সুন্দর সেই ভালবাসার দিনটির জন্য অপেক্ষা কথাটা বলেই শ্রাবণীর মনে হল কি করলাম ! ও তো এখন মন খারাপ করবে । এমন ছোট ছোট কথাতে ছেলেটা মন খারাপ করে ! কিন্তু ছেলেটা কে তো দোষও দেওয়া যায় না । ও তো আর অন্য কেউ না । ওর একটু রুক্ষ আচরনে তো মন খারাপ হবেই । এখন কি করা যায় । শ্রাবণী খুব ভাল করে জানে এখন যদি ও এভাবেই ফোন টা রেখে দেয় তাহলে অপু সারারাত মন খারাপ করে থাকবে । কথার শুরুতে বলেছিল যে এখনও ভাত খাওয়া হয় নি , ফোন রেখে দিলে ভাত না খাওয়ারও সম্ভাবনা আছে । অপুর এই এক দোষ । যদি শ্রাবণীর কোন কথাতে বা আচরনে ও কষ্ট পায় ওকে কিছু বলবে না । নিজেকে কষ্ট দেবে । শ্রাবণী খুব বিরক্ত হয় ওর এই আচরনে । বলে 'তুমি এমনটা কেন কর । আমি যখন তোমাকে কষ্ট দেই তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পার না?? নিজেকে এভাবে কেন কষ্ট কেন দাও ?' অপু হাসে । বলে 'তুমি আমার একটা মাত্র টিয়াপাখি ।তোমাকে কিভাবে কষ্ট দেই বল?' শ্রাবণীর চোখে পানি এসে যায় । এই কথা গুলো খুব ভাল লাগে । তখন নিজের উপর খুব রাগ । এমন একটা মানুষকে কিভাবে ও কষ্ট দেয়? মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে এমন টা আর করবে না । কিন্তু তবুও হয়ে যায় । ওর রাগটা এতো বেশি ! যখন মেজাজ খারাপ থাকে তখন কাকে যে কি বলে হুশ থাকে না । শ্রাবণী বলল -কি হল চুপ করে গেলা কেন ? কথা বল । -তোমার যখন কথা বলতে ভাল লাগছে না তখন ফোন রেখে দেই ? -ভাল করে বল । -ভাল করেই তো বলছি । আম কি কখনও তোমার সাথে খারাপ করে কথা বলেছি ? শ্রাবণীর খুব মায়া লাগে । কথাটা খুব সত্যি । শ্রাবণী অপুর সাথে যত খারাপ ব্যবাহরই করুক না কেন অপু কখনও ওর সাথে একটা উচু স্বরে কথা বলে না । শ্রাবণী বলল -আমি ঐ খারাপের কথা বলি নি । ভাল করে বল মানে বুঝিয়েছি একটু হেসে বল । প্রতিদিন ফোন রাখার সময় যেমন করে বল সেভাবে বল । -ওভাবেই তো বলছি । -না ওভাবে বলছ না । হেসে বল । শ্রাবণী ধমক দিয়ে ওঠে । তারপর একটু নরম স্বরে বলল -প্লিজ একটু হেসে বল । আমি জানি এখন যদি তুমি মন খারাপ করে ফোন রেখে দাও সারারাত তোমার মন খারাপ থাকবে । কালকেও তোমার মন খারাপ থাকবে । বল এটা কি আমার ভাল লাগবে ? -আচ্ছা বাবা আমি মন খারাপ করবো না । কথা দিলাম । শ্রাবণীর একটু ভাল লাগে । অপু যখন ওকে কোন কথা দেয় তা ও সবসময় রাখে । শ্রাবণী বলল -তুমি বাচ্চা ছেলেদের মত কেন অল্পতে কষ্ট পাও বলতো ? মানুষের সব দিন কি সমান যায় । একটু তো উনিষ-বিশ হয়েই যা্য় ! এতো মন খারাপ করলে কি চলে ? আজ সেই সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছি । মাত্র আসলাম । সারাদিন ক্লাস ট্রেনিং স্যারদের বকবকানি এসব করে যখন বযসায় আসি মন মেজাজ কি ঠিক ঠাকে বল ? -আমি তো বুঝি । কিন্তু কি করব বল? তোমার দিক থেকে আসা একটু খানি ভালবাসা আামকে যে কি পরিমান আনন্দ দেয় তোমাকে বলে বলে বোঝাতে পারব না । ঠিক তেমনি একটু কঠিন কথা খুব ক|ষ্ট দেয় । শ্রাবণীর নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হয় । যত যাই কিছু হক কই অপুতো কখনও ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে না । তাহলে ও কেন করে ? কেন এমন টা করে । অপু বলল -জানো আমার কি মনে হয় ? -কি মনে হয়? -না শুধু মনে হয় না এটা আমার বিশ্বাস যে এমন একটা দিন আসবে যে দিন তুমি চাইলেও আমার সাথে খরাপ ব্যবহার করতে পাবে না । শুধু আমাকে ভালই বাসবে । আমি সেই সুন্দর ভালবাসার দিনটার জন্য অপেক্ষা করি । শ্রাবণী লক্ষ্য করল আপনাআপনি ওর চোখে পানি চলে এসেছে । এমন ভাবে কেন অপু ওকে ভালবাসে ! কেন ? মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে অপুকে আর কখনও কষ্ট দেবে না । ওর সাথে আর একটুও খারাপ ব্যবহার করবে না ।
ঐ বিষন্ন মুখে হাসি আমি ফোটাবো.. ঈশিতা প্রথমে বুঝতেই পারল না কি হচ্ছে । ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল । ও আসলে ভাবতেই পারে নি যে আমি এই রকম একটা কাজ করবো বা করতে পারি । যখন লিফটের দরজা দিয়ে বের হলাম পিছন ফিরে চাইলাম । এতো দিন পর এই প্রথম ওর চোখে আমি বাষন্নতার জায়গায় এক টুকরো বিশ্ময় দেখতে পেলাম । ঈশিতা এতোটাই বিশ্মিত হয়েছে যে হয়তো ও ভুলেই গেছে এই ফ্লোরেই ওকে নামতে হবে । আস্তে করে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল । আমি আমার কেবিনে ঢুকে পরলাম । প্রথম যে দিন আমি এই অফিসে যোগদিই সেই দিনই ঈশিতার প্রতি আমি ইন্টারেস্টেড হয়ে উঠি । একনম্বর কারন হল আমার পোষ্টটা টা ঈশিতার আন্ডারে । ম্যানেজার সাহেব যখন আমাকে ঈশিতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল তখন আমার মনে হল এই টুকু একটা পিচ্চি মেয়ের আন্ডারে আমি কাজ করবো ? এই পিচ্চি মেয়েটা আমার বস ? দ্বিতীয় কারনটা হল পিচ্চি হলেও মেয়েটা অসম্ভব গম্ভীর । প্রয়োজনের একটাও বেশি কথা বলে না । আমি ভেবে পেলাম না এই টুকু বয়েসে মেয়েটা এতো গম্ভীর্য পেলো কোথা থেকে ? প্রথম দিনে এই কথাটাই কেবল আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল । এমনটা কেন হবে ! আমার বস হওয়ার সুবাধে ঈশিতার সাথে আমার কথা বলার অনেক স্কোপই তৈরি হতে লাগল । কিন্তু ঈশিতা সেই আগের মতই । প্রয়োজনের একটাও বেশি কথা মেয়েটা বলে না । কয়দিন পরই এক কলিগের কাছ থেকে মেয়েটার এমন গাম্ভীর্যের কারন জানতে পারলাম । জানতে পেরে মোটামুটি একটা সক খেলাম । মেয়েটা বিবাহিত । ও মাই গড ! এটু টুকু পিচ্চি মেয়ে বিবাহিত । আরো জানতে পারলাম মেয়েটার খুব সুখী একটা সংসার ছিল । আগে সবার সাথে খুব মেলামেশা করত ।সবার সাথে কথা বলত , হাসতো । খুব প্রাণ চঞ্চল একটা মেয়ে ছিল । কিন্তু মাস ছয়েক আগে একটা দুর্ঘটনায় মেয়েটার স্বামীটা মারা যায় । তারপর থেকেই মেয়েটা এমন চুপচাপ হয়ে যায় । তারপর থেকেই মেয়েটার উপর আমার আকর্ষন আরো বেড়ে যায় । আমি উপায় খুজতে শুরু করলাম কিভাবে ঈশিতাকে আবার স্বাভাবিক করা যায় ! কিভাবে মেয়েটার মুখে হাসি ফোটানো যায় ! এসব ভাবতে ভাবতে একটা সময় আমি লক্ষ্য করলাম আমি সারাটা সময় কেবল ঈশিতার কথাই ভাবছি । যতক্ষন অফিসে থাকি ততক্ষন কেবল ওর আসেপাশে থাকতে ইচ্ছা করে । কোন না কোন কাজের বাহনায় আমি ঈশিতার কেবিনে যেতে লাগলাম । ওর সাথে একটু বাড়তি কথা বলার চেষ্টা করতে লাগলাম । খুব যে বেশি লাভ হল তা বলব না , কিন্তু আমি নাছড়বান্দা । আমি চেষ্টা করতেই থাকলাম । কিন্তু সব ভাল কাজে বাধাতো আসবেই । কয়দিন আগে আমার হাতে আমার প্রমোশন লেটার এসে হাজির হল । তাতে বলা হয়েছে আমাকে সিনিয়র অফিসার পদে অধিস্থিত করা হয়েছে । তারমানে ঈশিতার সমান পদ । কিন্তু সমস্যা হল আমার আমার পোষ্টিং হল অন্য শাখায় । কিন্তু আমি ঈশিতাকে ছেড়ে কিভাবে যাবো ? মোটেই যাবো না । প্রমোশনের খ্যাতা পুড়ি আমি । লাগবে না আমার প্রমোশন । চুপচাপ বসের কেবিনে গেলাম । গিয়ে বললাম আমার প্রোমোশনের দরকার নাই । আমাকে যেন আগের পদেই রাখা হয় । বস শুধু অবাক হল না যেন আকাশ থেকে পড়ল তাও আবার সাত আসমানের উপর থেকে । কিন্তু আমার কাজ করার রেকর্ড মোটামুটি ভাল । তাই বস আমার কথা রাখলেন । সেই দিনই ঈশিতা আমার সাথে প্রথম কথা বলল । মানে কাজের বাইরে কোন কথা বলল । ওর কেবিনে গেছিলাম একটা কাজে । কাজ শেষে কেবিন ছেড়ে যাবো ঠিক এমন সময় ও পিছন থেকে ডাকল । -অপু সাহেব একটু শুনুন । -জ্বি বলুন ? -আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ? যদি কিছু না মনে করেন । -হ্যা অবশ্যই । ঈশিতা খানিকটা ইতস্তত করে বলল -আচ্ছা আপনি প্রমোশনটা রিফিউজ কেন করলেন ? আমি হাসলাম । বললাম -আসলে সাভারে পোষ্টিং দিচ্ছিল তো তাই ইচ্ছা করলো না যেতে । ঈশিতা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল । কি বিষন্ন সেই দৃষ্টি ! তারপর বলল -আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা কখনও সম্ভব না । কখনও না । আরে মেয়েটা বলে কি ? তার মানে আমার আচরন ওকে কিছুটা ভাবিয়েছে । ও কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে । আমি একটু হাসলাম । বললাম -যদি লক্ষ্য থাকে অটুত দেখা হবে বিজয়ে । -মানে ? -কোন মানে নেই । আমি আসি । আমি আবার হাসলাম । কেবিন থেকে বেরনোর আগে আমি আবার ঘুরে দাড়ালাম । বললাম -ঈশিতা ! ঈশিতা মুখ তুলে চাইল । -আমি আপনার মুখে আমি হাসি ফোটাবোই । আর দাড়ালাম না । ঘুরে চলে এলাম । তারপর আমি ওর আশেপালে থাকি । প্রত্যেকটা কাজে ওকে জানান দেওয়ার চেষ্টা করি যে আমি আছি তোমার আসেপাশে । যতক্ষন না তুমি হাসছো ততক্ষন আমি নড়ছি না । কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না । ঈশিতা ঠিক আগের মতই রয়ে গেল । আগের মতই চুপচাপ আগের মতই বিষন্ন । তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করতাম আমার উপস্থিতিতে ওর চেহারার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনতো । তবে এটা সিওর বুঝতাম না যে ওটা অস্বস্তি ছিল নাকি আনন্দ । এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল । ঈশিতার সাথে দেখা হচ্ছিল কথা হচ্ছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না । মেয়েটার বিষন্ন চেহারায় কিছুতেই পরিবর্তন আনতে পারছিলাম না । তারপর আজকের দিন এল । অফিসে আসতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছিল । লিফটের সামনে এসে দেখি ঈশিতা দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখেও যেন দেখল না । আরে এটা কেমন কথা হল ? আমরা একসাথে কাজ করি দুএকটা কথাতো বলা যায় ! আমি খানিকটা হেসে বলল - গুড মর্নিং ও যথারীতি আমার দিকে না তাকিয়েই বলল -গুড মর্নিং । লিফট চলে এল । মাত্র দুজনই । আর কেউ উঠল না । আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম যেন আর কেউ না ওঠে । দরজা বন্ধ হতেই ঈশিতাকে বললাম -মানুষের সাথে এরকম ব্যবহার করা কিন্তু ঠিক না । -আপনি কি আমাকে বলছেন ? -না আপনাকে কেন বলব ? আমার পাশের ফ্লাটে একটা পেট মোটা লোক থাকে সে সবসময় মানুষকে খুব হার্ট করে । তাকে বললাম কথাটা । ঈশিতা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । আমি আবার বললাম -এটা কি ধরনের প্রশ্ন হল ? অবশ্যই আমি আপনাকেই বলতেছি । -অপু সাহেব আমি এমনই । -কিন্তু আপনিতো এমনটা ছিলেন না । -কেমন ছিলাম এটা প্রশ্ন না এখন কেমন আছি এটাই প্রশ্ন । -আমার খুব খারাপ লাগে আপনার এরকমটা দেখে । আপনি কি পরিবর্তন হতে পারেন না ? নতুন করে জীবন শুরু করা কি যায় না ? এবার ঈশিতা খানিকটা কঠিন গলায় বলল -দেখুন আপনার কি ভাল লাগে না লাগে তাতে আমার কিছু যায় আসে না ঠিক আছে । আপনার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না । কি ? মেজাজটা খানিকটা খারাপ হল । এই মেয়েটার কথা ভেবেই আমার সারাটা দিন যায় । আমার কেবল এই চেষ্টা থাকে কিভাবে এর মুখে হাসি ফোটাবো আর এই মেয়ে কিনা আমাকে গোনার মধ্যেই নেই নেয় । আমি কি জলের টানে ভেসে এসেছি । ঈশিতার মুখোমুখি গিয়ে দাড়াই । ও কিছু বলার আগেই ওর হাত দুটো চেপে ধরলাম । বললাম -এই মেয়ে তোমার প্রবলেম কি ? আমার সাথে এমন কেন কর তুমি ? আমার তখন রাগে শরীর কাঁপছে । নিজের মধ্যে নেই আমি । কি করছি কি বলছি কিছুই ঠিক নেই । তোমাকে আজ আমি মজা দেখাচ্ছি । বলেই ওকে চেপে ধরে চুম খেলাম ওর ঠোটে । বেশ লম্বা করেই । যখন হুশ হল ততক্ষনে লিফটের দরজা খুলে গেছে । ভাগ্য ভাল যে দরজার বাইরে কেউ ছিল না । আমি লিফট থেকে বের হয়ে এলাম । যথন পিছনে ফিরে তাকালাম লিফটের দরজাটা বন্ধ হচ্ছে । আর প্রথম বারের মত ঈশিতার চেহারায় বিষন্নতার জায়গায় আমি বিশ্ময় দেখতে পেলাম ।
কাজ টাজ করছিলাম । কিন্তু মনটা ঐ দিকেই পড়ে ছিল । একটু দুষ্চিন্তাও হচ্ছিল । না জানি ঈশিতা কি একশন নেয় । তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল ও কাউকে কিছু বলবে না । সারা দিনে একবারও ঈশিতার কেবিনে যাই নি । পরদিনও গেলাম না । কিন্তু পরদিন অফিস ছুটি হবার একটু আগে পিয়ন এসে একটা চিরকুট দিয়ে গেল । বলল ঈশিতা দিয়েছে । চিরকুট টা খুলে দেখলাম অপেক্ষা করবেন প্লিজ ।
প্রথমে ভেবেছিলাম ঈশিতা হয়তো খুব ঝাড়ি মারবে । কিন্তু ওকে বেশ নরম দেখাল । আর সব থেকে বড় কথা হল ওর চেহারায় বিষন্ন ভাবটা তুলনা মূলক ভাবে কম । অফিসের সামনের একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম আমরা । সত্যি বলছি আজ ঈশিতাকে দেখতে খানিকটা অন্য রকম লাগছে । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আজ ঈশিতা হাসবে । আমার এতো দিনের চেষ্টা আজ সফল হবে । আমি আগে মুখ খুললাম, বললাম -তোমাকে সুন্দর লাগছে । একেবারে আপনি থেকে তুমি । হাহাহা !!! -এই কথা কেন বললেন ? -কারন আজ তোমার চেহারায় বিষন্নতাটা কম । একটু আছে তবে আমার বিশ্বাস এখন আমার সাথে কথা বলার পর তাও থাকবে না । -আপনার বিশ্বাসে সমস্যা আছে । আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই হবে না । আমি শুধু একটা কথা জানতে আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি । -তাও তো নিয়ে এসেছ ! বল তোমার কথা । -আপনি কেন করলেন কাজটা ? -কোন কাজটা বল তো ? -শুনুন ঢং করবেন না । আপনি খুব ভাল করেই জানেন কোন কাজটা ! সরাসরি ঈশিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম -তুমি কি শুধু এই কথাটা জানার জন্যই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ ? ঈশিতা চট করেই উত্তর দিল না । কিছুক্ষন পর মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ওর আরো কিছু বলার আছে । -আগে তোমার কথা শুনি । খানিকটা সময় চুপ করে থেকে ঈশিতা বলল -আপনি যে কাজটা করেছেন ঠিক এমনই একটা ঘটনা আমার জীবনে এর আগেও ঘটেছে । -মানে ? -মানে সজিব । আমার হাজবেন্ড । বিয়ের আগে ও আমাদের পাশে ফ্লাটেই থাকতো । একদিন লিফটের মধ্যে আপনার মতই কথা বলতে বলতে আমাকে চেপে ধরে কিস করেছিল । ওর খুব রাগ করার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু পারি নি । ঐ ছেলেটা কিভাবে যে আমার মনটা নিজের করে নিল বুঝতেই পারলাম না । আমার সব কিছুই যেন ওর ছিল । আমার সব আবেগ অনুভূতি ভালবাসা সব কিছুই ওর ছিল । ও চলে যাবার পর ওর সাথে সাথে এ সব কিছুও হারিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু ... -কিন্তু কি ? -আজ আমি আপনার উপর রাগ করতে পারছি না । আপনি যে কাজটা করেছেন অভিয়াসলি আপনার উপর আমার রাগ করা উচিত্ কিন্তু আমি রাগ করতে পারছি না । আমি কাল সারাটা রাত কেবল আপনার কথা ভেবেছি । আপনি এতো দিন যে আমার পিছনে লেঘেছিলেন তার প্রতিটা কথা আমি কাল রাতে ভেবেছি । খানিকটা অবাক হয়েছে । তারপর একটু ইতস্তত করে বলল -খানিকটা খুশিও হয়েছি । খুশি ? ওমাইগড ! এই মেয়েটা কি বলছে ! এই সুযোগ । আমার যা বলার তা বলেই ফেলতে হবে । আমি ওর হাত ধরলাম । ঈশিতা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি বললাম -আমার চেহারাটা তো এতোটা খারাপ না যে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে । জানো কলেজ লাইফে আমার পিছনে কত গুলো মেয়ে ঘুরতো ! ঈশিতা মুখে একটু যেন হাসির আভা দেথতে পেলাম । তবে ওর চেহারার বিষন্নতা পুরোপুরি কেটে গেছে । ওকে বললাম -জীবনটাকে সব সময় সচল রাখতে হয় । এটাই জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট । কিন্তু তুমি তোমার জীবনটাকে থামিয়ে রেখেছ । একটা জায়গায় আটকে রেখেছ । এতে যেমন তুমি কষ্ট পাচ্ছ তোমার আসেপাশের মানুষ গুলোও কষ্ট পাচ্ছে । এটা কি ঠিক হচ্ছে বল ? ঈশিতা আবার মাথা নাড়াল । -তাহলে কেন এমন করছ ? তোমাকে একটা গল্প বলি । একটা ছেলে একটা মেয়ে অনেক ভালবাসত । কিন্তু একদিন মেয়েটা মারা যায় । এতে ছেলেটা খুব বেশি কষ্ট পায় । সারা দিন কান্না কাটি করে মন খারাপ করে থাকে । একদিন ছেলেটা মেয়েটাকে স্বপ্নে দেখলো । স্বপ্নে দেখলো যে মেয়েটার চারিপাশে খুব চমত্কার পরিবেশ । গাছগাছালি রংবেরংয়ের জিনিস পত্রে ভরপুর । কিন্তু কেবল মেয়েটা যেখানে আছে তার আসেপাশে সবকিছু কেমন যেন প্রানহীন বিবর্ণ । ছেলেটা আরো লক্ষ্য করল আসেপাশের সবার ঘরে আলো জ্বললেও মেয়েটার ঘরে কোন আলো জ্বলছে না । ছেলেটা জানতে চাইল তোমার এমন কেন অবস্থা । মেয়েটা বলল আমার এ অবস্থার জন্য তুমি দায়ী । ছেলেটা খুব অবাক হল । বলল কেন ? মেয়েটা বলল তুমি যে আমার জন্য সারাদিন কান্নাকাটি কর তোমার সেই চোখের জল এসে আমার ঘরের মোমবাতি নিভিয়ে দিয়ে যায় । এই জন্য আমাকে অন্ধকারে থাকতে হয় । আর তুমি যে মন খারাপ করে থাকো তোমার সেই বিষন্নতা আমার চারিপাশটাকে প্রান হীন করে তোলে । ঈশিতা বলল -এ গল্প আপনি কোথা থেকে শুনেছেন ? -কোথা থেকে শুনেছি ইম্পর্টেন্ট না । মুল থিমটা ইম্পর্টেন্ট । তুমি কিন্তু তোমার ভালবাসার মানুষটাকেও কষ্ট দিচ্ছ । যে ঐ উপরে আছে তোমাকে দেখছে তাকে কষ্ট দিচ্ছ আর যে তোমার কাছে আছে তাকেও । ঈশিতা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । -আচ্ছা আমি তাহলে কালকেই সাভারে পোষ্টিং নিয়ে নিচ্ছি । ঠিক আছে ? ঈশিতা এবার অবাক হল । -কেন ? -আরে আশ্চর্য আমার বউ যদি আমার উপরে জব করে তাহলে লোকে কি বলবে ? ঘরেও আমি বউয়ের কথা শুনবো আবার অফিসেও তার কথা শুনবো তাহলে কিভাবে হয় ? ঈশিতা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল । এই প্রথম ওকে আমি হাসতে দেখলাম । হাসলে ওকে কি চমত্কারই না লাগে । হাসতে হাসতেই বলল -আমার বয়েই গেছে তোমাকে বিয়ে করতে ! কত কিছু ভাবো না তুমি । ঠিক মত কথা শুরু করতে পারলাম না উনি বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছে । বসে বসে স্বপ্নই দেখো তুমি । আমি কোন কথাই বলি না । কেবল ওর হাসি ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি । মনে হয় আমি জয়ী হয়েছি ।
একটু আগেই বাস থেকে নেমে পড়লাম । ঈশিতার পেছন পেছন । একটু অবশ্য হাটতে হবে । হোক ! ঈশিতা আমার সামনে সামনে হাটছিল । একবারও পিছন ফিরেও তাকাচ্ছে না । এমন একটা ভাব যেন আমাকে ও একদমই চেনে না । পিছন থেকে ওকে ডাক দিলাম । মনে ভয় ছিল ও হয়তো শুনেও না শোনার ভান করে চলে যাবে । দাড়াবে না । কিন্তু না । দাড়াল ও । আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম । কারনটা আজ জিজ্ঞেস করতে হবে ।
ঈশিতা বোধহয় আমার উপর কোন কারনে রাগ করেছে । আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে চলছে । অবশ্য ওর সাথে আমার খুব যে খুব অন্তরঙ্গ তা কিন্তু নয় । একই অফিসে চাকরি করার সুবাদে ওর সাথে আমার পরিচয় । টুকটাক কথাবার্তা একসাথে আসা যাওয়া করা এই । কিন্তু কদিন থেকে লক্ষ্য করছি সেই টুকুও ও বন্ধ করে দিয়েছে । এই জিনিসটা আমাকে খানিকটা কষ্ট দিচ্ছে । ঈশিতা কে আমি বেশ পছন্দ করি । দেখতে সুন্দর কথাবার্তাও সুন্দর । ওর সব কিছুই ভাল । পছন্দ হওয়ার মতই মেয়ে ও । কিন্তু সবসময় ও আমার সাথে খানিকটা দুরুত্ব রেখেই চলত । শুধু আমার সাথে না । সবার সাথেই । কারো সাথে খুব বেশি গভীর ভাবে মিশত না ও । আর কদিন থেকে যেন আরো চুপচাপ হয়ে গেছে । আমার সাথে কথা বলছে না একদমই । কারন টা কি ? আমার কোন আচরনে কি ও কষ্ট পেল ? বুঝতে পারছি না কিছুতেই । যাই হোক আজ জিজ্ঞেস করবো । আমরা মোটামুটি একই জায়গায় থাকি । এক স্টপেজ আগে পিছে । আগে আসার সময় আমরা প্রায়ইএকসাথে ফিরতাম অফিস থেকে । পাশাপাশি বাসেয় সিটে অথবা সিএনজিতে । ওর সাথে টুকটাক কথা বলা চলত । কি চমৎকার সময় কাটতো তখন ! একদিন অফিস থেকে আসার পথে বাস নষ্ট হয়ে গেল । সবাই বাস থেকে নেমে যখন অন্য বাসের জন্য ওয়েট করছে তখন ঈশিতা বলল -আসুন রিক্সা নেই । আমি এই কথাটা শোনার জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলাম । জীবনের সব থেকে সুন্দর রিক্সা ভ্রমন ছিল সেটা । এভাবেই দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল সুন্দর ভাবে । কিন্তু কি হল ঠিক বুঝলাম না !
ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম । -হাই । ঈশিতা কোন উত্তর দিল না । আমি আবার বললাম -অফিস কেমন ছিল আজ ? -আপনি কি এই কথা বলার জন্য আমাকে ডাকলেন ? -না মানে ! আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কথাটা কিভাবে তুলবো । -অপু সাহেব সারাদিন অফিস করে আমি বেশ ক্লান্ত । আমি এখন বাসায় যাবো । ওর গলায় কেমন জানি একটা কাঠিন্য ছিল । আমার সাথে কথা বলতে সে রাজি না । -আচ্ছা আপনি কি কোন কারনে আমার উপর রাগ করেছেন ? সরাসরি জিজ্ঞেস করেই ফেললাম । -আপনার কেন মনে হচ্ছে যে আমি আপনার উপর রাগ করেছি ? -না মানে আপনি ..... কি যে বলবো বুঝতে পারলাম না । -দেখুন অপু সাহেব রাগ বা অভিমান কেবল কাছের মানুষ গুলোর উপর করা যায় । আপনি আমার এমন কোন কাছের মানুষ না যে আপনার উপর আমি রাগ করবো ! আমার মনটা একটু খারাপই হল । এতো কঠিন করে না বললেও তো চলত । -আশা করি আপনি আপনার জবাব পেয়েছেন । ঈশিতা আর দাড়াল না । আমি দাড়িয়ে রইলাম । ওর কথায় স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে আমার উপর ও রেগে আছে । কিন্তু আমি এমন কি করলাম ? কিছুই মনে পড়ছে না ।
মনটা খারাপ নিয়েই বাসায় ফিরলাম । রাতে বিছানায় শুয়েও কেন জানি ঘুম এল না । কেবলই ঈশিতার কথা মনে হতে লাগল । আর মনে হয় ওর সাথে রিক্সায় চড়া হবে না । মাঝে মাঝে যে বাসে ও আমার পাশে এসে বসত টুকটাক কথা বলত সেটা বোধহয় আর হবে না । আসলে মেয়েগুলো এতো জটিল কেন হয় ? এদের বোঝা বড় মুশকিল । কি করেছি সোজাসুজি বললেই হয় ! ঈশিতা আসলেই যেন কেমন ! অফিসের সবার সাথেই ও দুরুত্ব রেখে চলে । তবুও সবার থেকে আমার সাথে একটু আধটু কথা বলত । তাও বোধহয় বন্ধ । ওর আচরন বোঝা আসলেই আমার কর্ম নয় । তিনচার দিন আগে আমাদের একটা প্রোগ্রাম ছিল । অফিসের কাছেই । বস বলল সবাই রিক্সা নিয়ে রওনা হয়ে যান । দেখি সবাই শেয়ার করে যাচ্ছে । আমার মনে সেদিন কার কথা মনে পড়ল । আশা করলাম ও হয়তো আমার সাথেই যেতে চাইবে । অনেকক্ষন অপেক্ষা করলাম কিন্তু ঈশিতা এল না । এমন কি একবার নিজে গিয়ে জিজ্ঞেসও করলাম । -যাবেন না ? -এই তো যাবো । একবার তো বলতে পারতো আমার জন্য একটু দাড়ান । একসাথে যাই । কিন্তু হায় ! তবুও দাড়িয়ে ছিলাম । কিন্তু বেশিক্ষন দাড়িয়ে থাকা গেল না । ইরিন এসে বলল -কি ব্যাপার অপু ভাই এখনও যান নি ? যাক ভালই হল । চলুন আপনার সাথে যাওয়া যাক । ইরিন মেয়েটা কি স্বাভাবিক ভাবেই বলল ! ঈশিতাও তো বলতে পারতো । ইরিনের সাথেই গেলাম । ঈশিতার সাথে আর রিক্সায় ওঠা হল না । বোধহয় আর কোন দিন হবেও না । পরদিন অফিস গেলাম মন খারাপ নিয়েই । আগে কোন না কোন অজুহাতে ঈশিতার ডেস্কে যেতাম দুএক বার । আজ আর গেলাম না । যদিও কাজে মন বসছিল না তবুও মুখ বুজে কাজই করতে লাগলাম । আমি কাজ করছিলাম ঠিক এমন সময় ঈশিতা ফোন দিল । -ব্যস্ত ? প্রথমে ভেবেছিলাম রাগ দেখাবো কিন্তু পারলাম না । বললাম -এইতো কাজ করছি আর কি ? তেমন ব্যস্ত না । -একটু ছতলায় আসবেন ? আমি খানিকটা অবাক হলাম । কালকের ঈশিতা আর আজকের ঈশিতা কেমন ভিন্ন মনে হল । -আচ্ছা আসছি । আমাদের এই বিল্ডিংটায় প্রায় ১0/১২ অফিস । আর ছতলায় হল ক্যান্টিন । সব অফিসের এই একটা কমন ক্যান্টিন । তাই মোটামুটি ভিড় থাকে সব সময় । তবে তুলনা মুলক ভাবে এই সময়টাতে কম থাকে লোকজন । অফিসের পিক আওয়ার তো ! ঈশিতাকে দেখলাম একদম কোনার একটা টেবিলে বসে আছে মাথা নিচু করে । আমি সামনে গিয়ে বসতেই মাথা তুলে তাকাল । ঈশিতার দিকে তাকিয়ে কেমন অবাক হলাম । ওর চোখ দুটো কেমন জানি ফোলাফোলা । বোধহয় কেঁদে কোন কারনে । -আমি বললাম কি হয়েছে ? ও কোন কথা ধা বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । -আরে বলতে হবে তো কি হয়েছে । তা না হলে বুঝবো কিভাবে ? অনেকক্ষন পর ঈশিতা বলল -আই এম সরি ! -সরি ? কেন ? -কালকে আমি আপনার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি । এই বলে ঈশিতা আবারও মাথা নিচু করলো । খারাপ ব্যবহার তো করেছে । কিন্তু এই কথা তো আর মুখে ওর বলা যায় না । আমি বললাম -না ঠিক আছে সমস্যা নাই । -না ঠিক নাই । আমি অবাক হয়ে দেখলাম ঈশিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে । আশ্চর্য পানি পরছে কেন ? -আপনি কাঁদছেন কেন ? প্লিজ কাঁদবেন না । আমি কিছু মনে করি নি । সত্যি বলছি কিছু মনে করি নি । ঈশিতা বলল -আসলে আমি খুব রেগে ছিলাম আপনার উপর । এই জন্য খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি । কিন্তু বাসায় গিয়ে এতো খারাপ লাগছিল । সারা রাত আমি ঘুমাতে পারি নি । ঈশিতার বেশ সময় লাগল শান্ত হতে । আমি ওকে সামলে নেওয়ার সময় দিলাম । পুরোপুরি শান্ত হলে আমি ওকে বললাম -একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? -করুন । -আপনি আমার উপর কেন রাগ করেছেন বলেন তো ? ঈশিতা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি আবার বললাম -আপনি রাগ করেছেন বুঝতে পারছিলাম কিন্তু কারনটা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না । একটু চুপ করে থেকে ঈশিতা বলল -আপনি সেদিন ইরিনের সাথে রিক্সায় কেন উঠলেন ? -মানে ? কি বলছে এই মেয়ে ! আমি ইরিনেয় সাথে রিক্সায় উঠলে ও কেন রাগ করবে ? কেন রাগ করবে ? আমি ঈশিতার দিকে তাকিয়ে থাকলাম । আচ্ছা ! এইবার বুঝলাম । ইরিনের সাথে রিক্সায় উঠলে ঈশিতা কেন রাগ করবে আমি বুঝতে পারলাম । আসলেই এই মেয়েদের মন বোঝা কত কঠিন ! ঈশিতার আচরন এমন ছিল আমি কোন দিন ভাবতেই পারি নি ও এমনটা চাইবে । আমি বললাম -আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিল । তখন নিশ্চই আপনার বলা উচিৎ ছিল । ঈশিতা এবারও কোন কথা বলল না । কেবল আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । -এই টুকু বললেই কিন্তু হয়ে যেত ! হটাৎ ঈশিতা বলল -আপনাকে ইরিনের সাথে দেখে এতো রাগ হল । মনে হল .... মনে হল ... -কি মনে হল ? -জানি না কি মনে হল ! আপনি আর কখনও ইরিনের সাথে রিক্সায় উঠবেন না । কোন দিন না । আমি হেসে উঠলাম । বললাম -তো কার সাথে উঠবো ? আপনার সাথে ? আমি হাসতেই থাকি । -হাসছেন কেন ? -তোমার ছেলেমানষী দেখে হাসছি । -কি ছেলেমানুষী করলাম ? -কাল তুমি কি বলেছিলে মনে আছে ? -কি ? -বলেছিল কাছে মানুষের উপরই কেবল রাগ অভিমান করা যায় । আমি আজকে একটা কথা বলি ! তুমি যেমন করে আমাকে রিক্সায় উঠতে মানা করলে .... কেবল আপন মানুষ গুলোই ওভাবে বলতে পারে । এখন বল তুমি কি আমার কাছের মানুষ ? ঈশিতা কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল । আমি হাসি মুখে বললাম -চুপ করে থেকো না । বল । ঈশিতা চুপ করে থাকল । কেবল এক ভাবে আমার দিকে তাকিয় থেকল । কি আশ্চার্য এই মেয়ে গুলো । মেয়েগুলো মুখে এক কথা আর চোখ বলছে আর এক কথা । একটু মুখ ফুটে বললে কি হয় ? এমন কি ক্ষতি হয় ?
"তুমি বল" !! "না তুমি বল" !! -এই কি করছ ? -কিছু করছ না । -ডিস্টার্ব করলাম না তো? - নাহ । সমস্যা নাই বল । তন্নী একটু চুপ করে থাকল । তারপর বলল -বিকালে কি তুমি ফ্রী আছো ? -কেন বল তো ? আহা! প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন কর কেন ? বল না বিকালে তোমার কোন কাজ আছে কি না ? আমি কিছুক্ষন ভাবলাম । তারপর বললাম -নাহ । কোন কাজ নাই । বল কি বলবা ? তন্নী বলল -আজকে বিকালটা কি আমাকে দেওয়া যায় ? -মানে ? -মানে আমার সাথে বিকাল বেলা একটু দেখা করবা ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না তন্নী ঠিক কি বলতে চাইছে । বললাম -দেখো সপিংটপিংয়ে যেতে পারবো না কিন্তু । -সপিংয়ে যেতে হবে না । তোমাকে ট্রিট দিবো । -খাওয়াবা ? -হুম । -কোন স্পেশাল কারন ? কারন তো আছে । -আমাকে একা খাওয়াবা ? -হুম । আমি বললাম -এই সুযোগতো আমি কখনও মিস করি না । বল কি খাওয়াবা ? -তুমি যা খেতে চাও ! -দেখো কিন্তু । -আচ্ছা বাবা দেখবো । -ওকে দেন , সি ইউ এট ফাইফ পিএম । - সি ইউ । তন্নী ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পর মনে হল তন্নী হঠাত্ খাওয়াতে চাচ্ছে কেন ? অবশ্য তন্নী এমনিতেই প্রায়ই খাওয়ায় আমাদের । কিন্তু আজ আমাকে স্পেশাল ভাবে খাওয়াচ্ছে । আজ কেই বলবে নাকি ? কে জানে ?
তন্নী মেয়েটাকে আমি আগে মোটেই পছন্দ করতাম না । ওর পোষাক ওর কথা বার্তা ওর আচরন কোন কিছুই আমার ভাল লাগতো না । বড় লোকের মেয়েতো সব কাজে একটু বেশি বেশি । আর এতো ঢং , দেখলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যেত । তাই পারত পক্ষে আমি তন্নীকে এড়িয়ে চলতাম । তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে তন্নী দেখতে খুব সুন্দর ছিল । তাই আমাদের ক্লাসের ছেলেগুলা সব হ্যাংলার মত ওর আসেপাশে ঘুড়ঘুড় করতো । আমার বন্ধুরাও ছিল । অস্বীকার করবো না যে ওর চেহারা আমার ভাল লাগতো না । কিন্তু যখন ভার্সিটিতে আসতো এক বস্তা মেকআপ আর পারফিউন মেখে আসতো । আর কথা বলত এমন ঢং করে বিরক্তিতে মন ভরে উঠতো । তাই ওর আসেপাশে আমি ঘেসতাম না । কিন্তু ভাবতেও কত অবাক লাগে এই মেয়েটার সাথে এখন আমার কত ভাব । অবশ্য ওর সাথে মেলামেশাটা খুব বেশি দিনের নয় । কয়েক মাস আগে আমার ইউনিভার্সিটিতে রিসার্স মোথোডোলজি নিয়ে একটা ওয়ার্ক সপ হয়েছিল । কিছু ভলানটিয়ারের দরকার ছিল । তা কি মনে করে নাম লেখালাম । ওয়ার্কসপে এসে দেখি আমাদের ক্লাস থেকে পনের জনের মত ছেলে মেয়ে এসেছে । তাদের মধ্যে তন্নীও ছিল । ওকে দেখে একটু অবাকই হলাম । এই রকম কাজেও ওর ইন্টারেস্ট আছে ? যাক ভাল । ওয়ার্কসপের সাতটা দিন কাটল বেশ ভালই । নতুন একটা অভিজ্ঞতা হল । হাসি তামাশা আড্ডাও হল খুব । এ কয়টা দিনে আমার কেন জানি মনে হল তন্নীকে আমি যেমনটা মনে করেছিলাম ও হয়তো তেমনটা না । কিন্তু তবুও ওর কাছ থেকে একটু দুরে দুরেই থাকলাম । বড় লোকের মেয়ে কখন কি মনে হয় বোঝা মুশকিল । কাছে না যাওয়াই ভাল । ওয়ার্কসপের শেষ দিনে আমরা সবাই মিলে আড্ডা মারছিলাম এমন সময় আড্ডার মাঝখানে তন্নী উঠে দাড়াল । সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল -এই কয়দিনে তোমাদের সাথে আমার দারুন সময় কেটেছে । কাল আমার জন্য একটা বিশেষ দিন । তোমাদের সবাইকে আমি দাওয়াত করলাম । তোমরা সবাই অবশ্য অবশ্যই আসবে । ঠিক হল পরদিন বিকালে সবাই স্টার কাবাবে মিলিত হবে । তন্নী সবাই খুব ভাল করে বলল আসার জন্য । আমাকেও বলল এবং বেশ আন্তরিক ভাবেই বলল । কিন্তু আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে যাবো না । আর আমার এ রকম পার্টিফার্টি ভাল লাগে না । কিন্তু ব্যপারটা যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ হল না । তন্নীর ফোন এল পরদিন দুপুর বেলা । রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে তন্নী বলল -তুমি আসছো তো ? সবাইকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি । কেবল তুমি বাকি ছিলে । পাঁচ টার মধ্যে চলে এসো কেমন ! -ইয়ে মানে আমার হয়তো আশা হবে না । তন্নী কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম -আসলে আমার একটা কাজবেঁধে গেছেতো । তন্নী বলল -আমি জানতাম তুমি এমন কিছু একটা বলবে ? আরো কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল -আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমাকে ? -বল । -তুমি আমাকে পছন্দ কর না কেন বলতো ? শুধু এবার না আমি প্রত্যেক বার দেখেছি তুমি সব সময় আমাকে কেমন যেন একটা ইগনোর কর । কেন এমন টা কর ? আমার জানা মতে আমি কোন দিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি নি । তাহলে কেন এমনটা কর ? একটানা কথা বলে তন্নী চুপ করলো । আসলে ও যা বলল তা মোটামুটি ঠিক । ওকে ইগনোর যে কেন করি তার কোন সুনির্দিষ্ট কারন আমার নিজেরও জানা নাই । তাহলে কেন করি ? -আসলে আমি .... -তোমাকে কোন কৈফত দিতে হবে না । কৈফত চাওয়ার অধিকার আমার নেই । কিন্তু এই আমি খুব আশা নিয়ে তোমাকে দাওয়াত করেছিল । আমার মনে হয়েছিল যে এবার হয়তো তুমি আসবে । তন্নীর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছিল যেন ও কাঁদছে । কিংবা এখনই কেঁদে ফেলবে । ও আর কথা বলল না । ফোন রেখে দিল । একটা অপরাধ বোধে সারাটা মন কেমন যেন বিষাদ হয়ে রইল । বারবার মনে হতে লাগল যে কিছু নিশ্চয় আমি ঠিক করছি না । পরদিন সকাল বেলা ভার্সিটি তে গিয়ে আর এক কাহিনী শুনলাম । কালকে তন্নীর জন্মদিন ছিল । আর কালকের পার্টি ও ক্যান্সেল করে দিয়েছে কেবল আমি যাই নি বলে । আমি বড় আশ্চর্য হলাম । এমনতো হবার কথা না । আর আমি এমন কোন ইম্পর্টেন্ট মানুষ না যে আমার না আশাতে পুরো পার্টি হবে না । তন্নীর এক বান্ধবীর কাছে সব কিছু জানতে পারলাম । আসলে আমি যে ওকে পছন্দ করি না এটা ওকে পীড়া দিচ্ছিল । ও কেবল জানতে চাচ্ছিল ঠিক কি কারনে আমি ওকে ইগনোর করি ! আমার কাছাকাছি আসার জন্যই কেবল ওয়ার্ক সপে গেছিল । ও কেবল বোঝাতে চেয়েছিল যে সে খারাপ কেউ না । সবাই যেমন ওর সাথে মেশে আমি কেন তার সাথে মিশি না । ওর বান্ধবী আরো বলল যে ও কাল আসলেই অনেক কষ্ট পেয়েছে । কথা গুলো জানার পর আমার আসলেই খারাপ লাগতে লাগল । আসলেই মেয়েটার সাথে একটু অন্য রকম আচরন করা হয়ে গেছে । এখন এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যে ওকে সরি বলা । খুজে বের করলাম ও কোথায় আছে । চার তলায় ক্লাস রুমের বাইরে ও বসে ছিল । আমি যেতেই আমার দিকে একটু তাকাল । ওর চোখ গুলো কেমন ফোলা ফোলা লাগল আমার কাছে । নিশ্চই কেঁদেছে । আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম । - হাই ! একটু হাসার চেষ্টা করলাম । তন্নী শুকনো গলায় বলল -হাই! - তুমি পুরো প্রোগ্রাম ক্যান্সিল কেন করলা ? এমন পাগলামো কেউ করে ? মানুষের কাজ থাকতে পারে না ? -তুমি কি এই কথা বলার জন্য এখানে এসেছ ? -আসলে আমি কাল কেন আসতে পারি না তা বলতে এসেছি । -কেন বলতে এসছো ? আমি কি তোমার কাছে কারনটা জানতে চেয়েছি ? -না তা না । কিন্তু আমার কারনে কারো জন্ম দিনের প্রোগ্রাম নষ্ট হবে , এটা আমার কাছে ঠিক ভাল লাগছে না । নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী লাগতাছে । তন্নী খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । -এই বোধটা আছে তোমার ? আচ্ছা একটা কথার উত্তর দিবে ? -বল । -আমি কি কখনও তোমার সাথে থারাপ ব্যবহার করেছি ? অথবা তোমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ কিছু বলেছি ? না । -এ কথা কেন বলছ ? -তাহলে এক্সেক্টলি কি কারনে তুমি আমাকে অপছন্দ কর বল ! -অপছন্দ করি কে বলল ? -তোমাকে বলতে হবে কেন ? তোমার আচরনে স্পষ্টই বোঝা যায় । -না বিশ্বাস কর । এমন টা মোটেই নয় । আমার একটা জরুরী কাজ ছিল । -মিথ্যা কথা বলার দরকার নাই । আমি আগেই বলেছি আমার কাছে কৈফত দেবার দরকার নাই । -সত্যিই আমি মিথ্যা কথা বলছি না । -আচ্ছা তাহলে প্রমান কর । -কি করতে হবে বল । -আমি এখনও আমার জন্ম দিনের কেক কাটি নি । আমায় সাথে এখন চল । -কোথায় ? -যেখানে আমি নিয়ে যাবো । আমি কেবল হাসলাম । তারপর থেকে তন্নীর সাথে সম্পর্কটা কেমন যেন বদলে গেল । খুব চট করেই তন্নী খুব কাছে চলে এলো ।
আবার মোবাইলটা বাজছে ! মোবাইল স্ক্রিনে তন্নীর হাসি মাখা মুখটা ভেসে আছে । -বল । -আসছো তো ? -আরে বাবা আসছি তো । -তোমার কোন ভরসা নাই । -আচ্ছা এই কথা কেন বলছ ? আমি কি আগের মত আছি বল । -উউউমম । - আচ্ছা আজ কি বিশেষ দিন বল তো ? জন্ম দিন তো কদিন আগে গেল । আজকে কি ? তন্নীর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । -জন্মদিন ছাড়া কি মানুষের জীবনে আর কোন বিশেষ দিন থাকে না ? আচ্ছা তুমি আসো তোমাকে বলব ।
বিকেল বেলা ওর সাথে দেখা হল । জারুল গাছের নিচে ও দাড়িয়ে ছিল । এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল । আমাকেই খুজতে ছিল বোধহয় । আমি ওর পাসে গিয়ে টুক করে ওকে চমকে দিলাম । -এমন করে কেউ আসে ? আমি হাসি কেবল । ওর দিকে তাকালাম । ওকে বেশ সুন্দর লাগছে । -তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে । আর ..... ও একটু হাসল । বলল -আর ? -আর বেশ উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন মেয়ে মনে হচ্ছে । -উচ্চ তাপমাত্রা ? আমি হাসলাম । -সহজ ভাষায় বললে তোমাকে আজ হট লাগছে । এবার তন্নী একটু লজ্জা পেল । আমি বললাম -কই বল তোমার বিশেষ দিনটা কি ? আমরা জারুল গাছের নিচে পেতে রাখা বেঞ্চে বসলাম । ও প্রথমেই কিছু বলল না । কিছুটা সময় নিয়ে ও বলল -আমাদের বন্ধুত্ব্য টা তোমার কাছে কেমন মনে হয় ? আমি হাসলাম । -এই কথা কেন বলছ ? -বল না ! ওর চেহারায় কেমন যেন অস্থিরতা দেখলাম । -ভাল লাগে । অবশ্যই ভাল লাগে । -জানো অপু তোমার প্রতি আমার আলাদা একটা আকর্ষন গোড়া থেকেই ছিল । তারপর তোমার সাথে বন্ধুত্ব্য হবার পর থেকে তোমার সাথে কথা বলার পর থেকে আমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি । হঠাত্ হঠাত্ সব কিছু কেমন জানি লাগে । কোন কারন ছাড়াই হাসি ! আপনা আপনি চোখে পানি আসে । আমি কিছুদিন থেকে আমার এই আচরন কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না । -তাই ? আমি হাসলাম । বললাম -তোমার তো সাইক্রাটিস দেখানো দরকার । সত্যি বলছি । আমার পরিচিত একজন ভাল ডাক্তার আছে । যাবে নাকি ? তন্নী একটু যেন আহত হল । -যাবে না ? -অপু তুমি খুব খারাপ । আগেও আমাকে কেবল কষ্ট দিতে আজ দাও । এই বলে ও উঠে পড়ল । -আমি তোমার সাথে আর কথাই বলবই না । -আরে আরে যাও কই ? ওকে আবার বসালাম । ওর দিকে তাকিয়ে বললাম -তুমি যে কথা কাল রাতে বুঝতে পেরেছ , যে কথাটা বলার জন্য আজ আমাকে এখানে ডেকেছ তা আমি অনেক আগে থেকেই জানি । বুঝেছ ? তন্নী একটু আদুরে গলায় বলল -জানো ?? -হুম । -সত্যি ? -হুম । -তাহলে বলনা কেন ? -কেন বলবো ? তুমি বল । -তুমি বল । -না তুমি বল । -তুমি । -তুমি । -না তুমি বল । আমি বললাম -আমি বলব না । তুমি বলবা ! -না তুমি বলো ।