শুনবো তাহলে কিভাবে হয় ?
ঈশিতা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল ।
এই প্রথম ওকে আমি হাসতে দেখলাম । হাসলে ওকে কি চমত্কারই না লাগে । হাসতে হাসতেই বলল
-আমার বয়েই গেছে তোমাকে বিয়ে করতে ! কত কিছু ভাবো না তুমি । ঠিক মত কথা শুরু করতে পারলাম না উনি বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছে । বসে বসে স্বপ্নই দেখো তুমি ।
আমি কোন কথাই বলি না । কেবল ওর হাসি ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি । মনে হয় আমি জয়ী হয়েছি ।
কি আশ্চার্য এই মেয়ে গুলো !!!
কি আশ্চার্য এই মেয়ে গুলো !!!
একটু আগেই বাস থেকে নেমে পড়লাম । ঈশিতার পেছন পেছন । একটু অবশ্য হাটতে হবে । হোক !
ঈশিতা আমার সামনে সামনে হাটছিল । একবারও পিছন ফিরেও তাকাচ্ছে না । এমন একটা ভাব যেন আমাকে ও একদমই চেনে না । পিছন থেকে ওকে ডাক দিলাম ।
মনে ভয় ছিল ও হয়তো শুনেও না শোনার ভান করে চলে যাবে । দাড়াবে না । কিন্তু না । দাড়াল ও । আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম । কারনটা আজ জিজ্ঞেস করতে হবে ।
ঈশিতা বোধহয় আমার উপর কোন কারনে রাগ করেছে । আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে চলছে । অবশ্য ওর সাথে আমার খুব যে খুব অন্তরঙ্গ তা কিন্তু নয় । একই অফিসে চাকরি করার সুবাদে ওর সাথে আমার পরিচয় । টুকটাক কথাবার্তা একসাথে আসা যাওয়া করা এই । কিন্তু কদিন থেকে লক্ষ্য করছি সেই টুকুও ও বন্ধ করে দিয়েছে ।
এই জিনিসটা আমাকে খানিকটা কষ্ট দিচ্ছে । ঈশিতা কে আমি বেশ পছন্দ করি । দেখতে সুন্দর কথাবার্তাও সুন্দর । ওর সব কিছুই ভাল । পছন্দ হওয়ার মতই মেয়ে ও । কিন্তু সবসময় ও আমার সাথে খানিকটা দুরুত্ব রেখেই চলত । শুধু আমার সাথে না । সবার সাথেই । কারো সাথে খুব বেশি গভীর ভাবে মিশত না ও ।
আর কদিন থেকে যেন আরো চুপচাপ হয়ে গেছে । আমার সাথে কথা বলছে না একদমই ।
কারন টা কি ? আমার কোন আচরনে কি ও কষ্ট পেল ? বুঝতে পারছি না কিছুতেই । যাই হোক আজ জিজ্ঞেস করবো ।
আমরা মোটামুটি একই জায়গায় থাকি । এক স্টপেজ আগে পিছে । আগে আসার সময় আমরা প্রায়ইএকসাথে ফিরতাম অফিস থেকে । পাশাপাশি বাসেয় সিটে অথবা সিএনজিতে । ওর সাথে টুকটাক কথা বলা চলত ।
কি চমৎকার সময় কাটতো তখন !
একদিন অফিস থেকে আসার পথে বাস নষ্ট হয়ে গেল । সবাই বাস থেকে নেমে যখন অন্য বাসের জন্য ওয়েট করছে তখন ঈশিতা বলল
-আসুন রিক্সা নেই ।
আমি এই কথাটা শোনার জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলাম । জীবনের সব থেকে সুন্দর রিক্সা ভ্রমন ছিল সেটা ।
এভাবেই দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল সুন্দর ভাবে । কিন্তু কি হল ঠিক বুঝলাম না !
ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম ।
-হাই ।
ঈশিতা কোন উত্তর দিল না । আমি আবার বললাম
-অফিস কেমন ছিল আজ ?
-আপনি কি এই কথা বলার জন্য আমাকে ডাকলেন ?
-না মানে !
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কথাটা কিভাবে তুলবো ।
-অপু সাহেব সারাদিন অফিস করে আমি বেশ ক্লান্ত । আমি এখন বাসায় যাবো ।
ওর গলায় কেমন জানি একটা কাঠিন্য ছিল । আমার সাথে কথা বলতে সে রাজি না ।
-আচ্ছা আপনি কি কোন কারনে আমার উপর রাগ করেছেন ?
