[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১২

জ্যোৎস্নার আলো আঁধারে তোমার কথা মনে পড়ে


জ্যোৎস্নার আলো আঁধারে তোমার কথা মনে পড়ে
আজ চাঁদ উঠেছে আকাশে, হেলে পড়েছে শেষ রাতে পূবাকাশে
আমি চাঁদের দেখা পাচ্ছি এখানে বসে
জ্যোৎস্না ছায়া খুব তির্যক হয়ে পড়ছে আমার গায়ে
কিন্তু আমি তো খুঁজে বেড়াচ্ছি আমার চাঁদনি,
জ্যোৎস্নার চেয়ে তীব্র আলো বিলিয়ে গেছে যে আমার জীবনে
আমি আমার চাঁদনি খুঁজেছি আকাশে তবু আকাশে চাঁদ দূর থেকে
হেসে কেন বলে খুঁজে যা আমায়, মেখে নে আমার জ্যোৎস্না গায়ে
হয়তো কখনো তোর চাঁদনিকে পেয়ে যেতে পারিস
কোন এক অমাবস্যার রাতে।


আজ চাঁদ এসেছে আকাশে আমার চাঁদনি আসেনি
তবু তার ভালোবাসাটুকু ভেসে বেড়ায় বাতাসে আমি বুঝতে পারি
আমি মেখে নেই গায়ে তার ভালোবাসার ছোঁয়া
অনেক দূর কোন দেশ থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে যা আমাকে
বাতাস ধীরে ধীরে তীব্র হতে থাকে
আমি কান পেতে থাকি বাতাসে
দূর থেকে তার চুড়ির নিক্বণ ধ্বনি শুনব বলে।


এখন আমার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ
তোমার অবগাহন এখন কাঠফাটা রৌদ্রে
তুমি বসে আছ সৌরজগতের সেই অপর পাশের দেশে
আমার মধ্য দুপুরে সন্ধ্যে ঘনাবে তোমার আকাশে
আমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখো তো একবার
এখনো কি তোমার ইচ্ছে করে, আমার হতে?

নাকি হতে চাও জল জ্যোৎস্নার রাতের বন হরিণী
সেই আগেকার দিনের মতন করে?
তোমার বন হরিণী রূপ দেখি না কতকাল হয়ে গেল
মন কাঁদে আজ তোমায় বন জ্যোৎস্নায় দেখব বলে
জ্যোৎস্নার নগ্নতায় খুলে খুলে দেখব বলে
তোমাকে তোমা রূপে।


তুমি যেন সৌর জগতের কোন ওপার হতে
শত কোটি বছরের পথ পারি দিয়ে
নেমে এসেছিল মর্তের মাটিতে
নীল জ্যোৎস্নার ছায়া ছায়া দেশে
কোন একদিন আমায় ভালোবেসে।


তুমি ছিলে আমার বন হংসী মনোহারিণী
আজ আমায় ফেলে হয়েছ কার ঘরণী?
আজ তোমার আঙ্গিনার ময়ূর খেলা করে আনমনে
ছাতিম গাছে ধান শালিকেরা বাসা বাধে নির্ভয়ে
তোমার আকাশে জ্যোৎস্না নেমে আসে আলো হয়ে
তোমারই ছাদে বৃষ্টি ঝরে পরে সুর হয়ে;
আমি অন্ধকারে পড়ে রই
কালো জ্যোৎস্নার তিমির আঁধারে।


আজ আমি যেন এক বৃত্তের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছি
কুল খুঁজে বেড়াই পরিধির দিকে, যতদূর চোখ যায়
পুরো ব্যাসার্ধ জুড়ে আছ শুধু তুমি
সেই অসীম পর্যন্ত, যতটুকু দেখা যায়।


আমার হ্রদয়ে আঁকা ছিল যে চাঁদ
রাতের আধারেতে তোমারি বেদনায় ম্লান হয়ে যায় ডুবে
হ্রদয়ে ক্ষরণ রক্ত ঝরায়
ভোরের আকাশে লাল সূর্য হয়ে ভেসে ওঠে ওই পূবে।


josnar chaya

ভালোবাসার অভিমান ..


ভালোবাসার অভিমান
যখন ইচ্ছে ভালোবাসা, কাছে টেনে নেয়া
উনিশ থেকে বিশ হলেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়া
দেখছি আমি প্রথম থেকেই নতুন কিছু নয়
অভিমানে কষ্ট যে পাও তাতেই আমার ভয়।


তুমি আমি দুই ভুবনের করি দুই সংসার
কষ্ট পাওয়া তোমার একার আমি যে কোন ছার
নিজের ধ্যানে মগ্ন থেকে ভুল করি যে-কেউ
কথার ঝড়ের ফলশ্রুতি অশান্ত এক ঢেউ।


রাগের ঝড় মনের মাঝে বাষ্প হয়ে ফোটে
কথার কাঁটায় মনের মাঝে ঝড় তুলে যে উঠে
অভিমানের কথার চাবুক ঝড়ের মত চলে
অসংলগ্ন গালাগালি বরফ যে যায় গলে।


মনের মাঝে বয়ে চলে রাগের রূপান্তর
একটি ভুলেই দূর করে দাও অন্যরকম পর
অপেক্ষাতে বসে বসে আমি যখন থাকি
তুমি থাক ব্যস্ত তখন তোমার তাতে কি?

ভুলো মনের মানুষ আমি ভুল করি তা মানি
ভেবো একবার মাশুল গুনতে কাঁদতে আমি জানি
কত করে বোঝাই তোমায় বকা-ঝকা আর না
মনের ভেতর দিও উঁকি দেখতে পাবে কান্না।


অন্ধ তুমি রাগলে তখন সবকিছু যাও ভুলে
রক্ত ঝরাও হৃদয়েতে গালির ঝড় যে তুলে
অপমানের কথার চাবুক আমার পিঠের পরে
কষ্টগুলো বুকের ভেতর কান্না হয়ে ঝরে।


বুঝবে হয়তো ভুল তোমার ভাঙ্গবে অভিমান
আজকে না হয় সয়ে যাব তোমার অপমান
তোমায় আমি ভালোবাসি বুঝবে এক দিন
শুধব আমি তোমার দেয়া ভালোবাসার ঋণ।


215610_140835335988528_4359991_n

বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১২

মগজ পোড়া কাব্য

মগজ পোড়া কাব্য
522272_329308323797136_100001539147249_878805_2085994076_n[1]

বুকের মাঝে কষ্ট জমাট
বুকের মাঝে রংধনু রং;
বুকের মাঝে মুখ লুকানো
বুকের মাঝে বাসন্তী ঢং।
বুকের মাঝে সাগর হারায়
পৃথিবীটা ছোট অনেক;
চোখের মাঝে যা দেখা যায়
বুকে থাকে হাজার জমিন।

তুমিও কি স্বপ্ন লুকাও
দু’চোখ বুজে বুকের মাঝে;
স্বপ্ন পোড়া ছাই গুলো সব
জমে থাকে বুকের পাশে।
মগজ পোড়া কাব্যগুলো
বুকের মাঝে ঠিক জ্বলে যায়;
জ্বলে যাওয়া কাব্যগুলো
হাজার দুয়ার ঘরকে সাজায়।

বুকের মাঝে নিজের ছায়া
হঠাৎ দেখে আতকে উঠি;
স্বপ্ন গুলোর মরন দশা
বুকের মাঝেই সুখ যে খুঁজি।
তোমার বুকের জরির আচঁল
আমার বুকে আগুন জ্বলে;
তুমিই আমার কাফন কেন
ভালোবাসার আন্তরালে।

কেমন করে আটকে থাকি
হাজার বছর খাঁচার মঝে;
খাঁচার মাঝে আটকে থেকে
যুদ্ধ করি নিজের সাথে।
বুকের মাঝে কষ্ট জমাট
বুকের মাঝে সাগর কাঁদে;
বুকের মাঝে তুমি পোড়
বেনারসী শাড়ী পরে।

বুকের মাঝে কষ্ট জমাট
বুকের মাঝে রংধনু রং
বুকের মাঝে মুখ লুকানো
বুকের মাঝে বাসন্তী ঢং


