শ্রাবন বেশ করেই জানান দিলো আজ। ভোরের দিকে কেবল এই মেঘ তো এই রোদ্দুর। আর দুপুর শেষে আকাশভাঙা বৃষ্টি নাবলো। জানালার কাচ-নেট ভিজিয়ে বারান্দায় জলের ঢল দেখতে বেশ লাগলো। তারও অনেক বেশি ভালো লাগলো সবুজ পাতার ভিজে যাওয়া। অপরূপ বাংলার বৃষ্টিদিন। কতকাল যে বৃষ্টিতে ভিজিনা জ্বরে পড়ার ভয়ে .. অথচ একদা বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ ছিলো অঢেল .. জ্বরে পড়ার কথা ভুলেও আসতোনা মনে .. ইস্কুলদিনে বন্ধুরা অমল আনন্দনে ভিজেছি বৃষ্টিদিনে। আজ বন্ধুরা সব যোজন দূরে। জানিনা কে কোথায় কিভাবে আছে এমন দিনে।
আমরা যারা ঢাকায় থাকি ইস্কুল-কলেজের বন্ধুরা, আমরা অবশ্য চেষ্টা করি হাজার কাজবাজের মধ্যেও মাঝেমাঝে কারও বাসায় বা রেঁস্তোরায় একটু-আধটু আড্ডাবাজির আয়োজন করতে। সেইসব দিনের আনন্দনের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যায়। ক্যামেরাবন্দী ছবিগুলো আবার অনেকেই ফেসবুক-এ পাঠায়, দূরের বন্ধুদেরও ফেসবুক-এর কল্যাণে এভাবেই একটু কাছে পাওয়া আজকাল সহজ হয়েছে, সেইকালে যা কল্পনাও করা যায়নি, ফেসবুক-কে ধন্যবাদ। এইতো খানিক আগেই লগ-ইন করেই পাই অজস্র ছবি ও কথায় ভর্তি হরেক অনুভব। কি নেই সেইখানে ! সাহিত্য থেকে শুরু করে লেটেস্ট ফ্যাশন ও প্রেম ! আবার রাজনৈতিক খবর নিয়ে তুলকালাম !
যাইহোক, বলছিলাম আজকের শ্রাবনদিনের বৃষ্টির কথা, আমার আজও বিষম মনে আছে ইস্কুলে একবার শ্রাবনদিনে এমনই ঝুম বৃষ্টিতে আমরা ক’জন বন্ধু আরবী ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছিলাম বৃষ্টিতে ভিজবো বলেই। আরবী ক্লাশ ফাঁকি দেয়াটা খুব সহজ ছিলো। হুজুর ক্লাশে এসেই সুরার অর্থ ও শানে-নযুল ব্যাখ্যা করার কাজ দিতেন। খাতার পাতায় ঝুঁকে লিখতে-লিখতেই আমরা যেই দেখতাম হুজুর ঝিমুচ্ছেন, অমনি সন্তর্পনে বেঞ্চের তলা দিয়ে দরোজা পর্যন্ত গিয়েই ভোঁ-দৌড় দিতাম। হুজুরের ঝিমুনি ততক্ষণে গভীর ঘুমের রাজ্যে।
ক্লাশ শেষের ঘন্টা পড়লে তবেই হুজুর জাগতেন। তখন আর তাঁর মনেই নেই কি কাজ দিয়েছিলেন! হুজুর এমনই ছিলেন। আজ তাঁকেও মনে পড়ায় হুজুর যে আদতে বড়ো ভালো মানুষ ছিলেন তা উপলব্ধি করছি। অই বয়সে হুজুরকে ফাঁকি দেয়াতে খানিকটা অপরাধবোধও ঘিরলো আমায়। হুজুরতো আজ আর বেঁচেও নেই। মনেমনেই হুজুরের আত্মার চিরশান্তি চাইছি আজ। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন।
আরও মনে পড়ছে একবার এমন ঝুম বৃষ্টিদিনেই ইস্কুল ছুটির পরে কিছুতে রিক্সা না পেয়ে ভিজতে-ভিজতে বাড়ি ফিরেছি হেঁটেই। এবঙ সেইদিন সন্ধের সঙ্গেসঙ্গেই ধুম জ্বরের ঘোরেও বৃষ্টির কথাই বকেছি
“আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ..” ! আমার কান্ড দেখে বাড়ির সবাই হেসেছে। সেইদিনগুলি আজ আর ফিরেও পাবোনা বলেই শুধু মনে করাই সার। আর ব্লগে শেয়ার। কবিগুরু তাইতো অনন্য সুরে ও বাণীতে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন সেই কথাটি
“দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলোনা, রইলোনা
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ..”।
দিন কি আর সোনার খাঁচায় বেঁধেও রাখা যায় ! যায়না। কিন্তু যায়দিনের কথাগুলো লেখাই যায় .. আমার আজকের শ্রাবনদিন-এর লেখাটি ছায়া ফেলুক অপর রোদ্দুরে .. এই কথাটি লিখতে তো পারি-ই .. লিখলাম তা-ই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন