[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১২

একটি রক্তাক্ত হৃদয়ের গান

 

একটি রক্তাক্ত হৃদয়ের গান


অনেক অনেক দিন আগে তানি নামে একটি মিষ্টি মেয়ে বাস করত। প্রতি সন্ধ্যায় সে দারুণ সুরেলা একটি গান গাইত। একজন তরুণ একদিন বাড়ীতে ফেরার পথে মেয়েটির বাড়ীর সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার গলার স্বর শুনতে পেল। ছেলেটির নাম ছিল অপু। জীবিকা নিবার্হের জন্য তাকে সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করতে হত এবং সন্ধ্যা নাগাদ সে ঐ রাস্তা ধরে হেঁটে বাড়ী ফিরত। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে সে দিনের পর দিন তানির গান শুনতে শুরু করল। বাড়ীতে ফেরা তার জন্য খুব একটা জরুরী বিষয় ছিল না। পৃথিবীতে তার আপনার বলতে কেউ ছিল না। অথচ তানির সুর তার কাছে চমৎকার ঝরণা ধারার মত ভেসে আসতে লাগল। বসন্তের ফোটা ফুলের রঙিন সৌরভ জড়ানো কোমল বাতাসের ন্যায় সংগীত ধ্বনি অপুর সত্ত্বা থেকে দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের গ্লানি ধুয়ে দিত। যখনই সে তানির গানে কান পেতে থাকত তখনই এই একই ঘটনা ঘটত। অপু ভাবল যে সে যদি মেয়েটির দেখা পায় তবে তার এই মন মাতানো গান শোনানোর প্রতিদান হিসেবে একটি সুন্দর উপহার দিবে তাকে। কিন্তু তাকে কী দেয়া যায়? একতোড়া ফুল? নাকি একটি পুতুল? সুন্দর একখানা পোশাক দিলে কেমন হয়? অপু দ্বিধায় পড়ে গেল। তারপর সে সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটির সাথে দেখা করার এবং তাকেই জিজ্ঞাসা করবে যে, কোন জিনিস তার সবচেয়ে বেশী পছন্দ। পরদিন অপু খুব সহজেই মেয়েটির ঘরে প্রবেশ করল। অন্য কেউ সেখানে ছিল না। শুধু অপু আর তানি। অপুর কাছে বেশ অন্যরকম লাগল যে অপরিচিত হলেও তানি তাকে অত্যন্ত সমাদর করল। তাদের পরিচয়ের শুরু থেকেই তারা একে অপরের বিষয়ে অনেক কিছু আলাপ করল। যদিও সেই প্রথম আলাপ দীর্ঘ সময়ব্যাপী হল না তবু ধীরে ধীরে তা দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হল। সত্যি কথা বলতে, তানির অতীত ইতিহাস অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। তার বাবা-মা একটি বিধবার ভীষণ ক্ষতি করেছিল এবং সেই মহিলা তাদের সন্তানসহ অভিশপ্ত করেছিল। তানির কাহিনীর এ পযায়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ায় আমি আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, শৈশব থেকে তানি গৃহবন্দি হয়ে পড়ল এই অভিশাপের কারণে। যাই হোক, আমাদের প্রধান নায়ক অপু আপাতত কোন কারণ ছাড়াই খুবই আনন্দের সাথে দিনাতিপাত করছিল। তার দিনগুলো এতটাই ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছিল যে, তার মনের বিস্তৃত জায়গা কেন্দ্র করে তানির অবস্থান উপলব্ধি করার সুযোগই পেল না। তানির প্রেমে অপু পড়েছিল কিনা জানা নেই তবে অপুর মনে হতে লাগল যে, তার সমগ্র নিঃসঙ্গ জীবনেতিহাসের একটি অধ্যায় তানি নয় বরং সে হচ্ছে পুরোটুকুর সারকথা। অপরপক্ষে, তানির আকাঙ্খা ছিল একটু অন্যরকম। সে চাইছিল যেন অপু হয় তার উদ্ধারকর্তা। বাহির জগতের আলো দেখার জন্য তানি কতই না অপেক্ষা করে আছে! আকাশকে ছুঁয়ে এসে ধরণীর ধূলি অঙ্গে মেখে খোলা হাওয়ায় বুক ভরে নেয়ার স্বপ্ন লালন করেছে সে। যখন অপু সেটা বুঝতে পারল তখন সে কিঞ্চিৎ বিষন্নতার সাথেই আত্মাহুতির মহান সুখ অনুভব করতে পারল। প্রকৃতপক্ষে, তানির অভিশাপ দূরীকরনে সত্যিকার অর্থে তাকে ভালবাসে এমন কোন ব্যক্তি আর তার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হবার দরকার ছিল। অপুকে নিজের দুই হাত দ্বারা তার হৃদপিন্ড তানির প্রতি উৎসর্গ করতে হবে। অপু স্বেচ্ছায় তা করতে প্রস্তুত ছিল কারণ সে ভাবল যে, তানির লালিত বাসনা পূরণের পণ সে একদিন করেছিল। সবোর্পরি, তানির খুশীই অপুর সন্তুষ্টি। রীতি পালনের উপযুক্ত সময় যখন এল তখন অপু তার বুক বরাবর ধারাল ছুরি হাতে তুলে নিল। সে এক মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। কাঠের মেঝেতে রক্তলাল পোশাকের অংশ ছড়িয়ে বসে ছিল তানি। তার উজ্জ্বল চোখ মাটিতে নিবদ্ধ ছিল। এই বিভৎস দৃশ্য অবলোকন করা তার পক্ষে ছিল অসম্ভব। অপু জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি আমাকে ভালবাস?
তানি অনড় থাকল এবং কোন জবাব দিল না। সে আবার প্রশ্ন করল। তানি চোখ তুলে তাকাল অপুর সুগভীর চোখের পানে। তানির চোখের পাতায় দুই ফোঁটা অশ্রুকণা ঝিলমিল করছিল। অপু তৃতীয়বারের মত একই কথা জিজ্ঞাসা করল। এবার তানি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে উত্তর দিল, আমি জানি না।
অপুর শেষ ইচ্ছা ছিল তানি শেষবারের মত একটি গান তাকে শোনাবে যেন তা নিদারুণ যন্ত্রণা মুছে দিতে পারে। তানি তা-ই করল। তানি গাইতে শুরু করার অনতি বিলম্বে অপু বুক চিড়ে ফেলল এবং হৃদপিন্ড কেটে বের করে নিয়ে এল। ওটা তানির হাতে তুলে দেয়ার সাথে সাথেই অপু মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল এবং তাতে জোরাল শব্দ সৃষ্টি হল। তক্ষুনি ঘিরে থাকা চার দেয়াল কাঁপতে আরম্ভ করল এবং অসংখ্য চিড় ফুটে উঠল। চিড়গুলো এতটাই বৃদ্ধি পেল যে ধীরে ধীরে দেয়াল ধ্বসে পড়তে লাগল। অপুর মৃতদেহ তানির গন্ডির ধ্বংসাবশেষের নিচে ঢাকা পড়ল। ঠিক সেসময় তানি ঋজু ভঙ্গীতে উঠে দাঁড়াল অপুর সমাধির মধ্যস্থল হতে। এরপর থেকে তানি আশীবার্দপুষ্ট জীবন লাভ করল। সে স্বাধীন জীবনযাপন করেছিল এবং যেসকল নিয়ামত থেকে সে বঞ্চিত ছিল তা উপভোগ করেছিল। সে তার ভালবাসা এবং অপুর ভালবাসার স্মৃতিও অন্যান্য সাধারণ মানুষের মাঝে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আর কোনদিন সে গান করেনি। অবশেষে বলা যায়, তানির মধুর গানের মূল্যস্বরূপ অপু তাকে এমন একখানা উপহার দিয়েছিল যা তার সুরমূর্চ্ছনায় চিরদিনের মত নৈশব্দ এনে দিল।

