[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মা…………

মা…………




 
আমার ছোট্ট জীবনের বিশালতা পেয়েছি তোমার হাত ধরে,
তোমার গভীর বিশ্বাসে এই পৃথিবীর আলোয় বড় হয়েছি।

আমি যে দিন প্রথম দাঁড়াতে শিখলাম, তুমি খুশিতে আতœহারা হয়েছিলে,
তোমার সেই খুশিতে আমাকে আতœবিশ্বাসী করে তুলেছিল।

আমার স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনটি শুরু হয়েছিল তোমার নির্মল হাসিতে,
সেই আনন্দের দিনটি আজও মনে পড়ে।

আমার অসুস্থতার সময় তুমি ছিলে আমার পাশে,
তোমার অকৃত্রিম সেবায় আমি সুস্থ হয়ে উঠি।

মা…………
তুমি আমার জীবনে আনন্দ এনে দিয়েছ
তোমার সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে, আমি গর্বের সাথে পথ চলেছি অসীম আনন্দ নিয়ে।

তোমার আদেশ, উপদেশ আর আশির্বাদে শুরু হয় আমার স্বাবলম্বী হওয়ার দিন,
আজ আমি আতœনির্ভরশীল।

মা………….
কত কষ্ট কত দুঃখ সহ্য করে আমাকে মানুষের মত মানুষ করেছ,
আমার মুখে একটু হাসি ফুটাতে তুমি তোমার সমস্ত খুশি বিলিয়ে দিয়েছ,
পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল যা কিছু তা এনে দিয়েছ,শুধু আমার জন্য।

মা…………
এখন তোমার জন্য দরকার একটা অবলম্বন, একটা ভাল কিছু………….
ভেবো না মা………

আমি আছি তোমার পাশে, তোমার অবলম্বন হয়ে, সবচেয়ে ভাল কিছু নিয়ে।

…………………………………….তোমার আদরের সন্তান

নরকের নর্তকী

 

এ.ক

‘আপাগো আপনে আমারে বাচান ।’ বৃদ্ধা মহিলাটি করুন কণ্ঠে নার্সকে বলে উঠল ।
নার্স কথাটির কোন জবাব দেয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি । তিনি একই ভাবে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন । ড্রয়ার থেকে টুকটাক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি গুছিয়ে নিচ্ছেন একটি ছোট ব্যাগে । এখন তাকে রোগী দেখতে হবে । ডাক্তার আসবেন আরও দুই তিন ঘণ্টা পর ।

মফস্বল এলাকার ছোট একটি মেটারনিটি ক্লিনিক । একজন ডাক্তার ও তিনজন নার্স মিলে কোনরকমে ক্লিনিকের কাজ চলে । নামে শুধু ডাক্তার । তিনি কোন কাজ করেন না । প্রতিদিন একবার ক্লিনিকে এসে শুধু হাজিরা দিয়ে চলে যান । তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন ।
ডাক্তারদের কাজ নার্সদেরই করতে হয় । নার্সদের কাজ করে আয়ারা । নার্সদের মধ্যে রোকেয়া সবচেয়ে অভিজ্ঞ । বাকিরা নতুন । তাঁদের উপর লোকজনের ভরসা নেই ।

এলাকার অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলো সাধারণত প্রসূতি মায়েদের প্রসববেদনা শুরুর আগেই শহরের বড় বড় হসপিটালগুলোতে নিয়ে যান । সংখ্যায় এদের পরিমান হাতেগোনা । মোটামুটি এই এলাকার সিংহভাগ পরিবারই এই অনুন্নত ক্লিনিকটির উপর নির্ভরশীল । প্রসূতিদের সঠিক পরামর্শ, নরমাল ডেলিভারিসহ সাধারণ কিছু রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় এখানে । যদি রোগীর অবস্থা একান্ত এমন খারাপ হয়ে যায় যে রোগীকে আর সিজার না করলেই নয় তখন রোগীরকে নিজ খরচে শহরে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না । ক্লিনিক থেকে ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয় ।
এই সামর্থ সবার নেই । যাদের নেই তাঁদের ভরসা উপরওয়ালা । উপরওয়ালা যে সবসময়ই এদের প্রতি সদয় হবেন এমন ভাবারও কোন কারন নেই । ক্লিনিক থেকে দুই একদিন পরপরই আত্মীয়স্বজনের আহাজারির শব্দে আশেপাশে আকাশ বাতাস মাটি ভারি হয়ে উঠে ।
রোকেয়া ক্লিনিকের অফিস রুম থেকে বের হতেই মহিলাটি এসে তাঁর পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল । রোকেয়ার পা দুটি জড়িয়ে ধরল ।

