চোখ খোলা অথবা বন্ধ করার পর
এ রকম
বিড়ম্বনায় পড়তে হবে আমি কখনো ভাবিনি। আসলে আমার কখনো কোনো দিন ইচ্ছে করেনি
মানুষকে বোকা বানাই। মানুষের সঙ্গে ফটকাবাজি করার প্ল্যানও আমার মাথায় নেই।
কিন্তু তার পরও নিয়তি আমার সঙ্গে এই যড়যন্ত্রের খেলা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমি ছোটখাটো একটা চাকরি করি। তারও চেয়ে ছোট একটা রুমে আমি থাকি।
আমার রুমে আরেকজন থাকে। তারও একটা চাকরি আছে। কিন্তু কী সেটা আমি জানি না। জিজ্ঞেস
করলে খুনির মতো তাকায়। আমার ধারণা, সে খুনখারাবি করে
বেড়ায়। একবার তার ড্রয়ারে একটা পিস্তল পেয়েছি। পিস্তলে গুলি ভরা ছিল, আমি জানতাম না। হাতে নিয়ে খেলাচ্ছলে ট্রিগার টিপতেই বিকট আওয়াজ।
জানালার কাচ ভেঙে গুঁড়া। হাত ঘেমে পিচ্ছিল হয়ে গেল। একটা ফার্মেসিতে গিয়ে
প্রেশার মাপালাম। দু-এক দিন স্লিপিং পিল খেলাম। আমার রুমমেট ব্যাপারটা শুনে হাসতে
হাসতে মরে। কিন্তু তার হাসিটাও খুনিদের মতো। এমন নয় যে জীবনে আমি প্রচুর খুনি
দেখেছি। বলতে গেলে নাটক-সিনেমা ছাড়া দেখিইনি। অবশ্য নাটক-সিনেমা আমাদের জীবনের
দর্পণ বলে সেখানকার দেখাটাকে মিথ্যা মনে করার কারণ নেই।
ঘটনাটা যখন প্রথম ঘটল আমি অমীমাংসার মধ্যে থাকলেও একটা চমক
পেয়েছিলাম। আসলেই খুব মজার ব্যাপার। কিন্তু যখন রেগুলার এ রকম ঘটতে শুরু করল,
তখন একটা ভয় ঘিরে ধরল আমাকে।
হঠাৎ করেই একদিন আমার মনে হলো, আমি
স্বপ্নের ভেতর আছি। আর রাতে যেটা স্বপ্ন বলে মনে করতাম, সেটাই
আসলে আমার বাস্তব। স্বপ্ন আর বাস্তবের হিসাব আমি মেলাতে পারতাম না। কোনটা স্বপ্ন
আর কোনটা বাস্তব?
২.
এ রকম বিভ্রমে পড়ার ব্যাপারটা আমার কাছে প্রথম আসে যেদিন আমি
পাক্কা চার ঘণ্টা হেঁটে এসে অবেলায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের ভেতর আমি টের
পাচ্ছিলাম আমার নাক-মুখ-চোখ দিয়ে একটা ঠান্ডা বাতাস ঢুকে যাচ্ছে। আমি নাক-কান-মুখ
বন্ধ করার চেষ্টা করেও পারছি না। তারপর সারা রাত বালিশে মুখ চাপা দিয়ে থাকলাম।
যখন সকাল হয়, তখন আমি একটা নদীর ধারে। আমার কাছে সব কেমন
জানি লাগতে শুরু করে। কারণ ওই নদীটার নাম আমি জানতাম না। আর আমি যখন বালুর চড়ায়
পড়ে আছি, তার খানিক দূরেই আমার রুমমেট চোখে একটা
সানগ্লাস পরে হাতে একটা পিস্তল নিয়ে নাচাচ্ছিল। সে কিছুক্ষণ পর তার নুনুটা বের
করে নদীর বালুর চরে প্রস্রাব করছিল। আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল।
আমি তখন ভাবতে শুরু করলাম, এটা একটা স্বপ্ন। এবং আমি তাকেও বললাম। তার নাম রসু। রসু শুনে হাসতে
হাসতে মরে। আমি যে স্বপ্ন দেখছি, সে কোনোভাবেই মানতে
নারাজ। আমাদের অনেক সময় ধরে তর্কাতর্কি হলো—এটা স্বপ্ন, না বাস্তব। একটা সময়
আমি ক্লান্ত হয়ে রসুর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়লাম। আমার খুব কান্না পেল। রসু আমার
কান্না থামানোর জন্য দু-চারটা গুলির ফাঁকা আওয়াজ করল।
এর পর থেকে আমার এই বিভ্রমটা মনে ঘিরে থাকতে শুরু করল যে,
আমি স্বপ্নে আছি, নাকি বাস্তবে?
