[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

চলমান তুমি-আমি আর প্রতিক্ষার প্রহর।



চলমান তুমি-আমি আর প্রতিক্ষার প্রহর।


বাতাসে ভেসে বেড়ায় মদির গন্ধ অনিন্দ্য দেহ বল্লরীর।
হঠাৎ হাসির ঝংকারে, ভেঙ্গে খান খান পিন পতন নিস্তব্ধতা।
মন্ত্রমুগ্ধ আমার কপোল বেয়ে তখন বয়ে চলে আনন্দ কল্লোলিনী।
আমার নিজস্ব নদী।
যে আজকাল মাঝে মাঝেই আসন গাড়তে চায় আমাদের অভিসারে।
যদিও অনুমতি মেলেনি বলে দ্বিধান্বিত চলাচল।
পাছে ধরা পড়ে যায়!! তটস্থ সারাক্ষণ।
লাজুক আমার কল্লোলিনী তোমাকে এড়াতেই ব্যস্ত।
তবে বেশ বুঝতে পারছি, এ সঙ্গ ছাড়ার নয়।
কে জানে হয়ত চিরস্থায়ী গাঁটছড়া বাধারই পায়তারা।
কি আশ্চর্য! তার আগমনে এতটুকু বিরক্ত বোধ হয়না আমার।
কেন জানিনা কখনো কখনো অবচেতনে নিজেই দেই প্রশ্রয়।
তুমি কি তাকে প্রশ্রয় দেবে?
আমার কল্লোলিনীর দুই ধারা, আনন্দ-বিষাদ। দ্বন্দ্বটা আমার এখানেই।
কোন রূপে যে তাকে বরন করতে, কতটা প্রস্তুত তুমি?
আমি যখন যেমন চাই তার মাঝে দেই ডুব, অম্লমধুর ধারায় করি অবগাহন।
আমি তো তোমার মত মৌনব্রত গ্রহণ করিনি,
কারো বিশ্লেষণের আশায় রহস্যের অবগুণ্ঠনে জড়িয়েও রাখিনি ।
নিজেকে প্রকাশিতে ব্যাকুলতারও অন্ত নেই আমার।।
ভয়াল আধার এবারো আগলে দাঁড়ায় পথ।
আজ আর নয় বলে তোমার ফিরতি পথ ধরা
আসছ তো কাল? আমার ব্যকুল জিজ্ঞাসা।
থমকে যাওয়া পৃথিবীকে দেয় গতি, সম্মতি তোমার।
আমার কল্লোলিনীকে দেয় নবযৌবন, সহসাই দুকূল ছাপিয়ে নেমে আসে সে।
আমি ভেসে যাই। ভেসে যাই তার অম্লমধুর ধারায়।
প্রাপ্ত সুখের অমিয়তে নেশাগ্রস্থ আমি।
প্রতীক্ষারত পরবর্তী মোহন সন্ধ্যার।
ভয়াল আধার আর অসহ্য আলোর শেষের মাহেন্দ্র খনের।।

তোমাকে চাই



তোমাকে চাই


 

আকাশকে চাই মুগ্ধ হতে,
তোমাকে চাই ভালবাসতে।
বৃষ্টিকে চাই অন্তর অনল নেভাতে,
তোমাকে চাই আঁখিজল মুছতে।
জোৎস্নাকে চাই অহর্ণিশ নিজেকে ভেঁজাতে,
তোমাকে চাই আমলনামার বদৌলতে।
গোধূলীকে চাই মেহেদীতে সাজাতে,
তোমাকে চাই আলতায় রাঙ্গাতে।
রংধনুকে চাই আকাশের বুকে ধরে রাখতে,
তোমাকে চাই আজীবন বুকে জড়াতে।
ময়ূরকে চাই পেখম মেলে রাখতে,
তোমাকে চাই সাত জনমের বিনিময়েতে।

''ফিরাও তরী তীরের দিকে''


''ফিরাও তরী তীরের দিকে''



বুকের পাজরে ভালবাসায় কাঁটা হয়ে আছো
অমিয় ব্যাথারা করে হাশফাশ,
একবারও তো বললে না আজো
আমাকে তুমি কতটা ভালবাসো?

টেম্পসের রাতের কালো পানিতে
তারারা মিটমিট করে জ্বলে
কি করে রইলে বলো, এই আমাকে ভুলে?

রাতের কালো আকাশে সলিলোকি হয়ে
তোমারই পথ চেয়ে আকুল হৃদয়ে
বসে ভাবি, কবে, ওগো কবে তুমি আসবে?
গ্রহন করবে এই সামান্য আমিরে।

টরকুয়ারী’র নির্জন রাস্তায় প্রচন্ড বৃষ্টির প্রচন্ড ঝাপটায়
যখন, ঠান্ডা ফোটারা চোখে মুখে এসে পরে
ভাবি, তুমারি চুম্বন সে, যার আশায় আছি বসে
হাজার বছর ধরে, কত নগর কত সভ্যতার গোড়া পত্তন করে।

দিগ বিজয়ী বীর আমি তো নই
তাই ত আমি ধীর হয়ে রই
অথচ তুমি তো জানো
এমনটা আমি কখনই নই,
অধীর হৃদয় নিয়ে বসে থাকি টুরকুয়ারী’র লেনে
তৃষ্ণার্ত চোখ থাকে ২৭ নাম্বার বাড়িটার দিকে,
কারন, সেখানেই যে আমি বাস করি
তোমারই হৃদয় চার্চের গম্ভির কথপোকথনে।

বলি, আমাকে ভুলে, ভাল থেকো,
বুকের পাজরে ভালবাসায় কাঁটা হয়ে আছো
অমিয় ব্যাথারা করে হাশফাশ,
ভুলেও কখন জানতে চাইব না আর
কি করে, বল কি করে
ভুলে রইলে, এই আমাকে ভুলে?

কৃষ্ণ রাতের টেম্পসের বিষন্ন বাতাসও কিছু বলে
কানে কানে এই সামান্য আমিরে,
জানতে চেয়ো না সে কি বলে,
নিঃশব্দ বিষন্ন কথা, শুনতে কি পাবে?

বৃদ্ধার অনুরোধ


বৃদ্ধার অনুরোধ



"মোক একনা বিষ আনি দিবু,
মুই তোক দোয়া করি দেইম।"
অতশীপর এক বৃদ্ধার একটি অনুরোধ'
মনে পরে গেলো, কান্না এলো।
হতাশ আমার ভোঁতা বোধ,
বেলা বয়ে গেলো' সময় কি হলো?
একটি দিন অতিরিক্ত যাতনা,
বেচে থাকার অনর্থক ভাবনা।
কেন এমন হলো? দিন রাত বুঝিনা!
থমকে যায় প্রতিটি বায়না।
কেন চার দেয়ালে আটকালে আমায়,
আমি যে জংলি পাখি' খোদা তোমায় ডাকি!
কেন বেধেছ মায়ায়।
তা যে মিথ্যে' লোক দেখানো মেকি।
"মোক একনা বিষ আনি দিবু,
মুই তোক দোয়া করি দেইম।"

হয়ে গেছে ভুল ..


হয়ে গেছে ভুল


হয়ে গেছে ভুল
কি দেব মাশুল
তাই নীরবে আড়ালে চলি ।
না পাই কোন কূল
ছিঁড়ি নিজ চুল
নিজের কান নিজেই মলি ।


সব হল বলা
নেই ছলা কলা
যা সত্য তাইতো বলি ।
সোজা পথে চলা
করিনি তো হেলা
পাই যা ঘরেইতো তুলি ।


বল তুমি যা
সদা করি তা
তবু শত কটু কথা শুনি ।
কাক ডাকে কা
বিপদ ডাকে তা
অশুভের ক্ষণ আমি গুনি ।

অপারগতা...


অপারগতা




সোনালী রৌদ্রের কিরণ আসা যাওয়া করে
নিত্য আমার চৌকাঠে ।
নির্লিপ্ত নয়নে তাকিয়ে শুধু দেখি
করতে পারিনা তাকে বরণ,
করতে পারিনা তাতে অবগাহন ।
অতৃপ্ত আত্মা বিহ্বল হয়ে অস্থির থাকে,
ভেজা হৃদয় সদা শ্যাতশ্যাতে থাকে,
ভাবনারা সদা কর্দমাক্ত থাকে,
আমার এই ক্ষুদ্র অচলায়তনে ।
অপারগতার আর্তনাদ আমি কুলকুচা করে গিলে ফেলি
যাতে পাশের কেউ বুঝতে না পারে,
ইচ্ছে গুলিকে আমি ক্ষত বিক্ষত করে ধ্বংস করি
যাতে পাশের কেউ দেখতে না পায়,
আমাকে আমি নিয়ে যাই নরকের দুয়ারে
যাতে পাশের কেউ কষ্ট না পায় ।
আমি তো আমি নই
কঠিন দাসখত দেয়া এক ক্রীতদাস
নিজেকে বিকিয়ে দেয়া জোকারের লেবাসে
এক পরাজিত সৈনিক ।
আমার সব অর্জন তো আমার নয়
অধিকারীর হুকুমের তাবেদার হয়ে
কৃত কর্মের কারণে
এক বিশ্বস্ত গোলামের স্বীকৃতি ।
--- ২৫– ০৯ – ২০১২ ইং

সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

চমক


চমক


এই দিনে, এ বেলায়, এই ক্ষণে এসে
আমার পথের পাড়ে হাটুভেঙ্গে বসে,
একটি লাল গোলাপ হাতে নিয়ে হায়
বলতে কি পারতে না, ভালবাসো আমায়………………

পায় পায়ে...


পায় পায়ে...


একটা স্টেশনবিহীন রেললাইন,
দু’পাশে অনন্তর বিস্তীর্ন গাছের সারি,
একটা সীমান্ত এক্সপ্রেস।
.
দুরন্ত গতিতে পিছনে চলে যাচ্ছে গাছগুলো
একটা গাছ জানালার কাছে আসছে,
যেন একটা দানব,
নিমেষে ভেঙে চুরমার করে দেবে সবকিছু ।
হঠাৎ ভয়াল কালো দানবটা
ট্রেন এর জানালা ছুতে ছুতে মুহুর্তের মধ্যে
চলে যাচ্ছে অজানায়,
ফেলে আসা অনন্তর পথে ।
.
যেতে না যেতেই আরো একটা দানব,
আবারো সেই ছোবলের হাত,
আবারো হারিয়ে যাওয়া অনন্তরে,
তারপর আবারো
তারপর আবার…..
চলছে……..চলছে…….
চলছি…..চলছি……………………..

BiLaShiR cHuka JooL [ বিলাসীর চুখে জ্বল ]: স্মৃতির ছায়া

BiLaShiR cHuka JooL [ বিলাসীর চুখে জ্বল ]: স্মৃতির ছায়া

অসীম শূন্যতা..


অসীম শূন্যতা

নিস্তব্ধ তমসার নির্ঘুম নিঃসঙ্গ রাত
দখিনা সমীরণে হাস্নেহেনার স্বতস্ফুর্ত বিস্তরণ
প্রকৃতির বিনয়তায় চারিদিক নীরব-নিথর,
তন্দ্রাহীন এই নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতায়-
দু’চোখের স্বচ্ছ অঞ্জলিতে আজ
নিরর্থক বিভ্রান্তির নির্মম প্রলেপ।



সীমাহীন আকাশের অস্তিত্ব জুড়ে
অগণিত নক্ষত্রের অপরূপ সমারোহ
লাইট পোষ্টের প্রজ্জ্বলিত মৃদু আলোয়,
আনমনে জোনাকির মত জ্বলছে আর
নিভছে ভুলের সমন্বয়ে দীর্ণ-বিদীর্ন গড়া-
অহেতুক-অনর্থক এই জীবন প্রদীপ।



অস্থিরতার অপরিকল্পিত নিঃস্বার্থ মন-
এবরো-থেবরো মেঠোপথ, সুপ্রিয় সময়
বিদায়ের সুকরুন ছুরিকাঘাতে পলাতক,
প্রলম্বিত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে, স্নেহ-ভালবাসার-
প্রত্যাশায় আলিঙ্গন লাশ হয়ে আছে
ঠুনকো নিয়তির নিস্পৃহ শূন্য কবরে।



নিঃশ্বাসে তবুও অবিকল জড়িয়ে আছ আজো
কালের বিবরে জমেছে অসংখ্য স্মৃতি কথা,
বাস্তবতার অচেনা পদক্ষেপে তোমার আনাগোনা-
তাই শিল্পের আকাশে বাস্তবিক অসীম শূন্যতা,
ক্রন্দন বিদ্ধ কবিতা, উপমা ও রূপকের অসহায়
আর্তনাদে নিজেকে মনে হয় কেবলই
অসীম শূন্যতায় কোন এক মৃতাত্না।

চাওয়ার যন্ত্রণা ছিল বলে



চাওয়ার যন্ত্রণা ছিল বলে


চাওয়ার যন্ত্রণা ছিল বলে,
বাড়ছে জীবন, বানের পানির সাথে সাথে,নাক ডুবা জলে
বার বার নিঃশ্বাসের জন্য জেগে উঠা;

মৃত্যুর মুখোমুখি বার বার জীবনের যুদ্ধ।


সেই থেকে বেঁচে থাকা!
ক্ষুধার জন্য, রিপুর জন্য,

 প্রতিক্ষণের জন্য,ভাল লাগা মন্দ লাগার জন্য,
ঝড় বৃষ্টির জন্য,রাত দিনের জন্য,

আঁধার স্বপ্নের জন্য,অপেক্ষার জন্যও।


ঋতুর পালাবদল, চুপি চুপি নৈঃশব্দে কালের বংশ বৃদ্ধি
সরীসৃপের মত গায়ের খলস ছাড়া নো মাত্র!

 কিন্তু জন্মের পর পরেছি শিকল
আহ্লাদের জীবন, জীবনভর বাঁধে পাঁজায় পাঁজায় স্মৃতি।



পাপ পণ্যের জটিল ম্যাথ,
আকণ্ঠ জীবনবোধ শরীর গাত্রে আঁকড়ে থাকে
শত ধ্বংস কালেও হয় না নষ্ট তার বিবেক সর্বস্ব বীজ।



এমন সৃষ্টিরহস্য ঘেরা জীবনে নিরর্থক অসহায়, অবাঞ্চিত,
অপরিপক্ক গৌণ বীজ বোধ হয়;
ফোটে না বীজে সারল্য শিশু স্বপ্ন,
মাটি ছেনায় আবিষ্ট কুমার পাড়ায় কুমারীর স্বপ্নবোনা শরীর।

রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

প্রিয়জন আজ কথা বলেছে


প্রিয়জন আজ কথা বলেছে...



শরতের আকাশে আজ সাদা মেঘ হয়ে ভাসবো
গাছের ডালে গাইব গান দোয়েল পাখি হয়ে
শরতের পবিত্র কাশ হয়ে দুলব সুখের বাতাসে
কেউ ঠেকাতে পারবে না
কারণ-
প্রিয়জন আজ নিজে আমার সাথে কথা বলেছে

সবুজ ঘাসের উপর উড়ব বাংলার ঘাস ফড়িং হয়ে
বাহারী প্রজাপতি হয়ে বসব প্রিয়ার চুলের খোঁপায়
আজ সারা দিন পৃথিবীর সব ফুলের সাথে গল্প করব
মনের সব আবেগের রং মেখে
কারণ-
প্রিয়জন আজ নিজে আমার সাথে কথা বলেছে

ভরা জোয়ারে সাগরের বুকে আজ টগর হব
ঢেউয়ের দোলায় দোলায় চলে যাব বন্দরে
শিউলি হয়ে ফুটব একান্ত নিরিবিলি নিশিথে
নির্জনে তার পরনের শাড়ি হব
কারণ-
প্রিয়জন আজ নিজে আমার সাথে কথা বলেছে
তাই শুধু টের পাই সে হৃৎপিণ্ডের বাতাস হয়ে
বুকের মাঝে দোলে........

সারাটা দিন আজ ভালো যাবে


সারাটা দিন আজ ভালো যাবে



সারাটা দিন, সারাটা দিন আজ ভালো যাবে
ভালো যাবে এ আমার হিমালয় সমান বিশ্বাস
পৃথিবীর হাওয়া বদলে গেছে তাই
উত্তর হতে দক্ষিণে বইয়ে যাওয়া হাওয়ায়
ভুলে না যাওয়া, আমায় জাগিয়ে তোলা গন্ধ পেয়েছি
পেয়েছি কোকিলের কণ্ঠে বকুলের তরতাজা গন্ধ

ব্রেইনের প্রতিটি কোষ তারে নিয়ে গবেষণা করে
দিন রাত, রাত দিন অনেক গবেষণা করে
তারে নিয়ে কীভাবে গড়া যায় স্বপ্নের নীড়
আজ যদি হাজারটা ঝড় বইয়ে যায়
আকাশে বাতাসে নয়, আমার মাথার উপর দিয়ে
যদি সিডর, সাইক্লোন বইয়ে যায় জীবনের উপকূলে
ভেঙ্গে পড়ে নিত্য কাজের কঠিন দেয়াল
তবুও বলছি-
সারাটা দিন আজ ভালো যাবে, ভালো যাবে
কারণ-হৃৎপিণ্ডের বাতাস আমার প্রেয়সী
মধুর কণ্ঠে আজ আমারই সাথে কথা বলেছে

প্রিয়ার মুখের মিষ্টি কথা!


প্রিয়ার মুখের মিষ্টি কথা!




প্রিয়ার মুখের মিষ্টি কথা,
এখনো হৃদয়ে আছে গাঁথা।
সে সব ছিল কথার কথা,
বুঝলাম এখন পেয়ে ব্যথা!

সাগর সেচে দিবে মুক্তা এনে,
আত্বহারা হয়েছি এমন কথা শুনে।
মরুভূমির আছে যত বালু কনা,
তার চেয়েও বেশী প্রতিশ্রুতি শুনা!
জোৎস্না স্নাত মাঘি পূর্নিমার রাতে,
বিনীদ্র রজনী কাটাবে আমার সাথে।
ভালবাসার কঠিন উঞ্চতার বলে,
হিমালয়ের হিমবাহু যাবে গলে!
আকাশের মত বিশাল উদারতা,
আমার প্রিয়ার মৌন নিরবতা।
আমাজানের মত দীর্ঘ খরশ্রোতা,
আমার প্রিয়ার খোপায় বাঁধা ফিতা!
সহ্য করবে আঘাত করি যত,
দৃঢ় মনোবল চিনের প্রাচিরের মত!

পিছনের সব প্রতিবন্ধকতা ভুলে,
প্রিয়া আসবে আমার সঙ্গে চলে।
আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত হলে,
আমাকে একটু দেরি করতে বলে।

আমি যাচ্ছি অপেক্ষার প্রহর গুনে,
আকাশ ভেঙ্গে সংবাদ এল কানে!
আমার প্রিয়া এখন অন্য খানে,
তাঁকে নিয়ে সংসার করছে অন্যজনে!

অর্থ সম্পদ ছিল যা কিছু,
ঢেলেছি আমি সব তাঁর পিছু।
আমি আজ পথের ভিখারি,
ছলনাময়ী এক প্রেমের শিকারি!

প্রীতি বিলাস


প্রীতি বিলাস
যদি জানালার ফাঁক গলে কুয়াশা ঢুকে পড়ে ভেতরে,
যদি সকালের সোনা রোদে হীরক জ্বলে ঘাসের ওপরে,
অকারণে আমায় মনে করে,
যদি গন্ধ বিলানো হাসনা-হেনা ঝরে পড়ে প্রভাতে,
যদি নিঃসঙ্গতায় উঠানের কোণে সজনে গাছের ডালে কাক ডাকে,
আছি তোমারই এই ধরণী তরে।



যদি মাটির পিদিম জ্বলে সন্ধ্যা রাগে ঘরের কোণে,
যদি দূর হতে ভেসে আসে রাখালীর বাঁশীর সুমধুর সুর,
যদি ঝিঁ-ঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসে কুঞ্জবনে,
যদি পূর্ণিমার চাঁদ সন্ধ্যাকাশে ডুবে যায় মেঘের আড়ালে,
প্রীতি, তুমি স্মরণীয় এই অন্তরে।




আশাবাদী হতে ভালোবাসি


আশাবাদী হতে ভালোবাসি

 A H RIDWAN


আমি চলছি অনাগত সময়ের প্রহেলিকায়
জীবনকে করে দিতে কাংখিত সুন্দর
আমার দু:খবোধ বর্তমানকে নিরুত্তাপ করলেও
উষ্ণতা খুজি আগামীর প্রত্যাশায়,
যদিও দীর্ঘ মহাসড়কের মতো বিস্তীর্ণ রাত্রি আমার
গিলে খেতে চায় গতির প্রাবল্য,
তথাপি শক্ত হ্যামার হাতে
আঘাত হানি দেয়ালে দেয়ালে
অনুসন্ধানি চাতক চোখে খুজে বেড়াই আলোর সন্ধিক্ষণ,
হয়তো আমার জন্য অপেক্ষায় আছে
বর্ষার এক পশলা বৃষ্টি কিংবা নক্ষত্রের আর্শিবাদ
তাই আশাবাদী হতে ভালোবাসি,
সূর্যাস্ত আমাকে সূর্যোদয়ের আশ্বাস দেয়।

তুমি আমার কে?



তুমি আমার কে?


তোমাকে কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?
তুমি রোদ্দুরময় দিন
জোসনা মাখানো রাত
গোধুলীলগ্ন সন্ধ্যা
তুমি আমার পড়ন্ত বিকেলের প্রাণময় শীতলতা।
তুমি আমার হৃদয়ে রক্তস্রোত
তুমি চোখের জ্যোতি
তুমি আমার স্বপ্ন
তুমি আমার প্রতিটি দিনের বেচে থাকা মূহুর্ত;
কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?
তুমি আমার তারায় বিছানো আকাশ
তুমি আমার শিহরন জাগানো দক্ষণা হাওয়া,
তুমি আমার কন্ঠ নি:সৃত প্রতিটি শব্দ
আমার কবিতা
তুমি সবুজের মাঠ
সোনালী ফসল
তুমি এক দু:খী রাখালের
বাশীর করুন সুর।
তুমি ঘাস
তুমি পাখী
তুমি ফুল
তোমাকে কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?
তুমি নদী
তুমি ঢেউ
তুমি দুর দিগন্তের জেগে উঠা আশা
তুমি সাগর
তুমি গভীরতা
তুমি মুক্তোয় ভরা ঝিনুক,
তুমি আনন্দ
তুমি হাসি
তুমি কান্না
বুকের খুব গভীরে বেড়ে উঠা
এক বিষন্ন গোলাপ।
তুমি পাহাড়
তুমি ঝর্ণা
তুমি শরতের কাশফুল
তুমি আমার পায়ে হাটা পথ;
তুমি রক্ত
তুমি মিছিল
তুমি শ্লোগান শোষিতের
তুমি অঝরে ঝরো শ্রাবনের মাটিতে।
তোমাকে কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?
তুমি জীবনকে বয়ে চলা জীবন
তুমি আমার সুখ
তুমি দু:খ
তুমি কষ্ট
তুমি সময়
তুমি তিল তিল বেচে থাকা
তুমি জীবন।
তোমাকে কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?
তুমি যুদ্ধ
তুমি বিপ্লব
তুমি প্রতিবাদ
তুমি মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের অমিয় সাহস।
কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?
তুমি মনের ভেতরে এক মন
দেহের ভেতরে এক দেহ
তুমি ফুসফুস নির্গত প্রতিটি নি:শ্বাস
তুমি প্রতিটি কোষের অফুরন্ত বিভাজন।
তুমি আমার রঙ
তুমি আমার তুলি
আমার সাদা আকাশের ক্যানভাস।
তুমি ঝড়
তুমি ধ্বংস
তুমি সৃষ্টি
তুমি বেসুরো গান।
তোমাকে কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?
তুমি দিগন্ত
তুমি আকাশ
তুমি রঙধনু
তুমি শিশিরে ভেজা ঘাস;
তুমি ভোর
তুমি গ্রীস্ম
তুমি দাবাদহ
তুমি কুয়াশা মাখানো রাত
তুমি উর্বরতা
তুমি সূর্যোদয়
তুমি বুকের ভেতরের উচ্ছ্বাস,
তোমাকে কি করে বলবো যে
তুমি আমার কে?

সাধ

 

সাধ


সাধ জাগে মোর পাখির মত
উড়তে ডানা মেলে,
নীড়ে ফেরা সন্ধ্যা বেলা
রাঙা মেঘের কোলে।

সাধ জাগে মোর হাঁসের মত
দিঘীর জলে ভাসতে,
রাতের বেলায় আকাশটাতে
চাঁদের মত হাসতে।

সাধ জাগে মোর ফুলের মত
আঁধার রাতে ফুটতে,
পবণ বেগে ঘোড়ায় চেপে
দেশ বিদেশে ছুটতে।

সাধ জাগে মোর ফড়িং হয়ে
শস্যে ক্ষেতে চলতে,
শিশির হয়ে ঘাসের ডগায়
হীরের মত জ্বলতে।

সাধ জাগে মোর ভ্রমর বেশে
ঘুরতে ফুলের বনে,
কেমন করে ঘটবে এসব
ভাবছি সেটাও মনে।

আশাহত হৃদয়


আশাহত হৃদয়

জ্বলে ভেজা গোলাপ ...


আশাহত হৃদয়
যত সাধ আশা হয় নিরাশা
বারেবারে ভাঙ্গে মন,
হৃদয়ের মাঝে অনুক্ষণ বাজে
বেদনারই গুঞ্জন।

দল বেঁধে ফোটে মনঃগঙ্গায়
দুঃখেরই শতদল,
দিবানিশি সেথা হতাশার কীট
করে শুধু কোলাহল।

রয়ে যেতে চাই মন


রয়ে যেতে চাই মন

 

AL-MADINAH / KSA


যেদিন আমি থাকবো না আর
এই ধরণীর বুকে,
হয়তো সেদিন আমার কথা
রাখবে না কেউ মুখে।

যেদিন আমার জীবন প্রদ্বীপ
নিভিয়া হবে শেষ,
সকলে মোরে করিবে বিদায়
পরায়ে লাশের বেশ।

হয়তো আমি এ ভূবন ছেড়ে
চিরতরে যাব চলে,
নানা সাজে তবু রইবো আবার
বাংলা মায়ের কোলে।

মিশে রবো আমি শরত কালের
শিউলি ফুলের মাঝে,
খুঁজে পাবে মোরে গোধূলী ক্ষণে
রাঙা মেঘের ভাঁজে।

বসন্ত কালে নাম না জানা
সহস্র দ্বিজের ডাকে,
পুষ্পের কাননে ভৃঙ্গের সাজে
খুঁজে পাবে আমাকে।

ধেনুর দলে সাঝের ঘোরে যবে
রাখাল ফেরে ঘরে,
শতদল হয়ে ভাসিব তখন
কাজলা দিঘীর পরে।

যত লিখে যায় তবু শেষ নাই
নতুন ভাষা না জানি,
কি করে বুঝায় স্বদেশ তোমায়
ভালবাসি কতখানি।

স্বদেশ তুমি মায়ের চেয়েও
অধিক আপন জন,
মরণের পরও তাইতো তোমাতে
রয়ে যেতে চাই মন।

বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

তোমাকে না পেয়ে


তোমাকে না পেয়ে
ভুল পথে হেঁটেছি তাই পাইনি তোমার নাগাল,
তা ব’লে হয়নি মিছে সেই পথ হাঁটা;
দীর্ঘ এ বিরহ কাল, কম পাওয়া নয়!
পথের ভুলে এ বিরহ, অপূর্ব আস্বাদ!

মাঝ গগনে ঐ রবির কঠোর হাসি
এরই মাঝে দেখি নিশার আঁধার,
সঠিক পথে হেঁটে তোমার দেখা পেলে
হয়তো পেতাম তোমায় আপন করে!
যা পেয়েছি, তা হতো না পাওয়া!!

বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ভাবনা


ভাবনা





তুমি সুন্দর
অপূর্ব সুন্দর তোমার বাঁকা চোখের চাহনি
মুক্তহাসি লাবণ্য মুখশ্রী
কোমল অন্তর--

তুমি সুন্দর
খররৌদ্রের মতো
ঝর্ণার তীক্ষ্ণফোঁটার মতো
বর্ষার ঘনঘটা মেঘের মতো

তুমি সুন্দর
সন্ধ্যালালিমার স্নিগ্ধ আলোর মতো
ফুটফুটে জোছনার মতো
জোনাকির মিটিমিটি আভার মতো

তুমি সুন্দর
শিল্পীর কল্পতুলির মতো
চাঁদিনীরাতের গল্পের মতো
দোলনায় ঘুমন্ত শিশুর মতো

তুমি সুন্দর
তোমার সদাহস্যোজ্জ্বল চেহারামাধুরী
আমি ভুলতে পারি
এমন কঠোর মমত্বহীন নই আমি
অপদার্থ অধম বটে--
অকৃতজ্ঞ নই।

যেই পবিত্র ভালবাসার অনলশিখা
জ্বলছে আমাদের দুজনার মনে
দোহাই,
দোহাই সেই ভালবাসার
দোহাই,
দোহাই সেই ভালবাসার পূততার

আমারে ভুলে যাবে
ভুলতে হবে--
পারবে না!
এমন কেমন কথা,
এমন কথা তোমারে শোভা পায়?

যার রাজ্যভার নিয়েছ মাথায়
তারই আরাধনা নিত্য করো
জপো নিরালায় তারই নাম
শান্তি পাবে তাতে--সফলতা অনেক
এ আমার আদেশ নয়, হুকুম নয়
অনুগ্রহ-করপুটবিনীত অনুরোধ।

আর কিছু আমার বলার নেই
আর কিছু আমার দিবারও নেই--
অলৌকিকশক্তি সর্বোত্তম সম্পত্তি
আমার অশ্রুসিক্ত একমুঠো প্রেম
তারে রেখে এলেম
তোমার রাজ-রাজগৃহ ভাণ্ডারে
সেই তোমারই প্রাপ্য।

আমারে আমি সংযম করতে পারি
এমন সংবিত্তি আমার মাঝে নেই আজ
আমি শূন্য করে ফিরি নে
ফিরেছি একেবারে নিঃসহায় নিরাশ্রয় হয়ে

শুধু--
শুধু ভাবনারে এনেছি সঙ্গে
এটুকু আমার পাথেয়--
পথের সম্বল।

ঊর্ধ্বে নীরব নিস্তব্ধাকাশ
নিম্নে পরিপাটি মাটি
আমি তার বুকে পদযুগল রাখি
বন্ধু তারা খাঁটি।

আর কোনো ঠিকানা নেই?
যেখানে ব্যথার বন্ধন
সেখানে আমার ক্রন্দন
যেখানে বেদনার সংবাদ
সেখানে আমি মেঘনাদ
যেখানে সূচনা দুঃখকষ্ট
সেখানে আমার পাণ্ডুলিপি স্পষ্ট
যেখানে বিষণ্নতাভরা
সেখানে আমি আত্মহারা
যেখানে অবৈধানন্দোল্লাস
সেখানে আমি নির্বাক--জীবন্তলাশ!

আজ কার কাছে যাই আমি
কার দিকে তাকাই আমি--
তোমার দিকে না মানবের দিকে
দেশের দিকে না দশের দিকে
জনতার দিকে না জননীর দিকে
সমাজের দিকে না পরিবেশের দিকে।

তোমার দিকে তাকালে মন আবেগ
মানুষের দিকে তাকালে কান্না আসে
দেশের দিকে তাকালে ভাবনায় পড়ি
দশের দিকে তাকালে আফসোস হয়
জনতার দিকে তাকালে দুঃখ লাগে
জননীর দিকে তাকালে বুক ফেটে যায়
সমাজের দিকে তাকালে ফেলতে হয় দীর্ঘশ্বাস
পরিবেশের দিকে তাকালে শুনি ধিক্কারবাণী!

কোথাও পাই না আমি শান্তির একবিন্দু স্বস্তি--
আকাশে শান্তি নেই মেঘের ঘনঘটায়
বাতাসে শান্তি নেই ধূম্রভেলায়
সাগরে শান্তি নেই তরঙ্গমালায়
নগরে শান্তি নেই আবর্জনায়।

স্তিমিত সমগ্র সৃষ্টির মন--
কোনো মালঞ্চে আজ পাই না সুবাস
কোনো পাখি আজ দেখি না করতে কোলাহল
কোনো ছেলেবেলে আজ করে না খেলা
কোনো তামাশাগীর আজ দেখায় না প্রমোদতামাশা
কোনো গায়ক আজ প্রাণখুলি গায় না গান
কোনো যাত্রিক আজ চায় না পিছন ফিরে
কোনো মানুষ আজ ভাবে না পরের তরে
সবে আপন আপন চিন্তায় বিভোর--

এ কেমন ধারা চলছে অবিরাম!
এমন কেন রে বিধি?
কোথাও দেখি না আজ অতুল সুন্দর
কোথাও খুঁজি পাই না আজ শান্তিস্থল
কোথাও জমে না আজ নিশাতের আড্ডা--
বসে না চন্দ্রিমারাতের গল্পের আসর
যে অসম্ভব ভাল আজ তারই দিন ফুরাল
শুধু রইল, হিংসাবিদ্বেষ-ঈর্ষাপ্রখর?
 


না না--
তুমি সুন্দর
তোমার চাহনি সুন্দর
শুধু আমার পৃথিবী অসুন্দর!

আমি ব্যথিত ক্রন্দসী
ব্যথা হ্রাসের মঞ্চে দোষী
আমার এখানে ওখানে--সবখানে ফাঁসি!
আমি যা কিছু ভাবি--ব্যর্থ, সব ব্যর্থ
এখানে তুমি সার্থক!

আমার চাহনি তোমার চাহনির মতো
আহা,
হতে পারে না কেন উন্নত!







পথের পরিচয়

 

পথের পরিচয়....



সেদিন স্নেহবাংলা আমার মাধুর্য জন্মভূমিকে ত্যাগ করি যখন উঠলেম আকাশযানে উপসাগরের উদ্দেশে, তখন দেখি আমার পাশের আসনে বসা উনিশ কি বা বিশ বছরের এক অতি সুন্দরী ললনা। বেশ কিছু খবরের কাগজ ও কিছু মাসিকপত্রিকা সামনে রেখেই উদাস মনে কি জানি কী ভাবছে! আমি আসন গ্রহণ করার পরও তার ভাবের মোহ কাটে না!
মনে করি, ভাবার তো কথা : স্বদেশ জন্মভূমি যেমন জননী আরও কতকি ফেলে যাচ্ছে--মাতা-মাতামহ, পিতা-পিতামহ; ভাইবোন কত আপনজন, আত্মীয়-পরিজন, প্রেমভালবাসা-রাগানুরাগ আরও কতকি...
নিজেরও তো একই দশা : আদরের বাড়ি, খেলার মাঠ, বৈঠকখানা--আড্ডাঘর, ছত্রিশ হাজার বান্ধব, বাহাত্তর হাজার বান্ধবী; এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার গ্রামবাসীরে ছেড়ে যাচ্ছি বিভুঁই--বিনগরে। যেন মনে হচ্ছে, সাড়ে দশ কোটি জনগণ কাঁদছে আমার জন্যে!

মেয়েটি কিছুক্ষণ নীরব রইল--আমিও তাই। তারপর নড়াচড়া--আমতা আমতা করে বললাম, পত্রিকা চাই...
ও ঈষৎ হেসে সাদরে অনুমতি দিল। এভাবে শুরু টুকটাক আলাপ--যাবেন কোথায়? আমাকে জিজ্ঞেস করল!
তার পর তুমুল আলাপ : আমি বললাম--এমিরাটস্‌।
--কোন্‌ উদ্দেশ্যে?
--উপার্জনে।
--এই প্রথম যাত্রা?
--বেশ কয়েকবার।
--সেখানকার পরিস্থিতি ও জনভক্তি কেমন?
--তেমন সুবিধা নয়।
--তা হলে...?
--কী করি : উপায় নেই--

তার পর প্রশ্নসূত্র আমার, আপনার সম্পর্কে কিছু বললেন না?
--কী বলি?
--যাচ্ছেন কোথায়? একা কেন?
--যাব কানাডা। পুরো পরিবার সেখানে। এসেছিলেম কাকার বিবাহে। মা-বাবারা চলে গেছে মাসের মধ্যে। আমি আজ এক শ একষট্টি দিনে ফিরলাম--
--সেখানকার লোকেরা কেমন?
--আমি বলব না সবাই একেবারে ভাল। ভালমন্দ সবখানেই আছে। তবে--
--তবে?
--আমাদের দেশের তুলনায় বলতে গেলে, শতকরা নিরানব্বই জনকেই ভাল বলতে হয়।
--স্বদেশ সম্বন্ধে এমন ধারণা কেন?
--জন্ম থেকেই স্বদেশকে কখনো চোখে দেখি নি! তবে পত্রপত্রিকায় ও বেতার-টেলিভিশনে যা শুনতাম এবং দেখতাম তাতেও কোনো সময় কান দিই নি; সুতরাং আজ বাস্তব চিত্রটাই দেখে যাচ্ছি!
--অর্থাৎ?
--কি আর বলি, বলার তো রাহায় নেই। দীর্ঘদিন প্রবাসে বসবাস করে স্বদেশের প্রতি যে একটা মমত্ব গড়ে উঠেছিল সেটা নিমেষেই মাটি করা হল!
--মানে?

--অতি ধূমধামে কাকার বিয়ে সম্পন্ন হল। সবেমাত্র নববধূ ঘরে এল। আমি বধূর পাশে বসা। হাসিঠাট্টা-আনন্দোল্লাস চলছে, বেলা বারটা। কখনো কখনো খাওয়ার ডাক পড়ছে--কেউ কেউ খাচ্ছে, কেউ কেউ খেতে বসছে; কেউ কেউ আলাপালোচনায় রত এবং কেউ কেউ এদিক-ওদিক ঘুরাফেরা করছে। এমন সময় হুড়মুড় করে একদল মুখোশধারী সশস্ত্রবাহিনী বাড়িতে প্রবেশ করল! আমি নব কাকিমার কানেকানে বললাম : কোথাও যুদ্ধ বাধল নাকি?
কারণ, আমি যুদ্ধভিত্তিক একটা গ্রন্থ পড়েছিলেম, সেখানে গুপ্তচরদের এমন কর্মকাণ্ড ছিল।
কাকিমা লজ্জা ত্যাগ করে বলল : চুপ কর, এরা সন্ত্রাস।
--সন্ত্রাস! আসলে শব্দটা আমার অত পরিচিত নয়।
কাকিমা বুঝিয়ে বলল--টেররিষ্ট।
আমার খুব ভয় লেগে গেল। কারণ ক্রিমিন্যাল কখনো আমি নিজচোখে দেখি নি...
বাড়িতে অতিথি ভরপুর। সবাই ফ্যালফ্যাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারও মুখে সাড়াশব্দ নেই। মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবী বিবর্ণ হয়ে যায়! ওরা বাবাকে ও কাকাকে ডেকে নিয়ে গেল! বাড়িতে মাতম পড়ে গেল! দিদিমা আহাজারি করতে করতে বেহঁশ হয়ে পড়লেন! মায়েরও একই দশা--তবে হুঁশ ছিলেন। দুই ঘণ্টা পর বাবা ফিরে এলেন! সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে চুপিচুপি ঘটনা বলতে লাগলেন...

‘কী চায়?’ ঘনিষ্ঠজনদের জিজ্ঞাসা।
‘টাকা।’
‘কত?’
‘পঞ্চাশ...’
‘পঞ্চাশ হাজার?’
‘পঞ্চাশ লক্ষ।’
‘পঞ্চাশ লক্ষ!’
সকলে আশ্চর্য অনুভব করলেন। অত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা বাবার ছিলেন না।
কেউ কেউ বললেন, থানায় খবরটা দেওয়া হোক।
কেউ কেউ বললেন, কোনো লাভ নেই।
সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী নাকি আমাদের দেশের পুলিশ? তারা নাকি টাকা ছাড়া কিছুই চিনে না! বাবার মুখে সব সময় একটা কথা শুনতাম--‘যেই দেশের প্রশাসন দুর্বল হয় সেই দেশের জনগণ নিরাপদ নয়। এসব দেশে ক্রাইম উত্থান হওয়াটা স্বাভাবিক। এমন দেশে বসবাস করার চেয়ে বনবাস শ্রেয়।’

--যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন আপনার বাবা। তিনি বেশ অভিজ্ঞ ব্যক্তি মনে হচ্ছে। পৃথিবীটা মনে হচ্ছে আজ জঘন্য রাজনীতির অসংখ্য অদৃশ্যহাতে জিম্মি! আজকের এ ভয়ালনগরীর ভয়ঙ্করদশা থেকে কে সাধারণ জনগণকে মুক্ত করে--মুক্তির পথ দেখায়? সেই সুদিন কবে আসবে ফিরে জানি না।
--পৃথিবীটা এভাবে চলতে থাকলে, হয়তো একদিন এমন দিন আসবে মানুষ মুক্তির চেয়ে মৃত্যুর কামনা বেশি করবে!
--তা যেন দেখতে না হয় সেই প্রার্থনা করি।
--বিধাতা সকলের মঙ্গল করুক। নিন্দুকের চেয়ে অধম ভাল। আজকের পরিস্থিতির জন্যে আমরাও কম দায়ী নই।
--একেবারে খাঁটি কথা... ...তারপর... ...?
--দিনের পর দিন গড়িয়ে যেতে লাগল, টাকার ব্যবস্থা হচ্ছে না; বাবা পাগলপ্রায়!
কানাডা থাকে : তার মানে এ নয়, টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আমাদের ঠাকুরদা নেই। তিনি খুব দরিদ্র ছিলেন। বহু বছর পূর্বেই দেবলোক গমন করেছেন। অনেক কষ্ট করেই বাবা এতটুকু মানুষ। চাকরি করে যা পেতেন তা ব্যয়বহুল সংসারের ব্যয়ভারবহনপর সঞ্চয় করার মতো আর অতিরিক্ত থাকেবা কতুটুকু! এর মধ্যেও যতটুকু সঞ্চিত হয়েছে : ভিটাবাড়ি ভূ-সম্পদ সবটুকু বিক্রি করেও তাদের দাবি পূরণ হওয়ার মতো নয়। তার পরেও বাবা সবকিছু বিক্রি করে দিলেন! অবশিষ্ট রইল শুধু ভিটেবাড়িটা।

অতঃপর অনেক কষ্টের বিনিময়ে মাত্র বিশ লক্ষ টাকা যোগাড় করতে পারলেন বাবা। রোজ তাদের কাছ থেকে একটা করে চিঠি আসছে, ... ...কী হল? সম্ভবত ভাইয়ের মায়া নেই? আর মাত্র... ...তারপর তাকে... ...
বাবা মত্ত হতে লাগলেন। কোনো সুরাহা খোঁজে পাচ্ছেন না। বিশ লক্ষ টাকা ওদের কাছে পৌঁছে দিলেন, এবং বললেন : বাকিগুলোর জোরদার ব্যবস্থা চলছে, অচিরেই পৌঁছে যাবে; তবে অলখকে যেন আজই মুক্তি দেওয়া হয়।

কাকার নাম ‘অলখ পাল’। কানাডা ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিসাহিত্যে এম এ পাস করেন। বাবার আগ্রহ ছিলেন, নিজদেশের কোনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে কাকাকে বিয়ে করাবেন। সো তাই করা হল। কে জানে, এই বিয়ের জামা কাকার মৃত্যুপরিধান হবে!
--তা হলে! ... ...?
--হাঁ, বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়েও কাকাকে তারা রেহাই দিল না! এমনকি ওঁর লাশ পর্যন্ত ফিরিয়ে দিল না! ঘটনাটা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল, তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করল; পেপার-পত্রিকা হতে শুরু করে এমনকি রেডিও-টেলিভিশনেও প্রচার হয়ে গেল। তারপর কী হল। এর মধ্যে কোনেকটা অপরাধীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হল না!
অপরাধীরা রীতিমতো বাবাকে হুমকি দিচ্ছে : মামলাটা যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়, অন্যথা পরিবারের কাউকে রক্ষা নেই!
পুত্রশোকে দিদিমা হার্টএ্যাটেক করে মারা গেলেন! মা কাঁদতে কাঁদতে উন্মাদ হতে লাগলেন! কাকিমাও একপল বাঁচতে চাইছে না! বললেন, আমরা হিন্দু বলে এমন জোরজুলুম!
বাবা আরও অসহায় হয়ে পড়লেন, একেবারে ভেঙে গেলেন। সেদিন দেখেছি বাবার চোখে স্বদেশের প্রতি ঘৃণা! অথচ ওঁ একজন দেশপ্রেমিক।

তারপর ক্রদ্ধ হয়ে সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন কানাডা। আমাকে জোর করে কাকিমা রেখে দিলেন। বাবার ইচ্ছা, আমাদের কাউকে এক মুহূর্তের জন্যেও এখানে রেখে যাবেন না; কিন্তু কাকিমার অবস্থা দেখে মত পরিবর্তনে বাধ্য হলেন--আমরা কাকিমার বাপের বাড়ি চলে গেলাম।

--আপনার একটা কথার সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে।
--সেই কেন?
-অনুমতি দিলে বলতে পারি।
--বলুন-না।
--আপনার কাকিমার সঙ্গে আমি একমত হতে পারছি না।
--যেমন?
--এই যে, একটু আগে বললেন আপনার কাকিমার ভাষ্য ‘হিন্দু বলে এমন জোরজুলুম’ কথাটা আদৌ সত্য নয়। আসলে অপরাধীদের কাছে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান জাতিভেদের কোনো ভেদাভেদ নেই; ওরা চিনে কেবল অর্থ, শুধু অর্থ।
--তা হলে কি সামান্য অর্থের জন্যে কাউকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করবে! তারা কি জানে না, মানবহত্যা যে কত বড় অপরাধ এবং কত বড় পাপ!
--জানবে না কেন, যারা অপরাধী তারা করে; তারা তো আর পাপপুণ্যের হিসাব করে চলে না।
--আমার মতে, ওদেরকে পশুত্বের পরিচয় দেয়াও প্রযোজ্য নয়, কারণ পশুরাও একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আপনজনের প্রতি এদেরও একপ্রকারের দরদ আছে--মায়া আছে। কিন্তু... ...
--কথাটা নেহাত সত্য। অপরাধীদের কাছে বন্ধুবান্ধব, আপনজন ও আত্মীয়স্বজন বলতে কোনো পরিচয় নেই। যারা অপরাধী তারা আজীবন অপরাধই করে...
--এখানেই আমার দুয়েকটি প্রশ্ন : ওরা অপরাধী হয় কেন? অপরাধ করে কেন? ওদেরকে লালনপালন করছে কারা? অর্থ যোগান দিচ্ছে কারা? সবচেয়ে বড় অপরাধী তো তারাই! আর আমাদের দেশের সরকার এসব অপরাধজগৎকে সমূলে উৎখাত করতে পারছে কেন?
--সরকারের পক্ষে হয়তো তা অসম্ভব?
--অসম্ভব! তা আমি কিছুতেই মানতে পারি না; কোনো দেশের সরকার দুর্বল হতে পারেন না। সরকার ইচ্ছা করলে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গোটা দেশকে লৌহদণ্ডের ন্যায় ঋজু করতে পারে। পারে কি না?
-অবশ্যই পারে। কিন্তু...
--কিন্তুর কোনো মানেই নেই। ছোট্ট একটা গল্প বলি শুনুন :--

এক ভদ্রলোকের একটি অপূর্ব ফুলের বাগান ছিলেন। সন্তানসম যত্ন করিয়া লোকটি বাগানটিকে দিন দিন পরিপূর্ণ করিয়া গড়িয়া তুলিতে লাগিলেন। বাগানটি যখন একদিন পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করিলেন, তখন তাহাকে একজন মালির হস্তে সোপর্দ করিয়া ভদ্রলোক প্রবাস গমন করিতে বাধ্য হইলেন। কয়েক বৎসর কাটিয়া যাইবার পর, একদিন মনে পড়িল তাঁহার অপূর্ব বাগানটির কথা। বড়ই বাসনা হইল স্বহস্তে মানুষ গড়া বাগানটিকে একবার দেখিতে। একদিন দেখিতে আসিয়া দেখিলেন : সেই ভরপুর যৌবনপ্রাপ্ত বাগানটি আর তদ্রূপ নাই! একেবারে অন্তিমশয্যায় শয্যাশায়ী হইয়া গিয়াছে। ইহা দর্শনমাত্র ভদ্রলোকের চিত্ত তিক্ত হইয়া গেলেন। ভগ্নান্তরে দুঃখ প্রকাশ করিয়া--সঙ্গে সঙ্গে মালিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, একি অবস্থা! ... ...?
অবস্থার কথা মালি বিনয়ীকণ্ঠে ব্যক্ত করিলেন--হুজুর! ...
--শত্রু! কেমন শত্রু?
--একেবারে গৃহশত্রুসদৃশ।
--ঘরে যে প্রথম শত্রু জন্ম নিতেছিল তখন তুমি কোথায় ছিলে? একমাত্র শত্রুকে দমন করা সহজ, কিন্তু অসংখ্য শত্রুকে কাবু করা কঠিন।
--হুজুর! বহু কীটনাশক ব্যবহার করেছি, কোনো ফল হল না : একটু দমন হলে--পুনরায় তুমুলাকারে বেড়ে উঠে।
--এখন তো তোপকামানেও কিছু করা সম্ভব না, সুতরাং এভাবে বাড়তে থাকলে তোমারও বিপদ আছে; কোনেকসময় তোমাকেও আক্রমণ করতে পারে।
--হুজুর! তা হলে সুরাহা?

সেই ষোড়শী যুবতীর ন্যায় ভরপুর যৌবনপ্রাপ্ত বাগানটি আর তাহার হারানো যৌবন ফিরিয়া পাইতে পারিবে না, বরঞ্চ শত্রুহস্তে লাঞ্ছিত হইয়া তিলে তিলে মরিতে হইবেই। তাহা দেখিতে পাইয়া ভদ্রলোক দাহ্য মনে করিলেন, রাগান্বিত হইয়া মালিকে হুকুম দিলেন যে, দাবাগ্নিসম দহন করিয়া অনতিবিলম্বেই বাগানটিকে যেন সম্পূর্ণ ভস্মসাৎ করা হয়। আর এমনিভাবে দগ্ধ করিতে হইবে যে, যাহাতে কোনো শত্রু অর্ধমৃত হইয়া বাঁচিয়া থাকিতে না পারে।

--এই থেকে বুঝা যায় যে, কোনো দুষ্ক্রিয়া মাথা তুলে দাঁড়াতেই তাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।
--নিশ্চয়। তবেই দেশের মঙ্গল, দশের মঙ্গল।
--অপরাধ এমন একটা জিনিস যেটা সব সময় অন্ধকারেই চলতে সক্ষম, যেইমাত্র আলোর সম্মুখীন হয় তখন আর ক্ষমতা থাকে না।
--অপরাধ এবং অপরাধী দুটোকেই আমি ঘৃণা করি।
--আপনি বা কেন, সকলেই ওদের ঘৃণা করে; কিন্তু ঘৃণাই এর সমাধান নয়। যেখানে তোপকামানের প্রয়োজন সেখানে ইটপাটকেল দিয়ে কী হবে? যুদ্ধ করে পরাজয় স্বীকার করার চেয়ে আগেই আত্মহত্যা করে মরে যাওয়া ভাল।
--এই ফাঁকে একটা কথা বলি?
--বলুন।
--আমাদের দেশকে কোনেকদিন একমাত্র শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসাবে পেতে পারি না?
--একমাত্র! সেই আকাশকুসুম কল্পনা না করাটায় ভাল। স্বর্গরাজ্যও আজ নরক হতে চলেছে--সুতরাং পৃথিবীটা দিন দিন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে।
--বটে। তবে পৃথিবীতে এখনো অনেক রাজ্য আছে, যা স্বর্গ চেয়ে অন্যূন। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালে বলতে হয় : তারা আজও স্বর্গরাজ্যে বসবাস করছে?
--অবশ্য করছে! তবে আজ নাহয় কাল তাদেরও একদিন গণতন্ত্রে ফিরে আসতে হবে।
--অবশ্য আসতে হবে, কারণ গণতন্ত্র এমন এক মাধ্যম যেখান থেকে দেখলে মানবাধিকার অতি স্পষ্ট দেখা যায়; কিন্তু রাজতন্ত্রে তা অস্পষ্ট।
--তা সত্য এবং সত্যকে মিথ্যার পদতলে কখনো পিষ্ট করা যায় না।
--তবে এটাও সত্য, ইউরোপ আমেরিকার বেশকিছু দেশকে এখনো নিঃসন্দেহে স্বর্গ বলা যায়।
--নিশ্চয়। তন্মধ্যে কানাডার নাম আমি প্রথম সারিতে উল্লেখ করতে পারি?
--অবশ্যই পারেন।
--কত বছর ধরে আপনারা সেই দেশে অবস্থান করছেন?
--প্রায় একুশ-কি-বাইশ...। মায়ের বক্তব্য : কানাডা আসার দুই বছর পর আমার জন্ম হয়।
--তা হলে কি আপনার জন্মভূমি সেটাই মানা হবে?
--কক্ষনো না--জন্ম যেখানেই হোক না কেন, জন্মভূমি শুধু নিজের দেশকেই মানা হয়। আজ না হয় কাল বা কোনেকদিন পরদেশ ত্যাগ করে স্বদেশ ফিরে আসতেই হবে।
--শুনলাম নাকি ইউরোপ আমেরিকার প্রবাসীদের একটা জিন্দেগি আছে।
--কেন নয়, অবশ্যই আছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে...?
--এখানে তো আমরা যাযাবর...
--যেখানে যা-ই হোক...স্বদেশ স্বর্গতুল্য...নয় কি?
--কেন নয়। বেশ বলেছেন, আমার অন্তরের গভীরতা আপনি ছুঁয়ে ফেলেছেন। আমারও একই কথা। কিন্তু অনেকে মানতেই চায় না...
--তাও মিথ্যা নয়। তবে নিজদেশের প্রতি সকলেরই স্বতন্ত্র একটা টান, স্বতন্ত্র একটা মমত্ব অবশ্য থাকে; যা কিছুতেই ক্ষুণ্ন হয় না।
--এখানে একটি কবিতা মনে পড়ছে।
--বলুন-না কবিতাটা শুনি।

কত প্রিয় মাতামাতি
কত বন্ধু কত সাথি
কত আপন-জন-স্বজন
কত প্রেমপ্রণয় কত প্রিয়জন
কত হাসি-কান্না-গান
কত স্নেহের টান--মুক্তপ্রাণ
মমতার ভাণ্ডার--বলতে নারি
স্বরাজ্যের রাজেশ্বর আমি পরদেশে ভিখারি।

--অপূর্ব কবিতা! কবিতাটা কার জানতে পারি?
--এমুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না, অনেক দিন আগের পড়া।
--আমার ঠিকানাটা দেব, মনে পড়লে অবশ্য জানাবেন; এ কবির বই পড়া চাই।
--আপনার জন্যে অবশ্য মনে করব। বই পড়া ভাল। যেই জাতি বই পড়াতে অভ্যস্ত নয় সেই জাতি জ্ঞানে বড় নয়। আর নিজের সংস্কৃতি সম্বন্ধে যার কিঞ্চিৎ ধারণা নেই, পরের সংস্কৃতি সম্বন্ধে তার পূর্ণ অভিজ্ঞতায় কোনো লাভ নেই।
--নিজদেশের প্রতি দেখছি আপনার বড়ই টান, একেবারে আমার বাবার মতো!
--সে তো সকলেরই থাকা চাই। যে নিজের দেশকে ভালবাসে না সে তার মাকে ভালবাসে না।
--এই কথাটা তবে আমার বাবারও : স্বদেশ স্বর্গতুল্য--স্বদেশকে ভালবাসা সকল নাগরিকের কর্তব্য।
--দেশে এসে এত বড় একটা আঘাত পেলেন! এর পরেও দেশের প্রতি--
--তা তো থাকবেই, হাজার হলেও নিজের দেশ। নিজসন্তান যত বড় অপরাধই করুক না কেন, তাকে যেমন ক্ষমা করতেই হয়; তদ্রূপ নিজদেশ যত আঘাতই দান করে-না কেন, তা ভুলতে হয়।
--আপনার সঙ্গে কথা বলে বেশ ভাল লাগছে। এত দিন দেশের মাটিতে কাটালেন তবে দেশের অন্যান্য দিক আপনার কেমন লাগল?
--যেমন?
--সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক...
--সামাজিক ব্যাপারটা কেমন যেন একঘেয়েমি মনে হল। কেউ কারও প্রতি সহানুভূতিশীল নয়! মানসম্মান ও আদরস্নেহ যেন একেবারে সমাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে!

আর রাজনৈতিক ব্যাপারস্যাপার : রাজনীতি আমি মোটেও বুঝি না। এর মানেটা কী। নিশ্চয় রাজাদের চালচলন? তাই যদি হয়, তা হলে আজকালকার রাজাদের আচারাচরণ এমন কেন? কে কাকে মেরে--আঘাত করে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে আগে উপরে উঠবে সেই প্রচেষ্টায় তৎপর! আর যেখানে রাজাদের শান্তি নেই সেখানে প্রজাদের শান্তি কী করে হতে পারে? রাজারা হচ্ছে প্রজাদের আশ্রয়স্থল। তাই আশ্রয়স্থলে যদি হিংসা-প্রতিহিংসার আগুন জ্বলতে থাকে, সেই হিংসার আগুনে কেবল আশ্রয়স্থল পুড়ে ছাই হবে না, সুতরাং আশ্রিতরা আগে ছাইয়ে পরিণত হবে। এ রাজনীতিকে আজ এমনভাবেই দুর্নীতিয়ে গ্রাস করেছে; যেখানে দাঁড়িয়ে সুনীতি কেন, সামান্য নীতির কথাও কল্পনা করা যায় না।

রইল অর্থনৈতিক ব্যাপার : মানবজীবনে অর্থের কী প্রয়োজন সেইটা বুঝাবার জন্যে কোনো পণ্ডিতের শরণাপন্ন হওয়ার গরজ পড়ে না; দোলনার ঘুমন্ত শিশুর হাতে টাকা গুঁজে দিলে সেও তা আঁকড়ে ধরে। অর্থ এমন এক বস্তু, যার জন্যে মানুষ নরকে ঝাঁপ দিতেও এক-পা-কাড়া! তার একমাত্র কারণ--‘দারিদ্র্য’। তবে এ-ই দারিদ্র্যের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে, অর্থনীতি সবল অত্যন্ত জরুরি। আর যেদেশের অর্থনীতি প্রায়ই দুর্বল থাকে সেদেশে দারিদ্র্যবিমোচন আদৌ সম্ভব নয়। এবং অর্থনীতি জোরদার করতে হলে বড় চোরদের দমন চাই-ই চাই...

--আমাদের দেশের অর্থনীতি কোনদিক দিয়ে কম নয়, তবে একটা কানাপাত্রের মতো।
--বটে। তবে পৃথিবীতে অসম্ভব বলতে কিছু নেই, মানুষ সবকিছুই করতে পারে। মনকে আপনি যেভাবেই চালাবেন মন সেভাবেই চলবে। আপনার নিয়ন্তা কিন্তু বিধাতা এবং আপনি বিধানের কর্তা--আপনার মনের নিয়ন্ত্রণকারী তবে আপনি নিজেই।

--বহুক্ষণ আলাপ হল, আপনার নামটা তবে এখনো জানা হল না!
--আপনি জিজ্ঞেস করলেই তো : ‘নীলিমা স্মারক পাল’।
--সুন্দর! অসম্ভব সুন্দর! একেবারে দেশের সুগন্ধমাখা। আপনারা...?
--দুই ভাই, দুই বোন : সবাই আমার কনিষ্ঠ--আমি জ্যেষ্ঠ। আপনার নাম? ...?
--আমার নাম ‘দোলন’। আমরাও দুই ভাই, দুই বোন; আমিও সকলের বড়।
--কী আশ্চর্য! ...যদি কিছু মনে না-করেন।
--তা কেন?
--আপনার সাক্ষাৎ অল্পক্ষণের জন্যে বেশ আনন্দ দিল : এ আমার ঠিকানা--ঢের অবকাশ আছে আমার--চিঠিপত্র এবং ফোনালাপ দুনোটায় করতে পারেন। বন্ধুত্বের একমাত্র মাধ্যম...
--আবার যদি দেখা হয়... ... ...
--নাও হতে পারে... ...মনে থাকবে চিরকাল।

এভাবে পাঁচ ঘণ্টা আলাপের পর এসে পড়ল আমার বিদায়ক্ষণ। যার সঙ্গে কোনো পরিচয় নেই, যাকে কোনদিন দেখি নি; তার সঙ্গে হয়ে গেল চিরপরিচয়! যেন শতাব্দীর সঙ্গিনী আমার। বন্ধু বা বান্ধবী আমার। আমি যাত্রা সমাপ্ত করলাম কিন্তু নীলিমার আলাপ--নীলিমার কথা--নীলিমার হাসি--নীলিমার চাহনি--নীলিমার শালীনতা সমাপ্ত হল না, অহরহ আমার সঙ্গে চলছে প্রেমিকার মতো।


 

নষ্টজীবন


নষ্টজীবন


অনেক ভাল করতে চেয়েছি তোমাকে
তুমি মানুষ হতে পার না কোনদিন!
আর মিথ্যো পাবারে চেয়ো না আমাকে
আমি আর নেই--মরেছি সেদিন।
নিন্দুকের নাম তোমার সাথে জড়িয়েছে--
নষ্টজীবন!
আজও উন্নতাসনে বসে আছ--হায় রে
ভ্রষ্টমন!
স্রষ্টার ঘরে ঠাঁই নেই তোমার--তুমি জঞ্জাল
তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানিয়ে তিনি উত্তাপ
আমি ভালবেসে আজ পথের কাঙাল
আমাকে ভুলতে দাও এ যন্ত্রণার দুঃখতাপ।
আমার এ মিনতি, সঞ্চিত রাখো বসুমতী
তোমার করকমলে
আমিও মুক্তি চাই, মানুষ হতে চাই অতি
লাঞ্ছনা পায়ে দলে।

স্মৃতির ছায়া





স্মৃতিতে হারিয়ে যাওয়া সময়ের গায়ে একটি আঁচর
নিয়ে গেলো সুখের স্পন্দন, মধুর ক্ষণ, জীবন কতদূর।
হারানো বেদনায় মনো-কষ্টের আড়ালে এক চিলতে সুখের দোল
স্মৃতির অরণ্যে ফুটে উঠলো হলুদ-শুভ্রতা নিয়ে ডেফডিল ফুল।
বকুল তলায় বসে থাকা প্রতীক্ষিত একটি মায়াবী বাঁধন
আজও মমতার ডুরে বেঁধে রাখতে চায় তব সঙ্গনিবন্ধন।
সাঁঝের শান্ত আভায় খোঁজা হয় তব সন্তর্পণে আসার ছায়া
বকুলের সৌরভে ঘুরে ফিরে আসে তব মোহিনী সাহচর্যের মায়া।
জোনাক জ্বলা মিটি মিটি আলোয় কল্পনার হাতে হাত রাখি
ডানা ঝাপ্টে উড়ে চলি আজও হয়ে সঙ্গীহারা এক পাখি।
জানি, স্মৃতি দেয় না কোন সান্ত্বনা, না দেয় কোন সুখ,
তবু স্মৃতির বেদনারা শিশির হয়ে কভু ভরে দেয় দু’চোখ।

রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কালের বিবর্ণ হাসুলীর বাঁকে



‍কালের বিবর্ণ হাসুলীর বাঁকে

IrEeN  KaNTa

নিরব সময় বেদনা বিধুর
কোজাগরী জ্যোস্না ভাবায় না,
স্বপ্ন অবয়ব সব আমার করেছে লুট
রাতভর আঁধার ঘরটায়!
শুধু আমার সাথে এই বিলাসী বৈভব কেন?
ভাবনার ইশারায় বৃষ্টি ঝরে শুধু
সেই শিহরণ পুলকিত বটে,

হূদয় পটে শুধু পুতুল নাচ
শরীর যেন হাওয়ায় ভাসে
বন্ধা ‍মেঘের পাঁজরে নিয়েছি ঠাঁই,

ছুঁয়েছি শরীর স্বপ্ন দেবীর
তন্দ্রায় ভালোবাসার অমোঘ নেশায় নষ্ট হতে থাকি
কালের বিবর্ণ হাসুলীর বাঁকে,
কর্ষনে ভুঁইয়ের ফসিল, বীজ ব‍ুনে যায়;
আর আমি স্বপ্নঘোর তন্দ্রায় জেগে উঠি।

ঐ পথে চেয়ে থাকি আসবে সে


ঐ পথে চেয়ে থাকি আসবে সে


IreeN KanTa

জানি সে ফিরবেই
হাওয়ার চন্দনের টিপ পরে।

আসবে ভেসে মৃত্যু ঘ্রাণ
নদীর জোয়ারে জ্যোত্স্না যবে পরেছে ঢলে
আমার ক‍ঙ্কাল বৈধব্য,
শুভ্র বসন নেই
আগল খোলা খিরকী আমার দেখবার সহবাস।

ঐ পথে চেয়ে থাকি আসবে সে
গড়িয়ে বেলা, সাঁঝে
না হয় রাত গভীর হলে!
যখন খেলবে খেলা আঁধার উদল গায়
হাওয়া জড়িয়ে স্বপ্ন গিলে খায়;
জ্যোত্স্না ভেজা কালের সারথী
কাঁপে থর থর,

বৃষ্টি নুপূর পরে আসবে সে
কঙ্কাল স্নানে সনাতন যাতনা
অসয্য পৈশাচিক যন্ত্রণা ভুগে
আসবে সে, বসবে মুখোমুখি।



আমি মেঘের মত হারানো স্বপ্ন চাই।



‍আমি মেঘের মত হারানো স্বপ্ন চাই।


দিবা ঘুমে স্বপ্ন যাতনা
বৃষ্টির বি‍রহ,
বিচ্ছেদ কথক! ডুবে রয় ডাহুকী স্মৃতির গভীরে
পান‍‍কৌড়ির ডুব সাঁতারে
নেতিয়ে পরে কৃঞ্চপালক,বর্ষার বৃষ্টি খুঁজে ফিরে রৌদ্র
পুঁই মাচায় বৃষ্টি ধোয়া সবুজ পাতা
মেঘের সাথে পেতেছে দোস্তী;
ঢলে পরা বেলায় চিক চিক সাঁঝ আলো
স্বচ্ছ জলের নির্মল ফোটার ছোঁয়া,
ভেজা মাটি সব ভুলে যায় মনুষ্য যাতনা।


আমি শুধু জেগে রই,
রাত্রি পাহারায় ঐ তারাটার স্বাক্ষী হয়ে
মেঘের চোখে জল
আমাকে ভা‍সাবে তন্দ্রায়
কখন যে ঐ তারাটা ডুবে গেছে
জানতে পারি না, কালের তন্দ্রায় ডুবে ছিলাম
অষ্টপ্রহর তাবর নেশা গিলে! মেঘের মত জল ঢালায় ক্ষমা
আমি মেঘের মত হারানো স্বপ্ন চাই।

কি দিয়ে পুঁজিবো তোমায়?


কি দিয়ে পুঁজিবো তোমায়?

কি নিয়ে শুধাবো?
আমরা যৌবনের দূত, আমরা নতুন!
আকাশ ভরা স্বপ্ন চোখে, লক্ষ তারার মেলা,
দিশে হারা বেহুলা ভেলা, স্বপ্ন ডানায় ভাসে।
>>>>>ভেঙে মোর ঘরের চাবি,নিয়ে যাবি কে আমারে


কি হেরিবো চোখে আজি?
খরার তীব্র দাবদাহে, বসন্ত গেল গড়িয়ে!
বিধু মাঝির খেঁয়াঘাটে, নৌকা নাহি চলে,
নদীর বুকে চর জেগেছে ঐ,বালুয়াড়ির ঝড় বহে।
>>>>>ওগো নদী আপন বেগে পাগলপারা,


কি দিয়ে পুঁজিবো তোমায়?
যাপিত জীবন আপনালয়ে, খুঁজে ফিরি আজও বকুল বিছানো উঠান!
নেই কোথাও নেই আজ, ঘোমটা টানা লাজে রাঙা লজ্জাবতি,
শোক তাপ বিরহ, বেদনায়, আশ্রয় খুঁজি তব গীতবীণায়,
>>>>>মেঘের পরে মেঘ জুমেছে, আঁধার করে আসে,


কি রাখিবো চরণে তোমার?
কালের বসন খুলতে পারিনে, তন্দ্রায় ঘুম যায় টুটে!
মাঝরাতে সিধ কেটেছে, কে যে আমার ঘরে?
অভিমানে নিভেছিল আলো, চিরদিনের আগল খোলা দোর’যে আমার।
>>>>>এসো আমার ঘরে এসো,আমার ঘরে !

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বিবর্ণ


বিবর্ণ
তেলাপোকাগুলো চেয়ে থাকে
হাসে খিক খিক করে ,
ওদের গাঁজা খাওয়া দাঁত গুলো
থেকে ফিক করে বদ গন্ধ আসে,
এই পাড়ার পারুলি রুমালি
ওরা সেই হাসিতে গা ভাসায় চোখ টিপে ।
এবং এক সময় তেলাপোকার সংসারে
ওরা ধুলো হয়ে যায়
ছাই হয়ে যায় ।

ইচ্ছপাখী


ইচ্ছপাখী
ইচ্ছে গুলো উড়িয়ে দিলেম
লাগিয়ে দিয়ে ডানা
যাক না তারা ইচ্ছে যেথা
করবোনা আর মানা।

কেউ বা গোল নীলআকাশে
মেঘের সাথে ভেসে
কেউ বা গেল অনেকদূরে
কোন অচীন দেশে।

ইচ্ছে হলে আমায় ছেড়ে
থাকুক তারা দূরে
ইচ্ছে হলে আমার কাছে
আবার আসুক ফিরে।

ইচ্ছে গুলো দুষ্টু ভারি
গিয়েছি আমি জেনে
ইচ্ছেমত ইচ্ছেপূরণ
তাই,হয়না জীবনে।

না-কবিতা


না-কবিতা

এই দেখ এসে গেছি
লিখেছি যে সদ্য
অন্তে তে মিল আছে
নয় এটা গদ্য।

খুঁজে পেতে এনেছি যে
সুকমারী ছন্দ
পদ্যে তে তাই পাবে
টক টক গন্ধ।

কেউ বলে বড় বাজে
লেখা কর বন্ধ
নাক তুলে কেউ বলে
পড়ে নেই আনন্দ।

আরো বলে শোন মেয়ে
বলছি যে স্পষ্ট
সব মানে বোঝা গেলে
কবিতাটা নষ্ট।

আমি বলি দুর ছাই
এর বেশি জানি না
ভাবি যাহা লিখি তাহা
কবিতা তো বলিনা।

শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

"তুই" দিয়ে আজ ভরিয়ে দে না, আমার যত শূন্যতা সব


"তুই" দিয়ে আজ ভরিয়ে দে না, আমার যত শূন্যতা সব

বন্ধু, আমার কথাবিহীন মৌন প্রহর বদলে দিবি মুখরতায়?
চোখের কোণের লাল গোধূলি রাঙিয়ে দিবি সাতটি রঙে?
আমার উদাস বিকেলবেলা, সাজিয়ে দিবি গল্প-কথায়?

আমার যে এক নিটোল জলের শান্ত পুকুর, বিষাদ-ঘুমে ঘুমিয়ে আছে,
তার বুকে তুই ঢিল ছুঁড়ে দে, ঘুম ভেঙে যাক।
জলের কাঁপন আর আমার এ বুকের কাঁপন হোক একাকার,
সেই আবেশে আমার চোখের নীল-দীঘিতে পদ্ম ফুটুক,
দু’চোখ আমার পদ্ম-পুকুর হয়ে উঠুক।

বসন্ত আর শরৎ দেখি, এরা আমার কেউ ছিলো কি, কোন কালে !
হেমন্তেও আমার উঠোন রিক্ত কেমন!
হাতের মুঠোয়, সোয়েটারের উলের ভেতর,
আমার ঘরে কোথাও কোন উষ্ণতা নেই, হিম অনুভব।
আমার আষাঢ়, আমার শ্রাবণ, বছর জুড়েই;
তবুও আমার সবুজ পাতায় পুকুর জলে ঝরে পড়া বৃষ্টি-ধারায় নেই কলরব।
বন্ধুরে আয়, “তুই” দিয়ে আজ ভরিয়ে দে না, আমার যত শূন্যতা সব।

তুমি নীল প্রজাপতি হও, আমি রক্তজবা হয়ে যাই


তুমি নীল প্রজাপতি হও, আমি রক্তজবা হয়ে যাই

শরতের নাম যদি দেই বৈশাখ,
দখিনের জানালাটা অবিরাম যদি রাখি খুলে,
মৃদু হাওয়া ঘরে ঢুকে ঝড় হলে
বেণীর বাঁধন যদি খুলে যায়, আর আমি রক্তজবা হয়ে যাই,
কেমন হবে বল তো?

দুপুরে স্নানের পর আরশিতে ভেসে ওঠা প্রিয় ভ্রু-জোড়া
মেঠোপথ-জোছনার, মোম-মেয়ে আর আগুনের কথা বলে।


চিবুকের তিল আর খালি পায়ে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া,
রূপকথা হয়ে ওঠে, রাতে ও দুপুরে, রাত্রি দুপুরে।
তপ্ত ঠোঁটের ‘পরে নেমে আসে এক জোড়া ঠোঁট,
উদাসী ডাহুক এক ডেকে নিয়ে যায় বহুদূরে …

নীলাচল পাহাড়ের ছেলে! এই নাও রক্তজবার লাল ;
এসো, তুমি নীল প্রজাপতি হও,
তোমার পাখার নীলে শুদ্ধ হোক আকাশ আমার,
আবারও দু’জনে চলো খালি পায়ে হেঁটে যাই পাহাড়ের পথে,
পেছনের মেঠোপথ হয় হোক পুড়ে ছারখার।

আমাদের পরিচয়



আমাদের পরিচয়

বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ধ্বনি হচ্ছে, শব্দ হচ্ছে না

 

ধ্বনি হচ্ছে, শব্দ হচ্ছে না


কাটা-শ্বাসনালী থেকে
বেরুনো বাতাস এসে
ঝাপটা মারছে ছুরির গায়ে;
সেই ফাঁকে, সেই প্রাণের ঘর্ঘরে,
বায়ুপ্রবাহের অপচয়
রোধকল্পে, সম্ভবত -
খিঁচে উঠছে পরাস্ত শরীর।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
অসংখ্য রঙিন বেলুন
শব্দবুদ্বুদের মতো
উড়ে উড়ে ফেটে পড়ছে
অনিবার্য অর্থহীনতায়।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
লেগে-থাকা রক্তের উপরিতল
শুকিয়ে মসৃণ, ম্যাট-লেমিনেটেড!
সামনে ছিল নীলাকাশ, একটু আগেও,
শাদা মেঘ, কালো-কালো পাখি…
অকস্মাৎ বিস্তীর্ণ হলুদ!
যেন দুনিয়ার সব
সর্ষ্যাক্ষেত আকাশে উঠেছে।
আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি,
এ-বাতাস নেহাৎ বাতাস নয়;
খাঁটি বাংলা, আ মরণ, এ যে সমীরণ!
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
অন্তরা স্টুডিও পাশে রেখে
ক্লান্ত প্রবীণার মতো
গোরস্তানমুখি পাকা-গলি,
একতলা বাড়ি, জাল-দেয়া জান্লা
ছোট্ট একটা ছাদ,
লোহার মই দিয়া ছাদে ওঠা যেত…
তখন, সবে কলেজগোয়ার্স,
ব্যাঙাচির লেজ খসে পড়েছে কেবল!
এমন রঙিন, বিবেচনাহীন দিন, রাত্রি…
অসংকোচ এমন মহান!
রিকশায় উঠলেই মনে হত
বামপাশে প্রাণ নিয়ে স্বর্গে উড়ে যাচ্ছি,
একবার হাত ধরলে, সারাদিন
আর কিছুই ধরা যেত না!
সেই অধরা দিনের ছবি
আমি ফের দেখতে পাচ্ছি,
একজোড়া মাধুর্যহীন,
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাঁটুর নিচে
দ্বিখণ্ডিত হ’তে হ’তে
আমি যেন শুনতে পাচ্ছি
কারও ফিসফিস,
কারও বিহ্বল, ছলছল জল:
‘রাত্রে যাওয়া হবে না, ট্রেন থাকুক…
কথা শোনা লাগে… কী কুয়াশা…
দিন-দিন বয়স তো কমছে না!
আমি কিন্তু ঝামেলা বাধাবো…’
‘মামী শুনবে!’ ‘না, আম্মা ঘুমাচ্ছে;
আপনাকে একবার তুমি বলি?’
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
কাটা-বন্দুকের
বেকার কার্টিজের মতো
ভ্রান্ত নিশানায় ধেয়ে যাচ্ছে
আমার প্রায়-কবন্ধ দেহের
উচ্চারণচেষ্টা সমুদয়;
আমি যেন শুনতে পাচ্ছি,
মানুষের চিরায়ত
আর্তচিৎকারের মতো,
হাত-চাপা গোঙানির মতো,
কাটা-শ্বাসনালী দিয়ে
বাতাস বেরুচ্ছে; ধ্বনি হচ্ছে,
কিন্তু শব্দ হচ্ছে না।

উচ্চরণ


উচ্চরণ

অন্ধকারে ডানা মেলি, মাথার ভেতর আরও অন্ধকার জমা।
মনে হচ্ছে ম’রে যাচ্ছি, ঝ’রে যাচ্ছে জল…
জলে ভেসে-আসা এত বাক্য-সিংহাসন, এত শব্দ-পরিক্রমা
সকলই নকল স্বপ্ন? - খল, সবই খল!
পাঁজরে, পকেটে ভরা সেই হাসি, সেই মুখ অক্ষম-অক্ষমা,
বিপণন-ব্যস্ত-দিনে নিতান্ত অচল।
তবে কি যাত্রাই বৃথা, অনর্থক, নষ্ট, অসম্বল?
দূরের পাহাড়ে ছিল চূড়ায় দুঃখের হাতছানি, প্রলোভন;
অগম্য, অনতিক্রম্য, অ-ছোঁয়ার নেশা।
তার লোভে, আমার ভেতর থেকে বন্ধুদের বিশ্বাসভাজন
কেউ একা ফস্কে গেছে, ভেবেছে অন্বেষা
মানে সমুদ্রমন্থন; ঝিনুকের পাল্লা খুলে মুক্তা-আহরণ
ছাড়া ভিন্নতর কিছু, অন্য কোনও পেশা।
জেনেছে মরার মধ্যে মিশে থাকে বাঁচা-ও হামেশা।
এবং পাহাড় তার নির্লিপ্ত শীর্ষের সোনা রেখেছে উঁচিয়ে;
অবিরাম প্রজ্বলিত অনন্ত অশেষ
সেই আভা, সেই লাভা, সেই প্রণোদনা তীব্র ছড়িয়ে ছড়িয়ে
ভরেছে পতঙ্গ, ঘাস, মাটি নির্বিশেষ।
সমবেত আলোলিপ্সু হাত-পা সকল সেই প্রেরণা ভাঙিয়ে
খুঁটেছে খাদ্যের কণা, রতির উদ্দেশ!
পাদদেশে পাওয়া গেছে প্রাণীদের ত্যক্ত অবশেষ।
আমি ওই পাদদেশে সন্তুষ্ট থাকিনি,
যেখানে সবুজ ঘাস, ছাগলের বিচরণ, ফুল্ল সেমিনার;
যেখানে নিতম্বদম্ভে বিদ্যোৎসাহিনী
জীপে, ও জীপার খুলে মেলে ধরে ভালো মুখ, ভদ্র ব্যবহার;
যেখানে হাতের সুখে পায়ের কাহিনী
লিখে-লিখে মঞ্চ ভরে ভ্রাতা-ভগ্নি, ঘৃত, অগ্নি, পর্নো-পরিবার -
আমি তার পাশ কেটে ছুঁতে গেছি চূড়ান্ত তোমার।

একটা মুখোশ


একটা মুখোশ


একটা মুখোশ প’রে আছি।
দেখা যাচ্ছে, শ্রুতিও সজাগ;
মনে হচ্ছে মুখোশটা মুখ
হয়ে উঠছে, মিশে যাচ্ছে দাগ।
ভালোই তো ধাবমান সব,
চলমান, ঢলোঢলোমান;
গতিশীলতার গর্ত ঘিরে
নিরত নিযুত হন্যমান।
আমি দেখি, আমাকে দেখে না -
কত বড় বাতেনি ব্যাপার!
কত দূর, কত আপেক্ষিক
মুখোশের ওপার, এপার!
এমন মুখর চারপাশ!
মুখে মুখে সুখের প্রলেপ,
দিকে দিকে বিবাহবার্ষিকী,
ঘরে ঘরে ম্যারিটাল রেপ।
অথবা প্রাপ্তির দরাদরি :
কার কত চাহিদা বাজারে,
ছুটে যায় কার কত শর
জনে জনে, হাজারে হাজারে;
অথবা সাত্ত্বিক রসিকতা,
সুশীলস্য সুতৃণ ভোজন,
আলুসিদ্ধ, পেঁপেসিদ্ধ, মুলা…
প্রথাসিদ্ধ জীবনাচরণ।
মুখোশের অন্তরাল থেকে
নিরাপদে ঘন দৃষ্টিপাত :
কার কীরকম পোয়াবারো,
কার বা কেমন কিস্তিমাৎ!
সবারই কিছু না কিছু থাকে।
দেখাটাও একধরনের -
বলা যেতে পারে - সঞ্চয়ন;
দৃষ্টি গেলে, থাকে তার জের।
মর্জিমাফিক ডায়ানামিক,
বেশ কিন্তু সুন্দর হয়েছে!
পাকেচক্রে, পাষাণে হড়কে
মুখোশটা মুখ হ’য়ে গেছে।

উৎসর্গ


 উৎসর্গ


আমরা আলোর সন্ধানে বেরুলাম।
কোথায় আলো?
নদী-সমুদ্র-পর্বত পেরিয়ে, আকাশ-নীলিমা অতিক্রম করে
আমরা চলে এলাম
সত্য ও সুন্দরের প্রতীক কয়েকজন মৌন মনীষীর কাছে।

হাত দিয়ে তাঁদের দেহ স্পর্শ করতেই ধ্যানমগ্ন
তাঁরা চোখ মেলে তাকালেন -
সঙ্গে-সঙ্গেই আমরা বললাম, ‘হে সত্য, আলো দাও।’
আমাদের কথা শুনে তাঁরা চোখ বন্ধ করলেন।
আর তাঁদের পবিত্র গ্রন্থের ওপরে কীসের যেন ঘন ছায়া পড়লো।
সেই ঘন আবরণের ভেতর থেকে একটুখানি মুখ বের করে
তাঁদের কেউ একজন বলে উঠলো, ‘চরৈবেতি, চরৈবেতি।’
আমরা মুখ ফিরিয়ে এগোতে লাগলাম।
পথে-পথে দূর সমুদ্রের হাওয়া এসে
শীতল করে দিতে লাগলো আমাদের দেহ।
আমরা পূত-পবিত্র এক অহিংস মানবের কাছে এসে দাঁড়ালাম।
বললাম, ‘হে অহিংস, আলো দাও।’

আমাদের বাক্যবন্ধ শুনেই সেই মহামানব চিরকালের জন্যে
এক মৌন পাথরে রূপান্তরিত হলেন।
আমরা নির্বাক, ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলাম।
এবার আমরা চলে এলাম
কুমারী মাতার সেই রক্তক্লান্ত, সুন্দর ও সাহসী সন্তানের কাছে,
বললাম, ‘হে সুন্দর, আলো দাও।’

আমাদের এর বেশি কিছুই বলতে হলো না;
সঙ্গে-সঙ্গে অন্ধকার নেমে এলো
এবং তাঁর মাথা ঈষৎ নমিত হয়ে ঝুলে পড়লো পায়ের কাছে;
পবিত্রসুন্দরের নমিত মুখমণ্ডল
আমাদের কেমন বিব্রত করে ফেললো।
আমরা আর একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে
চলে এলাম সেই বিস্ময়-পুরুষের কাছে,
যে সারা পৃথিবীর কোটি-কোটি মানুষকে
এক মোহময় বাতাসের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে।

তাঁকে বললাম, ‘হে বিস্ময়, আলো দাও।’
শুধু পেছন থেকে হাহাকারের মতো
কার করুণ দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেলাম।

আমাদের দেহ পথশ্রমে ক্লান্ত।
কতো যুগ, কতো কাল, কতো আলোকবর্ষ ধরে
আমরা সৌরপৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত অবধি
ঘুরে-ঘুরে আলোকের সন্ধানে ব্যর্থ হয়ে
এক হতদরিদ্র, উদাসীন ও অভিমানী মানুষের
কাছে এসে দাঁড়ালাম।


কেন যেন মনে হলো, আমাদের ন্যুব্জ পিঠ,
ব্যর্থতার গ্লানিতে জর্জরিত এই দেহটাতে
একমাত্র এই উদাসীন মানুষটিই প্রাণের সঞ্চার করতে পারে।
আমরা তাঁর সম্মুখে এসে দাঁড়ালাম,
তাঁকে দেখে কেন যেন মনে হলো,
তিনি আমাদের বহুদিনের চেনা।
তাঁর কাছে আসতেই আমাদের সম্পূর্ণ শরীরে
এক অত্যুজ্জ্বল দ্যুতি খেলা করে গেলো।
আমরা হাত জোড় করে বললাম, ‘হে মহান, আমাদের আলো দাও।’
তিনি চোখ মেলে তাকালেন, কিন্তু কোনো কথা বললেন না।
আমরা তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে
উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে লাগলাম।
আমাদের চোখের সম্মুখে সারা পৃথিবী দুলতে লাগলো
আমাদের সম্পূর্ণ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
একটি সীমারেখায় এসে স্থির হয়ে গেলো।
আমরা আনন্দে তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম,
কিন্তু কোথায় তিনি?
আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না,
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম, একটি পরিশেষহীন পথ
সম্মুখের দিকে প্রসারিত হয়ে গেছে…
আর সেই পথে আলোকের এতো তীব্র, ঝাঁঝালো উপস্থিতি যে,
তার প্রতিটি আলোকচ্ছটার গন্ধও
আমাদের নাকে এসে লাগছে।
আমরা ধীরে-ধীরে সেই পথ ধরে এগোতে লাগলাম।
ঠিক তক্ষুনি পেছন থেকে
কার তীক্ষ্ণ গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, ‘দাঁড়াও।’
আমরা চমকে পেছন ফিরে তাকাতেই
দেখতে পেলাম, সেই মহামানব।

তাঁর সারা মুখমণ্ডলে জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটা বিচ্ছুরিত।
আমরা কোনো কথা না বলে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তিনি বললেন, ‘এখান থেকেই ফের যাত্রা শুরু করো, আলোকের
পথ বড়ো দীর্ঘ ও বন্ধুর। তোমরা গোলকধাঁধায় ঘুরতে-ঘুরতে
ক্লান্ত ও হতাশ্বাস। এভাবে তোমরা তোমাদের প্রার্থিত বস্তু
কখনোই খুঁজে পাবে না।
আমাদের কণ্ঠ থেকে আর্তনাদ ঝরে পড়লো, ‘তা হলে আমরা
কী করবো, তুমিই বলে দাও।’

তিনি এবার স্থির ও অচঞ্চল হলেন।
তাঁর মুখ অসম্ভব রকমের গম্ভীর হয়ে গেলো,
তাঁর অত্যুজ্জ্বল দু’টো চোখের পাতা নিমীলিত হয়ে এলো,
অনেকক্ষণ তিনি কোনো কথা বললেন না।
আমরা শংকিত হয়ে পড়লাম,
তবে কি তিনি আমাদের কোনো কথায় আঘাত পেলেন?
আমরা কিছু বোঝবার আগেই তিনি চোখ খুললেন,
খুব মৃদু কণ্ঠস্বরে বললেন, ‘তোমরা আলোকের সন্ধানে এসেছো,
সে-বড়ো কঠিন কাজ, তোমরা পারবে?’
আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম, ‘হে মহান, পারবো।’

‘তা হলে তোমরা আমাকে হত্যা করো।’
‘সে কি!’ আমরা আর্তনাদ করে উঠলাম।
সেই মহাপুরুষ খুব গম্ভীর কণ্ঠস্বরে বললেন,
‘কাউকে না কাউকে তো সেই সুন্দরের জন্যে নিজেকে
উৎসর্গ করতেই হবে।’


আমরা বললাম, ‘কেউ কি নেই আর?’
‘হয়তো আছে, তোমরা তো অনেক পথ পেরিয়ে এসেছো, পেয়েছো?’
আমরা কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করলাম।
তিনি হাসলেন,
সেই হাসির মধ্যে ক্ষোভ, ঘৃণা না বেদনা
কিছুই বোঝা গেলো না।

তিনি বললেন, ‘রক্ত ছাড়া কোনো সত্যই পূর্ণ হয় না। তোমরা
আমার কাছে এসেছো, আমাকেই নাও।’
‘সে-আমরা পারবো না।’
‘তোমাদের পারতেই হবে,’ তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বললেন।
আর আমাদের হাতের দিকে বাড়িয়ে দিলেন
এক তীক্ষ্ণ ঝকঝকে ছুরি।
আমরা ভয়ে শিউরে উঠলাম।
আমাদের সম্পূর্ণ দেহের ভার অত্যন্ত হালকা হয়ে

শূন্যে ভাসতে লাগলো।
আমরা চিৎকার করে উঠলাম, ‘না।’
সেই মহামানব অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন,
আর তীক্ষè ছুরিটি নিজেই আমূল বিঁধিয়ে দিলেন তাঁর নিজের বুকে।
আমরা আতঙ্কে চোখ বন্ধ করলাম।
চোখ মেলতেই দেখলাম, সেই পবিত্র-দেহকে ঘিরে
উৎসব করছে সারা পৃথিবীর লক্ষকোটি কাক।
আমরা পবিত্র-পুরুষের পায়ের কাছে এসে বসলাম,
তাঁর রক্তের ওপরে লুটোপুটি খেয়ে,
তাঁর মুখ হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই দ্রুত ছিটকে সরে এলাম।
আমাদের দেহ অবশ হয়ে গেলো,
আমাদের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো
সম্পূর্ণ বধির হয়ে যাবার আগেই
আমরা আর্তনাদ করে উঠলাম ‘এ মৃত্যুর জন্যে আমরাই দায়ী।’
সঙ্গে-সঙ্গে কারা যেন আমাদের কানের কাছে
তীব্র চিৎকার করে উঠলো, ‘তোমরা কবিকে হত্যা করলে কেন?’
তাদের সেই চিৎকারে আমরা মূর্ছিত হয়ে পড়লাম।


যখন আমাদের জ্ঞান ফিরে এলো,
আমাদের কানে কেবল সেই বিদীর্ণ শব্দ
ভেসে আসতে লাগলো - ‘কাউকে না কাউকে তো
সেই সুন্দরের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করতেই হবে,
কাউকে না কাউকে তো…।’

আমরা তখন ছিলাম পাখি, আমরা তখন ফড়িং


~~আমরা তখন ছিলাম পাখি, আমরা তখন ফড়িং~~


তখন আমার উনিশ বছর
তখন তোমার বাইশ
আমরা দুজন অবাধ্যতা, শাসন, বারণ নালিশ!!

তখন দুজন চালচুলোহীন
তখন দুজন পাখি
এ ডাল থেকে ও ডাল উড়ি, কিচিরমিচির ডাকি!!

তখন দুজন ছন্নছাড়া
তখন যাযাবর
দুজন মিলে বাকবাকুম আর টোনাটুনির ঘর!!

তখন সেটাই স্বর্গ আমার
তখন সেটা প্রাসাদ
ঝেঁড়েমুছে ঝা চক চক, হাতের মুঠোয় চাঁদ!

তখন আমার রান্নাবাটি
তখন হাঁড়িকড়াই
কুচকচে রং কালীর মতো, তরকারিতে ভরাই!

তখন কোটা ছোট্টমাছ আর
তখন আঙুল কাটা
কেঁদেকেটে দু চোখ ফুলাই, অর্ধ পেঁয়াজবাটা।

তখন রাঁধা ঝাল মরিচে
তখন বাঁকা রুটি
তবুও তখন খুশি মনে কাটাই ঈদের ছুটি।

তখন হিসাব-নিকাশ
তখন বাজার-সদাই আনি
টিউশনিটাই ভরসা তোমার, সে কথাটা জানি।

তখন রিকশা, পার্কে ঘোরা
তখন বাদামভাঁজা
নেই টয়োটা, নেই টিভিটাও, তবুও রাণি-রাজা!!

তখন কথা খুনসুটি আর
তখন ফুলাই গাল
দণ্ড দুয়েক পরেই তুলি ভালোবাসার পাল।

তখন চাঁদ মুচকি হাসে
তখন ছোট্ট ঘরে
একটা পরী ঘুমোয় সুখে, তোমার বুকের 'পরে।

হঠাৎ তখন চৈত্র দুপুর
হঠাৎ তখন বেলা
বাজলো দোরের হঠাৎ কড়া ,ভাঙলো সকল খেলা।

তুমি তখন বৈরী আইন
আমি তখন একা
র‌্যাপাঞ্জেল আর বন্দি টাওয়ার, পাই না তোমার দেখা।

এখনও চাঁদ বাঁধ ভেঙে যায়,
উছলে পড়ে আলো
এখনও সেই উনিশ বছর, স্মৃতির মানিক জ্বালো।

হঠাৎ আজও মনে পড়ে,
এক কামরার বাসা
হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে ভাঙা, ছোট্ট ভালোবাসা!!!

ভরা চাঁদ অম্বরে নীলের বাসর আজ


ভরা চাঁদ অম্বরে নীলের বাসর আজ

হাঁটু গেরে বসেছ আজ,
উঠান জুড়ে ভাদরের রোদ। রোদের তীব্রতা কমেছে বেশ
বাঁশঝাড়ের সবুজ ছায়া। ডোবার জলে দিচ্ছে উঁকি
জল ছায়ায় হলুদ নীলের ডোরাকাটা ধরাসাপ। জলের মৃদু ঢেউয়ে বিলি কেটে কেটে সাঁতরায়
লতানো চাল কুমড়ার ডগা উনুনের চালটা ঢেকেছে। চালে চুন পরা চাল কুমড়ার গা
ভাদরের রোদে চক মো কায়। যেন উনুনের চালে নিরালায় সাদা মেঘের খুনসুঁটি

বান ঢাকা ক্ষেতের আইল। শেওলা গায়ে মাখা জলজ উদ্ভিদ
জল মাকড়সা ধানের সবুজ পাতায় বাসা বুনে। সাদা সুতার জ্বালে বসে ডিমে তা দেয়
ভাসমান কচুরিপানার দল। বিস্তার লাভে যেন জলের উপর সুরম্য সবুজ বন
ডাহুক ডাহুকির রমণীয় ঘুরাফেরা। ভরা চাঁদ অম্বরে নীলের বাসর আজ

পুবের মাঠ পেরিয়ে খালের কোণে। খোরাজাল পেতে বসে থাকে জেলে স্রোতের উজানে
মাছরাঙার মত মাছ ধিয়ানে। মাছের ঝাঁকের উল্লাস বুঝে জেলে তুলে জাল
বন্দি জালে খল বলিয়ে উঠে মাছ। জেলের মুখে মুচকি হাসি ফুটে
যেন অমাবস্যায় জোছনা বিভাস,