মহিলাটি আবার একই কথা উচ্চারণ করলেন, ‘আপাগো আপনে আমারে বাঁচান ।’
রোকেয়া মহিলার আচরণে বিচলিত হয়ে গেল । এতগুলো মানুষের সামনে তাঁর মায়ের বয়সী একজন মহিলা তাঁর পা দুটো আঁকড়ে ধরে বসে আছে । কি বিশ্রী কাণ্ড!
দুই হাত দিয়ে রোকেয়া যত মহিলার হাত দুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করে ততই মহিলাটি আরও জোরেশোরে তাঁর পা দুটো জড়িয়ে ধরে । রোকেয়ার আশেপাশে এই দৃশ্য দেখার জন্য একটি ছোটখাট জটলা ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে । সবার চোখে বিশ্বয়, প্রচণ্ড কৌতূহল, নাটকের পরবর্তী দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা । জানার আগ্রহ ঘটনার উৎস কোথায় । সুতা টেনে ঘটনার নাড়িনক্ষত্র উদ্ধারের চেষ্টা ।
রোকেয়ার পা দুটো জড়িয়ে রাখা মহিলার নাম রানুবালা । রানুবালার বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ । বয়সের সঠিক হিসাব রানুবালা নিজেও জানে না । তার পিঠের কুজ, শরীরের কুঁচকে যাওয়া চামড়া, গালের বলিরেখা ও মাথার ধবধবে সাদা চুলগুলো রানুবালার বয়স সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা দেয় যে তার বয়স কমবেশি পঞ্চাশ । অভাবের প্রভাব রানুবালার প্রকৃত বয়সকে স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছে । তার বয়সের সাক্ষী কিছু প্রলয়ঙ্করী বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস, যার তাণ্ডবে পুরো দেশ কেঁপে উঠেছিল হাজার প্রাণের বিনিময়ে ।

রানুবালার পরিচিতি সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চেয়ে কোন অংশে কম নয় । আশেপাশের দুই তিন গ্রাম পর্যন্ত তাকে সবাই একডাকে চেনে । রোদ, বৃষ্টি, ঝড় বন্যা যাই হোক না কেন রানুবালা কাউকে পরোয়া করে না ।

শীতের সকালে যখন গৃহিণীরা মাত্র ঘুম থেকে উঠে ঘরদোর পরিষ্কার করে একটি নতুন দিনের ঘরকন্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অথবা এঁটো থালাবাসন ধোয়ার জন্য পুকুরের দিকে পা বাড়ান, তখন দেখা হয় রানুবালা সাথে, তীব্র শীতের প্রকোপে রানুবালা শিরশির করে কাঁপছে ।
চৈত্র মাসে কাঠফাটা রোদে দেখা যায় রানুবালা হাতে একটি লাঠি ভর দিয়ে ঠক ঠক আওয়াজ তুলে হাঁটছে । বর্ষায় পথে হাঁটু পরিমান কাঁদা ডিঙিয়ে রানুবালা তার বিশ্বস্ত লাঠিতে ভর দিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে । রানুবালার পথের সঙ্গী তাঁর প্রগৈতিহাসিক যুগের একটি বাঁশের লাঠি- ক্ষয়ে ক্ষয়ে যার গায়ে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে, তাঁর বহুযত্নে রাখা একটি কাপড়ের পুটলি যার শরীরে ছিরে যাওয়া স্থানগুলোতে গিট দিতে দিতে অনেকগুলো টিলা পড়ে গেছে ।

মেয়ে ও মায়ের সংসার রানুবালার । রানুবালার স্বামী শশীভূষণ গত হয়েছে তার মেয়ে চন্দ্রবালার জন্মের একবছর পর । শশীভূষণ শহরে কাজ করত । ওর কাজ ছিল রাস্তার আশেপাশে বিদ্যুৎ খুঁটিগুলো গাছপালা থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা, গাছের বেড়ে যাওয়া কাণ্ড ছাটাই করে দেয়া । একদিন গাছ ছাটাই করতে গিয়ে শশীভূষণ বিদ্যুতের সক খেয়ে বসল । চট্টগ্রাম মেডিকেলে বেশ কিছু দিন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে অবশেষে শশী মারা যায় । শশীর বাড়িতে কেউ জানত না এই খবর । হঠাৎ একদিন শশী ঘরে ফিরে লাশ হয়ে ।

