[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১২

ধ্যানমান সময়ের কবিতা




পাহাড়ের ঘুম ভেঙ্গে
জেগে ওঠে পাথর মিনার
সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠে আসে
সময়পুরুষ
মিনারের চূড়াদেশে আসন পেতে
দীর্ঘ রজনী কেটে যায় ধ্যানে
ধ্যান ভাঙে সুললিত কণ্ঠের সুরে
ধ্যান ভেঙে চেয়ে দেখে অচল দিনার
কত সময় কেটে গেছে
ক্ষয়ে গেছে পাথরের ইট
কতো রাজা এসেছিলো
কতো রাজা চলে গেছে
সময়ের ঘুমে
এসেছিলো আরো কী
ধ্যানমান সময়প্রফেট
আজ তার খোঁজ নিতে নগরের দিকে
সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলে মিনার থেকে
উড়ে যায়, খাঁচা ফেলে বিমুগ্ধ ধ্যান।

রাত্রি জাগরণের কাব্য




এক.
বহু দূর ভ্রমণে রোদের মাখন
জেগে ওঠে তাঁর সুরমা রঙ গালের গেলাবে
চিকচিক দাড়ির বাগানে ফুটে ওঠে
মুক্তা রাশি রাশি- রহম খোদার।

দুই.
ভ্রমণে ক্লান্ত তাঁর কয়েদি পা
শিকল ছিঁড়ে তাহাজ্জুদ রাত্রিতে
কপাল চুম্বন করে ঐশ্বরিক পায়
জেগে ওঠে হাত
আর চোখের ফারাক্কা ভেঙ্গে
জোয়ারে ডুবে যায় নদী।

তিন.
তাঁর দীর্ঘ রোদভ্রমণ
রাত্রি জাগরণের তাহাজ্জুদ
কওমের সূর্য উঠার প্রত্যাশায়।

চোখের বয়ান


চোখের বয়ান





নার্সিং চোখ
কারামতি স্কার্ফের নিদ্রাহীন নার্সিং চোখ
রোদের স্পর্শে জ্বলে উঠে বুকের দরদ।

শরনার্থী চোখ
বাইশটি বছর মুখোমুখি
প্রতিবন্ধীর শরণার্থী চোখে
বৃষ্টির দীর্ঘ চুল চুমে
দোপাট্টায় ভাসে
চোখের কান্নাভরানত সিম্পোজিয়াম।

এপ্লিক চোখ
এমব্রয়ডারি সন্ধায়
থার্মোমিটার জ্বরে
রোদের পারদ গলে
লোমের গহবরে জন্মে
জুন আর্গাসের এপ্লিক চোখ।

মায়ামৃগ চোখ
নাষ্পাতি রঙে বেপথুয়া রাত্রী
লাশের মায়ামৃগ চোখে
বৌচি খেলে নার্সিসাস চলচ্চিত্র।

অনন্ত চোখ
এই চোখ অনন্ত চোখ
তরুনের চোখ চায়
তরুনীর চোখ।

গল্পঃ আ ধাঁ রে র অ নু ভ ব


গল্পঃ আ ধাঁ রে র  অ নু ভ ব



এক.
-তোমার তো যোগ্যতা, মেধা আছে এ অজপাড়া গাঁয়ে পড়ে থেকো না, শহরে কোথাও গিয়ে হাইস্কুলে গিয়ে চাকুরী-বাকুরী কর?
হেড স্যার রজতবাবু অরুপের হাত ধরে বললেন দেখ, অরুপ গ্রামের এ ছোট্ট প্রাইমারী স্কুল যে কোনদিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতদিন বড়কর্তারা সাহায্য করেছিলো চলেছে, মুখ গুটিয়ে নিয়েছেন তারা।
-হয়তো স্কুল আর চলবে না। আমাদের না হয় জমির বুকে ফসল তুলে কেটে যাবে, কিন্তু তুমি তো তরুন মানুষ, তোমার ম্যালাদিন পড়ে আছে সামনে। তাছাড়া এ গাঁয়ে তোমার আত্নীয়স্বজন কেউ নেই যে, তাদের সাথে থেকে যাবে!

অরুপ প্রথমে রাজী হয়ে চায়নি কিন্তু ভেবে দেখলো ছন্নছাড়া জীবন নিয়ে এভাবে থেমে না থেকে একটু উপভোগ করা যাক, নয়তো শেষ বয়সে আফসোস জ্বিবের ডগায় আওয়াজ তুলবে। তাই শেষ পর্যন্ত রাজী হয়ে গেল। ঘরে ফিরে তাকে কিছু ভাবতে হলোনা।
পরদিন রজতবাবু পোষ্ট অফিস থেকে একটা চিঠি নিয়ে হাজির।
শোন,অরুপ উনি আমার বন্ধু রঞ্জিত মালাকার তুমি নিশ্চই চেন? তোমাদের কলেজের বাংলার ক্লাস নিতেন। অরুপ চিনতে পেরেছি বলতেই’ খামটা ধরিয়ে দিলেন ওর হাতে এটা তোমার চাকরীর জয়েনিং লেটার।
এবার তৈরি হয়ে নাও।
ও যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো তাদের মনটা অবশ্য একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিলো মাসান্তের দশদিন সবেমাত্র গেছে, পুরো ভাড়াটা তাই তারা পাচ্ছেনা। অরুপের গোছানোর মতো কিছুই নেই । বাক্সপেটরা দুটো। শেষ বারের মতো ওর ছাত্ররা মনখারাপ করে রইলো কিন্তু কি আর করা সময় তো পরিবর্তন হয়; তাই এসব মেনে নিয়েই চলতে হবে।

পড়াগ্রাম ছেড়ে ওর যাত্রা এখন ‘নিদভাঙ্গার’ ছোট্ট শহরে বাসে চাপার আগ অবদি ওর চোখ একটু ঝাপসা হয়ে আসছিল কেউ ছিলনা এ গাঁয়ে । মা-বাবা তো সেই কবেই আকাশ পাড়ি দিয়েছে। তবুও আজ খারাপ লাগছে। কেন যে খারাপ লাগছে…..
দু’পাশে পাহাড় আর নদী একপাশে দুরন্ত ঘন বনজঙ্গল আর একপাশে ছোট্ট মফস্বল শহর। এ শহরে পা ফেলবার আগেই অরুপ শহরটাকে ভালোবেসে ফেললো। পথের ধারে না জানা জঙ্গলী ফুলকে হাতে তুলে নিল। ঠিক ছবির মতো শহরটা।
রজত বাবুই ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন স্যার রঞ্জিত বাবু এখানেই থাকেন। বাসে চাপার পর থেকে যদিও তার বুকটা ব্যাথায় চিনচিন করছিলো কিন্তু এই শহরের হাওয়া গায়ে লাগতেই খারাপ লাগাটা পাল্টে গেল।
তাই আপন মনেই বলে উঠলো ভাগ্যটা আমার উড়ন্ত ঘুড়ি হয়ে গেছে, হাওয়া লেগে কখনো নদীর ধারে কখনো ইটের ভাটায় কখনো ফুলওলা জমিনে আছরে পড়ে।

অটো থেকে নেমেই চোখ বুলিয়ে নিল অরুপ। হেটে আসতে হলো কিছুটা বাক্স-পেটরা নিয়ে ত্রিনাথ মন্দির অবদি। কার্ড ফোন থেকে ফোন দিতে হলো রঞ্জিত বাবু কে।
স্যার আমি তো এসে গেছি; ফোনের ওপারে হাসির আমেজ শোনা গেল।
-ওখানেই দাড়াও তুমি; আমি দয়মন্তিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ও তোমাকে জায়গা মতো পৌছে দেবে

রাস্তার একপাশে দাড়াতে চায়রি অরুপ কেমন দেখায়! ত্রিনাথের সিড়ি গোড়ায় দাড়িয়ে ছিল। পুব আকাশের দিবাকর ব্যাটা পশ্চিমের একপাশে হেলে পড়েছে তখন। পিনপতন নিরবতা হয়তো এখানে থাকার কথা কিন্তু তা নেই কদমের ফুলে ভরে গেছে গাছটা। সেটার চারপাশে ক’জুটি হাত পা ছড়িয়ে গুনগুন করছে; এ যেন আরেক দৃশ্যপট। যে ছবিগুলো না জানা কোন চিত্রকরের আঁকা তার সেই আঁকাটা ক্যালেন্ডারের পাতায় শোভা পেত। ন্যুড ক্যালেন্ডার দেখার মাঝে যেমন একটা অন্যরকম অনুভব আছে ঠিক তেমনি আছে যুগলবন্দী কদমগাছ ও কদম,ফুল দেখাতে।
মনটা তন্ময় হয়ে গিয়েছিল।
- হয়েছে কদম যুগল অনেক দেখেছেন, এবার আসুন ট্যাক্সি রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছে।
বালুচরি একটা শাড়ী পড়ে ফর্সা মতোন একটা মেয়েটা দাড়িয়ে। ওই বোধহয় দয়মন্তি !!
ট্যাক্সিতে গিয়ে বসলো এর আগে একবার এই যানটিতে উঠার সুভাগ্য হয়েছিলো অরুপের এই নিয়ে দু’বার।
-কটায় বেড়িয়েছেন
- সাতটায়
- কিছু খেয়েছেন
- অত সকালে কিছু খেতে পারিনা।
- এসব ন্যাকামো এখানে টিকবে না, সব উঠে যাবে। বাবু কাবু হতে মাত্তর সাতদিন লাগবে। ভজহরি লাগাবে কড়াকড়ি।
- এই ভজহরিটা কে?
- আপনার পাশে পাশে থাকবে পিয়ন ও কেয়ারটেকার।
অরুপ এবার একটু সহজ হয়ে বসে বললো স্যার কি আপনাকেই পাঠালো আর কোন লোক ছিলোনা? দয়মন্তি একটু হেসে নিয়ে বললো কেন আমি কি দেখতে ব্যাঙ্গাচির মতো!! নাকি বোবা
- বোবা যদি আপনি হতেন তাহলে ঈশ্বরের পস্তাতে হতো যা মুখ আপনার!! তাছাড়া দেখতে খারাপ না হলেও তবে কাচালঙ্কার মতোই মনে হচ্ছে; এই সন্ধ্যেয় মেয়েছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন তো তাই ভেবে কষ্ট লাগছে।
- অত ভেবে কাজ নেই এটা গ্রাম না এটা শহর। কষ্ট ‘কেষ্টর খাতায় তুলে রাখতে হয়’ আদিখ্যেতার কোন দাম নেই।
চুপ মেরে গেল অরুপ; দু’পা ফেলে জগৎ দেখা হয়নি তার। তাই ভাবনাটা আপাতত কম থাকলেই ভালো।


দুই.

ত্রিনাথ মন্দির থেকে দুই কিলো দুরে নিদডাঙ্গা। পাহাড়ী টিলার কাছে ওর স্কুল। একপাশে জলাভুমি পিছনে উচু পাহাড় আর দুপাশে সারি সারি বাড়ি; জোর বর্ষন হলে নিচের রাস্তায় পানি জমে যায়, চলাচল বন্ধ। স্কুলটা একটা টিলার উপর নেমে যাবার রাস্তাটা পুরোনে হলেও সুন্দর ফুলের চাদরে মোড়ানো। এখানকার ছাত্র-ছাত্রী মূলত খ্রীষ্ট বংশীয় কো এডুকেশন স্কুল।
তিন ক্লাসের স্কুল সিক্স টু এইট শ’তিনেক ছাত্রছাত্রী। স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষকই এই নগরীর তাই পাঁচটার আগেই বাড়ি ফেরে ওরা। অরুপ হেড পদেই যোগ দিয়েছে। স্কুলের পেছনেই দু’রুমের ছোট অর্ধপাকা দোচালা ঘর । থাকা খাওয়া ওখানেই সার্বক্ষনিক পিয়ন ও কেয়ারটেকার ভজহরি বাবু।
স্কুলের একমাত্র ড্রয়িং টিচার দয়মন্তি, রঞ্জিত বাবুর দুর সম্পর্কের ভাতিজি। কারো প্রতি ইন্টারেষ্টেড ভাবটা অরুপের নেই, সে ড্রিংক করেনা নস্যিও নেয়না কাজের বাইরে সবকিছুতেই তার উদাসীনতা। উদাসীনতার একটা কারণ দেখানো দরকার ভেবেই কেউ প্রশ্ন করলেই বলে দেয় আমি এমনটি হতে পারিনা। ভজহরি বলে ঠিক হয়ে যাবে লক্ষীর গুতো খেলেই।
বর্ষাবরনের অনুষ্ঠানে কজন টিপ্পনী কেটে বললো বিয়ে করছেন না কেন? বয়স তো গেল চলে;
-যাকনা এসব আমাকে দিয়ে হবেনা।
-অন্য কোন সমস্যা আছে কি?
দয়মন্তি পেছনেই ছিলো সশব্দে বলে উঠলো কদম তলায় অন্যের প্রেম করা দেখতো খারাপ লাগেনা বিয়ে করতেই আপত্তি !! ঢং!!
কত বয়স হলো? দিন কি শেষ হয়ে আসছে? এই জাতীয় প্রশ্ন অরুপের মাথায় আসে না; দিন কাটছে কাটুক না; অরুপের সাথে রঞ্জিত বাবুর প্রায়ই দেখা হয়। তা এবার তো বয়েস হলো; বিয়ে টিয়ে কিছু একটা করো অরুপ? মেয়ে দেখবো? আমি ছাড়া তো এখানে তোমার গার্জেয়ান কেই নেই।

দিন তো যাচ্ছেই কাটুক না ; অরুপের উদাসীনতা রঞ্জিতবাবুকে খানিকটা ভাবায় কিন্তু কি করবেন। প্রেম-ট্রেম কিছু করলে না হয় একটা কিছু হতো ! স্কুলের বাদ-বাকীরা কদ্দিন বলে ক্ষান্ত দিয়েছে।
পড়াগ্রামে না হয় ঝামেলা ছিলনা; পাথর হয়ে থাকা কোন সমস্যাই ছিলোনা। কিন্তু এইখানে একা থাকা বিস্তর সমস্যা। কারো বাড়ি বেড়াতে না গেলেও পার্টি জাতীয় কিছুতে একা যাওয়া বড়ই বেমানান।
কিন্তু কারো সাথে ওর এডজাষ্ট হওয়া অসম্ভব বলেই জানে, তাছাড়া বেশি ভাবতে জানেনা অরুপ ভালোবাসে প্রকৃতিকে; তাই নীরবতা যেন ওর নিরব সঙ্গী।
দয়মন্তির সাথে মাঝে-সাঝে গা-ছেড়া কথাবার্তা হয়; এ পর্যন্তই।
মাঝে মাঝে যদিবা কখনও একটু মায়া হয় কিন্তু দার্শনিক মার্কা কথাবার্তা আর আদিখ্যেতা সব ভন্ডুল করে দেয়। অরুপের কাছে এসে ওর আগোছালো জীবনটাকে গোছাতে ইচ্ছে করলেও তা আর করা হয়ে উঠেনা। এমন মানুষ গুলোকে কেউ একজন গাইড না করলে যতœ ছাড়া এমনি করে তালগাছের মতো বেড়ে উঠে তবে সেটা নিরসহীন। দয়মন্তি আড়চোখে ঠিক খেয়াল করে চলে অরুপে পথচলাকে এভাবে নিরব যন্ত্রনায় পুড়তে দেয়া যায়না।

এক মেঘলা আকাশের দিন স্কুল ছুটির পর বার্ষিক রেজাল্ট জমা দিতে এসে অনেকক্ষণ বসে থেকে শেষে অরুপের সাথে দেখা হলো। ততক্ষনে বৃষ্টি নেমে গেছে।
- ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো কোথায় গিয়েছিলেন?
- কোথায় আর যাব বলুন? তেমন তো জায়গা নেই?
- করে নিলেই তো হয়?
- আমাকে দিয়ে হবেনা
দয়মন্তি কিছু বলতে গিয়ে চেপে যায় তারপর রেজাল্টশীট গুলো জমা দিয়ে বললো তাহলে এ বেলা যাই। পরশু তো রেজাল্ট!!
- আচ্ছা যান
দয়মন্তি চলে যাচ্ছিল আবার ফিরে এলো
শুনুন !!
-বলুন
- এভাবে জীবন চলেনা। এভাবে জীবন কাটানো যায়না! কথা গুলো বলতে বলতে দয়মন্তি উঠে দাড়ালো বৃষ্টিধারা একটু থেমেছে কিন্তু আকাশের মুখ কালো হয়েই আছে। মনে হয়না আজ আর থামবে। ছাতা মেলে দরজায় পা বাড়ালো।
অরুপ বাবু তাহলে এবার যাই। সন্ধ্যে হয়ে এলো বলে।
ঠিক আছে তাহলে যান!
নাহ্ অরুপ বলবেনা বসে যান একটু কিংবা চা খান এককাপ,এসব ওর ধাচে নেই আছে খালি জ্ঞানগর্ভ কথা।
সিড়ি পেড়িয়ে চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা, নিচে তাকিয়ে আক্কেল গুড়–ম হয়ে গেল দয়মন্তির!! রাস্তায় থই থই পানি; স্রোত বইছে, নিচের পানাঢাকা পুকুরটা ডুবে গেছে। ফিরে এলো দরজার সামনে।

-এবেলা বাড়ি না গেলে পরে তো আর যেতে পারবেন না, অরুপ এই কথা বলতে বলতে সামনের জানালায় তাকালো, আরে রাস্তাতো ভরতি হয়ে যাচ্ছে পানিতে।
সর্বনাশ!! পানি বাড়ছে যে, ডুবতে হবে নাকি; মরন-টরনের ভয় নেই অরুপের। বিধিলিপি কি বদলানো যায়? চিন্তা এখন একটাই দয়মন্তি এখনো বাড়ি যেতে পারেনি!!
- অরুপ বাবু বাড়ি যাবো কি করে? এখন গেলে সাঁতরে যেতে হবে, আমি আবার সাঁতার জানিনা।
- হয়তো বোট নামবে; একটু পড়েই যেতে পারবেন
- এটা ম্যারিকা না যে দ্রুত সাহায্যের জন্য বোট নামবে; এটা মফস্বল এলাকা।
- হয়তো আপনাকে নিতে বাড়ি থেকে লোক আসবে।
- কি করে আসবে, সাঁতরে!! কাকাবাবু বড্ড বিশ্বাস নির্ভর লোক, সে জানে অরুপ বাবু তার খুব ভালো মানুষী বোকারাম ছাত্র। আর যাই হোক দ্রুপদীর বস্ত্র হরণ করার সাহস তার হবেনা।
দয়মন্তি কিছুক্ষণ বসে রইলো ; পানিতে গ্যাসের লাইন ডুবে গেছে, বাতিটাও হঠাৎ তাই নিভে গেল। মোম জ্বাললো অরুপ।
ভজহরি নেই এক সপ্তাহ বাড়ি গেছে। আজকাল তাই হাত পুড়িয়ে তাকেই রাঁধতে হচ্ছে। উপায় নেই, লক্ষী ছাড়া ঘর এলোমেলো হয়ে আছে,বিচ্ছিরি কান্ড!! দয়মন্তি ভেতরে এসো বসলো।
‘রান্নার আয়োজন করছেন নাকি’
- হ্যা, রাতের,কেরোসিন নেই। মোম ও শেষ হয়ে আসছে। আজ বোধহয় বাতি জ্বলবে না তাই রাত হবার আগেই রান্নাটা করতে হবে। তাছাড়া বৃষ্টি কমে এসেছে আপনাকের তো যেতে হবে!!
-তারাতে চাইছেন নাকি? বসে ছিল দয়মন্তি ছট করে উঠে দাড়ালো, ছাতা মেলে সোজা রাস্তায় তখনি আবার ঝুপ বৃষ্টি নামলো।
রান্নাঘরে চুলো জ্বালাতে গিয়ে চোখ জ্বলে উঠলো, অরুপের মনটা দু’ডানার চিল হয়ে গেল, নিচে যা পানি জমেছে। দয়মন্তি যেতে পারবে বলে তো মনে হয়না। অথচ কি করবে ও, এখানে রাখাও তো বিপদ !!

ছাতা হাতে নিয়ে নিচে নামলো। অন্ধাকার হয়ে গেছে চোখ তাই বেশি চলে না, চোখের জমিনে কিছুতেই চোখ পড়লো না দয়মন্তিকে, পানিতে ভেসে গেল কি ? রঞ্জিত বাবু কে কি বলবো?
কিছুটা সময় ভেবে-টেবে এসে ঘরে ঢুকতে যাবে ; দূরের বারান্দায় কে দাড়িয়ে? দয়মন্তি’ ভিজে শাড়ীতে হাতে ছাতা নেই, হাওয়ায় উড়ে গেছে।
- আসুন ঘরে আসুন?
- আপনি যান বৃষ্টি থামলে চলে যাবো।
- পানিতে পড়লে আপনাকে তো আর পাওয়া যাবেনা।
- সেও ভালো পাথরের গায়ে ফুল হতে হবে না।
- আসুন তো !
ঘরের ভেতর ঢুকে মাথার চুল ঝাড়তে ঝাড়তে দয়মন্তি বললো , ভিজে কাপরে গায়ে জ্বর আনব নাকি একটা শুকনো কাপর দেয়া যাবে?
মেয়েদের কাপড় এখানে আসবে কোত্থোকে? আমি তো প্যান্ট-লুঙ্গি ছাড়া কিছু পড়ি না, -এবার তাহলে নিচে নামতে হয়!
- কেন?
- ও পাশের কারো বাড়ি থেকে শাড়ি নিয়ে আসি!
- কি বুদ্ধি বোকার!! বে-কার তালপাতা আর কি? লোক না জানালে হচ্ছেনা বুঝি? নিজের শুকনো কাপর দিন?
- আপনি এক মিনিট দাড়ান?
- দাড়িয়েই তো আছি এবার কি পটের মুর্তি হতে বলছেন?
অরুপ ছুটে গেল ভজহরির ঘরে ওর প্যাটরা খুলে কালোরঙ্গা একটা শাড়ি পেল; তাই নিয়ে এল।
ব্যাপার কি ঘরের ভেতর মেয়েছেলের শাড়ি; বলি কিছু-টিছু কেস্ আছে নাকি?
অরুপ মাথা চুলকে বলে আরে নাহ্, ভজহরির বউ কদ্দিন আগে যে এসছিলো, ফেলে গেছে আর কি?
শাড়ি চেঞ্জ করতে গেলাম, ভাষ্কর্য হয়েই এখানটায় থাকবেন যেন।
সিগারেট জ্বালালো অরুপ, ধোয়া ছাড়লো মুখ টিপে টিপে। দয়মন্তির গলায় যা ঝাজ। যাই হোক ‘এই সময় সিগারেট খাওয়া তার নেশা’।

খুব ভারি বর্ষণ হচ্ছে। দোচালা ঘরটাকে দুমড়ে-মুচড়ে দেবে।
‘আমার দিকে চোখ তুলে একদম তাকাবেন না? শাড়ি না হয় পাল্টেছি কিন্তু ভেজা জামা, কি করবো? তাই আপাতত শাড়ি দিয়েই।
দয়মন্তি চুল ছেড়ে বিছানায় বসলো।
অরুপ রান্নাঘরের দিকে পা বাড়িয়ে বললো, জ্বর না বাধাঁতে চাইলে তোয়ালে জড়িয়ে নিতে পারেন? আবার ন্যাকামো থাকলে দরকার নেই; ওটা আমি ব্যাবহার করি কি-না।
- হয়েছে থাক লাগবেনা,এমনি চুল শুকাবে।
চুলা জ্বেলে রান্নার আয়োজন করলো অরুপ। বৃষ্টি আজ থামবে না,,ভেতর ঘরের আলো যে কখন নিভে গেছে বুঝতেই পারেনি ও উঠে দাড়াতেই ভয় লেগে গেল! ঘর আধার! দয়মন্তি কোথায়? -এই যে শুনছেন?
- হুম ! ভয় নেই! পেছনেই আছি। রান্না করুন।
- দেয়ালের ভুত হওয়া হচ্ছিল নাকি? দেয়াল সেটে দাড়িয়ে আছে দয়মন্তি।

তিন.
ওদের খাওয়ার পরপরই ঘরের সব আলো ফুরিয়ে এলো। একটা তেলের প্রদীপও নেই যে আজ জ্বালাবে। টর্চ নেই, ভরসা হলো দেশলাই, কাঠি আছে মাত্র পাঁচটা।
এখানে পানি খুব উতলা, এই টিলা ডুবে যেতে পারে পেছনের যে বর্ষণ হচ্ছে পাহাড়ে, পানির স্রোতে স্কুল সহ ভেসে যেতে কোন বাধাঁই লাগবে না।
দয়মন্তির মুখে এসব শুনে কিছুটা ঠান্ডা হয়ে গেছে অরুপ।
বিছানা একটা মেঝেতেই শুতে হবে তাকে।
নিন শুয়ে পড়–ন বলে মেঝেতে শুয়ে পড়লো ও। চুল বেঁধে দয়মন্তি খাটে শুয়ে পড়লো । প্রচন্ড রকমের বাজ পড়ছে ঘর কেপে উঠছে। বুকে দিদ্রিড়িম করে লাগছে দয়মন্তির। কেটে যাচ্ছে একটু একটু করে ভয়ানক প্রহর ভয় তাড়াতেই হয়তো দয়মন্তি বললো Ñ – কেন?
- কামড় দেব!
- কি বলেন?
- হুম!
অরুপ চুপ করে গেল।
‘ কি হলো হাত দেন? আমার ভয় করছে ! আপনার হাতটা ধরবো?
অরুপ হাতটা বাড়িয়ে দিল। শীতল হাত, উত্তাপ নেই; কেমন যেন সাপের মতো।
- মেঝেতে পানি জমে যাচ্ছে, দাড়িয়ে থাকতে হবে মনে হচ্ছে?
- তাই থাকুন, এখানে শোয়ার ধান্দা করা যাবেনা। শরীরে শরীর লাগলে ঘুম হয়না আমার।
এভাবেই কাটলো বেশ কিছুক্ষণ। শেষ পর্যন্ত দয়মন্তির পাশেই শুতে হলো অরুপকে। শর্ত একটাই গায়ে গা-লাগানো যাবেনা।
দয়মন্তি নীরবতা ভেঙ্গে বললো, আপনার হাত এতো ঠান্ডা কেন? হঠাৎ কোথাও বাজ পড়লো হাতটা শক্ত করে ধরলো পুনরায়। অরুপ ঠান্ডা হয়েই ছিল একটা ছোট্ট দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো, যার জীবনটাই ঠান্ডা হয়ে আছে, যার কোন উত্তাপ নেই, তার হাত তো ঠান্ডা হবেই।
- তো উত্তাপহীন ভাবে এখানে পড়ে আছেন কেন? আজ যা স্রোতের তান্ডব মরেও যেতে পারেন!
- না হয় গেলাম, কিন্তু এখানে থাকা ছাড়া যে আমার কোন উপায় নেই
- সত্যিই

ঘরের একপাশে পানি জমে গেছে। প্রচন্ড বর্ষন হচ্ছে। ঘর কাপানো বজ্র দানবের শব্দ।
- শুনছেন ওপাশটায় ফিরুন? ভয় করছে আমার ! দয়মন্তি তরল কন্ঠে বলে গেল। অরুপ উল্টো দিকে মুখ ফেরালো, পেছন থেকে দয়মন্তি ওকে ধরলো । আবারও প্রচন্ড কাপুনি দিয়ে কাছে কোথাও বজ্রপাত হলো। মনো হলো পুরো ঘরটা যেন দুলে উঠলো।
মিনিট দশেক এভাবেই থেকে আস্তে আস্তে করে নিজেকে সড়িয়ে নিল দয়মন্তি, তারপর বললো আসলেই তুমি অন্যরকম একটা ভালো মানুষ এই উত্তাপেও এভাবে উপেক্ষা করলে……….।
দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লো অরুপ
-এমন ঠান্ডা হয়ে থাকলে কিভাবে একটুও উত্তাপ জাগলো না? নাকি সকাল হবার আগেই মারা পড়তে পারে এই ভয়ে!

দীর্ঘ রাতটা যে কখন দীর্ঘ থেকে স্বল্পতায় নেমে এলো ঘুম ভাঙ্গার আগ পর্যন্ত অরুপ বুঝতেই পারলো না, চোখ ফেলা যায়না, দয়মন্তির বুকের কাপর সরে গেছে; শরীরে শিরশির উঠে আসবার আগেই ঘর ছেড়ে বাইরে চলে এল।
চারপাশটাকে যেন কোন দানব এসে তছনছ করে দিয়ে গেছে। পানি নেমে আসছে আস্তে আস্তে। এ যাত্রায় বেচেঁ গেল। সত্যিই পাশে একজন কেউ থাকা প্রয়োজন নয়তো বেচেঁ থাকাটা কষ্টের হয়ে দাড়ায় !! একা এ ঝড়ের রাত পাড়ি দেয়া হয়তো হতোইনা , হয়তো স্রোতে ভেসে যেতে হতো।

দৌড়ে ঘরে ছুটে এলো অরুপ। বিছানায় দয়মন্তি তখনও ঘুমুচ্ছে।
ওর মুখের উপর ঝুকে বললো, এই মেয়ে আমার ঘরের ঘরনী হবে?
হঠাৎ কানের কাছে কথা শুনে হকচকিয়ে তাকালো দয়মন্তি। অরুপ বললো তুমি বধূ হবে?
‘ঠোট টিপে হাসলো ঘুমচোখ নিয়ে’ তারপর বললো কার ঘরনী হব? তোমার?
- তোমার মতো পাথরকে করবো বিয়ে?
- পাথরের জীবনটা তুমিই সাজাতে পারবে?
- পারবো না!!
- পারতে তোমাকে হবেই

সূর্যের উত্তাপ গগন ছড়াবার আগেই অরুপের চোখ জোড়া ঝাপিয়ে পড়লো ওর চোখে।<img

গল্পঃ * * অ পূ র্ন * * ১ম পর্ব

 

গল্পঃ * * অ পূ র্ন * * ১ম পর্ব



০১.
প্লাটফর্ম থেকে চোখ ঘুড়িয়ে এনে সামনে তাকাতেই দেখি একটা তরুনী মেয়ে সিটে ব্যাগ রেখে সবে দাড়িয়েছে।
হাত পাখা ও একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল সহ।
ট্রেন কামরার ফ্যান গুলো ঘুড়ছে না। জানিনা কেন বন্ধ হয়ে আছে। নোনা ঘাম গুলো গড়িয়ে পড়ে ঘাড়ের পাশটা হয়ে শার্ট ভিজছে আমার।
কিচ্ছু করার নেই। হাত পাখাটা আনতে ভূলে গেছি সাথে পকেট টিস্যুও নেই। শার্ট ভিজছে আমার।
হাত পাখাটার দিকে নজর পড়তেই; “একটু পাখাটা দেবেন এই নামক শব্দের অনুভূতিটা উকি দিচ্ছে”বারংবার।
বোধ করি আমার চোখে চোখ পড়তেই সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে সে।
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। এই গরমে হাত পাখাটা হাত করার ধান্দাটা মাথা থেকে নড়ছে না। কি,করে যে বলি। ও দিকে মেয়েটা ততক্ষণে বসে গেছে সিটে।

ট্রেন আজ দু’ঘন্টা লেট। ন’টার জায়গায় এগারোটায় ছাড়ছে। ভীড় নেই বললেই চলে। মাত্র চল্লিশ মিনিটের পথ। ময়মনসিংহ যাবো। বিশেষ কোন কাজ নেই এমনি; সাথে ছোট্ট একটা ব্যাগ ছাড়া কিছুই নেই। কালকেই আবার ফেরত আসবো।
তরুনীটিও সাথে তেমন কিছু নিয়ে বসেনি, শুধু একটা ব্যাগ ছাড়া। দেখে মনে হয় না দূর যাত্রায় যাবে।
আমার চোখ তাকে দেখছে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে। নীল কালো রঙ্গের ডোরাকাটা শাড়িতে সাদাপাড়। মুখে বয়সের ছাপ সবে পড়তে শুরু করেছে। খুব সুন্দর না হলেও মুখমন্ডলে সুন্দর্যের আকারটা কিন্তু বেশ। বুদ্ধিমত্তার একটা ছাপ আছে মুখে। কপালে টিপ নেই থাকলে ভালো লাগতো। মুখে তার ছোট্ট একটা অতৃপ্তি কাজ করছে। আমার চোখ দেখতে দেখতে; মেয়েটা হাত পাখা নিয়ে দোলাতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।
হাতপাখার আশা ছেড়ে জানালাটা খুলবো ভাবতেই দেখি মেয়েটা পাশেই হাতপাখা রেখে জানালার শার্শি ধরে টানছে,এই সুযোগে হাত পাখাটা নিলাম। জানালা খোলা হলেও বাতাস কিন্তু আসছে না। বাইরের আকাশটা ঘুমোট ভাব ধরেছে আজ রোদ নেই, মেঘ নেই কিন্তু ভ্যাপসা গরম লাগছে।
মেয়েটা কিছু বলার আগেই আমিই বলে বসলাম কিছু মনে করবেন না। আপনার হাতপাখাটা একটু নিয়েছি; যা গরম পড়েছে না। শরীরটা তো জ্বলছে মরিচের মতো। বাতাস তো উত্তর বঙ্গে চলে গেছে সব তাই পাখা দোলানো আর কি।
ঠিক বলেছেন বেশ গরম আজ, বলে মেয়েটা ঠোট টিপে বললো কোথায় যাবেন ময়মনসিংহ। আমি বললাম হ্যাঁ আপনি? আমিও যাবো। বেশ তাহলে তো ভালই হলো।
মেয়েটি বসতে বসতে বললো আপনি থাকেন কোথায়?
-উইল কিংসন রোড।
-মাধবী লতা বিল্ডিং এর কোন পাশে।
- দক্ষিনে, চিনেন দেখছি আপনি কোথায় থাকেন?
-রিভার ষ্ট্রিট; আমি এখানে খুব কম থাকি; একাদশ পাশ করবার পর এখন কলকাতার নাগরিক হয়ে আছি।
- তাই তো চিনতে পারিনি।
নাম জানতে চাইলাম বললো শ্যামা সে অবশ্য আমার নাম জানতে চাইলো না। আমি অবাক হলাম না। এমনটি হয়। হতে হয় কখনো কখনো। কথা আর এগোলো না। আজকাল আমিই কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি।
হাতপাখার বাতাসে খানিকটা শীতলতা পেলেও গরম কিন্তু গেলো না। ভদ্রতা বশত মিনিট পাচেঁক পড়েই ফিরিয়ে দিলাম হাতপাখা।

ট্রেন চলছে মাঝারি স্পিডে, ব্যাগ খুলে পত্রিকা বের করলাম। একসাইড ভাজ করে হাতপাখার আকার করে দোলাতে লাগলাম গরম কাটছে না।
শ্যামা আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বললো আজকের পেপারটার এ,কি হাল করছেন?
না আজকের না এটা, কালকের বাসি পেপার।
একটু দিন তো পড়ি। হাতপাখাটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে পেপার নিয়ে নিলো। যা হোক ভালোই হলো বলে দোলাতে লাগলাম।
একটা ষ্টেশনে এসে থামলো ট্রেনটা আমি নামতে গেলাম কিন্তু মাথাটা আবার মনে করিয়ে দিলো পানির বোতল তো আছে পাশের জনের কাছে। নিচে গিয়ে কি হবে।
একটু পানি খেতে পারি? নিচে আর নামতে হলো না।
বেশ চঁটপটে মনে হলো মেয়েটাকে। পানির বোতল দিলো কুন্ঠা বিহীন ভাবে। এই না হলে মানুষের জন্য মানুষ।

০২.
শ্যামা এক মনে পত্রিকা পড়েই চলেছে। আমি দুলিয়ে দুলিয়ে বাতাস করছি । ঝিমুনি আসছে আমার। তন্দ্রামতন একটা ভাব তার কারণ কাল সারারাত ঘুমুতে পারিনি। আর ঘুমুতে না পারার একটা কারন হলো। রাতে পেপারে একটা গল্প পড়ে মনের ভেতর খচখচানি শুরু হয়ে গেছে। গল্পটার ভেতরের চরিত্রটা আমার খুব চেনা চেনা লাগছিলো। কিন্তু চিনতে না পারার যন্ত্রণাটা আবার আমাকে কুড়েঁ কুড়েঁ খাচ্ছিল। যে গল্প গুলো মাথায় ঢুকে যায় তা নিয়ে আমার অস্বস্থি বাড়ে ধীরে ধীরে যখন কিছুতেই এর সুরাহা না করতে পারি। আমি খুব বেশি পরিমানে ভাবতে পারি অকারনেই আকাশ থেকে কাঠরোদ্দুরে মেঘ নামায় আমার চিন্তা’রা। তাই কাল যখন পড়েছি অর্ধেকটা তখন বুঝেছি গল্পের শেষ পরিনতি করুন হবে আর সেটা পড়লে ভাবাভাবি টা আমার কদ্দিনের জন্য পাঁকা হয়ে দাড়বে।
কিন্তু না পড়ার কারনে কিছুতেই ঘুম আসেনি। রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সকালে ময়মনসিংহ চলে যাবে বন্ধুদের সাথে কথা বললে হয়তো বিষয়টা ভুলে যেতে পারবো। তাই এই সকালে ট্রেনে। কিন্তু বুঝতে পারছি গল্পটা মাথা থেকে যাবেনা।
যখন এসব ভাবছি তখনি পাশে বসে থাকা শ্যামার একটা দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেয়ে তাকালাম। এ,কি মেয়েটা কাঁদছে সোজা হয়ে বসলাম।
কি হয়েছে আপনার কাদঁছেন যে চোখে কিছু পড়েছি কি?
না এমনি বলে কিছু একটা চাপা দিতে চাইলো । ভবলাম বাড়ি থেকে এসেছে মা’র কথা মনে পড়েছে বোধহয়। কিন্তু ও তো পেপার পড়ছিলো। তাছাড়া আজকাল কাদাঁকাটির পাট চুকিয়ে আসছে ধীরে ধীরে তবে কি !!
তবে কি !! সেই গল্পটা পড়ে ফেলেছে;
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কাঁদছেন যে, ও কিছু বলবো মুখটা উপরে তোললো
কোন রকম ভনিতা না করে দু’ হাতে চোখ মুছতে মুছতে বললো একটা গল্প পড়ে কাদঁছি। আমি এবার অবাক হলাম না।
বুঝলাম আমার সিমপ্যাথিটা ওকেও পেয়েছে ।
গল্পটা শেষ করেছেন নাকি? শ্যামা মাথা নেড়ে বললো হ্যাঁ আর তাইতো চোখের পানিটা ধরে রাখতে পারিনি। আমি বললাম সত্যিই গল্পটা বেশ করুন কাল সারারাত ঘুমুতে পারিনি এ জন্য। কিন্তু সত্যি বলতে কি জানেন আমি গল্পটা শেষ করতে পারিনি কষ্ট লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো একটা কাচের টুকরো বুঝি এ পাশ দিয়ে ঢুকে ভেঙ্গেচুরে ও পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন কষ্টটা ঝাপটে ধরা আতংকের মতো। আমাকে সারারাত গল্পটা ধরে রেখেছে। যেটুকু পড়েছি; তার বাকীটুকু পড়লে আমিও নির্ঘাত কেঁদে ফেলবো। তাই পড়বার সাহস পাইনি। কিন্তু গল্পটা মাথা থেকে কিছুতেই সরাতে পারিনি সারারাত। আমার মুখের কথা সরতেই দেখলাম শ্যামা হাফ ছাড়লো একটা। উঠে দাড়িয়ে চুলের ক্লিপ খুলে দিয়ে চুল গুলো ছেড়ে বসলো। চুলটা বেশ লম্বা তবে তাতে একটা রুক্ষ ভাব রয়েছে। কালোর ভেতর হালকা লালচে লাগছে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে শ্যামা আবার মুখ খুললো। গল্পটা পড়ে যতখানি কষ্ট লেগেছে তারচেয়ে বেশি কষ্ট লেগেছে গল্পের লেখকটার জন্য কেননা এটা তার নিজের গল্প কিনা।
আমি কিছুটা অবাক হলাম। আপনি কি করে জানলেন চেনেন নাকি?
শ্যমা চুপ হয়ে গেল কিছু বললো না।
আমি আবার বললাম এই লেখকের গল্প আমি প্রায়ই পড়ি পেপারে মাঝে মাঝে কিছু লিটল ম্যাগে। একটা ছোট আকর্ষণ রেখে গল্প গুলো শেষ করেন তিনি। তিনি সহজ ভাবে বেশ লিখতে পারেন। আর সবচেয়ে মজার বিষয় তার বেশ কিছু চরিত্রে মাঝে মাঝে নিজেকে আবিস্কার করি। লেখকের ঠিকানা পাইনি নয়তো জিজ্ঞেস করতাম। আমি থামলাম।
শ্যামা পত্রিকাটা আমার হাতে দিয়ে বলতে লাগলো এই লেখক আড়ালে এক ভিন্ন মানুষ। আপনাকে একটা গল্প বলি তাহলেই বুঝতে পারবেন। পত্রিকা ভাজ করে হাটুর উপর রেখে নড়েচড়ে বসলাম। গল্পটাতে মজা লাগতে শুরু করেছে মাত্র। রোদ হঠাৎ করে মরে গিয়ে হাওয়া আসতে শুরু করেছে মাত্র। হাওয়া চুল উড়িয়ে এনে ফেলছে হাতে। একটু হাত পাখাটা দেবেন?
আমি ফিরে চাইলাম। দিলাম। হাত পাখাটা ভাজ করে ব্যাগে রাখলো। শাড়ীর আচঁল টেনে সামনে এনে বসলো। যে ষ্টেশনে আছি এখন; সেখানে ভালো চা পাওয়া দুস্কর ওরা গরম পানিকেই চা বলে তাও আবার চিনি কম পানশে মার্কা।
ব্যাগটার উপর পত্রিকাটি রেখে জানালার দিকে তাকিয়ে বললো এবার শুরু করা যাক। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মাথানেড়ে বললাম হ্যাঁ শুরু করুন।
-আপনি কি আমাকে বাচাল টাইপের কিছু ভাবছেন জানা নেই শোনা নেই গল্প বলতে শুরু করে দিলাম।
-না , এরকম ভাববো কেন ? আজকাল ভাবাভাবি খুব একটা কেউ করেনা। আপনি বলে যান দ্বিধাহীন ভাবে। আমি শুনবো। আর তাছাড়া গল্পটা তো গল্প থেকেই শুরু হচ্ছে
- ঠিক আছে কথাটা ভালো লাগলো।

০৩.
বছর পাচেঁক আগে ইউ এন্ড আই রেস্তোরার পাশে যে বুক হাউসটা দেখেছেন সেখানে একজন হকার নিত্য বাক্স ফেলে পেপার বিক্রি করতো ঠিক তারই পাশে এখন যেখানে বিউটি পার্লারটা আছে সেখানে একটা তেলেভাজার দোকান ছিলো ও লোকটা কিন্তু আবার বাক্সে ভরে আইসক্রিম বিক্রি করতো। আমাদের নগরে যে ভালো আইসক্রিমের দোকান নেই এটা নিশ্চই আপনাকে বলতে হবেনা। আমি খানিকটা মাথা দুলিয়ে বললাম হ্যাঁ আপনি থামবেন না। বলতে থাকুন।
শ্যামা আচঁলটা ধরে নিয়ে আবার শুরু করলো।

চলবে………………………………………