[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১২

গল্প : চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়

 

গল্প : চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়




(এক)
যদি পারতাম বন্দি করে রাখতে সেই সব দিনগুলোকে তাহলে হয়তো তাই করতাম।
আমার হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো আজকাল আমাকে বড্ড ডাকে; সেই ডাকার ধরনটাও অদ্ভুত। মাঝ রাতে ঘুমুতে যাই দুচোখ ছাপিয়ে ঘুমও আসে; ভাবি এই বুঝি জ্ঞানশূন্য সাগরে ডুবে গেলাম, কিন্তু না; তা আর হয়না। চোখের পাতার ঘোর অমাবস্যার যে আধার; তাতে আচমকা ভেসে উঠে পোড়া মুখীর মুখটা, হতচ্ছাড়ি জ্বালিয়ে রেখেছে আমায় শেষ প্রদীপের সলতের মতো। আমি টিপ-টিপ করে জ্বলছি।
জানিনা আর কত রাত এভাবে ঘুম শূণ্য করে রাখবে আমাকে। ওর হাসির শব্দে মনে হয় চারপাশটায় কলরব উঠে যায়। মাঝ রাতের আধারে আমায় ডাকে; কান্ত এই কান্ত এসোনা……. মাঝ রাত্তিরে কানামাছি খেলি।
কিছুতেই আমার কানামাছি খেলা হয় না; সেই সাথে ঘুমের সাগর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। বিতৃষ্ণা এসে ঠেকে জিবের ডগায়।
মাঝ রাতে বাইরে যে বেরুব সে উপায় টুকু পর্যন্ত নেই; র‌্যাকের পাশে পাহারাদার বসে আছে। এই অভাবনীয় ভয়ের রাতে আমাকে সঙ্গ দেয়। এমনটা হতো না; কিন্তু সেদিনের পর থেকে রিস্ক নেয়া যায় না;সেটুকু ভেবেই এই ব্যবস্থা।
আমার চিন্তা কিংবা চেতনার মাঝে অশরীরী কারও উপস্থিতিটা শুধু আমিই জানতাম; কিন্তু সেটা যখন দেয়াল থেকে বাগান ঘুড়ে কারো ঘরের আঙ্গিনায় গিয়ে দাড়াতে শিখলো; ঠিক তখনই সবাই আমাকে ঘিরে চোখ গোল করা দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে লাগলো; আর সেই সাথে সাতসতেরো থেকে সাতপাঁচ বারোর গ্যাঁড়াকলে আমার দৈনন্দিন জীবন ভাজা হতে লাগলো।
এমনও হয় যে আমি খেতে যাবো কিন্তু ঘোর লাগা টোপে বসে রয়েছি; কিংবা কিছুটা আনমনা; এই রকম হলেই চারপাশ থেকে কথা ছুটে আসতো; এই কান্ত তোর হয়েছেটা কি; বল দেখি ?
-কান্ত’র আর কি হবে !! প্রেমে-ট্রেমে পড়েছে বোধহয়;
-তোমাদের যা-কথা; কান্ত পড়বে কারো প্রেমে; ওর মতো এমন রসহীন ঘাস কি কারো সবুজ বনের অবুঝ সাথী হতে পারে ?
এইরকম প্রশ্ন গুলো আমাকে বিদ্ধ করতে করতে ওদের কথার ফলা আজকাল ভোতা হয়ে গেছে। তরে ওরা ক্ষান্ত হয়নি; নতুন করে শুরু করে, আর ভেতরের টিপ টিপ করে বয়ে চলা বর্ষণ টাকে ঝড়ের আকারে ধারণ করাতে চায়; কিন্তু আমি এত সহজে সেই ঝড়কে আহবান করতে চাইনা।
বর্ষা শেষের এক রাতে আমি যে কাণ্ডটা করলাম তাতে ওরা শংকিত হয়ে গেলো; আমাকে কিছুতেই একা থাকতে দেবেনা। আমাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হলো; তুমি কেন এমন করছো ?

(দুই)
আর একপা বাড়ালে হয়তো দেখতে আর হতো না আমাকে; আমি বট তলার শ্মশান ঘাটের যাত্রী হয়ে যেতাম। নিশুতি রাতে ঘুম সাগরে হতচ্ছাড়ি সুশি এসে আমাকে খুব করে ডেকে, হাত ধরে ছাদের উপরে নিয়ে এসে যে কাণ্ডটা ঘটালো তাতে লোক মুখের রহস্য কাহিনীর চরিত্র হয়ে গেলাম আমি।
অদৃশ্য সুশি হঠাৎ দৃশ্যমান হয়ে ছাদের উপর দুহাত তুলে ডেকে বললো কান্ত ভালবাসা কত লম্বা হতে পারে তা জানো তুমি ?
আমার সেই রসহীন উত্তর ;জানবো কি করে, কখনো মাপিনি তো !!
ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো; মাপ নি বেশ করেছ; এবার ছাদের উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়; যত দূরে গিয়ে পড়বে আমি বুঝে নেব ততখানি লম্বা তোমার ভালোবাসা !!
আমি ঝাপ দিতে গেলাম; ভালবাসার দুরত্ব দেখাতে……………
সেদিন মরেই যেতাম; কিন্তু পেছন থেকে রন্তু এসে ধরে ফেললো আমায়; তাই বেঁচে গেলাম। দেখাতে পারলাম না আসলে কতখানি ভালবাসতাম সুশি কে।