রানুবালার বড় ছেলে হাসু তের বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় । আর ফিরে আসেনি । সেই থেকে মা ও মেয়ের সংসার । শশীভূষণ মৃত্যুর সময় বসত ভিটাটি রেখে গিয়েছিল । রানুবালা ধার দেনার চাপে পড়ে এই ভিটেজমিটুকুও বিক্রি করে দেয় । এখন রানুবালা বাস্তুহারা । কারো দয়ায় রানুবালা তাঁর জমিতে কিছুদিন ঘর পাতে, দয়া ফুরিয়ে গেলে সেখান থেকে গলাধাক্কা ।

রোকেয়া হঠাৎ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল, ‘এখন আসছ ক্যান হ্যাঁ? খোঁজখবর রাখতে পারলা না ।’
রানুবালা বিলাপের সুরে বলল, ‘আমি খোঁজখবর রাখমু ক্যামনেগো আপা, আমি খোঁজ রাখমু ক্যামনে । আমি হারাদিন বাইরে বাইরে থাকি ।’
রোকেয়া কোনমতে রানুবালার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসে রোগীদের কাছে ।
রানুবালা সেখানে বসেই বিলাপ শুরু করল, ‘আমারে শেষ কইরা দিলরে, আমারে শেষ কইরা দিল । কে কল্ল আমার এই সব্বনাশ । ও ভগবান তুমি অগো বিচার কর ।’
এবার দর্শক শ্রোতারা এগিয়ে আসে রানুবালার দিকে । তাকে একটার পর একটা প্রশ্নের তীর ছুড়তে থাকে ।
কী অইচে?
কান্দ ক্যান বুড়ি?
আরে বুড়ি ঘটনা কী কইবা তো?

রানুবালা কারো প্রশ্নের জবাব দেয় না । সে একইভাবে বিলাপ তোলে, ‘আমারে শেষ কইরা দিল, আমার সব্বনাস অইল ।’
রোকেয়া কাজ শেষ করে অফিস রুমে ঢোকার মুহূর্তে আবার দেখা হয় রানুবালার সাথে । দ্বিতীয়বার রানুবালাকে দেখে রোকেয়ার চোখেমুখে চরম বিরক্তি ফুটে উঠল । মহিলা তো তাকে জ্বালিয়ে মারবে!
‘তুমি এখনো যাও নাই!’
রানুবালা কিছু বলল না । অপরাধীর মত তাকিয়ে থাকল রোকেয়ার দিকে । নিস্পলক দৃষ্টি, চোখেমুখে করুণার প্রত্যাশা ।
রোকেয়া তার অফিস রুমে ঢুকল । রানুবালা রোকেয়ার পিছুপিছু এসে রোকেয়ার সামনে জড়সড় হয়ে দাঁড়াল ।
‘তোমার মেয়ে কই?’
‘ঘরে বাইন্যা রাইখ্যা আইছি ।’
‘কেউ জানে এই কথা?’
‘কেউরে জানতাম দেই নাই, আপা আপনে আমারে রক্কা করেন । মাইন্সে জানলে আমারে গ্রাম ছাড়া করব । কাসেম মাতাব্বর আমারে উডায়া দিব হের জমিরতেন ।’ রানুবালা আবার কেঁদে উঠল ।
রানুবালার মেয়ে চন্দ্রবালার বয়স ত্রিশের কাছাকাছি । চন্দ্রবালা জন্ম থেকেই মুখবধির ও মানুষিক প্রতিবন্ধী । বিয়ে হয়নি । বছরের কয়েকমাস ওর আচরণ স্বাভাবিক থাকে না । রানুবালা তখন বাধ্য হয়ে ওকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে ঘরের কোনে খুঁটির সাথে ।

চন্দ্রবালার শরীরে সমুদ্রের স্রোতের মত তীব্র যৌবন উথাল-পাথাল ঢেউ ভাঙে । ওর গায়ের ময়লা আঁটসাঁট জামা, উষ্কখুষ্ক চুল, পাগলাটে আচরণ একটুও কমাতে পারেনি ওর আবেদন । শিকারিরা যেমন শিকারের দিকে তীরছোড়া দৃষ্টিতে তাকায়, এলাকার বেয়াড়া যুবক ছেলেগুলোও ওর দিকে সেই চোখে তাকায় । শিকারিরা যেমন ঝোপ ঝাড়ে ওত পেতে থাকে শিকারের অপেক্ষায়, ওরাও তেমনি ওত পেতে থাকে চন্দ্রবালার অপেক্ষায় ।