* [লিখেই পোষ্ট ভুল থাকতে পারে ]

উজান

উজান
তোর মনে পড়ে?
ছোটবেলায়
গঙ্গার ঘাটে বসে বলতিস,
আমরা বড় হলে
গঙ্গায় সাঁতার কাটবো,
আর আমি হাসতাম।


কতদিন আগের কথা,
আমরা তো এখন বড়
কিন্তু
আমাদের সাঁতার কাটা
আর হয়নি।


চল না
আবার সেই ছোটবেলার মত
দু’জনে ঠিক করি
আমরা সাঁতার কাটতে যাবো।

গঙ্গার উজানে ভাসতে ভাসতে
আবার নতুন করে
শুরু করবো ছোটবেলা
আমাদের দুজনের ছোটবেলা।


খুব খুব ইচ্ছে করে রে
দুজনে একসাথে
ভাসতে।


আবার এটাও জানি
ঠিক ছোটবেলার মত.
এই ইচ্ছেটাও হারিয়ে যাবে
যেমন হারিয়েছে ছোটবেলা।


হয়তো অপেক্ষা করবো
আরও আরও বড় হওয়ার।
যত বড় হব
তত দুরে যাবে ছোটবেলা
সাথে ইচ্ছেটাও।

বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১২

একটি রক্তাক্ত হৃদয়ের গান

 