আজ মাসের পাঁচ তারিখ। আর্ট গ্যালারিতে আমার ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে; পুরো হল রুম জুড়ে মানুষের সমাগম; আমি গ্যালারির একপাশে চুপচাপ দাড়িয়ে; রন্তু এসে বললো কান্ত দা একজন তোমার ছবি কিনতে এসেছে।
আমি তখন কিছু একটা ভাবছিলাম; একটু আনমনা ছিলাম তাই নিষেধ করে বলতে ভুলে গেলাম যে, বলে দাও ছবি বিক্রি হবেনা।
নিচে গেলাম; যিনি নিতে এসেছেন তাকে তাড়িয়ে দেব এই ভেবে।
জলরঙ্গে আঁকা পেইন্টিং টার নাম “উদোম” যিনি কিনতে এসেছেন তাকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম;কেননা তার বয়স চব্বিশ ছাড়িয়ে যায়নি; মনে হয় নতুন শাড়ি পড়া শিখেছে; আঁচল টানতে জানেনা। চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা নেই কিন্তু দেখে আন্দাজ করা গেল চোখে লসিক করা। আমি কাছে গিয়ে দাড়ানোর পর তিনি বিস্ময় মাখা চোখে বললেন আপনিই কি ছবিটা একেছেন ?
আমি বললাম হ্যা। তার চোখ আর ঠোট উল্টানো দেখে বোঝা গেল তিনি বিশ্বাস করতে পারলেন না;
বললেন ভেবেছিলাম বয়স্ক গোছের লোক হবে কিন্তু এতো তরুন ভাবিনি; যাই হোক কত দাম চাইছেন ?
-সতের হাজার পাঁচশো তের টাকা।
-আমি সতের হাজার টাকা দিচ্ছি;
-না ,হবেনা; টাকা পুরোটাই দিতে হবে।
-কিছু কম রাখুন !!
-আমি পারছিনা।
মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো না; ব্যাগের ভেতর টাকা খুজলো; তারপর টাকাটা আমার সামনে মেলে ধরে বললো; এই নিন পুরোটাই আছে !!
আমি গুনে দেখলাম আট টাকা বেশি আছে; ফেরত দিতে চাইলাম কিন্তু পকেটে ভাংতি নেই;
-রেখে দিন পড়ে নিয়ে নেব;
-পড়ে আমাকে পাবেন কোথায় ?
-পেয়ে যাবো পৃথিবীটা খুব বড় নয়; চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়; বাকী থাকে শুধু মনের ইচ্ছেটা; ইচ্ছেটা যদি থাকে তো পুনরায় দেখা হয়।
আমি বললাম সহজ ভাবে বলুন; কাব্যিকতা পছন্দ করিনা। মেয়েটা হাসলো অদ্ভুত ওর দাঁতগুলো খুব সাদা।
মেয়েটার চলে যাওয়া দেখলাম; খানিক বাদে ভুলেও গেলাম। কিন্তু ওর রেখে যাওয়া কথাটা মুছে দিতে পারলাম না মন থেকে; “পৃথিবীটা খুব বড় নয় চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়; বাকী থাকে শুধু মনের ইচ্ছেটা; ইচ্ছেটা যদি থাকে তো পুনরায় দেখা হয়”
এই কথাটা আমাকে কেউ একজন এর আগে বলেছিল;
কে বলেছিল ? কেন বলেছিল; মনে করতে পারছিনা।

(তিন)
ভরদুপুরে ক্যামেরা কাধে বাসায় ফিরছি। রাস্তায় হন্যে হয়ে কিছুক্ষণ হেঁটেছি। একটা অটো কিংবা সি.এন.জি. কোনটাই পাইনি; দুপুর রোদে তৃষ্ণায় বুক জ্বলছে কি-করি;
সাউথ হিলসের কাছে আসতেই ফুলের দোকানের পাশেই একটা সি.এন.জি পেয়ে গেলাম। কাছে ঘেঁষতেই ড্রাইভার বলে উঠলো বাবু রিজার্ভ আছে যাওয়া যাবে না। আমি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললাম ক’জন নিয়ে যাবেন; ড্রাইভার বলল মানুষ একজন আর কিছু ফুল।
- তাহলে তো যাওয়াই যায়।
- না বাবু উনি আমাকে বলেই নিয়েছেন আগে;
- কোথায় উনি
- ওই তো ভেতরে ফুল কিনছে।
আমি বাইরে দাঁড়ালাম দেখি কে সে; আর যাওয়া যায় কি না।
এক তোড়া ফুল নিয়ে চোখে পড়ার মতন একটা মেয়ে সি.এন.জি তে উঠে বসলো। রোদের তাপে মাথা তখন আমার আই-টাই করছে। সাত চৌদ্দ না ভেবে গিয়ে বললাম যদি কিছু মনে না করেন, আমি কি; সি.এন.জি তে আপনার পাশে কিছুটা সময় যেতে পারি; এ রোদের দুপুরে সব খা খা করছে বাড়ি যেতে হবে তারাতারি।
মেয়েটি চোখ কঠিন করে বলল না যেতে পারেন না; আমি তো রিজার্ভ নিয়েছি;
-যেতে পারিনা বলে কি !! মুখের উপর না বলাতে আমার একটু খারাপ লাগল।
সি.এন.জি স্ট্রাট নিয়ে চলে গেল। কিছু মেয়েরা যে বড্ড বাজে রকমের মেজাজী হয় সেটা জানা ছিলোনা; আজ জানলাম।
রোদমাখা পথে পা রাখলাম; সকাল থেকে মেঘালয়ের পাহাড় ধরে দু’টো প্রজেক্টের কাজ শেষ করেছি। আজ বাইকটাও আনিনি সাড়াতে হবে তাই; কে জানতো ভর দুপুরে এমন হবে।
পকেট থেকে দেশলাইটা হাতে নিলাম, সিগারেট বের করতে যাবো অমনি সি.এন.জি র আওয়াজ।
আরেকটা সি.এন.জি এলো বোধহয় ;
-এই যে আসুন;
পেছন তাকাতেই দেখি সেই মেয়ে।
কি ভাগ্য আমার !!
সিগারেট পকেটে ফেলেই উঠে গেলাম। আমাকে না নিয়েই চলে গিয়েছিলেন আবার যে এলেন;
- একটু যেতেই মনে হলো এই দুপুরে আপনার কষ্ট হচ্ছে তাই নিতে এলাম; তবে কথা বলা চলবে না কিন্তু।
আমি চুপচাপ বসে গেলাম। সি.এন.জি চলছে মাঝারি স্পিডে পাহাড়ী পথে। মেয়েটার দু’পাশে অনেক ফুল আর ফুলের তোড়া; অনেকটা ফুলের বনে পরি’র মতো লাগছে ওকে। ভালো করে তাকাতে গিয়ে চোখে চোখ পড়ে গেল মাথা নিচু করে গেলাম।
আমার সিগারেট খাওয়া দরকার কিন্তু ওনি যদি বিরক্তি বোধ করে। এই জাতীয় মেয়েদের তো সিগারেটের গন্ধ্যে অ্যালার্জি থাকে। বাধ্য হয়ে ড্রাইভারের কাছে দেশলাই চাইলাম এইবার মেয়েটা মুখ খুললো;
-না জনাব এখন সিগারেট খাওয়া চলবে না; ওটার গন্ধ সহ্য হয় না আমার।
কি আর করা; থাকলাম ভজু হয়ে। কিন্তু সিগারেট যে আমায় খেতেই হবে ও নেশা বড্ড বাজে।
আধঘণ্টা কেটে যেতেই আমি লজ্জাকে চুপসে যওয়া টিস্যুর মতো রাস্তায় ফেলে দিয়ে সিগারেট জালিয়ে নিলাম।
-আপনি তো বড্ড বাজে লোক, না বলা স্বত্তেও কাজটা করলেন। আপনি নামুন তো।
আমি হাসলাম; মেয়েটা ততক্ষণে রেগে গেছে, মুখটা ভবানির মতো লাগছে। এই দুপুরে নেমে গেলে আমি রোদে পোড়া নিগ্রো হয়ে যাবো। মেয়েটা ভ্র-কুচকালো তারপর বললো; হলে হবেন; আরেকটা নিগার খুজে পেতে কষ্ট হবেনা আপনার। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল; মুখ ভর্তি ধোয়া ছেড়ে দিলাম। দু’মিনিট আমার দিকে তাকিয়ে মেয়েটার ভাব বদলালো।
- এবার ফেলুন;
সিগারেট আধ খাওয়ায় হয়নি ততক্ষণে; আমি ছুড়ে ফেলে দিলাম।

