[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১২

♠ অনিলা-১ ♠


এপ্রিল ৩০, ২০১২

অনিলা, তুমি ভাবতেই পারবে না;
যে শহরে তুমি ফেলে যাওয়া দিনগুলোতে নিয়ন আলো দেখতে পাওনি।
সে শহর আজ কেমন সেজে আছে!
সে শহরে আজ শুধু আলোর ঝলকানিই দেখতে পাচ্ছি।
এত্তো আলো এই শহরে এখন, অথচ রোজ মোমবাতি জ্বেলে প্রার্থনা ঘরে যেতাম আমরা।
আমাদের যখন সেই তুলসী তলায় কেত্তন হতো;
দেখতাম তুমি তখন সুর করে কোরআনের বাণী আওরাচ্ছ।
পাশাপাশি আমরা তবুও কি যেন একটা দেয়াল!
বৃষ্টির দিনে মোমের আলো পাশে রেখে ছায়াবাজি খেলতাম।
ঘরে তখন মাঝে মাঝে গ্যাসের বাতি জ্বলত।
তখনও বিদ্যুৎ আসেনি এই শহরে, আমাদের দিনগুলো তখনও যান্ত্রিক হয়ে উঠেনি।
আমরা তখনও বিষাদের ছায়া গায়ে মাখতে শিখিনি।
তখন অবদি আমরা ভাবতাম এক সাথেই আমাদের দিন গুজরান হবে সকলের।
কিন্তু, হয়ে উঠেনি আর আমরা এলোমেলো হয়ে গেছি খুচরা পয়সার মতো।

♠ অনিলা-২ ♠


এপ্রিল ৩০, ২০১২

অনিলা,
আজকাল রেল লাইন দেখলেই মনে পড়ে যায় তোমার কথা।
তুমি হাত ধরে হাটতে চাইতে। এ যেন নদীর এপাড় আর ওপাড়ে দু’জন রয়েছি; মাঝখানে সমান্তরাল।
তোমার মনে পড়ে, এক মুহুর্ত অবসর মেলাতে, কত রোদ ঝকঝক সকালকে ঝেড়ে ফেলে আমরা দ্রুত দুপুরকে চাইতাম; একটু দুপুর আসুক!
পড়ার তাড়া থাকতো বলে, কত দুপুর আমাদের অপেক্ষায়-অপেক্ষায় যে শেষে বিকেল হয়েছিল তার ইয়াত্বা নেই।
সেই মেঠোপথ আর দুপাশের রেল লাইন ধরে আমরা সবাই বহুদুর চলে যেতাম।
রোজ ভাবতাম এই পথের শেষ প্রান্তে যাবো; কিন্তু কোন দিন যাওয়া হয়ে উঠেনি!
আমরা মাঝ পথেইে থেমে গেছি ব্যাটারি হীন ঘড়ির মতো।
অনিলা তোমার মনে আছে?
যখন তোমার বয়স দশের ঘর পাড় করেনি, আমি তের পার করেছি;
সেই বয়সে একদিন তুমি বলেছিলে,
পকেটে অনেক টাকা যেদিন হবে সেদিন রেলপথের শেষপ্রান্তে যাবো আমরা? -আমার সঙ্গে যাবে তুমি?
সেদিন কিছু বলা হয়নি আমার; আমি তোমার মার্বেল চোখে তাকিয়ে ছিলাম
যেখানে তোমার ইচ্ছেরা ছোটাছুটি করছিলো;
আমি তোমার ইচ্ছের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছিলাম।
তোমাকে সেদিন বলতে পারিনি, সময় বড় নিষ্ঠুর! ক্রমশই বদলায়;
সময় অনেকটা আইসক্রিমের মতো হাওয়া লাগলেই ফুরোতে শুরু করে। আগের অবস্থায় তাকে আর নেয়া যায়না।
আজকাল লালরঙা মরচে পড়া ট্রেনগুলো অবহেলায় শুয়ে থাকে,
ওরা জানেনা আর কোনদিন ছুটতে পারবে কিনা আগের মতো করে।
তোমার স্বপ্নগুলোও অবহেলায় অবসরে চলে গেছে;
হয়তো ঠিক বলতে পারনা আবার কোনদিন তাতে প্রাণ ফিরবে কিনা!

