[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১২

ভালোবাসা.........





ভালোবাসা.........


ভালোবাসা.........
            সে কি তোমার হাতটি ধরে কথায় কথায় ঝগড়া করা,গোলাপ ফুলের বৃষ্টি ঝরা নাকি নীলছে খামের চিঠি পড়া।

ভালোবাসা.........
           সে কি অভিমানের মিষ্টি ভুল,খোপায় গোজা তারার ফুল স্নানে ভেজা ঐ তোমার চুল নাকি তোমার কানের ঝুমকো দুল।

ভালোবাসা..........
                  তোমার চোখে আমার স্বপন,বুকের ভেতর ব্যাথা গোপন,একজনা সে অতি আপন ফুলের ঘরে রাত্রি যাপন.......................।

ঠিকানাবিহীন চিঠি.......।



ঠিকানাবিহীন চিঠি.......।
মা.....
তুমি কেমন আছ?এ কদিন তোমার জন্য খুব খারাপ লাগছে।খুব ইচ্ছে করছে তোমার সাথে মন খুলে কথা বলি।জানি তা আর কখনই সম্ভব না তাই মনের না বলা কথাগুলোকে এলোমেলো সাজিয়ে এই চিঠি লিখতে বসা।আমি চিঠি লিখতে জানিনা কখনো লিখিনি তো তাই।কিন্তু তবুও আজ আমি তোমার জন্য লিখতে বসেছি।
মা তুমি ভালো আছ তো??ওখানে তোমার কোন কষ্ট হ্য়না তো?জানো মা কাল রাতে আমি খুব কেঁদেছি।মাগো আমি যে খুব একা হয়ে পরেছি।খুব খুব..... ইচ্ছে করে মা আমি তোমার কাছে ছুটে যাই।তোমার কোলে একটু মাথা রাখি।অনেক কথা জমা হয়ে আছে যে মা।কিন্তু আবার পিছু হাটি কারন আমার দায়িত্ব যে এখনো শেষ হয়নি যা তুমি আমায় দিয়ে গেছো।যেদিন তুমি চিরতরে চলে গিয়েছিলে সেদিন তুমি মুখে কিছু বলতে পারোনি।জানি অনেক কিছুই তোমার বলার ছিল সেদিন।কিন্তু বিধাতা হয়তো সেদিন একটু কঠোর হয়ে গিয়েছিলেন তাই তিনি তোমার কথা বলার শক্তি কেরে নিয়েছিলেন।তাই তুমি অঝরে কেঁদেছিলে।তোমার সেই কান্না জুরে ছিল অনেক কষ্ট ,তোমার আদরের ধনদের চিরতরে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট আর সেই সাথে আমাকে দিয়ে যাওয়া কিছু কর্তব্য।যা তুমি তোমার অশ্রু দিয়ে আমাকে বুজিয়েছিলে।জানো মা সবাই বলে মা বাবাকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখাটাও নাকি অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।কিন্তু আমি তা মানিনা।কারন নিজের সব চেয়ে প্রিয় মানুষটার এভাবে চলে যাওয়া কে দেখতে পারে বল।অন্তত আমি এতটা শক্ত মনের মানুষ নই আর তাই এখনো তোমার সেই চলে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে রোজ রাতে তাড়া করে ফেরে।তাই মাঝে মাঝে মনে হয় সেদিন ওখানে আমার না থাকাটাই বুঝি ভালো হত।