দু’পাশে পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। দুরের মাঠে আজকাল রাখালও দেখা যায় না। গরু আপনা আপনি চড়ছে। ছেলেরা ঘুরি আর উড়ায় না; এ পথে কোম্পানি বসে গেছে, পাহাড়ের সাদামাটি কেটে তৈজসপত্র বানায়। আমি সাদা মাটির পাহাড়ের দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে ছিলাম; তাকিয়ে থাকা মনে মাঝে মাঝে কল্পনার অ্যানিমেশন শুরু হয়ে যায়।
আনমনা থেকে সৎবিত ফিরে পেলাম যখন দেখলাম সি.এন.জি থেমে আছে।
অসহ্য গরম !! কাঠ রূপালী রোদ্দুর রাস্তা আর বনাঞ্চল জুড়ে।
মেয়েটা বসে থেকে ঘেমে গিয়ে নেমে গেল সাথে পা ফেললাম আমিও।
গ্যাস নেবে বলেই থেমেছে সি.এন.জি।
শাড়ির আঁচল ভাজ করতে করতে ও বলল রোদ আজ কড়কড়ে।
- তাই মনে হচ্ছে
- রোদের ছেলে কে জানেন? কাব্যিক প্রশ্ন!! অমন রাগী মেয়ে আবার কবিতা জানে নাকি ?
-মুখ ঝাঁকিয়ে বললাম জানি না।
- রোদের ছেলে হলো পড়ন্ত বিকেল।
- তাই নাকি !!
- মনে হচ্ছে রোদের মা ক্ষেপেছে আজ। শরীর থেকে সব বেরিয়ে যাচ্ছে।
- মেয়েটি এবার আঁচল ছেড়ে দিয়ে হাতের কঙ্কন ঘুড়াতে ঘুড়াতে বলল, আপনার কোনটা ভাল লাগে রোদ না বৃষ্টি। আমি মিথ্যে করে বললাম আমার রোদ ভাল লাগে।
- মেয়েটি বলল কেন ?
- রোদ না এলে সব কিছুতে গুমোট থেকে যায়। আর আধারটাকে ভালো লাগেনা বলেই তো রোদটাকে প্রিয় ভাবি।
- ও তাই; কাব্যিক সংলাপ।
- আপনিও কিন্তু কম না; রোদের যে ছেলে আছে সেটা তো জানতাম না। আজ শুনলাম।
- তাই নাকি; ওই যে দূর পাহাড়ের ঝরনা দেখছেন বলতে পারেন ওই ঝর্ণার প্রিয় বন্ধু কোনটা ?
- প্রিয় বন্ধু যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হবে স্রোতকে;
- নাহ্ ঝর্ণার প্রিয় বন্ধু প্রকৃতি। প্রকৃতির কোলে ঝরনার সৌন্দর্যই সেরা।
- হু বুঝলাম; আপনি কাব্যিক করে বলেন বলে ভালো লাগলো; নয়তো এগুলো আতলামু।
- তাই; তবে আপনি হলেন একটা ট্যা-ট্যা টাইপের লোক; বানিয়ে একটা মিথ্যে বললেন আমার সাথে।
আমি হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে বুঝলেন ?
আর কোন কথা হলোনা ; সি, এন জি ততক্ষণে ষ্টার্ট নিয়েছে।
বাড়ি ফিরবার পথে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম এত বড় উপকার করলেন; আপনার নামটা তো জানা হলোনা।
ও বললো হাজার লোকের ভীড়ে কতজনকেই আর মনে রাখতে পারি বলুন; তাছাড়া আমাকে মনে না থাকলে কোন দোষ হবে না তাতে।
দোষ হবেনা জানি কিন্তু উপকারটা ফেরত দিতাম আরকি ?


(চার)

সুশির সাথে দ্বিতীয় বার দেখার তারিখটা আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিনা তবে এটুকু মনে আছে; গারো বাজারের শিবতলার পথে এক ভিখেরির থালায় পয়সা দেব বলে পকেট হাতড়াচ্ছিলাম; আচমকা ও পেছন থেকে ভিক্ষে থালায় পয়সা দিয়ে বলেছিলো; দরাজ দিলের একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে; দরাজ দিল না হলে ভিক্ষের পয়সাও পকেটে থাকেনা।
রিকসা করে যাচ্ছিল সেদিন; তাই আর ধরতে পারিনি ।
মেয়েটির নাম যে সুষ্মিতা বিনতে সুশি সেটা প্রজেক্ট ম্যানেজারের কাছেই প্রথম জানতে পাই। নীল লেকের ফটোসেশনের মিশনেই তৃতীয়বারের মতো ওর সাথে দেখা হয় আমার। সেদিন একটা বালুচরি শাড়ী পড়ে এসেছিলো; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আমাকে চিনতে পেরেও না চেনার ভান করে বাচ্চাদের ডাটা এন্ট্রি লিখছিল। আমি সামনে গিয়ে হ্যালো বলার পর ও বললো; আমি কি আপনাকে চিনি ?
আমি হাসি চাপা রাখতে পারছিলাম না; তাই বললাম আপনার নাম তো সুশি; তাই না। মেয়েটি কপট রাগ দেখিয়ে বলল; হ্যা তো; বলুন এখন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি ? নাকি আপনি আমার ডাটা নিতে এসেছেন ?
কিছু করতে হবেনা আপাতত পরিচিত হতে চাই। আমি আর আপনি মানুষ এটাই বড় পরিচয়। আমি হেসে বললাম কেন পরিচয় দিতে অসুবিধে আছে ?
আমি ব্যাস্ত হয়ে গেলাম কাজে তাই আর কথা বলা হলোনা সেদিন। নীল লেকের ফটোসেশনে সুশিরও ছবি তোলা হয়েছিলো। সেই ছবিটা দেখে আমি জলরঙে একটা ছবিও এঁকেছিলাম।
সেদিন দুপুরের পরে সাদা মাটির উপর বসে ডাটা এন্ট্রির টেবিল ছেড়ে সুশি হাওয়া লাগাচ্ছিল গায়ে। আমি ঠিক তারই পাশে ক্যামেরা রেখে ডাইরি লিখছিলাম। এরই মাঝে আমার ধোয়া ছাড়বার নেশা পেয়ে বসলো তাই ডাইরি রেখে উঠে গিয়েছিলাম; এসে দেখি ডাইরি নেই;
খোজা-খুজি করতে হলো অনেক। কিন্তু পেলাম না। সুশিও নেই যে ওকে জিজ্ঞেস করবো। শেষে টিম ম্যানেজমেন্ট অফিসার কে জিজ্ঞাসা করলাম সুশি কোথায় ? উনি ভ্র-বাকা করে বললো সুশি নিচে পানি আনতে গেছে।