দুই.
‘তোমার মেয়ে তো পাঁচ মাস বাধাইছে ।’
রোকেয়ার কথা শুনে রানুবালার মাথায় বাজ পড়ল । রানুবালার কণ্ঠ দিয়ে কোন কথা বের হয় না ।
একটু থেমে রোকেয়া আবার বলল, ‘আমি এই বাচ্চা নষ্ট করতে পারমু না । বাচ্চা নষ্ট করতে গেলে তোমার মেয়েকেই বাঁচান যাইব না ।’
রানুবালা শীতল কণ্ঠে চন্দ্রবালার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘খানকি মরলেই বাঁচিগো আপা, আর জন্মে কী পাপ কল্লাম যে ভগবান আমারে এই শাস্তি দিল ।’
রাগে রানুবালার হাত পা কাঁপছে । হঠাৎ রানুবালা উঠে গিয়ে দুই হাতে মুঠো করে ধরল চন্দ্রবালার চুলের গুছি ।
চন্দ্রবালা মৃদু প্রতিবাদ করে উঠল । ওর প্রতিবাদ যেন আরও একটু বাড়িয়ে তুলল রানুবালার ক্ষোভ । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে পরপর কয়েকটি লাথি দিল চন্দ্রবালার পেটে । চন্দ্রবালার আর্তনাদে এক মুহূর্তে চারপাশে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হল ।
রোকেয়া দৌড়ে গিয়ে থামাল রানুবালাকে ।
‘আপা আপনের পায় পড়ি, আপনে একটা কিছু করেন ।’ রানুবালা শ্লেষ্মা জড়ান কণ্ঠে কেঁপে কেঁপে বলল ।
রোকেয়া বলল, ‘আমার কিচ্ছু করার নাই । আমি পারমু না এই কাজ করতে । অনেক দেড়ি হয়ে গেছে ।’

রানুবালা রোকেয়াকে রাজি করাতে পারেনি ।
ক্লিনিক থেকে ফেরার পথে রানুবালা এক বোতল কীটনাশক কিনে নিল । বোতলের দিকে তাকিয়ে রানুবালা একটি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল ।

(সমাপ্ত)

একটি স্বপ্ন দেখতে চাই...

 

একটি স্বপ্ন দেখতে চাই.....


আকাশ মেঘলা,
যেন নীলিমার গায়ে ধুলো ময়লা জমে আছে ।
থমথমে চারপাশ,
যেন কথাও একটি খুনের দায়ে,
অবনত হয়ে আছে প্রকৃতি ।
বেলা শুরু,
অথচ, কেমন যেন পাল্টে গেছে সময়টা,
ঘড়ির কাঁটা তার দিকরেখা ভুলে গেছে ।

আমি একটি সময় চাই,
একটি সুন্দর সকাল চাই,
প্রকৃতির কোলাহল চাই,
আকাশের নীল চাই ।

এবার, আমি একটি স্বপ্ন দেখতে চাই ।
 
*********************** হাসনাত***************

জোনাকির চোখ


জোনাকির চোখ
হেলে পড়ে চাঁদ, বাবুদের অট্টালিকার মাথায়
আধো ঘুম-জাগরণে, রক্ত মাংসগুলো কাতরায় ।
হিম শীতল কুয়াশার কনিকা,
অক্টোপাসের মত ঘিরে ধরে ।
ব্যর্থ স্লোগান তোলে, শরীরের প্রতিবাদী লোমগুলো
নিভৃতের পরজীবীগুলো আড়মোড়া ভেঙে উঠে ।

তখন রাত্রির শেষ
আশায় ঘুণপোকা।
মরা চাঁদ পৃথিবীতে হলদে ছবি আঁকে ।
পরজীবীগুলো তাকিয়ে থাকে, বাবুদের অট্টালিকার দিকে ।
স্থির চোখ, তবু স্বপ্ন জ্বলে নিভে জোনাকির মত ।
অথচ, কী উত্তপ্ত হয়ে শিকারির মত অগ্নিদৃষ্টিতে
এদিকেই তাকিয়ে আছে ঐ অট্টালিকাগুলো ।

এরা কী চায়! আর কী চায়!

আজকের মত নির্ঘুম রাত্রি, আগামী রাত্রির অপেক্ষা ।
সব শেষে আরও একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে
ক্ষতবিক্ষত ফুসফুস থেকে ।

আজ শ্রাবনাকাশে এই মেঘ তো এই রোদ্দুর অতঃপর নাবলো ঝুম বৃষ্টি

শ্রাবনদিনের জানালা দিয়ে দেখেছি বাংলার বৃষ্টিদিন

শ্রাবন বেশ করেই জানান দিলো আজ। ভোরের দিকে কেবল এই মেঘ তো এই রোদ্দুর। আর দুপুর শেষে আকাশভাঙা বৃষ্টি নাবলো। জানালার কাচ-নেট ভিজিয়ে বারান্দায় জলের ঢল দেখতে বেশ লাগলো। তারও অনেক বেশি ভালো লাগলো সবুজ পাতার ভিজে যাওয়া। অপরূপ বাংলার বৃষ্টিদিন। কতকাল যে বৃষ্টিতে ভিজিনা জ্বরে পড়ার ভয়ে .. অথচ একদা বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ ছিলো অঢেল .. জ্বরে পড়ার কথা ভুলেও আসতোনা মনে .. ইস্কুলদিনে বন্ধুরা অমল আনন্দনে ভিজেছি বৃষ্টিদিনে। আজ বন্ধুরা সব যোজন দূরে। জানিনা কে কোথায় কিভাবে আছে এমন দিনে।

আমরা যারা ঢাকায় থাকি ইস্কুল-কলেজের বন্ধুরা, আমরা অবশ্য চেষ্টা করি হাজার কাজবাজের মধ্যেও মাঝেমাঝে কারও বাসায় বা রেঁস্তোরায় একটু-আধটু আড্ডাবাজির আয়োজন করতে। সেইসব দিনের আনন্দনের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যায়। ক্যামেরাবন্দী ছবিগুলো আবার অনেকেই ফেসবুক-এ পাঠায়, দূরের বন্ধুদেরও ফেসবুক-এর কল্যাণে এভাবেই একটু কাছে পাওয়া আজকাল সহজ হয়েছে, সেইকালে যা কল্পনাও করা যায়নি, ফেসবুক-কে ধন্যবাদ। এইতো খানিক আগেই লগ-ইন করেই পাই অজস্র ছবি ও কথায় ভর্তি হরেক অনুভব। কি নেই সেইখানে ! সাহিত্য থেকে শুরু করে লেটেস্ট ফ্যাশন ও প্রেম ! আবার রাজনৈতিক খবর নিয়ে তুলকালাম !

যাইহোক, বলছিলাম আজকের শ্রাবনদিনের বৃষ্টির কথা, আমার আজও বিষম মনে আছে ইস্কুলে একবার শ্রাবনদিনে এমনই ঝুম বৃষ্টিতে আমরা ক’জন বন্ধু আরবী ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছিলাম বৃষ্টিতে ভিজবো বলেই। আরবী ক্লাশ ফাঁকি দেয়াটা খুব সহজ ছিলো। হুজুর ক্লাশে এসেই সুরার অর্থ ও শানে-নযুল ব্যাখ্যা করার কাজ দিতেন। খাতার পাতায় ঝুঁকে লিখতে-লিখতেই আমরা যেই দেখতাম হুজুর ঝিমুচ্ছেন, অমনি সন্তর্পনে বেঞ্চের তলা দিয়ে দরোজা পর্যন্ত গিয়েই ভোঁ-দৌড় দিতাম। হুজুরের ঝিমুনি ততক্ষণে গভীর ঘুমের রাজ্যে।

ক্লাশ শেষের ঘন্টা পড়লে তবেই হুজুর জাগতেন। তখন আর তাঁর মনেই নেই কি কাজ দিয়েছিলেন! হুজুর এমনই ছিলেন। আজ তাঁকেও মনে পড়ায় হুজুর যে আদতে বড়ো ভালো মানুষ ছিলেন তা উপলব্ধি করছি। অই বয়সে হুজুরকে ফাঁকি দেয়াতে খানিকটা অপরাধবোধও ঘিরলো আমায়। হুজুরতো আজ আর বেঁচেও নেই। মনেমনেই হুজুরের আত্মার চিরশান্তি চাইছি আজ। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন।

আরও মনে পড়ছে একবার এমন ঝুম বৃষ্টিদিনেই ইস্কুল ছুটির পরে কিছুতে রিক্সা না পেয়ে ভিজতে-ভিজতে বাড়ি ফিরেছি হেঁটেই। এবঙ সেইদিন সন্ধের সঙ্গেসঙ্গেই ধুম জ্বরের ঘোরেও বৃষ্টির কথাই বকেছি

“আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ..” ! আমার কান্ড দেখে বাড়ির সবাই হেসেছে। সেইদিনগুলি আজ আর ফিরেও পাবোনা বলেই শুধু মনে করাই সার। আর ব্লগে শেয়ার। কবিগুরু তাইতো অনন্য সুরে ও বাণীতে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন সেই কথাটি
“দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলোনা, রইলোনা
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ..”।


দিন কি আর সোনার খাঁচায় বেঁধেও রাখা যায় ! যায়না। কিন্তু যায়দিনের কথাগুলো লেখাই যায় .. আমার আজকের শ্রাবনদিন-এর লেখাটি ছায়া ফেলুক অপর রোদ্দুরে .. এই কথাটি লিখতে তো পারি-ই .. লিখলাম তা-ই।

প্রভাত প্রত্যয়ী


প্রভাত প্রত্যয়ী



পুরনো রাস্তায় , খুব পুরাতন আমি
হেঁটে যেতে যেতে দেখলাম শহরটা ,
বাড়িগুলো ; বেড়ে ওঠা অসংযমী ঊধ্বগামী
অনেকটা স্পেসশাটল সদৃশ একেকটা
এখুনি শুরু করবে কাউন্টডাউন ,
কিংবা কাঁধে কাঁধে বাঁধে বৈষম্যের ব্যারিকেড
আর হবে না পাচার সাম্যবাদীর উনুন ।
বলতে বলতে সন্ধে নামে অচিরে এই শহরে
বিকেল গড়িয়ে চলে ক্ষিপ্র খড়িস শরীর ধরে ,
বেসুরে এক এলার্ম বাজে সমস্ত শহর ঘিরে
টাওয়ারের মাস্তুলে কালোপাল উড়ে হুহুংকারে ,
ছিটে রোদগুলো ছুটে ; কারফিউ কারফিউ চিত্‍কারে ।
উনপাঁজুরে ; যে যেমন পারছে ছুটছে শুধু ছুটছে
কেউ এম্বুল্যান্সে ,কেউবা গোধূলি ট্টেনে চড়ে
কেউ একলাফে হুডতুলা প্রেমে অভিসারে
কেউ শুধু ক্রাচে ভর করে পালাচ্ছে শহর ছেড়ে ,
তেড়ে আসছে সাঁজোয়া যানগুলো ইঞ্জিনের শব্দ করে ।
এক বৃদ্ধা হেঁকে বলে এইযে ছেলে তোমার কাছে
এখানকার আইড্যান্টিটি কার্ড আছে ?
- না তো! আজি আমার জন্ম , নিবন্ধন হয়নি এখনো
- বোকা ছেলে , তাড়াতাড়ি পালাও দাঁড়িয়ে আছ কেন !


আমি ছুটতে শুরু করলাম যতদ্রুত পারি তত
যতদ্রুত জাতিস্মর ফিরে আসে তারচেয়ে দ্রুত
যত দ্রুত খাটিয়া গোরস্থানে হেঁটে যায় তারও দ্রুত
যত দ্রুত প্রিয়মুখ ভুলে যাই তারচেয়ে দ্রুত
যত দ্রুত দ্রোহের দমন হয় তারচেয়ে দ্রুত
পেশাদার খুনীর চকচকে ছুরির চেয়ে দ্রুত ।
অন্ধকার থেকে পালাতে পালাতে ছুটতে ছুটতে …
হঠাত্‍ একটা বাড়িতে ঢুকে পড়লাম অজান্তে
পুরাতন দোতলা একটা বাড়ি ;খুব সেঁতসেঁতে
উঠনে একটা শিউলি ফুল গাছ দাঁড়িয়ে একঠাঁই ,
সহসা পেছন থেকে ;একটা নারী কন্ঠে প্রশ্ন -কি চাই ?
ফিরে দেখি ; আপাদমস্তক ভোরটা এসে দাঁড়িয়ে -
ছলছলে সূর্যচোখে জ্বলছে অখিল
বিপ্লবী গোলাপ ঠোঁটে উছল উষের তিল ,
কিছু শিউলি কুঁড়িয়ে দেই সেই হাতে
- বলি ;আমি চাই একটা আইড্যান্টাটিকার্ড
একটা শিউলি ফুলের মালা , দিবেতো গেঁথে …