[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

তুমি নীল প্রজাপতি হও, আমি রক্তজবা হয়ে যাই


তুমি নীল প্রজাপতি হও, আমি রক্তজবা হয়ে যাই

শরতের নাম যদি দেই বৈশাখ,
দখিনের জানালাটা অবিরাম যদি রাখি খুলে,
মৃদু হাওয়া ঘরে ঢুকে ঝড় হলে
বেণীর বাঁধন যদি খুলে যায়, আর আমি রক্তজবা হয়ে যাই,
কেমন হবে বল তো?

দুপুরে স্নানের পর আরশিতে ভেসে ওঠা প্রিয় ভ্রু-জোড়া
মেঠোপথ-জোছনার, মোম-মেয়ে আর আগুনের কথা বলে।


চিবুকের তিল আর খালি পায়ে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া,
রূপকথা হয়ে ওঠে, রাতে ও দুপুরে, রাত্রি দুপুরে।
তপ্ত ঠোঁটের ‘পরে নেমে আসে এক জোড়া ঠোঁট,
উদাসী ডাহুক এক ডেকে নিয়ে যায় বহুদূরে …

নীলাচল পাহাড়ের ছেলে! এই নাও রক্তজবার লাল ;
এসো, তুমি নীল প্রজাপতি হও,
তোমার পাখার নীলে শুদ্ধ হোক আকাশ আমার,
আবারও দু’জনে চলো খালি পায়ে হেঁটে যাই পাহাড়ের পথে,
পেছনের মেঠোপথ হয় হোক পুড়ে ছারখার।

আমাদের পরিচয়



আমাদের পরিচয়

বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ধ্বনি হচ্ছে, শব্দ হচ্ছে না

 

ধ্বনি হচ্ছে, শব্দ হচ্ছে না


কাটা-শ্বাসনালী থেকে
বেরুনো বাতাস এসে
ঝাপটা মারছে ছুরির গায়ে;
সেই ফাঁকে, সেই প্রাণের ঘর্ঘরে,
বায়ুপ্রবাহের অপচয়
রোধকল্পে, সম্ভবত -
খিঁচে উঠছে পরাস্ত শরীর।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
অসংখ্য রঙিন বেলুন
শব্দবুদ্বুদের মতো
উড়ে উড়ে ফেটে পড়ছে
অনিবার্য অর্থহীনতায়।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
লেগে-থাকা রক্তের উপরিতল
শুকিয়ে মসৃণ, ম্যাট-লেমিনেটেড!
সামনে ছিল নীলাকাশ, একটু আগেও,
শাদা মেঘ, কালো-কালো পাখি…
অকস্মাৎ বিস্তীর্ণ হলুদ!
যেন দুনিয়ার সব
সর্ষ্যাক্ষেত আকাশে উঠেছে।
আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি,
এ-বাতাস নেহাৎ বাতাস নয়;
খাঁটি বাংলা, আ মরণ, এ যে সমীরণ!
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
অন্তরা স্টুডিও পাশে রেখে
ক্লান্ত প্রবীণার মতো
গোরস্তানমুখি পাকা-গলি,
একতলা বাড়ি, জাল-দেয়া জান্লা
ছোট্ট একটা ছাদ,
লোহার মই দিয়া ছাদে ওঠা যেত…
তখন, সবে কলেজগোয়ার্স,
ব্যাঙাচির লেজ খসে পড়েছে কেবল!
এমন রঙিন, বিবেচনাহীন দিন, রাত্রি…
অসংকোচ এমন মহান!
রিকশায় উঠলেই মনে হত
বামপাশে প্রাণ নিয়ে স্বর্গে উড়ে যাচ্ছি,
একবার হাত ধরলে, সারাদিন
আর কিছুই ধরা যেত না!
সেই অধরা দিনের ছবি
আমি ফের দেখতে পাচ্ছি,
একজোড়া মাধুর্যহীন,
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাঁটুর নিচে
দ্বিখণ্ডিত হ’তে হ’তে
আমি যেন শুনতে পাচ্ছি
কারও ফিসফিস,
কারও বিহ্বল, ছলছল জল:
‘রাত্রে যাওয়া হবে না, ট্রেন থাকুক…
কথা শোনা লাগে… কী কুয়াশা…
দিন-দিন বয়স তো কমছে না!
আমি কিন্তু ঝামেলা বাধাবো…’
‘মামী শুনবে!’ ‘না, আম্মা ঘুমাচ্ছে;
আপনাকে একবার তুমি বলি?’
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
কাটা-বন্দুকের
বেকার কার্টিজের মতো
ভ্রান্ত নিশানায় ধেয়ে যাচ্ছে
আমার প্রায়-কবন্ধ দেহের
উচ্চারণচেষ্টা সমুদয়;
আমি যেন শুনতে পাচ্ছি,
মানুষের চিরায়ত
আর্তচিৎকারের মতো,
হাত-চাপা গোঙানির মতো,
কাটা-শ্বাসনালী দিয়ে
বাতাস বেরুচ্ছে; ধ্বনি হচ্ছে,
কিন্তু শব্দ হচ্ছে না।