বিকেলে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম আবারো ।
সন্ধ্যের দিকে তখনও আধারটা পুরো আসেনি; তবে আসবে আসবে করছে। সবাই হিলস ছেড়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে হাঁটছি তখন। পিছনে দেখা গেল সুশিকে; আমি পাশে গিয়ে বললাম আমার ডাইরিটা দেখেছেন ? ও চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বললো হ্যাঁ।
মনে মনে আমার একটু রাগ উঠে গেল; না বলে কেন এমনটা করলো। ও বললো বাতাসে ডাইরি পড়ে গিয়েছিলো তাই আমি নিয়ে গিয়েছিলাম; ভয় নেই পড়িনি।
কোম্পানীর মিনিবাসে করে সবাই যে যার আস্তানায় ফিরছিল; গারো বাজারে নামবার সময় সুশি বলে উঠলো লেখায় এতো বানান ভুল করেন কেন ?


(চলবে…………………….)

গল্প : চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয় শেষ পর্ব


গল্প : চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয় শেষ পর্ব


প্রথম পর্বের পর………………
(পাঁচ)
গারো বাজারের অন্ধ গলির পাশেই একটা বাঈজীখানা যে আছে তা আমি জানতাম; কিন্তু কখনো সেখানে যাইনি। প্রয়োজনও পড়েনি; নীল লেকের প্রজেক্ট শেষ হবার আগের দিন সুশি আমায় বললো আপনি কখনো নর্তকীর উদোম নৃত্য দেখেছেন ? আমি বললাম না তো;
-তাহলে গনিকাবৃত্তির উপর অমন একটা লেখা কি করে লিখলেন ?
-কোথায় পেলেন লেখাটা !!
-যেখানে ছাপাতে দিয়েছিলেন; সেখানেই।
-আসলে আন্দাজে লিখেছি;
-মিথ্যে বলতে ভয় করে আপনার। আমি জানি পুরুষরা একটু-আধটু ওই রকম যে হয়;
-অনেক পুরুষ নিয়ে গবেষনা করেছেন মনে হচ্ছে !
-অনেক না হোক আপনাকে নিয়ে কিছুটা করতে গিয়ে বুঝতে পারছি ;
আমি আকাশ থেকে পড়বার ভাব ধরলাম না; কিন্তু চোখ বড় করে বলালাম; হঠাৎ আমাকে নিয়ে !!
-হ্যা।
-গল্পে তো লিখি বিষ খেয়ে মরে যাচ্ছি; কিন্তু তা লিখতে গিয়ে আমাকে বিষ খেতে হয়;
-বুঝলাম কিন্তু বিষের স্বাদ যে কেমন; সেটা না জানলে কি লিখতে পারতেন ?
-তা পারতাম না; তবে গনিকা বৃত্তির ব্যাপারটা আন্দাজে লোকমুখে শুনে লিখেছি।
-তাই !!
-হ্যা

আমি নতুন প্রজেক্ট নেবার আগে সিডিউল দেখতে গিয়ে বারবার করে দেখছিলাম; সুশি কি আমাদের প্রজেক্টে অর্ন্তভুক্ত হয় কিনা। সুশির জন্য কেমন একটা টান যেন আমার মনে অনুভব করতে পারলাম। সুশি কাজে না এলে আজকাল ছবি তোলার কোন মুডই আমার মাঝে থাকে না। কদ্দিন নিউমারলজি নিয়ে ঘাটাঘাটি করে দেখলাম আমার লাইফে কি কোন প্রেম-ট্রেম আছে কিনা।
সুশিও মাঝে মাঝে আমায় সময় দিতো; রাস্তায় আসবার কিংবা যাবার পথে কিন্তু কোন পার্ক কিংবা রেস্তোরাঁয় নয়; আমি কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম সুশি আমাকে একটু একটু করে চিনে নিচ্ছে; কিন্তু সেটা ও বুঝতে দিতে চায়না।
নতুন প্রজেক্টে সুশি আর আমি দুজনেই থাকলাম কিন্তু প্রজেক্টটা একটু প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে গেল। যাবার কিংবা আসবার সমস্য না থাকলেও ওখান থেকে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে গেলে রাত অর্ধেক হয়ে যাবার সম্ভবনা আছে তাই কতৃপক্ষ ওখানের একটা গ্রামে আমাদের থাকার ব্যাবস্থা করে দিলেন। শুরু হলো আমাদের নতুন প্রজেক্ট।