কবিতা গুচ্ছ


এপ্রিল ৩০, ২০১২

সুখ কোথায়
সুখ তো পাইনে কোথাও
যেখানে খুজেছি সুখ;
নিত্য পেয়েছি যত যন্ত্রণা
কৃত্রিম সুখের নাই কোন ঠিকানা।
সুখ খুঁজতে করেছি ভুল
হৃদয়ের সুখ কী যে অতুল
ভাবছি ধন রতেœ মসগুল
মানব সুখের নিত্য মূল।
যত সব যাতনা
নেই কোথাও সান্ত্বনা
সবাই যে চঞ্চলতায়
আমাকে দেয় প্রবঞ্চনা।
প্রকৃত সুখ কোথায়?
তা তো মোদের অজানা
সৃষ্টি জীবের ভালবাসা
মোরা দিতে ভুলব না।
-০-
অপরাগ
তুমি নিশ্চয় নীড় অপরাগ
বাঁধিলে পণ গড়াতে পারো
বন লতার পাহাড় সাঁজ
তুমি তো অপরাগ।
গড়াতে পারো মানিক রতন
মনে ভাবো রাজা বাদশার ধন
দেখলেও হারিয়ে ফেল
কী যেন ক্লাপনিক মন।
নেইকো তাতে গন্ধ সাধ
চারদিক ছড়ালে আলোর ঝাঁক
নিবিড় বনে তিমির রাত
সত্যি তুমি অপরাগ।
-০-
পল্লী বধু
আয় মোর পল্লী বধু
গ্রাম ছেড়ে আয় শহরে
করিস না দেরি
শহরে খেলা দেখো যদি।
হায় মোর মানিক রতন
করবো তোমায় কত যতন
এখনো তুমি আছ বসে
নিবিড় ওই খোপরাতে।
শহরে যত কল কারখানা
এক নজর ঘুরে দেখাবো
যান বাহনে চড়ে বেড়াব
যদি শহরে বেড়াতে আস।
-০-
বাংলার বীর
হে বাংলার বীর
হাতে নাও দির্ঘ জয়ী তীর
বাংলার নির্ভিক লড়াকু সৈনিক
তুমি এই বাংলার প্রতীক।
সৈনিক তুমি করিও না দেরি;
দেখলে বাংলায় কোন সন্ত্রাসী
মনে বলে খেয়াল করো
অলসতাকে গুটিয়ে ফেল।
অবহেলা করো যদি;
আসবে তখন শত্র“র ফেরি
লড়াই করো বীর দর্পে
পাকড়াও করো দেশদ্রোহী।
-০-
অভাব
অভাব অভাব বলে তুমি
কত না হয়েছো হতাশ
অভাব কথাটি কী যেন
নিত্য চাহিদা যার প্রকাশ।
অভাবের কথা ভাবতে গিয়ে
জীবন তোমার যায় কাটিয়ে
নিত্য যখন পূরণ হলো
অভাব তো হারিয়ে গেল।
অভাব অফুরন্ত, সময় সীমিত
যার মাঝে জীবন অতিক্রমকৃত
যদি হতে চাও জয়ী, হতে পার;
চাহিদা কখনো অভাব না ভাব।
বিধাতা তোমায় দিয়েছ অভাব
যাও করে কাজ নিরলস স্বভাব
অভাবের মাঝে জীবন গড়ি
অল্পেই মোরা হবো খুশি।
-০-
সবুজে ঘেরা
এদেশ মোদের সবুজে ঘেরা
শস্য শ্যামল মাঠে ভরা
সেই মাঠে কাজ করে
কৃষানেরা সারা বেলা।
রোদ বাদলে খাটে তারা
ফুরায় না তাদের সাধ
খাল বিল আর ফসলে ভরা
এই বাংলার বিস্তৃর্ণ মাঠ।
সোনার ফসল ফলে যেথা
দিন কেটে যায় বেশ
সেই ফসলে গড়বো মোরা
সোনার বাংলাদেশ।
বনে বনে পাখি ডাকে
মিষ্টি সুরের কী কলোহল
সবুজে ঘেরা, গানে ভরা
বাংলাদেশের মাতৃকোল।
-০-
কান্না হাসির ভাষা
হে বঙ্গ তুমি রবী ঠাকুর ও
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের গান
চির অম্লান সূরে গাইছিলো যারা
বাংলা মোদের মাতৃভাষা।
হে বঙ্গ তুমি সেই রক্ত ঝড়া
কান্না হাসির ভাষা
তোমার তরে রক্ত দিয়েছিলো
বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা।
হে বঙ্গ পরাধীনতা থেকে রক্ষা করা
মোর স্বাধীনতা, মোর মাতৃভাষা।
সালাম,বরকত,রফিক আরো কত শহীদ
মায়ের কোল খালি করে
বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিলো
এই বাংলার রাজপথে।
হে বঙ্গ ঐ রক্ত ঝড়া হারানো বাক স্বাধীনতা
ওহে দামালেরা তোমরা হয়েছ শহীদ
তাই তো মোরা ফিরে পেয়েছি
হায়েনাদের কাছ থেকে মাতৃভাষা নিশ্চিত।
শহীদেরা আজ ঘুমিয়ে আছে
আমরা তাদের করব স্মরন
একুশে ফেব্র“য়ারী এলে।
-০-
হতাশা
কবি কেন নয় সজাগ
নয়নে কেন হতাশা ভাব
সুখ দুখ সৃষ্টির খেলা
জীব বৈচিত্রে ভবলীলা।
স্বপ্নের জীবন খনি
অলসতার কত গ্লানি
ভাবনাহীন মন নিয়ে
সফলতা পাবে না কী।
অবুঝ আত্মায় ভাবে কবি
নিরাশ কেন মানব জাতি
সান্ত্বনা কী দিতে পারি
হতাশা তো ভবঘুরি।
-০-
মনের বল
পাখ পাখালির কলোহলে
কত কথা পড়ে মনে
পথ চলতে মাঠে ঘাটে
মুক্ত বায়ু দোলা দিলে।
মুগ্ধ নবীন মুক্ত বাদল
ভাবনা ওদের কত অটল
যদি থাকত ডানা তারে
উড়াল দিত পাখির সারে।
বন অরণ্যে ঘুরে বেড়াত
মুক্ত প্রাণে সাধ মেটাত
অচেনা আর অদেখাতে
আপন ভাবনায় জানত।
যখন নদীর ঢেউ দেখত
সাত সমূদ্র পাড়ি দিত
গোধুলি বেলার চরণ ঢল
কত ভাবনা মনের বল।
-০-
পুতুলের বিয়ে
আজ পুতুলের বিয়ে
সানাই ঢলুক বাঁজবে
আত্মীয়রা সব কাঁদবে
পালকি চড়ে যাবে।
সকলে তো সেঁজে গুছে
পুতুলকে নিয়ে চলছে
পুতুল ছিল কত ভাল
সবাই যে কাঁদাল।
বর সেঁজে কে এল
পুতুলকে ছিনিয়ে নিল
এখানে সবার সঙ্গে ছিল
কেন একা চলে গেল।
পুতুল কী হারিয়ে গেল
না সে চির বিদায় নিল।
-০-
তুমি কে ?
সূর্যের রশ্মি তুমি
নীল আকাশের খেলা
ছড়িয়ে আছ সারা ভুবনে
মুক্ত ছবিতে আঁকা।
ফুলের পাঁপড়ি তুমি
আমার হৃদয়ে আঁকা
দৃপ্তি দিয়ে মুখটি ভরা
ঝলক দিলে চাঁদ সিতারা।
নও তুমি জ্বীন পৈরি
না কোন মুক্তা হীরা
তুমি কে ভাব একবার
শুধু মাটির দেহটা।
-০-