দূরের সুরের কথামালা


দূরের সুরের কথামালা





যে চিনে সে চিনে নেবে অন্ধরেখাগুলো
আমার কী দায়? পথে পথে মৃত নদী
হয়তো নদীও নয়, একগুচ্ছ চুল
মেঠোখাল হয়ে মিশে আছে এঁকেবেঁকে।

আমি থাকি নদীর ওপারে- ওই ঘরে
এখানে হাওয়ায় মেঘ, অচেনা সংকেত
ক্ষণে ক্ষণে ধরা দেয় মনে। রোদ এসে
ঝড় এসে বলে, কিছু কী ফেলে গেলেন?

আমি আছি এইখানে, এই নদীতীরে
কেনই বা যাব, কিছু তো ফেলে আসিনি!



এ কি আলোড়ন? স্তব্ধতার স্মৃতি নিয়ে
একরাত ঘুমে কাটে, অন্যরাত জেগে
একবার ডাকি তারে, অন্যবার ভাবি
এ কি আলোড়ন, নাকি শিরশিরে হাওয়া?

দূরে থেকো ঝাঁকে ঝাঁকে, কাছে এসো একা
এইখানে আমি একা, মৌনতার দিকে
সঁপিনু পরাণ। তবু বাসনার ফাঁদে
সাধনা সাধনা বলে ডাকি কলহাস্য।

এ কি শিহরণ? শরীরের লোমকূপ
একবার মরে বেঁচে উঠে তিনবার।



কখনো জাগিনি আগে এমন সকালে
পাহাড় ডিঙিয়ে নদী থেকে উঠে এল
স্ফটিক সময়। মনে হয়, ঢেউকেলি
হঠাৎ জোয়ার নিয়ে এসেছে এখানে।

এ কোন সকাল? শয্যা থেকে সরে যায়
ভিন্ন কোনো স্বাদশয্যা, মানুষের গন্ধ
উড়িয়ে-পুড়িয়ে নিয়ে যায় ঢেউগুলো
তবে কী তোমাতে আমি ভাসমান মেঘ?

কিছুটা সময় থাকি বালিরপ্রাসাদে
এ তো বালি নয়, এক সন্ন্যাসজীবন!




যতদূরে বৃষ্টিরেখা ততদূরে তুমি
তারপর চোখের সীমানা ভুলে গিয়ে
রয়েছি তাকিয়ে। ধোঁয়া উঠে পথজুড়ে।
কোথাও কী জ্বলে গেল, নাকি সব ধুলি?

পথের সমস্ত রেখা, ধারাপাত জানি
তবুও বেপথু হাওয়া উড়িয়ে নিয়েছে
খড়কুটো। দিকচিহ্ন। যেন অন্ধরাতে
ছুটে আসে খরতপ্ত হাওয়ার দাপট।

পথ থেকে সরে গিয়ে বিপথেই হাঁটি
হেঁটে যেতে যেতে দেখি, সামনেই তুমি।


বালুতটে থেমে গেছে স্রোতের কাঁপন
স্মৃতিগুলো ফাঁকা। মনে হয়, কেউ যেন
কেড়ে নিল মানুষের তিনভাগ দুঃখ
বাকিটুকু হারাল সূদুরে, শান্তস্রোতে।

এখন তো কিছু নেই, স্মৃতিহীন তটে
হঠাৎ কুকুর আসে, হরিণের পাল
ছুটে যায় বনে। যেন দুপেয়ে কুকুর
হন্য হয়ে খুঁজে হরিণীর হাড়-মাংস।

আমিও নিখোঁজ আজ, বনে বনে ঘুরে
মিশে গেছি এই বন্যকুকুরের দলে।




কেশর উড়িয়ে আসে প্রলয়ের ঘোড়া
তোমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, বলে
এখানে জীবন মানে উদ্যত শরীর
এখানে জীবন মানে কেশর, নখর।

কামেপ্রেমে তার খোঁজ রাখেনি তো কেউ
তবু বলি, তাকে আনো পাহাড় চূড়ায়
গড়িয়ে যাবার আগে গলে যাবে সব
মতিভ্রম, ফের জন্ম নেবে অপরূপ।

কেউ বাঁচে অথবা মৃত্যুর দিকে যায়
তুমি যাবে কোন পথে, কোন আলিঙ্গনে?




শুয়ে আছি মুখোমুখি। রাতের বেঘোরে
কখন যে কেটে গেল ছন্নছাড়া ঢেউ
বুঝি না ঠিকানা। তীরে, ভাসমান মেঘ
যেন লেগে আছে দুটি ঠোঁটের কোণায়।

বিষ ঢালি, শিশ্নে লেগে থাকা রস ঢালি
আকাশ ঘনিয়ে ঝড় এসে বলে যায়
আদিঅন্তহীন মহামিলনের কথা
আমরা কোথায় যাব, আদিরূপযোনী?

কোমলকঠিন হয়ে ঘনশ্বাসমূল
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়- হায়, রতিসুখসার!




সবাই ছেড়েছে, জানি তুমি তো যাবেই
জীবন্মৃত। একে একে বৃষ্টির ভিতর
ছড়িয়ে পড়েছে বেলপাতা, নীলশাড়ি
ভাঁজে ভাঁজে যেন এক নৌকার দুলুনি।

আমি দুলি, সে-ও দোলে প্রায় প্রতিক্ষণে
মাথাটা ঝাঁকিয়ে বলে, কোথায় যাবেন?
পেছনে বিস্ফার ঢেউ, কাঁপে মত্ততায়
যেন সে সন্ধ্যার বাঁকে দেখা রাজহাঁস।

আমি হাসি, সে-ও হাসে প্রায় প্রতিক্ষণে
শেষে উড়ে যায় বৃত্ত থেকে বৃত্তান্তরে।




সব ছিন্ন করে দুটি কিচিরমিচির
উড়ে যাচ্ছে, উড়ে যাচ্ছে যুগযুগান্তর
যেন সুর, যেন ঘোর। উড়ে যাচ্ছে তারা
রক্তবীজ মুখে পুরে দূর অজানায়।

ডানাদের জন্ম জানি, মৃত্যু জানি বলে
জেগে আছে অতিকায় হাতি, দুটি ঘোড়া
পিঠে দাগ, দাগ থেকে দারুণ দুনিয়া
ঘুরছে, উড়ছে। যেন এক মোহ, জাদুচক্র।

কোথায় তোমার ছদ্মবেশ, জাদুবুড়ো
বৃক্ষছায়াতলে থামো, জিরোও এখন।


১০
কাঁদে না, কাঁপে না সুর দূর হাওয়ায়
এ তো সুর নয়, অন্ধ সানাইপ্রহার
কোথা থেকে এল? উদগ্রীব হয়ে শুনি-
সুর, সে তো তোমার মতোন একা নয়।

কায়া নিয়ে মায়াহীন হয়ে ছুটে চলি
মোহনায়। মেঘনা কী নেবে না আমাকে?
দরিয়ার বুক থেকে উঠে হুহু সুর
কাঁপে কেওড়াবন, এই বুঝি এল ঝড়?

