[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৪

গল্প: আমি তোমাকে ভালবাসি।




গল্প: আমি তোমাকে ভালবাসি।

একটা গল্প শুনবেন। গল্প, শুধুই গল্প। যে গল্পে থাকবে একটা পাগল ছেলে। যার জীবনে উচ্চাকাংখা বলে কিছুই নেই। যে বর্ষাকালে বারান্দায় প্রিয়জনের সাথে বসে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে চায়। পরীক্ষা ফেলে বৃষ্টিতে ভিজতে যায়। মাঝে মাঝেই বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথায় চলে যায় কেউ জানে না। আর থাকবে একটা মেয়ে, অতি সাধারন। ছেলেটা ভীষন ভালবাসবে মেয়েটাকে। যে ভালবাসা কখোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। আর মেয়েটা? মেয়েদের মন কবে কে বুঝতে পেরেছ? সে কি চায় নিজেও তা জানবে না।
জানি এই গল্পের পরিনতি ভাল হবে না। তবুও ছেলেটা গল্পটা এগিয়ে নিতে চাইবে। মেয়েটা কি তার সঙ্গ দেবে? অবশ্যই দিবে। কারন মেয়েটাও যে ভালবাসে ছেলেটাকে। মেয়েটা চায় তার ভালবাসা প্রকাশ করতে। আর ছেলেটা চায় ভালবাসা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে। মুখের কথা দিয়ে নয়। ছেলেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না, “দিনের মধ্যে হাজার বার ভালবাসি না বললে কি হয়? ভালবাসা কি কমে যায়?” কিন্তু মেয়েটা বুঝতে চায় না। সারাক্ষণ অপেক্ষায় থাকে। অন্তত একবারের জন্য হলেও ছেলেটা তাকে বলুক। বলুক, “ভালবাসি, শুধুই তোমাকে।ছেলেটার মুখের এই ছোট্ট বাক্যটাই তার সকল প্রেরণা। তাইতো সকাল দুপুর সন্ধা নেই ফোনের পর ফোন দিয়ে যায়। শুধু একবার ভালবাসি শোনার অপেক্ষায়।
দুইজনের অনুভুতি, দুই জনের চাওয়া পাওয়া সবই ভিন্ন। তারপরও গল্পটা এগিয়ে চলে। হাসি, কান্না, আনন্দ, ব্যাথা-বেদনার মিশ্রনে।
এটা একটা পাগল ছেলের গল্প। পাগলামি না করলে কি চলে? শুরু হয় তার পাগলামী। হটাৎ করেই সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মেয়েটার সাথে। ভালবাসি ভালবাসি বলে চিৎকার করাটা তার লোক দেখানো মেকি মনে হয়।যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে কি হবে, তার প্রতিটা স্বপ্ন জুড়ে থাকে মেয়েটা। তার প্রতিটা কাজের প্রেরণা হয়ে থাকে মেয়েটা। তার অনুভুতি জুড়ে তার অস্তিত্ব জুড়ে শুধু সেই মেয়েটা আর মেয়েটা। আর মেয়েটার কি খবর? ছেলেটাকে হাড়িয়ে সে পাগল প্রায়। খায় না ঘুমায় না এমন কি বেঁচে থাকতেও চায় না। তবুও বেঁচে থাকতে হয়। জীবনের প্রয়োজনে।
সময় গড়িয়ে যায়। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। ছেলেটা ভুলতে পারে না মেয়েটাকে। তাকে নিয়েই ভাবে। তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখে। তারপর?
না, এটা একটা গল্প। বাস্তব কিছু নয়। গল্পের মেয়েরা একটু অন্য রকম হয়। তাই মেয়েটা ছেলেটাকে আবার ফোন করে। কথা হয় দুজনার। তারা ভুলে যায় মাঝখানে কয়েক বছর পার হয়ে গেছে। জীবন থেকে তারা হাড়িয়ে ফেলেছে অনেক মুল্যবান সময়। সেই সময়ের প্রয়োজনে ছেলেটা হাড়িয়ে ফেলেছে তার ভালবাসা। হাড়িয়ে ফেলেছে তার প্রানের প্রিয়াকে। মেয়েটা আর তার নেই। বিয়ে করেছে তার পছন্দের ছেলেটাকে। যে তার খবর নেয়। দিনের মধ্যে হাজার বার ভালবাসি ভালবাসি বলে তার পায়ে লুটায়।
ছেলেটার আকাশে আজ মেঘের ঘনঘটা। যখন তখন বৃষ্টি নামে। তার এলোমেলো জীবনটা আরো এলোমেলো হয়ে যায়। তবুও সে মেয়েটার ভাল চায়। চাইবে না কেন, দোষটাতো মেয়েটার না। সেই-তো যোগাযোগ বন্ধ করেছিল। নিজের দোষে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে তো শাস্তি দেয়া যায় না। তাইতো নতুন করে নতুন ভাবে বাঁচতে চায় সে।
যেহেতু এটা গল্প। তাই শেষ হয়েও শেষ হয় না। কোন একদিন গভীর রাতে ছেলেটার ফোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই সে শুধু কান্নার শব্দ শুনতে পায়। মেয়েটা কাঁদছে। কাঁদছে তো কাঁদছেই। কান্না জড়ানো কন্ঠেই মেয়েটা বলে, “আমি জানি আমার ফেরার পথ নেই। তবু একটা কথা বলতে চাই। আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি। শুধুই তোমাকে। আর কাউকে নয়। কোন দিন কাউকে বাসতেও পারব না।ফোন কেটে যায়। একাকী ছেলেটা জেগে থাকে। দু চোখে বৃষ্টি নামে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, যা হবার তাই হবে। এভাবে কষ্ট পাওয়ার মানে হয় না। কথা বলে মেয়েটার সাথে। মেয়েটা সাড়া দেয় আগের মত। দুজন দুজনকে পেতে চায় আপন করে। কিন্তু সমাজ?
মেয়েটাই এগিয়ে আসে এর সমাধানে। সে বিয়ে করেছে ঠিক। তবে একদিনও স্বামীর ঘর করেনি। সে তালাক দিয়ে দিবে স্বামীকে। তারপর দুজন পালিয়ে যাবে। ঘর পালানো ছেলেটার কাছে কাজটা সহজই মনে হয়।
তারপর? তার আর পর নেই। ছেলেটা অপেক্ষায় থাকে মেয়েটার। মেয়েটা ফোন দেয় না। ছেলেটা ফোন দেয়। মেয়েটা ফোন ধরে না। ছেলেটা আবার ফোন দেয়। মেয়েটা ধরে না। ধরে না………………
গল্পটা শেষ। ছেলেটার সাথে মেয়েটার আর কোনদিন দেখা হয় নি। হয়ত কোনদিন হবেও না। হয়ত মেয়েটা তার স্বামী সংসার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু মাঝরাতে মেয়েটার বলা একটা বাক্য ছেলেটাকে আজ পাগল করে দিয়েছে। আজও তার কানে বাজে, “আমি জানি আমার ফেরার পথ নেই। তবু একটা কথা বলতে চাই। আমি তোমাকে ভালবাসি। শুধুই তোমাকে।

আজ তুমি চাঁদ দেখোনি




মাঝ রাতে চাঁদ যদি

আলো না বিলায়
ভেবে নেবো আজ তুমি চাঁদ দেখোনি
আকাশের নীল যদি আধাঁরে মিলায়
বুঝে নেবো তারে তুমি মনে রাখোনি।

আকাশের বুক চিরে যদি ঝরে জল
বুঝে নেবো অভিমানে তুমি কেঁদেছো
সরোবরে যদি ফোটে রক্ত কমল
অনুভবে বুঝে নেবো মান ভেঙ্গেছো।

রূপালী বিজলী যদি নিরব থাকে
কেঁদোনা ভেবো শুধু আমিতো আছি
স্বপ্নলোকেতে যদি ময়ূরী ডাকে
বুঝে নিও আমি আছি কাছাকাছি।

দৃশ্যগল্প- শূন্য চেয়ার



শুণ্য চেয়ার
(একটি দৃশ্যগল্প)



স্থান-এই শহরের একটি ছিমছাম গলি। একটি দোতালা বাড়ির ঝুল বারান্দা। একটি কালো চেয়ার।
চরিত্র-
 
(একটি ছেলে) ছেলেটি-একটি পঁচিশ বছরের ছেলে।
(
একটি মেয়ে) মেয়েটি-একটি বাইশ বছরের মেয়ে।

দৃশ্য এক
শীতের অলস দুপুর।একটি ঝুল বারান্দায় একটি কালো চেয়ার।একফালি তেছড়া রোদ গায়ে মেখে ছেলেটি সেখানে বসে আছে। তার হাতে একটি গিটার। কোলে উলটো করে রাখা কবিতার বই। সে ভাবনায় বুদ হয়ে তাকিয়ে আছে পাশের পথচলা গলিটার দিকে। গলিটায় থেকে থেকে ফেরিওয়ালাগুলো তীক্ষ্ণ চিৎকার করে যাচ্ছে তার পাশাপাশি কিছু মানুষের টুকরো টুকরো কথোপকথণ আর আরো চলছে রিকশাওয়ালাগুলোর সরব প্রতিযোগীতা। ছেলেটির হঠাৎ মনে হলো এই সব কোলাহল আর তার ভাবনার ভোতা গুঞ্জন ঠেলে একটুকরো কোমল নিরবতা যেন পায়ে হেটে আসছে। সে আরো একটু ঝুকে দেখতে লাগল মেয়েটির গায়ের কফি রঙের শীত পোষাক,মাথায় হাল্কা করে টানা ঘোমটা,কাধের কালো ব্যাগ। মেয়েটিও পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো দোতালাটির বারান্দাটিতে। প্রকট চোখাচোখিতে ছেলেটিই প্রথম চোখ ফেরালো। তার মনে হলো এই মূহুর্তে তার সাথে গ্রীলে ঝুলে থাকা বোগেনভিলিয়ারাও বুঝি সব পুড়ে খাক হয়ে গেছে ।
 
দৃশ্য দুই-
ফাগুন তার বাতাসে হৃদয়গুলোতে মিষ্টি আমেজ ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাতাসের বুক চিড়ে একটা রিকশা যেন নৌকার তালে দাড় টেনে আসছে।একটা সবুজ জামায় মেয়েটি আজ কিছুটা অগোছালো।হাল্কা ব্যাগটাও যেন কোলে পড়ে আছে অবহেলায়। রিকশাটা আরো কাছে আসতেই আড়ষ্ট হতে থাকে ছেলেটি। তবুও অবাধ্য চোখ বার বার চলে যেতে চায়,দেখতে চায় একপলক । ভাবতে ভাবতেই একজোড়া কালো কৌতুহলী চোখে থমকে গেল তার কিছু মূহুর্ত। পাগলা বাতাসে মেয়েটার ভেজা চুলও এলোমেলো হতে চাইল,ছেলেটির এলোমেলো চুল আরো এলোমেলো হয়ে গেল। রিকশাটা ছেলেটির একরাশ ভালো লাগা বোঝাই করে ছুটে চলল দ্রুত।

দৃশ্য তিন -
সূর্য্য যেন তার পুরোটা উত্তাপ ঊপুর করে দিচ্ছে। বারান্দার মেঝেতে পা ফেলা যাচ্ছে না। তবু গরম ছাপিয়ে আজ পথের মানুষগুলোর মুখে পহেলা বৈশাখের উপচে পড়া আনন্দ। ছেলেটিও উত্তপ্ত চেয়ারে বসে ঠায় চোখদুটো পথের ধুলোতে মিশিয়ে দিতে চাইছে। অপেক্ষার গুনিতক গুনতে গুনতে তার হৃদয় মরুভুমিতে বার বার মরীচিকা খুজছে। তার তৃষ্ণার্ত চোখদুটোকে আরাম দিয়ে দুর থেকে একটা লাল বিন্দু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকল। যেন একটা যুগ অতিক্রম করল তা স্পষ্ট হতে। হুড খোলা রিকশায় অন্য একটা মেয়ের সাথে লাল শাড়িতে আসছে মেয়েটি। কিছুটা উচ্ছল ভঙ্গীতে সাথের মেয়েটির সাথে সে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে। চোখ ভরা কাজল ছোট্ট লাল টিপ,কিছুটা লম্বা চুলের মেয়েটিকে নিয়ে চলমান রিকশাটা একটি দলছুট দখিন হাওয়ার মতোই ছেলেটিকে প্রশান্তি দিয়ে যেতে লাগল। ছেলেটার চোখে অপার মুগ্ধতা, আজ সে লজ্জা পেতে ভুলে গেছে। ছেলেটির এমন দৃষ্টিতে মেয়েটিও যেন জমে একটি পাথরের পরীর মত নিষ্পলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।

দৃশ্য চার-
ছেলেটির ইচ্ছে হচ্ছে বৃর্ষাকালকে তেড়ে বিদেয় করে দিতে। সে বুঝতে পারছে না বিধাতা কি মনে করে বর্ষাকাল পৃথিবীতে দিয়েছেন আর তার কি উপকারিতেই বা আছে। কেননা গত দু দিন সে বারান্দায় বসে থেকেও মেয়েটিকে দেখতে পারেনি। হুড উঠানো পলিথিনে ঢাকা রিকশাগুলোর ভেতরটা বোঝা যায় না। আজ ও সেই নির্ধারিত সময় বৃষ্টি পড়ছেতো পড়ছেই। তবু ছেলেটি ছাতা মাথায় বসে আছে চেয়ারটায়। পানির তোড়ে পুরোটাই ভিজে যাচ্ছে সে।হঠাৎ বিরক্ত হয়ে ছাতাটা ছুড়ে ফেলে দিল।অঝোর ধারার বৃষ্টির পানি বার বার তার চোখ ঝাপসা করে দিচ্ছে। সে বার বার চোখ মুছছে, ভিজতে ভিজতে পথের দিকে তাকিয়ে আছে এক অসামান্য অপেক্ষায়।

দৃশ্য পাচ-
পৃথিবী এত সুন্দর কথাটা যেন আজই বুঝেছে ছেলেটি। তার গীটারের সুর প্লাবনের মত ছেয়ে ফেলছে আশপাশ। মন্ত্রমুগ্ধ পথিকরা হাটার গতি শ্লথ করে দিচ্ছে কিছুটা। শরতের নীল আকাশ ও যেন গালে হাত রেখে কিছুটা ঝুকে এসেছে সুরের মূর্ছনায় । আজ একটু আগে মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসেছে। সেই হাসিই যেন এখন চোখের তারায় বন্ধি করে সে চোখ বুজে গাইছে,
একটি অপেক্ষার ভুলই জীবন আমার
মাশুল দিবো কি?মরন আমার”?

দৃশ্য ছয়-
বৃষ্টি আর রোদ আজ পালা বদল করছে। ছেলেটি যথারীতি একটু ঝুকে বসে আছে। মেয়েটি আজ পায়ে হেটে আসছে। মাথার চুল চুড় করে বাধা,ব্যাগটা কাধে না নিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরা। দুর থেকেই সে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি কিছুটা অবাক আর শিহরীত। কলজেটার নাড়া চাড়া যেন মুঠিতে চেপে রেখে সে তাকায় মেয়েটির চোখাচোখি। মেয়েটিও তাকিয়ে বরাবর দৃষ্টিতে একটুও চোখ নামিয়ে নিচ্ছে না কিন্তু সেখানে মুগ্ধতা আর কৌতুহল নেই,যেন একটি তীক্ষ প্রশ্ন আর অভিযোগ ছেলেটির বিরুদ্ধে।যেন সে বলছে,”তুমি কি ভীতু না কাপুরুষছেলেটির এতদিনের খেলার বালিঘর যেন একটি সশব্দ ঢেউ ভেঙ্গে দিয়ে গেলো। অভিযুক্ত ছেলেটি প্রশ্নটা আর তার অপরাধ বুঝতে পারল যেন।সে নিস্কম্মা জড় পদার্থের মত নিরুত্তর চোখ নামিয়ে নিল।

