[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১২

একান্ত নীরব ........




তোমার কাছে চাইনি কিছু,
জানাই নি মোর নাম,
তুমি যখন বিদায় নিলে
নীরব রহিলাম
একলা ছিলেম কুয়ার
ধারে নিমের ছায়াতলে,
কলস নিয়ে সবাই তখন
পাড়ায় গেছে চলে
আমায় তারা ডেকে গেল,
আয় গো বেলা যায়
কোন্ আলসে রইনু বসে
কিসের ভাবনায়।।
পদধ্বনি শুনি নাইকো
কখন তুমি এলে,
কইলে কথা ক্লান্তকন্ঠে
করুণচক্ষু মেলে
তৃষাকাতর পান্থ আমি
শুনে চমকে উঠে
জলের ধারা দিলেম
ঢেলে তোমার করপুটে
মর্মরিয়া কাঁপে পাতা,
কোকিল কোথা ডাকে
বাবলা ফুলের গন্ধ ওঠে
পল্লীপথের বাঁকে।।
যখন তুমি শুধালে নাম
পেলেম বড়ো লাজ
তোমার মনে থাকার
মতো করেছি কোন্ কাজ!
তোমায় দিতে পেরেছিলাম
একটু তৃষার জল,
এই কথাটি আমার মনে
রহিল সম্বল
কুয়ার ধারে দুপুরবেলা
তেমনি ডাকে পাখি,
তেমনি কাঁপে নিমের পাতা
আমি বসেই থাকি।।


বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

ছেঁড়া পাতার ফুটো...



তবু কঙ্কালের শোষণ-পেষণ ,
বিরক্ত কণ্ঠে নিকোটিনের জন্যে হাঁকডাক ।
তোমাদের আঙ্গিনায় থাকা কুকুরটার মত ।

কপালে যদি বিষফোঁড়া ওঠে
চাইলেও কি তখন সেজদায় যাওয়া যায় ?

মরচেধরা লোহার কাস্তে ,
বহুদিনের স্মৃতি দিয়ে ঠাঁসা ।
কিন্তু এত স্মৃতিও ঘরের
অধিকার দিতে ব্যর্থ ।

আমি আজও আশা নামের একটা শব্দকে
নিজ অভিধানে নিতে চাইছি ।
স্বপ্নে কখনোবা সে আসে ,
কিন্তু আমার প্রিয়জনেরা কখনো আমায়
কুম্ভকর্ণ হতে দেয় না ।

যেদিন আমার ছায়া আর আমার নয়,
সে দিনটার অপেক্ষায় আছি ।
সেদিনের আগে হারতে চাই না ।