উচ্চরণ


উচ্চরণ

অন্ধকারে ডানা মেলি, মাথার ভেতর আরও অন্ধকার জমা।
মনে হচ্ছে ম’রে যাচ্ছি, ঝ’রে যাচ্ছে জল…
জলে ভেসে-আসা এত বাক্য-সিংহাসন, এত শব্দ-পরিক্রমা
সকলই নকল স্বপ্ন? - খল, সবই খল!
পাঁজরে, পকেটে ভরা সেই হাসি, সেই মুখ অক্ষম-অক্ষমা,
বিপণন-ব্যস্ত-দিনে নিতান্ত অচল।
তবে কি যাত্রাই বৃথা, অনর্থক, নষ্ট, অসম্বল?
দূরের পাহাড়ে ছিল চূড়ায় দুঃখের হাতছানি, প্রলোভন;
অগম্য, অনতিক্রম্য, অ-ছোঁয়ার নেশা।
তার লোভে, আমার ভেতর থেকে বন্ধুদের বিশ্বাসভাজন
কেউ একা ফস্কে গেছে, ভেবেছে অন্বেষা
মানে সমুদ্রমন্থন; ঝিনুকের পাল্লা খুলে মুক্তা-আহরণ
ছাড়া ভিন্নতর কিছু, অন্য কোনও পেশা।
জেনেছে মরার মধ্যে মিশে থাকে বাঁচা-ও হামেশা।
এবং পাহাড় তার নির্লিপ্ত শীর্ষের সোনা রেখেছে উঁচিয়ে;
অবিরাম প্রজ্বলিত অনন্ত অশেষ
সেই আভা, সেই লাভা, সেই প্রণোদনা তীব্র ছড়িয়ে ছড়িয়ে
ভরেছে পতঙ্গ, ঘাস, মাটি নির্বিশেষ।
সমবেত আলোলিপ্সু হাত-পা সকল সেই প্রেরণা ভাঙিয়ে
খুঁটেছে খাদ্যের কণা, রতির উদ্দেশ!
পাদদেশে পাওয়া গেছে প্রাণীদের ত্যক্ত অবশেষ।
আমি ওই পাদদেশে সন্তুষ্ট থাকিনি,
যেখানে সবুজ ঘাস, ছাগলের বিচরণ, ফুল্ল সেমিনার;
যেখানে নিতম্বদম্ভে বিদ্যোৎসাহিনী
জীপে, ও জীপার খুলে মেলে ধরে ভালো মুখ, ভদ্র ব্যবহার;
যেখানে হাতের সুখে পায়ের কাহিনী
লিখে-লিখে মঞ্চ ভরে ভ্রাতা-ভগ্নি, ঘৃত, অগ্নি, পর্নো-পরিবার -
আমি তার পাশ কেটে ছুঁতে গেছি চূড়ান্ত তোমার।

একটা মুখোশ


একটা মুখোশ


একটা মুখোশ প’রে আছি।
দেখা যাচ্ছে, শ্রুতিও সজাগ;
মনে হচ্ছে মুখোশটা মুখ
হয়ে উঠছে, মিশে যাচ্ছে দাগ।
ভালোই তো ধাবমান সব,
চলমান, ঢলোঢলোমান;
গতিশীলতার গর্ত ঘিরে
নিরত নিযুত হন্যমান।
আমি দেখি, আমাকে দেখে না -
কত বড় বাতেনি ব্যাপার!
কত দূর, কত আপেক্ষিক
মুখোশের ওপার, এপার!
এমন মুখর চারপাশ!
মুখে মুখে সুখের প্রলেপ,
দিকে দিকে বিবাহবার্ষিকী,
ঘরে ঘরে ম্যারিটাল রেপ।
অথবা প্রাপ্তির দরাদরি :
কার কত চাহিদা বাজারে,
ছুটে যায় কার কত শর
জনে জনে, হাজারে হাজারে;
অথবা সাত্ত্বিক রসিকতা,
সুশীলস্য সুতৃণ ভোজন,
আলুসিদ্ধ, পেঁপেসিদ্ধ, মুলা…
প্রথাসিদ্ধ জীবনাচরণ।
মুখোশের অন্তরাল থেকে
নিরাপদে ঘন দৃষ্টিপাত :
কার কীরকম পোয়াবারো,
কার বা কেমন কিস্তিমাৎ!
সবারই কিছু না কিছু থাকে।
দেখাটাও একধরনের -
বলা যেতে পারে - সঞ্চয়ন;
দৃষ্টি গেলে, থাকে তার জের।
মর্জিমাফিক ডায়ানামিক,
বেশ কিন্তু সুন্দর হয়েছে!
পাকেচক্রে, পাষাণে হড়কে
মুখোশটা মুখ হ’য়ে গেছে।

উৎসর্গ


 উৎসর্গ


আমরা আলোর সন্ধানে বেরুলাম।
কোথায় আলো?
নদী-সমুদ্র-পর্বত পেরিয়ে, আকাশ-নীলিমা অতিক্রম করে
আমরা চলে এলাম
সত্য ও সুন্দরের প্রতীক কয়েকজন মৌন মনীষীর কাছে।

হাত দিয়ে তাঁদের দেহ স্পর্শ করতেই ধ্যানমগ্ন
তাঁরা চোখ মেলে তাকালেন -
সঙ্গে-সঙ্গেই আমরা বললাম, ‘হে সত্য, আলো দাও।’
আমাদের কথা শুনে তাঁরা চোখ বন্ধ করলেন।
আর তাঁদের পবিত্র গ্রন্থের ওপরে কীসের যেন ঘন ছায়া পড়লো।
সেই ঘন আবরণের ভেতর থেকে একটুখানি মুখ বের করে
তাঁদের কেউ একজন বলে উঠলো, ‘চরৈবেতি, চরৈবেতি।’
আমরা মুখ ফিরিয়ে এগোতে লাগলাম।
পথে-পথে দূর সমুদ্রের হাওয়া এসে
শীতল করে দিতে লাগলো আমাদের দেহ।
আমরা পূত-পবিত্র এক অহিংস মানবের কাছে এসে দাঁড়ালাম।
বললাম, ‘হে অহিংস, আলো দাও।’

আমাদের বাক্যবন্ধ শুনেই সেই মহামানব চিরকালের জন্যে
এক মৌন পাথরে রূপান্তরিত হলেন।
আমরা নির্বাক, ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলাম।
এবার আমরা চলে এলাম
কুমারী মাতার সেই রক্তক্লান্ত, সুন্দর ও সাহসী সন্তানের কাছে,
বললাম, ‘হে সুন্দর, আলো দাও।’

আমাদের এর বেশি কিছুই বলতে হলো না;
সঙ্গে-সঙ্গে অন্ধকার নেমে এলো
এবং তাঁর মাথা ঈষৎ নমিত হয়ে ঝুলে পড়লো পায়ের কাছে;
পবিত্রসুন্দরের নমিত মুখমণ্ডল
আমাদের কেমন বিব্রত করে ফেললো।
আমরা আর একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে
চলে এলাম সেই বিস্ময়-পুরুষের কাছে,
যে সারা পৃথিবীর কোটি-কোটি মানুষকে
এক মোহময় বাতাসের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে।

তাঁকে বললাম, ‘হে বিস্ময়, আলো দাও।’
শুধু পেছন থেকে হাহাকারের মতো
কার করুণ দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেলাম।

আমাদের দেহ পথশ্রমে ক্লান্ত।
কতো যুগ, কতো কাল, কতো আলোকবর্ষ ধরে
আমরা সৌরপৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত অবধি
ঘুরে-ঘুরে আলোকের সন্ধানে ব্যর্থ হয়ে
এক হতদরিদ্র, উদাসীন ও অভিমানী মানুষের
কাছে এসে দাঁড়ালাম।


কেন যেন মনে হলো, আমাদের ন্যুব্জ পিঠ,
ব্যর্থতার গ্লানিতে জর্জরিত এই দেহটাতে
একমাত্র এই উদাসীন মানুষটিই প্রাণের সঞ্চার করতে পারে।
আমরা তাঁর সম্মুখে এসে দাঁড়ালাম,
তাঁকে দেখে কেন যেন মনে হলো,
তিনি আমাদের বহুদিনের চেনা।
তাঁর কাছে আসতেই আমাদের সম্পূর্ণ শরীরে
এক অত্যুজ্জ্বল দ্যুতি খেলা করে গেলো।
আমরা হাত জোড় করে বললাম, ‘হে মহান, আমাদের আলো দাও।’
তিনি চোখ মেলে তাকালেন, কিন্তু কোনো কথা বললেন না।
আমরা তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে
উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে লাগলাম।
আমাদের চোখের সম্মুখে সারা পৃথিবী দুলতে লাগলো
আমাদের সম্পূর্ণ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
একটি সীমারেখায় এসে স্থির হয়ে গেলো।
আমরা আনন্দে তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম,
কিন্তু কোথায় তিনি?
আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না,
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম, একটি পরিশেষহীন পথ
সম্মুখের দিকে প্রসারিত হয়ে গেছে…
আর সেই পথে আলোকের এতো তীব্র, ঝাঁঝালো উপস্থিতি যে,
তার প্রতিটি আলোকচ্ছটার গন্ধও
আমাদের নাকে এসে লাগছে।
আমরা ধীরে-ধীরে সেই পথ ধরে এগোতে লাগলাম।
ঠিক তক্ষুনি পেছন থেকে
কার তীক্ষ্ণ গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, ‘দাঁড়াও।’
আমরা চমকে পেছন ফিরে তাকাতেই
দেখতে পেলাম, সেই মহামানব।

তাঁর সারা মুখমণ্ডলে জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটা বিচ্ছুরিত।
আমরা কোনো কথা না বলে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তিনি বললেন, ‘এখান থেকেই ফের যাত্রা শুরু করো, আলোকের
পথ বড়ো দীর্ঘ ও বন্ধুর। তোমরা গোলকধাঁধায় ঘুরতে-ঘুরতে
ক্লান্ত ও হতাশ্বাস। এভাবে তোমরা তোমাদের প্রার্থিত বস্তু
কখনোই খুঁজে পাবে না।
আমাদের কণ্ঠ থেকে আর্তনাদ ঝরে পড়লো, ‘তা হলে আমরা
কী করবো, তুমিই বলে দাও।’

তিনি এবার স্থির ও অচঞ্চল হলেন।
তাঁর মুখ অসম্ভব রকমের গম্ভীর হয়ে গেলো,
তাঁর অত্যুজ্জ্বল দু’টো চোখের পাতা নিমীলিত হয়ে এলো,
অনেকক্ষণ তিনি কোনো কথা বললেন না।
আমরা শংকিত হয়ে পড়লাম,
তবে কি তিনি আমাদের কোনো কথায় আঘাত পেলেন?
আমরা কিছু বোঝবার আগেই তিনি চোখ খুললেন,
খুব মৃদু কণ্ঠস্বরে বললেন, ‘তোমরা আলোকের সন্ধানে এসেছো,
সে-বড়ো কঠিন কাজ, তোমরা পারবে?’
আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম, ‘হে মহান, পারবো।’

‘তা হলে তোমরা আমাকে হত্যা করো।’
‘সে কি!’ আমরা আর্তনাদ করে উঠলাম।
সেই মহাপুরুষ খুব গম্ভীর কণ্ঠস্বরে বললেন,
‘কাউকে না কাউকে তো সেই সুন্দরের জন্যে নিজেকে
উৎসর্গ করতেই হবে।’


আমরা বললাম, ‘কেউ কি নেই আর?’
‘হয়তো আছে, তোমরা তো অনেক পথ পেরিয়ে এসেছো, পেয়েছো?’
আমরা কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করলাম।
তিনি হাসলেন,
সেই হাসির মধ্যে ক্ষোভ, ঘৃণা না বেদনা
কিছুই বোঝা গেলো না।

তিনি বললেন, ‘রক্ত ছাড়া কোনো সত্যই পূর্ণ হয় না। তোমরা
আমার কাছে এসেছো, আমাকেই নাও।’
‘সে-আমরা পারবো না।’
‘তোমাদের পারতেই হবে,’ তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বললেন।
আর আমাদের হাতের দিকে বাড়িয়ে দিলেন
এক তীক্ষ্ণ ঝকঝকে ছুরি।
আমরা ভয়ে শিউরে উঠলাম।
আমাদের সম্পূর্ণ দেহের ভার অত্যন্ত হালকা হয়ে

শূন্যে ভাসতে লাগলো।
আমরা চিৎকার করে উঠলাম, ‘না।’
সেই মহামানব অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন,
আর তীক্ষè ছুরিটি নিজেই আমূল বিঁধিয়ে দিলেন তাঁর নিজের বুকে।
আমরা আতঙ্কে চোখ বন্ধ করলাম।
চোখ মেলতেই দেখলাম, সেই পবিত্র-দেহকে ঘিরে
উৎসব করছে সারা পৃথিবীর লক্ষকোটি কাক।
আমরা পবিত্র-পুরুষের পায়ের কাছে এসে বসলাম,
তাঁর রক্তের ওপরে লুটোপুটি খেয়ে,
তাঁর মুখ হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই দ্রুত ছিটকে সরে এলাম।
আমাদের দেহ অবশ হয়ে গেলো,
আমাদের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো
সম্পূর্ণ বধির হয়ে যাবার আগেই
আমরা আর্তনাদ করে উঠলাম ‘এ মৃত্যুর জন্যে আমরাই দায়ী।’
সঙ্গে-সঙ্গে কারা যেন আমাদের কানের কাছে
তীব্র চিৎকার করে উঠলো, ‘তোমরা কবিকে হত্যা করলে কেন?’
তাদের সেই চিৎকারে আমরা মূর্ছিত হয়ে পড়লাম।


যখন আমাদের জ্ঞান ফিরে এলো,
আমাদের কানে কেবল সেই বিদীর্ণ শব্দ
ভেসে আসতে লাগলো - ‘কাউকে না কাউকে তো
সেই সুন্দরের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করতেই হবে,
কাউকে না কাউকে তো…।’