দৃশ্য সাত-
হাল্কা একটা নিম্নচাপেই শীত ঝেকে বসেছে আজ।। গায়ে বড় চাদরটা জড়িয়ে ছেলেটা কাঠ হয়ে বসে আছে বারান্দায়। তার পুরো চেহারা হতাশার আগাছায় ঢাকা। গীটারটা ঘরের এক কোনে অবহেলায় পড়ে আছে। কবিতার বইটা হাতে ভাজ বব্ধ করে রাখা। অনেকদিন হয় মেয়েটি এই পথ দিয়ে যায় না।সময় যেন আবার সেই ঘুন ধরা পোকার মত ডেকে যাচ্ছে। তবুও সে এখন চোখদুটো পাথর বানিয়ে পথে বসিয়ে দিতে চাচ্ছে, বুকে হাত দিয়ে বুঝতে চাচ্ছে শীতার্ত ফাটা চৌচির হৃদয়টায় আশা আর কতটুকু বাকি।

দৃশ্য আটঃ-
দামাল বাতাস বেহায়া বেলাজের মত আজ আবার বারান্দা ছাপিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বসতে বেশ অসুস্থ বোধ করছে ছেলেটি। বাতাসের রূপ নিয়ে কিছু সুন্দর মূহুর্তের স্মৃতি তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চেয়েও যেন মারছে না,তাড়িয়ে তাড়িয়ে কেবল কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটি অস্থির হয়ে নিচে নেমে এসে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। একটু হাঁটবে বলে পা বাড়াতেই সামনে তাকিয়ে আবার থমকে গেল সে।ঝাঁক ঝাঁক আলোর ভীমরূল যেন ছুটে আসছে তার দিকে। রূপহীণ রাস্তাটাকে আলোয় বন্যায় ভাসিয়ে একটি নীল শাড়ি,খুচরো কিছু গয়নার সোনালী চমক,চোখ ভরা কাজল ছেলেটার চোখ বহুদিন পর আবার ধাঁধিয়ে দিল। আলোর বন্যায় ডুবে যেতে যেতে ভেসে উঠা চেতনায় বুঝল মেয়েটি এখন যুগল ছবি। ঘোর ভাঙ্গল ছেলেটির।বাতাসের বিপরীত দিক থেকে আসায় রিকশাটার গতি এখন ধীর। মেয়েটিও তাকে বিস্ময় নিয়ে দেখছে।মেয়েটার চোখ অনুসরণ করে ছেলেটা নিজের পায়ের দিকে তাকালো এবার। ক্রাচে ভর দিয়ে আর এক পা এগিয়ে এলো মেয়েটিকে দেখতে নয়,বরং নিজেকে ভালোকরে দেখাতে। তার চোখে জমে উঠা পানিটা চিকচিক করার আগেই রিকশাটা তালে পেছনে ফেলে চলে গেল। ছেলেটি অপর দিকে ছুটে চলা রিকশাটা দেখতে থাকলো যতক্ষণ দেখা যায়।।ঘাড় পর্যন্ত এলোমেলো চুল,ধুসর টি-শার্ট, দুটো ক্রাচ,অচল পায়ের পাজামার বাতাসে উড়ন্ত ভঙ্গি যেন মানুষের অপারগতার চিরচেনা একটি বিষন্ন স্থির চিত্র হয়ে রইলো।
 
শেষ দৃশ্যঃ
ঝুম বৃষ্টি। শুন্য বারান্দা,কালো লোহার চেয়ারটা ভিজছে,তাতে ঝরে পড়ছে গন্ধহীন কিছু বোগেনভেলিয়া।
………………………………………………………………………………………………………।।