কোনো সুর কোনো বাঁশি কাঁদে না এখন
কেননা তোমার মতো কেউ একা নয়।

শাকিরাও কারও কারও মন খারাপ করে দেয়


শাকিরাও কারও কারও মন খারাপ করে দেয়

বুঝলেন ভাইজান এই হইলো আমাগো ট্রেন চলে আবার চলে বইলাও মনে হয় না, এই ট্রেনের সাথে আপনি আমাগো পরাণতলা গ্রামের হুরমুজ আলীর বউয়ের সাথে তুলনা করবার পারেন। হুরমুজ আলীর বউয়ের বয়েস মনে করেন এহন চল্লিশ ছাড়াইয়া গেছে। ওই বউটা মাইয়া মানুষ আবার মাইয়া মানুষও না। হুরমুজ আলী যে কেমনে ওই বউ নিয়া আছে বুঝি না। কেমনে আমরা এই ট্রেন নিয়া চলি সেইটাও বুঝি না।
লোকটা আরও কিছু বলতে চাচ্ছিল। আমি তার দিকে তাকাই প্রায় কাতর চোখে। লোকটা হয়তো বুঝতে পারে যে, তার কথা আমার আর ভালো লাগতেছে না। ভালো লাগার কথাও না। আমি সেই সকালে না খেয়ে ট্রেনে উঠছি। এখন দুপুর গড়ায়া যাইতাছে অথচ গন্তব্যে মানে সিলেট স্টেশনে কখন পৌঁছাইবো তার ঠিক ঠিকানা নেই। আমি সিলেট যাইতেছি অফিসের কাজে। অফিসের কাজ বলতে, আমার বসের মামাতো বোনের বিয়ের কিছু দাওয়াতপত্র পৌঁছাইয়া দিতে। কথা ছিলো দুপুরের মধ্যে সিলেট পৌঁছাইয়ে তিন চারটা ঠিকানায় দাওয়াতপত্র দিয়ে আবার ফিরতি ট্রেন ধরবো। কিন্তু ট্রেনের অবস্থা যে হুরমুজ আলীর বউয়ের মতো তা তো আর আমার অফিসের বস জানেন না। জানবেনই বা কীভাবে, তিনি তো আর ট্রেনে চলেন না, আসমানে পাখা মেলে তিনি ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ ঢাকা-সিলেট ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন। আমার কপাল খারাপ, আমি বস হইনি। যা হয়েছি তাতে আর ফুড়ুৎ হওয়া হবে না কোনোদিন।
লোকটা আবার মুখ খোলেন- ভাইজান আমার কথায় বিরক্ত হইবেন না। আমি আছি বইলাই কিন্তু আপনে দুইচাইরখান কথা শুনতাছেন, নইলে বজ্রপাতে মরা মাইনষের মতো বইসা থাকতেন। শুনেন আমি সিলেটে যাই বচ্ছরে দুইবার। দুই ঈদে। কিন্তু এইবার আর তা পারলাম না। আমার শ্যালকের স্ত্রীর বাচ্চা হইছে তাকে রক্ত দিতে হইবো। আরে আমি ছাড়া কি আর সিলেটের কারও এই রক্ত নাই নাকি। নাকি ওই ছেমরির আমার রক্তই লাগবো, তাইলে আগে কইতো অন্য কিছুও দিতাম। রক্ত দেওয়ার কথা চিন্তা কইরাই আমার মেজাজ খারাপ হইতাছে।
আমি আবারও লোকটার দিকে তাকিয়ে আমার করুণ অবস্থা প্রকাশ করি। তাতে কাজ হয় না। তিনি আবার শুরু করেন। আমি আর মুখ না খুলে পারি না- ব্রাদার আপনি কথা বলে খুব মজা পান, আমারও শুনতে কোন কালেও আপত্তি ছিলো না। কিন্তু আমি খুব টেনশনে আছি। আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে তিনি টেনশন নিয়ে তার বয়ান শুরু করেন। ভাইজান, টেনশন কিন্তু খুব খারাপ, খুব বেশি সময় ধইরা টেনশন করবেন না। এই ধরেন আমি যখন বিয়া করি তখন খুব টেনশনে ছিলাম, কারণ ওইটাই ছিলো আমার প্রথম বিয়া। বাসরঘরে গিয়ে তো আমার চোখে আন্ধার দেখার অবস্থা। বউ তো চোখ পাকাইয়া আমার দিকে তাকাইয়া আছে। আমি ভয়ে ভয়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম।
এরপর কিছু অশ্রাব্য বিষয় শ্রবণ করার আশঙ্কায় আমার কান গরম হয়ে উঠল। আর তাই আর চোখের ভাষা দিয়ে নয়, তাকে আমি নিবৃত্ত করার উদ্যোগ নিলাম মুখের ভাষায়। ভাইজান আপনার বাসররাতের বিবরণ আমার এই মূহূর্তে শুনতে ইচ্ছে করছে না।
কী বলছেন আপনি- বলেই আবার শুরু করলো লোকটা। আর আমার ভাবতে হলো লোকটা কি মানুষ না খাটাশ। জোর করেই গল্প শোনাতে চায়, তাও আবার বাসর রাতের ঘটনা। তিনি শুরু করলে আমি মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি। তবু কানে বাজতে থাকে- বউতো মনে করেন খাটের মধ্যিখানে বইসা আছে, আমি কী করবো বুঝতে পারতেছি না। এই সময় আমার নতুন বউ করলো কী জানেন, খাট থিকা নাইমা আসলো। ভাবলাম আমারে সালাম করবো। কিন্তু শালি করলো কী জানেন, এক ঝটকায় আমারে জড়াইয়া ধইরা সে কি কারবার, টান দিয়া বিছানায় ফালাইয়া দিলো। আমি তো তলে পইড়া কাহিল, পরে অবশ্য উপরে উঠছিলাম। বুঝলেন ভাই, টেনশন করবেন না।
জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে তার দিকে তাক করে ভাবলাম, যাক অল্পে বাঁচা গেল।
এই সময় আসলো এক ম্যাগাজিন বিক্রেতা। ম্যাগাজিন বলতে আমাদের দেশের কিছু নাই, সবই ভারতের আর আমেরিকার। যে দেশের হোক আমার আগ্রহ নাই। দেখা গেলো গল্পের ভাণ্ডার লোকটা ঠিকই শাকিরার ছবিওয়ালা একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়া পাতা উল্টাইতে শুরু করলো। এবার আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচি। কারণ পাঠে মন দিলে লোকটার গল্প থামতে পারে।
কিন্তু আমার সেই আশায় গুঁড়ে বালি। তিনি আমাকে ওই ম্যাগাজিনের কিছু চুম্বক অংশ পড়ে শোনাতে উদ্যোগী হলেন। তার আগে দিলেন ছোটোখাটো ভূমিকা- এই যে শাকিরা, এইটা কিন্তু একটা মাল। শালি যেমন নাচে তেমনি নাচায়। আমার ওর গান দেখতে বসলে লুঙ্গি উঁচা হয়া যায়। আর আপনার ভাবি শুরু করে গালি। ওই যে কি একটা গান আছে ওর যেইটার মইধ্যে ট্রেন লাইন ধইরা নাচে আবার সাগরে নামে জামা কাপড় খুইলা। আপনি মনে হয় দেখেন নাই। ওয়াকা ওয়াকা নিশ্চয় দেখছেন। ওই গানটা শালীন, তয় পাছাটা কিন্তু ও নাচায় ভালো। আর ওর আছেই পাছা, যা না নাচাইলে ওর গান কেউ শুনব বইলা মনে হয় না।
আমি দেখলাম, লোকটা কথাগুলো বলতে বলতেই ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে বিশেষ ভঙ্গীতে দাঁড়ানো শাকিরার শরীরের বিশেষ কিছু অংশে হাত বুলাচ্ছে লোকটা। সেই সাথে লোকটা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটও চাটছে। একটা মানুষ যে চলতি পথেও একা একাই উত্তেজিত হতে পারে এমনটা আগে আমার দেখা ছিলো না। এবার আমার চোখও শাকিরার শরীরে ঘুরতে থাকে। আমিও যেন কেমন কেমন করতে থাকি। ছোটবেলায় আমার এক দাদা আমাকে প্রায়ই বলতেন, মানুষের বদঅভ্যাস বাতাসে ভেসে ভেসেই অন্যের মধ্যে প্রবেশ করে। এইবার তাইলে কাম সারছে। আমিও কি তাইলে ওই লোকটার মতো উত্তেজিত হতে চললাম নাকি।
ট্রেনে দীর্ঘপথ ভ্রমণের নাকি মজা আছে। আজ ট্রেনে ওঠার আগে একবার ভেবেছিলাম, ওই মজাটা উপভোগ করার চেষ্টা করবো। কিন্তু আমার ওই মজা বুঝি এই লোকটা লুটে নিয়েছে আর তার ভাগ কিছুটা হলেও আমাকে দিয়েছে। আগেই বলেছি, আমি যাচ্ছি সিলেটে আমার বসের মামাতো বোনের বিয়ের দাওয়াতপত্র নিয়ে। শাকিরার ওই ছবি দেখার পর থেকে মনে হচ্ছে, আমি নিজেই বাসর রাতের মতো বউয়ের অপেক্ষায় আছি, এখনই কেউ একজন আমাকে জাপটে ধরে ওলট-পালট করে আমাকে ঠেলে ওপরে তুলে দেবে।
