[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১২

সে আমার বন্ধু ছিল



এপ্রিল২৬, ২০১২

মোবাইল ফোনটা বেজেই চলেছে তো বেজেই চলেছে। উফ! অসহ্য! আর কত জ্বালাবে আমাকে ওই ছেলেটা? সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে। বার বার লাইন কেটে দেয়ার পরও সমানে কল দিয়ে যাচ্ছে। এমন নাছোড়বান্দা জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখি নাই।
বাধ্য হয়ে অবশেষে ফোনটা রিসিভ করলাম। ‘হ্যালো’।ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল জুয়েলের গলা, ‘হ্যালো শর্মি, আমার মনটা আজ ভাল নেই রে’। তোমার মন ভাল নাই তো আমার কি? যার তার মন ভাল করার চাকরি নিয়েছি নাকি আমি? আজব! কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখ ফুটে ওকে বলতে পারলাম না। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি ভাইয়া’। ওপাশ থেকে জুয়েলের দী্র্ঘ নিঃশ্বাস পতনের শব্দ শুনলেও পাত্তা দিলাম না। সে বলল, ‘ তুই তো এখন সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকিস। আচ্ছা ফ্রি হলে ফোন দিস তাহলে’।
ছেলের কথা শুনে বিরক্তি যেন চরমে উঠল। চেপে চেপে বললাম, ‘আমার ব্যালেন্স শেষ ভাইয়া’। কেটে দিলাম কলটা। আহ, শান্তি! যাক বাবা, অন্তত আধা বেলার জন্যে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে এই আপদ থেকে। অবশ্য জুয়েল নামের এ আপদটাকে একসময় আমিই ডেকে এনেছিলাম আমার জীবনে!
কুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম আমি। কারণ আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমি বুয়েটে পড়ব। এখানে নতুন কোন বন্ধু তো হয়ইনি উলটো স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সাথেও এক এক করে দূরত্ব বাড়তে লাগল। আমার প্রেমিক ইমনকে নিয়েও সন্দেহ করা শুরু করলাম! নষ্ট হতে লাগল ওর সাথে আমার সম্পর্ক। গান পাগল আমি গান শোনা বন্ধ করলাম, পড়ার বই এর ফাঁকে ফাঁকে গল্পের বই পড়াও ছেড়ে দিলাম। একসময়কার মেধাবী স্টুডেন্ট আমি পড়াশোনাতেও লাড্ডু পেতে থাকলাম! আসক্তি জন্মাল মিগ৩৩ এর প্রতি। দিন নেই,রাত নেই সারাক্ষণ শুধু মোবাইল টেপাটেপি করতাম। ‘মিগ’ এর মত ভার্চুয়াল জীবন হয়ে গেল আমার কাছে বাস্তব! মিগ এর তথাকথিত বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি,তাদের সুখে হাসি আর তাদের দুঃখে কেঁদে ফিরি! এতদিন জানতাম হতাশ মানুষ drug addicted হয়ে যায়। কিন্তু আমি দিন দিন পরিণত হতে লাগলাম mig addicted এ!!
