[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]
নিগার চৌধরী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নিগার চৌধরী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১২

কবিতার উঠোণ...

কবিতার উঠোণ


কবিতা সর্ম্পকে বস্তুতঃ আমি কিছুই জানি না। কোন কোন সকাল আমার বিকেল বলে মনে হয়, আর কোন কোন বিকেল সকালের মতো। কিন্তু এই মনে হওয়া , কেন যে আমার মধ্যে ঘটে জানি না। যেভাবে জানি না, কি ভাবে প্রথম আমি লিখে ফেলেছিলাম কিছু শব্দ। সে শব্দের সমাহার কবিতা হয়েছিল কিনা তাও জানি না। সমস্ত যৌবন ধরে আমি শুধু একটা ‘না’ এর সাথে দ্বৈরথ করে চলেছি। একটা ‘না’। ক্রমেই আমার স্মৃতি লুপ্ত হয়ে আসছে। কয়েক বছর আগেও আমি বহু প্রয়োজনীয় কথা মনে রাখতে পারতাম। এখন প্রয়োজনের ভার হাল্কা হয়ে আসছে। কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারিনা। কঠোপনিষদের কথা মাঝে মাঝে মনে হয় – যখন নচিকেতা বিশ্বরহস্য নাকি ব্রক্ষ্মের স্বরুপ জানতে চাইছেন – তখন যম বলছেন আমার কথা শ্রবণ কর। হয়তো এর থেকেই কোনও উত্তর বেরিয়ে আসবে।

কবিতা সর্ম্পকে আমার ভাবনা আসলে ‘না’ ভাবনাই। যে নেতি আমাদের দিয়ে লিখিয়ে নেয় কথা। শব্দের পর শব্দ। এক একটি রুপের আভাস। শুধু এটুকু বলতে পারি প্লেটোর ‘গণরাজ্যে’র ‘না বাসিন্দা’ কবি কিন্তু আমাদের দর্শনে অন্যভাবে উত্থাপিত। সেখানে কবি সম্বন্ধে বলা হচ্ছে -- ‘কবিং পুরাণ মনুশাসিতরম্ অনোরনিয়া’ অর্থাৎ কবি একজন সত্যদ্রষ্টা। তবে এ তো গেল শাস্ত্রের বাদানুবাদ। আমি কবিতা সর্ম্পকে কিছুই জানি না। শুধু জানি যখন আমাদের পুরোনো বাড়িটার ছোট্ট ঘরে অন্ধকার বাক্স-প্যাঁটরার ওপর শীতের দুপুরের এক চিলতে আলো এসে পড়ে। দু-একটি আরশোলা ফরফর করে উড়ে যায় রান্নাঘরের দিকে কিংবা একটি টিকটিকি বিনীত চিৎকারে জানিয়ে দেয় দুপুরের বয়স – তখন আমার ভিতর কীরকম যেন হয়ে যায়। হয়তো বা ঠিক সেইদিন বহুকালের না পারাগুলি একত্র হয়ে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় কয়েকটি বাক্য। এর বেশী আমার আর কিছুই বলার নেই কবিতা বিষয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয় কি লিখছি কেন লিখছি? লেখা গুলো কি আদৌ কবিতা? বুঝি না। এক এক সময় মনে হয় লিখতে বসে আজ আর লিখব না, নিশব্দ বসে থাকব, নিশব্দের কি কোন শব্দ হয়? রোজ আমি বসি খাতা কলম নিয়ে কোন দিন শব্দ এসে ধরা দেয় কোন কোন দিন বা সাদা পাতায় ঝরে পড়ে একরাশ নিশব্দ।

নিশব্দে থেকো।
আজন্ম বধিরতা নিয়ে।
নিশব্দই এক একটি শব্দ তৈরি করে।...

আবার কখনো কখনো লিখতে বসে শব্দেরা প্রশ্নের আকার নেয়। আমার যন্ত্রনারা ভীড় করে এসে প্রশ্ন তোলে। এই যে জীবন যন্ত্রনারা ভীড় করে আসে কলমে
এ যন্ত্রনার মুখ কি আমার আদৌ চেনা?

অন্তঃকরণে অভিমানে
রক্ত ঝর্না গুপ্ত প্রবাহিনী
এ যন্ত্রনার মুখ
আমি চিনি?

যখন মাঝ রাতে সমস্ত পাড়া ঘুমে আচ্ছন্ন ঠিক তখনই আমি এসে বসি আমার লেখার টেবিলটায়। কোন কোন দিন আমার নিজের জীবন কে লিখতে ইচ্ছে করে
কোন কোন দিনে ফেলে আসা জীবনের দিকে তাকাই। তখন মনের কার্নিশে ভীড় করে আসে নানা প্রশ্ন জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা বিতর্ক। কখনো উত্তর পাই কখনো বা পাই না। আবার কখনো উত্তর পেলেও মনে হয় বোধ হয় ঠিক উত্তর পেলাম না তখন আবার ভীড় জমায় সেই একই প্রশ্নরা আবার আমি নতুন করে শুরু করি উত্তর খোঁজা এভাবেই জমে ওঠে জীবনের পাওয়া না পাওয়া সব প্রশ্ন উত্তরের খেলা।


কয়েকটি বিতর্ক রইলো। মাঝরাতে সবুজ জড়ানো
লতা ও গুল্মের মতো অন্ধকার। জানি
প্রতিটি প্রশ্নের গ্রাসে আহরিত প্রতিটি অজস্র নিরুত্তর
ক্ষমা করে। ভালোবাসে। পুনর্বার ক্ষুধিতের মতো
প্রসারিত হয়।

এক এক সময় পাগলের প্রলাপের মতো লিখে চলি, লিখেই চলি। কখনো সেই লেখা শব্দের মধ্যে জন্ম নেয় কবিতা কিংম্বা গল্প বা অন্য কিছু। আবার কখনো কিছুই লেখা হয় না কিছু অর্থহীন শব্দ ছাড়া। এই যেমন এখন লিখে চলেছি। কি লিখছি কেনো লিখছি জানি না। কলমের ডগায় ভীড় করা শব্দদের একের পর এক বসিয়ে যাচ্ছি পর পর। কি এদের ভবিষ্যত কিংম্বা আদৌ কোন ভবিষ্যত আছে কিনা কে জানে। শুধু মনে হয় নিশুতি রাতে রোজ আমি সহবাস করি শব্দের শরীরে। আর এক সময় সেই সহবাস শেষে শব্দের সমস্ত শরীর জুড়ে আমার সমস্ত টেবিল জুড়ে আমার সমস্ত আত্মা জুড়ে উঠে আসে জন্মানোর গন্ধ।

সমস্ত শরীর থেকে জন্মানোর গন্ধ উঠে আসে
সহবাস
অগুরু মেখেছে কিংম্বা কাঁচা চন্দনের গন্ধ ঊরু ও জঙ্ঘায়
হঠাৎ শরীর থেকে গৈরিক শাড়ির টুকরো চুরি হয়ে যায়
লবঙ্গের কাত্থ মাখে ধমনীরা।

এক এক দিন ভাবি আজ একটা প্রেমের কবিতা লিখব, কিংম্বা একটা প্রেমের গল্প, কিন্তু লিখব বললেই তো আর লেখা হয়ে ওঠে না। হয়ত লিখতে বসলাম, কিন্তু মাঝ পথেই কলম অবাধ্য হয়ে ওঠে, বেঁকে বসে আর লিখবে না, তখন প্রেমের জায়গায় লিখে বসে বিদ্রোহের কবিতা। অথচ আমি তো বিদ্রোহের কবিতা লিখতে চাই নি। আমার মন মানে না কিন্তু কলম এগিয়ে চলে তর তর। আমি তাল রাখতে পারিনা, আমার অবশ মন কলমের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হয়। সাদা পাতার উপর আমার কলম ওগরাতে থাকে অক্ষরের তেজ।

কলমে ঠিকরে পড়ে অক্ষরের তেজ
হীরের টুকরোর মত কঠিন কথার খাঁজে খাঁজে
আকাঁড়া সত্যের মুখ, জ্বালা ধরায়, টুটি চেপে ধরে বলে
কান ধরে ওঠবোস কর দশবার।

হাল ছেড়ে দি। অথচ কি যন্ত্রনা। মিনিট দশেক আগেই আমি লিখতে চেয়েছিলাম একটা আস্ত প্রেম।আমি বারবার পিছন দিকে তাকাতে চাই কিন্তু কলমের কাছে আমি নিরুপায়, যেনো ও আমাকে একটা নির্দিষ্ট লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছে।এক চুল ও এদিক ওদিক হবার যো নেই। যেনো এর বাইরে পা দিলেই আমি হারিয়ে ফেলব আমার সব অস্তিত্ব।বাধ্য হয়েই তাই ফিরে আসি বারবার বারবার।

পিছনে তাকাই নি আর, ছায়া দেখে ভুল পথে চলে যেতে যেতে
ফের ফিরে আসি লক্ষণরেখার মধ্যে আত্মরক্ষার তাগিদে।

কখন মনে হয় আমি তো প্রেমের কবিতা লিখতে চেয়েছি, কিংম্বা অন্য কিছু কিন্তু যাই লিখিনা কেনো আমার কলম কেনো বারবার আমাকে টেনে ধরে অন্য কিছু লেখায়? কেনো কেনো কেনো, তবে কি ওই প্রেম ফুল পাখি ঈশ্বর এসব কিছু নয় আমার মন আসলে বিদ্রোহের খোঁজ করে। সব কিছুকে ভেঙ্গে তছনছ করতে চায়। কিন্তু আমি ভয় পাই আর তাই বোধ হয় আমার বাইরের মুখোশের মতো আমার মনের আয়নায় আমি পরাতে চাই প্রেমের মুখোশ। আর আমার কলম আমাকে টেনে হিছড়ে দাঁড় করায় সত্যের মুখোমুখি।

কথাগুলি অক্ষরের ঠিকানা ধরে খুঁজে পায়
টেনে নিয়ে আসে বাইরে
প্রখর রৌদ্রের তেজে মুখ দেখে
নিজেকে দেখায়
সে শুধু অক্ষর নয় ভাঁজে ভাঁজে আকাঁড়া সত্যের মুখ।

এক সময় আমার মনের আর কলমের সব যুদ্ধ থেমে যায়। ভয় পেতে পেতে এক সময় মরিয়া হয়ে উঠে আমি দাঁড়াই মুখোমুখি সত্যের। নিজেকে চিনতে পারি। বুঝতে পারি ভয় পেতে পেতে এক সময় সত্যকে আমি অস্বীকার করেছি, ভুলে থাকতে ছেয়েছি আমার আসল ভাবনা কে আর তাই আমার অবচেতন মন কলমের সাথে ষড়যন্ত্র করে আমার সমস্ত লেখার টেবিল জুড়ে বিদ্রোহ করে চলে।

এই অপরাহ্ন বেলায় তাকে দেখে চিন্তে পারি
সে বড় অবুঝ রাখাল
ছায়া পেলে সেও নিদ্রা যায়।

সে কখনো আসবেই ভাবতে ভাবতে বিদ্ধ হয়েছে আমার চরাচর। সে কি ভীষণ নিষাদ? নাকি তীরন্দাজ? কে সে? যার লক্ষে থেকেছি আমি অবিচল স্থির। মাছের সূক্ষ্ম চোখে অর্জুন যে প্রতিদিন তারই সম্মানে খুলে রাখো টুপি, নতজানু হও অরণ্য চূড়ায় – এসব কথা লিখতে গেলে মোহনা প্রেমিক নদী কে ঈর্ষা করি, সমুদ্রে এত জল তবু নদীকে খাবেই সে জেনে ও বুঝে মেঘে মেঘে বেলা বাড়ার দিকে তাকাই, সময়ের হিমবাহ ক্রমশ গলে, ভাবনার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, পারাপারের একমাত্র লেভেল ক্রশিং বেশির ভাগ বন্ধ, ফিসফাস শুনি............

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১২

একা নীলাঞ্জনা আর কিছু প্রলাপ..



একা নীলাঞ্জনা আর কিছু প্রলাপ
ঘুম ভাঙ্গতেই দু এক ফালি মেঘ ছুঁয়ে যায়
আরেকটা দিন অন্য রকম ইচ্ছে ডানা
বুকের ভিতর উথাল পাথাল বৈশাখী ঝড়
শরীর ভেজা চুমুর দাগে নীলাঞ্জনা।

এক একটা দিন এমন ভাবে শুরু হয়, কোন কিছুই ভাল লাগে না। কেনো ভাল লাগে না জানি না কারণ খুঁজে পাইনি কোনদিন। জাস্ট ভাল লাগে না। ঠিক এই রকম এক একটাদিনে ঘুম ভাঙ্গলেই তোর কথা মনে পড়ে নীলাঞ্জনা।এখোনো কি তুই আদুরে বিড়াল এর মত কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকিস?

নীলাঞ্জনার বুকের তিল এ চাঁদ নেমে আয়
পাহাড় চূড়োয় দাঁড়িয়ে থাকি বিপদ সীমায়
এদিক ওদিক জল চুঁইয়ে যায় ফল্গু ধারায়
গোপন গুহায় তোর শরীরেও জল ছুঁইয়ে যায়।

যেদিন প্রথম তোর শরীরের গন্ধ নিয়েছিলাম সেদিন তোর বুকের ওই কালো তিলটা আমাকে ঈশারা করেছিলো। সেদিন বুঝেছিলাম বিপদ আছে তোর শরীরের কোণায় কোণায়।সাঁতার জানা সত্ত্বেও যে কোন মূহুর্তেই ডুবে যেতে পারি অসীম অতলে।মাঝে মাঝে তুই বড্ডো দুঃসাহসী হয়ে যাস। তোর উত্তঙ্গু পাহাড় চূড়ায় তোর নাভীর হাল্কা ভাঁজে যখন ঘামের বিন্দু চিক চিক করে আমি অপলক তাকিয়ে থাকি।আর গোল্ড ফ্লেক এর ধোঁয়া উড়িয়ে তোর চোখে দুষ্টুমি ফুটে ওঠে, কি দেখছিস? ডুব দিবি, সাঁতার জানিস তো?
সমস্ত রাত জেগেই থাকি

ঘুম আসেনা, কফির কাপে র শব্দ চুমুক
তোর কি কিছুই মনে পড়েনা?

এখন কি তোর কিছুই মনে পড়ে না নীলাঞ্জনা? সেদিন গুলো? তোর সাথে প্রথম আলাপের দুপুর বেলা। প্রথম দেখেই চমকে উঠেছিলাম, নীল ফেডেড জিন্স হাল্কা গোলাপী টি-শার্ট এর বোতাম খোলা দুঃসাহসে।এখনো কি তোর জয়ের মেঘবালিকা সাজতে ইচ্ছে করে?কলকাতার রাস্তায় বৃষ্টির জল জমলে এখনো কি তুই বাচ্ছাদের মতো সেই জলে খালি পায়ে ঢেউ তুলিস?

কিছু কিছু সর্ম্পকের মধ্যে থাকে ঘাস
ফুলপাতা, আঁকিবুকি নখের আঁচড়
কিছু নীল রং এলোমেলো বিছানা বালিশ
চাদরের ফুল ছাপে লিখে রাখা
তবু মনে রেখো।

তোর আর আমার এই সর্ম্পকের কি নাম নীলাঞ্জনা? প্রেম বন্ধুত্ব নাকি আরো বেশি কিছু। নাকি হাজার মুখের ভীড়ে পরিচিত মুখ চেনা কেউ? আজ তুই নেই আমার সাথে আমার পাশে, কিন্তু সত্যিই কি নেই তুই?আমার আগোছালো ঘরের দেওয়ালে তুই, আমার আমার বিছানা বালিশ চাদরে তোর প্রিয় স্পর্শ, তোর শরীরের গন্ধ।আমার বই খাতা, লেখার টেবিল এমনকি জানলার বাইরের আকাশেও তোর উপস্থিতি।

জলের পোষাক খোলো!
হেঁটে হেঁটে ফিরে যাও একা
তোমার পায়ের ছাপ
কারা যেন দেখেছে দূরবীনে
কারা যেন অন্ধকারে
প্রশ্নচিহ্ন রেখেছে দরজায়
সকলে প্রমাণ চায় আবিস্কার করে।
শরীর আসার আগে
শরীর যাওয়ার পরে
যেটুকু ভূখন্ড পড়ে থাকে!
আমি কিন্তু দেখেছি তোমায়
জলের পোষাকে!

পাহাড়িয়া মেঘেদের ছৌনাচ এখন এই মহানাগরিক আশমানে।আর আবোল তাবোল বৃষ্টি ধারাপাত --- এই আবগারি আবহাওয়ার নিজস্ব নেশা-পাঠশালা।হাঁপর ঠ্যালা শহরিয়া কেজো বাতাসে মোহময় সোঁদাগন্ধ অফুরাণ।আর গোল্ডফ্লেকের ঝাঁঝালো নিকোটিন স্বাদ ঠোঁট থেকে ক্রমশ আলজিভে অনায়াস। স্নায়বিক তরল্যের সব অনিশ্চিত গতিপথ খুঁজে নেওয়া – এই টাপুর টুপুর বৃষ্টি বিকেলে।বৃষ্টিছাঁও মাটি থেকে একটা হা-ক্লান্ত গরম ভাপ উঠে আসছে। উঠে এসে ছড়িয়ে যাচ্ছে রাস্তায়, ফুটপাথে, ঘাসের ডগায় আর চলমান শরীরে শরীরে হলুদ সবুজ লাল নীল গোলাপী কমলা – সব রঙ্গীলা ছাতার আড়ালে মুখর হচ্ছে গল্প ও না-গল্পরা পারস্পারিক। বৃষ্টিভেজা জেব্রা পেরোচ্ছে নীল জিন্স আর সাদা শার্টের কলেজ পড়ুয়া দলছুট এক তরুণী। কাধেঁর ব্যাগে নিস্পৃহ ভিজে যাচ্ছে সব ভৌগলিক ল্যাটিচিউড-লঙ্গিচিউড, ঐতিহাসিক সব যুদ্ধক্ষেত্র, আঙ্কিক সব জটিল জ্যামিতি কিংম্বা পারমুটেশন্-কম্বিনেশন্। আর ভিজে যাচ্ছেন রবিঠাকুর ও বায়রন পৌনপুনিক সহাবস্থানে।

তোমার সুরক্ষা চাই আর কিছু নয়
আমার শরীর জুড়ে আদিগন্ত পাপ
প্রতিদিন মরি তাই দিনে আর রাতে
আমার ভুলের থেকে আরো দূরে যাও
আমার কাছেতে শুধু নামটুকু থাক
প্রিয় নাম গায়ে মেখে পাপক্ষয় করি
তোমার সুরক্ষাটুকু নিশ্চিত হলে
বিষন্ন শরীর জুড়ে বৃষ্টি নেমে আসে

ভিজে যাচ্ছি তুমি আমি আমরা সবাই। ভিজে যাচ্ছে আমাদের সব না-বলা কথা, না-লেখা কবিতা আর আমাদের সব গোপন ভালোবাসা মন্দবাসার ব্যক্তিগত গদ্য।আমাদের বুকের অন্ধকার অবচেতনে গান গেয়ে চলেছে এক বাউন্ডুলে বৃষ্টি-বাউল! বৃষ্টিস্নাতা সেই তরুণীটির সাদা জামার আপাত স্বচ্ছতা ফুঁড়ে, ফুটে উঠেছে  অন্তর্বাসের লাজুক বিপন্নতা।আর নেশা-পাঠশালায় তখন আদিম আপেলের সেই পুরনো গল্পটা।পরিত্যক্ত কে যেন একা একা মাউথ্অরগানের মরমীয়া সুরে বুনে চলেছে আযান্ত্রিক এক বৃষ্টি-বিষাদ। সমস্ত দিন আজ টুপ টুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। সকাল থেকেই আকাশটা আজ কালো রঙের ছোঁয়ায় নিজেকে সাজিয়েছে। আর এমন বৃষ্টিদিনে একছুটে তোর কাছে পৌঁছতে মন চাইছে নীলাঞ্জনা। কিন্তু তা আর সম্ভব নয় এটা বোধহয় বৃষ্টিও জেনে গেছে।তাই তো আজ সারা দিন ধরে আমাকে নিয়ে খেলেছে বৃষ্টি। বারবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে বৃষ্টি ভেজা সেই দিন গুলোর কাছে। কখনো শুশুনিয়া পাহাড়ের দিন গুলোতে কখনো গড়িয়ার তোর ফ্ল্যাট এর দিন গুলোতে আবার কখনো বা বৃষ্টির গন্ধ মাখতে মাখতে তোতে আমাতে কলকাতার রাস্তায় পাগলা চক্কর মারার দিনগুলোতে।আর আমি নিরুপায় হয়ে দৌড়ে বেড়িয়েছি কখনো শুশুনিয়া থেকে গড়িয়া, কখনো নন্দন থেকে রাসবেহারীর সাট্‌ল ট্যাক্সিতে। তুইও কি আমার মতো স্মৃতি তড়িত আজ নীলাঞ্জনা? নাকি নাকি সেদিন গড়িয়ায় মোড়ে দাঁড়িয়ে আমার মতো স্মৃতি গুলোকেও ঝেড়ে ফেলেছিস মন থেকে একটা একটা করে। আজ সারাটা দিন বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে আমার PC তে বেজেছে রবি ঠাকুরের সেই পাগল করা গান, যা তোর ভীষণই প্রিয় ছিল, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়.........’।কিন্তু আজ কাকে বলব আর কী ই বা বলবো নীল? আমাদের সব কথা ফুরিয়েছে আজ।

এই তো রচিছ পথ যে পথে ছলনাও থাকে
আমি তার বুঝেছি কিছুবা, হয়তো অনেক
জানি
'ভালোবাসি' মানে ভালোবাসা নয় কখনো কখনো
দূরে যাওয়ার জন্যও আসতে হয় কাছে
অথবা
চিঠির জবাবে না লেখা কথার মতোই
লুকিয়ে থাকে কিছু রহস্য-গোপন
সব অভিসারে
মেঘের মতোই নেমে আসে
ঝড়ের মতোই উড়ে আসে
পলির মতোই ভেঙ্গে পড়ে
অভিসার শেষে, কপট সময়।

আজ বড়ো অবাধ্য বৃষ্টিটা। ঠিক যেনো চঞ্চল কিশোরীর মতো, তোর মতো, খুনসুটিতে অস্থির করে তুলেছে আমায়। কিছুতেই বাধ মানছে না। যতই রাগ করি চোখ পাকাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ঠিক তোর মতো। আর বারবার আমাকে তোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।ভাবছিস আমি স্মৃতিমেদুরতায় ভুগছি।না, নীল আজ আমাকে বৃষ্টিতে পেয়েছে আজ আমাকে তো’তে পেয়েছে। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে শুশুনিয়ায় এমনই বৃষ্টি ভেজা দিনে আমাদের সফরের কথা। সেদিনের বৃষ্টি টাও ঠিক আজকের মতো ছিল। আর তুইও হঠাৎ করে সেদিন বৃষ্টি হয়ে গেলি। তারপর তুই আর বৃষ্টি মিলিয়ে সেদিন শুশুনিয়া কে ভিজিয়েছিল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম টেন্টে। তোদের ন্ডকারখানা দেখছিলাম। সেদিন আমি ভিজি নি। তুই আমাকে বলেছিলি ভীতু। নীল সেদিন আমি বৃষ্টি কে ভয় পাইনি, ভয় পেয়েছিলাম তোকে। যদি তোকে ছুঁয়ে দিলে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ঝরে যায় তোর শরীর থেকে, সেদিন বৃষ্ট ভেজা তোকে পাহাড়ের কোলে রুপকথার মত লাগছিল যদি ছুঁয়ে দিলে তুই সাধারন হয়ে যাস।তারপর বৃষ্টি থামলে তুই আমাকে ভাসিয়েছিলি আরেক বৃষ্টিতে। সে আগুনে বৃষ্টিতে পুড়তে পুড়তে আমি ভয় পেয়েছি। তোর যে কোনো তল নেই নীল, তোর যে কোনো সীমানা নেই, সব সীমানাই তুই ভেঙেছিস অবলীলায়। আমি পারিনি, আমি সত্যিই পারিনি নীল।আর পারিনি বলেই সেই বৃষ্টির পর তোকে খুব সাধারন লেগেছিল আর পাঁচজনের মতোই, কেন তা জানি না এর কোন উত্তরই নেই আমার কাছে।

ভেবেছি তোমাকে ভোর
অমানিশা কেটে গেলে তোমাকেই
ধরেছি জড়িয়ে
ঠোঁট ছুঁয়ে হাত ছুঁয়ে চোখের কাজল ছুঁয়ে
জেনেছি এ আমার অমল বেঁচে থাকা
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিউলি, জুঁই, রাতের গন্ধরাজ
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিশির ধোয়া কোমল বকুল
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ছুঁয়ে হাত বলেছি এ আমার গোলাপ গোলাপ
পঁচনের কাল আসে ফুলেরও একদিন!
এ আমি না, ভাবিনি কখনো।

আমার কি সেদিন সাহসী হওয়া উচিত ছিল নীলাঞ্জনা? তাহলে কি আজকের দিনটা অন্য রকম হতো। আজকের এই বৃষ্টি মুখর দুপুর বেলা আমার পাশেই থাকতিস তুই? কিন্তু তোর সেই অসাধারন্ত্ব থাক্তো কি? আমি তো তোকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো চাই নি, আর পাঁচ জনের মতো আমিও তোকে ভালবাসি নি। তুই আমার কাছে রূপকথা, আমার ভালোবাসাও ছিল তেমনি এক জাদু কাঠির স্পর্শ। কিন্তু সত্যিই কি আমরা ভালো বেসেছিলাম?তা হলে আমাদের এই ভালবাসা কেনো সাধারন প্রেম কাহিনীর পরিনতি পেল? গড়িয়া হাটের মোড়ে সেদিন তুই আমাকে দাঁড়করিয়ে রেখে চলে গেছিলি। বলেছিলি, ‘আজ আসি, আমাদের দেখা হবে আর কোনদিনই। ভালো থাকিস’। তারপর চলে গিয়েছিল সোজা কোন দিকে না তাকিয়ে। জানিশ তারপরও বহুক্ষন আমি দাঁড়িয়েছিলাম ভীড়ের মধ্যে। বারবার মনে হচ্ছিল; এই বুঝি তুই ভীড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে বলবি, ‘ কি বে শালা এখানে দাঁড়িয়ে কি মারাচ্ছিস? চ’ একটু মাল টেনে আসি’।কিন্তু তুই আসিস নি। সত্যি বলতো নীলাঞ্জনা ভালোবাসা আসলে কি? আমরা কি সত্যিই ভালোবাসা মানে বুঝি? আজ এই প্রশ্নটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে নীল। অথচ দ্যাখ সাহস করে বলতেও পারছি না কেমন আছিস নীল, প্লিজ তুই ফিরে আয়।।কিন্তু আমি জানি তোর ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে আমার সারা শরীরে, আমার ঘরে, আমার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগোছালো ভাবে আজো আমি সব গুছিয়ে উঠতে পারিনি সেই সব ভালোবাসা। জানি গুছিয়ে রাখলে ভালো হতো, কিন্তু থাক, ওগুলো ছড়ানোই থাক। গুছিয়ে নিলে সে বড় সুখের হতো, কিন্তু তোর চলে যাওয়া সে বড়ো

............