অনুভূতিগুলো সব আমার



পুরানা পল্টনের পুরনো বাসাটা ছেড়ে যখন আমরা খিলগাঁওয়ের একটা ছোট্ট দু”কামড়ার বাসায় এসে উঠলাম তখন মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন পরেই ২ তলার লাবনী আর ৩ তলার মিশি-ঐশী-ত্রয়ী এর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ছোট্ট বাসাটাকে আর খারাপ লাগতনা। বরং আমরা পিচচিগুলো তখন পুরা পাড়াটাকেই আমাদের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলাম! মাঠ ছিলনা বলে বাসার সামনের লম্বা রাস্তাটাই ছিল আমাদের সকাল-বিকাল খেলাধূলা করার আদর্শ স্থান।
আমি তখন পড়তাম ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ক্লাস থ্রিতে। ডে শিফটে ক্লাস থাকায় সারাদিন পাড়ার বব্ধুদের সাথে খেলাধূলা করে স্কুলে যেতাম। স্কুল ছুটি হত বিকাল ৪ টায়। কিন্তু বড় আপুদের দেরীতে ছুটি হওয়ায় স্কুল বাস ছাড়তো ৬টায়। এই ২ ঘন্টা স্কুলের মাঠে দাপাদাপি করে বেড়াতাম আমি,মিষ্টি,রিতু আর শান্তা আপু। ক্লাস ৫ এর শান্তা আপুর বুদ্ধিতে স্কুল ছুটির পর এমন কোন দুষ্টুমি নাই যে আমরা করতাম না! খেলাধূলা, গাছ থেকে আম পাড়া, ছোটদের ভুতের গল্প বলে ভয় দেখানো, যাদেরকে পছন্দ করতাম না তাদের কে টীজ করা—এমন নানান আজব আজব কান্ড করে বেড়াতাম আমরা শান্তা আপুর নেতৃত্বে!
এদিকে মিশি-ঐশী-ত্রয়ী,লাবনী আর আমি মিলে একবার পাড়ার বাচচাদের নিয়ে আয়োজন করে ফেললাম sports tournament। একদিন আমরা ঠিক করলাম বিল্ডিং এর সিঁড়ি ঘরে আশেপাশের গরীব ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাব। ওদেরকে নিজেদের বই-খাতা-কলম দিলাম,কিন্তু কয়েকদিন পর বাড়িওয়ালার ঝাড়ি খেয়ে আমাদের স্কুল ভন্ডুল হয়ে গেল! তাই বলে আমরা বসে থাকার পাত্রী ছিলাম না। পাশের বিল্ডিং এর টুসী আপুর ছেলে পুতুলের সাথে ধুমধাম করে লাবনীর মেয়ে পুতুলের বিয়ের ব্যাবস্থা করে ফেললাম। বিয়েতে পুরো পাড়ার সব বাচচারা এসেছিল!একদিন শুনলাম এই ছোট্ট বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমরা। ক্লাস ফোর এ ওঠার পর মর্নিং শিফটে চলে আসার সময় শান্তা আপুকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম। সেদিন শান্তা আপুরও চোখ ছিল ছলছলে।
এর ঠিক ৩ বছর পর হঠাৎ করেই একদিন স্কুলের মাঠে দেখি ঐশী! বুঝতে পারলাম ও আমাদের স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছে। আমি দারুন খুশি হয়ে ছুটে গেলাম ওর কাছে, উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললাম, “আরে ঐশী! আমাকে চিনতে পেরেছো? আমি রূম্পা!” ঐশী চোখ সরু করে বলল, “sorry,চিনতে পারছিনা”। ভাবলাম নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে। তাহলে হয়তো এই মেয়ে ঐশী না। ঐশী হলে কবেই আমাকে জড়িয়ে ধরতো!আমি একটু দমে গিয়ে বললাম “আরে, আমি ঐ যে খিলগাঁওয়ের রূম্পা। মনে নেই তোমার? তোমার নাম তো ঐশী, তাইনা?” এবার মেয়েটা খুব স্পষ্ট গলায় জবাব দিল, “জ্বি হ্যাঁ,আমি ঐশী। কিন্তু আমি সত্যি খুব sorry আপু, আমি আপনাকে চিনিনা। এই বলে ক্লাসের দিকে দৌড়ে গেল সে। আমি হতবাক হয়ে গেলাম, মাত্র ৩ বছরে ওরা আমাকে ভুলে গেল কি করে?
এভাবে কেটে গেল আরও ৫ বছর,সবে মাত্র কলেজে পা রেখেছি। সিনিয়র আপুদের HSC এর রেজাল্ট আজকে। বেলা দেড়টা থেকেই রেজাল্ট ঘোষণা হয়ে গেল আর আপুদের সাথে আমরাও শুরু করে দিলাম হইহল্লা! হঠাৎ মাঠের এক কোণে দেখতে পেলাম লম্বা,শুকনা মত একটা মেয়ে, বন্ধুদের সাথে খুব আনন্দ করছে। ভাল করে তাকাতেই বুঝতে পারলাম মেয়েটা আর কেউ নয়, আমার হারিয়ে যাওয়া শান্তা আপু! আমি পাশে দাঁড়ানো কয়েকজন বন্ধুকে বললাম, “আরে এ তো আমার শান্তা আপু! তোদের বলেছিলাম না ওর কথা? মনে হয় এ+ পেয়েছে!” ওরাও উত্তেজিত হয়ে বলল, “চল,শান্তা আপুকে অভিনন্দন জানিয়ে আসি!” ছুটে গেলাম শান্তা আপুর কাছে, জড়িয়ে ধরে বললাম, “শান্তা আপু, congratulation! কেমন আছ?” শান্তা আপু কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল, “thanks, কিন্তু তোমাকে তো চিনলাম না, আপু”। আমি আপুর হাত ধরে ঝাকিয়ে দিয়ে বললাম, “আমি রূম্পা, সেই যে আমি,তুমি,রিতু আর মিষ্টি স্কুলে কত মজা করতাম মনে আছে তোমার?” আপু আমার হাতের শক্ত মুঠো থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল, “তুমি মনে হয় ভুল করছো,রুম্পা নামে কাউকে আমি মনে করতে পারছিনা”। একগাদা বন্ধুর সামনে আমাকে অপমান করে শান্তা আপু তার বন্ধুদের ভীড়ে মিশে গেল!
৮ বছর আগে কেঁদেছিলাম শান্তা আপুকে ছেড়ে আসতে হবে ভেবে,আর আজ কেন অজান্তেই চোখের জল বেড়িয়ে গেল জানিনা। মানুষ এত সহজে প্রিয়জনকে ভুলে যায় কি করে? নাকি এটাই প্রকৃতির নিয়ম? শুধু আমিই হয়তো প্রকৃতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে প্রিয়জনদের মনে করে রেখেছি!

অবুঝ বালক



যখন তখন মন খারাপ হয়ে যায় রাজুর। সে কিছুতেই বুঝতে পারেনা, কেন তাকে সবাই এত অবহেলা করে? রাজুর কোন বন্ধু নেই। বিকেলবেলা পাড়ার সব শিশুরা যখন মাঠে খেলাধূলা আর চিৎকার- চেঁচামেচি করে বেরায়, ওকে তখন চুপচাপ বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রাজু খেলতে নামলেই পাড়ার ছেলে-বুড়োরা সব টিটকারী মেরে বলে ওঠে, “বুড়া পোলার শখ কত। বাচচাদের সাথে খেলতে আসছে!” রাজু ভেবেই পায়না,কেন সবাই তাকে বুড়া পোলা বলে ডাকে? ওর ও তো পাড়ার বাচচাদের সাথে সারাক্ষণ খেলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কেউ ওকে খেলায় নিতে চায়না!
রাজু শুনেছে ওর জন্মের কারণেই নাকি ওর বাবা ওদেরকে কে ছেড়ে চলে গেছে! কথাটা কতটুকু ঠিক, কে জানে। রাজু বোঝেনা,ও জন্মাতে সবার কেন এত রাগ? ওর বড় আপু আর ভাইয়াও খুব বাজে ব্যবহার করে ওর সাথে! ভাইয়াটা তো সময়-অসময়ে থাপ্পড় মেরে বসে ওর গালে! আর তাতে রাজু একটু কান্না করলেই হয়েছে, সারা বাড়ি মাথায় নিয়ে ভাইয়া বলতে থাকে, “বুড়া ছেলে বাচচাদের মত নাকি কান্না কাদতে বসেছে”। রাজু বুঝতেই পারেনা,কেন ভাইয়া ওর মত একটা ছোট একটা বাচচাকে ‘বুড়া ছেলে’ বলে? রাজুর তো বয়স মাত্র ১৬! এখনও মামনি ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়, গোসল করিয়ে চুল আচড়ে দেন। খেলনা গাড়ি আর লোগো সেটগুলোই ওর প্রিয় বন্ধু। না,না, আসলে মামনি রাজুর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। একমাত্র তিনিই রাজুকে বুঝতে পারেন।রাজুর সব আব্দার-অভিযোগ মনযোগ দিয়ে শোনেন আর নীরবে রাজুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন। সে যখন মা’র চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে, “মা,কাঁদো কেন?” মা তখন নীরবতা ভেঙ্গে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন।
রাজু স্কুলে যেয়ে শুনেছে আজ নাকি ‘মা দিবস’। ‘মা দিবস’ মানে কী,সেটা না বুঝলেও,এটা বুঝতে পারল যে আজ মা এর জন্য বিশেষ একটা দিন। রাজুতো এ পথিবীতে সবচেয়ে ভালোবাসে মামনিকে। তাই ও ঠিক করল আজ একটা কিছু উপহার দিয়ে চমকে দেবে মামনিকে। উপহার কেনার জন্যতো টাকা চাই। কিন্তু সে টাকা কোথায় পাবে? মা তো অফিসে গেছেন। আপুর কাছে টাকা চাইতেই সে ১০ টাকা দিয়ে বলল, “যা যা, আইস্ক্রীম কিনে খা,হাবলু”। রাজুকে সবাই ‘হাবলু’ ডাকে— ওর মন খারাপ হয়ে যায়।
অনেক চিন্তা ভাবনার পর রাজুর মনে পড়ল গত বছর বৈশাখী মেলায় মামনি তাকে একটা মাটির ব্যাঙ্ক কিনে দিয়েছিল, আর সেটাতে টাকা জমানোর জন্য মা তাকে মাঝে মাঝে ৫-১০ টাকা দিতেন। ব্যাঙ্কটা আলমারী থেকে নামিয়ে ভেঙ্গে ফেলল সে, পেল উপহার কেনার মত বেশ কিছু টাকা। সবাই বলে রাজু নাকি হাবলু,বোকা। কিন্তু আজই সবাই বুঝে যাবে যে ছোট রাজুর মাথায়ও কত বুদ্ধি আছে! কাছের একটা দোকান থেকে একটা কেক কিনে আনল সে। আম্মুকে খুশি করার জন্য ঘর-দোর গুছাতে লাগল। ঘর গোছাতে যেয়ে অবশ্য দুটো প্লেট ভেঙ্গে ফেলেছে ও! ভাগ্যিস ওগুলো আপু-ভাইয়া দেখেনি,তাহলে নির্ঘাত কান মলানি খেতে হত আজ।