একটি রক্তাক্ত হৃদয়ের গান


অনেক অনেক দিন আগে তানি নামে একটি মিষ্টি মেয়ে বাস করত। প্রতি সন্ধ্যায় সে দারুণ সুরেলা একটি গান গাইত। একজন তরুণ একদিন বাড়ীতে ফেরার পথে মেয়েটির বাড়ীর সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার গলার স্বর শুনতে পেল। ছেলেটির নাম ছিল অপু। জীবিকা নিবার্হের জন্য তাকে সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করতে হত এবং সন্ধ্যা নাগাদ সে ঐ রাস্তা ধরে হেঁটে বাড়ী ফিরত। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে সে দিনের পর দিন তানির গান শুনতে শুরু করল। বাড়ীতে ফেরা তার জন্য খুব একটা জরুরী বিষয় ছিল না। পৃথিবীতে তার আপনার বলতে কেউ ছিল না। অথচ তানির সুর তার কাছে চমৎকার ঝরণা ধারার মত ভেসে আসতে লাগল। বসন্তের ফোটা ফুলের রঙিন সৌরভ জড়ানো কোমল বাতাসের ন্যায় সংগীত ধ্বনি অপুর সত্ত্বা থেকে দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের গ্লানি ধুয়ে দিত। যখনই সে তানির গানে কান পেতে থাকত তখনই এই একই ঘটনা ঘটত। অপু ভাবল যে সে যদি মেয়েটির দেখা পায় তবে তার এই মন মাতানো গান শোনানোর প্রতিদান হিসেবে একটি সুন্দর উপহার দিবে তাকে। কিন্তু তাকে কী দেয়া যায়? একতোড়া ফুল? নাকি একটি পুতুল? সুন্দর একখানা পোশাক দিলে কেমন হয়? অপু দ্বিধায় পড়ে গেল। তারপর সে সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটির সাথে দেখা করার এবং তাকেই জিজ্ঞাসা করবে যে, কোন জিনিস তার সবচেয়ে বেশী পছন্দ। পরদিন অপু খুব সহজেই মেয়েটির ঘরে প্রবেশ করল। অন্য কেউ সেখানে ছিল না। শুধু অপু আর তানি। অপুর কাছে বেশ অন্যরকম লাগল যে অপরিচিত হলেও তানি তাকে অত্যন্ত সমাদর করল। তাদের পরিচয়ের শুরু থেকেই তারা একে অপরের বিষয়ে অনেক কিছু আলাপ করল। যদিও সেই প্রথম আলাপ দীর্ঘ সময়ব্যাপী হল না তবু ধীরে ধীরে তা দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হল। সত্যি কথা বলতে, তানির অতীত ইতিহাস অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। তার বাবা-মা একটি বিধবার ভীষণ ক্ষতি করেছিল এবং সেই মহিলা তাদের সন্তানসহ অভিশপ্ত করেছিল। তানির কাহিনীর এ পযায়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ায় আমি আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, শৈশব থেকে তানি গৃহবন্দি হয়ে পড়ল এই অভিশাপের কারণে। যাই হোক, আমাদের প্রধান নায়ক অপু আপাতত কোন কারণ ছাড়াই খুবই আনন্দের সাথে দিনাতিপাত করছিল। তার দিনগুলো এতটাই ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছিল যে, তার মনের বিস্তৃত জায়গা কেন্দ্র করে তানির অবস্থান উপলব্ধি করার সুযোগই পেল না। তানির প্রেমে অপু পড়েছিল কিনা জানা নেই তবে অপুর মনে হতে লাগল যে, তার সমগ্র নিঃসঙ্গ জীবনেতিহাসের একটি অধ্যায় তানি নয় বরং সে হচ্ছে পুরোটুকুর সারকথা। অপরপক্ষে, তানির আকাঙ্খা ছিল একটু অন্যরকম। সে চাইছিল যেন অপু হয় তার উদ্ধারকর্তা। বাহির জগতের আলো দেখার জন্য তানি কতই না অপেক্ষা করে আছে! আকাশকে ছুঁয়ে এসে ধরণীর ধূলি অঙ্গে মেখে খোলা হাওয়ায় বুক ভরে নেয়ার স্বপ্ন লালন করেছে সে। যখন অপু সেটা বুঝতে পারল তখন সে কিঞ্চিৎ বিষন্নতার সাথেই আত্মাহুতির মহান সুখ অনুভব করতে পারল। প্রকৃতপক্ষে, তানির অভিশাপ দূরীকরনে সত্যিকার অর্থে তাকে ভালবাসে এমন কোন ব্যক্তি আর তার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হবার দরকার ছিল। অপুকে নিজের দুই হাত দ্বারা তার হৃদপিন্ড তানির প্রতি উৎসর্গ করতে হবে। অপু স্বেচ্ছায় তা করতে প্রস্তুত ছিল কারণ সে ভাবল যে, তানির লালিত বাসনা পূরণের পণ সে একদিন করেছিল। সবোর্পরি, তানির খুশীই অপুর সন্তুষ্টি। রীতি পালনের উপযুক্ত সময় যখন এল তখন অপু তার বুক বরাবর ধারাল ছুরি হাতে তুলে নিল। সে এক মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। কাঠের মেঝেতে রক্তলাল পোশাকের অংশ ছড়িয়ে বসে ছিল তানি। তার উজ্জ্বল চোখ মাটিতে নিবদ্ধ ছিল। এই বিভৎস দৃশ্য অবলোকন করা তার পক্ষে ছিল অসম্ভব। অপু জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি আমাকে ভালবাস?
তানি অনড় থাকল এবং কোন জবাব দিল না। সে আবার প্রশ্ন করল। তানি চোখ তুলে তাকাল অপুর সুগভীর চোখের পানে। তানির চোখের পাতায় দুই ফোঁটা অশ্রুকণা ঝিলমিল করছিল। অপু তৃতীয়বারের মত একই কথা জিজ্ঞাসা করল। এবার তানি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে উত্তর দিল, আমি জানি না।
অপুর শেষ ইচ্ছা ছিল তানি শেষবারের মত একটি গান তাকে শোনাবে যেন তা নিদারুণ যন্ত্রণা মুছে দিতে পারে। তানি তা-ই করল। তানি গাইতে শুরু করার অনতি বিলম্বে অপু বুক চিড়ে ফেলল এবং হৃদপিন্ড কেটে বের করে নিয়ে এল। ওটা তানির হাতে তুলে দেয়ার সাথে সাথেই অপু মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল এবং তাতে জোরাল শব্দ সৃষ্টি হল। তক্ষুনি ঘিরে থাকা চার দেয়াল কাঁপতে আরম্ভ করল এবং অসংখ্য চিড় ফুটে উঠল। চিড়গুলো এতটাই বৃদ্ধি পেল যে ধীরে ধীরে দেয়াল ধ্বসে পড়তে লাগল। অপুর মৃতদেহ তানির গন্ডির ধ্বংসাবশেষের নিচে ঢাকা পড়ল। ঠিক সেসময় তানি ঋজু ভঙ্গীতে উঠে দাঁড়াল অপুর সমাধির মধ্যস্থল হতে। এরপর থেকে তানি আশীবার্দপুষ্ট জীবন লাভ করল। সে স্বাধীন জীবনযাপন করেছিল এবং যেসকল নিয়ামত থেকে সে বঞ্চিত ছিল তা উপভোগ করেছিল। সে তার ভালবাসা এবং অপুর ভালবাসার স্মৃতিও অন্যান্য সাধারণ মানুষের মাঝে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আর কোনদিন সে গান করেনি। অবশেষে বলা যায়, তানির মধুর গানের মূল্যস্বরূপ অপু তাকে এমন একখানা উপহার দিয়েছিল যা তার সুরমূর্চ্ছনায় চিরদিনের মত নৈশব্দ এনে দিল।

দূরের সুরের কথামালা


দূরের সুরের কথামালা





যে চিনে সে চিনে নেবে অন্ধরেখাগুলো
আমার কী দায়? পথে পথে মৃত নদী
হয়তো নদীও নয়, একগুচ্ছ চুল
মেঠোখাল হয়ে মিশে আছে এঁকেবেঁকে।

আমি থাকি নদীর ওপারে- ওই ঘরে
এখানে হাওয়ায় মেঘ, অচেনা সংকেত
ক্ষণে ক্ষণে ধরা দেয় মনে। রোদ এসে
ঝড় এসে বলে, কিছু কী ফেলে গেলেন?

আমি আছি এইখানে, এই নদীতীরে
কেনই বা যাব, কিছু তো ফেলে আসিনি!



এ কি আলোড়ন? স্তব্ধতার স্মৃতি নিয়ে
একরাত ঘুমে কাটে, অন্যরাত জেগে
একবার ডাকি তারে, অন্যবার ভাবি
এ কি আলোড়ন, নাকি শিরশিরে হাওয়া?

দূরে থেকো ঝাঁকে ঝাঁকে, কাছে এসো একা
এইখানে আমি একা, মৌনতার দিকে
সঁপিনু পরাণ। তবু বাসনার ফাঁদে
সাধনা সাধনা বলে ডাকি কলহাস্য।

এ কি শিহরণ? শরীরের লোমকূপ
একবার মরে বেঁচে উঠে তিনবার।



কখনো জাগিনি আগে এমন সকালে
পাহাড় ডিঙিয়ে নদী থেকে উঠে এল
স্ফটিক সময়। মনে হয়, ঢেউকেলি
হঠাৎ জোয়ার নিয়ে এসেছে এখানে।

এ কোন সকাল? শয্যা থেকে সরে যায়
ভিন্ন কোনো স্বাদশয্যা, মানুষের গন্ধ
উড়িয়ে-পুড়িয়ে নিয়ে যায় ঢেউগুলো
তবে কী তোমাতে আমি ভাসমান মেঘ?

কিছুটা সময় থাকি বালিরপ্রাসাদে
এ তো বালি নয়, এক সন্ন্যাসজীবন!




যতদূরে বৃষ্টিরেখা ততদূরে তুমি
তারপর চোখের সীমানা ভুলে গিয়ে
রয়েছি তাকিয়ে। ধোঁয়া উঠে পথজুড়ে।
কোথাও কী জ্বলে গেল, নাকি সব ধুলি?

পথের সমস্ত রেখা, ধারাপাত জানি
তবুও বেপথু হাওয়া উড়িয়ে নিয়েছে
খড়কুটো। দিকচিহ্ন। যেন অন্ধরাতে
ছুটে আসে খরতপ্ত হাওয়ার দাপট।

পথ থেকে সরে গিয়ে বিপথেই হাঁটি
হেঁটে যেতে যেতে দেখি, সামনেই তুমি।


বালুতটে থেমে গেছে স্রোতের কাঁপন
স্মৃতিগুলো ফাঁকা। মনে হয়, কেউ যেন
কেড়ে নিল মানুষের তিনভাগ দুঃখ
বাকিটুকু হারাল সূদুরে, শান্তস্রোতে।