ভালোবাসা লেখা হয় কবিতায় কবিতায়
পাখির ঠোঁটের সুর তুলে আনা
ফিদার ছবিতে
মাধুরীরর কোমর ও নাভিতে
ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া
চৌরাশিয়ার বাঁশি, আহা ভালোবাসি
ভালোবাসা ছড়ানো ছিটানো কত না
চিঠিতে, গল্পে পাতায় পাতায়
লেখা হয় রমনায় চন্দ্রিমা উদ্যানে
গাছের বাকল তুলে নখের আঁচরে
ভালোবাসা চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো
আকাশে বাতাসে দেহে চোখের পাতায়
একবার যদি কেউ কুড়িয়ে কুড়িয়ে
এ অমল ভালোবাসা হৃদয়ে করত জমা
আহা! কত সুখ হত।।

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

নিরন্তর নিঃস্বার্থ তোমার জন্য ....



নিরন্তর নিঃস্বার্থ তোমার জন্য
উৎসর্গ আমার বুবু রাতজাগা পাখিকে



নিঃশব্দের ভাষায় তোমায় লেখা চিঠি .............
দেখবেনা জানি,কিছু ভাষা মনের জন্য,
কিছু কথা না শোনার জন্য,আবেগের ভাষা
কে জানে,হৃদয় অনুভবে খুজে নেয়,বুঝে নেয়
দু চোখের দৃষ্টি।
শব্দহীন সন্ধ্যার পথে চোখের জল ফিরে যায়
অনেক চাওয়ার,অনেক পাওয়ার আবেশে।
হৃদয়ে বর্ষা,ব্যথার ব্যকুলতার সুরে,


গহীনে গোপনে মম স্বপনও জুড়ে আজি কত কথা
ফুরানো দিন, মমতাহীন,সাজে যত ব্যথা।
দেখি যদি তোমায় তব চলেছ একেলা,
ভুলি দিবানিশী ভুলিব বেলা অবেলা,
নিরন্তর নিঃস্বার্থ তোমার জন্য আমার এ পথচলা।







অনেক দিনের বৃষ্টির সাধ ছিল,মনের উঠোন শুকিয়ে চৌচির
স্বপ্ন তৃষিত শূন্য দৃষ্টি।
আশার বর্ষন শেষে আজ রোদ উঠেছে সাঝের মায়ায়।
দুঃখ জীর্ন শূন্যতা,অবহেলার অংক উত্তরহীন,
বহুকালের অসহায় সমীকরন অশ্রু ফোটা আড়ালে,
তুমি দেখনি।
কত জীবন ভগ্নাংশের শেষফল রাতজাগা পাখির পালকের
উষ্ঞতায় জমেছিল,আজ ছুয়ে গেল সে ,ভালবাসা আর মমতায়।


বুবু ভাল থেকো অনেক ভাল।
যদি আমার সব সুখ দিয়ে তোমার একটু কষ্ট মুছতে পারি,
তবে অশ্রুটুকু আমায় দিও।
বর্ষা আমার ভাল লাগে সাঝসন্ধ্যা তুমি নিও।



রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১২

আমি বৃষ্টি দেখেছি

আমি বৃষ্টি দেখেছি

নীলুর বৃষ্টি অনেক পছন্দ ছিল । বৃষ্টি হলে আর কোন কথা নাই । ওর মাথায় কি এক অদ্ভূদ চিন্তা ছিল যে বৃষ্টি হলে ওকে ভিজতেই হবে । কোন সময় জ্ঞান নাই । বৃষ্টি মানে ভিজতেই হবে ।
ইনফ্যাক্ট ওকে আমি প্রথম লক্ষ্য করি এই বৃষ্টিতে ভেজা নিয়েই । একদিন ক্লাস করছিলাম । ও আমার পরেই বসে ছিলাম । হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাকল ।
-এই অপু ? এই ?
এমনি চিনতাম ওকে । কিন্তু এর আগে কখনও কথা হয়নি ওর সাথে ।
-এই শোন না !
আমি একটু অবাক হলাম । একটু বিরক্তও । কোন দিন কথা বলি নি । প্রথম কথাতেই তুই ।
-কি ?
-আমার বই আর খাতাটা একটু রাখতো !
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলু বের হয়ে গেল । আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না ! বাইরে ততক্ষনে ঝুম বৃষ্টি আরাম্ভ হয়েছে । একটু পর লক্ষ্য করলাম নীলু বাচ্চা কয়টা ছেলে মেয়েদের সাথে বৃষ্টির ভিজছে । বলতে গেলে নাচা নাচি করছে ।
এতো বড় একটা ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে যে এমন করে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে আমার ধারনার বাইরে ছিল ।

উহু ! নিজের মনকে আবারও একটা ধমক দিলাম । আমি আবারও নীলুর কথা ভাবতে শুরু করেছি । সকালবেলাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে ওর কথা আর ভাববো না । কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ওর কথা আবার ভাবতে শুরু করেছি । আসলে সব দোষ এই হতচ্ছাড়া বৃষ্টিটার । সেই দুপুর বেলা থেকে একভাবে ঝড়েই যাচ্ছে ।
আর আমার কেবল মনে হতে লাগল ঐ বৃষ্টিটা আমাকে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলছে আমি তোমার খুব প্রিয় একজনের খুব প্রিয় ছিলাম ।
আমি চোখ ফিরিয়ে নেই । ঘরের সব জানালা বন্ধ করে দেই । আমি বৃষ্টি দেখবো না । ফুল ভলিউমে টিভি ছেড়ে দেই । বৃষ্টির শব্দও আমি শুনতে চাই না । আমি এমন কিছু করতে চাই না যা আমাকে নীলুকে মনে করিয়ে দেয় । আমি ওকে মনে করতে চাই না ।
কেন মনে করবো ওকে ? যে আমাকে একা রেখে চলে গেছে তার কথা আমি কেন মনে করবো ? আমি মনে করবো না । সোফার উপর বসতে ইচ্ছা হয় না । সবুজ কার্পেটার উপর শুয়ে পড়ি ।
নীলু খুব শখ করে এই কার্পেটটা কিনেছিল । নষ্ট হয়ে যাবে বলে বসার ঘরে এটা বিছায় নি । সোবার ঘরটাতে বিছিয়েছিল । প্রথম যেদিন কার্পেটটা পাড়ে নীলুর আনন্দ দেখে কে !!
বাচ্চা মেয়ে দের মত খুশিতে ওর চোখমুখ আনন্দে ভরে ছিল । আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দেখো না কি সুন্দর লাগছে ! মনে হচ্ছে সবুজ একটা মাঠে চলে এসেছি ।
আমি এখন ভাবছি অন্য কথা । আমি তখন আসসোস করছি এতোগুলো টাকা বেড়িয়ে গেল বলে ! অবশ্য আফসোসের খুব বেশি কারন ছিল না । আমার নিজের টাকা না বাপের টাকা । তবুও নতুন সংসারে এখনও কতকিছু কেনা বাকি ! আগে ব্যাচেলার ছিলাম তাই কোন ব্যাপার ছিল না ।
-কই বল না কেমন ?
-ভাল কিন্তু একটু বেশি বিলাশিতা হয়ে গেল না ?
নীলু মুখ একটু মলিন হল ।

আরে দুর ! যত চাচ্ছি ওকে ভাববো না তত ওর ভাবনা চলে আসছে । আমি সবুজ কার্পেট থেকে বিছানায় উঠে এলাম । ওর কথা কিছুতেই ভাববো না । আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি । ঘুমালে হয়তো ওর ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবো ।

-কি করছ ?
নীলুর কণ্ঠ । কিন্তু ওর কন্ঠ কিভাবে আসবে ? নিশ্চই আমার কল্পনা ।
-কিছু করছি না ।
নীলুর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।
-সত্যি কিছু করছো না ?
-না । তোমার সাথে কোন কথা নাই । তুমি চলে যাও ।
-বাব্ব বাহ আমার উপর রাগ করছ ?
-হুম । রাগ করেছি ।
নীলু আবার হেসে উঠল ।
-হাসছো কেন ?
হাসি মিশ্রিত কণ্ঠ নীলু বলল
-তুমি আমার উপর রাগ করতেই পারবে না । সেই ক্ষমতা তোমার নেই ।
কোন জুটসই জবাব না পেয়ে বলল
-তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল ?
-কই গেলাম ? এই তো আমি তোমার কাছে । তোমার সাথে কথা বলছি ।
-না তুমি বলছ না । তুমি আমার কল্পনা ।
-আচ্ছ ? তাই ?
নীলু আবার হেসে উঠল । বলল
-আচ্ছা তুমি যা বল তাই । এখন চল বাইরে খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু ভিজি ! চল না !
বৃষ্টির কথা উঠতেই আমি ভিজতে গেলাম । কিন্তু নীলুকে কোথাও দেখতে পেলাম । নাম ধরে ডাক দিলাম । কিন্তু ও কোন জবাব দিল না ।
ওর নাম নিতে নিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল । পুরো ঘর কেমন অন্ধকারে ছেয়ে আছে । টিভি চলছিল । এখন বন্ধ । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে তুমুল বেগে । আওয়াজ আসছে । কারেন্ট চলে গেছে বোধহয় ।
বাধ্য হয়েই জানালা খুলে দিলাম । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে ।
আমার নীলুর পছন্দের বৃষ্টি !

ঐ দিন পর নীলু পরপর দুদিন ক্লাসে আসল না । তৃতীয় দিন একটা টিউটিরিয়াল ছিল । ঐ দিন নীলুকে আবার দেখলাম । কিন্তু চেহারার একি অবস্থা ? ও কাছে এসে ওর খাতা পত্র চাইল । দিতে গিয়ে বললাম
- চেহারার একি অবস্থা ? শরীর খারাপ নাকি ?
নীলু শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর ।
বই গুলো নিয়ে ও ঘুরতে যাবে ঠিক এমন সময় ও কেমন জানি দুলে উঠল । আমি না ধরলে হয়তো মাথা ঘুরে পরে যেত । ওর গায়ে তখন আকাশ পাতাল জ্বর ।
-একি তোমার গায়ে তো খুব জ্বর !
নীলু আবার শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর । আমাকে একটু বেঞ্চে বসিয়ে দিবে প্লিজ ।
-তোমার গায়ে খুব জ্বর । এখন বসতে হবে না । ডাক্তারের কাছে চল আগে ।
-এখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে । আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না । তুমি পরীক্ষা দাও ।
-আরে এরকম টিউটিরিয়াল আরো হাজারটা আসবে । আগে ডাক্তারের কাছে চল ।

ওকে একপ্রকার জোর করেই ক্যাম্পাসের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম । টিউটিরিয়াল দেওয়া হল না । ডাক্তারের কাছ থেকে যখন বের হয়েছি এখন ওর অবস্থা আরো খারাপ । কেমন যেন লাগছিল । ওকে এই অবস্থা ছেড়ে আসতে কেন জানি মনে চাচ্ছিল না । ও বলল
-আমাকে একটু হলে রেখে আসবে ?
-হুম । কোন হলে থাকো ?
ও হলের নাম বলল ।
-তোমার রুম মেইট আছে এখন রুমে ?
নীলু একটু হাসল ।
-আছে । অন্তত ১০০ আছে ।
-মানে কি ?
-আমি গন রুমে থাকি ।
-ও মাই গড ! এ অবস্থায় তো তোমাকে গনরুমে রাখা যাবে না । ঢাকায় কোন আত্মীয় আছে তোমার ?
-নাহ ।
-তাহলে ?
-তাহলে কিছু না । আমাকে হলেই রেখে আসো ।
-না । তুমি আমার সাথে চল ।
-কোথায় ?
-আমার বাসায় চল ।
নীলু আমার দিকে তাকাল । কি যেন ভাবল ? তারপর বলল
-তোমার বাসায় সমস্যায় হবে না ? মানে আমি একটা মেয়ে !
-কোন সমস্যা নাই । আমি ফ্লাট ভাড়া করে থাকি ।
ও আর কথা বলল না । অবশ্য ওর সে অবস্থা ছিলও না । নীলুকে বাসায় নিয়ে আসলাম ।
মোটামুটি পাঁচ দিন ওর অবস্থা বেশ খারাপ ছিল । একবার ভাবলাম হাসপাতালে নিয়ে যাই । আবারও ডাক্তার ডেকে আনলাম । পাঁচদিন পর ওর জ্বর ছেড়ে গেল ।
ঐ দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলু রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে বললাম
-কি করছ তুমি ?
নীলু খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-রুটি বানাচ্ছি । দেখছ না ?
-দেখতে তো পাচ্ছি । কিন্তু কেন করছ ?
-আশ্চর্য মানুষ রুটি কেন বানায় ? খাওয়ার জন্য !
-আরে বাবা তুমি কেন করছ ? তোমার শরীর খারাপ । তোমার বিশ্রাম নেওয়ার দরকার । আর কাজ করার জন্য বুয়া তো আছে । একটু পরই চলে আসবে ।
নীলু হাসল ।
-অনেক বিশ্রাম করেছি । আর কত ? তাছাড়া জ্বর নেই ।
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর কপালে হাত দিলাম জ্বর দেখার জন্য । আসলেই জ্বর নেই ।
ওর কপাল থেকে হাত সরিয়ে নেবার সময় ওর চোখে চোখ পড়ল । ঠিক তখনই আমার মনের মধ্যে কেমন জানি একটা অস্বস্তি হল ।
আমি কিভাবে এতো সহজে ওর গায়ে হাত দিয়ে ফেল্লাম ? এই পাঁচ দিনে তো কতবার ওর জ্বর মেপেছি, একবারও এই অস্বস্তিটাতো আসে নি ! তাহলে এমন কেন অস্বস্তি লাগছিল ?
আমার জানা নেই । ওকে ওভাবে রুটি বানানো অবস্থায় দেখে আমার মনে আরো অদ্ভুদ একটা অনুভূতি হল ।
নাস্তা খাওয়ার সময় অনেক কথা হল ওর সাথে । বলা চলে ওখান থেকে আমাদের মেলামেশা শুরু হল । তারপর থেকে ওর সাথে অনেক সময় কাটাতে লাগলাম । আমরা সবকিছু শেয়ার করতাম ।


বৃষ্টির বেগ মনে হচ্ছে বেড়েছে । এরকম বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই । ওকে কিছুতেই ধরে রাখার উপায় ছিল না । বৃষ্টিতে ও ভিজবেই । আমি জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই । বৃষ্টির ফোটা আমার হাতে পড়তে লাগল ।
-এভাবে ভিজলে কি হয় ?
নীলুর কথা যেন আবার শুনতে পেলাম ।
-কিভাবে ভিজবো ?
-তুমি মনে হচ্ছে জানো না ? মনে নেই এই ছাদটাতে আমরা একবার বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম !

আমার এই বাসাটা একে বারে ফ্লাট বললে ভুল হবে । তিন ইউনিটের বাড়িতে বাড়িওয়ালা কেবল এক ইউনিট কোন রকম করে ফেলে রেখেছে । পুরো ছাদটাই বলতে গেলে ফাকা পরে আছে । নীলুর এই ফাকা ছাদটাও অনেক পছন্দ ছিল । ও প্রায়ই আসতো ।
বাচ্চা মেয়েদের মত ছাদে উপর লাফালাফি করতো । একা একা এক্কা দোক্কা খেলতো । আমি হাসতাম কেবল ।
ঐ দিন সকালবেলা আমার বাসায় এসে হাজির । কাঁদে ছোট একটা ব্যাগ । আমি জিজ্ঞেস করলাম
-ব্যাগে কি ?
ও বলল
-শাড়ি । আজ খুব বৃষ্টি হবে । শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজবো আজ ।
কেমন যেন একটু অন্য রকম লাগছিল ওকে । বুয়া আসলেও ওকে বিদায় করে দিল । দুপুরের রান্না ও নিজেই করল । দুপুরের দিকেই বৃষ্টি আরাম্ভ হল । আমি জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি এমন সময় নীলু এসে হাজির । ওকে দেখে একটু অবাক হলাম । এর আগে কখনও ওকে শাড়িতে দেখি নি ।
কালো ব্লাউজের সাথে কালো শাড়ি আর কপালে কালো বড় একটা টিপ । আমি খানিকটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম এক ভাবেই । নীলু একটা কালো পাঞ্জাবী আমার দিকে এগিয়ে বলল
-নাও এটা পর ।
-কার এটা ?
-তোমার জন্য কিনেছি । নাও জলদি পরো এখন । আজ তোমার সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো ।
কালো পাঞ্জাবী পরে বৃষ্টি নেমে পড়লাম । বৃষ্টির ফোটা গুলো কেমন সিরসরে অনুভূতি জাগাচ্ছিল মনে । কালো শাড়ি পরা নীলু আমার আগে আগে হাটছিল । একটা সময় আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরল । আমার দিকে তাকাল গভীর ভাবে ! নীলুর ঐ গভীর দৃষ্টিতে কি ছিল জানি না আমার পুরো পৃথিবীটা যেন এলো মেলো হয়ে গেল ।
সেদিন ঠিক কি করেছিলাম আমার আজও ঠিক মনে পড়ে না । কি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম ।
কেবল এই টুকু মনে আছে ওকে খুব গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম । আর পাগলের চুম খেয়েছিল ওকে ! বৃষ্টির জলে যেন দুজন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলাম ।

-কি হল ভিজবে না বৃষ্টিতে ?
-না ভিজবো না ।
-কেন ? চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
-তুমি ভিজো ।
-তুমি না ভিজলে আমি কিভাবে ভিজি ?
-সেদিন কিভাবে ভিজেছিলে ?
হঠাৎ আমার কন্ঠস্বর তীব্র হয়ে ওঠে ।
-কেন সেদিন ভিজেছিলে ?
আমি আবার জানতে চাই চিৎকার করে ।
কোন জবাব আসে না ।

নীলুকে তার কিছুদিন পরেই বিয়ে করে ফেলি । ওকে আর কিছু ভাল লাগতো না তখন । একটা পলক না দেখলে কেমন জানি অস্থির লাগতো । বিয়ের পর আমাদের জীবনটা আরো সুন্দর হয়ে ওঠে । দুজন দুজনকে একটা পলকের জন্য চোখের আড়াল করতাম না ।
একসাথে ভার্সিটি যেতাম একসাথে আসতাম । একসাথে খেতাম , একই প্লেটে খেতাম , গোসল করতাম একসাথে বিকেল হলে ওর সাথে ছাদে ছোটা ছুটি করতাম ।
ওর ছেলেমানুষী যেন আরো বেড়ে গেল । আগে বৃষ্টি হলেতো কেবল ও একা ভেজার জন্য লাফাতো তখন আমাকেও ভিজতে হত ওর সাথে ।
বৃষ্টির প্রতি এমন পাগলামো দেখে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম । বিরক্ত হওয়ার প্রধান কারন টা হল প্রত্যেকবার বৃষ্টি ভেজার পরই ওর জ্বর আসতো । মাঝে মাঝে তো জ্বর গায়ে নিয়েও বৃষ্টিতে নেমে পড়ত । তখন খুব চিৎকার চেচামেচি করতাম । কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হত না ।
ঐ দিন ঠিক একই কাজটা করেছিল । নীলুর গায়ে আগে থেকেই দুদিনের জ্বর ছিল । রাত তখন বারটা কি সাড়ে বারটা হবে । সারাদিন ক্লাস নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম । বিকেল বেলা আবার নীলুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম । ডাক্তার বৃষ্টিতে ভিজতে সাফ মানা করে দিয়েছে ।
তবুও নীলু আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলল
-এই বাইরে না খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
ওকে ধমক দিলাম । ডাক্তার কি বলেছে মনে করিয়ে দিলাম । চুপচাপ ঘুমাতে বলে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকাল বেলা বাথরুমে ভেজা কাপড় দেখে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তারমানে রাতের বেলা ও আমাকে না জানিয়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে । মেজাজটা খারাপ হল ।
নীলুকে বকার জন্য শোবার ঘরে গিয়ে দেখি নীলু প্রায় অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে আছে । ওর গায়ে আকাশ পাতাল জ্বর ।
কি করবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না । জ্বল পট্টি দিয়েও কাজ হচ্ছিল না ।
জ্বর কমছিল না কিছুতেই । উপায় না দেখে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম । স্ট্রাচারে যখন ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন অল্প ক্ষনের জন্য ওর হুস ফিরেছিল । আমি তখন ওর হাত ধরা । ও ফিসফিস করে বলল
-আমার উপর রাগ রেখো না কেমন ! তোমার কথা শুনিনি বলে আমার উপর রাগ রেখো না ।
-তোমার উপর কখনও রাগ করেছি আমি বল ?
-তুমি ভাল থেকো ।
আমি আর কথা বলতে পারলাম না । নার্সরা ওকে আইসিইউ এর মধ্যে নিয়ে গেল । আমি শেষ বারের মত ওর চোখে জল দেখতে পেলাম ।

- কই চল । বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে তো ?
-আমি ভিজবো না ।
-প্লিজ চল না !
আমি চুপ করে থাকি । কেন জানি আমার কান্না আসে !
-কই চুপ করে আছো কেন ? চল ! ঐ কালো পাঞ্জাবীটা পরো । কাবাডের বাম পাশের ড্রায়ারে আছে ।
ওকে কথা দিয়েছিলাম ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি না । ও ভাল থাকতে বলেছিল কিন্তু আমি ভালও থাকতে পারছি না ওকে ছাড়া ।
আমি কালো পাঞ্জাবীটা পরে নিই । বৃষ্টির ফোটা আমার মনে আজও কেমন একটা শিহরন জাগায় ! যেন ও এখনও আমার পাশে বৃষ্টিতে ভিজছে । ওর খুব পছন্দের বৃষ্টি ।

শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১২

ঐ বিষন্ন মুখে হাসি আমি ফোটাবো

 

ঐ বিষন্ন মুখে হাসি আমি ফোটাবো..
ঈশিতা প্রথমে বুঝতেই পারল না কি হচ্ছে । ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল । ও আসলে ভাবতেই পারে নি যে আমি এই রকম একটা কাজ করবো বা করতে পারি ।
যখন লিফটের দরজা দিয়ে বের হলাম পিছন ফিরে চাইলাম । এতো দিন পর এই প্রথম ওর চোখে আমি বাষন্নতার জায়গায় এক টুকরো বিশ্ময় দেখতে পেলাম । ঈশিতা এতোটাই বিশ্মিত হয়েছে যে হয়তো ও ভুলেই গেছে এই ফ্লোরেই ওকে নামতে হবে । আস্তে করে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল । আমি আমার কেবিনে ঢুকে পরলাম ।
প্রথম যে দিন আমি এই অফিসে যোগদিই সেই দিনই ঈশিতার প্রতি আমি ইন্টারেস্টেড হয়ে উঠি । একনম্বর কারন হল আমার পোষ্টটা টা ঈশিতার আন্ডারে । ম্যানেজার সাহেব যখন আমাকে ঈশিতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল তখন আমার মনে হল এই টুকু একটা পিচ্চি মেয়ের আন্ডারে আমি কাজ করবো ?
এই পিচ্চি মেয়েটা আমার বস ?
দ্বিতীয় কারনটা হল পিচ্চি হলেও মেয়েটা অসম্ভব গম্ভীর । প্রয়োজনের একটাও বেশি কথা বলে না । আমি ভেবে পেলাম না এই টুকু বয়েসে মেয়েটা এতো গম্ভীর্য পেলো কোথা থেকে ?
প্রথম দিনে এই কথাটাই কেবল আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল । এমনটা কেন হবে !
আমার বস হওয়ার সুবাধে ঈশিতার সাথে আমার কথা বলার অনেক স্কোপই তৈরি হতে লাগল । কিন্তু ঈশিতা সেই আগের মতই । প্রয়োজনের একটাও বেশি কথা মেয়েটা বলে না । কয়দিন পরই এক কলিগের কাছ থেকে মেয়েটার এমন গাম্ভীর্যের কারন জানতে পারলাম । জানতে পেরে মোটামুটি একটা সক খেলাম ।
মেয়েটা বিবাহিত । ও মাই গড ! এটু টুকু পিচ্চি মেয়ে বিবাহিত । আরো জানতে পারলাম মেয়েটার খুব সুখী একটা সংসার ছিল ।
আগে সবার সাথে খুব মেলামেশা করত ।সবার সাথে কথা বলত , হাসতো । খুব প্রাণ চঞ্চল একটা মেয়ে ছিল । কিন্তু মাস ছয়েক আগে একটা দুর্ঘটনায় মেয়েটার স্বামীটা মারা যায় । তারপর থেকেই মেয়েটা এমন চুপচাপ হয়ে যায় । তারপর থেকেই মেয়েটার উপর আমার আকর্ষন আরো বেড়ে যায় ।
আমি উপায় খুজতে শুরু করলাম কিভাবে ঈশিতাকে আবার স্বাভাবিক করা যায় ! কিভাবে মেয়েটার মুখে হাসি ফোটানো যায় ! এসব ভাবতে ভাবতে একটা সময় আমি লক্ষ্য করলাম আমি সারাটা সময় কেবল ঈশিতার কথাই ভাবছি । যতক্ষন অফিসে থাকি ততক্ষন কেবল ওর আসেপাশে থাকতে ইচ্ছা করে । কোন না কোন কাজের বাহনায় আমি ঈশিতার কেবিনে যেতে লাগলাম । ওর সাথে একটু বাড়তি কথা বলার চেষ্টা করতে লাগলাম । খুব যে বেশি লাভ হল তা বলব না , কিন্তু আমি নাছড়বান্দা । আমি চেষ্টা করতেই থাকলাম ।
কিন্তু সব ভাল কাজে বাধাতো আসবেই । কয়দিন আগে আমার হাতে আমার প্রমোশন লেটার এসে হাজির হল । তাতে বলা হয়েছে আমাকে সিনিয়র অফিসার পদে অধিস্থিত করা হয়েছে । তারমানে ঈশিতার সমান পদ । কিন্তু সমস্যা হল আমার আমার পোষ্টিং হল অন্য শাখায় ।
কিন্তু আমি ঈশিতাকে ছেড়ে কিভাবে যাবো ? মোটেই যাবো না । প্রমোশনের খ্যাতা পুড়ি আমি । লাগবে না আমার প্রমোশন । চুপচাপ বসের কেবিনে গেলাম । গিয়ে বললাম আমার প্রোমোশনের দরকার নাই । আমাকে যেন আগের পদেই রাখা হয় ।
বস শুধু অবাক হল না যেন আকাশ থেকে পড়ল তাও আবার সাত আসমানের উপর থেকে । কিন্তু আমার কাজ করার রেকর্ড মোটামুটি ভাল । তাই বস আমার কথা রাখলেন ।
সেই দিনই ঈশিতা আমার সাথে প্রথম কথা বলল । মানে কাজের বাইরে কোন কথা বলল । ওর কেবিনে গেছিলাম একটা কাজে । কাজ শেষে কেবিন ছেড়ে যাবো ঠিক এমন সময় ও পিছন থেকে ডাকল ।
-অপু সাহেব একটু শুনুন ।
-জ্বি বলুন ?
-আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ? যদি কিছু না মনে করেন ।
-হ্যা অবশ্যই ।
ঈশিতা খানিকটা ইতস্তত করে বলল
-আচ্ছা আপনি প্রমোশনটা রিফিউজ কেন করলেন ?
আমি হাসলাম । বললাম
-আসলে সাভারে পোষ্টিং দিচ্ছিল তো তাই ইচ্ছা করলো না যেতে ।
ঈশিতা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল । কি বিষন্ন সেই দৃষ্টি ! তারপর বলল
-আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা কখনও সম্ভব না । কখনও না ।
আরে মেয়েটা বলে কি ? তার মানে আমার আচরন ওকে কিছুটা ভাবিয়েছে । ও কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে । আমি একটু হাসলাম । বললাম
-যদি লক্ষ্য থাকে অটুত দেখা হবে বিজয়ে ।
-মানে ?
-কোন মানে নেই । আমি আসি । আমি আবার হাসলাম ।
কেবিন থেকে বেরনোর আগে আমি আবার ঘুরে দাড়ালাম । বললাম
-ঈশিতা !
ঈশিতা মুখ তুলে চাইল ।
-আমি আপনার মুখে আমি হাসি ফোটাবোই ।
আর দাড়ালাম না । ঘুরে চলে এলাম ।
তারপর আমি ওর আশেপালে থাকি । প্রত্যেকটা কাজে ওকে জানান দেওয়ার চেষ্টা করি যে আমি আছি তোমার আসেপাশে । যতক্ষন না তুমি হাসছো ততক্ষন আমি নড়ছি না । কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না । ঈশিতা ঠিক আগের মতই রয়ে গেল । আগের মতই চুপচাপ আগের মতই বিষন্ন ।
তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করতাম আমার উপস্থিতিতে ওর চেহারার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনতো । তবে এটা সিওর বুঝতাম না যে ওটা অস্বস্তি ছিল নাকি আনন্দ । এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল । ঈশিতার সাথে দেখা হচ্ছিল কথা হচ্ছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না । মেয়েটার বিষন্ন চেহারায় কিছুতেই পরিবর্তন আনতে পারছিলাম না ।
তারপর আজকের দিন এল । অফিসে আসতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছিল । লিফটের সামনে এসে দেখি ঈশিতা দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখেও যেন দেখল না ।
আরে এটা কেমন কথা হল ? আমরা একসাথে কাজ করি দুএকটা কথাতো বলা যায় !
আমি খানিকটা হেসে বলল
- গুড মর্নিং
ও যথারীতি আমার দিকে না তাকিয়েই বলল
-গুড মর্নিং ।
লিফট চলে এল । মাত্র দুজনই । আর কেউ উঠল না । আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম যেন আর কেউ না ওঠে । দরজা বন্ধ হতেই ঈশিতাকে বললাম
-মানুষের সাথে এরকম ব্যবহার করা কিন্তু ঠিক না ।
-আপনি কি আমাকে বলছেন ?
-না আপনাকে কেন বলব ? আমার পাশের ফ্লাটে একটা পেট মোটা লোক থাকে সে সবসময় মানুষকে খুব হার্ট করে । তাকে বললাম কথাটা ।
ঈশিতা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । আমি আবার বললাম
-এটা কি ধরনের প্রশ্ন হল ? অবশ্যই আমি আপনাকেই বলতেছি ।
-অপু সাহেব আমি এমনই ।
-কিন্তু আপনিতো এমনটা ছিলেন না ।
-কেমন ছিলাম এটা প্রশ্ন না এখন কেমন আছি এটাই প্রশ্ন ।
-আমার খুব খারাপ লাগে আপনার এরকমটা দেখে । আপনি কি পরিবর্তন হতে পারেন না ? নতুন করে জীবন শুরু করা কি যায় না ?
এবার ঈশিতা খানিকটা কঠিন গলায় বলল
-দেখুন আপনার কি ভাল লাগে না লাগে তাতে আমার কিছু যায় আসে না ঠিক আছে । আপনার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।
কি ? মেজাজটা খানিকটা খারাপ হল । এই মেয়েটার কথা ভেবেই আমার সারাটা দিন যায় । আমার কেবল এই চেষ্টা থাকে কিভাবে এর মুখে হাসি ফোটাবো আর এই মেয়ে কিনা আমাকে গোনার মধ্যেই নেই নেয় ।
আমি কি জলের টানে ভেসে এসেছি । ঈশিতার মুখোমুখি গিয়ে দাড়াই । ও কিছু বলার আগেই ওর হাত দুটো চেপে ধরলাম । বললাম
-এই মেয়ে তোমার প্রবলেম কি ? আমার সাথে এমন কেন কর তুমি ?
আমার তখন রাগে শরীর কাঁপছে । নিজের মধ্যে নেই আমি । কি করছি কি বলছি কিছুই ঠিক নেই । তোমাকে আজ আমি মজা দেখাচ্ছি । বলেই ওকে চেপে ধরে চুম খেলাম ওর ঠোটে । বেশ লম্বা করেই ।
যখন হুশ হল ততক্ষনে লিফটের দরজা খুলে গেছে । ভাগ্য ভাল যে দরজার বাইরে কেউ ছিল না । আমি লিফট থেকে বের হয়ে এলাম । যথন পিছনে ফিরে তাকালাম লিফটের দরজাটা বন্ধ হচ্ছে । আর প্রথম বারের মত ঈশিতার চেহারায় বিষন্নতার জায়গায় আমি বিশ্ময় দেখতে পেলাম ।

কাজ টাজ করছিলাম । কিন্তু মনটা ঐ দিকেই পড়ে ছিল । একটু দুষ্চিন্তাও হচ্ছিল । না জানি ঈশিতা কি একশন নেয় । তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল ও কাউকে কিছু বলবে না । সারা দিনে একবারও ঈশিতার কেবিনে যাই নি ।
পরদিনও গেলাম না । কিন্তু পরদিন অফিস ছুটি হবার একটু আগে পিয়ন এসে একটা চিরকুট দিয়ে গেল । বলল ঈশিতা দিয়েছে । চিরকুট টা খুলে দেখলাম
অপেক্ষা করবেন প্লিজ ।

প্রথমে ভেবেছিলাম ঈশিতা হয়তো খুব ঝাড়ি মারবে । কিন্তু ওকে বেশ নরম দেখাল । আর সব থেকে বড় কথা হল ওর চেহারায় বিষন্ন ভাবটা তুলনা মূলক ভাবে কম ।
অফিসের সামনের একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম আমরা । সত্যি বলছি আজ ঈশিতাকে দেখতে খানিকটা অন্য রকম লাগছে । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আজ ঈশিতা হাসবে । আমার এতো দিনের চেষ্টা আজ সফল হবে ।
আমি আগে মুখ খুললাম, বললাম
-তোমাকে সুন্দর লাগছে ।
একেবারে আপনি থেকে তুমি । হাহাহা !!!
-এই কথা কেন বললেন ?
-কারন আজ তোমার চেহারায় বিষন্নতাটা কম । একটু আছে তবে আমার বিশ্বাস এখন আমার সাথে কথা বলার পর তাও থাকবে না ।
-আপনার বিশ্বাসে সমস্যা আছে । আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই হবে না । আমি শুধু একটা কথা জানতে আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি ।
-তাও তো নিয়ে এসেছ ! বল তোমার কথা ।
-আপনি কেন করলেন কাজটা ?
-কোন কাজটা বল তো ?
-শুনুন ঢং করবেন না । আপনি খুব ভাল করেই জানেন কোন কাজটা !
সরাসরি ঈশিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি কি শুধু এই কথাটা জানার জন্যই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ ?
ঈশিতা চট করেই উত্তর দিল না । কিছুক্ষন পর মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ওর আরো কিছু বলার আছে ।
-আগে তোমার কথা শুনি ।
খানিকটা সময় চুপ করে থেকে ঈশিতা বলল
-আপনি যে কাজটা করেছেন ঠিক এমনই একটা ঘটনা আমার জীবনে এর আগেও ঘটেছে ।
-মানে ?
-মানে সজিব । আমার হাজবেন্ড । বিয়ের আগে ও আমাদের পাশে ফ্লাটেই থাকতো । একদিন লিফটের মধ্যে আপনার মতই কথা বলতে বলতে আমাকে চেপে ধরে কিস করেছিল । ওর খুব রাগ করার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু পারি নি । ঐ ছেলেটা কিভাবে যে আমার মনটা নিজের করে নিল বুঝতেই পারলাম না । আমার সব কিছুই যেন ওর ছিল । আমার সব আবেগ অনুভূতি ভালবাসা সব কিছুই ওর ছিল । ও চলে যাবার পর ওর সাথে সাথে এ সব কিছুও হারিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু ...
-কিন্তু কি ?
-আজ আমি আপনার উপর রাগ করতে পারছি না । আপনি যে কাজটা করেছেন অভিয়াসলি আপনার উপর আমার রাগ করা উচিত্ কিন্তু আমি রাগ করতে পারছি না । আমি কাল সারাটা রাত কেবল আপনার কথা ভেবেছি । আপনি এতো দিন যে আমার পিছনে লেঘেছিলেন তার প্রতিটা কথা আমি কাল রাতে ভেবেছি । খানিকটা অবাক হয়েছে ।
তারপর একটু ইতস্তত করে বলল
-খানিকটা খুশিও হয়েছি ।
খুশি ?
ওমাইগড !
এই মেয়েটা কি বলছে !
এই সুযোগ । আমার যা বলার তা বলেই ফেলতে হবে ।
আমি ওর হাত ধরলাম । ঈশিতা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি বললাম
-আমার চেহারাটা তো এতোটা খারাপ না যে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে । জানো কলেজ লাইফে আমার পিছনে কত গুলো মেয়ে ঘুরতো !
ঈশিতা মুখে একটু যেন হাসির আভা দেথতে পেলাম । তবে ওর চেহারার বিষন্নতা পুরোপুরি কেটে গেছে ।
ওকে বললাম
-জীবনটাকে সব সময় সচল রাখতে হয় । এটাই জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট । কিন্তু তুমি তোমার জীবনটাকে থামিয়ে রেখেছ । একটা জায়গায় আটকে রেখেছ । এতে যেমন তুমি কষ্ট পাচ্ছ তোমার আসেপাশের মানুষ গুলোও কষ্ট পাচ্ছে । এটা কি ঠিক হচ্ছে বল ?
ঈশিতা আবার মাথা নাড়াল ।
-তাহলে কেন এমন করছ ? তোমাকে একটা গল্প বলি । একটা ছেলে একটা মেয়ে অনেক ভালবাসত । কিন্তু একদিন মেয়েটা মারা যায় । এতে ছেলেটা খুব বেশি কষ্ট পায় । সারা দিন কান্না কাটি করে মন খারাপ করে থাকে । একদিন ছেলেটা মেয়েটাকে স্বপ্নে দেখলো । স্বপ্নে দেখলো যে মেয়েটার চারিপাশে খুব চমত্কার পরিবেশ । গাছগাছালি রংবেরংয়ের জিনিস পত্রে ভরপুর । কিন্তু কেবল মেয়েটা যেখানে আছে তার আসেপাশে সবকিছু কেমন যেন প্রানহীন বিবর্ণ । ছেলেটা আরো লক্ষ্য করল আসেপাশের সবার ঘরে আলো জ্বললেও মেয়েটার ঘরে কোন আলো জ্বলছে না ।
ছেলেটা জানতে চাইল তোমার এমন কেন অবস্থা ।
মেয়েটা বলল আমার এ অবস্থার জন্য তুমি দায়ী ।
ছেলেটা খুব অবাক হল । বলল কেন ? মেয়েটা বলল তুমি যে আমার জন্য সারাদিন কান্নাকাটি কর তোমার সেই চোখের জল এসে আমার ঘরের মোমবাতি নিভিয়ে দিয়ে যায় । এই জন্য আমাকে অন্ধকারে থাকতে হয় । আর তুমি যে মন খারাপ করে থাকো তোমার সেই বিষন্নতা আমার চারিপাশটাকে প্রান হীন করে তোলে ।
ঈশিতা বলল
-এ গল্প আপনি কোথা থেকে শুনেছেন ?
-কোথা থেকে শুনেছি ইম্পর্টেন্ট না । মুল থিমটা ইম্পর্টেন্ট । তুমি কিন্তু তোমার ভালবাসার মানুষটাকেও কষ্ট দিচ্ছ । যে ঐ উপরে আছে তোমাকে দেখছে তাকে কষ্ট দিচ্ছ আর যে তোমার কাছে আছে তাকেও ।
ঈশিতা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-আচ্ছা আমি তাহলে কালকেই সাভারে পোষ্টিং নিয়ে নিচ্ছি । ঠিক আছে ?
ঈশিতা এবার অবাক হল ।
-কেন ?
-আরে আশ্চর্য আমার বউ যদি আমার উপরে জব করে তাহলে লোকে কি বলবে ? ঘরেও আমি বউয়ের কথা শুনবো আবার অফিসেও তার কথা শুনবো তাহলে কিভাবে হয় ?
ঈশিতা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল ।
এই প্রথম ওকে আমি হাসতে দেখলাম । হাসলে ওকে কি চমত্কারই না লাগে । হাসতে হাসতেই বলল
-আমার বয়েই গেছে তোমাকে বিয়ে করতে ! কত কিছু ভাবো না তুমি । ঠিক মত কথা শুরু করতে পারলাম না উনি বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছে । বসে বসে স্বপ্নই দেখো তুমি ।
আমি কোন কথাই বলি না । কেবল ওর হাসি ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি । মনে হয় আমি জয়ী হয়েছি ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১২

সে আমার বন্ধু ছিল



এপ্রিল২৬, ২০১২

মোবাইল ফোনটা বেজেই চলেছে তো বেজেই চলেছে। উফ! অসহ্য! আর কত জ্বালাবে আমাকে ওই ছেলেটা? সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে। বার বার লাইন কেটে দেয়ার পরও সমানে কল দিয়ে যাচ্ছে। এমন নাছোড়বান্দা জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখি নাই।
বাধ্য হয়ে অবশেষে ফোনটা রিসিভ করলাম। ‘হ্যালো’।ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল জুয়েলের গলা, ‘হ্যালো শর্মি, আমার মনটা আজ ভাল নেই রে’। তোমার মন ভাল নাই তো আমার কি? যার তার মন ভাল করার চাকরি নিয়েছি নাকি আমি? আজব! কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখ ফুটে ওকে বলতে পারলাম না। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি ভাইয়া’। ওপাশ থেকে জুয়েলের দী্র্ঘ নিঃশ্বাস পতনের শব্দ শুনলেও পাত্তা দিলাম না। সে বলল, ‘ তুই তো এখন সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকিস। আচ্ছা ফ্রি হলে ফোন দিস তাহলে’।
ছেলের কথা শুনে বিরক্তি যেন চরমে উঠল। চেপে চেপে বললাম, ‘আমার ব্যালেন্স শেষ ভাইয়া’। কেটে দিলাম কলটা। আহ, শান্তি! যাক বাবা, অন্তত আধা বেলার জন্যে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে এই আপদ থেকে। অবশ্য জুয়েল নামের এ আপদটাকে একসময় আমিই ডেকে এনেছিলাম আমার জীবনে!
কুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম আমি। কারণ আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমি বুয়েটে পড়ব। এখানে নতুন কোন বন্ধু তো হয়ইনি উলটো স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সাথেও এক এক করে দূরত্ব বাড়তে লাগল। আমার প্রেমিক ইমনকে নিয়েও সন্দেহ করা শুরু করলাম! নষ্ট হতে লাগল ওর সাথে আমার সম্পর্ক। গান পাগল আমি গান শোনা বন্ধ করলাম, পড়ার বই এর ফাঁকে ফাঁকে গল্পের বই পড়াও ছেড়ে দিলাম। একসময়কার মেধাবী স্টুডেন্ট আমি পড়াশোনাতেও লাড্ডু পেতে থাকলাম! আসক্তি জন্মাল মিগ৩৩ এর প্রতি। দিন নেই,রাত নেই সারাক্ষণ শুধু মোবাইল টেপাটেপি করতাম। ‘মিগ’ এর মত ভার্চুয়াল জীবন হয়ে গেল আমার কাছে বাস্তব! মিগ এর তথাকথিত বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি,তাদের সুখে হাসি আর তাদের দুঃখে কেঁদে ফিরি! এতদিন জানতাম হতাশ মানুষ drug addicted হয়ে যায়। কিন্তু আমি দিন দিন পরিণত হতে লাগলাম mig addicted এ!!
এমনি এক মুহূর্তে জুয়েলের সাথে আমার মিগ এ পরিচয় হল। ওর কাছে খুলে বললাম আমার অতীতের উজ্জ্বল দিনগুলোর স্মৃতি, বর্তমানের অন্ধকারময় জীবনের কথা। সব শুনে জুয়েল আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল। ওকে আমার ফোন নাম্বার দিলাম। এভাবে গড়ে উঠল আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব। ‘তোর আসলে বন্ধুর চেয়ে একজন care taker এর দরকার বেশি,বুঝলি’? জুয়েলের কথা শুনে হাসলাম আমি। ‘তাহলে তুমি আমার care taker হয়ে যাও ভাইয়া’, বায়না ধরলাম ছোট বাচচাদের মত।জুয়েল আমার বন্ধু বা care taker হতে রাজী হল। সেই সাথে জানিয়ে দিল তার জীবনের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা— পরবর্তী সপ্তাহ থেকে তার মেডিকেল কলেজে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা শুরু। তার একজন প্রেমিকা আছে, তাই আমাকে যে সে সবসময় সময় দিতে পারবে , এমন কোন প্রতিশ্রুতি সে দিতে পারছেনা। আমি সানন্দে রাজী হলাম তার শর্তগুলো শুনে। আসলে ঐ সময়টায় খুব ভাল একজন বন্ধু দরকার ছিল আমার, যে কিনা আমাকে প্রতিনিয়ত guide করে আমার বিশৃংখল জীবনটাতে শৃংখলা এনে দিতে পারবে।
‘ ভাইয়া আমি আমার ২ বছর আগের জীবনটা ফিরে পেতে চাই’,আমার এরকম কথা শুনে জুয়েল আমাকে আশ্বস্ত করল, ‘ইনশাল্লাহ ফিরে পাবি আপু। শুধু আমি যেভাবে বলব সেভাবে কাজ করে যা। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে’। জুয়েল প্রথমেই আমার জন্য যা করল তা হল আমার জীবন থেকে ও মিগ৩৩ কে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিল। বলল, ‘একা একা লাগলে আমাকে কল দিবি।কিন্তু মিগ এ ঢুকবিনা খবরদার’। সেদিনই মোবাইল থেকে মিগ ফোল্ডার মুছে দিলাম। সকাল নেই ,বিকেল নেই কলেজে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলাম আমার নতুন বন্ধুকে। যে আমি আগে মাসে ৫০ টাকাও রিচার্জ করতাম কিনা সন্দেহ,সেই আমি এখন দিনে ৫০ টাকা শেষ করে ফেলি ভাইয়াকে ফোন করতে যেয়ে!
কিন্তু একদিন কল করার পর পরই জুয়েল ভাইয়া বলল, ‘ঐ পাগলী, ফোনটা রাখতো। রিয়া waiting এ আছে,এখন কল রিসিভ না করলে আমাকে আবার বকবে,’ ফোনটা কেটে দিতেই চোখ ভরে গেল জলে! আমার চেয়ে ঐ প্রেমিকা রিয়াই তাহলে তোমার কাছে অনেক বড় তাইনা? কেন জানি খুব হিংসা হচ্ছিল রিয়া নামের অচেনা মেয়েটিকে। এক বিকেলে জুয়েল বলল, ‘ শোন,এখন থেকে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে তোর প্রিয় গানগুলো আবার আগের মত করে শুনবি,বুঝলি?’ ওর কথামত আমি আবারও গান পাগল হয়ে উঠলাম! একদিন ভোরবেলা কল দিয়ে বলল, ‘ কিরে,ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সকালটা মাটি করছিস কেন? নামাজ পড়ে পড়াশোনা করতে বস,যা’।সেই থেকে খুব ভোর থাকতেই ঘুম ভেঙ্গে যেত আমার! ‘ভাইয়া আমার না ভার্সিটিতে কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাই জান?’ কথাটা বলতেই জুয়েল বলে উঠল, ‘বন্ধু পাওয়ার জন্য আগে নিজেকে sacrifice করতে শেখা লাগে। দেখবি তখন তোর বন্ধুর অভাব হবে না’। ভাইয়ার কথা শুনে চলতেই ঠিকই কয়েকদিন পর আমার খুব ভাল একটা friend circle গড়ে উঠল!
একদিন সন্ধ্যেবেলায় জুয়েলকে কল দিচ্ছি কিন্তু ও বারবার লাইন কেটে দিতে লাগল। আধা ঘন্টা পর ফোন ধরতেই এক রাশ অভিমান ঝরে পড়ল আমার কন্ঠ বেয়ে, ‘কি ব্যাপার ফোন কেটে দিচ্ছো কেন?’ জুয়েল কৈফিয়ত দিল, ‘sorry আপু,রুমমেটের কাছ থেকে পড়া বুঝে নিচ্ছিলাম রে’। সে আমাকে কখনই বুঝতে দেয়নি যে সে কতটা টেনশন এ আছে তার পরীক্ষা নিয়ে। ওর পরীক্ষার পুরা ২ টা মাস সে আমার সাথে কথা বলেছে কোন বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়াই,আমাকে guide করেছে। ইমনের সাথে আমার দূরত্বের কথা শুনে ভাইয়া বলল, ‘ইমন তোর জন্য কি করেনি সেগুলো না ভেবে,কি করেছে সেগুলা আগে চিন্তা করে দ্যাখ’। বললাম, ‘ইমন তেমন কিছুই করেনি।তবে পরীক্ষার সময় ও নিজের পরা বাদ দিয়ে আমাকে পড়িয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাতেই বেশি ব্যস্ত থাকত’। এভাবে ভেবে ভেবে অনেক কিছুই বের করলাম,যা ইমন আমাকে ভালবাসে বলেই করে। ধীরে ধীরে ইমনের উপর থেকে আমার করা অভিযোগগুলো কমতে লাগল। আমি যেন আবারও নতুন করে ইমনের প্রেমে পড়লাম!
ছোটবেলায় টুকটাক লেখালেখি করতাম। জুয়েলের উৎসাহে লেখালেখি আবারও শুরু করে দিলাম। পাঠাতে লাগলাম পত্র-পত্রিকাগুলোতে।আর কি আশ্চর্য সেগুলা এক এক করে ছাপাও হতে থাকল! আস্তে আস্তে মাস দুয়েক পর বুঝতে পারলাম আমি আমার হারানো জীবনটা ফিরে পেয়েছি।চারপাশে বন্ধুর সমারোহ, প্রেমিকের ভালবাসা,পড়াশোনায় ভাল ফলাফল,লেখালেখি,গান আর গল্পের বই নিয়ে সাজানো সেই হাসি-খুশি প্রাণ-চঞ্চল শর্মিকে নিজের মাঝে খুঁজে পাচ্ছি আমি!
বন্ধু, প্রেম আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় জুয়েলকে খুব একটা ফোন দেয়া হতনা। আগে যেখানে দিনে ৬-৭ বার ফোন দিতাম,এখন ওর সাথে আমার কথাই হয় ৫-৬ দিন পর পর! দিন দশেক আগে সে জানাল, রিয়ার সাথে ইদানিং নাকি ওর সম্পর্কটা ভাল যাচ্ছেনা। ভাল না গেলে আমার কি করার আছে,আজব তো, আমাকে কেন ফোন করে এসব বলা হচ্ছে? খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নাই নাকি ওর? গত সপ্তাহে জানাল,তার রেজাল্ট বেরিয়েছে এবং ১ টা বিষয়ে নাকি খারাপও করেছে, ২ মাস পর আবার সেই পরীক্ষাটা দিয়ে তবেই জুয়েল MBBS পাশ করতে পারবে। কিন্তু এসব কথা আমাকে বলে কি লাভ বুঝলাম না। আমি কি ওর হয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসব নাকি?সামনে আমারো পরীক্ষা, লেখালেখি নিয়েও ভীষণ ব্যস্ততা। এর মাঝে এই ছেলের যন্ত্রণা সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে আমার খুব। এখন আমার মনের কথা শোনার জন্য ইমন আছে,উৎসাহিত করার জন্য আছে প্রিয়াংকা,তুলি,মানস,রবি,তারিন এর মত বন্ধুরা। কোথাকার কোন এক জুয়েল,যাকে কোনদিন দেখিনি,যার সম্পর্কে কিছু জানিনা,তার জন্য ফালতু কাজে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার হাতে নেই এখন!
আবারও মোবাইলটা বাজছে! নাহ।এবার দেখি সিম কার্ডটা বদল করতেই হবে। প্রচন্ড রাগে মোবাইল থেকে খুলে ফেললাম সিমটা। আঙ্গুলের সর্বশক্তি প্রয়োগে ভেঙ্গে ২ টুকরো করে ফেললাম জুয়েলের সাথে আমার সম্পর্ক,আমাদের ৩ মাসের বন্ধুত্ব!!

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

আমি তোমার মনের ভিতর

 

 

আমি তোমার মনের ভিতর

“আগে জানলে, তোমাকে বিয়েই করতাম না।“
“কি জানলে?”
“এই মেজাজ আর এই চেহারা ওয়ালা মেয়েকে পাগল ছাড়া আর কেও বিয়ে করে?”
“তা হলে প্রেমে পড়ে মজনু হয়েছিলে কেন? আবার যে দুই বার স্যুইসাইট করতে নিয়েছিলেন জনাব। সেই কথা নতুন করে মনে করে করিয়ে দিতে হবে না-কি?”
“সেই মেয়ে তো আর এখনকার তুমি না?”
“দেখ বেশী মাথা গরম করিয়ে দিও না। তুমি যেই অহনার প্রেমে পড়ে দিওয়ানা হয়েছিলে, সে ছিল আমার বাবার আদরের দুলালী। অনেক আদর-যত্নে বড় করেছিল। আর সেই আদরের দুলালীকে দিনে দিনে ধবংস করে তুমি আজকের অহনাকে বানিয়েছ”।
“কি বললে, আমি তোমাকে ধবংস করেছি। ঠিক আছে যাও বাবার বাড়ি যেয়ে আলালের ঘরে দুলালী হয়ে থাক যেয়ে।“
“কি, কি বললে? আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলছ?”
“তা বলবো কেন?  তুমিই তো বললে আমি তোমাকে ধবংস করে দিয়েছি।”
“ঠিক আছে, আমি আজকেই চলে যাব।”
ব্যাস আরম্ভ হয়ে গেল, পারিবারিক তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আরেক পর্ব। একেবারে সম্মুখ যুদ্ধ।
প্রতিপক্ষ দুই নিয়মিত পরাশক্তি অহনা আর কাজল।

দুই পক্ষের শান্তিকালীন সময় বেশী দিন স্থায়ী হল না। এর আগের বড় যুদ্ধের পরে অহনা চলে গিয়েছিল বাবার বাসায়। যাবার সময় বলে গিয়েছিল, চল্লিশ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বিবাহ করে দেখিয়ে দিবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে আকাশের মেঘ তাদের বাঁচিয়ে দিল। অহনা অন লাইন ম্যাচিং সার্ভিসকে বললো, তার এমন ছেলের দরকার, যে ছেলে মেঘের সাথে কথা বলতে পারে। শেষে দেখা গেল, কাজলই এক মাত্র সে রকম ছেলে, যে মেঘের কথা বুঝে। তার পরে দু জনের মিলমিশ হয়ে গেল।
তিন মাসের মধ্যেই প্রথম সংঘর্ষ লাগলো। অহনা এখন কম্পিউটারে বেশী সময় কাটায়। ফেসবুক, ই-মেল, ফার্ম ভিল আর কত কি। কাজল প্রথমে অবাক হল। যে মেয়ে মাত্র কয়েক দিন আগে পর্যন্ত কম্পিউটারের আশে পাশে পর্যন্ত যেত না, সে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাচ্ছে সেখানে। আড়িপেতে দেখল, বিষয়টা কি? যে রকম সন্দেহ, অনেকটা সে রকম আবিষ্কার করলো। এখনো অহনাকে অন লাইন ম্যাচিং সার্ভিস থেকে ঠিকানা পাওয়া ছেলেরা ইমেল করছে। অহনা ওদের উত্তর দিচ্ছে। কেও কেও আবার ফেসবুকের বন্ধু পর্যন্ত হয়েছে। ব্যাপারটা ভাবতেই কাজলের শরীরটা রি রি করে উঠলো।  কে জানি বলেছিল, মেয়েদের ভালবাসা নদীর মত। তা শুধু বহেই যায়।  অহনার ভালবাসা কি কাজলকে ছাড়িয়ে চলে গেছে অনেক দূর! এ গুলো ভাবতেই কাজলের মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। কিছু একটা প্রচণ্ড শব্দ করে ভেঙ্গে ফেলতে পারলে খুব ভাল হত।
অহনা দেখল, বাড়ি ফিরে আসার পরে, প্রথম কয়েক দিন কাজল তাকে খুব মনযোগ দিল। সাথে সাথে থাকা, বেড়াতে যাওয়া,  গল্প করা, সুযোগ পেলেই হাত ধরে বসে থাকা আর কত কি। কয়েক বার ছাদে যেয়ে মেঘের সাথে কথা পর্যন্ত তারা বলেছে। ঠিক সে-ই প্রেম করার দিনগুলোর মত। কিন্তু কাজল আবার আগের চেহারা পেতে থাকলো। ছুটির দিনে দেরী করে ঘুম উঠা, খাবার টেবিলে বসে মোবাইলে বন্ধুদের সাথে কথা বলা। অহনার সব কথা ভুলে যাওয়া রোগটা কাজলের ফিরে আসলো। মামাকে জাপানে চিঠিটা পোস্ট করেছ, গ্যাসের বিল দিয়েছ, কলের পানি বন্ধ হচ্ছে না, সারা দিন টিপ টিপ করে পড়ছে, মিস্ত্রিকে ডেকেছ?——– এ রকম সব প্রশ্নের উত্তর কাজল কি দিবে, অহনার একেবারে তা জানা। ‘মনে ছিল না, ভুলে গেছি’। অহনা  গজ গজ করতে থাকে, সব কাজই যখন ভুলে যাও, তখন বিয়ে করার কথাটা মনে রেখেছিলে কি করে।  এ রকম লোকের সাথে আর যাই হোক ঘর করাটা মুশকিল।

দুই পক্ষের কথা বার্তা বিভিন্ন মেয়াদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকবার অনশন ধর্মঘট পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু কোন আন্দোলনের ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। যখনই এক পক্ষের মনে হচ্ছে বেশী ছাড় দেয়া হয়ে গেছে, তখনই আবার নতুন করে আক্রমন করা হচ্ছে। দুই পক্ষই কোন নতুন সুযোগ হাত ছাড়া করতে রাজী না।
এ রকম কঠিন অবস্থার মধ্যে প্রকৃতির আরও কিছু রসিকতা করার ইচ্ছে হল। ঘুমের মধ্যে এ পাশ ওপাশ করতে কাজল সশব্দে নাক ডাকার অভিষেক করলো। অহনা ধাক্কা দিয়ে কাজলকে এপাশ থেকে ওপাশ করলে, মিনিট পাঁচেকের জন্যে নাক ডাকা বন্ধ থাকলো। তার পরে আবার নতুন উদ্যমে আরম্ভ হল।  বেচারা অহনার ঘুম হারাম হয়ে গেল। মানুষ আবার এত জোরে নাক ডাকে ন-কি!
অহনা প্রথমে কয়েক দিন সহ্য করার চেষ্টা করলো। ভাবল তুলির মত অভ্যাস হয়ে যাবে। তুলি একবার গল্প করেছিল, তার স্বামীও একবার হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা আরম্ভ করলো। কয়েক দিন সমস্যা হলেও, তুলির এখন নাক ডাকার শব্দ শুনতে ভালই লাগে। কেমন একটা ঘুম পাড়ানির গানের মত মনে হয়। কিন্তু অহনার বেলায় হল ঠিক উল্টো। রাতের বেশীর ভাগ সময় না ঘুমিয়ে কাটাতে হলো।
অনেকটা বাধ্য হয়ে, অহনা বেশ মিষ্টি করে বলল, তুমি কি একটু ডাক্তার চাচার সাথে দেখা করতে পার? কথাটা শুনে কাজল ভাবল, নিশ্চয়ই অহনার কোন সমস্যা হয়েছে। দুর্বল প্রতিপক্ষের সাথে তো আর যুদ্ধ করা চলে না। মনে মনেই ‘সিস ফায়ার’ ঘোষণা করলো। এখন থেকে যুদ্ধ বিরতি কিংবা যুদ্ধ একেবারে বন্ধ। জানতে চাইলো, কেন, কেন ডাক্তার চাচাকে কি বলতে হবে?
অহনা খুব নরম করে বলল, যেয়ে বল, তুমি ঘুমালে ভীষণ নাক ডাকছ, আমি ঘুমাতে পারছি না। এর জন্যে তোমাকে ওষুধ দিতে। কাজল ধরে নিল, তাকে ছোট করার জন্যে এইটা অহনার অবশ্যই নতুন একটা কৌশল। বেশ জোরেই উত্তর দিল, আমি নাক ডাকি আর আমি জানি না। আর উনি শুনতে পান। কাজল ‘সিস ফায়ার’ উঠিয়ে নিয়ে একটা নোংরা ধরনের অস্ত্র ব্যাবহার করলো, স্বপ্ন দেখার মাত্রা কিছুটা কমালে সব ঠিক হয়ে যাবে। কাল্পনিক নাক ডাকার শব্দে আর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না।
বিজ্ঞানের সুফল আর কুফল নিয়ে যদি কখন বিতর্ক হয়, তবে পরের দিনের ঘটনা তার একটা বিশাল বড় উদাহরন হতে পারে। ওই দিন রাতেই, অহনা মোবাইল ফোনের ভিডিও অপশনে যেয়ে, কাজলের নাক ডাকা রেকর্ড করলো। সকালে কাজলকে ভিডিও দেখাল। কাজল দেখে কিছু বলল না, কিছু একটা একটা চিন্তা করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। বুঝল, অহনার কাছে ঘায়েল হয়েছে। বক্সিং খেলায় চিৎপটাং হয়ে নক আউট হয়ে যাবার দশা।
রাতে কাজল বালিশ, কাঁথা নিয়ে বসার ঘরে সোফায় যেয়ে ঘুমাল।

অহনা প্রথমে এক হাত নিতে পারাতে খুশীই হল। যাক বাবা, অনেক দিন পরে একটু আরাম করে ঘুমান যাবে। আর যাই হোক, এত শব্দের তার ঘুমান সম্ভব না। এই সব ভাবতে ভাবতে আসলেও অহনা ঘুমিয়ে পড়ল। আহ কি আরাম। পৃথিবীতে ঘুমের থেকে প্রশান্তির জিনিষ কি আর কিছু আছে?
স্বপ্নের মধ্যে মনে হতে থাকলো, সে নাক চুলকানোর কিছু একটা দেখছে।  একটু পরে মনে হতে থাকলো, নাকটা মনে হয় বাস্তবেই চুলকাচ্ছে।  চোখ খুলে বুঝার চেষ্টার করতে লাগলো, স্বপ্নের নাক চুলকানি কেন বাস্তব মনে হচ্ছে।  কিন্তু, সেই সুযোগটা বেশীক্ষণের জন্যে পেল না। আরম্ভ হল, হাচ্চু, হাচ্ছু, হাচ্ছু। এক, দুই, তিন,…………একুশ, বাইশ……তেত্রিশ। শুধু নাক না, গলা, চোখ সব চুলকাচ্ছে। বুঝল এলারজি এ্যাটাক। বিয়ের পরে এই প্রথম। পৃথিবীর কোন ওষুধ এখন কাজ করবে না।
কাজল পাশের ঘর থেকে ছুটে আসলো। ভয় পেয়ে গেল। যুদ্ধের সব কথা ভুলে যেয়ে মানবতা এসে মনে ঠায় নিল। চল, চল, তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। অহনা হাচ্চুর ফাঁকে ফাঁকে বললে, একটু… পরে… কমে… আসবে………।
পরের দিন নাস্তার টেবিলে, অহনা কাজলকে তার এলারজি এ্যাটাকের কথা বলল। এই সমস্যা না বলে কয়েই আসে। বেশ কয়েক বছর আসে নি।  কিন্তু আসলে কিছুক্ষণ খুব যন্ত্রণার মধ্যে থাকে। কাজল ভাবল, কালকের ঘটনার প্রতিশোধ এত অল্প সময়ের ব্যাবধানে আসলো। ভাগ্যটা সুপ্রসন্ন মনে হল। বুকের ছাতিটা ফুলিয়ে বলল, আমার নাক ডাকার শব্দে একটা মানুষের ঘুমের সমস্যা হয়েছিল। আর তোমার হাচ্ছুর শব্দে পুরো পাড়ার মানুষ ঘুম থেকে উঠে বসেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম বলে ওপেনিং ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করার মহা প্রসাদ পেল। আহ, কি আনন্দ! প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করা গেল।

কাজল বসার ঘরে অপেক্ষা করছে। এই বুঝি অহনা বের হয়ে গেল। মাথার মধ্যে কত চিন্তা কাজ করছে। এক সময়কার লাস্যময়ি অহনা  আর তার সাথে হাসি মুখে কথা বলে না। তার সব কিছুতেই মহা বিরক্তি। এখন দু জন দুই ঘরে শোয়। এটা কি কোন দাম্পত্য জীবন হল। একটু নরম শরীরের ছোঁয়া নে পেলে কি আর ঘুমান যায়। কিন্তু অহনা যখন ওই সবের কোন মর্যাদা দিতে পারে না, তখন আবার কিসের কি?
ঘণ্টা খানেক বসে, উঁকি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো অহনার এত সময় লাগছে কেন।  অবাক কাণ্ড। অহনার কানের মধ্যে হেড ফোন দিয়ে একটা গল্পের বই পড়ছে। কি অদ্ভুত, ওর না চলে যাবার কথা। দেখা যাক আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে।
পরের বার যেয়ে দেখা একই অবস্থা। অহনা একেবারে বইয়ের মধ্যে ঢুকে আছে। মাঝে মাঝে আবার মুচকি মুচকি হাসছে। হয়তো হাসির কোন গল্প। কাজল যেয়ে অহনার পিঠে টোকা মেরে, হাতের ইশারায় বলল, কি ব্যাপার, তোমার যাবার কি হল?
অহনা একেবারে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, কানের হেড ফোন খুলে, বইটা পাশে রেখে কাজলের দিকে তাকাল। সেই, সেই দৃষ্টি। আগে যখন ওরা প্রেম করত, তখন কোন কারণে যদি এক দিন যদি দু জনের দেখা না হত, সেই দৃষ্টি।  অহনা সেই অপলক দৃষ্টি দিয়ে কত হাজার কথা না বলত। কোথায় ছিলে, কেমন ছিলে, তোমাকে না দেখে চোখটা শুকিয়ে পাথর আর বুকটা মরুভুমি হয়ে গেছে। একেবার কাজলের বুক ছিদ্র হয়ে গলে পড়তে লাগলো। এখন বললে, কাজল, অহনার জন্যে সুন্দরবন থেকে নিজের হাতে একটা মায়াবী চোখের হরিন নিয়ে আসতে পারে। আরেক কথায় এভারেস্টের চূড়ায় যেয়ে এক মুঠো বরফ নিয়ে আসতে পারে। এই মেয়েকে ছেড়ে এক মুহূর্ত থাকা সম্ভব না।
কাজলের অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। অহনা কাজলের কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল, তোমার পাশের সোফায় গত তিন রাত একটা মেয়ে যেয়ে ঘুমায়, তা কি তুমি জান। আসলে অহনা, গত কয় রাত কাজল ঘুমিয়ে যাবার পরে তার পাশের সোফায় যেয়ে শোয়, আবার সকালে কাজলের উঠার আগে চলে আসে। অহনা বলতে লাগলো, তোমার নাক ডাকার শব্দ, এখন আমার তুলির মত, ঘুম পাড়ানির গান মনে হয়।
কাজলের সাথে সাথেই অহনার সব কিছু মিষ্টি মনে হতে লাগলো। এ যে চিনির থেকে বেশী মিষ্টি, গুড়ের থেকে বেশী মিষ্টি, মধুর থেকে বেশী মিষ্টি। এই মিষ্টিতে কোন ক্লান্তি নাই। এ যে একেবারের অন্য রকম মিষ্টি।  যে এ মিষ্টির সাধ এক বার পেয়েছে, সে-ই শুধু জানে এ কি রকম মিষ্টি।
পারিবারিক তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ অনির্দিষ্ট কালের জন্যে মুলতবী হয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১২

কাব্যগল্প: এই যে একটু শুনুন

কাব্যগল্প: এই যে একটু শুনুন
তখনো ভাঙেনি শিশিরগুলো ভোরের সবুজ ঘাসের পাতা থেকে,
শুভ্রতায় ঝলঝলে ভোরের রক্তিম উদিত সূর্যের কিরনে পরশ ছোঁয়ে নিচ্ছে,
গমের শিষে এই শিশিরের খেলায় দেখেছিলাম এক ত্রিশোর্ধ বয়সী সুবর্ণা নারীকে।
শুভ্র মুখায়বে লাবণ্য সোনালী বর্ণের মুগ্ধকর চেহেরার ভিতর খেলছিল-
সৌন্দর্যের বিলাস;
হাতে ক্যামেরা,হালকা লাল-সাদা ফুটি ফুটি বৃত্তের হাতাওয়ালা গেঞ্জিটা পরায়,
উদ্দাম বুক,মাথায় সুন্দর মানানসই এক টুপি,
মনে হচ্ছিল বারবার রাত্রির আকাশে থেকে এই দিনের শুরুতেই,
খসে পড়েছে একটি অদ্ভুত নক্ষত্ররুপী এক মায়াবি নারী,
এই দিবালোকে হেলমেট টুপিতে তাকে মানিয়েছে এতটা মাধুর্য্যবতী,
যে রুপের বর্ণনা করতে ভাষাহীনতায় কিছুটা সময়ের জন্য হয়ে যাচ্ছি বাকরুদ্ধ!