বৃষ্টি মুহূর্ত



 অনেক দিন পরে এমন সরু আর হিলহিলে কোমর দেখল অনিরুদ্ধ। মেয়েটা রোগা নয়, একদমই ঠিক ঠিক। লম্বা, ছিপছিপে চেহারা, মাথার চুলগুলো এলোমেলো, গায়ের রং একটু চাপা, নাক-চোখ শার্প। সুশ্রী। একঝলক তাকালেই বোঝা যায় বেশ বুদ্ধিমতী। সেই সঙ্গে একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে– শাড়ি পরার অভ্যেস নেই। তবে শাড়ি পরেছে, কারণ নির্ঘাত শাড়ি পরতে হয়। শাড়ি পরার কায়দাটা অনেকটাই লো-ওয়েস্ট জিনস পরার মতো। এত নিচে ঠিক কেউ শাড়ি পরে না। তাই জন্যে ওর কোমর অনেকটাই উন্মুক্ত।
মেয়েটার কানে মোবাইল, এক ঝাপড়া চুল কান আর কাঁধ ঢেকে ঝুলছে। কথা বলছে হিন্দিতে। অনর্গল। বাস স্টপে বেশ ক’দিন পর পরই মেয়েটার সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে অনিরুদ্ধর। অথবা এভাবে বলা যায় মেয়েটার সঙ্গে কোন সময় দেখা হতে পারে অনিরুদ্ধ জেনে গেছে। সেই সময়টাই সে এসে দাঁড়াচ্ছে বাস স্টপে। সেই একইভাবে শাড়ি পরা। কোমর থেকে গোঁজা শাড়ি ভীষণ বিপজ্জনকভাবে আটকে, যেন যে কোনও মুহূর্তে খুলে যেতে পারে।
মধ্য চল্লিশের অনিরুদ্ধ ঘোষ। বাস স্টপে আরও অনেকের চোখ মেয়েটার দিকে। ঠিক মেয়েটার দিকে নয়, বরং বলা যায় মেয়েটার কোমরের দিকে। অনিরুদ্ধের ভেতরটা চিড়বিড় করে ওঠে। সব দেখছে দেখো, যেন সিনেমা দেখছে।
রোজকারের মতো একই বাসে ওঠে অনিরুদ্ধ। আজ সিট পেয়ে যায় মেয়েটার মুখোমুখি। হঠাৎ মেয়েটা বলল, ‘আজ আমাদের কপাল ভাল বলুন, পর পর ফাঁকা বাস।’
‘এখানে একটু অপেক্ষা করলে ফাঁকা বাস পাওয়া যায়।’ অনিরুদ্ধ বলল।
‘ওরে বাবা! ফাঁকা বাস আসে। কিন্তু সবাই হুড়মুড় করে এমন ওঠে, আর সিট পাই না।’
‘হ্যাঁ, তা তো উঠবেই।’
‘ছেলেরা সব সিট পাবে। যদি একটা-আধটা থাকে তখন বসি। কটা বাস ছাড়ব বলুন। ছেলেদের সঙ্গে আমি পারি!’
‘ঠিক কথা।’
‘কিন্তু আমি একটা জিনিস দেখেছি, আপনি কখনও বাসের সিট পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন না, কেন?’
‘ইচ্ছে করে না।’
‘ইশ আপনার ইচ্ছে করলে আমার ভাল হত, আপনি আগে উঠে আমার সিট রাখতেন।’

শারদ আকাশ মায়াবিকেল



শারদ আকাশ ছিল সেদিন ;
ছিল তুলোর মত মেঘমালাদের অবিশ্রান্ত লুটোপুটি।
তুমি- আমি ; শুধু আমরা দুজন বসে ছিলাম
বিকেলের সোনারোদ চুম খাওয়া জলের ধারে ।

কি অদ্ভুত নির্লিপ্ত দুটি হৃদয় ;
তুমি- আমি আমরা দুজন পাশাপাশি ।
স্থির দৃষ্টির গহীনে পৃথিবীর তাবৎ পিপাসা-
কত শতকথা- স্বপ্নকথা, ভিড় করেছে মনের কোনে;
হয়তঃ তোমারও ।

শান্ত সেই পুকুরের জল কান পেতেছে;
কান পেতেছে পাড়ে দাঁড়ানো সারি সারি বৃক্ষরাজি -
যেখানে পাতা ঝরে পড়ার মর্মর ধ্বনিতে চকিত হয় পথিক;
নিরবতা মোড়ানো অখণ্ড সেই মায়াবিকেল।
একজোড়া শালিখ খুব সন্তর্পণে দিয়েছে উঁকি
পাতার আড়াল থেকে-
রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এসেছে দলবেঁধে;
এসেছে জ্যোৎস্নার জোনাকিরা।

নিঃশব্দে আসা শব্দরাশি নিভৃতে বেঁধেছে বাসা কণ্ঠনালীর নিচে;
তবু ভাঙ্গেনি নিরবতা।
না তুমি না আমি ।
বিভোর গভীর স্বপ্নবৃষ্টিতে ভিজেছে হৃদয়;
যেন কেটেছে অনন্ত প্রহর !!