সরাসরি জিজ্ঞেস করেই ফেললাম ।
-আপনার কেন মনে হচ্ছে যে আমি আপনার উপর রাগ করেছি ?
-না মানে আপনি .....
কি যে বলবো বুঝতে পারলাম না ।
-দেখুন অপু সাহেব রাগ বা অভিমান কেবল কাছের মানুষ গুলোর উপর করা যায় । আপনি আমার এমন কোন কাছের মানুষ না যে আপনার উপর আমি রাগ করবো !
আমার মনটা একটু খারাপই হল । এতো কঠিন করে না বললেও তো চলত ।
-আশা করি আপনি আপনার জবাব পেয়েছেন ।
ঈশিতা আর দাড়াল না । আমি দাড়িয়ে রইলাম ।
ওর কথায় স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে আমার উপর ও রেগে আছে । কিন্তু আমি এমন কি করলাম ? কিছুই মনে পড়ছে না ।
মনটা খারাপ নিয়েই বাসায় ফিরলাম । রাতে বিছানায় শুয়েও কেন জানি ঘুম এল না । কেবলই ঈশিতার কথা মনে হতে লাগল । আর মনে হয় ওর সাথে রিক্সায় চড়া হবে না । মাঝে মাঝে যে বাসে ও আমার পাশে এসে বসত টুকটাক কথা বলত সেটা বোধহয় আর হবে না ।
আসলে মেয়েগুলো এতো জটিল কেন হয় ? এদের বোঝা বড় মুশকিল । কি করেছি সোজাসুজি বললেই হয় !
ঈশিতা আসলেই যেন কেমন ! অফিসের সবার সাথেই ও দুরুত্ব রেখে চলে । তবুও সবার থেকে আমার সাথে একটু আধটু কথা বলত । তাও বোধহয় বন্ধ ।
ওর আচরন বোঝা আসলেই আমার কর্ম নয় ।
তিনচার দিন আগে আমাদের একটা প্রোগ্রাম ছিল । অফিসের কাছেই । বস বলল সবাই রিক্সা নিয়ে রওনা হয়ে যান । দেখি সবাই শেয়ার করে যাচ্ছে । আমার মনে সেদিন কার কথা মনে পড়ল ।
আশা করলাম ও হয়তো আমার সাথেই যেতে চাইবে । অনেকক্ষন অপেক্ষা করলাম কিন্তু ঈশিতা এল না । এমন কি একবার নিজে গিয়ে জিজ্ঞেসও করলাম ।
-যাবেন না ?
-এই তো যাবো ।
একবার তো বলতে পারতো আমার জন্য একটু দাড়ান । একসাথে যাই । কিন্তু হায় !
তবুও দাড়িয়ে ছিলাম । কিন্তু বেশিক্ষন দাড়িয়ে থাকা গেল না ।
ইরিন এসে বলল
-কি ব্যাপার অপু ভাই এখনও যান নি ? যাক ভালই হল । চলুন আপনার সাথে যাওয়া যাক ।
ইরিন মেয়েটা কি স্বাভাবিক ভাবেই বলল !
ঈশিতাও তো বলতে পারতো । ইরিনের সাথেই গেলাম । ঈশিতার সাথে আর রিক্সায় ওঠা হল না । বোধহয় আর কোন দিন হবেও না ।
পরদিন অফিস গেলাম মন খারাপ নিয়েই । আগে কোন না কোন অজুহাতে ঈশিতার ডেস্কে যেতাম দুএক বার । আজ আর গেলাম না । যদিও কাজে মন বসছিল না তবুও মুখ বুজে কাজই করতে লাগলাম ।
আমি কাজ করছিলাম ঠিক এমন সময় ঈশিতা ফোন দিল ।
-ব্যস্ত ?
প্রথমে ভেবেছিলাম রাগ দেখাবো কিন্তু পারলাম না । বললাম
-এইতো কাজ করছি আর কি ? তেমন ব্যস্ত না ।
-একটু ছতলায় আসবেন ?
আমি খানিকটা অবাক হলাম । কালকের ঈশিতা আর আজকের ঈশিতা কেমন ভিন্ন মনে হল ।
-আচ্ছা আসছি ।
আমাদের এই বিল্ডিংটায় প্রায় ১0/১২ অফিস । আর ছতলায় হল ক্যান্টিন । সব অফিসের এই একটা কমন ক্যান্টিন । তাই মোটামুটি ভিড় থাকে সব সময় । তবে তুলনা মুলক ভাবে এই সময়টাতে কম থাকে লোকজন । অফিসের পিক আওয়ার তো !