আমি বসের অনুমতি নিয়েই ট্রেনের বিশেষ শ্রেণীর কামড়ার একটা টিকেট করেছি। ট্রেন ছাড়ার আধাঘণ্টা আগে কামরায় উঠে আমি পছন্দের সিট নিয়ে বসেছি। যাতে বাইরের দুনিয়া দেখা যায়। ঢাকা শহরের ইট-সিমেন্ট দেখতে দেখতে তো চোখের টেইশ মারা সারা। তাই চাইছিলাম, প্রকৃতি দেখে একটু চোখ জুড়াইতে। কিন্তু ওই লোকটার পাল্লায় পড়ে তো কিছু জুড়াতে পারলাম আরও আগুন লাগালাম। ওই লোকটাকে আমি অবশ্য তেমন দোষ দেই না। কারণ আমার ওই আগুন জ্বলতেই থাকে সব সময়। বিয়ে একটা করছি বছরখানেক আগে। কিন্তু বউ যে কী মজার জিনিস তা খুব ভালভাবে চাইখা দেখার সুযোগ পাই নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে সবাই চাকরি খোঁজে আর আমি খুঁজলাম বউ। আমি ঠিক না, আমার পরিবার বউ খুঁজে আমার ঘাড়ে তুইলা দিছে। বউ নাম মাত্রই। কাজে-কামে তেমন কিছু না।
আমার মায়ের দুঃসম্পর্কের খালাত বোনের মেয়ে সাবিহা, সে এখন আমার বউ। সেই মেয়ে ঢাকায় এসে আমার সঙ্গে থাকতে পারবে না। কারণ এতে তার পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবো, আর আমিও তার কাছে গিয়া থাকতে পারবো না, আমার চাকরি আছে। আমাদের দু'জনের বয়সের ব্যবধানও খুব বেশি। বালিকা এইবার দশম শ্রেণীর ছাত্রী। বুঝতেই পারছেন বউ চেখে দেখার বাধাটা আসলে কোথায়। বিয়ের কথা-বার্তা হবার পর আমি তা ঠেকাতে বাবা মাকে বললাম, ওই মেয়েকে বিয়ে করলে আমার এবং আপনাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হতে পারে। কে কার মামলার হুমকিতে ভয় পায়। আমার মায়ের কথা হলো, এখন বিয়ে হলেও বউতো ঘরে তুলবো না, তাইলে আর ভয় কী।
আমি আসলে চাচ্ছিলাম বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে উপযুক্ত কাউকেই করবো, যাতে বিয়ের রাতেই সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে পারি। কিন্তু না, তা আর হইলো কই। কবে বউ ঘরে তুলবো তার ঠিক নাই, কারণ এখনও তার মেয়েলী লক্ষণই প্রকাশ পায়নি। মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে। ওইটুকু বউয়ের কাছে আমিই বা যাই কোন আক্কেলে। কিন্তু এইক্ষণে শাকিরাকে দেখে আমার যে অবস্থা তাতে আর বোধ হয় খুব বেশি অপেক্ষা করা যাবে না। সাবিহা মেয়ে হিসেবে ভাল। কেমন ভালো তার একটা নমুনা বলি। সাবিহার সাখে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। আমাদের মেসে রাত নামে সন্ধ্যার পরই। তাই বউয়ের সাথে ফোনে লম্বা কথা বলায় অসুবিধা। আমার আবার গলা নিচু করে কথা বলার অভ্যাস নাই। তারপরও শেষ রাইতে যখন সবার ঘুম গভীর আলকাতরা তখন আকারে ইঙ্গিতে সাবিহাকে কাছে পাবার আকুতি বোঝানের চেষ্টা করছি। সাবিহা বলছে, আপনে খারাপ কথা বললে আম্মারে বইলা দিবো। আমি বলছি, ঠিক আছে আম্মারে বইলো যে আমি তোমারে নিয়ে শুইতে চাইছি। ওমা মেয়ে করছে কি আমার মাকে সত্যি বইলা দিছে। আর মা আমারে ফোন কইরা বলছে, শিহাব এইটা কিন্তু ঠিক না, তুমি সাবিহাকে ডিস্টার্ব করতে পারো না। ওর পরীক্ষাটা শেষ হোক, তারপর অনুষ্ঠান করে ওকে ঘরে তুলবো।
