তোমার জন্য আমি আর কাঁদি না কাঁদলেও চোখের পানি ঝরে না, চোখের পানি ঝরলেও কষ্ট হয়না কষ্ট হলেও আমি আর তোমাকে ভালবাসিনা ।। ভালবাসলেও তোমাকে বলবো না জানি, বললেও তুমি শুনবেনা, শুনলেও, তোমার কিছুই আসে যায় না কারণ আমি আজ নিঃস্ব... বড়ই নিঃস্ব
আজ সন্ধ্যাটা খুবই অদ্ভুত। একদিকে আমার এক ঘনিষ্ঠবন্ধু
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। ছোটখাটো আকদ অনুষ্ঠান। তাকে শুভেচ্ছাজানালাম। আরেকদিকে
এক বাচ্চার জন্ম হল সেগুনবাগিচার বারডেমহসপিটালে
যার মা আমাদের এক ফ্যামিলি ফ্রেন্ডের মেয়ে, আমার
ইউনিভার্সিটির আপুর ছোটবোন
ও আমার বান্ধবী। মা ও বাচ্চাকে দেখতে গেলাম আমি আব্বু আম্মু। কেক খেলাম, ছবিতুললাম, বাবু কোলে নিয়ে সবার সাথে হাসি তামাশা করলাম। আসার
সময় বান্ধবীকেশুভেচ্ছা
জানালাম। এরপর
গেলাম এক বাসায়। ইকোনোমিস্ট ও রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী
আনিসুর রহমান এবং তার বউ আমাদের ফ্ল্যাটের নিচ তলায় থাকেন। থাকতেন।আঙ্কেলকে
বরাবরই খুব ভালো লাগে আমার, প্রায়
৮০ বছর বয়সী কারোর এত আধুনিক মানসিকতাখুব
কম দেখেছি। উনাদের বাসায় কাজের লোক ছিলো না, সব
কাজ নিজেরা ভাগাভাগি করেকরতেন।
বিকাল বেলা উনি মুখে মাস্ক লাগিয়ে আর একটা হাফ প্যান্ট পরে রমনা পার্কেহাঁটতে
যেতেন। সাদা লম্বা লম্বা চুলওয়ালা এত বয়সী একজন মানুষকে এভাবে হাঁটতে দেখেসবাই
তাকিয়ে থাকতো, উনি
পাত্তাই দিতেন না। তাঁর ওয়াইফ ডোরা আন্টির সাথে আমারসবচেয়ে জলজ্যান্ত মেমোরি প্রায় চার বছর আগে একদিন
বাসায় রান্না করা খাবার তাঁদেরবাসায়
দিয়ে আসতে গিয়ে বিস্তর আলাপে মজে যাওয়া। তার কিছুদিন আগে আমার সৌভাগ্যহয়েছিলো
জেনেভা ঘুরে আসার। আঙ্কেল আন্টি বহু বছর বাস করেছেন ঐ শহরে, সেও বহু বছরআগে। আমার কাছে শুনতে চাইলেন এখনকার জেনেভার কথা।
আঙ্কেলের এত চুপচাপ শহরে থাকতেভালো
লাগেনা, আবার
আন্টির অমন চুপচাপ শহরই ভালো লাগে - কথা বলতে বলতে দুই জনেরজীবনের
নানা কথা, নানা
চাওয়া পাওয়া, অনেক
না-পাওয়ার কথা বের হয়ে আসলো। দুইছেলেমেয়ের
বিদেশে গিয়ে থিতু হওয়াটা তাদের জন্য একইসাথে আনন্দের এবং বিষাদের তাওআলাপ
থেকে বোঝা গেল। ডোরা
আন্টি গত আড়াই বছর ধরে প্যারালাইজড। ডান দিকপুরোটা। বসে থাকতে পারেন, বাম হাত দিয়ে একটু একটু খাবার মুখে দিতে পারেন।
কথা বলতেপারেন
না। প্যারালাইজড হওয়ার পর এই বাসা ছেড়ে সেগুনবাগিচায়ই আন্টির পৈতৃক বাসাতেগিয়ে
উঠেছেন যেখানে তার ভাই এবং ভাবী থাকে। সেই বাসায়ই গেলাম আজ। আম্মু মাঝে মাঝেএখানে
গেলেও আমার যাওয়া আজই প্রথম। আম্মু গিয়ে তার পাশে বসতেই উনি কেঁদে দিলেন।আম্মুর
হাত নিয়ে নিজের গালে ঘষতে থাকলেন। আমাকে দেখে উনার এক্সপ্রেশন দেখে বুঝলামচিনতে
পেরেছেন, কিন্তু
আমি পাশে গিয়ে বসার সাহস পেলাম না। উনাকে এভাবে দেখেই গলারমধ্যে
কি যেন আটকিয়ে যাচ্ছিলো। দূরে আরেকটা সোফায়ই বসে থাকলাম নির্বোধের মত।আম্মু
কথা বলল উনার সাথে, উনি
মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ না উত্তর দিতে থাকলেন। আমরা চলেআসার আগে আম্মু আমাকে বলল উনার পাশে বসতে। আমি অনেক
সাহস করে তার পাশে গিয়ে বসলাম।উনার
গায়ের উপর হাত রাখলাম, উনি
আমার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমি কোনো রকমেকান্না আঁটকিয়ে রাখলাম। আমার
দাদা দাদী নানী কাউকে নিজের চোখে দেখারই সৌভাগ্যহয়নি। শেষ বয়সের মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখিনি
বললেই চলে। জানিনা সেইজন্যই বোধহয়
এত দুর্বল হয়ে গেলাম আজ উনাকে দেখে। কি ভয়ংকর একটা স্টেট অফ হেলথ! সব জানি, সব বুঝি, সব
মনে পড়ে, সব
অনুভব করি কিন্তু কিছু প্রকাশ করতে পারিনা, একটু
দুরেরএকটা বই
তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করতে পারিনা। বাথরুমে যাওয়ার জন্যেও অন্যের উপরনির্ভরশীল।
নিজের শরীরে বন্দি! তাদের প্রবাসী ছেলেমেয়েকে কি দোষ দেবো? তাদের কাছেএক্সপেক্ট করবো যে তারা নিজেদের এবং ছেলেমেয়েদের
উন্নত জীবন বাদ দিয়ে পোড়াদেশটায়
এসে withering বাবা মা
এর সেবা করবে? কোনটা 'উচিত' সেটা
কে কিভাবে define করবে? একই
দিনে প্যারালালি ঘটে যাওয়া বিয়ে জন্ম এবংক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার সংস্পর্শে আসলাম।
খুবই অদ্ভুত লাগছে। মন খারাপলাগছে।
জীবনকে pointless লাগছে। একটু
পরেই আবার ঠিক হয়ে যাবো তাও জানি। এসবই ভুলেযাবো। আমরা কত এ্যক্টিভিস্টকে গালি দেই যে অমুক
ইস্যু নিয়ে এত লাফাইসিলা, এখন সবকই? ভুলে যাওয়া কি একটি survival technique না? ভুলে না গেলে বেঁচে থাকতাম কিকরে?