ঈশিতাকে দেখলাম একদম কোনার একটা টেবিলে বসে আছে মাথা নিচু করে । আমি সামনে গিয়ে বসতেই মাথা তুলে তাকাল ।
ঈশিতার দিকে তাকিয়ে কেমন অবাক হলাম । ওর চোখ দুটো কেমন জানি ফোলাফোলা । বোধহয় কেঁদে কোন কারনে ।
-আমি বললাম কি হয়েছে ?
ও কোন কথা ধা বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-আরে বলতে হবে তো কি হয়েছে । তা না হলে বুঝবো কিভাবে ?
অনেকক্ষন পর ঈশিতা বলল
-আই এম সরি !
-সরি ? কেন ?
-কালকে আমি আপনার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি ।
এই বলে ঈশিতা আবারও মাথা নিচু করলো । খারাপ ব্যবহার তো করেছে । কিন্তু এই কথা তো আর মুখে ওর বলা যায় না । আমি বললাম
-না ঠিক আছে সমস্যা নাই ।
-না ঠিক নাই ।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম ঈশিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে । আশ্চর্য পানি পরছে কেন ?
-আপনি কাঁদছেন কেন ? প্লিজ কাঁদবেন না । আমি কিছু মনে করি নি । সত্যি বলছি কিছু মনে করি নি ।
ঈশিতা বলল
-আসলে আমি খুব রেগে ছিলাম আপনার উপর । এই জন্য খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি । কিন্তু বাসায় গিয়ে এতো খারাপ লাগছিল । সারা রাত আমি ঘুমাতে পারি নি ।
ঈশিতার বেশ সময় লাগল শান্ত হতে । আমি ওকে সামলে নেওয়ার সময় দিলাম । পুরোপুরি শান্ত হলে আমি ওকে বললাম
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
-করুন ।
-আপনি আমার উপর কেন রাগ করেছেন বলেন তো ?
ঈশিতা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি আবার বললাম
-আপনি রাগ করেছেন বুঝতে পারছিলাম কিন্তু কারনটা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না ।
একটু চুপ করে থেকে ঈশিতা বলল
-আপনি সেদিন ইরিনের সাথে রিক্সায় কেন উঠলেন ?
-মানে ?
কি বলছে এই মেয়ে ! আমি ইরিনেয় সাথে রিক্সায় উঠলে ও কেন রাগ করবে ?
কেন রাগ করবে ? আমি ঈশিতার দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
আচ্ছা ! এইবার বুঝলাম । ইরিনের সাথে রিক্সায় উঠলে ঈশিতা কেন রাগ করবে আমি বুঝতে পারলাম ।
আসলেই এই মেয়েদের মন বোঝা কত কঠিন ! ঈশিতার আচরন এমন ছিল আমি কোন দিন ভাবতেই পারি নি ও এমনটা চাইবে । আমি বললাম
-আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিল । তখন নিশ্চই আপনার বলা উচিৎ ছিল ।
ঈশিতা এবারও কোন কথা বলল না । কেবল আমার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-এই টুকু বললেই কিন্তু হয়ে যেত ! হটাৎ ঈশিতা বলল
-আপনাকে ইরিনের সাথে দেখে এতো রাগ হল । মনে হল .... মনে হল ...
-কি মনে হল ?
-জানি না কি মনে হল ! আপনি আর কখনও ইরিনের সাথে রিক্সায় উঠবেন না । কোন দিন না ।
আমি হেসে উঠলাম । বললাম
-তো কার সাথে উঠবো ? আপনার সাথে ?
আমি হাসতেই থাকি ।
-হাসছেন কেন ?
-তোমার ছেলেমানষী দেখে হাসছি ।
-কি ছেলেমানুষী করলাম ?
-কাল তুমি কি বলেছিলে মনে আছে ?
-কি ?
-বলেছিল কাছে মানুষের উপরই কেবল রাগ অভিমান করা যায় । আমি আজকে একটা কথা বলি ! তুমি যেমন করে আমাকে রিক্সায় উঠতে মানা করলে .... কেবল আপন মানুষ গুলোই ওভাবে বলতে পারে । এখন বল তুমি কি আমার কাছের মানুষ ?
ঈশিতা কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল । আমি হাসি মুখে বললাম
-চুপ করে থেকো না । বল ।
ঈশিতা চুপ করে থাকল । কেবল এক ভাবে আমার দিকে তাকিয় থেকল ।
কি আশ্চার্য এই মেয়ে গুলো । মেয়েগুলো মুখে এক কথা আর চোখ বলছে আর এক কথা । একটু মুখ ফুটে বললে কি হয় ? এমন কি ক্ষতি হয় ?
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)