ভাইজান ও ভাইজান ঘুমাইছেন না কি। আবার ওই লোকটার কথা আমাকে সাবিহার চিন্তা থেকে ফারাক করে দেয়। আমি ভাবলাম তাকে আর খারাপ ভেবে লাভ কী। তার চে যতক্ষণ এক সাথে আছি আলাপ-সালাপে সময় কাটাইলেই ভাল। কিন্তু আলাপ-সালাপের নাম নাম যদি খালি শোনা হয়, তাইলে এইখানে আমি ফার্স্টক্লাস শ্রোতা।
তিনি আবার শুরু করলেন সেই শাকিরা উপাখ্যান। বুঝলেন, শাকিরা হইল এমন একটা জিনিস যা পুরা দুনিয়ারে পাছা দিয়া ঝাঁকাইয়া উথাল-পাথাল কইরা রাখছে। ইস ওরে যদি পাইতাম তাইলে বউরে কইতাম শাকিরার পা টিপ্পা দেও, সুয়াব হইবো।
আমি তাকে প্রশ্ন করে উস্কে দিতে চেষ্টা করি। ভাইজান ভাবি কি হুরমুজের বউয়ের মতো হইয়া গেছে না কি। কিন্তু আমার এই প্রশ্ন তাকে উস্কে তো দেয়ই না উল্টো খেপিয়ে তোলে। তিনি বলেন, তামশা করবেন না। যার তার বউ নিয়া তামশা করা ঠিক না। আমার বউ কি হুরমুজের বউ হইল। ছি আপনেরে ভদ্রলোক ভাবছিলাম। লোকটার হঠাৎ এই রুদ্রমূর্তি দেখতে হবে বুঝিনি। তাই স্যরি বলার ভঙ্গি করে তাকাইলাম। লোকটার দেখি দৃষ্টি বোঝার জ্ঞান আছে। আমাকে মাফ করে দিয়ে বলতে শুরু করলেন, শুনেন আমার বউ হইল বাংলার ঐশ্বরিয়া। বুঝছেন। আমার থিকা ১৩বছরের ছোট। এহনও আণ্ডাবাচ্চার মা হয় নাই। বউটারে আমি খুব ভালবাসি, হ্যায়ও বাসেটাসে মনে হয়।
তাইলে তারে দিয়া শাকিরার পা টিপাইবেন বললেন, বুঝলাম না বিষয়টা।
লোকটার উত্তর- কিন্তু শাকিরা হইল শাকিরা। শাকিরার জায়গায় শাকিরা আর বউয়ের জায়গায় বউ। শাকিরা হইল মাল, আর বউ তো বউই। বলতে বলতে লোকটাকে চোখ মুছতে দেখলাম। কারণও তিনি ব্যাখ্যা করা শুরু করলেন। বউটারে নিয়া আমার সুখের কোন সীমা পরিসীমা ছিলো না। কিন্তু মাইয়াটা হঠাৎ কইরা অসুস্থ হইয়া পড়ছে। যার জন্য সবাই বিয়া করে আমি ওই কাম করতে পারতেছি না কয়েক মাস হইলো। ডাক্তার দেখাইছি, ভাল হইব বইলা মনে হয় না। সারাজীবন আমার এই শাকিরারে দেইখা কাটাইতে হয় কী না কে জানে।
লোকটাকে কথা শুনে যতটা খারাপ মনে হয়েছিলো আসলে ততো খারাপ নয়। লোকটার মন খুব নরম। এখন শাকিরার শরীর দিয়ে প্রচ্ছদ করা ম্যাগাজিনে মুখ ঢেকে কাঁদছে। এই সময় ম্যাগাজিন বিক্রেতা আসে টাকা নিতে। আমিই দাম পরিশোধ করি। ট্রেন শহরের মধ্যে প্রবেশ করেছে অনেকক্ষণ আগে টের পাইনি। আর একটু পরেই নামতে হবে। লোকটার কান্না থামিয়ে দিয়ে বলি, ভাইজান মন খারাপ কইরা আর কী করবেন। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কই ম্যাগাজিনের দাম নিতে আইছিলো নি। এমনে ব্যবসা করলে তো ধরা খাইবো। আমি বললাম, শাকিরার ছবিওয়ালা ম্যাগাজিনটা আপনারে আমি গিফট করলাম। ততক্ষণে ট্রেন প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়েছে। লোকটা নামার আগে ম্যাগাজিনটা আমার হাতে গুঁজে দিয়ে বললো, আপনার বউ দূরে থাকে আর কবে কাছে পাইবেন ঠিক নাই, তাই ম্যাগাজিনটা আপনারই দরকার। আর আমার বউ এই ন্যাংটা মাইয়ার ছবি দেখলে মন খারাপ করতে পারে। কিন্তু আমি বুঝে উঠতে পারলাম না আমার বউ যে আমার কাছে থাকে না, তা এই লোক জানল কীভাবে। তাইলে কি আমার চেহারায় সব সময় বউ হারা বউ হারা ভাব লেগে থাকে।
ট্রেন থেকে নামার আগে লোকটার বুকে বুক মিলিয়ে নিলাম। আর মনে মনে বললাম; লোকটা বুঝি সব কষ্ট ভুলতেই বেশি কথা বলে।