জানো মা সবাই এখন তোমার জায়গায় অন্য কাউকে আনতে চায়।মা তুমি বল আমি কি করে তা হতে দেই।যে ঘরের প্রতিটি কোনায় আমার মায়ের স্পর্শ সেখানে কিভাবে আমি অন্য কাউকে সহ্য করবো।বল না মা তুমি চুপ করে থেকোনা।সে শাড়িতে যে সাজে তোমাকে আমি দেখেছি সেই সাজে কি করে অন্য কাউকে দেখবো মা।যে অধিকার গুলো শুধুই আমার মায়ের তা আমি কি করে অন্য কাউকে দিব মা।এই একটি মাত্র জায়গায় আমি যে স্বার্থপর বড়ই স্বার্থপর মা।যখনই এসব নিয়ে ভাবি মা তখনই বড় এলোমেলো হয়ে পরি।কেন মা এমন হলো আমাদের? সুখ দুঃখ নিয়ে ছোট্ট একটা সুখের সংসার ছিল আমাদের।ভালই তো ছিলাম আমরা।তবে কেনো একটি ঝড়ে আমাদের সব সুখ নিয়ে চলে গেল,এভাবে আমাদের নিঃস্ব করে দিল মা।কেন মা আমরা আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাকে হারিয়ে ফেলেছি।যা আর কোনভাবেই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।এখন ও যখন আমার ছোট ভাই আর বোনটা আমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে খুঁজে বেড়ায়,তুমি কোথায় এসব জিজ্ঞেস করে তখন বড় অসহায় লাগে নিজেকে।তখন বেঁচে থাকার সব ইচ্ছে আমি হারিয়ে ফেলি।আমি যে সত্যিই আর পারছিনা মা।
মাগো তোমার সেই অবুঝ মেয়েটি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে এখন আর বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে না সে।নিজের কান্নাগুলোকে আড়াল করে রাখে সবার কাছ থেকে।নিজের কষ্টগুলোকে চেপে রাখে সবার কাছ থেকে।আর রাত হলেই দূর আকাশের তারা দেখে অঝড়ে কাঁদে সে।আর যে পারি না মাগো।এখন বড় ক্লান্ত লাগে মা।আমায় একটু ঘুম পাড়িয়ে দিবে মা অন্তত ঘুমের ঘোরে হলেও আমি তোমার কাছে যেতে চাই।দিবে মা বল।

মা তুমি ভালো থেকো যেখানেই থাক ভালো থেকো।আর আমার জন্য অপেক্ষা করো আর তো মাত্র কটা দিন আমার দায়িত্ব গুলো শেষ হলেই আমি তোমার কাছে চলে যাব।এখানে আমার একদম ভালো লাগে না।মা তুমি আমার পথ চেয়ে থেকো।এই জগৎ সংসার থেকে ছুটি হলেই আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে যাব।ভালো থেকো মা।তোমায় সত্যিই অনেক ভলোবাসি।



তোমার
সেই আদরের অবুঝ মেয়ে......।

সফেদ বেনসনে মোড়া ভালোবাসা



সফেদ বেনসনে মোড়া ভালোবাসা



 

অশান্ত এ মন,
লাগে গায়ে শীতের পবন,
তবু আমি ঘামি দরদর,
এ হৃদয়ে বাজে শুধু মর্মর।


সেই চেনা পথে হাঁটি,
এই সেই চেনা মাটি,
শুধু তোমায়ই পায় শ্বাস,
নেই কোন মেটো বাস!


চারিদিকে চাই, দেখি তুমি নাই,
বাতাসে ওড়ে সফেদ বেনসনের ছাই।
একটা-দু'টা-তিনটা ফুড়োয়,
বাতাসটা তার ছাই উড়োয়।


 

হেঁটে চলি, পৌঁছি সেই পুকুর পাড়ে,
তোমায় নিয়ে সময় কাটে যেই ধারে।
আঁধার নামে ঐ আকাশে,
আর আযানের শব্দ ভাসে।



 

বেনসনের ধোঁয়ায় খোকার মশারা থাকে দূরে,
আর একটু একটু করে বুক যায় ভেঙ্গেচুড়ে।
ধোঁয়ায় ধূমায়িত তুমি আসো,
জড়িয়ে ধরে আমায় ভালোবাসো...


 

ভালোবাসা! সফেদ বেনসনে মোড়া!
ছ'নম্বরটা হাতে, মনে দেয় নাড়াঃ
"আমি ভাবি তুমি আর তুমি ভাবো রবি,
এই মন কবে ছোঁবে ঐ মনের ছবি??..."


"আমি ভাবি তুমি আর তুমি ভাবো রবি,
এই মন কবে ছোঁবে ঐ মনের ছবি??...
তবু আমি আশায় থাকি পাবো আমি তোমায়
আশা নিয়েই আছি বেঁচে, দিন চলে যায়..."


ভালোবাসা! সফেদ বেনসনে মোড়া!
আমার ভালোবাসায় দিবে কবে সাড়া??