এমনি এক মুহূর্তে জুয়েলের সাথে আমার মিগ এ পরিচয় হল। ওর কাছে খুলে বললাম আমার অতীতের উজ্জ্বল দিনগুলোর স্মৃতি, বর্তমানের অন্ধকারময় জীবনের কথা। সব শুনে জুয়েল আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল। ওকে আমার ফোন নাম্বার দিলাম। এভাবে গড়ে উঠল আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব। ‘তোর আসলে বন্ধুর চেয়ে একজন care taker এর দরকার বেশি,বুঝলি’? জুয়েলের কথা শুনে হাসলাম আমি। ‘তাহলে তুমি আমার care taker হয়ে যাও ভাইয়া’, বায়না ধরলাম ছোট বাচচাদের মত।জুয়েল আমার বন্ধু বা care taker হতে রাজী হল। সেই সাথে জানিয়ে দিল তার জীবনের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা— পরবর্তী সপ্তাহ থেকে তার মেডিকেল কলেজে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা শুরু। তার একজন প্রেমিকা আছে, তাই আমাকে যে সে সবসময় সময় দিতে পারবে , এমন কোন প্রতিশ্রুতি সে দিতে পারছেনা। আমি সানন্দে রাজী হলাম তার শর্তগুলো শুনে। আসলে ঐ সময়টায় খুব ভাল একজন বন্ধু দরকার ছিল আমার, যে কিনা আমাকে প্রতিনিয়ত guide করে আমার বিশৃংখল জীবনটাতে শৃংখলা এনে দিতে পারবে।
‘ ভাইয়া আমি আমার ২ বছর আগের জীবনটা ফিরে পেতে চাই’,আমার এরকম কথা শুনে জুয়েল আমাকে আশ্বস্ত করল, ‘ইনশাল্লাহ ফিরে পাবি আপু। শুধু আমি যেভাবে বলব সেভাবে কাজ করে যা। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে’। জুয়েল প্রথমেই আমার জন্য যা করল তা হল আমার জীবন থেকে ও মিগ৩৩ কে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিল। বলল, ‘একা একা লাগলে আমাকে কল দিবি।কিন্তু মিগ এ ঢুকবিনা খবরদার’। সেদিনই মোবাইল থেকে মিগ ফোল্ডার মুছে দিলাম। সকাল নেই ,বিকেল নেই কলেজে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলাম আমার নতুন বন্ধুকে। যে আমি আগে মাসে ৫০ টাকাও রিচার্জ করতাম কিনা সন্দেহ,সেই আমি এখন দিনে ৫০ টাকা শেষ করে ফেলি ভাইয়াকে ফোন করতে যেয়ে!
কিন্তু একদিন কল করার পর পরই জুয়েল ভাইয়া বলল, ‘ঐ পাগলী, ফোনটা রাখতো। রিয়া waiting এ আছে,এখন কল রিসিভ না করলে আমাকে আবার বকবে,’ ফোনটা কেটে দিতেই চোখ ভরে গেল জলে! আমার চেয়ে ঐ প্রেমিকা রিয়াই তাহলে তোমার কাছে অনেক বড় তাইনা? কেন জানি খুব হিংসা হচ্ছিল রিয়া নামের অচেনা মেয়েটিকে। এক বিকেলে জুয়েল বলল, ‘ শোন,এখন থেকে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে তোর প্রিয় গানগুলো আবার আগের মত করে শুনবি,বুঝলি?’ ওর কথামত আমি আবারও গান পাগল হয়ে উঠলাম! একদিন ভোরবেলা কল দিয়ে বলল, ‘ কিরে,ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সকালটা মাটি করছিস কেন? নামাজ পড়ে পড়াশোনা করতে বস,যা’।সেই থেকে খুব ভোর থাকতেই ঘুম ভেঙ্গে যেত আমার! ‘ভাইয়া আমার না ভার্সিটিতে কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাই জান?’ কথাটা বলতেই জুয়েল বলে উঠল, ‘বন্ধু পাওয়ার জন্য আগে নিজেকে sacrifice করতে শেখা লাগে। দেখবি তখন তোর বন্ধুর অভাব হবে না’। ভাইয়ার কথা শুনে চলতেই ঠিকই কয়েকদিন পর আমার খুব ভাল একটা friend circle গড়ে উঠল!
