[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

দুষ্টু ভূতের কান্ড


দুষ্টু ভূতের কান্ড

মে ২৪, ২০১২


নীরুদের বাড়ীর সামনে বিশাল বিশাল তিনটা তাল গাছ আছে, এই গাছগুলো নীরুর দাদীর নিজ হাতে লাগানো তাই নীরুদের বাড়ীটা বানানোর সময়ই দাদু সেই গাছ তিনটাকে কাটতে দেন নি। স্ত্রীর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য। গাছ তিনটা বেশ ভালই তাল পাওয়া যায়, নীরুরা নিজেরাও খায় পাড়া প্রতিবেশীকেও দেয়।
নীরু ৭বছরের মেয়ে, ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। বাবা মা দুজনই ডাক্তার, তাই তারা খুব ব্যস্ত থাকেন, বাড়ীতে নীরু দাদু আর আয়ার কাছেই থাকে। নীরু স্কুলের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী, এখন পর্যন্ত ক্লাসে কখনো সে দ্বীতিয় হয়নি। দাদু নীরুকে অসম্ভব আদর করেন এই কারণে নীরু যেমন ভাল ছাত্রী তেমনি ভাল একটি মেয়ে, সে খুব বাধ্য এবং শান্ত স্বভাবের। নীরু স্কুল থেকে ফিরে দাদুকে প্রতিদিন পেপারের হেডলাইনগুলো পড়ে শুনায়, দাদু চোখে কম দেখে তাই। আর দাদুও নীরু পেপার পড়ে না দিলে পেপার পড়েন না। নীরুর স্কুলে ১ম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে আর দুই সপ্তাহ পরে, তাই নীরু একটু বেশী পড়াশুনায় ব্যস্ত, পরীক্ষায় তাকে প্রথম যে হতেই হবে।
নীরুদের সেই তিনটি তালগাছে দুটো ভূত পরিবারের বসবাস, দুটো পরিবারের একটাই সন্তান, তার বয়সও ৭বছর। ভূতগুলো কিন্তু কোন রকম মানুষের কোন ক্ষতি করে না, তাই নীরুরা জানে না যে ওই তাল গাছে ভূত থাকে। ভূতের বাচ্চাটাকে তার বাবা মা আদর করে নিপ্পু ডাকে। একমাত্র সন্তান বলে একটু বেশী আদর পায় এই নিপ্পু, আর এই আদরে সে মহা দুষ্টু হচ্ছে দিনকে দিন। সারাদিন নিপ্পুর বাবা মা আর চাচারা বাইরে থাকে খাবার জোগাড় করার জন্য, নিপ্পু একা গাছে থাকে। একদিন নিপ্পু নীরুর বারান্দায় তাকিয়ে দেখে নীরু খুব মন দিয়ে পড়াশুনা করছে কোন দিকে তাকাচ্ছেও না। নিপ্পুর মাথায় দুষ্টামি খেলে গেলো। সে আস্তে করে গাছ থেকে নীরুর বারান্দায় নেমে আসল। নিপ্পুকে নীরু দেখতে পায়নি কারণ ভূতদের কখনো দেখা যায় না। নিপ্পু নীরুকে জ্বালাতন করার বুদ্ধি বের করল আর সেই ভাবে তার দুষ্টামি শুরু করল।
নীরু তার অংক বই থেকে অংক করছিল, প্রথম সাময়িকে পৃষ্ঠা ১ থেকে ৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অংক করতে হবে, এই পৃষ্ঠা থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন হবে। নীরু একমনে অংক করছিল। হঠাৎ নীরু খেয়াল করলো সে তো একটু আগেই ১২নম্বর পৃষ্ঠার অংক করে ফেলেছে সে তো ১৭নম্বর পৃষ্ঠার অংক করছিল তাহলে এই পৃষ্ঠা কে উল্টালো। নীরু বাইরে তাকিয়ে দেখে না সে রকম তো বাতাস নেই, তাহলে পৃষ্ঠা কি করে উল্টে গেলো। নীরুর ভাবনা দেখে নিপ্পু মিটি মিটি হাসতে লাগল কারণ পৃষ্ঠাতো সে উল্টে দিয়েছে নীরু তো টেরই পায়নি। নীরু আবার তার পড়ায় মন দিল।
নিপ্পু একটু পরে তার বাসায় ফিরে গেলো কিন্তু মাথায় হাজারটা দুষ্টু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল তার। সে ঠিক করলো প্রতিদিন নীরুকে সে জ্বালাবে। নীরুকে জ্বালিয়ে সে মজা নিবে। যা ভাবা সেই কাজ। তার পরের দিন আবার সে নীরুর রুমে গেলো। নীরু ড্রয়িং করছিল। নদীর পানিতে নৌকা ভাসছে আর দূরে মাঝি নৌকা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবার পরীক্ষায় টিচার এই থিম দিয়েছে। তাই নীরু তার ড্রয়িং বুকে একমনে নদী আর নৌকার ছবি আকছিল। হঠাৎ নীরু খেয়াল করে দেখে তার নদীর ছবি কেমন করে যেনো কালো কালিতে ভরে গেছে। নীরু খুব অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল, সে তো ওখানে হালকা নীল রং দিয়েছিল, তাহলে এই কালো রং হলো কি করে?? নীরু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো, নীরুকে দেখে নিপ্পুর সে কি হাসি, কিন্তু সেই হাসির শব্দ নীরুর কানে পৌছাল না।
আরেকদিন নীরু দুপুরে রুমে বসে গল্পের বই পড়ছিল, দাদু ