[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

প্রচন্ড একটা ধাক্কা প্রয়োজন ছিল



প্রচন্ড একটা ধাক্কা প্রয়োজন ছিল,
হতে পারত তা সীডর বা হাল আমলের
ক্যাটরীনার মত বিধ্বংসী।

অথবা দড়জা বন্ধ করে পিঠের উপড়
ভেঙ্গে ফেলা বেতের মতই নিষ্ঠুর,
সব কিছুই মেনে নিতে রাজী ছিলাম।

কিন্তু এভাবে আগ্নেয় লাভার মত
পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া
নিজস্বতাকে চুর্ন করে দেওয়া
প্রবল কোন ধাক্কা চাইনি।

প্রচন্ড একটা ধাক্কা প্রয়োজন ছিল
কিন্তু সেটা এভাবে চাইনি
কখনই চাইনি।

অভ্যাস


হেমন্তের শাড়ী পরে আছে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠের একপাশে জংলার মত। এককালে কারও বাড়ি ছিল। এখন খালি পড়ে আছে। কে মালিক ছিল কেউ জানে না। কাউকে মালিকানার দাবি করতেও শুনা যায় না। সবাই খালিবাড়ি নামেই চেনে। লাকড়ি কুড়াতে, বনের ফলমূল খেতে কেউ কেউ কদাচিৎ ওদিকে যায়।

একটি বড় পুকুর ছিল। কালের স্রোতে এখন আর গভীরতা নেই। তবুও গোলাপী রঙের শাপলারা অপার্থিব এক সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। পাখিদের আনাগোনা আছে, নির্ঝঞ্ঝাট তাদের সংসার সাজায় এখানে। শেয়াল আছে, মেছোবাঘ আছে- রাতের পথিকের মত পথে বের হয় তারা। দিনে তাদের নাম-নিশানা নেই। বিকেলের দিকে এই খালিবাড়িটি সবচেয়ে বেশি নির্জন হয়ে যায়। এমনই নির্জনতায় দুটি মানব-মানবীর কথা শুনা গেলঃ
-দয়াল, একটি কথা সত্যি করে বলবে? এই যে আমরা কাছাকাছি আসি, আমাদের প্রয়োজন? না, আমাদের ভালোবাসা?
-আবার এই প্রশ্ন? নিশি! …আমাদের অভ্যাস!

দয়ালের উত্তরে নিশি চুপ করে রইল। তার বলার আর কি বা আছে। সে দয়ালের কাছাকাছি হতে চায়। কখনও না হতে পারলে বিরহের যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে যায়। শুরু থেকে বর্তমান, সে হিসেব মেলাতে চেষ্টা করে। হ্যাঁ, আকর্ষণ ছিল। মানব-মানবীর চির-দুর্নিবার আকর্ষণ। সেখানে সুখ ছিল। যে সুখ না পেলে নিজেকে আর সুখী ভাবতে পারে না সে। নিজের জীবনকে শূন্য মনে হয়। এক জ্বলন্ত চিতা মনে হয়। ইদানিং নিশি ভাবে, এই মাখামাখি কি তাহলে আমাদের প্রয়োজন? উত্তর পায় না সে। উপসংহারের চেষ্টা করেছে অনেকবার, মানতে চেয়েছে- এটা আমাদের আকর্ষণ, মানতে চেয়েছে- এটা আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু, কেন জানে না, তার মন মানেনি। যদিও এই মন মানানোতে তাদের কোন পটপরিবর্তন হবে না। তবুও সে অশরীরি, শুধুই মানসিক একটি উপসংহার খুঁজছে। একটি নাম খুঁজছে।

দয়াল বরাবরই চাপা মনের। সে যা বলে, তার আগে পিছে অনেক শূন্যস্থান বাকি পড়ে থাকে। তাকে বুঝে নিতে হয় নিজের মত করে। নিশি এতদিন বুঝে এসেছে। এখন তার মনে হয়, সে কিছুই বুঝেনি। সে দয়ালের মুখ থেকে আগে-পিছের একটি কথাই শুনতে চায়। কিন্তু, দয়ালের পাথর চাপা গুহা থেকে শব্দ বের হয় না।

দয়াল কলেজের পাঠ চুকিয়েছে অনেক দিন। কৃষিকাজ করে, ব্যবসা করে। নিশি পাঠ চুকানোর শেষের পথে। স্কুল জীবনেই তাদের একসাথে চলা শুরু। বলতে গেলে, কৈশোরের প্রথম ডাকেই তারা সাড়া দিয়েছে। তারপর থেকে- আকর্ষণ হোক, প্রয়োজন হোক, একসাথেই পথ চলেছে। অভিভাবকরা জানেন। সহজ-সরল একদল মানুষের বসবাস যেখানে সেখানে কূটচাল নেই। অনেক আগে থেকেই এমন করে প্রথা চলে আসছে। সবাই জানে, আগামী সময়ের কোন পার্বণে দয়াল-নিশি গাঁটছড়া বাঁধবে। নিশিও জানে। দয়ালও জানে। এই জানাজানি মানামানিতে তাদের কারও কোন দ্বিরুক্তি নেই। তাদের এলাকায় অদ্যাবধি যারাই গাঁটছড়া বেঁধেছে, তাদের কারোরই দ্বিরুক্তি ছিল না। কিন্তু নিশি অবশ্যম্ভাবী সম্পর্কের মাঝে আরও কিছু চায়। সে আরেকটি নাম চায়। একটি উপসংহার চায়। একটি সান্তনা চায়।

কোথাও কোথাও কখনও কেউ না কেউ গড় চিন্তাশীলতার চেয়ে এগিয়ে থাকে। নিশিও তেমন। যেখানে তার মা, দাদী, নানী সবাই যার যার বয়সে পুরুষের চাহনিকে প্রেম ধরে নিয়েছে, বিয়ে করেছে, সন্তান জন্ম দিয়েছে; সেখানে নিশি তা মেনে নিতে চায় না। সে অন্য কারও বিষয়ে প্রশ্ন তোলতে চায় না। শুধু দয়ালকে নিয়ে তার একটি নাম চাই। একটি সংজ্ঞা চাই। বইয়ের পাতায় সে পড়েছে- শারীরিক সম্পর্কের বাইরে আরেকটি সম্পর্ক আছে। আরেকটি লেনাদেনা আছে। একেবারে মানসিক। শুধু শারীরিক সম্পর্ক অপূর্ণ। শুধু মানসিক সম্পর্ক অপূর্ণ। সে দুইয়ের মিলনে পূর্ণতা চায়। সে ভাবে, তার পূর্বজ নারীরা হয়তো অপূর্ণতা নিয়েই জীবন পার করে গেছে, অথবা অপূর্ণতাকে চিনে নিতে পারেনি। নয়তো তাদের অপূর্ণতাই ছিল না। সংজ্ঞাহীন পূর্ণতা তারা ভোগ করেছে। সে শুনেছে, তারই পূর্বপুরুষ একজন প্রেমিকার অকাল প্রয়ানে আত্মাহুতি দিয়েছিল।

নিশির মধ্যে পরিবর্তন দেখা দিল। সে অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সপ্তাহ খানেক হয়ে গেল দয়ালের সাথে তার মেলামেশা হয়নি। অসুস্থতার বাহানায় সে নিজেই যায়নি। সে ঘরে সবার সাথে কথা বলা ছেড়ে দিল। একা ঘরে বসে থাকে। বিছানায় শুয়ে থাকে। কখনও খায়, কখনও খায় না। তার একটাই শঙ্কা- দয়াল কি তাকে ভালোবাসে না? শুধু আকর্ষণে কাছে আসে? শুধু প্রয়োজনে কাছে আসে? দয়াল কখনও এই উত্তর দেয়নি। নিশি ভাবে, দয়াল যদি বলে সে শুধু প্রয়োজনে আসে, সে শুধু আকর্ষে কাছে আসে, তাহলে সে সহ্য করতে পারবে না। অথচ শুরুতে এমন প্রশ্ন তার ছিল না। তার আশেপাশের কারও এমন প্রশ্ন আছে বলেও সে জানে না। কাউকে সে বলতে পারে না। সবাই যদি পাগল ভাবে! নিজের ভেতরে ঝড়ের সাথে খেলতে খেলতে নিশি নিজেই ভুলে যায় সে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছে।

অনিয়মের চূড়ান্ত মাত্রাতিরিক্ততায় নিশির জ্বর এলো। সাধারণ ঔষধ চললো। কিন্তু নামলো না। বড় মাপের ঔষধ এলো। তাও নামার লক্ষণ নেই। মনের অসুখ কি আর শরীরের ঔষধে নামে! ডাক্তার অভিজ্ঞ মানুষ, বুঝতে পারলেন। নিশির বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন। উনি কোন সদুত্তর দিতে পারলেন না। অন্যরাও পারলো না। শেষে সবার চোখ পড়ল দয়ালের উপর। দয়াল নিজেও বুঝতে পারলো না, তার সাথে তো নিশির ঝগড়া হয়নি। তাহলে কেন অমন করবে সে? কয়েকদিনের না দেখাদেখিটাকে সাধারণ ভেবে নিলেও, তার তখন মনে হলো- মারাত্মক কিছু হয়েছে। দয়াল তখনই ছুটল।

নিশি বিছানায় ছিল। চোখ বুজে আছে মাত্র। পায়ের শব্দ পেতেই নিশি চোখ খোলে দেখছিল। সে দেখল, দয়াল তার পাশে বসছে। নিশি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল শুধু। দয়াল নিশির কপাল ছুলো। হাতে হাত রাখলো। খুব শঙ্কিত দেখাচ্ছিল দয়ালকে। আদ্র গলায় নিশিকে জিজ্ঞেস করল।
-কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে দেখা করছ না? জ্বর বাধিয়ে বসে আছ?
নিশি জবাব দিল না। দয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল। দয়াল অস্থির হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল। নিশি বিড়বিড় করে বলল-
-আমার প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব দেবে?
-হ্যাঁ দেবো। নিশি, কি জানতে চাও?
-ঐ যে কতবার জিজ্ঞেস করেছি! আমাদের সম্পর্ক কি ভালোবাসা? না, আমাদের প্রয়োজন?
-কতবার তো বলেছি নিশি, অভ্যাস!
দয়ালের উত্তরে নিশির মুখ চুপসে গেল। তার মুখ দেখে মনে হলো হতাশার তলানিতে সে যে ক্ষীণ আশায় বুক বেঁধে রেখেছিল তা ফুরিয়ে গেছে।
দয়াল আবার বলতে শুরু করলো,
-অভ্যাস, নিশি, অভ্যাস! তোমাকে ভালোবাসাই তো আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। তোমাকে না ভালোবেসে পারি না। তোমার কাছে না এসে পারি না। মানুষ অভ্যাসের দাস বলে তুমিও তো শুনে এসেছ। আমি সেই অভ্যাসের দাস, তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না। পাগলী, কত সহজে ভেবে আছ তোমাকে ভালোবাসি না!

নিশির চোখে জল এলো। সে উঠে বসতে চেষ্টা করল। দয়াল তাকে ধরে বসালো। দয়ালের আদ্র চোখের দিকে তাকালো। তারপর জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করল। নিশির এমন কান্নায় হতভম্ব হয়ে দয়াল নিশিকে আঁকড়ে ধরে সান্তনা দিতে লাগল।

দয়ালের আলিঙ্গনে নিশির তখন মনে হলো, আজকের এই আলিঙ্গনটাই সবচেয়ে মধুর

অভিমান


আজও যখন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়
তোমার কথাই মনে পড়ে ,
তুমি কি এখনও সেই ঘুম ভাঙা রাতে
গাঢ় অন্ধকারের মাঝে জোনাকির আলো দেখতে পাও ?
মাঝরাতের সেই নিঃসীম শূন্যতা, বুক চাপা মৌনতা
আজও কি আমার কথা মনে পড়ায় ?


আমার দু চোখের তারায়
আকাশের গভীরতা খুঁজতে তুমি
আজও কি, খুঁজে বেড়াও ?
রাতের অন্ধকার কি আজও আমাকে খুঁজে বেড়ায় ?


একসময় জীবনানন্দে সাজিয়েছিলে আমায়
“ আমার মুখের দিকে তাকালে সমুদ্রের নীল
দুপুরের শূন্য সব বন্দরের ব্যথা
বিকেলের উপকণ্ঠে সাগরের চিল
নক্ষত্ররা , রাত্রির জল, যুবাদের ক্রন্দন ''
এখনও কি অনুভব করো ?
আমার মুখ কি আজও তোমায় ভাবায় ?


আমায় ঘিরে যত উষ্ণতা , যত আলিঙ্গনের স্বপ্ন দেখেছিলে
আর তা না পাওয়ার কষ্টে অভিমানে
দূর থেকে দূরে সরে গিয়েছিলে ,
এ কোন শূন্যতায় সাজালে তুমি
মধ্যরাতে এ কোন সুরের মূর্ছনা
তোমার কাছে টেনে নিয়ে যেতে চায়
বিশ্ব চরাচর কাঁপিয়ে এ ক্রন্দন
কেন আমায় কাঁদায় ।।
 

জীবনের যোগ বিয়োগ

জীবনের যোগ বিয়োগ

কথা ছিল একটি নাকফুল
তামা-সোনা অথবা ঘাসফুল
এমন কোনো দায়বদ্ধতা
ছিল না কখনো
ভালোবাসার স্মারক
কয়েকটা সিম্বল প্রদর্শন
শাখা কিংবা সিঁদুর
আমাদের সংস্কৃতি।


আমি ভেতরের জিনিস বাইরে
প্রদর্শনের পক্ষপাতি ছিলাম না
যেহেতু তুমি চাইলে
অসামান্যের প্রতীক সামান্য ঘাসফুল
আমি নাক ছিটকুলাম না বিদুরের খুদ
এ আমার সাধ্যাতীত নয়
চলে গেলাম তোমাকে নিয়ে
কর্মজীবী হোস্টেল থেকে কাছেই
শান্তি নগরের একটা সেকরার দোকানে
তখন শীতকাল তাই রমনায়
দুয়েকটা মরা ঘাসের দেখা মিললেও
ফুলের কোনো আনাগোনা ছিল না।


ভালোবাসা দৌড়ায় মন থেকে মানচিত্রে
নিক্তি দিয়ে ভালোবাসা মাপা
সমীকরণের ডানপক্ষ-বামপক্ষ মিলানো
জটিল সূত্রের কারসাজি
ক্যালকুলাস শ্রেণীকক্ষের বাইরে
এসে জ্যামিতিক আকার ধারণ করে
অথচ আমরা তখনো জানি না
ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি কতো।

জন্মমাসে ঘর বাঁধা নিয়ে তোমার কিছুটা
সংস্কার ছিল তাইতো হেমন্ত পালালো
একবার তোমার-আমার একবার লোকাচার
কিন্তু সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব আমাদের বিপরীতে
প্রতিকুলতা আমাদের রুখতে পারে না
ভেঙ্গে ফেলি সমাজ কাঠামো-আদি প্রতিষ্ঠান
ভেঙ্গে ফেলি কোমলতার অণু-পরমাণু
ভেঙ্গে ফেলি দুজন দুজনাকে অজান্তেই
ভেবে দেখো কতোটা মূর্খ ছিলাম আমরা।

একটি কান্নাময় জীবনে সঁপে দিলাম নিজেদের
নুন আনতে পান্তা ফুরালে কিছুটাতো আনা হয়
পানি মিশিয়ে খেয়ে নিলে কিছু শক্তিতো পাওয়া যায়
জীবন থেকে জীবন ফুরোলে
অসীম শূন্যতা
চাপহীন-বায়ুহীন মহাকাশ জীবন।

একজন নারী, তার শাড়ি, আর আমার এলোমেলো অনুভূতি...

একজন নারী, তার শাড়ি, আর আমার এলোমেলো অনুভূতি...

  আমি টুকটাক লেখার চেষ্টা করি। বেশিরভাগ সময়েই সাহিত্য ঘরানার লেখাগুলো ঠিক পরিপক্বতা পায় না। আসলে লেখার গভীরতা বাড়ানোর জন্য অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়। অন্যের লেখা পড়লে, বিশেষ করে ভালো মানের লেখা পড়লে লেখার গুণ, গভীরতা, ব্যপকতা নিশ্চিতভাবেই বাড়ে যদি পড়া লেখাগুলোর কিয়দংশও বোঝা সম্ভব হয়।

আমি আমার আলসেমির দরুন বই পড়াও ছেড়ে দিয়েছি। নানা ব্যস্ততায় ব্লগ পড়াটাও অনেক কমে গেছে। আজ এক বন্ধুর কাছ থেকে একটা বই নিলাম। পড়ার জন্য। রাজনৈতিক ভাবে ওপার বাংলার (রাজনৈতিকভাবে দুই বাংলা যতই আলাদা হোক না কেন আমার মনে দুই বাংলা এখনো অভিন্নসত্তা) লেখকের। সুবোধ সরকারের কবিতার বই। কবিতাগুলো থেকে কিছু কবিতা বন্ধু আমাকে আবৃত্তি করে শোনালো। তার থেকে একটা কবিতা আমার মাথায় ঘুরছিলো।

বাসায় ফিরে আরো বেশ ক'বার পড়লাম। আমি বাকরুদ্ধ। এই না হল কবিতা! জীবনে এরকম একটা কবিতা লিখতে পারলে জন্মের পুরোটাই স্বার্থক। অনেক বেশি মর্মস্পর্শী সে কবিতা। একজন পুরুষ কবি এক হতভাগ্যা-অসহায়া নারীর করুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন সে কবিতায়। আমি মনে মনে নিজেকে সেই নারীর জায়গায় বসানোর চেষ্টা করলাম। যদিও একজনের পক্ষে আরেকজনের দুঃখের পুরোটা কোনভাবেই বোঝা সম্ভব না, তারপর আমি একজন পুরুষ! এরপরও পড়তে পড়তে আমার চোখের কোণাটা ভিজে গেল।

কবিতাটা আপনাদের জন্য তুলে ধরছিঃ

শাড়ি

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।

আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ
দ্বিতীয় থাকে রাখলো সব গোলাপীদের
একটা গোলাপীকে জড়িয়ে সে বলল, তোর নাম অভিমান
তৃতীয় থাকে তিনটা ময়ূর, যেন তিন দিক থেকে ছুটে আসা সুখ
তেজপাতা রঙ যে শাড়িটার, তার নাম দিল বিষাদ।
সারাবছর সে শুধু শাড়ি উপহার পেল
এত শাড়ি কী করে এক জীবনে সে পরবে?

কিন্তু এক বছর যেতে না যেতে ঘটে গেল সেই ঘটনাটা
সব্ধের মুখে মেয়েটি বেরিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, চাইনিজ খেতে
কাপড়ে মুখ বাঁধা তিনিটি ছেলে এসে দাঁড়ালো
স্বামীর তলপেটে ঢুকে গেল বারো ইঞ্চি
ওপর থেকে নীচে। নীচে নেমে ডানদিকে।
পড়ে রইলো খাবার, চিলি ফিশ থেকে তখনো ধোঁয়া উঠছে।
এর নাম রাজনীতি বলেছিল পাড়ার লোকেরা।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
একদিন দুপুরে, শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছ'তলার বারান্দা থেকেউড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে।
শাশুড়ি পরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে, সে একা।

