ধ্বনি হচ্ছে, শব্দ হচ্ছে না
কাটা-শ্বাসনালী থেকে
বেরুনো বাতাস এসে
ঝাপটা মারছে ছুরির গায়ে;
সেই ফাঁকে, সেই প্রাণের ঘর্ঘরে,
বায়ুপ্রবাহের অপচয়
রোধকল্পে, সম্ভবত -
খিঁচে উঠছে পরাস্ত শরীর।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
অসংখ্য রঙিন বেলুন
শব্দবুদ্বুদের মতো
উড়ে উড়ে ফেটে পড়ছে
অনিবার্য অর্থহীনতায়।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
লেগে-থাকা রক্তের উপরিতল
শুকিয়ে মসৃণ, ম্যাট-লেমিনেটেড!
সামনে ছিল নীলাকাশ, একটু আগেও,
শাদা মেঘ, কালো-কালো পাখি…
অকস্মাৎ বিস্তীর্ণ হলুদ!
যেন দুনিয়ার সব
সর্ষ্যাক্ষেত আকাশে উঠেছে।
আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি,
এ-বাতাস নেহাৎ বাতাস নয়;
খাঁটি বাংলা, আ মরণ, এ যে সমীরণ!
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
অন্তরা স্টুডিও পাশে রেখে
ক্লান্ত প্রবীণার মতো
গোরস্তানমুখি পাকা-গলি,
একতলা বাড়ি, জাল-দেয়া জান্লা
ছোট্ট একটা ছাদ,
লোহার মই দিয়া ছাদে ওঠা যেত…
তখন, সবে কলেজগোয়ার্স,
ব্যাঙাচির লেজ খসে পড়েছে কেবল!
এমন রঙিন, বিবেচনাহীন দিন, রাত্রি…
অসংকোচ এমন মহান!
রিকশায় উঠলেই মনে হত
বামপাশে প্রাণ নিয়ে স্বর্গে উড়ে যাচ্ছি,
একবার হাত ধরলে, সারাদিন
আর কিছুই ধরা যেত না!
সেই অধরা দিনের ছবি
আমি ফের দেখতে পাচ্ছি,
একজোড়া মাধুর্যহীন,
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাঁটুর নিচে
দ্বিখণ্ডিত হ’তে হ’তে
আমি যেন শুনতে পাচ্ছি
কারও ফিসফিস,
কারও বিহ্বল, ছলছল জল:
‘রাত্রে যাওয়া হবে না, ট্রেন থাকুক…
কথা শোনা লাগে… কী কুয়াশা…
দিন-দিন বয়স তো কমছে না!
আমি কিন্তু ঝামেলা বাধাবো…’
‘মামী শুনবে!’ ‘না, আম্মা ঘুমাচ্ছে;
আপনাকে একবার তুমি বলি?’
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,
কাটা-বন্দুকের
বেকার কার্টিজের মতো
ভ্রান্ত নিশানায় ধেয়ে যাচ্ছে
আমার প্রায়-কবন্ধ দেহের
উচ্চারণচেষ্টা সমুদয়;
আমি যেন শুনতে পাচ্ছি,
মানুষের চিরায়ত
আর্তচিৎকারের মতো,
হাত-চাপা গোঙানির মতো,
কাটা-শ্বাসনালী দিয়ে
বাতাস বেরুচ্ছে; ধ্বনি হচ্ছে,
কিন্তু শব্দ হচ্ছে না।