বাবা! কেমন আছ? প্রতি-উত্তর
এখানে ভাল বা মন্দ থাকার কোন অবকাশ নেই। প্রথাগত জাগতিক বোধ আমার ক্ষেত্রে হয়তো পেন্ডুলামের দোলা দিতে পারে না। উত্তর পুরুষ থেকে নাম পুরুষ পর্যন্ত যে স্মৃতিগাথা রচিত হয়েছে, সেখানে অবস্বাদে রক্তের আত্নজ খেলা করে। রক্ত কথা বলে বলেই আবহমানকাল ধরে চলমান সহজাত প্রবৃত্তি আর স্বভাব মলিন হবে না, হবার না। অন্তর প্রকোষ্ঠে লালিত আবেশ তমসে কখনো ধূসর হবে না। রক্তিম আবেশে ভালবাসার রক্তে রঙ্গিন লেপটে যাওয়া জামার বোতাম খুলে দেখ আমি ছিলাম, আমি আছি, আমিই থাকব।
জীবন কভু ব্যার্থতার সাতকাহন হতে পারে না। অঙ্কের ভুলে জীবনের বাঁধ সৃষ্ট হয় না, হতে পারে না। পতিব্রত পালনে বেহুলার নৌকার চলমান গতি অথবা একেলব্যের ছুড়ে দেওয়া তীর যেমন খুঁজে নিতে পারে গন্তব্যের সন্ধান, ঠিক সেভাবেই সংসারে দোদুল্যমান পেন্ডুলাম খুঁজে নিতে পারে ভালবাসার গোলাপি আবেগ। জীবনের ঝরাপাতায় অনেক অচেনা কথা থাকে, হয়তো সেই বাকে জীবন থমকে দাঁড়ায়। এরপর শীতলতা, তারপর গভীরতা, কিছুটা নির্মমতা, সহজাত বাস্তবতা, তাকে আশ্রয় করে করে একটি অলস কাহন জন্ম নেই, যাকে আমরা আত্নবিস্মৃতি বলে থাকি। যেদিন তুমি প্রথম স্কুলে গিয়েছিলে সেদিন আমার কাছে তোমার দেয়া বইয়ের বোঝা আমার কাছে শিমুল তুলার মত হালকা মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল আমার ছোট্ট সেনাপতি আজ জীবন যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছে। তুমি পারবে। বল বাবার এই বিশ্বাস কি মিথ্যা হতে পারে? হ্যা সত্য আমি তোমার তীব্র এ্যামোনিয়া জলের গন্ধকে অবহেলা করেছিলাম, অবহেলা করেছিলাম তোমার চিৎকার। তখন ধরতে চাইনি তোমার কোমল অঙ্গুলি। কেন বলতে পারো? আমি তো চেয়েছিলাম আমার ছোট্ট সেনাপতির হাতে কড়া পড়ে শক্ত হোক হাত। বইয়ের বোঝা কাঁধে বহে বহমান হও জীবনের রথে। আজ বড় জানতে সাধ হয় আমি কি ভুল ছিলাম? মেধার আকর থেকে তুমি সাধনায় তুলে এনেছিলে সোনাঝরা সাফল্য আর দুরন্ত ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে তুমি প্রমান করেছিলা তুমি জীবন যুদ্ধের কালজয়ী দুরন্ত সেনাপতি। কোনদিন কি লক্ষ্য করেছিলে তুমি বাড়ি ফিরে আসলে আমার বুকে প্রশান্ত গাঢ় সুখের নিঃশ্বাস। হয়তো তুমি অভিমানী মনে সুখ নামের কইতর ধরতে দৌড়ে বেড়েয়েছিলে বাহান্ন হাজার তিপান্ন গলি >>> আমি বাঁধা দিতে চাইনি, কারণ আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজে থেকে খুজে নাও আমার বুকের লোমশপৃষ্ঠ যেখানে তোমার আশ্রয় করা সুখ বসত করছে। তুমি বলেছিলে বাহান্ন হাজার তিপান্ন গলি পেরিয়ে আজ তোমার উপলদ্ধি শূণ্য থলি!! থলির মাঝে কি আমার ভালবাসার পূর্ণতা দেখতে পাও না! মনে রেখ শূন্যতা হল পূর্ণতার জন্মদাতা।
কম্পিত অধরে কান্নার রেশ তুলে তুমি বাস্তবতার রূঢ় তর্জনি তুলে আমাকে ইশারা করেছ। তুমি হয়তো জানো না তুমি যখন আমার ছোট্ট শিশু ছিলে তখন তুমি রুগ্ন ছিলে। সারাটি দিন তোমাদের জন্য হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে এসে রাতে তোমাকে আমার বুকের উপর করে রাত কাটিয়ে দিতাম। যখন তুমি অসুস্থ থাকতে সারাটি রাত ধরে আমি ঘর থেকে বারান্দায় হেঁটে কাটিয়ে দিতাম, আর তুমি কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যদি দাঁড়িয়ে পড়তাম তুমি কেঁদে উঠতে, তাই আমি চলমান হয়ে পথের মত গন্তব্যহীন হাঁটতে থাকতাম। একবার ভেবেছ কি আমি বাবা কোনদিন তোমার কাছে বলেছি ও আমার পরানের ময়না আমাকে একটি রাত ঘুমাতে দাও। সত্য এটা আমি তোমাকে বেদম প্রহার করেছিলাম। যখন তুমি জেদ ধরেছিলে দাদীর সাথে ফুফু বাড়ি যাবে আমি নিষেধ করেছিলাম, মনে হয়েছিল সেখানে তোমার যত্ন হবে না, কেউ তোমার মাথার চুল আঁচড়ে দেবে না, বলবে না হ্যারে তোর কি খিদে পাইছে, রাতে কেউ তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে না। এত অনাব্যবহারে তুমি ভাল থাকবে না। আমি নিষেধ তুমি শুনতে চাওনি, তখন মনে হয়েছে আমি জনক, আমার কি কোন মূল্য নেই? কেন তুমি অবাধ্য হলে আমার কথার? আমি মউল ফুলের সুবাস পেয়েছিলাম তখন অসাড় হয়ে বেদম প্রহারে তোমাকে রক্তাক্ত করে তুলেছিলাম। আমি ডাক্তার ডাকতে পারিনি লজ্জায়। তুমি কি জানো সেদিন রাতে দরজা বন্ধ করে আমি জীবনের প্রথম ও শেষবারের মত ডুকরে ডুকরে কেদেছিলাম। তোমাকে আমি ঠিক ততটায় ভালবাসতাম ঠিক যতটা না নিজের জীবনকে ভালবাসতাম।
শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আজ তোমাকে ভালবাসার তত্ত্বের শেষ কথা বলি। আমি জনক রাতে তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে প্রার্থনা করতাম, “ হে খোদা তুমি আমার কলিজাকে দীর্ঘায়ু করো, প্রয়োজনে আমার হায়াৎ কমিয়ে তুমি তাকে দান করো। সুখের বাগানের শ্রেষ্ঠ গোলাপ তুমি তাকে দান করো। কাটাগুলো আমাকে বিদ্ধ করো।” আমি জানি মহাপ্রতাপশালী আমার দোয়া কবুল করেছেন, তাই তুমি চাইলেও আমি তোমাকে কাছে ডাকতে পারি না। অবিনাশী দিন আর কালের সাক্ষী রাতের দোহাই তুমি নক্ষত্র হয়ে হারাবে না, চাঁদ হয়ে থাকবে। আজো দোয়া করি তোমার জন্য ছোট্টপাখি সাফল্যের চুম্বন যেন তোমার কপোল, তোমার চিবুক, তোমার অভিমানী ওষ্ঠ ছুঁয়ে যায়। সতত ভালবাসা তুমি বল বাবার দোয়া কি মিথ্যা হতে পারে? আমার দোয়া ধনুকের তীর হয়ে ছুটে গেছে, তাই তুমি তোমার ধনুকভাঙ্গা পণ ফিরিয়ে নাও।
>>>>> >>>>>>> >>>>>>>>>
কিছু খন্ডিত চিত্র নিয়ে সনেট বিন্যাসে আমার আয়োজন।। আলোচনা-সমালোচনায় আমার কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন।
১।।
হৃদয়ের স্বপ্নকথা স্বপ্ন ঝরা রাতে চাঁদমুখ ফিকে হয় গভীর নিশিতে আলো,ছায়া,মায়া, কায়া হয়েছে বিলীন তবু থাকে স্বপ্নকথা ধূসর রঙ্গিন জীবন বাস্তবতায় গভীর বেদনা তারপর স্বপ্নকথা থাকে শুধু দেনা ভালবাসা ভাললাগা হৃদয়ের কথা ভালবাসা অবশেষে একবুক ব্যাথা।।
এরপর ফিরে আসি তোমার অধরে সব যেন খুজে পায় যুগল নয়নে ডুবে থাকি দিশেহারা চুলের আধারে তুমি আমি ভালবাসা হৃদয়ের বন্ধনে গেঁথেছি যে ফুল মালা পরেছ কি গলে আনি হাসি আনি কান্না তব ধরাতলে।
বিন্যাস-ককখখগগঘঘ ঙচঙচছছ।
২।।
ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি হয়ে আছি ভালোবাসা শব্দটিতে অনেক কুয়াশা তপ্ত বালুকাবেলায় আমি বসে আছি ভালোবাসা শব্দটিতে থাকে শুধু আশা উড়ঁতে চাই তোমার আকাশের পানে সৃজিত হয়ে প্রণয় থাকে বাহুডোরে যেতে যেতে বহুদূর জীবন সোপানে হয়েছি পাগলপারা ভালোবাসা তরে।
রক্তিম বিস্বাদ লাগে নীল সন্ধ্যারাগে বসে আছি বসে রবো আঁধার আমার ভালোবাসা সিক্ত হবে তব অনুরাগে থেকে বহুদূর তবু ছায়ার ভিতর রোমান্সের ছোঁয়া পাই তার ছোঁয়া নিয়ে দুখগুলো হেরে যায় ব্যার্থ চাঁদ ছুঁয়ে।
বিন্যাস-কখকখগঘগঘ ঙচঙচছছ।
৩।।
বৃষ্টিস্নাত বৃক্ষতলে একাকি দাঁড়িয়ে অসহায় আনমনে তোমাকে হারিয়ে অতীত অবগাহনে অসীম সান্তনা একমুঠো অবস্বাদে পেয়েছি বেদনা অপরাধ অনুযোগে দোষী তুমি আমি কোন দোষে দোষী আমি জানে অন্তর্যামী বেদনার বালুচরে আমি অসহায় খুজে ফিরি সান্তনায় তোমায় আমায়।।
বারে বারে স্মৃতি তুমি এসেছ ফিরিয়া বৃষ্টিস্নাত বৃক্ষতলে ছিলেম দাড়িয়া চলে গেলে একা করে বাধিঁনি পিঞ্জরে বুঝিনি তো কখনও চলে যাবে দূরে জীবনের বারতায় ফোটেনি কো ফুল ভালবাসা ছিল বুঝি হৃদয়ের ভুল।।
শিকড়ের সন্ধানে আমি হেঁটে চলেছি পথ থেকে পথে, পাহাড় দেখে বলেছি, আমার শিকড়ের সন্ধান? পাহাড় নির্লিপ্ত নেই উত্তর হয়তো এটাই উওর।
চলার পথে থমকে দেখি আকাশ তাকে শুধাই আমার শিকড় কই? আকাশ বলে দেখ বিশালতা দেখ ভাবনা আমি জানি এর মাঝে, উত্তর পাব না।
পথের মাঝে বহে গেল বাতাস বলল কানে কানে শুধু গানে গানে শিকড়ের মুক্তি সন্ধানে!
শিকড়ের সন্ধানে গিয়েছি সাগরের কাছে হয়ত তার কাছে উত্তর আছে সাগর সেত গর্জনে দীর্ঘশ্বাস দিয়েছিল জীবনের মানে শিকড়, বলেছিল?
পথের বাকে বাকে ঘুরে ঘুরে পথিক বেশে যখন সন্ধ্যা আসে বসে বসে ভাবি কোথায় শিকড়ের দাবি?
রাতের নিরবতায় কিছুটা মৌনতা তাকে শুধাই আমার শিকড় কই? দিয়েছিল একরাশ কাল বলেছিল উত্তর না জানাই ভাল!
এসেছে নতুন সকাল নতুন সম্ভাবনা, নাকি শিকড়ের সন্ধানে ব্যার্থ কামনা? আমি জানি না।
পথের মাঝে মাঝে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত অবসরে ফুলের কাছে গিয়েছি তাকে বলেছি আমার শিকড় কোথায়?
ফুল, দিয়েছিল সুবাস বলেছিল গন্ধ বিলাও তারপর উত্তর দাও জীবনের মানে?
চকিত প্রিয়ার চোখে চোখ রেখে হাতে হাতে রেখে বলেছিলাম বলতে পার শিকড়ের সন্ধান আমার?
অধরে হাসির ফোয়ারা ফুটিয়ে বলেছিল যাও তুমি শৈশবের কাছে তার কাছে উত্তর আছে।
ক্লান্ত থেকে ক্লান্ত হয়ে শৈশবের কাছে আশ্রয় নিয়ে যখন দাড়ালাম যখন বললাম আমার শিকড়ের সন্ধান? শৈশব করেছিল আমাকে আলিঙ্গন।
বলেছিল শিকড় তোমার আমার সেত মায়ের স্বপ্নে বোনা ছিল।
ব্যস্ত শহরে হাজারো স্বপ্নের ভীড়ে সময় যেন ক্লান্ত থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাই নীড়ে ব্যস্ত শহরে একটি খোলা জানালা বসে আছি বসে রব আমি একেলা। প্রতিটি জানালার আড়ালে কত অধ্যায় জমা হয়ত একটি জানালায় ভালোবাসার প্রতিমা হয়ত একটি জানালায় বিষাধের উপমা হয়ত একটি জানালায় জীবনের আলো জ্বলছে হয়ত একটি জানালায় জীবন আধারে ডুবছে। আর, প্রতিটি জানালার একটা নিজস্ব গল্প থাকে প্রতিটি জানালা যেন বেঁচে থাকার চিত্র আঁকে তবুও, শত অভিযোগে একটি জানালা খোলা শত হতাশায় একটি জানালা খোলা খোলা জানালা যেন জীবনের অবহেলা। একটি খোলা জানালায় হঠাৎ আছড়ে পড়ে বেদনা তবুও জীবনের খোলা জানালা বন্ধ হবে না আবার আসবে ভোর খোলা জানালায় রোদ্দুর তাই আমি বসে থাকি খোলা জানালা ও স্বপ্ন নিয়ে তোর।