কিন্তু এই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, বাঁচাও
পেছনে তিনজন, সে কি উল্লাশ, নির্বাক পাড়ার লোকেরা।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা।


কবিতাটার ভাষা যতটা সহজ ঠিক ততটাই কঠিন এর বক্তব্য। এর ঘটনাটা কঠিনভাবে বুকের বাম দিকে আঘাত করে। মস্তিষ্কে আঘাত করে, এবং সে আঘাত পৌনঃপুনিকভাবে চলতেই থাকে। আমি সে আঘাত থেকে মুক্তি পাই নি। এলোমেলো ভাবনারা আমাকে আরো কিছুদূর সামনে টেনে নিয়ে গেছে। তাইই তুলে ধরলামঃ
তিনজন দৌড়াচ্ছে, দৌড়াচ্ছে সেই নারীর পেছনে
যে নারীর সিঁথিতে গতকালও সিঁদুর ছিল
নারীদেহ খেতে অনেক মজা, তাই এ সুযোগ ছাড়বে কেন?
সাদা থান কেড়ে নিয়ে হাত বাড়ায় উলঙ্গ বক্ষে
একে একে রক্তাত করে তোলে সারাটা দেহ
নির্বাক পাড়াবাসীর গোচরেই চলে তিন পাষণ্ডের উপভোগ।

তিনজনের পালাবদলে রাতটা পার হয়না সে মেয়ের
ভোরের আলো ফোঁটার আগেই তার জীবন আলোর অস্ত ঘটে
সকাল বেলা হাজির হয় কর্তব্য পরায়ন পুলিশেরা,
একে ওকে জিজ্ঞাস করে, কে এই নারী, ধর্ষিতা নারী!
নির্বাকেরা নির্বাক রয়ে যায়, পুলিশ লাশ নিয়ে ধায়।

আধখাওয়া লাশটার কাটাছেঁড়া চলে, সবশেষে সেলাই,
এর পর মেয়েটার উলঙ্গ দেহে নতুন কাপড় ওঠে, লাশের সাদা কাপড়
পুলিশ লাশটাকে শাশুড়ির কাছে দিয়ে আসে
কিন্তু সে তো একে দিবেনা জায়গা, এ যে অপয়া নারী
একে একে সব নির্বাকেরা সবাক হয়ে ওঠে, বলে, ঠিক ঠিক
সত্যিই ও অপয়া তাই বিয়ের বছর না পেরুতেই স্বামীকে খেলো,
আর কোন ভালো মেয়েকে কি কেউ এভাবে খায়!

এত শাড়ির মালিক হয়েও একটা শাড়ি জোটে না সে মেয়ের
একটা সাদা থানে চিতায় নিতেও নারাজ বুড়ো শাশুড়ি,
কারণ ওর জন্যই যে ওর খোকা মরেছে!
সরকারি কাপড় গায়ে ইলেক্ট্রিক চিতা জলে গঙ্গার ধারে,
কাপড়ের ছায়ারা এখনো ওড়ে রাতের আধাঁরে।

বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১২

কাতানের লাল টিপ…


একটা অসহ্য বিষয় দিয়ে শুরু করি, সবার বিয়ে কেন ২০ তারিখে? চার চারটা বিয়ে আমার ২০ তারিখে? আমি কোনটা ছেড়ে কোনটায় যাব? তাও আবার সব বিয়ে রাতে। দিনে হলেও হত। ভাবতেই খারাপ লাগছে যে খুব কাছের দুইজনের বিয়ে ২০তারিখে। এখন আমার কি করা উচিত? Should i dance or just vent my frustration out over here? খুবই চিন্তাই আছি। এমনকি আমি রাতে বসে বসে আমার বান্ধবীদের সাথে প্ল্যান করি কি বলে কাকে কাটাব। আমি আবার পানি যেদিকে গড়ায় সেদিকে গড়াই। যেই বিয়েতে সবাই যাবে আমিও সেই বিয়েতে যাব। একা একা আনন্দ করার থেকে দুষ্টু গরুর দলে থাকা ভাল তাই না?
Ahhsome বিষয় হচ্ছে আমি প্রায় এক বছর পর ঘটা করে শাড়ি পরব। শাড়ির সাথে আমার শৈশবে এত বেশি আন্তরিকতা ছিল যে এখন এই বয়সে মানে Twenty something এ এসে শাড়ি দেখলেই আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। একতো শাড়ি পর তার উপর মিলিয়ে ব্লাউজ বানাও, ব্লাউজ এর আবার বাহারি ডিজাইন আছে সেগুলো একে একে টেইলর কে দিয়ে সাজাও। আমার শাড়ির না যত দাম তার থেকে বেশি টাকা ব্লাইজ বানাতেই নিয়ে নিল আমার টেইলর। মাঝে মাঝে মনে হয় নিজেই একটা সেলাইন মেশিন নিয়ে বসে যাই। যত টাকা টেইলর কে গত কয়েক বছরে দিয়েছি তত টাকা দিয়ে আমার আর কিছু না হলেও একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি হয়ে যেত। হ্যাঁ, যেই প্রসংগে বলছিলাম, আমার শাড়ি পরা নিয়ে এইবারো এক বিশাল গ্যাঞ্জাম লেগে গেল। পরশু দিন হলুদ আর আমি কনের বান্ধবি হয়ে এখনও শাড়ির সাথে ব্লাউজ মিলাতে পারলাম না। Sniff*
এই সব গ্যাঞ্জামের থেকেও আরেক বড় গ্যাঞ্জাম আছে… বলুন তো কি?
কনে একটু আগে ফোন দিয়ে বলল, যেই অনুষ্ঠানটা অফিসার্স ক্লাব এ হবার কথা, সেই অনুষ্টান অফিসার্স ক্লাব এ আর হচ্ছে না। ঐ দিন নাকি তারা সকল অনুষ্টান বাতিল করেছে। কেন করেছে কেও জানে না। যাই হোক এখন হলুদ কনের নিজ বাস ভবনে হচ্ছে। তাহলে আমি একটা রিক্স নিতে পারি বলুন? আমার সকল সমস্যার সমাধান আসলে কনে নিজেই করে দিল। যেই পোজ মেরে আমি হলুদে যেতে চেয়েছিলাম আমাকে সেই হলুদে এখন একটু কম সাজলেও কেও চোখে দেখবেনা :P ছাদের উপর করুন আর সামনের উঠানে, ক্লাব এ যেমন ঝকমারি বাতি লাগানো থাকত তা থেকে বাসার হলুদের আয়োজন অনেক কম আলোয় হবে। সুতরাং আমি আর ব্লাউজ নিয়ে ভাবছিনা। এখন কালো ব্লাউজ পরলেও আমাকে কেও দেখবেনা । :P
ওহ! শাড়িটা না দেখালেই নয়, আমার মা’র শাড়ি, না হলেও ত্রিশ বছর আগের শাড়ি।
 
এর সাথে লাল সবুজের কাঁচের চুড়ির সাথে এন্টিক এর বালা, স্টোন এর বালা এবং কাতানের পাড়ের চূড় পরলে কেমন হবে? সাথে বড় ঝুমকা এবং মস্ত বড় একটা লাল টিপ! উফফফফ… আমি এত খুশি কেন? বান্ধবীর বিয়ে নাকি নিজের সাজুগুজু করার সুবর্ন সুজোগ পেয়ে! সাজের ব্যাপারে আমি বরাবরই একটু বেশি খুশি থাকি। সব কিছু যেন ভাল ভাল হয় এই দোয়া চাই সবার কাছ থেকে এবং আমার বান্ধবীর বিবাহিত জীবন যেন অনেক সুখের হয় সেই জন্যও আমি দোয়া প্রার্থী।
হলুদ খেয়ে এসে ahhsome experiences নিয়ে আমি আবারো আসব কিন্তু তার আগে আমাকে জানাতে হবে বিয়ের জন্য কি উপহার কিনলাম যেটা না কিনেই আমি হৈ চৈ করছি !