মৃদু বাতাসে শিরশির দেহে সবুজ পাতাদের অবনত মুখ।
ভীষণ প্রসন্ন সেই শারদ আকাশ ছিল সেদিন।

না তোমার কপালে ছিলনা কোন টিপ;
না কোন সাজ সরাঞ্জম।
বিন্দু বিন্দু ক্লান্তিঘাম; কি ভীষণ গর্বে ফুটেছে-
মেতেছে নিজেদের অস্তিত্ব দীর্ঘায়িত করার প্রতিযোগিতায় ।
আমার ভেতরে বয়েছিল যৌবনা ব্রক্ষ্মপুত্রের শান্ত প্রবাহ;
কি মায়া মেখেছে প্রকৃতি তোমার ওই মুখে !
যেখানে বড় অসহায় আমার শব্দভেলা;
এ যেন নিজের মাঝে আপন হাতে গড়া মায়াদ্বীপে
কাশফুলেদের নরম আদর ছোঁয়া ।

তোমার আজন্ম কাজলমাখা চোখ জোড়া ;
যে চোখে তাকিয়ে কেটে যেতে পারে সহস্র শতাব্দী-
যেখানে নিঃশঙ্ক চিত্ত্যে রাখতে পারি জমা
আমার এই এক জীবনে সঞ্চিত সকল দুঃখমালা।

প্রচন্ড একটা ধাক্কা প্রয়োজন ছিল



প্রচন্ড একটা ধাক্কা প্রয়োজন ছিল,
হতে পারত তা সীডর বা হাল আমলের
ক্যাটরীনার মত বিধ্বংসী।

অথবা দড়জা বন্ধ করে পিঠের উপড়
ভেঙ্গে ফেলা বেতের মতই নিষ্ঠুর,
সব কিছুই মেনে নিতে রাজী ছিলাম।

কিন্তু এভাবে আগ্নেয় লাভার মত
পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া
নিজস্বতাকে চুর্ন করে দেওয়া
প্রবল কোন ধাক্কা চাইনি।

প্রচন্ড একটা ধাক্কা প্রয়োজন ছিল
কিন্তু সেটা এভাবে চাইনি
কখনই চাইনি।

অভ্যাস


হেমন্তের শাড়ী পরে আছে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠের একপাশে জংলার মত। এককালে কারও বাড়ি ছিল। এখন খালি পড়ে আছে। কে মালিক ছিল কেউ জানে না। কাউকে মালিকানার দাবি করতেও শুনা যায় না। সবাই খালিবাড়ি নামেই চেনে। লাকড়ি কুড়াতে, বনের ফলমূল খেতে কেউ কেউ কদাচিৎ ওদিকে যায়।

একটি বড় পুকুর ছিল। কালের স্রোতে এখন আর গভীরতা নেই। তবুও গোলাপী রঙের শাপলারা অপার্থিব এক সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। পাখিদের আনাগোনা আছে, নির্ঝঞ্ঝাট তাদের সংসার সাজায় এখানে। শেয়াল আছে, মেছোবাঘ আছে- রাতের পথিকের মত পথে বের হয় তারা। দিনে তাদের নাম-নিশানা নেই। বিকেলের দিকে এই খালিবাড়িটি সবচেয়ে বেশি নির্জন হয়ে যায়। এমনই নির্জনতায় দুটি মানব-মানবীর কথা শুনা গেলঃ
-দয়াল, একটি কথা সত্যি করে বলবে? এই যে আমরা কাছাকাছি আসি, আমাদের প্রয়োজন? না, আমাদের ভালোবাসা?
-আবার এই প্রশ্ন? নিশি! …আমাদের অভ্যাস!

দয়ালের উত্তরে নিশি চুপ করে রইল। তার বলার আর কি বা আছে। সে দয়ালের কাছাকাছি হতে চায়। কখনও না হতে পারলে বিরহের যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে যায়। শুরু থেকে বর্তমান, সে হিসেব মেলাতে চেষ্টা করে। হ্যাঁ, আকর্ষণ ছিল। মানব-মানবীর চির-দুর্নিবার আকর্ষণ। সেখানে সুখ ছিল। যে সুখ না পেলে নিজেকে আর সুখী ভাবতে পারে না সে। নিজের জীবনকে শূন্য মনে হয়। এক জ্বলন্ত চিতা মনে হয়। ইদানিং নিশি ভাবে, এই মাখামাখি কি তাহলে আমাদের প্রয়োজন? উত্তর পায় না সে। উপসংহারের চেষ্টা করেছে অনেকবার, মানতে চেয়েছে- এটা আমাদের আকর্ষণ, মানতে চেয়েছে- এটা আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু, কেন জানে না, তার মন মানেনি। যদিও এই মন মানানোতে তাদের কোন পটপরিবর্তন হবে না। তবুও সে অশরীরি, শুধুই মানসিক একটি উপসংহার খুঁজছে। একটি নাম খুঁজছে।