মনের মাঝে তুমি




মনের মাঝে তুমি
কখনো চেষ্টা করেছ কি আমার মনটাকে খুলে পড়তে
কখনো আমার নিউরন কোষে উঁকি দিয়ে দেখেছ
সেখানে কার নাম লেখা আছে?
কখনো আমার বুকে কান পেতে দেখেছে
হৃদয়ের ধ্বক ধ্বক শব্দ কার নাম করে সেথায়?
কখনো আমার হাত কেটে গেলে সেখান থকে রক্ত ঝরতে দেখেছ
গাড় টকটকে লাল রক্তকণিকায় ফোঁটা ফোঁটা করে চুইয়ে পড়ে
যেন তোমার দেয়া সকল কষ্টগুলি রক্ত হয়ে ঝরে পড়ছে
নীল বেদনা দেখেছ কখনো, তোমায় হারানোর কষ্টে হয়েছে গাঢ় নীল
আসলে তুমি কিছুই দেখনি
শুধু অবুঝ ভালোবাসায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছ আমাকে
মরনের ওপাড়ে, যেখান থেকে আর
ফিরে আসা যায় না কোন কালে।


আমি দেখেছি তোমার ভালোবাসা আমার মনের গভীরে
খুলে দেখেছি আমার প্রতিটি নিওরোন কোষ বারে বারে
হৃদপিণ্ড খন্ড বিখন্ড করে দেখেছি সেথা
লোহিত কণিকার প্রতিটি ফোঁটা চিড়ে দেখেছি
সবখানেই তোমার নাম লেখা পেয়েছি
তুমি আছ, তুমি ছিলে; তুমিই থাকবে চিরকাল
মনের মাঝে, আমার মনের রূপবতী চাঁদ হয়ে।

হৃদয় আর আগুন

হৃদয় আর আগুন
রাতকে বড্ড বলতে ইচ্ছে হয়
তুই আর আসিসনে জ্যোৎস্না নিয়ে
চান্নিপসরে আমার বড় ভয় হয়
সারাটি রাত একলা কাটাই বলে।


মেঘকে ডেকে বলি তুই আর বৃষ্টি ঝরাসনে
আমার বড্ড মন খারাপ লাগে
ঝর্ণাকে বলি তুই আর কাঁদিসনে
আমার চোখ ভরে ওঠে নোনা জলে
সেই কবে থেকে একলা কাটাই বলে।


অথচ একসময় কত ছুটে বেড়িয়েছি ঝর্ণার জলে
বৃষ্টি নামার সাথে সাথে ধেই ধেই নেচে বেড়িয়েছি
সারারাত কাটিয়ে দিয়েছি চাঁদনি রাতে সাড়া গায়ে জ্যোৎস্না মেখে
তুমি পাশে ছিলে বলে, একসাথে মিলেমিশে, হাতে হাত রেখে রেখে।


এখন না চাইতেই চাঁদ অপার হাতে বিলিয়ে যায় চাঁদনি
মেঘ ঝরিয়ে চলে বৃষ্টি, সূর্য দিয়ে যায় আলো
প্রকৃতির আমোঘ নিয়মের কাছে আমরা কত অসহায়
সে তার মত কার্পণ্যহীন ভাবে প্রাকৃতিক শোভা বিলিয়ে যায়।


কেহ মেঘ, বৃষ্টি, আলো, চাঁদ, জ্যোৎস্না সবই চায়
কেও প্রকৃতির দিকে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকায়
যেমন আমি -
এ অভিমান কার প্রতি?
প্রকৃতি না তোমার প্রতি?
হয়তো তোমারই প্রতি
আমায় একলা ফেলে তোমার দূরে চলে গিয়েছ বলে
আমাকে দহনের সাগরে ভাসিয়ে।


আজ যেন আগুনকে বড্ড কাছের মনে হয়
কেমন দাউ দাউ করে জ্বলছে এক মনে
চারিদিক পুড়িয়ে দিয়ে;
আজ আমার শুন্য হৃদয়ের দিকে তাকাই
আর দহন দেখে যাই, আগুন আর হৃদয়ের।


দুটোর মাঝে পার্থক্য খুঁজে বেড়াই;
দুটোই পুড়ছে একসাথে
বড্ড ইচ্ছে করে এক হয়ে যেতে
আগুনের সাথে মিলেমিশে
ধিকি ধিকি প্রতিদিন দহনের জ্বালায় না জ্বলে
একবারে জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যেতে।


dohon agun

মেঘমালার অশ্রু



মেঘমালার অশ্রু


কোন এক সারা দিন ভরে আকাশটা
ছেয়ে থাকে কালো মেঘে
ক্ষণে ক্ষণে দু এক পশলা বৃষ্টি,

ক্ষণে ক্ষণে হিম হাওয়া বয়ে যায়
সারাদিন গুমোট আবহাওয়ার মাঝেও

হয়তো রাতভর বৃষ্টি ঝরে পরে
ঠিক তখনই তোমাকে মনে পড়ে।

কোথা থেকে জানি ভালোবাসার
এক হাওয়ার ঠাণ্ডা ঝাপটা পাঠিয়ে দাও
বুকের ভেতরের আগুনটাকে আরও উসকে দিতে
তবু ধরা দাও না আমার হয়ে
কি সুখ পাও তুমি
বৃষ্টির কান্নার মত হৃদয়ের অশ্রুগুলো ঝরিয়ে।