(ছয়)
আমি প্রজেক্টের কাজে যতটুকু মনোযোগী হলাম; তারচেয়ে কম মনযোগী হলাম সুশি’র প্রেমে পড়ার দিকে। কেননা আমি দেখতে চাইছিলাম সুশি কি আমাকে পছন্দ করে কি না; কি জানি জীবন নাট্যের রাজপুত্রকে আগেই পেয়ে গেছে কিনা কে জানে।
ওর কাজ থাকতো সন্ধ্যের পর তাই সন্ধ্যের পর আমি যখন মুক্ত বিহঙ্গ তখন ওর কাজে নিজেকে খানিকটা সময় ওর কাছাকাছি রাখতাম।
ও ব্যাঙ্গ করা হাসি হেসে বলতো; থাক আমাকে উপকারের শোধ দিতে হবেনা।
মেঘালয়ের পাহাড় ভেদ করে চাঁদ উঠতো চারপাশে; তার ঘোলাটে আবরণে পুরো পাহাড় জুড়ে রহস্যময়তা বিরাজ করতো; আমরা সবাই চারপাশে গোল হয়ে আড্ডা দিতাম অনেক রাত অবদি; এ তল্লাটে আইসক্রিম বা কফি পাওয়া যেত খুব কম; আমার তৃষ্ণার্ত মন তাই মাঝে মাঝে সুশির খোলা গলায় গাওয়া গানের নদীতে ডুব দিতো;
সুশি ভালো গান গাইতে পারতো; জানিনা কেন যে জীবনের লক্ষ্যে গানটাকে সঙ্গি না করে এই ঘুড়ে বেড়ানো আর শিশুদের নিয়ে মহা গ্যাঞ্জাম মূলক কাজের পিছু ছুটছে।
প্রজেক্টের মাঝামাঝি পাতাঝরা দিন যাচ্ছিল তখন; সেই সব দিনগুলিতে কাজের ফাকে ফাকে ভাবনার নদীতে খেয়া বাইতাম; আমি বুঝে উঠতে পারলাম না আসলে আমিই কি ভালোবেসে ফেললাম সুশিকে না সুশিই ভালোবেসে ফেললো আমাকে।
দিন শেষে, কাজ শেষে প্রতিদিন আড্ডা বসতো। সেই প্রতিদিনকার আড্ডাটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো দিনের পর দিন। তিন মাসের প্রজেক্ট; এর মাঝে কারো বাড়ি যাওয়া হবেনা।
সুশি এসেছে ঢাকা থেকে আমি এসেছি শিলিগুড়ি থেকে; দুজনার দুই দেশ হলেও কথা আর আচরণে পার্থক্য করা যায়না। আমাদের মধ্যে সেক্রিফাইস আছে সমান-সমান।
আমরা মাঝ রাতে তারা গোনা কিংবা কানামাছি খেলার আয়োজন করাতাম। আমাদের মাঝে রবীন্দ্র,ভলেটেয়ার কিংবা সত্যজিৎ ও শার্লক-হোমস নিয়ে জোর তর্ক হতো।
রোজকার খবর; দূর পাহাড়ের গায়ে সকালে বৃষ্টি হবে কিংবা নিচে পানি নেই; দুপুরে খাওয়া মিলবে না। এই সব খবর সুশি প্রতিদিন কাজে যাবার আগে লিখে আমার দরজার সামনে রেখে যেত।
ভুলেও যেন কাউন্টার থেকে হুইস্কির বোতল কিনতে না যাই; কিংবা আমার লাইসেন্স নেই এই জাতীয় কথা নিয়ে রোজ শাসাতে আমায়;
টিম লিডার পারুল আপা; কিংবা প্রজেক্ট ম্যানেজার বিভাস বাবু আমার কাজের প্রশংসা করলে সুশি ক্ষেপে গিয়ে বলতো ছবি তোলার জন্য চাই সফট হাত; এই রকম কঠিণ হাতে ভালো ছবি হয়না; ছবি তোলার জন্য চাই প্রকৃতির মতো মন; যেখানে দুঃখরাও করবে স্বপ্ন বুনন…………………………………………….।

আমাদের বেশি কষ্ট হতো নিচে পানি আনতে যেতে;
আমার স্নান করা নিয়ে ওর আপত্তি ছিলো; ঝরনার জলে স্নান করলে ঠান্ডা লেগে যাবে; আমার আপত্তি ছিল ওর চুল বাধায়; খোলা চুলে তোমাকে ভুতনি’র মতো দেখায়;
-তুমি এত ফরসা হইলা ক্যান এই কথা বলে সুশি’কে রোজ ক্ষেপাতো বাবুর্চি মিরাস আলী;
একদিন সুশি; হাতে করে পায়েস নিয়ে হাজির বললো নিজে রেঁধেছে; খেতে গিয়ে মিষ্টি হীন। পায়েস নিয়ে সে,কি হাসা-হাসি; গানের পাগল ছিলাম বলে কান থেকে এম.পি.থ্রি প্লেয়ার ছুড়ে একদিন নিচে ফেলেছিল । বসন্তের প্রথম দিন ও একটা কবিতা আবৃত্তি করছিলো। খুব সম্ভবত প্রেমের কবিতা; আমি মিস করেছি সেদিন কানে এম.পি.থ্রি প্লেয়ার ছিলো; সেদিন থেকে একটা আফসোস আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিল; আমি ওই কবিতা শত চেষ্টা করেও ওর মুখ থেকে আর শুনতে পাইনি; পড়ে জেনেছিলাম ওটা ওর লেখা কবিতা;
হলি খেলার দিন ও এসে বললো কান্ত আজ তো তোমার ছুটি; স্যার বলেছে তুমি আজ আমাদের সাথে ঘুড়তে যাবে; আমি বললাম আজ আমি তোমার সাথে একা ঘুড়বো; যাবে আমার সাথে;
-লোকে দেখলে বলবে কি
- কিছুই বলবে না। আমরা দু-জন কলিগ। তাছাড়া তোমার-আমার ব্যাপারটা সবাই জানে; জানলেই কি এটা তো সিনেমার পর্দা না; এটা গ্রাম বাংলার গেয়ো মাঠ-ঘাট এখানে এসব কেউ দেখতে চায়না।
সুশি একা যাবেনা আমি জানতাম; তাই বিকেলে ওকে বললাম এসো হলি খেলি;
এভাবেই শেষ হয়ে গেল আমাদের প্রজেক্ট।

(সাত)
আজকেই প্রজেক্টের শেষ দিন। বিকেল এই গ্রাম আর সবুজ পাহাড় ছেড়ে বাড়ি ফিরবো।
ব্যাগ গুছিয়ে সবুজ রঙ্গা একটা পাঞ্জাবী পড়ে আমি ঘর থেকে বের হলাম। বিভাষ বাবু আমাকে পেমেন্ট দেবার চেক দেবে বলে সেই সকাল থেকে ডাকছেন।
সবচেয়ে উচু পাহাড়টায় আজ আমাদের প্রজেক্টের শেষ কাজ হবে। আমি চেক নিয়ে ঘরে আর ফিরলাম না। পারুল আপা আমার ক্যামেরা নিয়ে গেছে সেই ভোর বেলা তার খোঁজে সামনে এগিয়ে গেলাম।
মেঘ নেই আজ; রোদও নেই। উচু পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে সুশি ক্যামেরা হাতে দাড়িয়ে;
কাছে যেতেই ও বলে উঠলো কান্ত তুমি আমাকে একটা আকাশ কিনে দেবে ; আমি সেখানে তোমার তোলা সমস্ত ছবি দিয়ে একটা গ্যালারী বানাবো। আমি হেসে বললাম দেব।
আমরা পুরো টিমের অর্ধেক এই পাহাড়ের গায়ে দাড়িয়ে আছি; হঠাৎ গুলির শব্দে সবাই সচকিত হলাম; বর্ডার থেকে গুলি আসছে; বর্ডার একশো গজেরও কম দুরত্বে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম গুলির আওয়াজ ক্রমশই বাড়ছে আমরা নিচে নামবার জন্য পা বাড়ালাম। পাহাড়ের চারপাশে আজ নীরবতা নেই বললেই চলে; আমরা সবাই পা চালিয়ে নিচে নামতে লাগলাম; অচেনা জংলী ফুল আমাদের পা ছুয়ে যাচ্ছিল; সবার মাঝে একটা উত্তেজনা শুরু হয়ে যাচ্ছে; আমরা সবাই সেই উত্তেজনা নিয়ে গতি বাড়াচ্ছি ক্রমশই।
ঠিক এই মুহুর্তেই একদল লোক হাতে অস্ত্র উচিয়ে ধেয়ে আসতে লাগলো; দেখে মনে হলো ওরা চোরা-কারবারি বর্ডার ক্রস করবার সময় হয়তো ধরা খেয়ে গেছে; আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম;
আমি সুশির হাত ধরে দৌড়ে দিলাম; আচমকা পেছন থেকে ক’জন ঝাপিয়ে পড়লো আমাদের উপর; আমি তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ে গেলাম বুনো গাছের উপর। পিছু ফিরে দেখি সুশি নেই;
নেই !!
কোথাও নেই র!!
চোখ যতদূর যায়।
ওর আর্তচিৎকার শুনলাম; এগিয়ে গিয়ে দেখি;প্রায় দুশো গজ পাহাড়ের নিচে পড়ে আছে সুশি।