একদিন সন্ধ্যেবেলায় জুয়েলকে কল দিচ্ছি কিন্তু ও বারবার লাইন কেটে দিতে লাগল। আধা ঘন্টা পর ফোন ধরতেই এক রাশ অভিমান ঝরে পড়ল আমার কন্ঠ বেয়ে, ‘কি ব্যাপার ফোন কেটে দিচ্ছো কেন?’ জুয়েল কৈফিয়ত দিল, ‘sorry আপু,রুমমেটের কাছ থেকে পড়া বুঝে নিচ্ছিলাম রে’। সে আমাকে কখনই বুঝতে দেয়নি যে সে কতটা টেনশন এ আছে তার পরীক্ষা নিয়ে। ওর পরীক্ষার পুরা ২ টা মাস সে আমার সাথে কথা বলেছে কোন বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়াই,আমাকে guide করেছে। ইমনের সাথে আমার দূরত্বের কথা শুনে ভাইয়া বলল, ‘ইমন তোর জন্য কি করেনি সেগুলো না ভেবে,কি করেছে সেগুলা আগে চিন্তা করে দ্যাখ’। বললাম, ‘ইমন তেমন কিছুই করেনি।তবে পরীক্ষার সময় ও নিজের পরা বাদ দিয়ে আমাকে পড়িয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাতেই বেশি ব্যস্ত থাকত’। এভাবে ভেবে ভেবে অনেক কিছুই বের করলাম,যা ইমন আমাকে ভালবাসে বলেই করে। ধীরে ধীরে ইমনের উপর থেকে আমার করা অভিযোগগুলো কমতে লাগল। আমি যেন আবারও নতুন করে ইমনের প্রেমে পড়লাম!
ছোটবেলায় টুকটাক লেখালেখি করতাম। জুয়েলের উৎসাহে লেখালেখি আবারও শুরু করে দিলাম। পাঠাতে লাগলাম পত্র-পত্রিকাগুলোতে।আর কি আশ্চর্য সেগুলা এক এক করে ছাপাও হতে থাকল! আস্তে আস্তে মাস দুয়েক পর বুঝতে পারলাম আমি আমার হারানো জীবনটা ফিরে পেয়েছি।চারপাশে বন্ধুর সমারোহ, প্রেমিকের ভালবাসা,পড়াশোনায় ভাল ফলাফল,লেখালেখি,গান আর গল্পের বই নিয়ে সাজানো সেই হাসি-খুশি প্রাণ-চঞ্চল শর্মিকে নিজের মাঝে খুঁজে পাচ্ছি আমি!
বন্ধু, প্রেম আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় জুয়েলকে খুব একটা ফোন দেয়া হতনা। আগে যেখানে দিনে ৬-৭ বার ফোন দিতাম,এখন ওর সাথে আমার কথাই হয় ৫-৬ দিন পর পর! দিন দশেক আগে সে জানাল, রিয়ার সাথে ইদানিং নাকি ওর সম্পর্কটা ভাল যাচ্ছেনা। ভাল না গেলে আমার কি করার আছে,আজব তো, আমাকে কেন ফোন করে এসব বলা হচ্ছে? খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নাই নাকি ওর? গত সপ্তাহে জানাল,তার রেজাল্ট বেরিয়েছে এবং ১ টা বিষয়ে নাকি খারাপও করেছে, ২ মাস পর আবার সেই পরীক্ষাটা দিয়ে তবেই জুয়েল MBBS পাশ করতে পারবে। কিন্তু এসব কথা আমাকে বলে কি লাভ বুঝলাম না। আমি কি ওর হয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসব নাকি?সামনে আমারো পরীক্ষা, লেখালেখি নিয়েও ভীষণ ব্যস্ততা। এর মাঝে এই ছেলের যন্ত্রণা সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে আমার খুব। এখন আমার মনের কথা শোনার জন্য ইমন আছে,উৎসাহিত করার জন্য আছে প্রিয়াংকা,তুলি,মানস,রবি,তারিন এর মত বন্ধুরা। কোথাকার কোন এক জুয়েল,যাকে কোনদিন দেখিনি,যার সম্পর্কে কিছু জানিনা,তার জন্য ফালতু কাজে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার হাতে নেই এখন!
আবারও মোবাইলটা বাজছে! নাহ।এবার দেখি সিম কার্ডটা বদল করতেই হবে। প্রচন্ড রাগে মোবাইল থেকে খুলে ফেললাম সিমটা। আঙ্গুলের সর্বশক্তি প্রয়োগে ভেঙ্গে ২ টুকরো করে ফেললাম জুয়েলের সাথে আমার সম্পর্ক,আমাদের ৩ মাসের বন্ধুত্ব!!

রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১২

পাঞ্জেরি

 

পাঞ্জেরি

 
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? 
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে? 
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে? 
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে; 
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি। 

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? 
দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে 
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে? 
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব 
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব 
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী। 
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে; 
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি। 

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? 
বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে, 
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে। 
আহা, পেরেশান মুসাফির দল।
দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে 
নিরাশায় ছবি এঁকে!
পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরে 
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে; 
একাকী রাতের গান জুলমাত হেরি! 

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে, 
দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে, 
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি 
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী। 
মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি। 
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী। 
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি, 
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি। 
ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কি 
রোনাজারি ক্ষুধিতের! 
ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের! 
ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী। 

পাঞ্জেরি! 
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি, 
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি! 
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!

অভিশাপ

 

অভিশাপ

 
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!
     ছবি আমার বুকে বেঁধে
     পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
     ফিরবে মরু কানন গিরি,
     সাগর আকাশ বাতাস চিরি'
          যেদিন আমায় খুঁজবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, -
          জাগবে হঠাৎ চমকে!
     ভাববে বুঝি আমিই এসে
     ব'সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
     ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
     শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
          বেদনাতে চোখ বুজবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

গাইতে ব'সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,
ব'লবে সবাই - "সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?"
          আসবে ভেঙে কান্না!
     প'ড়বে মনে আমার সোহাগ,
     কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
     প'ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
     অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি
          ঘন ঘন মুছবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ'রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ -
          কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
     শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
     প'ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি'!
     বুকের মালা ক'রবে জ্বালা
     চোখের জলে সেদিন বালা
          মুখের হাসি ঘুচবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

অ-নামিকা

 

অ-নামিকা

তোমারে বন্দনা করি
স্বপ্ন-সহচরী
লো আমার অনাগত প্রিয়া,
আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!
তোমারে বন্দনা করি….
হে আমার মানস-রঙ্গিণী,
অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তন বাসনা-সঙ্গিনী!
তোমারে বন্দনা করি….
নাম-নাহি-জানা ওগো আজো-নাহি-আসা!
আমার বন্দনা লহ, লহ ভালবাসা….
গোপণ-চারিণী মোর, লো চির-প্রেয়সী!
সৃষ্টি-দিন হ’তে কাঁদ’ বাসনার অন্তরালে বসি’-
ধরা নাহি দিলে দেহে।
তোমার কল্যাণ-দীপ জ্বলিলে না
দীপ-নেভা বেড়া-দেওয়া গেহে।
অসীমা! এলে না তুমি সীমারেখা-পারে!
স্বপনে পাইয়া তোমা’ স্বপনে হারাই বারে বারে
অরুপা লো! রহি হ’য়ে এলে মনে,
সতী হ’য়ে এলে না ক’ ঘরে।
প্রিয় হ’য়ে এলে প্রেমে,
বধূ হয়ে এলে না অধরে!
দ্রাক্ষা-বুকে রহিলে গোপনে তুমি শিরীন্‌ শরাব,
পেয়ালায় নাহি এলে!-
‘উতারো নেকার’-
হাঁকে মোর দুরন্ত কামনা!
সুদুরিকা! দূরে থাক’-ভালোবাসা-নিকটে এসো না।

তুমি নহ নিভে যাওয়া আলো, নহ শিখা।
তুমি মরীচিকা,
তুমি জ্যোতি।-
জন্ম-জন্মান্তর ধরি’ লোকে-লোকান্তরে তোমা’ করেছি আরতি,
বারে বারে একই জন্মে শতবার করি!
যেখানে দেখেছি রূপ,-করেছি বন্দনা প্রিয়া তোমারেই স্মরি’।
রূপে রূপে, অপরূপা, খুঁজেছি তোমায়,
পবনের যবনিকা যত তুলি তত বেড়ে যায়!
বিরহের কান্না-ধোওয়া তৃপ্ত হিয়া ভরি’
বারে বারে উদিয়াছ ইন্দ্রধনুসমা,
হাওয়া-পরী
প্রিয় মনোরমা!
ধরিতে গিয়োছি-তুমি মিলায়েছ দূর দিগ্বলয়ে
ব্যথা-দেওয়া রাণী মোর, এলে না ক’ কথা কওয়া হ’য়ে।

চির-দূরে থাকা ওগো চির-নাহি-আসা!
তোমারে দেহের তীরে পাবার দুরাশা
গ্রহ হ’তে গ্রহান্তরে ল’য়ে যায় মোরে!
বাসনার বিপুল আগ্রহে-
জন্ম লভি লোকে-লোকান্তরে!
উদ্বেলিত বুকে মোর অতৃপ্ত যৌবন-ক্ষুধা
উদগ্র কামনা,
জন্ম তাই লভি বারে বারে,
না-পাওয়ার করি আরাধনা!….
যা-কিছু সুন্দর হেরি’ ক’রেছি চুম্বন,
যা-কিছু চুম্বন দিয়া ক’রেছি সুন্দর-
সে-সবার মাঝে যেন তব হরষণ
অনুভব করিয়াছি!-ছুঁয়েছি অধর
তিলোত্তমা, তিলে তিলে!
তোমারে যে করেছি চুম্বন
প্রতি তরুণীর ঠোঁটে
প্রকাশ গোপন।

যে কেহ প্রিয়ারে তার চুম্বিয়াছে ঘুম-ভাঙা রাতে,
রাত্রি-জাগা তন্দ্রা-লাগা ঘুম-পাওয়া প্রাতে,
সকলের সাথে আমি চুমিয়াছি তোমা’
সকলের ঠোঁটে যেন, হে নিখিল-প্রিয়া প্রিয়তমা!
তরু, লতা, পশু, পাখী, সকলের কামনার সাথে
আমার কামনা জাগে,-আমি রমি বিশ্ব-কামনাতে!
বঞ্চিত যাহারা প্রেমে, ভুঞ্জে যারা রতি-
সকলের মাঝে আমি-সকলের প্রেমে মোর গতি!
যে-দিন স্রষ্টার বুকে জেগেছিল আদি সৃষ্টি-কাম,
সেই দিন স্রষ্টা সাথে তুমি এলে, আমি আসিলাম।
আমি কাম, তুমি হ’লে রতি,
তরুণ-তরুণী বুকে নিত্য তাই আমাদের অপরূপ গতি!
কী যে তুমি, কী যে নহ, কত ভাবি-কত দিকে চাই!
নামে নামে, অ-নামিকা, তোমারে কি খুঁজিনু বৃথাই?
বৃথাই বাসিনু ভালো? বৃথা সবে ভালোবাসে মোরে?
তুমি ভেবে যারে বুকে চেপে ধরি সে-ই যায় স’রে।
কেন হেন হয়, হায়, কেন লয় মনে-
যারে ভালো বাসিলাম, তারো চেয়ে ভালো কেহ
বাসিছে গোপনে।

সে বুঝি সুন্দরতর-আরো আরো মধু!
আমারি বধূর বুকে হাসো তুমি হ’য়ে নববধূ।
বুকে যারে পাই, হায়,
তারি বুকে তাহারি শয্যায়
নাহি-পাওয়া হ’য়ে তুমি কাঁদ একাকিনী,
ওগো মোর প্রিয়ার সতিনী।….
বারে বারে পাইলাম-বারে বারে মন যেন কহে-
নহে, এ সে নহে!
কুহেলিকা! কোথা তুমি? দেখা পাব কবে?
জন্মেছিলে জন্মিয়াছ কিম্বা জন্ম লবে?
কথা কও, কও কথা প্রিয়া,
হে আমার যুগে-যুগে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!

কহিবে না কথা তুমি! আজ মনে হয়,
প্রেম সত্য চিরন্তন, প্রেমের পাত্র সে বুঝি চিরন্তন নয়।
জন্ম যার কামনার বীজে
কামনারই মাঝে সে যে বেড়ে যায় কল্পতরু নিজে।
দিকে দিকে শাখা তার করে অভিযান,
ও যেন শুষিয়া নেবে আকাশের যত বায়ু প্রাণ।
আকাশ ঢেকেছে তার পাখা
কামনার সবুজ বলাকা!