এখন তো কিছু নেই, স্মৃতিহীন তটে
হঠাৎ কুকুর আসে, হরিণের পাল
ছুটে যায় বনে। যেন দুপেয়ে কুকুর
হন্য হয়ে খুঁজে হরিণীর হাড়-মাংস।

আমিও নিখোঁজ আজ, বনে বনে ঘুরে
মিশে গেছি এই বন্যকুকুরের দলে।




কেশর উড়িয়ে আসে প্রলয়ের ঘোড়া
তোমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, বলে
এখানে জীবন মানে উদ্যত শরীর
এখানে জীবন মানে কেশর, নখর।

কামেপ্রেমে তার খোঁজ রাখেনি তো কেউ
তবু বলি, তাকে আনো পাহাড় চূড়ায়
গড়িয়ে যাবার আগে গলে যাবে সব
মতিভ্রম, ফের জন্ম নেবে অপরূপ।

কেউ বাঁচে অথবা মৃত্যুর দিকে যায়
তুমি যাবে কোন পথে, কোন আলিঙ্গনে?




শুয়ে আছি মুখোমুখি। রাতের বেঘোরে
কখন যে কেটে গেল ছন্নছাড়া ঢেউ
বুঝি না ঠিকানা। তীরে, ভাসমান মেঘ
যেন লেগে আছে দুটি ঠোঁটের কোণায়।

বিষ ঢালি, শিশ্নে লেগে থাকা রস ঢালি
আকাশ ঘনিয়ে ঝড় এসে বলে যায়
আদিঅন্তহীন মহামিলনের কথা
আমরা কোথায় যাব, আদিরূপযোনী?

কোমলকঠিন হয়ে ঘনশ্বাসমূল
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়- হায়, রতিসুখসার!




সবাই ছেড়েছে, জানি তুমি তো যাবেই
জীবন্মৃত। একে একে বৃষ্টির ভিতর
ছড়িয়ে পড়েছে বেলপাতা, নীলশাড়ি
ভাঁজে ভাঁজে যেন এক নৌকার দুলুনি।

আমি দুলি, সে-ও দোলে প্রায় প্রতিক্ষণে
মাথাটা ঝাঁকিয়ে বলে, কোথায় যাবেন?
পেছনে বিস্ফার ঢেউ, কাঁপে মত্ততায়
যেন সে সন্ধ্যার বাঁকে দেখা রাজহাঁস।

আমি হাসি, সে-ও হাসে প্রায় প্রতিক্ষণে
শেষে উড়ে যায় বৃত্ত থেকে বৃত্তান্তরে।




সব ছিন্ন করে দুটি কিচিরমিচির
উড়ে যাচ্ছে, উড়ে যাচ্ছে যুগযুগান্তর
যেন সুর, যেন ঘোর। উড়ে যাচ্ছে তারা
রক্তবীজ মুখে পুরে দূর অজানায়।

ডানাদের জন্ম জানি, মৃত্যু জানি বলে
জেগে আছে অতিকায় হাতি, দুটি ঘোড়া
পিঠে দাগ, দাগ থেকে দারুণ দুনিয়া
ঘুরছে, উড়ছে। যেন এক মোহ, জাদুচক্র।

কোথায় তোমার ছদ্মবেশ, জাদুবুড়ো
বৃক্ষছায়াতলে থামো, জিরোও এখন।


১০
কাঁদে না, কাঁপে না সুর দূর হাওয়ায়
এ তো সুর নয়, অন্ধ সানাইপ্রহার
কোথা থেকে এল? উদগ্রীব হয়ে শুনি-
সুর, সে তো তোমার মতোন একা নয়।

কায়া নিয়ে মায়াহীন হয়ে ছুটে চলি
মোহনায়। মেঘনা কী নেবে না আমাকে?
দরিয়ার বুক থেকে উঠে হুহু সুর
কাঁপে কেওড়াবন, এই বুঝি এল ঝড়?

কোনো সুর কোনো বাঁশি কাঁদে না এখন
কেননা তোমার মতো কেউ একা নয়।