এই নাও বৃষ্টি তোমার চোখে রাখো কোনো এক বর্ষায় ঝরে পড়বে এই নাও লাল রঙ কোনো এক সন্ধ্যায় তোমার আকাশটাকে রাঙিয়ে দিবে এই নাও কাশফুল কোনো এক শরতে আমার জমিনের বুক ভরে ফুটে থেকো
চাইলেই হয়তো তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারতাম জানি কষ্ট হত, তবু অসম্ভব ছিল না কিন্তু বেঁচে থাকলে তো বাকিটা জীবন তোমাকে ঘৃণা করে বাঁচতে হবে ।
তোমায় এত বেশি ভালবেসেছি যে তোমাকে কখনো ঘৃণা করতে হবে... এ কথা এক মুহূর্তের জন্যও ভাবিনি ভাববই বা কেন . . . ??? আমার ভালবাসা তো বাজে ছিল না আজ আমার এই ভালবাসাকে আমি ঘৃণার কাছে এত সহজে হেরে যেতে দেই কি করে বল . . . . . ??? তাই ঘৃণা করে বেঁচে থাকার চেয়ে তোমায় ভালবেসেই চলে যেত হল .
অরণ্য রিকশায় বসে আছে। রিকশাওয়ালা মধ্যবয়স্ক এক লোক। তাকে দেখে মনে হয় জগতের কোন কিছুতেই তার আগ্রহ নেই। এক মনে রিকশা টেনে যাচ্ছে। ঘন্টা হিসেবে রিকশা নেয়া হয়েছে, সেটা কতদূর এগুবে কে জানে। ইতোমধ্যে প্রায় একঘন্টা হয়ে গিয়েছে। অরণ্যর ভাবতে অবাক লাগে গত একটা ঘন্টা ধরে নিতু তার পাশে বসে আছে। নিতু কি জন্য যে আজ অরণ্যর সাথে আসতে রাজি হয়েছে কে জানে।
... গত একঘন্টা আগে নিজেদের বাসার ছাদে বসে ছিল অরণ্য। আকাশে অনেক মেঘ, মেঘ কোথাও স্থির নেই। অবিরাম ছুটে যাচ্ছে। হঠাৎ তার মনে হলো যে নিতুকে ফোন দেয়া যায়। ফোন দিল সে, প্রায় সাথে সাথেই নিতু রিসিভ করলো। এই মেয়ে কি সবসময় মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকে নাকি! অরণ্য ফোন দিলে সবসময় নিতু প্রায় সাথে সাথেই রিসিভ করে ফেলে। এ কথা ও কথা বলতে বলতে অরণ্য বললো, চল্, আজকে একটু বাইরে ঘুরে আসি। নিতু জিজ্ঞেস করলো, কোথায় ঘুরবি? অরণ্য চমকিয়ে উঠলো। বাইরে ঘুরে আসার কথা অরণ্য মাঝে মাঝেই বলে, সবসময় নিতু না করে দেয়। কোথায় ঘুরবে কখনোই জিজ্ঞেস করে না। আজ কি নিতু রাজি হবে?! অরণ্য বললো, এমনি, কোথায় জানি না। তুই কি যাবি? নিতু দু'সেকেন্ড চুপ করে থাকলো। এই দু'সেকেন্ডই অরণ্যর কাছে মনে হলো অনেক সময়। নিতু চুপ করে আছে কেন? আচ্ছা যাবো, দেখি তুই কই নিয়ে যাস, নিতুর কণ্ঠ শোনা গেল। অরণ্যর মনে হলো জীবনে সে এত খুশি কখনই হয় নি, বললো, তুই বাসা থেকে নাম, আমি তোকে নিতে আসছি।
একঘন্টা ধরে দু'জনেই চুপচাপ বসে আছে। ফাঁকা রাস্তায় রিকশা চলছে। চারপাশে কোন শব্দ নেই। অরণ্যর মনে হচ্চে এই নীরবতা যেনো কাঁচের মত। কাঁচ যেমন হাত থেকে পড়লেই ভেঙে যায়, একটু কথা বললেই যেনো এই চমৎকার নীরবতা আর উপভোগ করা যাবে না। যে মেয়ে সবসময় একনাগাড়ে কথা বলে যায় সে এখন একদম নীরব। অরণ্য সামনের ফাঁকা রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে মাঝে মাঝে নিতুর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। নিতুর চুল উড়ছে বাতাসে, সেই চুল কখনো-সখনো এসে অরণ্যর মুখে এসে পড়ছে। কেমন যেনো একটা গন্ধ, মিষ্টি সেই গন্ধে ঘুম ঘুম ভাব হয়। নিতু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অরণ্যর মনে হলো সেই মুখে হালকা একটা হাসির আভাস। কত সুন্দরই না দেখা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে গাছের সারি, মাঝে পিচ ঢালা রাস্তা। সেই রাস্তায় রিকশা ছুটে চলেছে। দু'জন চুপচাপ বসে আছে। তারা কত পরিচিত। কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। কথা না বলেও অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়া যায়।
অরণ্যও আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে অনেক মেঘ, মেঘ কোথাও স্থির নেই। অবিরাম ছুটে যাচ্ছে। এই মেঘের মত, তারাও যদি অবিরাম ছুটে যেতে পারতো। অরণ্যর হঠাৎ মনে হলো, এমনভাবে যদি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো মন্দ হতো না। জীবনটা তো খারাপ না। অরণ্যের কাছে বেঁচে থাকাটা আনন্দময় মনে হতে থাকে, যদিও সেই আনন্দের মাঝে কোন একখানে খুব সূক্ষ্ম কষ্ট রয়ে যায়। . .
ভেবেছিলাম এই বর্ষায় যাবো, যাবো তোমার কাছে দেখা হবে তোমার সঙ্গে;
এক আকাশ মেঘ এক গুচ্ছ কদম সঙ্গে করে সকালের মেঘলা রোদ নিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভেজা উদোম ছইয়ের নৌকা নিয়ে মেঘে ভিজে আমি হাজির হবো তোমার কাছে, ঘন ঘোর বর্ষায় দেখা হবে আমাদের;
ভেজা ধানের শীষ হাতে বটের ভেজা চকচকে সবুজ পাতা মেলে ধরে তাকিয়ে দেখবে তুমি উড়ে যাওয়া মেঘেদের দল আঝোরধারায় ঝরতে থাকা বৃষ্টির জল; ঘ্রান নেবে সোঁদা মাটির ভেজা কলমী লতার হিজল পাতার, দূর থেকে ভিজে যাওয়া শালিক জোড়া অবাক চোখে দেখবে তোমায়;
আর আমি দেখবো তোমার চোখের জমিনে ভেসে যাওয়া শ্রাবনের মেঘলা আকাশ, চিবুকে দুষ্ট মেঘেদের আনাগোনা;
তুমি যখন খুব কাছে এসে দাঁড়াবে আমার তোমার ভেজা বুক হতে আমি নেবো বুনো কদমের ঘ্রান;