রসু আমাকে প্রায় বলে তারও এ রকম হয়েছে। তার মা মারা যায় তার
জন্মের সময়। রসুর বাপ তাকে বস্তার ভেতর ভরে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসতে নিয়ে
যাচ্ছিল। তখন বস্তার ভেতর রসুর কুঁইকুঁই আওয়াজ শুনে আশপাশের কিছু কুকুর মনে করে,
বস্তার ভেতর বিপন্ন তাদেরই স্বজাতি। তারা রসুর বাপের পিছু নেয়।
এর মধ্যে একটা কুকুর ছিল পাগল। সে রসুর বাপকে তাড়া করতে থাকে।
রসুর বাপ মারা যায় পাগলা কুকুরের কামড়ে।
রসু আমাকে এসব কথা বলে একদিন গভীর রাতে শার্টের হাতায় রক্তের
দাগ নিয়ে রুমে ফেরার পর। সেদিন আমি অফিস থেকে ফিরে জ্বরে ভুগছিলাম। অফিসে থাকার
সময়ই জ্বর অনুভব করি। আমার কলিগ রেশমা আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপে। আমি খুব
লজ্জিত বোধ করি, যদিও রেশমার হাতের স্পর্শ আমার ভেতর
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি তৈরি করে। কিন্তু জ্বরের প্রথম ঘোরের মধ্যে মাত্র পা
রাখায় তখন আমি টলে উঠছিলাম। রেশমা আমাকে দ্রুত বাসায় ফিরতে বলে। রেশমা আমার
প্রেমিকার মতো কেউ নয়। আর সে বিবাহিত। তার স্বামী মাঝেমধ্যে অফিসে এসে তাকে
গালিগালাজ করে যায়। আমরা তার কোনো কারণ জানি না। রেশমাও বলে না। রেশমা যখন গালি
খায় আমার খুব খারাপ লাগে। লোকটাকে কষে চড় লাগাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু লোকটার
চোয়াল খুব শক্ত। আমার মতো লোকের চড়ে তার কিছু যাবে-আসবে মনে হয় না। রেশমাকে একদিন
কাঁদতে দেখলাম। রেশমার সেই কান্না ছিল আমার জীবনের দুঃখের দৃশ্যগুলোর একটি।
সেদিন নিজেকে খুব অসহায় ভাবতে ভাবতে আমি চোখ বুজে রেখেছিলাম।
যখন চোখ খুলি তখন আমি নিজেকে আবিষ্কার করি নিজের রুমের বিছানায়। এবং তার পরই
ঝাপসা ঝাপসা দেখতে পাই রসুর মুখ। রসুর শার্টের হাতায় রক্তের দাগ।
৩.
আমার অফিসটা রহস্যময়। আমি এখনো তার ফাংশনগুলো ভালো জানি না।
আমার আরেক বন্ধু রামলাল, যে এখন সুন্দরবনের কোনো এক
গুহায় আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে উৎসর্গ করেছে, সে আমাকে
এই অফিসে এনে ঢোকায়। এখানে নানান গবেষণা হয়। আর মানুষের নানান ক্রিয়াকলাপ নিয়ে
জরিপ হয়। জরিপের দলগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাজ করে। তারা নানান ফাইল-টাইল আমার
সামনে রাখে। আমি সেগুলোকে লাইন-আপ করি। অদ্ভুত সব জরিপ। মানুষের এমন কোনো বিষয়
নেই, যা নিয়ে তারা জরিপ করে না। একদিন আজব একটা ফাইল
দেখলাম। সেখানে দেওয়া আছে, চরাঞ্চলে একটা দম্পতি দশ বছরে
গড়ে কয়বার সঙ্গম করে। ফাইলটা পাওয়ার পর আমার শরীর নুয়ে পড়ে। ঘেন্না হয়।
আমি সেদিন রামলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। আমার আর ভালো
লাগছে না। আমি চাকরিটা ছেড়ে দেব। কিন্তু তত দিনে সে মোবাইল-টোবাইল থেকে বহু দূরে।
তার বেশ কয়েক দিন পর আমি আরেক পরিচিতজনের সূত্রে তাকে পাই। ফোনে রামলাল গম্ভীর
হয়ে আমাকে বলে, জগৎ রহস্যময়। সেই রহস্য ধরতে চেষ্টা কর।
আমি একভাবে চেষ্টা করতেছি, তুই অন্যভাবে।
এই বলে একবার হুম্ জাতীয় আওয়াজ করে কথা শেষ করে রামলাল। এই
অফিসে একমাত্র আশ্রয় রেশমা। রেশমাও আমার মতো দেয়ালে-পিঠ-ঠেকা মানুষ। তাকে নিজ
চাকরির পয়সায় স্বামীকে পুষতে হয়। রেশমার স্বামী দিনের বেলা ঘরে থাকে, যখন রেশমা বাসায় থাকে না, আবার রাতের বেলা
রেশমা যখন বাসায় ফেরে, তার একটু আগে সে বাড়ি থেকে
বেরিয়ে যায়। রেশমার সঙ্গে আমারও তেমন কোনো কথা হয় না। প্রায় প্রতিদিনই ভাবি,
জিজ্ঞেস করব, ওই সংসার করার কারণ কী,
কিন্তু জিজ্ঞেস আর করা হয় না। আমার সামনে স্বামীর গালিগালাজ
খেয়েই চলতে থাকে রেশমা।
এই অফিসে বলতে গেলে আমার কোনো কণ্ঠ নেই। এখানে আমি হাত চালাই,
মাথা দেই, ঘাম খরচ করি, কিন্তু কোনো কথা বলি না। কে যেন আমাকে মিউট করে রেখেছে। ব্যাপারটা আমি
এভাবে জানতে পারতাম না। চাকরির অনেক দিন পর একদিন আমার বস আমাকে ডেকে বলেন যে,
তিনি জানতেন না আমি কথা বলতে পারি না। রামলাল তাকে ঠকিয়েছে। সে
কোনো একটা সময় তাকে নাকি মহাবিপদ থেকে বাঁচিয়েছিল। রামলাল একসময় কুস্তি-টুস্তি
শিখেছিল। রাস্তায় দশ লাখ টাকা খোয়ানোর এক মিশনে সে বাংলা সিনেমার হিরোর মতো আমার
বসকে বাঁচায়। আর তার বিনিময়ে আমাকে এই চাকরি আদায় করে দিয়েছে বসের কাছ থেকে।
একদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমার মাথা ঘুরতে থাকে, পায়ের বল হারিয়ে ফেলি, যখন আমার বিছানাটা
হঠাৎ করে টেবিল হয়ে যায়। আমার পাশের চেয়ারে বসে রেশমা একটা ল্যাপটপে টাইপ করতে
থাকে। আর এক কলিগ বোর্ডে গ্রাফ এঁকে বোঝাতে থাকে যে, তৃতীয়
বিশ্বের মানুষের প্রধান সমস্যা হলো অস্তিত্বের সংকট। আমি নিজেকে ঠিক করতে চেষ্টা
করি। বিছানা থেকে নেমে এক গ্লাস পানি খাই আর পানি খাওয়ার পর শুনতে পাই পিয়নের
গলা। সে স্বভাবসুলভ গলাখাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, স্যার,
চা কেমন? উঠতে দেরি করলেন, মনে হয় ঠান্ডা হয়া গেছে। আবার গরম কইরা দেই?