(আট)
আমার চারপাশের জটলাগুলো ক্রমশই কমে যেতে লাগলো। সুশি’র লাশ নিয়ে ওরা চলে গেছে সেই কখন; কিন্তু আমি যেতে পারিনি; আমি থেমে গেছি; আটকে গেছি।
নোনা জলের তান্ডবে বার বার মনে হলো; আলো ছাড়বো; মায়া ছাড়বো পৃথীবি ছাড়বো; আর ফিরবো না কোনদিন এই পৃথিবীতে; এই পৃথিবী খুব খারাপ। তিনি উপর থেকে খেলা শুরু করবেন; তারপর ইচ্ছে মতো খেলবেন; আনন্দ পাবেন বেদনা উপহার দেবেন।
আমি জ্ঞান শূণ্য ছিলাম তিনদিন। চোখ মেলবার পর থেকে আমার মুখে কথা ফোটেনি বেশ ক’মাস।
আর কোনদিন কোন সবুজের বনে যাইনি; খুব দূরে দূরে থাকি; নিরব পথ পেলেই সুশি এসে দাড়ায়। আমি পথ চলতে পারিনা। আমি ঝরনার জলে স্নান করতে পারিনা; ওর শাসন আমাকে এখনো মনে করিয়ে দেয়।
হুইস্কির বোতলে ওর ইচ্ছে গুলো ক্রমাগত ঘোর পাক খায়; আমি তীব্র যন্ত্রনা নিয়েও আপন করে ভাবতে চাই সব বেদনা ঘেরা স্মৃতি গুলোকে।
ওর বিদায়ের পর থেকে আজকের এই দুপুর পর্যন্ত আমি পাথরে গড়া ভাস্কর্য হয়েই ছিলাম; খানিক আগে সেই কথার পুনরাবৃত্তি আমাকে নাড়া দিয়ে গেল; কিছুটা উন্মাদনা আমার মাঝে প্রকাশ পেল। আকাশ মাঝে ভেসে উঠলো সুশি’র কন্ঠ;
-দেখো আমি যদি কোথাও হারিয়ে যাই; তোমার ব্যর্থতা গোছাতে এমন একজনকে পাঠাবো; যে তোমাকে ভালোবাসবে আমারই মতো; শুধু তুমি তাকে চিনে নিও…………………………।

গ্যালারির একপাশে বসে ছিলাম এতক্ষণ।
আবার কেউ একজন ছবি কিনতে এসেছে। আমি সুশি’র জগৎ থেকে ফিরে এলাম।
দৌড়ে গেটে এলাম; রন্তু ওই মেয়েটি কোথায় ?
- দাদা চলে গেছে তো !!
আমি অসহায়ের মতো বললাম কি বলিস !! কোনদিকে গেছে
-তা তো বলতে পারবনা।
আমি পিছু ছুটলাম গেট পেড়িয়ে একদম বাইরে;
পথে নামলাম কাঠ রোদ্দুর আমার সারা গায়; ওকে খুজে পেতেই হবে; আমার চোখ আজ রোদের ছেলের গায়ে আঁক কষবে ব্যর্থতা তাড়াতে…………………

সমাপ্ত
_____________________________________________
:-)
জীবনের বাকে বাকে প্রতিদিন জমে হাজারো গল্প। এটাও তেমনি একটা গল্প;
সত্য গল্প গুলো জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকে; সেই স্মৃতিগুলো ক্রমশই ডালপালা মেলে আর সেই ডালপালা গুলো মাঝে মাঝে পথ আটকে দেয়।

বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১২

আজ তবে পৃথিবী আঁধার করে বৃষ্টি হোক ...

 

আজ তবে পৃথিবী আঁধার করে বৃষ্টি হোক ...
= ওই ... কি করিস?
- ঘাস কাটি ... তুই?
= খাই ...
- গুড ... ঘাস খাওয়া ভাল ...
= আমি তোর মত ঘাস খাই না কি?
- তুই নিজেই তো বললি ...
= তরে আমি ...
- কি?
= ভাগ ...

বিছানা ছেড়ে উঠি, এস-ট্রে টেনে নিয়ে খালি পেটে ধরাই দিনের প্রথম সিগারেট। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পৃথিবী। মুখে পানির ঝাপটা দিতেই আপাদমস্তক কেঁপে উঠি, এত গরম পানি, অথচ হাতে তেমনটা লাগছে না। সকাল বেলার কফিটা সাধারণত ভাল হয়না, তবুও এক মগ কফি না খেয়ে বাইরে বের হলে শীতে জমে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। কফির পানি বসিয়ে দিয়ে টোস্টারে পাউরুটি দেই দু'পিস।

= এমন করে কফি বানানো কই শিখছিস?
- আমি তো এমন করেই বানাই
= জীবনে কোন কাজ ঠিক মত করতে পারছিলি?
- না তো
= তুই একটা কি?
- উদ বিড়াল ...
= তোরে না বলছি - আহ্লাদ করবিনা সব সময় ...
- হি হি হি
= আবার হাসে ...