 


মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১২

আমার নাম একুশ

 
 
আমার নাম একুশ
 
মা, মা দরজা খোলো
কে তুমি? এই অসময়ে দরজা খুলতে বলছ
আজ প্রভাত ফেরির দিন। আমি ব্যস্ত আছি
কিছুতেই এখন দরজা খুলতে পারব না
মা, মা দরজা খোলো মা।
মা ডাকছ কেন। আমার ছেলে হারিয়ে গেছে
সেই ১৯৫২ সালে। সেই থেকে কেউ আমাকে মা বলে ডাকে না
দরজা খোলো মা, আমার নাম একুশ।
 
আমার জন্ম সেই ১৯৫২ সালে
আমি হারাইনি মা
আমি তো বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে
এখন বিশ্ব ভ্রমণে ব্যস্ত থাকি
তাই তোমার সাথে দেখা করতে পারিনি মা
মা, আমার লক্ষ্মী মা দরজা খোলো
আমার ছেলের নাম একুশ ছিল না।
ছিল রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকত
বাংলা ভাষার সাগরে যে টুকু রক্তের অভাব ছিল তাই পুরণ করে দিয়েছে আমার সন্তানেরা
তুমি কে? আমি তোমাকে চিনিনা।
মা তুমি একবার শুধু দরজা খুলে দেখ
আমি তোমার সেই হারানো
সন্তান-নতুন নামে ফিরে এসেছি
মানুষ বদলায়, সমাজ বদলায়
দেশ বদলায়, আমিও বদলে নিয়েছি নাম
আমার নাম একুশ-মাতৃভাষা দিবস।
আজ শোকের মালা হাত থেকে ফেলে দাও
দেখ আমি এখন বিশ্ববাসীর কাছে
কতই না সমাদৃত-শুধু তোমার কাছেই আস্তে পারিনা
অন্তরীণ এক যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই মা
এত রক্ত দিয়ে যে দেশ পেলাম সেখানে
অকাতরে মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে; বিনা কারণে
সন্তানেরা পিতৃ-মাতৃহীন হয়ে যাচ্ছে
তাই একবার শুধু দরজা খুলে দেখা দাও মা
আমার নাম একুশ
তোমরা সবাই ডাকো আমাকে অমর একুশে বলে
অভিমান ভাংগো মা---
মায়ের কণ্ঠে ভেজে ওঠে " আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী-আমি কি ভুলিতে পারি"
গান শুনতে শুনতে একুশ চলে যায় প্রহর ডিঙ্গিয়ে।
আবার আসবে ফিরে আগামী বছর-এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে একুশ চলে যায় প্রহর ডিঙ্গিয়ে। ...কণ্ঠে গান, হাতে মালা নিয়ে খালি পায়ে মা উঠে যায় শহিদ মিনারে।
 

গীত-কবিতা: শব্দ -স্বীকৃতি (গান-(৬৫)

গীত-কবিতা: শব্দ -স্বীকৃতি (গান-(৬৫): ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা আর মিষ্টি রোদের হাঁসি অশান্ত বাতাসে দূরে কোথায় রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশী বৃষ্টির ছন্দে নাচে মন আনন্দে মাঠ ঘাট ওঠে জল...

মিলির চিঠি





মিলির চিঠি
 
 
 
 
তোমার হাতখোঁপার ভেতর যেন যাদুটোনা আছে! সে জন্যই এতো ঘাবড়ে যাই! লাল গোলাপ, তাঁতের শাড়ি আর হাতখোঁপা। সব মিলিয়ে মেরে ফেলবার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালি প্রচেষ্টা। শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে শুধু তোমার জন্য সর্বত্তোম শাড়ি বানিয়ে দেয় অজানা তাঁতিদের দল। গাছ বেয়ে যেমন উপরে উঠতে চায় গুল্মলতা, শাড়িগুলোর কাছে তুমিও তেমনি একটি গাছ। তোমাকে পেঁচিয়ে ধরে ওরা আনন্দে আত্মহারা! ওভাবে পাগল-করা শাড়ির বাহার আর তার সাথে অযত্নে করা হাতখোঁপা। কে শিখিয়েছে এই অভ্যাস! কবে থেকে শুরু হলো এমন মেয়েলিপানা! জানার খুব ইচ্ছে রইল। যেদিন কথা হবে সেদিন ভেঙে দিও সব রহস্য। তোমার ইচ্ছে-অনিচ্ছের পেছনে যদি কোন পুরুষের হাত থাকে তবে বড় দুঃখ পাব।  

গোলাপের গন্ধ ছড়িয়ে যেদিন তুমি এক হাত দূর দিয়ে হেঁটে গেলে, সেদিন চমকে উঠেছিলাম! একটাই মাত্র গোলাপ, তবুও মনে হয়েছিল তুমি বুঝি আস্ত বাগান সাথে করে হেঁটে বেড়াচ্ছ। না হলে এতো ঘ্রাণ এলো কোথেকে! অনেক কষ্ট করে তোমার খোঁজ পেয়েছি। যেদিন কথা হবে সেদিন বলবো কি করে পেলাম সে খোঁজ। এবার কাজের কথায় আসি। প্রতিদিন তুমি হাতখোঁপা করে আসো, সেজন্য তোমার পুরো চুল দেখা হয় না কখনো। মা বলেন, ছেলের বউএর চুল হবে ঘন কালো। যেন কোমরের ভাজ ছুঁয়ে যায়। একটা মাত্র ছেলের বউ, দেখেশুনে বেছে নিবেন তাতো হতেই পারে! তোমাকে দেখতে এসে হয়তো চুল নিয়ে এটা-ওটা জিজ্ঞেস করবেন। তাই বলে তোমাকে বলবেন না হেঁটে দেখাতে। জিজ্ঞেস করবেন না তুমি গান জানো কিনা, অর্থাত তুমি বোবা কিনা। তিনি শুধু বাছবেন ঘন কালো কেশ। অথচ দেখ, খোঁপাতে আমার কত দুর্বলতা। আবার সেটা যদি হয় হাতখোঁপা। খোপার উপর বসিয়ে রাখা ফুলের কথা আগে কখনো ভাবিনি। ওভাবে ফুলের সৌন্দর্য বোঝার জ্ঞান ছিল না। না হলে ফুল নিয়েও ভাবতাম।

চিঠিটা অনেক বড় করার ইচ্ছে নেই। তবুও হয়তো কয়েক পাতা হয়ে যাবে। এবার ছেলেপক্ষের কথা শোন। আমাদের ছোট সংসারটা মায়ের হাতে বোনা কাঁথার মতোই নক্সী করা। আমার ঘরটার কথাই ধর। জানালা থেকে তিন হাত দূরে চেরি রঙের ইটালিয়ান বেডরুম সেট। তার সাথে মিল করে রেখেছেন পড়ার টেবিল। তিন পাটের কাঠের ক্লোজেট করেছেন বাথরুমটার ঢোকার মুখে। প্রথম পাট খুললে দেখবে লম্বা করে সাজানো নানান রঙের প্যান্ট। আমি জিন্স পরতে পছন্দ করি। পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি লম্বা না হলে জিন্স পরতাম না। বেঁটে ছেলেদের জিন্সে মানায় না। কথাটি আমার ছোটখালার মুখে শুনেছি। তার স্বামী অর্থাত আমার ছোটখালু বেশ বেঁটে। তিনি জিন্স পরলে ছোটখালা ভীষণ রেগে জান। শুধু জিন্সের প্যান্ট নিয়েই ঝগড়া করে তিন-চারদিন কথা বলা বন্ধ করে বসে থাকে তারা। ফিরে আসি আমার বেডরুমে। ক্লোজেটের মধ্যখানের দরজা খুললে দেখতে পাবে হ্যাঙ্গারে ঝোলানো নামিদামি ব্রান্ডের সার্ট। কোনটার বয়সই ছয় মাসের বেশি নয়। অথচ আমার পছন্দ নীল রঙের পাঞ্জাবি। আছে গোটা দশেক। মা সেগুলো হ্যাঙ্গারে রাখতে দেন না। ক্লোজেটের শেষ অংশে ছিল মিশ্র জিনিসপত্র। যেমন আইপড, ক্যামেরা, খাতা-কলম ইত্যাদি। এখন সেখানে ভাঁজ করা শাড়ির বাহার। গেল বছর থেকে আজেবাজে জিনিস সরিয়ে সেখানে বউ-এর জন্য কেনা শাড়ি সাজিয়ে রেখেছেন মা। বাবার মতো আমিও প্রথম প্রথম ভাবতাম এটা তার পাগলামি। বউ নেই তার আবার শাড়ি। সে ভুল মা ভেঙে দিলেন। তিনি বললেন, ছেলের বিয়ে নিয়ে ভাববো আর বউকে নিয়ে ভাববো না সে কেমন কথা! বউ আমার যেমন হয় হোক। শাড়ি দেখে যেন তার যেমন তেমন ভাব চলে যায়। জাতীয় দিনগুলোতে পরবে সূতি শাড়ি। পার্টিতে ঝকমকে কালো। বউ এর খোলা চুল হেলে দুলে শাড়ির গায়ের খেলা করবে। শাড়ি হবে বউ এর খেলনা। চুল হবে তার চাবিকাঠি। দেখবি বউ এসে বলবে তোমার মায়ের পছন্দ আছে!

আর একটা কথা খুব জরুরী। আমাদের টাকা-পয়সার কোন অভাব নেই। শুনেছি কিছু শাড়ির দাম সত্তুর থেকে আশি হাজার টাকা। লাখ টাকার শাড়িও আছে বেশ কয়েকটা। বাবার কাছে টাকা চাইলে তিনি কোন প্রশ্ন করেন না। বাবা শুধু বলেন বিকেলে নিয়ে আসবেন। বিকেল হলে বাবা ব্রিফকেস খুলে টাকার বান্ডিল তুলে দেয় মায়ের হাতে। একটা সত্যি কথা বলি? বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছাড়া আমাদের বাসায় অনেক দিন হলো কোন খুচরা টাকা দেখা যায় না। বাবার রিটায়ারমেন্টের অনেক দেরি। তারপরেও সরকারি চাকরি বলে কথা! একদিন না একদিনতো তিনি অবসরে যাবেন। তখন কি হবে। মা হয়তো সে কথা ভাবেন না, কিন্তু বাবা ভাবেন।

আমাকে বিদেশে পাঠিয়ে পড়াতে চেয়েছিল বাবা। কানাডার এক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েও যাওয়া হলো না। মা বলেছিলেন, যদি চোখের সামনে থেকে চলে যাই তিনি গলায় দড়ি দিবেন। এই নিয়ে অনেক কথা হয়েছে বাড়িতে। অনেক ক্ষুদ্র মিটিং হয়েছে। মাঝে মাঝে আত্মীয়দের কেউ কেউ এসে তাতে যোগও দিয়েছে। ছোটখালা খালুতো থাকতেনই। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেষমেষ মায়েরই জয় হলো। তবে বাবাও বিনা শর্তে ছেড়ে দিলেন না। তিনি বলেছিলেন ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার তার নাকি খুব শখ ছিল। সেই শখ পূরণ করতে পারেননি। তাই দেশে বসে পড়াশুনা করলে আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে হবে। এই শর্তেই আমাকে দেশে থাকতে হচ্ছে।

বাবা বিয়ে করেছিলেন ছাত্র অবস্থায়। আমি জন্ম নিয়েছিলাম তার ছাত্র জীবনে। মা তখন থাকতেন রাজশাহীতে তার বাবার বাড়ি। বাবা আসতেন যেতেন। এরই মাঝে আমিও এসে গেলাম। বড় হলাম নানার বাড়ি। পড়ালেখার শুরু অবৈতনিক বিদ্যালয়ে। তারপর সরকারি হাই স্কুল। বাবা এই সরকারি চাকরিটা পেয়ে গেলে আমরা ঢাকায় চলে এলাম। সংসারটা স্থায়ী হলো। কলেজ থেকে পাশ করে গত বছর ইউনিভার্সিটিতে ঢুকলাম। বাবা ছাত্রজীবনে বিয়ে করেছিলেন বলে তার উন্নতি থেমে থাকেনি। তাই মা-বাবার দুজনেরই ধারনা, ছাত্রবয়সে বিয়ে করলে আমারও কোন অসুবিধা হবে না। বাবার অঢেল ব্যবসা আছে রাজশাহীতে। ব্যবসাগুলো সব নানার নামে। খুব শিগ্রি বিদেশীদের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে খুলতে যাচ্ছেন মিনারেল ওয়াটারের প্ল্যান্ট। সেটাও নানার নামে। আমার যে তিনটি ভাইবোন মারা গেছে, তারা বেঁচে থাকলেও কোটি টাকার মালিক হতো সকলে। এখন সব আমার একার ঘরে। টাকা-পয়সা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে। বাবা বলেছেন সেদিকে কান না দিতে। আমি যেন বিলম্ব না করে পড়ালেখা শেষ করে ফেলি। হয়তো আগামি বছরের মধ্যে আমার বিয়ে দিয়ে ছাড়বেন। ইতিমধ্যে নয়টি মেয়ে দেখা হয়ে গেছে। মা হাসতে হাসতে বললেন, দরকার হলে চিরুণী অভিযান চালাবো। কথাটির মানে আমি বুঝতে পারিনি। আমি শুধু বুঝি, তোমার খোঁপা এবং খোঁপার ফুল দেখে মা বলবেন, এই মেয়েকে মোটেও বউ করে আনা যাবে না। আগেই বলেছি মা বিয়ের পরেও তার বাবার বাড়িতে থেকেছেন। ছোট বেলার অনেক কথা তিনি ভুলে গেছেন। বড়দের কাছ থেকে শেখা অনেক আচার-আচরন এখন আর মানেন না। শুধু একটা কথা ছাড়া। মা তার দাদির কাছে শুনেছিল খোঁপা করে ঘুরে বেরানো মেয়েরা পর-পুরুষের নজর কাড়তে চায়। খোঁপার উপর ফুল বসানোতো সম্পূর্ন  বেলেল্লাপানা! শরিয়তের নিষেধের মতো মায়ের মগজে কথাটি গেঁথে আছে। ছোটবেলার অনেক কিছুই ভুলে গেছেন তিনি, শুধু ভুলতে পারেননি তার দাদির মুখে শোনা খোঁপার বেদাতি কথা। 