ফাল্গুনের উতলা বসন্তের প্রারম্ভ দিনের মিষ্টি সকাল,
বাড়ীর উঠোনের গাছগুলোতে দেখেছিলাম কিছু ফুটন্ত রক্তিম শিশির ঝরা গোলাপ,
ইচ্ছে ছিল দু’তিনটি গোলাপ ছিঁড়ে বের হই ভোরে ভোরেই,
এখন প্রতিটি ভোর হলেই হিমালিয়াকে জানাতে হয় মুঠোফোনে শুভ সকাল,
এরপর একগুচ্ছ লাল গোলাপের শুভেচ্ছার সাথে আমার সজীব ভালবাসা নাও,
তারপর…..?
থাক বলব না;আমি এখন স্যুটিং স্পটে,দাড়িয়ে আছি এশিয়া হাইওয়ে রোডে,
রোডের পাশে বিস্তৃত ক্ষেতে দেখতে পাচ্ছি গমের শিষে ঝলক ঝলক শিশির বিন্দু,
আস্তে আস্তে জড়ো হতে শুরু করেছে নানা বয়েসী মানুষের ঢল,
চলচ্চিত্র স্যূটিং,
চলচ্চিত্র স্যূটিং! হিমালিয়া রাতেই অবাক প্রশ্নে উচ্ছাস ঝেরে বলে ছিল,
হ্যা তেঁতুলিয়ায় চলচ্চিত্র স্যূীটং!
সে স্যূটিংয়ে আমিও একজন বাস যাত্রী হিসেবে শট দিতে যাচ্ছি,
এমনি একটা দৃশ্য দেখার জন্য শ্রাবণের বিরামহীন বৃষ্টির মত,
জড়ো হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই তেতুলিয়ার আপামর মানুষ।

কিসের স্যুটিং ভাই,নাটকের? কেউ একজন প্রশ্ন করে উঠে,
কোন নায়ক-নায়িকা এসেছে বলতে পারেন ভাই,বলে উঠে আরেকজন!
ওহ্ ফাটাফাটি ব্যাপার তো;তেতুলিয়া কি স্যুটিং স্পট হয়ে গেল নাকি,
এশিয়া হাইওয়ে রোড! পরিচালকের চয়্যেস এর তুলনা করা যায় না;
অদ্ভুত চলতো আরেকটু সামনে বলে এগিয়ে যায় কলেজ ছাত্র সিমন,
বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি হাজারও দর্শকের কৌতুহলী চোখের পাতার দিকে,
সূর্যের কিরণে আনন্দের ঝিলিকে মাতিয়ে তুলছে এই অবুঝ গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষগুলো।
রাস্তার দু’ধার। উপচে পড়া লোকারণ্যের কৌতুহলী দর্শকের ভিতর,
রাস্তার মাঝ বরাবর ক্যামেরা বসিয়ে ব্যস্ত কয়েক ক্যামেরা ম্যান,
গ্লুকোজ বিস্কুতের একটা বিজ্ঞাপনের সর্ট নিতে দু’দুটি মিনিবাস ভাড়া করা,
শটের পর শট,নায়কের ডান হাতে ব্যাগ,ব্যস্ত হয়ে পড়ে মধুখালি বাস ধরতে,
ক্লান্তির অবসাদে ব্যাগ থেকে গ্লুকোজ বের করে খেয়ে ফের মধুখালির বাস ধরা-
ঘড়ির দিকে নায়কের দৃষ্টিতে ধরা পরে ফেল পরার তীব্র যাতনার,
মধুখালির বাসটা কি সে একটি গাড়ি ওভারট্যাক করে ধরতে পারবে??

আমি হাটছি,গায়ে আমার কোর্ট-প্যান্ট,কালো স্যু,যাত্রি হই মাঝে সাঝে,
কবিত্ব মন,লেখার জগতে হারিয়ে যাই কখনো কখনো,
জীবনটাই তো এক নাট্য মঞ্চ,হতে পারে বিশাল গল্পের খন্ড খন্ড চলচ্চিত্রের,
এক একটি শট নেওয়া ঘটনার পর ঘটনা;
আমার সামনে সেই শুভ্রময়ী নক্ষত্রের মত উজ্জল তারকা,
হাতে ক্যামেরা,ক্ষণে ক্ষনে চোখে নিয়ে ক্যাপচার করেন হয়তো পরিকল্পনা দৃশ্যগুলো,
আমি অবাক হইনা;তবে লজ্জিত হই,কারণ উনার বুকের পোষাক নেহায়তই বেমানান,
তবু মেনে নিতে হয়,এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জগতে একটু খোলা-মেলা না থাকলে,
নারীর সৌন্দর্য্যে পরিস্ফুটন হয়না;
তাছাড়া একজন প্রডিউসর বলে কথা;আমি অপারগ হলেও মেনে নেই,
এই নষ্ট সভ্যতার অশালীন সংস্কৃতির অর্ধেক নষ্টচারিতা;
আমার কথা বলতে মন চায়,উনার কন্ঠ শুনতে মন উতলা হয়,
এই একুশ শতাব্দির প্রযুক্তি সভ্যতায় চলমান জীবনের ঘটনাগুলোই তো,
জীবন নাটকের মাত্রায় হতে পারে এক একটি দীর্ঘ সিনেমা।

দু’পায়ের মৃদু শব্দ,পড়ন্ত দুপুরের উষ্ণানুভবে গলা শুকিয়ে আসে,
ক্রমশ; বিদায় নিতে শুরু করেছে পাগল দর্শকগুলো,ওরা কি তাহলে বুঝেছে?
আবার পিছনে পড়ে যাই ওই শুভ্রময়ী নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বলা তারকার,
মন থেকে কেউ একজন বলে উঠে-এই যে শুনুন,
জ্বি কাকে ডাকছেন? আমাকে-
জ্বি আপনাকে,
আপনার পরিচয়?
আমি কবিতার কৃষক,বুনন রোপার মত কবিতার চারা লাগাই,
ভাষার জৈব সারে বাম্পার ফলনে আমার এক একটি কবিতা হয়ে উঠে,
বলিষ্ঠ,সুঠাম গোচের চারাগাছগুলোর মত,
কি কীটনাশক স্যার ব্যবহার করেন উত্তর আসে?
রাসায়নিক স্যার ব্যবহার করিনা,যার কারণে আমার কবিতা নগ্নতার পরশ পায় না,
ভাষায় ব্যবহার করি জৈব সার,উৎকৃষ্ট ভাষার চলমান ঘটনাগুলোই,
আচ্ছা আপনার পরিচয়?
ওই যে বললাম কবিতার কৃষক,যদি পরিচয় দেই,
জ্বি বলুন-
না থাক,আমি সামান্য নিভৃত চারী কবি,
আমাকে একটি কবিতা শুনাবেন?
না-
মানে?
আপনাকে আমার ভাল লাগছে না;
কেন?
বলব না; ওই যে স্যুটিং শুরু হয়ে গেছে,আমাকেও যদুখালির বাস ধরতে হবে,
সমস্যা নেই,বাস আবার আসবে?
স্যরি ম্যাডাম বলে আমি আজকের স্যুটিংয়ের নায়কের মত বাস ধরার জন্য দৌড়াতে থাকি
এই যে শুনুন বলে পিছন থেকে ডাকতে থাকে ওই শুভ্রময়ী উজ্জল তারকা।

05.03.12

মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১২

ভালবেসে থাকো যদি


ভালবেসে থাকো যদি

6869c094026db6715f4c8764cc631b06

ভালবেসে থেকে যদি আমাকে,তোমার
অন্তরের নিবিড় নিরজনতায়,পুস্পি কানন পাশে
,প্রতীক্ষা-সুন্দর হয়ে কাটিও সময়
অবিচল নিরদিধায়।

যখন আসবে ফুলের বসন্ত,গন্ধ শুঁকে
ভূলে যেওনা আমাকে ফসলী প্রান্তরে
মৌ-মৌ গন্ধে।

ভূলে যেওনা বিলাসী মেহগিনি কাঠের
চেয়ারে বা টেবিলে কখনো-
অথবা যেওনা ভুলে সৌখিন ঘড়িতে
কিংবা টরচের আলোর মতো দিবালোকে।

ভালবেসে থাক যদি মনে রেখো জীবনের
অন্যতীরে,
অনুরিক্ত বেদনার সুরে-সুরে।

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১১

রাতের তাঁরার সাথে কথা ও আমার বাবা


রাতের তাঁরার সাথে কথা ও আমার বাবা

এ.এইচ.বিদুয়ান
গতকাল গভির রাতে আকাশের তারার সাথে কথা
বলেছি।তারাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমার বাবা
কেমন আছে তোমরা কি জান? ওরা বলেছিলো
ভালো আছে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমাদের সাথে
কি বাবার দেখা হয়? কথা হয়?
আমি আবার বলেছিলাম আচছা বাবা কি আগের মত অসুস্থ থাকে?
বাবা কে কি এখনো রক্ত দিতে হয়?বাবা কি ব্যাথ্যা পায়?
“ওরা হেসে বলেছিল ধুর তুমি একটা গাধা”
আমি বললাম কেন? তারারা বলল তোমার বাবা
যেখানে আছে সেখানে কোন মানুষ
অসুস্থ হয়না। আমি আনন্দে পাগলের মত হাসি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসি।
মনে মনে বলি বাবা আর অসুস্থ থাকেনা?
রাত অনেক হয়ে যায়,তারারা বলে
“তুমি তোমার বাবা কে অনেক মিস কর তাইনা?
আমি বলি হাঁ।ওদের বলি আমার বাবা কে একটা সংবাদ দিতে পারবে?
ওরা বলে পারব।
বল কি বলতে হবে?বাবা কে বল “আমি বেশ কয়দিন ধরে অসুস্থ”।
আমার জন্য বাবা কে একটু দোয়া করতে বলো।
ওরা বলে ঠিক আছে। আমরা এখন যাব।
ভাল থেকো————————-।
তারারা হারিয়ে যায় আকাশের ওপারে।

মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০১০

স্বপ্ন ও ভালবাসা



স্বপ্ন ও ভালবাসা
44376_741295
সন্ধা নামতে অনেক বাকি
তুমি বসে আছো আনমনে অপেক্ষায়——–
স্বপ্ন দেখছো তোমার আত্নার সাথে যার পরিচয়
এত স্বপ দেখো কেন তুমি?
মাঝে মাঝে চিন্তা করি তোমার স্বপ্ন
যদি পুরন না হয় তবে কি করবে?
আবার নতূন করে স্বপ্ন দেখবে?
আমার জায়গায় কাউকে স্থান দিবে?
আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখি তোমাকে
রেখে অনেকদুরে চলে যাচছি।
আচছা আমি যেদিন মরে যাব
সেদিন কি খুব শীত পড়বে?
শীত পড়লেতো আমার ভীষন কষ্ট হয়
কি বোকা আমি দেখেছো?
মৃতের আবার শীত?
সন্ধা নামতে অনেক বাকি
তুমি বসে আছো আনমনে অপেক্ষায়——–
স্বপ্ন দেখছো তোমার আত্নার সাথে যার পরিচয়।


43904259_ca13f0fb89

বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০০৯

putul khela

 

putul khela




Putul khela putul khela,sudhu kebol khela.
Mayer chera aanchol diye matir pora putul diye.
Thala bati mati diye putul gharti sajiye niye

Ghorer kone , Khater niche bose- bose,jibon ta to geloi kete.
Paye badha shekol chilo,babar onek aadesh chilo.
Gharer baire jabena, autto- hashi hasbe na,
Dorkari sabi pabe gharer bhitor bose thakbe.

Bolto hese ei meyati boroi paji,kajer balay sudhui faki.
Chinta boro ekei niye, ki je hobe porer bari giye.
Bhat bara dure thak jol dhele khay na,
Ranna –banna ke kore parle-g kheyei se bache.

Lekha pora anek holo, chithi lekha-ta tumi shikhechoi
bhalo,
Tai to ebar tumi jao baba tomar nijer bari ,sekhene thakbe bhaloi tumi.
Porasuna putul khela meyer anchal chere diye,
Alem jokhon nijer bari,kichui to dekhi na,
dekhi cheye bare-bare Sudhu dekhi aar dekhi baro ekta bhater hari.
Othate pari na namate janina,tabu o kori sei hari niye thela-theli.
Hari aar bari niye chutte challo amar sai gari.
Kato station elo-gelo,tabuo aami to bosei aachi.

Megh,batash,bari,ghar,gach pala sabi to chutte cheleche
Aami to bosei aachi ,sudhui bose aachi.
Aakaser thikanay kato swapno dekhi,kato chabi aaki.
Bheshe jay mishe jay bilin hoye jhore pore chokher kone , .
Jole bhore jaye aamer ei dui aakhi,

Sudhu kheli aar kheli putul diye kheli,
Matir putul aar to nai ,
kotha koy nache gay ,bayna kore joriye dhore,
sotti manus putul diye kheli.
Manush putul janmo nilo, ki bhabe je samoy ta kete galo, ki jani.
Kuri aar kuri jog kore hoyechi ki sotti aami buri….?
Bhabna ekhon hoy je keno … putul bidayer samoy to
Bujhi ei ghaniye alo.