আমি মাথা নাড়াই। এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর বুঝতে পারি, চায়ে লিকার কম হয়েছে। রেশমার শাড়ির রংটা আজ চড়া লাগে। আমি জানালার
পাশে গিয়ে দাঁড়াই। চড়া রোদ। আমার মাথায় এই চিন্তা এবার টনটন করে ওঠে—সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে সময়টা
কাটিয়ে এসেছি, অফিসে রাস্তায়, সেটা
কি বাস্তব? নাকি পুরোটাই স্বপ্ন? এখন কি আমি অফিসে আছি? নাকি বাসায়? আমার খুব অসহায় লাগতে শুরু করে। সামান্য ব্যাপারটার ফয়সালা করতে পারি
না।
আমার বস অফিসে প্রায়ই সিগারেট টানেন। অথচ তিনি নিজে বড় করে
সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন, ‘ধূমপান নিষেধ’। তার রুমে ঢোকা মাত্র সিগারেটের কড়া গন্ধ। এখন সেই সিগারেটের গন্ধ
নাকে এসে লাগছে।
এর মানে আমার আশপাশেই বস আছেন। আমি বলি, স্যার, পুরো রিপোর্টটা বারবার চেক করেছি।
স্যার, ডাটাগুলো আমি কালকেই ঠিক করব। তিনি খালি সিগারেটের
ধোঁয়া ছেড়ে দেন। টয়লেটে নিজের প্রস্রাবের শব্দ শুনতে শুনতে তার হাসি শুনতে
পাচ্ছি। লজ্জা করে। এর মানে তিনি টয়লেটেই আছেন। এবং নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন আমাকে।
আমি কোনোমতে প্রস্রাবটা শেষ করি। আমি হাতে পানি লাগাতে লাগাতে বলি, স্যার, এই ডাটাগুলো বিদেশে পাঠানোর দরকার নেই।
এইগুলো আমাদের আপন খবর। আমরা আমরা জেনে রাখি। চাকরের খবর মনিবকে শুনিয়ে লাভ নেই,
স্যার। মনিব করুণাই করবে। আর কী!
আমি টলে পড়ে যাচ্ছিলাম। বিছানার শিক থেকে হাত ফসকে যাচ্ছিল,
নাকি অসাড় হয়ে টয়লেটে পড়ে যাচ্ছিলাম, নাকি রাস্তায় ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়ছিলাম...
কেবল দেখতে পাচ্ছি, রেশমা আমার মাথাটা
তার কোলে রেখে খালি ডেকে চলেছে, দাদা, দাদা, দাদা...
৪.
ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনছি। ডেইলি দুই-তিন ঘণ্টা।
ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন। রসু এনে দিয়েছে। সে এগুলো শোনে না। তবে দুনিয়ায় তার
জন্য অসম্ভব কিছু নেই। আমারও খুব একটা ইচ্ছে নেই এসব ক্লাসিক্যাল গান-ফানে। গ্রামে
থাকতে নাজুম মাঝির গলায় প্রায় প্রতিদিন একটা গান শুনতাম, ‘আমার হাড় কালা করলাম রে, আমার দেহকালার লাইগা
রে...।’ হাড় ক্যামনে কালা হয়, আবার
দেহকালা জিনিসটা কী, আমি কিছুই বুঝিনি। কিন্তু নৌকাটা যখন
দুপুরবেলা ক্লান্ত হয়ে ঘাটের মাটিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকত, নাজুম মাঝির গান শুনলে মায়া লাগত খুব। নাজুম মাঝি আমার বড় প্রিয়
মানুষ ছিল। ডাক্তারকে আর বলতে পারিনি নাজুম মাঝির গান এনে দিতে। সে গান তো
রেকর্ডেও নেই।
কী হবে ক্লাসিক্যাল গান শুনে?