- হাসি না, আমার মুখের সেপ'টাই ওই রকম ... হাসি হাসি
কফিতে চুবিয়ে টোষ্ট খাই, আমার ফেভারিট, বিশেষ করে সকাল বেলাতে। জুতোর ফিতা বাঁধা একটা যন্ত্রণাময় ব্যাপার, আর শেভ করা ... তবুও ওই কাজ গুলো করতে হয় প্রতিদিনই।

= হি হি হি ...
- হাসিস কেন?
= তোরে দাড়ি পাইকা যাওয়া বুড়ার মত দেখাইতেছে ...
- তর যন্ত্রণায় ...
= কি?
- ভাগ তুই, শেভ করতে দে।
= যাবনা ...
- না গেলে তোর গালে সেভিং ফোম লাগায় দিব
= তুই আমারে ধরতে পারলে তো

গালের একচিলতে কাটা দিয়ে গোলাপি রক্ত বেরিয়ে আসে, এক সময় রক্তটা লাল ছিল। কিন্তু এখন সময় নেই দাঁড়িয়ে থাকার, গালে টিস্যু পেপার চেপে ধরে বেরিয়ে যাই ঘর থেকে।
ট্রেনে বসলেই এমনিতেই ঘুম পায় আমার, তারপরে শীতের সকাল। তবে সৌভাগ্য যে, যাত্রা মাত্র ১৫/২০ মিনিটের, ঘুমিয়ে পরে কোনদিন ষ্টেশন মিস করিনি।

= ঘুমাস না কি?
- না, ডিম পাড়ি ...
= তরে দিয়া যদি সেই কাজটাও হইতো
- আজিব, আমি কি কিছুই পারিনা?
= আমি কি বলছি যে তুই কিছুই পারিস না?
- তাইলে?
= তুই আমার সাথে দুনিয়ার আহ্লাদ করতে পারিস ...... অসহ্য ...
- আচ্ছা ...... তোর সাথে আহ্লাদ না করলে আমি কার সাথে আহ্লাদ করবো
= কেন? তোর ইল্লি বিল্লিদের সাথে করবি ...
- ওদের সাথেও তো আহ্লাদ করি, কিন্তু তোর সাথে যেমন করি ... তেমন তো না ...
= তুই ...

ষ্টেশনে নেমে হাটতে থাকি, ঠাণ্ডায় জমে যেতে থাকে শরীরের অণু পরমাণু। অসার হয়ে আসে হাত। কাঁচের চুড়ির রিনরিনে শব্দে জেগে ওঠে জমে যাওয়া মগজের প্রতিটি নিউরন।


= তুই কাজে যাস কেন?
- কাজ না করলে বিড়ি খাব কেমনে?
= সিগারেট খাওয়া কমাইছিস?
- কমাইছি তো ...
= ছাড়বি কবে?
- মইরা গেলে আর খাব না ...
= তুই তাইলে মইরাই যা ...

ইউনিফর্ম পড়ে চেয়ারে বসি, লগইন করি আমার ডেক্সটপে। ৮টা নতুন ইমেইল, সব জাঙ্ক, সুপারভাইজার আর হিউম্যান রিসোর্স থেকে পাঠিয়েছে। ওগুলো পড়ার কোন মানেই হয়না, তবুও খুলে পড়তে হয়। যদি বেতন বাড়ানোর কোন খবর থাকে ...

- হাআআ কর ...
= খাবোনা ... যা ভাগ ...
- আমি তাইলে একা একা খাবো?
= মর তুই ...
- খিদা পাইছে, খাইয়া তারপর মরি?
= তুই এত পিৎলামো করিস কেন?
- পিৎলামো কি?
= তুই যেইগুলা করিস...
- আমি কি করি?
= পিৎলামো

লাঞ্চের পরে ঘুম ধরে খুব। কফি খাই সেজন্য আবারও। কিচেন থেকে হাতে করে কফির মগ আনতে গিয়ে কয়েক ফোটা এসে পড়ে ইউনিফর্মে, দ্রুত ছড়িয়ে যায় সে দাগ, বাসি হয়ে যাওয়া রক্তের দাগের মত দেখায়।

= আমি তোর সুপারভাইজার হইলে তোরে এক্ষুনি স্যাক করতাম ...
- আমি কি করছি?
= কাজ ফেলে ফেইসবুকে কি করিস?
- ছবি দেখি ...
= এই জন্য তোকে বেতন দেয়? আর তোদের না ফেইসবুকে ঢোকা নিষেধ?
- আমারে জীবনে কোন নিষেধ মানতে দেখছিস?
= আ ...হা, কি বীরপুরুষ ...
- অবশ্যই তাই
= মরিস না কেন তুই?
- মইরা গেলে তকে জ্বালাবে কে? B-)
= উফফফ ...

কখন যেন Kirryn এসে দাঁড়িয়েছে পাশে ... ছোট্ট খাটো কিউট এই মেয়েটা বড় জ্বালায় আমাকে ...

~ Hay, do you know – today is Friday, and the day is almost over ...
- Yah … I know
~ Then ... what you are doing tonight?
- Nothing …
~ Why don’t you join in the party tonight?
- Wish I could, I have to wash my dirty uniform, look … I messed it up with a cup of coffee
~ You can do it later on ...
- No I can’t, because I have to go to …
~ Your friends house, is it? You told me the same thing last month ...
- Yah .. but it’s true
~ Why you’re avoiding me?
- No .. I’m not
~Yes you are


বাতাসের তীব্রতা এমনই যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে, সাথে ছিপছিপে বৃষ্টি, বাসায় পৌছাতে পৌছাতে জামা কাপড় ভেজা শেষ। কাপড় ছেড়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছি।

= তোরে না বলছিলাম ছাতা কিনতে?
- বাজারে ছাতা নাই, চায়না থিকা ছাতা আসা বন্ধ হইয়া গেছে
= উফফফ ...
- আচ্ছা, কালকে কিনবো ...
= তোর কালকে জীবনেও আসবেনা ...


এক মুঠো ভাত আর গরুর মাংসের ঝাল তরকারি নেই প্লেটে, মাইক্রোওয়েভে দিতে যাব ...

= আরও ভাত নে ...
- আমার ওতেই হবে ...
= না হবে না
- খিদা নাই তো বেশী ...
= আমার খিদা আছে ...
- মানে কি?
= আমি খাবো না?


"ভাইয়া আছো? ও ভাইয়া ..." এমি'র অফ লাইন ম্যাসেজ পাই ইয়াহুতে। উত্তর দিতে ইচ্ছে হয়না। ইমেইল এসেছে গোটা পঞ্চাশ। বেশীরভাগ গ্রুপ মেইল, সিলেক্ট এন্ড ডিলিট করি।

- তুই কই রে?
= আছি, কি হইছে?
- কিছুইনা ...
= ভাগ ...
- আজিব, তুই ভাগায় দিলেও আমার যাওয়ার জায়গা নাই
= জানি
- তাইলে ভাগতে বলিস কেন?
= চুপ কর, কাজ করতে দে ...
- আচ্ছা ...