প্রেম সত্য, প্রেম-পাত্র বহু-আগণন,
তাই-চাই, বুকে পাই, তবু কেন কেঁদে ওঠে মন।
মদ সত্য, পাত্র সত্য নয়!
যে-পাত্রে ঢালিয়া খাও সেই নেশা হয়!
চির-সহচরী!
এতদিনে পরিচয় পেনু, মরি মরি!
আমারি প্রেমের মাঝে রয়েছ গোপন,
বৃথা আমি খুঁজে মরি’ জন্মে জন্মে করিনু রোদন।
প্রতি রূপে, অপরূপা, ডাক তুমি,
চিনেছি তোমায়,
যাহারে বাসিব ভালো-সে-ই তুমি,
ধরা দেবে তায়!
প্রেম এক, প্রেমিকা সে বহু,
বহু পাত্রে ঢেলে পি’ব সেই প্রেম-
সে শরাব লোহু।
তোমারে করিব পান, অ-নামিকা, শত কামনায়,
ভৃঙ্গারে, গোলাসে কভু, কভু পেয়ালায়!
 

হৃদয়ে প্রেমের দিন

 

হৃদয়ে প্রেমের দিন


 

হৃদয়ে প্রেমের দিন কখন যে শেষ হয় — চিতা শুধু পড়ে থাকে তার,
আমরা জানি না তাহা; — মনে হয় জীবনে যা আছে আজো তাই শালিধান
রূপশালি ধান তাহা… রূপ, প্রেম… এই ভাবি… খোসার মতন নষ্ট ম্লান
একদিন তাহাদের অসারতা ধরা পড়ে, — যখন সবুজ অন্ধকার,
নরম রাত্রির দেশ নদীর জলের গন্ধ কোন এক নবীনাগতার
মুখখানা নিয়ে আসে — মনে হয় কোনোদিন পৃথিবীতে প্রেমের আহ্বান
এমন গভীর করে পেয়েছি কি? প্রেম যে নক্ষত্র আর নক্ষত্রের গান,
প্রাণ যে ব্যাকুল রাত্রি প্রান্তরের গাঢ় নীল অমাবস্যায় –

চলে যায় আকাশের সেই দূর নক্ষত্রের লাল নীল শিখার সন্ধানে,
প্রাণ যে আঁধার রাত্রি আমার এ, — আর তুমি স্বাতীর মতন
রূপের বিচিত্র বাতি নিয়ে এলে, — তাই প্রেম ধুলায় কাঁটায় যেইখানে
মৃত হয়ে পড়ে ছিল পৃথিবীর শূণ্য পথে সে গভীর শিহরণ,
তুমি সখী, ডুবে যাবে মুহূর্তেই রোমহর্ষে — অনিবার অরুণের ম্লানে
জানি আমি; প্রেম যে তবুও প্রেম; স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে রবে, বাঁচিতে সে জানে।

শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১২

কে তুমি বিনোদিনী


কে তুমি বিনোদিনী



কে তুমি বিনোদিনী
আজিম হোসেন আকাশ
কাব্যগ্রন্থ-তুমিহীনা সারাবেলা
কে তুমি বিনোদিনী
এত রূপ শোভায়,
আমারই মন মোহিনী।
কাছে এসো ধরা দাও
বিনোদিত মনে,
আমি এক বিন্দু ভালবাসা
দেব তোমার প্রানে।
বিপন্ন হৃদয়ে আর কত রাত
একা একা জেগে থাকা,
তুমি আসনি বলে আজো
মম হৃদয় পুরোটাই ফাঁকা।
বিবর্ণ মন দিতে পারে যতটা
আমি দেব তোমায় ততটা সুখ,
তমসার নিগূঢ় রজনীতে শতবার
ভেসে উঠে তোমারই চাঁদ মুখ।