আপু আর ভাইয়া একবার এসে দেখে গেল কেকের বাক্সটা। ভাইয়া ভেংচি কেটে বলল, ‘গবেট রাজু,কেক এনেছিস ভাল কথা, কিন্তু এই কেক কাটবি কিভাবে বলতো? নাকি তোর মত সবাইকে অভদ্র ভাবিস, যে বাচচাদের মত থাবা দিয়ে দিয়ে সবাই কেক খাবে!”এই কথা শুনে রাজু মাথা চুলকাতে থাকে,তাইতো, কেকটা কী দিয়ে কাটবে? কেক কাটার জন্য যেন কী লাগে? রাজুর বয়স ১৬ হলে কী হবে? সে তো আর সব বাচচার মত স্বাভাবিক হয়ে জন্মায়নি, আর সব মানুষের মত স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন নয় সে! সে ভাবল, মা তো কাপড় কাটার জন্য কেঁচি ব্যবহার করেন, তাহলে নিশ্চয়ই কেক কাটার জন্যো কেঁচি লাগে? সে দৌড়ে মামনির সেলাইয়ের বাক্স থেকে কেঁচিটা নিয়ে আসে। তাই দেখে আপু-ভাইয়া তো হেসেই খুন। আপু মাথায় চাটি মেরে রাজুকে বলল, “গাধা ছেলে, কেঁচি দিয়ে কেক কাটেনা, ছুরী দিয়ে কাটা হয়”।
রাজু মাথা চুলকায়, তাইতো সে তো ভুলেই গিয়েছিল যে কেক কাটা হয় ছুরী দিয়ে। কিন্তু সে এখন ছুরী কোথায় পাবে? বাজার থেকে কিনে আনবে? মামনি যে এক্ষুণি চলে আসবে অফিস থেকে! ঝেড়ে দৌড় দিল সে দোকানের উদ্দেশ্যে। ওর বড় মাথার ছোট বুদ্ধিতে একবারও ভেসে উঠলনা যে, বাসার রান্না ঘরেই রয়েছে ওর কাংখিত ছুরী! রাজু দৌড়াচ্ছে, দৌড়াচ্ছে। ওর মাথায় ঝড়ের বেগে বয়ে চলেছে একটা নির্দেশ, মা বাড়ি ফেরার আগেই ওকে ছুরী যোগাড় করতে হবে! বড় রাস্তায় উঠেও রাজুর মনে থাকেনা যে একটা ঘাতক ট্রাক ছুটে আসছে ওকে লক্ষ্য করে!
রাজু এ নিষ্ঠুর পৃথবী থেকে চলে যাওয়াতে আর সব মানুষজন হাঁফ ছেড়ে বাচলেও মামনির কান্না যেন আর থামতেই চায়না। এ পৃথবীর সবার কাছেই রাজু ছিল একটা বোঝা, কিন্তু মামনির কাছে রাজু ছিল অমূল্য ধন। গোরস্থান থেকে ফিরে এসে ভাইয়া পড়ার টেবিলে দেখতে পেল সেই কেকের বাক্সটা। বিরক্ত হয়ে বাক্সটা বাস্কেটে ফেলে দিতে যেয়েও কী মনে করে বাক্সের ঢাকনাটা খুলতেই দেখতে পেল একটা সুন্দর কেকের ওপর গোটা গোটা করে লেখা, “ ভালবাসি মামনিকে, ভালোবাসি আপু-ভাইয়াকে”। অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে নামল, এই প্রথম রাজুর জন্য কাঁদল ভাইয়া!

Agar Tum Kaho


Main Koi Aisa Geet Gaoon
Ki Aarzoo Jagaoon
Agar Tum Kaho
 
Tumko Bulaoon
Ye Palkhein Bichhaoon
Kadam Tum Jahan Jahan Rakho
Zameen Ko Aasmaan Banaoon
Sitaron Se Sajaoon
Agar Tum Kaho
 
Main Titliyon Ke Peechhe Bhagoon
Main Jugnuon Ke Peechhe Jaoon
Ye Rang Hai Vo Roshni Hai
Tumhare Paas Dono Laoon
Jitni Khushbuain Baag Mein Milein
Main Laoon Vahan Pe
Ki Tum Ho Jahan Jahan Pe
Ek Pal Bhi Thehro
Main Gulsitaan Banaoon
Agar Tum Kaho
 
Agar Kaho To Main Sunaoon
Tumhein Haseen Kahaniyaan
Sunogi Kya Meri Zabani
Tum Ek Pari Ka Daastaan
Ya Main Karoon Tumse Bayaan
Ki Raja Ko Rani Mili Thi Kahan
Kahaniyon Ke Nagar Mein Tumhein Leke Jaoon
Agar Tum Kaho