দয়াল বরাবরই চাপা মনের। সে যা বলে, তার আগে পিছে অনেক শূন্যস্থান বাকি পড়ে থাকে। তাকে বুঝে নিতে হয় নিজের মত করে। নিশি এতদিন বুঝে এসেছে। এখন তার মনে হয়, সে কিছুই বুঝেনি। সে দয়ালের মুখ থেকে আগে-পিছের একটি কথাই শুনতে চায়। কিন্তু, দয়ালের পাথর চাপা গুহা থেকে শব্দ বের হয় না।

দয়াল কলেজের পাঠ চুকিয়েছে অনেক দিন। কৃষিকাজ করে, ব্যবসা করে। নিশি পাঠ চুকানোর শেষের পথে। স্কুল জীবনেই তাদের একসাথে চলা শুরু। বলতে গেলে, কৈশোরের প্রথম ডাকেই তারা সাড়া দিয়েছে। তারপর থেকে- আকর্ষণ হোক, প্রয়োজন হোক, একসাথেই পথ চলেছে। অভিভাবকরা জানেন। সহজ-সরল একদল মানুষের বসবাস যেখানে সেখানে কূটচাল নেই। অনেক আগে থেকেই এমন করে প্রথা চলে আসছে। সবাই জানে, আগামী সময়ের কোন পার্বণে দয়াল-নিশি গাঁটছড়া বাঁধবে। নিশিও জানে। দয়ালও জানে। এই জানাজানি মানামানিতে তাদের কারও কোন দ্বিরুক্তি নেই। তাদের এলাকায় অদ্যাবধি যারাই গাঁটছড়া বেঁধেছে, তাদের কারোরই দ্বিরুক্তি ছিল না। কিন্তু নিশি অবশ্যম্ভাবী সম্পর্কের মাঝে আরও কিছু চায়। সে আরেকটি নাম চায়। একটি উপসংহার চায়। একটি সান্তনা চায়।

কোথাও কোথাও কখনও কেউ না কেউ গড় চিন্তাশীলতার চেয়ে এগিয়ে থাকে। নিশিও তেমন। যেখানে তার মা, দাদী, নানী সবাই যার যার বয়সে পুরুষের চাহনিকে প্রেম ধরে নিয়েছে, বিয়ে করেছে, সন্তান জন্ম দিয়েছে; সেখানে নিশি তা মেনে নিতে চায় না। সে অন্য কারও বিষয়ে প্রশ্ন তোলতে চায় না। শুধু দয়ালকে নিয়ে তার একটি নাম চাই। একটি সংজ্ঞা চাই। বইয়ের পাতায় সে পড়েছে- শারীরিক সম্পর্কের বাইরে আরেকটি সম্পর্ক আছে। আরেকটি লেনাদেনা আছে। একেবারে মানসিক। শুধু শারীরিক সম্পর্ক অপূর্ণ। শুধু মানসিক সম্পর্ক অপূর্ণ। সে দুইয়ের মিলনে পূর্ণতা চায়। সে ভাবে, তার পূর্বজ নারীরা হয়তো অপূর্ণতা নিয়েই জীবন পার করে গেছে, অথবা অপূর্ণতাকে চিনে নিতে পারেনি। নয়তো তাদের অপূর্ণতাই ছিল না। সংজ্ঞাহীন পূর্ণতা তারা ভোগ করেছে। সে শুনেছে, তারই পূর্বপুরুষ একজন প্রেমিকার অকাল প্রয়ানে আত্মাহুতি দিয়েছিল।

নিশির মধ্যে পরিবর্তন দেখা দিল। সে অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সপ্তাহ খানেক হয়ে গেল দয়ালের সাথে তার মেলামেশা হয়নি। অসুস্থতার বাহানায় সে নিজেই যায়নি। সে ঘরে সবার সাথে কথা বলা ছেড়ে দিল। একা ঘরে বসে থাকে। বিছানায় শুয়ে থাকে। কখনও খায়, কখনও খায় না। তার একটাই শঙ্কা- দয়াল কি তাকে ভালোবাসে না? শুধু আকর্ষণে কাছে আসে? শুধু প্রয়োজনে কাছে আসে? দয়াল কখনও এই উত্তর দেয়নি। নিশি ভাবে, দয়াল যদি বলে সে শুধু প্রয়োজনে আসে, সে শুধু আকর্ষে কাছে আসে, তাহলে সে সহ্য করতে পারবে না। অথচ শুরুতে এমন প্রশ্ন তার ছিল না। তার আশেপাশের কারও এমন প্রশ্ন আছে বলেও সে জানে না। কাউকে সে বলতে পারে না। সবাই যদি পাগল ভাবে! নিজের ভেতরে ঝড়ের সাথে খেলতে খেলতে নিশি নিজেই ভুলে যায় সে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছে।

অনিয়মের চূড়ান্ত মাত্রাতিরিক্ততায় নিশির জ্বর এলো। সাধারণ ঔষধ চললো। কিন্তু নামলো না। বড় মাপের ঔষধ এলো। তাও নামার লক্ষণ নেই। মনের অসুখ কি আর শরীরের ঔষধে নামে! ডাক্তার অভিজ্ঞ মানুষ, বুঝতে পারলেন। নিশির বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন। উনি কোন সদুত্তর দিতে পারলেন না। অন্যরাও পারলো না। শেষে সবার চোখ পড়ল দয়ালের উপর। দয়াল নিজেও বুঝতে পারলো না, তার সাথে তো নিশির ঝগড়া হয়নি। তাহলে কেন অমন করবে সে? কয়েকদিনের না দেখাদেখিটাকে সাধারণ ভেবে নিলেও, তার তখন মনে হলো- মারাত্মক কিছু হয়েছে। দয়াল তখনই ছুটল।

নিশি বিছানায় ছিল। চোখ বুজে আছে মাত্র। পায়ের শব্দ পেতেই নিশি চোখ খোলে দেখছিল। সে দেখল, দয়াল তার পাশে বসছে। নিশি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল শুধু। দয়াল নিশির কপাল ছুলো। হাতে হাত রাখলো। খুব শঙ্কিত দেখাচ্ছিল দয়ালকে। আদ্র গলায় নিশিকে জিজ্ঞেস করল।
-কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে দেখা করছ না? জ্বর বাধিয়ে বসে আছ?
নিশি জবাব দিল না। দয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল। দয়াল অস্থির হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল। নিশি বিড়বিড় করে বলল-
-আমার প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব দেবে?
-হ্যাঁ দেবো। নিশি, কি জানতে চাও?
-ঐ যে কতবার জিজ্ঞেস করেছি! আমাদের সম্পর্ক কি ভালোবাসা? না, আমাদের প্রয়োজন?
-কতবার তো বলেছি নিশি, অভ্যাস!
দয়ালের উত্তরে নিশির মুখ চুপসে গেল। তার মুখ দেখে মনে হলো হতাশার তলানিতে সে যে ক্ষীণ আশায় বুক বেঁধে রেখেছিল তা ফুরিয়ে গেছে।
দয়াল আবার বলতে শুরু করলো,
-অভ্যাস, নিশি, অভ্যাস! তোমাকে ভালোবাসাই তো আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। তোমাকে না ভালোবেসে পারি না। তোমার কাছে না এসে পারি না। মানুষ অভ্যাসের দাস বলে তুমিও তো শুনে এসেছ। আমি সেই অভ্যাসের দাস, তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না। পাগলী, কত সহজে ভেবে আছ তোমাকে ভালোবাসি না!

নিশির চোখে জল এলো। সে উঠে বসতে চেষ্টা করল। দয়াল তাকে ধরে বসালো। দয়ালের আদ্র চোখের দিকে তাকালো। তারপর জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করল। নিশির এমন কান্নায় হতভম্ব হয়ে দয়াল নিশিকে আঁকড়ে ধরে সান্তনা দিতে লাগল।

দয়ালের আলিঙ্গনে নিশির তখন মনে হলো, আজকের এই আলিঙ্গনটাই সবচেয়ে মধুর