ডাক্তার বলেছেন, মাথা কুল রাখবে। স্থির
করবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
টাইম স্পেস ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে নাকি আমার! রেশমাকে প্রায়ই আশা
করতাম। একবার আসবে। খুব অপেক্ষায় থাকতাম। আসে আসে, আসে
না। কিন্তু কষ্ট আর নেই। বুঝেছি এটা আমারই অসুখ। কারণ রেশমা তো তিন-চারবার লুকিয়ে
লুকিয়ে এসে গেছে। আমি তাকে বলেছি, আপনার জন্য অপেক্ষায়
থাকতে থাকতে সূর্য অনেকবার ডুবে গেছে। রেশমা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েছে। বলেছে,
সেটা আপনার স্বপ্ন দাদা। অপেক্ষা করতে হলো কখন, আমি তো রেগুলারই আসছি। আমার মাথা ঘুরে যায়। কিন্তু নিজেকে সামলে নেই।
এগুলো এখন স্বাভাবিক করেই নিতে হবে। আমি তা-ও ফের প্রশ্ন করি, আপনি এসেছেন? কবে?
রেশমা কিছু বলে না। আমাকে এক গ্লাস দুধ খাওয়ায়। দুধ মাথা
পরিষ্কার করে।
রেশমার জন্য অপেক্ষায় থাকাটা বাস্তব, নাকি
রেশমা আমাকে দুধ খাওয়াচ্ছে এটা? এই হিসাব মেলাতে মেলাতে
আমি ঝাপসা হয়ে গেলে রেশমার গায়ের লাল-লাল কামড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওগুলো কী?
রেশমা বলে পিঁপড়ার কামড়।
রেশমার স্বামী এসে গালিগালাজ শুরু করে। মাগি-টাগি কিচ্ছু বাদ
নেই। বস বলে, অফিসটা একদম আউট অব কন্ট্রোল হয়ে গেছে।
ডোনাররা নাখোশ। গত এক মাসে নাকি যত উল্টাপাল্টা ডাটা গেছে। আমি দেখে দেওয়ার পর
এসব কীভাবে হয়? জরিপ হয়েছে একটা, রিপোর্টে গেছে আরেকটা। পশুপাখির জীবন কীভাবে আরও বেটার হয়, এটা কি তাদের ভাবার কথা? কোন কালপ্রিট এসব
করছে? বস আগুন।
পুরো এক গ্লাস দুধ খেয়ে শেষ করি। এর মধ্যেই রেশমা বসকে বলছে,
স্যার, ফাইলটা রেডি। না রেশমা ফাইলটা
খুলো না। প্লিজ। প্লিজ, ওর সামনে ফাইলটা খুলো না, আমি কাকুতি-মিনতি করি।
ঝটিকায় রসু এসে দাঁড়িয়ে গেল। ওর হাতে একটা পিস্তল। ওটা
অনেকবার ওর হাতে দেখেছি। পিস্তলে ট্রিগার টিপতেই শুনলাম পাগলা কুকুরের আওয়াজ। রসু
চিৎকার করে বলছে, আমাকে বস্তা থিকা বাইর করো বাপ। বাপ।
বসের শরীর থেকে গলগল রক্ত ঝরছে। রেশমার স্বামী চিত হয়ে পড়ে আছে
মেঝেতে।
রসুর বাপ দৌড়াচ্ছে। পিছে পিছে পাগলা কুকুর।
৫.
আজকের দিনটা ভালো। অফিসে প্রচুর চাপ। তবু ভালো লাগছে। কারণ এটা
বাস্তব না। নিখাদ স্বাভাবিক সহজ অর্থহীন স্বপ্ন। আমার বাস্তব এখন শুরু হয়
মাঝরাতে। চোখ খোলা অথবা বন্ধ হওয়ার পর।