মা..... তুমি কেমন আছ?এ কদিন তোমার জন্য খুব খারাপ লাগছে।খুব ইচ্ছে করছে তোমার সাথে মন খুলে কথা বলি।জানি তা আর কখনই সম্ভব না তাই মনের না বলা কথাগুলোকে এলোমেলো সাজিয়ে এই চিঠি লিখতে বসা।আমি চিঠি লিখতে জানিনা কখনো লিখিনি তো তাই।কিন্তু তবুও আজ আমি তোমার জন্য লিখতে বসেছি। মা তুমি ভালো আছ তো??ওখানে তোমার কোন কষ্ট হ্য়না তো?জানো মা কাল রাতে আমি খুব কেঁদেছি।মাগো আমি যে খুব একা হয়ে পরেছি।খুব খুব..... ইচ্ছে করে মা আমি তোমার কাছে ছুটে যাই।তোমার কোলে একটু মাথা রাখি।অনেক কথা জমা হয়ে আছে যে মা।কিন্তু আবার পিছু হাটি কারন আমার দায়িত্ব যে এখনো শেষ হয়নি যা তুমি আমায় দিয়ে গেছো।যেদিন তুমি চিরতরে চলে গিয়েছিলে সেদিন তুমি মুখে কিছু বলতে পারোনি।জানি অনেক কিছুই তোমার বলার ছিল সেদিন।কিন্তু বিধাতা হয়তো সেদিন একটু কঠোর হয়ে গিয়েছিলেন তাই তিনি তোমার কথা বলার শক্তি কেরে নিয়েছিলেন।তাই তুমি অঝরে কেঁদেছিলে।তোমার সেই কান্না জুরে ছিল অনেক কষ্ট ,তোমার আদরের ধনদের চিরতরে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট আর সেই সাথে আমাকে দিয়ে যাওয়া কিছু কর্তব্য।যা তুমি তোমার অশ্রু দিয়ে আমাকে বুজিয়েছিলে।জানো মা সবাই বলে মা বাবাকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখাটাও নাকি অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।কিন্তু আমি তা মানিনা।কারন নিজের সব চেয়ে প্রিয় মানুষটার এভাবে চলে যাওয়া কে দেখতে পারে বল।অন্তত আমি এতটা শক্ত মনের মানুষ নই আর তাই এখনো তোমার সেই চলে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে রোজ রাতে তাড়া করে ফেরে।তাই মাঝে মাঝে মনে হয় সেদিন ওখানে আমার না থাকাটাই বুঝি ভালো হত।
জানো মা সবাই এখন তোমার জায়গায় অন্য কাউকে আনতে চায়।মা তুমি বল আমি কি করে তা হতে দেই।যে ঘরের প্রতিটি কোনায় আমার মায়ের স্পর্শ সেখানে কিভাবে আমি অন্য কাউকে সহ্য করবো।বল না মা তুমি চুপ করে থেকোনা।সে শাড়িতে যে সাজে তোমাকে আমি দেখেছি সেই সাজে কি করে অন্য কাউকে দেখবো মা।যে অধিকার গুলো শুধুই আমার মায়ের তা আমি কি করে অন্য কাউকে দিব মা।এই একটি মাত্র জায়গায় আমি যে স্বার্থপর বড়ই স্বার্থপর মা।যখনই এসব নিয়ে ভাবি মা তখনই বড় এলোমেলো হয়ে পরি।কেন মা এমন হলো আমাদের? সুখ দুঃখ নিয়ে ছোট্ট একটা সুখের সংসার ছিল আমাদের।ভালই তো ছিলাম আমরা।তবে কেনো একটি ঝড়ে আমাদের সব সুখ নিয়ে চলে গেল,এভাবে আমাদের নিঃস্ব করে দিল মা।কেন মা আমরা আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাকে হারিয়ে ফেলেছি।যা আর কোনভাবেই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।এখন ও যখন আমার ছোট ভাই আর বোনটা আমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে খুঁজে বেড়ায়,তুমি কোথায় এসব জিজ্ঞেস করে তখন বড় অসহায় লাগে নিজেকে।তখন বেঁচে থাকার সব ইচ্ছে আমি হারিয়ে ফেলি।আমি যে সত্যিই আর পারছিনা মা। মাগো তোমার সেই অবুঝ মেয়েটি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে এখন আর বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে না সে।নিজের কান্নাগুলোকে আড়াল করে রাখে সবার কাছ থেকে।নিজের কষ্টগুলোকে চেপে রাখে সবার কাছ থেকে।আর রাত হলেই দূর আকাশের তারা দেখে অঝড়ে কাঁদে সে।আর যে পারি না মাগো।এখন বড় ক্লান্ত লাগে মা।আমায় একটু ঘুম পাড়িয়ে দিবে মা অন্তত ঘুমের ঘোরে হলেও আমি তোমার কাছে যেতে চাই।দিবে মা বল।
মা তুমি ভালো থেকো যেখানেই থাক ভালো থেকো।আর আমার জন্য অপেক্ষা করো আর তো মাত্র কটা দিন আমার দায়িত্ব গুলো শেষ হলেই আমি তোমার কাছে চলে যাব।এখানে আমার একদম ভালো লাগে না।মা তুমি আমার পথ চেয়ে থেকো।এই জগৎ সংসার থেকে ছুটি হলেই আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে যাব।ভালো থেকো মা।তোমায় সত্যিই অনেক ভলোবাসি।
মা, মা দরজা খোলো কে তুমি? এই অসময়ে দরজা খুলতে বলছ আজ প্রভাত ফেরির দিন। আমি ব্যস্ত আছি কিছুতেই এখন দরজা খুলতে পারব না মা, মা দরজা খোলো মা।
মা ডাকছ কেন। আমার ছেলে হারিয়ে গেছে সেই ১৯৫২ সালে। সেই থেকে কেউ আমাকে মা বলে ডাকে না দরজা খোলো মা, আমার নাম একুশ।
আমার জন্ম সেই ১৯৫২ সালে আমি হারাইনি মা আমি তো বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে এখন বিশ্ব ভ্রমণে ব্যস্ত থাকি তাই তোমার সাথে দেখা করতে পারিনি মা মা, আমার লক্ষ্মী মা দরজা খোলো আমার ছেলের নাম একুশ ছিল না।
ছিল রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকত বাংলা ভাষার সাগরে যে টুকু রক্তের অভাব ছিল তাই পুরণ করে দিয়েছে আমার সন্তানেরা তুমি কে? আমি তোমাকে চিনিনা।
মা তুমি একবার শুধু দরজা খুলে দেখ আমি তোমার সেই হারানো সন্তান-নতুন নামে ফিরে এসেছি মানুষ বদলায়, সমাজ বদলায় দেশ বদলায়, আমিও বদলে নিয়েছি নাম আমার নাম একুশ-মাতৃভাষা দিবস।
আজ শোকের মালা হাত থেকে ফেলে দাও দেখ আমি এখন বিশ্ববাসীর কাছে কতই না সমাদৃত-শুধু তোমার কাছেই আস্তে পারিনা অন্তরীণ এক যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই মা এত রক্ত দিয়ে যে দেশ পেলাম সেখানে অকাতরে মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে; বিনা কারণে সন্তানেরা পিতৃ-মাতৃহীন হয়ে যাচ্ছে তাই একবার শুধু দরজা খুলে দেখা দাও মা আমার নাম একুশ তোমরা সবাই ডাকো আমাকে অমর একুশে বলে অভিমান ভাংগো মা--- মায়ের কণ্ঠে ভেজে ওঠে " আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী-আমি কি ভুলিতে পারি" গান শুনতে শুনতে একুশ চলে যায় প্রহর ডিঙ্গিয়ে।
আবার আসবে ফিরে আগামী বছর-এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে একুশ চলে যায় প্রহর ডিঙ্গিয়ে। ...কণ্ঠে গান, হাতে মালা নিয়ে খালি পায়ে মা উঠে যায় শহিদ মিনারে।