তোমাকে চিঠি লিখবার এটাই একমাত্র কারণ। ফারজানার কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে তবেই এই চিঠি লিখছি। সে বলেছে, চিঠিটি তোমার হাতে পৌঁছে দেবে। এর চেয়ে বেশি আর কিছু করতে পারবে না। তোমার রুমমেট, সে জন্য বলছি না। ফারজানা তোমাকে খুব ভাল জানে। তোমার জন্য তার অনেক মায়া। তোমার খোঁপা নিয়ে সে নাকি তিনটি কবিতা লিখেছে। তুমি যে শিং মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ কর, সেটা ফারজানাই আমাকে বলেছে। তোমার দূর সম্পর্কের কোন এক মামা থাকেন জিগাতলায়। রোকেয়া হল থেকে তোমরা প্রায়ই নাকি তার বাসায় চলে যাও শিং মাছের ঝোল খেতে। তোমার বাবা গ্রাম থেকে তোমাকে দেখতে এলে তিনিও সেই বাড়িতেই এসে উঠেন। তিনিও নাকি শিং মাছের ঝোল নিয়ে আসেন তোমার জন্য। আর আনেন রসে ভেজানো চিতই পিঠা। সেটাও তোমার খুব পছন্দ। ফারজানা আরো বলেছে তোমরা খুব গরীব। তুমি যে সব শাড়ি পর সেগুলো সব তোমার নিজের শাড়ি না। বেশিরভাগ হয় বান্ধবীদের কাছ থেকে ধার করা, অথবা জিগতালার মামীর।

ফারজানার কাছে কথাগুলো শোনার পর সেদিনই রাস্তার এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে বললাম, শিং মাছের ঝোল আর রসে ভেজানো চিতই পিঠা দিতে। তের চৌদ্দ বছরের একটি ছেলে ছিল সেই হোটেলের বয়। ছেলেটি হেসে বললো, আপনার বাড়ি কি ফরিদপুর স্যার? এই ঢাকা শহরে খেজুরের গাছ কই? আর গরমের দিনে রস পাইবেন কেমনে? আপনি একা না স্যার, মাঝে-মধ্যে এমন আজব আবদার করে অনেক ছাত্র। দুইদিন আগে একজন স্যার আইসা কইলো, চালতা দিয়া ডাল রান্না থাকলে তাকে দিতে। আপনাগো মায়েরা আদর কইরা কত কি খাওয়াইছে। রাস্তার পাশে হোটেলে সেইগুলা কে রান্না করবো?

বলতে পারো ছোটখাটো একটা বক্তৃতা শুনে এলাম। তাও খারাপ লাগেনি। ছেলেটির কথায় অনেক যুক্তি আছে। আমি ওকে পছন্দ করে ফেলেছি। আবার হয়তো একদিন যাব ওর হোটেলে খাবার খেতে। হয়তো তুমিও সেদিন সাথে থাকবে। ফারজানাকে কথাগুলো বলতেই সে হেসে লুটোপুটি। আমি তখন গোলাপের মত লাল হয়ে গিয়েছিলাম। চোখ বুজলেই দেখি লাল গোলাপ। দেখি গোলাপ উঁচু করে ডাকছো আমাকে। স্বপ্নে বহুবার তোমার হাতখোঁপা খুলে দিয়েছি। জানি না তোমার পক্ষে কতোটুকু সম্ভব খোঁপা না করে বাইরে আসা। তুমি চুল খুলে দিলে আমার চোখে হয়তো বন্যা বয়ে যাবে। জগত তাকিয়ে দেখবে। মাও খুশি হবেন। খোঁপার বিরুদ্ধে তার একটি অঘোষিত যুদ্ধ আছে। খোঁপাই যদি না থাকে, তাহলে শত্রুমিত্র নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না তাকে। এই হলো আমার নিবেদন। এখন তুমি যা জানতে চাও লিখে পাঠাও। যা বলতে চাও তাও লিখে দিও। তোমার সাথে যেদিন প্রথম কথা বলবো সেদিনটি স্মরণীয় করে রাখতে আমি এক মন লাল গোলাপ কিনে পানিতে ভাসিয়ে  দেবো। খুব দেরি করো না। সামনেই একটি শুভ দিন। মার্চের চার তারিখে আমার জন্মদিন। সেদিন যেন আমাদের প্রথম কথা হয়!