খুব ইচ্ছে করে বারান্দায় চেয়ার পেতে বসি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে বারান্দায় পানি জমে গেছে, ঠাণ্ডা হিমাঙ্কের প্রায় কাছাকাছি, এ অবস্থায় চেয়ার পেতে বসা অসম্ভব। ঘরের বাতি নিভিয়ে বিশাল কাঁচের দেয়ালের পাশে গিয়ে বসি। ইলেকট্রিক হিটার আরামদায়ক একটা উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে থাকে সারা ঘরে, আর খুব প্রিয় গানটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করে বুকের ভেতরটায়।
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়-
এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায় ...
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখী,
আকাশে জল ঝরে অনিবার-
জগতে কেহ যেন নাহি আর ...
= পানি মোছ, ছেলে মানুষ এমন করে কাঁদে?
- আমি কেউ না, আমি কিছু না ...
= আচ্ছা, তুই এমন করে মন খারাপ করিস কেন?
- জানিস, আমি এক সময় ভালবাসার কারণে কাউকে মরতে দেখলে খুব অবাক হতাম, হাসতাম ও। ভাবতাম -- কি বোকা ওরা, এই কারণে কেউ মরে?

= আর এখন?
- আমাকে মরতে দিসনা কেন তুই?
= তুই মরে গেলে আমিও মরে যাব যে। তুই কোনদিন আমাকে সামনে থেকেও দেখিসনি, ছুঁয়ে দেখা তো দুরের কথা। ভালবেসেছিস দূর থেকেই। কিন্তু তারপর থেকে একটা মুহূর্ত কি আমাকে ছেড়ে বেঁচেছিস তুই? যাকে এমন করে ভালবেসেছিলি, সে কি ছেড়ে গেছে তোকে? তোর বুকের মধ্যে, অনেক গভীরে, যেখান পর্যন্ত পৃথিবীর অন্য কোন অনুভূতি পৌছাতে পারেনা, আমাকে সেখানেই রেখেছিস তুই। তোর সাথে সাথে আমিও বেঁচে থাকবো তোর বুকের মধ্যে, তোর রক্তের সাথে মিশে থাকবো।

- পরী ...
= উমম ...
- কিছু না
= না ... বল
- কিছু না রে
= বল ...
- এমনি ডাকলাম তো ...
= ঘুমাবিনা?
- না, আজকে শুক্রবার, আমার ফ্রাইডে নাইট ...
= তাইলে ক্লাবে যা, নাচানাচি কর ...
- হ্যাঁ ... সেইটা করা যায় ...
= ঠিক আছে, তাইলে যা তুই
- নাহ ... থাক ...


কাঁচ ভাঙ্গা হাসি ছড়িয়ে পরে আমার সমস্ত অস্তিত্বে। আলোড়িত করে আমার সমস্ত সত্তা। কাঁপন তোলে সারা দেহে। মনে হয় - বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন কিছু না।
প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ে কাছেই কোথাও। বিদ্যুতের সুতীব্র আলোর রেখা ভেদ করতে পারেনা কালো মেঘের চাদর। বৃষ্টি আসছে, বৃষ্টি আসছে। আজ তবে পৃথিবী আঁধার করে বৃষ্টি হোক ... ...

~সমাপ্ত~

তোমায় ভালোবাসতে দিও..

 

তোমায় ভালোবাসতে দিও

 


স্বপ্ন নয় নিখাদ বাস্তবতা,
তুমি আর আমি,
না কোন কল্পনার ভেলায় ভাসিয়ে
তোমাকে করবো না কোন রাজরানী,
তোমাকে বানাবো আমার হৃদয়ের রানী,
এক হাতে আমার হৃদপিন্ড ধরে
অন্য হাতে রাখবো তোমার হাত,
আমার জিবনটা তোমার নামে দস্তখত করে
বলবো ভালোবাসো আমায়।


সকালের স্নিগ্ধ আলোতে কাছে টেঁনে
তোমার কপোলে আমার ঠোঁটের উষ্ণতা মেখে
বলবো তোমায় ভালোবাসি,
দুপুরের রৌদ্দুরে বাড়ি ফিরে
আলতো করে ঘাম মুছে দিবো তোমার মায়াবী মুখ থেকে,
তোমার মুখে লোকমা তুলে দিতে দিতে
বলবো আমায় এমন করে ভালোবাসতে দিও,
সন্ধের চুরি যাওয়া আলোতে সূর্য ডোবা দেখতে দেখতে
দু'হাতের মাঝে তোমার অপার্থব আলোয় উদ্ভাসিত
মুখটা নিয়ে অপলোক নয়নে দেখবো

আর বলবো এমনি চিরটাকাল আমায় তোমাকে দেখতে দিও,
রাতের নিরবতা আর নির্জনতায় শক্ত করে
তোমাকে আমার আলিঙ্গনে এনে
বলবো নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত
এভাবে লতার মতো তোমাকে জড়িয়ে থাকতে দিও,
মরনের পরে ঐ অজানার জগতে আমার সঙ্গী হইয়ো,
আর আমাকে তোমায় ভালোবাসতে দিও।

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১২

অনেক কথা বলে গেছো...


চলে যাচ্ছি কথাটা শুনলাম…
 ফিরে আসছি কথাটা শুনিনি…

 তোমার চলে যাওয়া দেখেছি…
 ফিরে আসা দেখিনি…

 আজ আমাকে যে কারনে একা রেখে চলে গেছো…
 ১দিন আমি এমন থাকবনা ...

 অনেক কথা বলে গেছো…
 কিন্ত কোনো প্রশ্ন করিনি…

 সুদু জানিয়ে গেছো আমি কখনো ঠিক হবনা...
 আমি ঠিকে ঠিক হয়ে যাব হয়ত তুমি দেখতে পারবেনা …

 তোমার কথাই না তোমার মত কারো ভালোবাসা পেয়ে …
 ঐ মানুষটার ভালোবাসার টানে নিজেকে বদলে নিব…

 ১দিন আমিও কাওকে নিয়ে সুখে থাকব ...
 ১দিন আমি কাওকে মন প্রান দিয়ে ভালবাসবো…

 আমার আকাশ টা মনের মানুষের মত সাজিয়ে নেবো…
 তুমি শুধু দুর থেকে দেখবে সেই আকাশ টা...
 সাত রঙ্গে রাঙ্গানো ঐ রংধুনু…



Dekhe Akele Humne Solah Mele - Ek Vivaah Aisa Bhi 2008 - High Quality

দেখে এখলা হামনে সোলা মেলে....