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০১৪

মেঘলা_দুপুর



মেঘলা_দুপুর

(আপু , তোমায় মিস করি খুব ।)
 
 এমনি এক শাদা মেঘের কাছে এক টুকরো রোদ চেয়েছিল দুপুর হতে
শূন্যতায় ভাসমান খানিক জীবন ;
সবাই বলে দুদিনের ক্যানভাস
নিত্য ঝমক তীব্র খোলসে মগ্ন সারাংশ
পলকে হারিয়ে যাওয়া অট্টহাসি
ধ্রুপদী রাগ
আর তুমি কপট মায়ার প্রথম অক্ষর ।

অথচ মহানীলে নির্নিমেষ ভাসতে ভাসতে
শঙ্খিনী রাত খুলে দেখি
এই জীবনের একলা বেলা ফুরলোনা ।
জুয়াড়ি প্রহরে হারবার শঙ্কা আর নেই
একাকীত্বে ডুব দিয়ে মাতাল হয়ে
নির্ঘাত সাঁঝের ঘোমটা এনে দিতে পারি এই রোদ মেঘের পাড়ে
ছুঁয়ে দিতে পারি অদৃশ্য তোমার মৌন মুখর ক্ষণ
শব্দের সাতরং
বিনম্র মোহে ছলকে উঠা বেদনা ।


মরে যেতে যেতে জীবন্ত হই জীবনের পরবাসে
আপনত্বে মিশে গিয়ে দেখি পরবাস শুয়েছে পাশে
বন্ধ চোখের পাতায় আত্মজ একাকার হয়ে থাকে ;
সরে সরে শুক্লপক্ষের রাতে জড়িয়ে রাখি অনাকাঙ্খিত উন্মাদনা
আর...আর কেবল মনে হয় বেঁচে থাকা বড্ড জরুরী” !
শুকতারার জ্বলজ্বলে নিঃসঙ্গতায় উল্লাস গাঢ় হলে
সাজির সারথি ছড়ায়ে দিয়ে হেসে উঠি অকারণে
বারবার অস্তের বিষবাণে সমর্পিত হয়ে পুনর্বার জেগে উঠা ;
অজানাই রয়ে গেল আদিকাল মহাকাল ।

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

সেদিনও এমনই বসন্ত ছিলো ^_^


সেদিনও এমনই বসন্ত ছিলো ^_^

সেদিনও এমনই বসন্ত ছিলো, ছিলো কোকিলের কুহুতান
ভ্রমর, প্রজাপতি, মৌমাছির গুঞ্জন বুকে বাসন্তী বাতাস
কিশোরীর ওড়না উড়িয়ে, তরুণীর খোলা চুলে ঢেউ তুলে
কী অদ্ভূত খেলায় মেতেছিল সেই দিন-
উনিশশবায়ান্নার একুশে ফেব্রুয়ারি!

রাজপথে নেমেছিল তারুণ্যের ঢল- যেন হিমালয় থেকে
বরফগলা নদী, যেন সমুদ্রের সফেদ জোয়ার,
মহাকালের প্লাবন যেন গর্জে উঠেছিল সেদিন
এ ভাষা আমার মায়ের, এ আমার অহংকার;
কিছুতেই কেড়ে নিতে দেবো না, না- না- না...

সে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়েছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া
অযুত কণ্ঠে মুখরিত ছিলো ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল।

হঠাৎ গর্জে উঠেছিলো শোষকের নির্লজ্জ বুলেট!
রফিক, শফিক, সালাম, বরকত আর জব্বারের
রক্তে লাল হলো রাজধানীর পিচঢালা পথ।
কোকিলের কুহুতান গেলো থেমে, বাতাস থমকে
দাঁড়ালো মেডিকেল চত্বরের আম গাছের শাখায়!

সে দিন থেকে ফাল্গুনের শিমুল, পলাশ আর মান্দার
ফুল আরও রক্তিম হলো- চেতনার বারুদ হলো
অঞ্জলির মহার্ঘ পাষাণ বেদিতে!