হুমায়ুনের চিঠির উওর দিতে বেশি দেরি করলো না মিলি। খুব উজ্জল একটি দিন ছিল সেদিন। নোনাধরা গরমের বদলে হাল্কা বাতাস বয়ে যাচ্ছিল চারিপাশে। ফুলঝরি একটি অনুভূতি। সামান্য মেঘ থাকলে আকাশটা আরো ভাল লাগতো। ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল উপরের জগত। গেটের সামনে অপেক্ষা করছিল হুমায়ুন। একটি সাদা খামের ভেতর মিলির চিঠি নিয়ে এল ফারজানা। চিঠিটা হাত দিয়েই বললো তার কাজ আছে। ফারজানা চলে গেলে মিলির চিঠি নিয়ে হুমায়ুন গাড়িতে গিয়ে বসলো। প্রথমে উলটে-পালটে দেখলো কতোক্ষন তারপর চিঠিটাকে পাশের সিটে রেখে গাড়ি স্টার্ট দিল। সোজা চলে এল আরিচার পথে। অতিরিক্ত স্পিডে চলছে গাড়ি। হাই ভলিউমে বাজছে বাউল আব্দুল করিমের গান। একবার চোখ সরিয়ে দেখে, সাদা খাম আবার চোখ রাখে হাইওয়ের দিকে। এভাবেই চলতে থাকে তার শহর ছেড়ে আসা। হুমায়ুন ধরেই নিয়েছে নতুন কেনা সাদা শাড়ি পরে মিলি বসে আছে তার পাশের সিটে। ওটাই মিলি। মিলির চিঠি না। তাই মাঝে মাঝে চিঠির সাথে দু’চারটা কথাও বলছে তাকিয়ে।

