[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]
পাঞ্চেরি প্রিয়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পাঞ্চেরি প্রিয়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১২

একা নীলাঞ্জনা আর কিছু প্রলাপ..



একা নীলাঞ্জনা আর কিছু প্রলাপ
ঘুম ভাঙ্গতেই দু এক ফালি মেঘ ছুঁয়ে যায়
আরেকটা দিন অন্য রকম ইচ্ছে ডানা
বুকের ভিতর উথাল পাথাল বৈশাখী ঝড়
শরীর ভেজা চুমুর দাগে নীলাঞ্জনা।

এক একটা দিন এমন ভাবে শুরু হয়, কোন কিছুই ভাল লাগে না। কেনো ভাল লাগে না জানি না কারণ খুঁজে পাইনি কোনদিন। জাস্ট ভাল লাগে না। ঠিক এই রকম এক একটাদিনে ঘুম ভাঙ্গলেই তোর কথা মনে পড়ে নীলাঞ্জনা।এখোনো কি তুই আদুরে বিড়াল এর মত কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকিস?

নীলাঞ্জনার বুকের তিল এ চাঁদ নেমে আয়
পাহাড় চূড়োয় দাঁড়িয়ে থাকি বিপদ সীমায়
এদিক ওদিক জল চুঁইয়ে যায় ফল্গু ধারায়
গোপন গুহায় তোর শরীরেও জল ছুঁইয়ে যায়।

যেদিন প্রথম তোর শরীরের গন্ধ নিয়েছিলাম সেদিন তোর বুকের ওই কালো তিলটা আমাকে ঈশারা করেছিলো। সেদিন বুঝেছিলাম বিপদ আছে তোর শরীরের কোণায় কোণায়।সাঁতার জানা সত্ত্বেও যে কোন মূহুর্তেই ডুবে যেতে পারি অসীম অতলে।মাঝে মাঝে তুই বড্ডো দুঃসাহসী হয়ে যাস। তোর উত্তঙ্গু পাহাড় চূড়ায় তোর নাভীর হাল্কা ভাঁজে যখন ঘামের বিন্দু চিক চিক করে আমি অপলক তাকিয়ে থাকি।আর গোল্ড ফ্লেক এর ধোঁয়া উড়িয়ে তোর চোখে দুষ্টুমি ফুটে ওঠে, কি দেখছিস? ডুব দিবি, সাঁতার জানিস তো?
সমস্ত রাত জেগেই থাকি

ঘুম আসেনা, কফির কাপে র শব্দ চুমুক
তোর কি কিছুই মনে পড়েনা?

এখন কি তোর কিছুই মনে পড়ে না নীলাঞ্জনা? সেদিন গুলো? তোর সাথে প্রথম আলাপের দুপুর বেলা। প্রথম দেখেই চমকে উঠেছিলাম, নীল ফেডেড জিন্স হাল্কা গোলাপী টি-শার্ট এর বোতাম খোলা দুঃসাহসে।এখনো কি তোর জয়ের মেঘবালিকা সাজতে ইচ্ছে করে?কলকাতার রাস্তায় বৃষ্টির জল জমলে এখনো কি তুই বাচ্ছাদের মতো সেই জলে খালি পায়ে ঢেউ তুলিস?

কিছু কিছু সর্ম্পকের মধ্যে থাকে ঘাস
ফুলপাতা, আঁকিবুকি নখের আঁচড়
কিছু নীল রং এলোমেলো বিছানা বালিশ
চাদরের ফুল ছাপে লিখে রাখা
তবু মনে রেখো।

তোর আর আমার এই সর্ম্পকের কি নাম নীলাঞ্জনা? প্রেম বন্ধুত্ব নাকি আরো বেশি কিছু। নাকি হাজার মুখের ভীড়ে পরিচিত মুখ চেনা কেউ? আজ তুই নেই আমার সাথে আমার পাশে, কিন্তু সত্যিই কি নেই তুই?আমার আগোছালো ঘরের দেওয়ালে তুই, আমার আমার বিছানা বালিশ চাদরে তোর প্রিয় স্পর্শ, তোর শরীরের গন্ধ।আমার বই খাতা, লেখার টেবিল এমনকি জানলার বাইরের আকাশেও তোর উপস্থিতি।

জলের পোষাক খোলো!
হেঁটে হেঁটে ফিরে যাও একা
তোমার পায়ের ছাপ
কারা যেন দেখেছে দূরবীনে
কারা যেন অন্ধকারে
প্রশ্নচিহ্ন রেখেছে দরজায়
সকলে প্রমাণ চায় আবিস্কার করে।
শরীর আসার আগে
শরীর যাওয়ার পরে
যেটুকু ভূখন্ড পড়ে থাকে!
আমি কিন্তু দেখেছি তোমায়
জলের পোষাকে!

পাহাড়িয়া মেঘেদের ছৌনাচ এখন এই মহানাগরিক আশমানে।আর আবোল তাবোল বৃষ্টি ধারাপাত --- এই আবগারি আবহাওয়ার নিজস্ব নেশা-পাঠশালা।হাঁপর ঠ্যালা শহরিয়া কেজো বাতাসে মোহময় সোঁদাগন্ধ অফুরাণ।আর গোল্ডফ্লেকের ঝাঁঝালো নিকোটিন স্বাদ ঠোঁট থেকে ক্রমশ আলজিভে অনায়াস। স্নায়বিক তরল্যের সব অনিশ্চিত গতিপথ খুঁজে নেওয়া – এই টাপুর টুপুর বৃষ্টি বিকেলে।বৃষ্টিছাঁও মাটি থেকে একটা হা-ক্লান্ত গরম ভাপ উঠে আসছে। উঠে এসে ছড়িয়ে যাচ্ছে রাস্তায়, ফুটপাথে, ঘাসের ডগায় আর চলমান শরীরে শরীরে হলুদ সবুজ লাল নীল গোলাপী কমলা – সব রঙ্গীলা ছাতার আড়ালে মুখর হচ্ছে গল্প ও না-গল্পরা পারস্পারিক। বৃষ্টিভেজা জেব্রা পেরোচ্ছে নীল জিন্স আর সাদা শার্টের কলেজ পড়ুয়া দলছুট এক তরুণী। কাধেঁর ব্যাগে নিস্পৃহ ভিজে যাচ্ছে সব ভৌগলিক ল্যাটিচিউড-লঙ্গিচিউড, ঐতিহাসিক সব যুদ্ধক্ষেত্র, আঙ্কিক সব জটিল জ্যামিতি কিংম্বা পারমুটেশন্-কম্বিনেশন্। আর ভিজে যাচ্ছেন রবিঠাকুর ও বায়রন পৌনপুনিক সহাবস্থানে।

তোমার সুরক্ষা চাই আর কিছু নয়
আমার শরীর জুড়ে আদিগন্ত পাপ
প্রতিদিন মরি তাই দিনে আর রাতে
আমার ভুলের থেকে আরো দূরে যাও
আমার কাছেতে শুধু নামটুকু থাক
প্রিয় নাম গায়ে মেখে পাপক্ষয় করি
তোমার সুরক্ষাটুকু নিশ্চিত হলে
বিষন্ন শরীর জুড়ে বৃষ্টি নেমে আসে

ভিজে যাচ্ছি তুমি আমি আমরা সবাই। ভিজে যাচ্ছে আমাদের সব না-বলা কথা, না-লেখা কবিতা আর আমাদের সব গোপন ভালোবাসা মন্দবাসার ব্যক্তিগত গদ্য।আমাদের বুকের অন্ধকার অবচেতনে গান গেয়ে চলেছে এক বাউন্ডুলে বৃষ্টি-বাউল! বৃষ্টিস্নাতা সেই তরুণীটির সাদা জামার আপাত স্বচ্ছতা ফুঁড়ে, ফুটে উঠেছে  অন্তর্বাসের লাজুক বিপন্নতা।আর নেশা-পাঠশালায় তখন আদিম আপেলের সেই পুরনো গল্পটা।পরিত্যক্ত কে যেন একা একা মাউথ্অরগানের মরমীয়া সুরে বুনে চলেছে আযান্ত্রিক এক বৃষ্টি-বিষাদ। সমস্ত দিন আজ টুপ টুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। সকাল থেকেই আকাশটা আজ কালো রঙের ছোঁয়ায় নিজেকে সাজিয়েছে। আর এমন বৃষ্টিদিনে একছুটে তোর কাছে পৌঁছতে মন চাইছে নীলাঞ্জনা। কিন্তু তা আর সম্ভব নয় এটা বোধহয় বৃষ্টিও জেনে গেছে।তাই তো আজ সারা দিন ধরে আমাকে নিয়ে খেলেছে বৃষ্টি। বারবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে বৃষ্টি ভেজা সেই দিন গুলোর কাছে। কখনো শুশুনিয়া পাহাড়ের দিন গুলোতে কখনো গড়িয়ার তোর ফ্ল্যাট এর দিন গুলোতে আবার কখনো বা বৃষ্টির গন্ধ মাখতে মাখতে তোতে আমাতে কলকাতার রাস্তায় পাগলা চক্কর মারার দিনগুলোতে।আর আমি নিরুপায় হয়ে দৌড়ে বেড়িয়েছি কখনো শুশুনিয়া থেকে গড়িয়া, কখনো নন্দন থেকে রাসবেহারীর সাট্‌ল ট্যাক্সিতে। তুইও কি আমার মতো স্মৃতি তড়িত আজ নীলাঞ্জনা? নাকি নাকি সেদিন গড়িয়ায় মোড়ে দাঁড়িয়ে আমার মতো স্মৃতি গুলোকেও ঝেড়ে ফেলেছিস মন থেকে একটা একটা করে। আজ সারাটা দিন বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে আমার PC তে বেজেছে রবি ঠাকুরের সেই পাগল করা গান, যা তোর ভীষণই প্রিয় ছিল, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়.........’।কিন্তু আজ কাকে বলব আর কী ই বা বলবো নীল? আমাদের সব কথা ফুরিয়েছে আজ।

এই তো রচিছ পথ যে পথে ছলনাও থাকে
আমি তার বুঝেছি কিছুবা, হয়তো অনেক
জানি
'ভালোবাসি' মানে ভালোবাসা নয় কখনো কখনো
দূরে যাওয়ার জন্যও আসতে হয় কাছে
অথবা
চিঠির জবাবে না লেখা কথার মতোই
লুকিয়ে থাকে কিছু রহস্য-গোপন
সব অভিসারে
মেঘের মতোই নেমে আসে
ঝড়ের মতোই উড়ে আসে
পলির মতোই ভেঙ্গে পড়ে
অভিসার শেষে, কপট সময়।

আজ বড়ো অবাধ্য বৃষ্টিটা। ঠিক যেনো চঞ্চল কিশোরীর মতো, তোর মতো, খুনসুটিতে অস্থির করে তুলেছে আমায়। কিছুতেই বাধ মানছে না। যতই রাগ করি চোখ পাকাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ঠিক তোর মতো। আর বারবার আমাকে তোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।ভাবছিস আমি স্মৃতিমেদুরতায় ভুগছি।না, নীল আজ আমাকে বৃষ্টিতে পেয়েছে আজ আমাকে তো’তে পেয়েছে। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে শুশুনিয়ায় এমনই বৃষ্টি ভেজা দিনে আমাদের সফরের কথা। সেদিনের বৃষ্টি টাও ঠিক আজকের মতো ছিল। আর তুইও হঠাৎ করে সেদিন বৃষ্টি হয়ে গেলি। তারপর তুই আর বৃষ্টি মিলিয়ে সেদিন শুশুনিয়া কে ভিজিয়েছিল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম টেন্টে। তোদের ন্ডকারখানা দেখছিলাম। সেদিন আমি ভিজি নি। তুই আমাকে বলেছিলি ভীতু। নীল সেদিন আমি বৃষ্টি কে ভয় পাইনি, ভয় পেয়েছিলাম তোকে। যদি তোকে ছুঁয়ে দিলে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ঝরে যায় তোর শরীর থেকে, সেদিন বৃষ্ট ভেজা তোকে পাহাড়ের কোলে রুপকথার মত লাগছিল যদি ছুঁয়ে দিলে তুই সাধারন হয়ে যাস।তারপর বৃষ্টি থামলে তুই আমাকে ভাসিয়েছিলি আরেক বৃষ্টিতে। সে আগুনে বৃষ্টিতে পুড়তে পুড়তে আমি ভয় পেয়েছি। তোর যে কোনো তল নেই নীল, তোর যে কোনো সীমানা নেই, সব সীমানাই তুই ভেঙেছিস অবলীলায়। আমি পারিনি, আমি সত্যিই পারিনি নীল।আর পারিনি বলেই সেই বৃষ্টির পর তোকে খুব সাধারন লেগেছিল আর পাঁচজনের মতোই, কেন তা জানি না এর কোন উত্তরই নেই আমার কাছে।

ভেবেছি তোমাকে ভোর
অমানিশা কেটে গেলে তোমাকেই
ধরেছি জড়িয়ে
ঠোঁট ছুঁয়ে হাত ছুঁয়ে চোখের কাজল ছুঁয়ে
জেনেছি এ আমার অমল বেঁচে থাকা
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিউলি, জুঁই, রাতের গন্ধরাজ
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিশির ধোয়া কোমল বকুল
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ছুঁয়ে হাত বলেছি এ আমার গোলাপ গোলাপ
পঁচনের কাল আসে ফুলেরও একদিন!
এ আমি না, ভাবিনি কখনো।

আমার কি সেদিন সাহসী হওয়া উচিত ছিল নীলাঞ্জনা? তাহলে কি আজকের দিনটা অন্য রকম হতো। আজকের এই বৃষ্টি মুখর দুপুর বেলা আমার পাশেই থাকতিস তুই? কিন্তু তোর সেই অসাধারন্ত্ব থাক্তো কি? আমি তো তোকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো চাই নি, আর পাঁচ জনের মতো আমিও তোকে ভালবাসি নি। তুই আমার কাছে রূপকথা, আমার ভালোবাসাও ছিল তেমনি এক জাদু কাঠির স্পর্শ। কিন্তু সত্যিই কি আমরা ভালো বেসেছিলাম?তা হলে আমাদের এই ভালবাসা কেনো সাধারন প্রেম কাহিনীর পরিনতি পেল? গড়িয়া হাটের মোড়ে সেদিন তুই আমাকে দাঁড়করিয়ে রেখে চলে গেছিলি। বলেছিলি, ‘আজ আসি, আমাদের দেখা হবে আর কোনদিনই। ভালো থাকিস’। তারপর চলে গিয়েছিল সোজা কোন দিকে না তাকিয়ে। জানিশ তারপরও বহুক্ষন আমি দাঁড়িয়েছিলাম ভীড়ের মধ্যে। বারবার মনে হচ্ছিল; এই বুঝি তুই ভীড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে বলবি, ‘ কি বে শালা এখানে দাঁড়িয়ে কি মারাচ্ছিস? চ’ একটু মাল টেনে আসি’।কিন্তু তুই আসিস নি। সত্যি বলতো নীলাঞ্জনা ভালোবাসা আসলে কি? আমরা কি সত্যিই ভালোবাসা মানে বুঝি? আজ এই প্রশ্নটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে নীল। অথচ দ্যাখ সাহস করে বলতেও পারছি না কেমন আছিস নীল, প্লিজ তুই ফিরে আয়।।কিন্তু আমি জানি তোর ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে আমার সারা শরীরে, আমার ঘরে, আমার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগোছালো ভাবে আজো আমি সব গুছিয়ে উঠতে পারিনি সেই সব ভালোবাসা। জানি গুছিয়ে রাখলে ভালো হতো, কিন্তু থাক, ওগুলো ছড়ানোই থাক। গুছিয়ে নিলে সে বড় সুখের হতো, কিন্তু তোর চলে যাওয়া সে বড়ো

............

ভালোবাসা লেখা হয় কবিতায় কবিতায়
পাখির ঠোঁটের সুর তুলে আনা
ফিদার ছবিতে
মাধুরীরর কোমর ও নাভিতে
ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া
চৌরাশিয়ার বাঁশি, আহা ভালোবাসি
ভালোবাসা ছড়ানো ছিটানো কত না
চিঠিতে, গল্পে পাতায় পাতায়
লেখা হয় রমনায় চন্দ্রিমা উদ্যানে
গাছের বাকল তুলে নখের আঁচরে
ভালোবাসা চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো
আকাশে বাতাসে দেহে চোখের পাতায়
একবার যদি কেউ কুড়িয়ে কুড়িয়ে
এ অমল ভালোবাসা হৃদয়ে করত জমা
আহা! কত সুখ হত।।

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

* * অ পূ র্ন * * শেষ পর্ব

 

গল্পঃ * * অ পূ র্ন * * শেষ পর্ব



প্রথম ও ২য় পর্বের পর........................

০৬.
পূর্ন তো কলকাতা চলে গেলো সে জানতে পারলো না সুমিতের কি হলো কিন্তু যখন দেশে ফিরলো সুমিতের চিন্তাটা মাথায় আবার জাগলো..
অপূর্ন বাসায় ফিরে কদ্দিন ঘরে বসে তন্ময় হয়ে অজানা চিন্তার আকাশে ভেবে ভেবে কাটালো।
কি করবে, মাঝখানে কেটে গেছে দেড়টি বছর।
অপূর্ন বাড়ি ফিরে অন্তত এ টুকু বুঝেছে, সুমিতের ব্যাপারে পরিবারের সবার আগ্রহ আর নেই। তাই কদ্দিন চুপ থেকেছে নিজের মনের ব্যাপারটা যেন প্রকাশ পায়। কিন্তু এভাবে তো থাকা যাবে না এটা ভাবতেই অপূর্ন ’র শরীরটা অসার হয়ে যায়।
পুরোনো বন্ধুরা একে একে বাসায় আসতে লাগলো, তাই পুরোনো স্মৃাতিতে ফিরে যেতে অপূর্ন ’র খুব একটা সময় লাগলো না। তবে মাথাটা যে আর আগের মতো কাজ করে না সেটা বুঝে গেছে’সে। আর মাথাটা মনে রাখার খাতায় খুব কম কাজ করে আজকাল।
এই যেমন সকালে ভাবলো, দুপুরে একটু বাইরে বেড়িয়ে আসবে কিন্তু বিকেলে নিজেকে আধভাঙ্গা ঘুমে আবিস্কার করলো।
তবে স্মৃতি যতই দূর্বল হোক সুমিতের কথা কিন্তু মাথা থেকে গেলো না বরং আস্তে আস্তে ফিরে আসতে লাগলো।

এক বিকেলে সব ঝেড়ে ফেলে অপূর্ন বেড়িয়ে পড়লে।
মাধবীলতা বিল্ডিংটার পাশেই ইতি’রা নতুন বাসা নিয়েছে সেটার উদ্দেশ্যে। পথে যেতে সেই বুক হাউসটার বারান্দার দিকে তাকালো; কিন্তু নেই সেই তেলেভাজাওলা। সেই জায়গাতে দাড়াতেই মনে পড়লো সুমিতের সেই সংলাপ; টাকাটা দিতে হবে না।
অপূর্ন ’র সেই এক কথা টাকা আপনাকে দেবই।
কিন্তু না; পারেনি অপূর্ন টাকাটা দিতে হয়তো পারবেও না।

অপূর্ন সোজা চলে এলো ইতিদের বাসায় কিন্তু গেট খুলেই হতাশ হলো ইতি বাসায় নেই। ওর মা এসে ঘরে নিয়ে বসালেন অপূর্ন ঠিক বুঝতে পেরে গেছে এখন কিছু গা গুলানি কথা বলবে। যে সকল কথা রাস্তায় বেরুলেই আজকাল শুনতে হয়; যারা ওকে চিনতো ওরা তো মুখিয়ে থাকে খুব বিরক্তিকর।
ইতি’র মা বলে উঠলেন তোমার লাবন্যমাখা মুখটার এ,কি হাল ও মনে মনে বলে উঠলো ঝড়ের পরে যা হয় আর,কি। ইতি চলে এলো রিকসা নিয়ে সোজা রেল কলোনি এখানেও সেই এক বিপত্তি সবাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে পরিস্থিতি বলে দেয় সুমিতের জীবনটা নষ্ট করে; পোড়ামুখি তোর স্বাদ মিটেনি, আর কার জীবন নষ্ট করতে এসেছিস।

অপূর্ন সোজা সুমিতদের ঘর অভিমুখে গিয়ে থামলো কিন্তু তালা ঝুলছে।
সুমিত কে, এক ঘরে করে দিয়েছিলো সমাজ; কিন্তু ওর বাবা, মা গেল কোথায়? লাল দালানের পাশে একটা মুদি দোকানে এসে অপূর্ন শুধালো আচ্ছা দাদা সুমিতদের ঘরের সবাই কোথায় গেছে বলতে পারেন? দোকানদার বললো তারা তো প্রায় মাস ছয়েক হলো বাসা বদল করে ওপাড়া চলে গেছে। ও সুমিতের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থেমে গেল কথা আর বেরুল না মুখ থেকে।

০৭.
বিকেল মরে আসছে।
অপূর্ন ঘরে ফিরে এসেছে ওপাড়া যাওয়া যাবে না বাবা ওখানেই থাকে সন্ধ্যের পর। কলেজ গেটের পাশেই একটা জটলা দেখতে পেল কিন্তুঅপূর্ন সেদিকে গেল না আজকাল আগ্রহ জিনিসটা কাজ করে খুব কম। সেই জটলা থেকে শ্যামলা মতো একটা ছেলে এসে বললো আরে, অপূর্ন যে।
অপূর্ন একটু অবাক হয়েছিলো কিন্তু পড়ে একটা ইচ্ছা উড়াউড়ি করলো অপূর্ন ’র চারপাশ কেননা সেই ছেলেটি সুমিতের একমাত্র বন্ধু রবি।
ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার পর বললো রবি ভাই সুমিত কোথায় আছে বলতে পারেন?
একটা নিরবতা। এক মিনিট পার হয়ে গেল রবি চুপ। ও আবার বললো কি হলে রবিভাই ? অপূর্ন ভাবলো
সুমিত কি তাহলে মরে গেছে ? না,কি সুমিত কে কেউ মেরে ফেলেছে? নাহ্ সুমিত তো জেলখানায় ছিলো; এমন তো হতে পারে না।
রবি বললো সুমিত কে দেখবে চল।
পায়ে পায়ে অপূর্ন রবি’র পিছু হাটছে বুক হাউসটার ঠিক পাশে এসে থামলো রবি ওকে বাইরে রেখে ভেতরে ঢুকলো; কিছুক্ষণ পড় এসে বললো নেই; কাল দেখা হবে।
ও স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো আর যাই হোক সুমিত আছে তাহলে।
ঘরে ফিরে সারারাত বসে ছিলো অপূর্ন । পুরোনো ভাবনা গুলো আবার ওকে উড়ালো আকাশে,বাতাসে। কাল সকালে সুমিত কে পেয়ে কোন কথাটা বলবে? সুমিত কেমন আছো ?
সুমিত আমি এসেছি ?
আমি সেই তোমার পূর্ন ভালবাসার চাঁদ আমি তোমার সেই অপূর্ন ।
অনেক আগে সুমিতের লেখা একটা কবিতা আছে অপূর্ন ’র কাছে; যেটা পড়ে ও ভাবে সত্যি সুমিত তাকে ভালোবাসে ভীষণ ভাবে।
কাল সকালে এই হাত আবার রাখবে হাত সুমিতের সেই হাতে; এবার বাবা,মা কিংবা পরিবারের কেউ আর আটকাতে পারবে না। চলে যাবে দূরে কোথাও।
সকালে ও স্নান সেরে সুমিতের দেয়া শাড়িটা পড়েছে। এ শাড়ি কোনদিন পড়েনি ও। আজ পড়েছে।
বাড়ির বাইরে এসে দেখে রবি দাড়িয়ে। অপূর্ন মনের আঙ্গিনায় পুলকিত হতে হতে পথ মারাচ্ছে। সেই বুক হাউসটার কাছে এসে থেমে গেছে রবি কাল তো এভাবেই থেমে গিয়েছিলো। কিন্তু সুমিত কোথায়?
এই সকালে বাজারে ভীড় নেই। বুক হাউসটাও খালি।
অপূর্ন বললো রবি ভাই কোথায় সুমিত?
রবি বললো দেখতে পারছো না?
অপূর্ন বললো না,তো। পুরোটা পথে দেখবার মতো কেউ নেই শুধু একসাইডে একটা পাগল বসে আছে। রবি হাত উচিঁয়ে বললো তোমার প্রিয় মানুষটাকে চিনতে পারছো না অপূর্ন !!!

না অপূর্ন সেদিন চিনতে পারেনি। অপূর্ন সেদিন মিনিট খানেক স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে ছিলো; কোথায় সুমিত !!!
পাগলটার কাছে গিয়ে দাড়াতেই অপূর্ন অবশেষে চিনতে পেরেছিলো এটাই তার ভালোবাসার জীবন্ত ভাস্কর্য সুমিত। কান্নার আওয়াজে পথের মানুষ ভীড় করে দাড়িয়েছিলো;যেন ম্যাজিক হচ্ছে।
সুমিতের দু হাত জড়িয়ে অপূর্ন কেঁদেছে কিন্তু সুমিত তবুও চিনতে পারেনি ওকে।
পুরো পাগল মুখভর্তি চুলের বাহার। পাগলটা কাঁদেনা ক্ষিদে পেলেও শুধু খাবার চায়। পুরো রাস্তার মানুষ গোল হয়ে দাড়িয়ে। অপূর্ন’র হাত থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছে পাগল সুমিত।
অপূর্ন বলে উঠে,
এই সুমিত আমাকে দেখ আমি তোমার অপূর্ন ?
এই দেখ তোমার শাড়ি পড়ে এসেছি আজ। তুমি না বলেছিলো এই শাড়ি যেদিন পড়বো সেদিন সারাদিন তোমার সাথে ঘুড়তে হবে। আজ আমি সারাদিন ঘুড়বো তোমার হাত ধরে। না সেদির অপূর্ন ’র হাত সুমিত ধরেনি। চিনতেই পারেনি।

০৮.

শ্যামা থেমে গেল।
গল্পটা শেষ।
আমি চোখ মুছলাম। ধূর কি,যে হয়েছে গল্প শেষ করবার পর আমার চোখ থেকেই পানি ঝড়ছে।
আমি ভাঙ্গা গলায় বললাম আচ্ছা; আপনি সুমিত, আর অপূর্ন’র জীবন কাহিনী জানলেন কিভাবে? আপনি ওদের কেউ হন মানে বন্ধু জাতীয়।
শ্যামা ব্যাগটা হাতে উঠিয়ে নিয়ে বললো কি,মনে হয় আপনার?

আমি বললাম প্লিজ বলুন না। না হলে সারারাত ঘুমুতে পারবো না। আর আমার সুমিত কে দেখতে ইচ্ছে করছে আর তার চেয়ে কষ্ট লাগছে অপূর্ন’র জন্য তাকে দেখতে পেলে একটা কথা বলতাম?
শ্যামা বললো কি কথা? আমি বললাম আগে আপনি বলুন আপনার সাথে সুমিতের কি সম্পর্ক?
শ্যামা মাথাটা নিচু করে বললো আমিই সেই অপূর্ন !!

কথাটা কানে যাবার সাথে সাথে ট্রেনটার হুইশেল বেজে উঠলো। গন্তব্যে এসে গেছি শ্যামা নামধারী অপূর্ন হাতে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাড়ালো। আমিও দাড়ালাম ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্মে ।
অপূর্ন আমার পিছু এসে দাড়ালো
আমি বিস্ময়ের ঘোর ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বললাম আপনিই তাহলে সেই গল্পের নায়িকা; আচ্ছা সুমিত এখন কেমন আছে? আর তাছাড়া আপনিই বা কোথায় চলেছেন?
রেল গেটের বাইরে এসে অপূর্ন বললো সুমিত ভালো নেই!! আর আমি যদি এখানে থাকি তাহলে কষ্ট পাবো প্রতিনিয়তই যখনি পথ চলতে সুমিতকে দেখবো তখনই তো কষ্টের আকাশে দগদগে কালো মেঘ ভাসবে।
তাছাড়া আমি থাকলে সুমিত কে ওরা মেরে ফেলবে। আমি তাই দুরে চলে যাচ্ছি পাগল হয়ে ঘুরুক তবুও বেঁচে থাকুক।
আমি আবার বললাম কারা সুমিত কে মেরে ফেলবে ? অপূর্ন বললো কারা আবার আমার বাবা’র লোকেরা।
আর তাছাড়া আমার নামটাই তো অপূর্ন যার নামের মাঝে পূর্নতা নেই সে আর কার জীবনকে পূর্ন করবে বলুন।

আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে; এদিকে অপূর্ন’র রিকসা দাড়িয়ে আছে।
বিদায় নেবার আগে আমার হাতে একটুকরো কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা সুমিতের লেখা সেই কবিতাটা যেটা ছাপাতে পারেনি আপনি একটু চেষ্টা করে দেখবেন। আমি হ্যাঁ বলালাম।
জীবন কখনো কখনো এমন হয়...................
হাজার ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেল অপূর্ন আর আমি কবিতাটা পড়তে পড়তে পথ চললাম


কখনো কি ভাবতাম; এতো লোকের ভীড়ে তোমায় পাবো;
ভাবতে পারতাম না।
কখনো কি ভাবতাম; ; এতোটা পথ হেটে যাবো অবলীলায়
ভাবতে পারতাম না।
এখন ভাবতে পারি নির্ভাবনায়; আর আমি একা নই
আমার শূন্য দু’ হাত পরিপূর্ন তোমার ছোয়ায়
কখনো ছেড়োনা হাত,
করো না সংঘাত
আমি যে থাকবো মিশে তোমারই নিশ্বাসে নিশ্বাসে।

 

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১২

সে আমার বন্ধু ছিল



এপ্রিল২৬, ২০১২

মোবাইল ফোনটা বেজেই চলেছে তো বেজেই চলেছে। উফ! অসহ্য! আর কত জ্বালাবে আমাকে ওই ছেলেটা? সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে। বার বার লাইন কেটে দেয়ার পরও সমানে কল দিয়ে যাচ্ছে। এমন নাছোড়বান্দা জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখি নাই।
বাধ্য হয়ে অবশেষে ফোনটা রিসিভ করলাম। ‘হ্যালো’।ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল জুয়েলের গলা, ‘হ্যালো শর্মি, আমার মনটা আজ ভাল নেই রে’। তোমার মন ভাল নাই তো আমার কি? যার তার মন ভাল করার চাকরি নিয়েছি নাকি আমি? আজব! কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখ ফুটে ওকে বলতে পারলাম না। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি ভাইয়া’। ওপাশ থেকে জুয়েলের দী্র্ঘ নিঃশ্বাস পতনের শব্দ শুনলেও পাত্তা দিলাম না। সে বলল, ‘ তুই তো এখন সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকিস। আচ্ছা ফ্রি হলে ফোন দিস তাহলে’।
ছেলের কথা শুনে বিরক্তি যেন চরমে উঠল। চেপে চেপে বললাম, ‘আমার ব্যালেন্স শেষ ভাইয়া’। কেটে দিলাম কলটা। আহ, শান্তি! যাক বাবা, অন্তত আধা বেলার জন্যে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে এই আপদ থেকে। অবশ্য জুয়েল নামের এ আপদটাকে একসময় আমিই ডেকে এনেছিলাম আমার জীবনে!
কুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম আমি। কারণ আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমি বুয়েটে পড়ব। এখানে নতুন কোন বন্ধু তো হয়ইনি উলটো স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সাথেও এক এক করে দূরত্ব বাড়তে লাগল। আমার প্রেমিক ইমনকে নিয়েও সন্দেহ করা শুরু করলাম! নষ্ট হতে লাগল ওর সাথে আমার সম্পর্ক। গান পাগল আমি গান শোনা বন্ধ করলাম, পড়ার বই এর ফাঁকে ফাঁকে গল্পের বই পড়াও ছেড়ে দিলাম। একসময়কার মেধাবী স্টুডেন্ট আমি পড়াশোনাতেও লাড্ডু পেতে থাকলাম! আসক্তি জন্মাল মিগ৩৩ এর প্রতি। দিন নেই,রাত নেই সারাক্ষণ শুধু মোবাইল টেপাটেপি করতাম। ‘মিগ’ এর মত ভার্চুয়াল জীবন হয়ে গেল আমার কাছে বাস্তব! মিগ এর তথাকথিত বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি,তাদের সুখে হাসি আর তাদের দুঃখে কেঁদে ফিরি! এতদিন জানতাম হতাশ মানুষ drug addicted হয়ে যায়। কিন্তু আমি দিন দিন পরিণত হতে লাগলাম mig addicted এ!!
এমনি এক মুহূর্তে জুয়েলের সাথে আমার মিগ এ পরিচয় হল। ওর কাছে খুলে বললাম আমার অতীতের উজ্জ্বল দিনগুলোর স্মৃতি, বর্তমানের অন্ধকারময় জীবনের কথা। সব শুনে জুয়েল আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল। ওকে আমার ফোন নাম্বার দিলাম। এভাবে গড়ে উঠল আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব। ‘তোর আসলে বন্ধুর চেয়ে একজন care taker এর দরকার বেশি,বুঝলি’? জুয়েলের কথা শুনে হাসলাম আমি। ‘তাহলে তুমি আমার care taker হয়ে যাও ভাইয়া’, বায়না ধরলাম ছোট বাচচাদের মত।জুয়েল আমার বন্ধু বা care taker হতে রাজী হল। সেই সাথে জানিয়ে দিল তার জীবনের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা— পরবর্তী সপ্তাহ থেকে তার মেডিকেল কলেজে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা শুরু। তার একজন প্রেমিকা আছে, তাই আমাকে যে সে সবসময় সময় দিতে পারবে , এমন কোন প্রতিশ্রুতি সে দিতে পারছেনা। আমি সানন্দে রাজী হলাম তার শর্তগুলো শুনে। আসলে ঐ সময়টায় খুব ভাল একজন বন্ধু দরকার ছিল আমার, যে কিনা আমাকে প্রতিনিয়ত guide করে আমার বিশৃংখল জীবনটাতে শৃংখলা এনে দিতে পারবে।
‘ ভাইয়া আমি আমার ২ বছর আগের জীবনটা ফিরে পেতে চাই’,আমার এরকম কথা শুনে জুয়েল আমাকে আশ্বস্ত করল, ‘ইনশাল্লাহ ফিরে পাবি আপু। শুধু আমি যেভাবে বলব সেভাবে কাজ করে যা। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে’। জুয়েল প্রথমেই আমার জন্য যা করল তা হল আমার জীবন থেকে ও মিগ৩৩ কে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিল। বলল, ‘একা একা লাগলে আমাকে কল দিবি।কিন্তু মিগ এ ঢুকবিনা খবরদার’। সেদিনই মোবাইল থেকে মিগ ফোল্ডার মুছে দিলাম। সকাল নেই ,বিকেল নেই কলেজে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলাম আমার নতুন বন্ধুকে। যে আমি আগে মাসে ৫০ টাকাও রিচার্জ করতাম কিনা সন্দেহ,সেই আমি এখন দিনে ৫০ টাকা শেষ করে ফেলি ভাইয়াকে ফোন করতে যেয়ে!
কিন্তু একদিন কল করার পর পরই জুয়েল ভাইয়া বলল, ‘ঐ পাগলী, ফোনটা রাখতো। রিয়া waiting এ আছে,এখন কল রিসিভ না করলে আমাকে আবার বকবে,’ ফোনটা কেটে দিতেই চোখ ভরে গেল জলে! আমার চেয়ে ঐ প্রেমিকা রিয়াই তাহলে তোমার কাছে অনেক বড় তাইনা? কেন জানি খুব হিংসা হচ্ছিল রিয়া নামের অচেনা মেয়েটিকে। এক বিকেলে জুয়েল বলল, ‘ শোন,এখন থেকে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে তোর প্রিয় গানগুলো আবার আগের মত করে শুনবি,বুঝলি?’ ওর কথামত আমি আবারও গান পাগল হয়ে উঠলাম! একদিন ভোরবেলা কল দিয়ে বলল, ‘ কিরে,ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সকালটা মাটি করছিস কেন? নামাজ পড়ে পড়াশোনা করতে বস,যা’।সেই থেকে খুব ভোর থাকতেই ঘুম ভেঙ্গে যেত আমার! ‘ভাইয়া আমার না ভার্সিটিতে কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাই জান?’ কথাটা বলতেই জুয়েল বলে উঠল, ‘বন্ধু পাওয়ার জন্য আগে নিজেকে sacrifice করতে শেখা লাগে। দেখবি তখন তোর বন্ধুর অভাব হবে না’। ভাইয়ার কথা শুনে চলতেই ঠিকই কয়েকদিন পর আমার খুব ভাল একটা friend circle গড়ে উঠল!
একদিন সন্ধ্যেবেলায় জুয়েলকে কল দিচ্ছি কিন্তু ও বারবার লাইন কেটে দিতে লাগল। আধা ঘন্টা পর ফোন ধরতেই এক রাশ অভিমান ঝরে পড়ল আমার কন্ঠ বেয়ে, ‘কি ব্যাপার ফোন কেটে দিচ্ছো কেন?’ জুয়েল কৈফিয়ত দিল, ‘sorry আপু,রুমমেটের কাছ থেকে পড়া বুঝে নিচ্ছিলাম রে’। সে আমাকে কখনই বুঝতে দেয়নি যে সে কতটা টেনশন এ আছে তার পরীক্ষা নিয়ে। ওর পরীক্ষার পুরা ২ টা মাস সে আমার সাথে কথা বলেছে কোন বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়াই,আমাকে guide করেছে। ইমনের সাথে আমার দূরত্বের কথা শুনে ভাইয়া বলল, ‘ইমন তোর জন্য কি করেনি সেগুলো না ভেবে,কি করেছে সেগুলা আগে চিন্তা করে দ্যাখ’। বললাম, ‘ইমন তেমন কিছুই করেনি।তবে পরীক্ষার সময় ও নিজের পরা বাদ দিয়ে আমাকে পড়িয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাতেই বেশি ব্যস্ত থাকত’। এভাবে ভেবে ভেবে অনেক কিছুই বের করলাম,যা ইমন আমাকে ভালবাসে বলেই করে। ধীরে ধীরে ইমনের উপর থেকে আমার করা অভিযোগগুলো কমতে লাগল। আমি যেন আবারও নতুন করে ইমনের প্রেমে পড়লাম!
ছোটবেলায় টুকটাক লেখালেখি করতাম। জুয়েলের উৎসাহে লেখালেখি আবারও শুরু করে দিলাম। পাঠাতে লাগলাম পত্র-পত্রিকাগুলোতে।আর কি আশ্চর্য সেগুলা এক এক করে ছাপাও হতে থাকল! আস্তে আস্তে মাস দুয়েক পর বুঝতে পারলাম আমি আমার হারানো জীবনটা ফিরে পেয়েছি।চারপাশে বন্ধুর সমারোহ, প্রেমিকের ভালবাসা,পড়াশোনায় ভাল ফলাফল,লেখালেখি,গান আর গল্পের বই নিয়ে সাজানো সেই হাসি-খুশি প্রাণ-চঞ্চল শর্মিকে নিজের মাঝে খুঁজে পাচ্ছি আমি!
বন্ধু, প্রেম আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় জুয়েলকে খুব একটা ফোন দেয়া হতনা। আগে যেখানে দিনে ৬-৭ বার ফোন দিতাম,এখন ওর সাথে আমার কথাই হয় ৫-৬ দিন পর পর! দিন দশেক আগে সে জানাল, রিয়ার সাথে ইদানিং নাকি ওর সম্পর্কটা ভাল যাচ্ছেনা। ভাল না গেলে আমার কি করার আছে,আজব তো, আমাকে কেন ফোন করে এসব বলা হচ্ছে? খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নাই নাকি ওর? গত সপ্তাহে জানাল,তার রেজাল্ট বেরিয়েছে এবং ১ টা বিষয়ে নাকি খারাপও করেছে, ২ মাস পর আবার সেই পরীক্ষাটা দিয়ে তবেই জুয়েল MBBS পাশ করতে পারবে। কিন্তু এসব কথা আমাকে বলে কি লাভ বুঝলাম না। আমি কি ওর হয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসব নাকি?সামনে আমারো পরীক্ষা, লেখালেখি নিয়েও ভীষণ ব্যস্ততা। এর মাঝে এই ছেলের যন্ত্রণা সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে আমার খুব। এখন আমার মনের কথা শোনার জন্য ইমন আছে,উৎসাহিত করার জন্য আছে প্রিয়াংকা,তুলি,মানস,রবি,তারিন এর মত বন্ধুরা। কোথাকার কোন এক জুয়েল,যাকে কোনদিন দেখিনি,যার সম্পর্কে কিছু জানিনা,তার জন্য ফালতু কাজে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার হাতে নেই এখন!
আবারও মোবাইলটা বাজছে! নাহ।এবার দেখি সিম কার্ডটা বদল করতেই হবে। প্রচন্ড রাগে মোবাইল থেকে খুলে ফেললাম সিমটা। আঙ্গুলের সর্বশক্তি প্রয়োগে ভেঙ্গে ২ টুকরো করে ফেললাম জুয়েলের সাথে আমার সম্পর্ক,আমাদের ৩ মাসের বন্ধুত্ব!!