মানিকগঞ্জ পেরিয়ে এলে ছোট্ট একটা নদী। হয়তো নদী নয় তবুও নদীর মতই দেখতে। জায়গাটি হুমায়ুনের বেশ পছন্দ! একবার রাজশাহী থেকে ফেরার পথে এই জায়গাটাকে দেখেছিল সে। নদীটা বেশ বেঁকে গেছে এক জায়গাতে এসে। সেই বাঁক খাওয়া জায়গাতে একটি বটগাছ। মনে হয়ে একশো বছরের পুরানো। হুমায়ুন ঠিক করে রেখেছিল যেদিন সে খুব খুশি হবে, সেদিন এখানে এসে কিছুক্ষণ একা-একা বসে থাকবে। তাই আজ মিলির চিঠি নিয়ে এদিকে চলে আসা। হটাত তার ফুলের কথাও মনে পড়ে গেল। চিঠি খুললেই মিলি কথা বলবে। শব্দ হবে না তবে চোখও ফিরবে না সহজে। নীরব কথা আকাশে উড়ে যাওয়া পাখির মতো। ডানা-ঝাপটা শোনা যায় না। দেখেতে গেলে পলকও পড়ে না। পথের মধ্যে তাই ফুল খুঁজতে লাগল হুমায়ুন। কপাল ভাল তার। হটাত দেখতে পেল একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে চাকা বদলাচ্ছে। হয়তো চাকা পাংচার। সেই ট্রাক বোঝাই ফুল! উত্তরবঙ্গের কোন ফুল ব্যবসায়ীর ট্রাক হবে। হুমায়ুন তার গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে যায় উল্টো দিকের ট্রাকের কাছে। ফুল নিয়ে কি সব প্রশ্ন করে সে। ট্রাক ড্রাইভার তার মোবাইল ফোনে কার সাথে যেন আলাপ করতে থাকে। ফোনের কানেকশন কেটে গেলে সে আবার নম্বর টিপে। এক সময় ড্রাইভারটি তার ফোন এগিয়ে দেয় হুমায়ুনের হাতে। হুমায়ুনও কথা বলে। কিছুটা দেন-দরবার হলো। তারপর কথা ফাইনাল। ড্রাইভার হুমায়ুনের পিছে পিছে তার ট্রাক নিয়ে যাবে সেই বটগাছের কাছে। সেখানে গিয়ে ট্রাকের ডালা খুলে সব ফুল গড়িয়ে দেবে নাম-না-জানা একটি নদীর পানিতে। টাকা-পয়সার হিসেবটা জানা হলো না। অনেকের কৌতুহল হল সে কথা জানবার। আজব সওদা দেখতে ভিড় জমে গেল মুহূর্তের ভেতর। ছেলে-বুড়ো সব বয়সের লোক। এরি মধ্যে ধর ধর চিতকার। একটি ছোট্ট শিশু আসছিল ফুলের জটলা দেখতে। তাকে একটা গাড়ি চাপা দিয়ে চলে গেল। গোলাপের পাপড়ির মত ছোপছোপ রক্তে লাল হয়ে গেল পিচঢালা পথ। ফুল ছেড়ে সকলে ছুটে গেল ছেলেটির কাছে। ট্রাক বোঝাই গোলাপের আকর্ষন ফিকে হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। প্রান আছে, না নেই তাই ভেবে সকলে দৌড়ে এল। ভিড় সরিয়ে ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল হুমায়ূন। মাথার উপর দিয়ে চাকা চলে গেছে। সে মাথা আর জোড়া লাগানো যাবে না। জোড়াতো দুরের কথা ওর মা বাবা এসে শেষ দেখা দেখতে পাবে না প্রিয় সন্তানের মুখ। মানুষের মুখটাই যে সব, কারো মৃত্যু নাহলে সে কথা বোঝা যায় না। এই ছেলেটি মারা যাবার পূর্বে নিশ্চয় হাসি হাসি একটা মুখ নিয়ে এদিকে এগিয়ে আসছিল। গোলাপ দেখলে কার মুখ উজ্জ্বল না হবে। কিন্তু ছেলেটির মুখের পূর্ব এবং পশ্চিম কিছু বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় লোকদের সংখ্যা দেখতে দেখতে বেড়ে দ্বিগুন হল। ছেলেটির মা-বাবাও এলো। তারা আসতেই কান্নাকাটি শুরু হয়ে আকাশ ভারী হয়ে উঠল। জনতার মধ্য থেকে কেউ লেগে গেল ট্রাফিক নিরাপত্তায়। কেউ দায়িত্ব নিল ছেলেটির অবশিষ্ট শরীরটুকু সরিয়ে আনতে। তখনো রক্তের রঙ টকটকে লাল। নাম না-জানা কেউ একজন সাদা কাপড় দিয়ে রক্ত ঢেকে দিল। পুলিশ এসে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যে। তখন তাদের দেখানো হবে মৃতুর নিশানা। তারপর নিয়মবদ্ধ হবে ছেলেটির ভবিষ্যত।

হুমায়ুন ফিরে এল তার গাড়ির কাছে। এসে দেখে পাশের সিটে রাখা সাদা খামটি নেই। কেউ হয়তো ভেবেছিল এতো টাকা যার তার খামেও থাকবে কিছু পাঁচশো টাকার নোট! তন্ন তন্ন করে সে গাড়ির ভেতর বাইরে, এমনকি ছাদের উপরেও খোঁজে মিলির চিঠি। পেছনে গিয়ে গাড়ির ট্রাঙ্ক খুলে দেখলো। তারপর মাটিতে হাঁটু গেড়ে খুঁজলো গাড়ির নিচে। মৃত ছেলেটির পাশ থেকে কিছু মানুষ হুমায়ুনের সাথে ফিরে এল তার গাড়ি পর্যন্ত। হুমায়ুন কি খুঁজছে অনেকে সেটা জানতে চাইল। কাউকে কিছু বললো না সে। তার খুব কান্না এল। তবে সে-কান্না কেউ দেখতে পেল না। তারা দেখলো হুমায়ুনের রক্তশুন্য মুখ। গাড়ির দরজা খুলে সে ভেতরে এসে বসে পড়ল। শতবার দেখা সত্ত্বেও পাশের সিটের দিকে তাকিয়ে আবারো খুঁজলো মিলির চিঠি। মানব মিলির মতন যে-চিঠি তার সাথে এতোদূর এসেছিল!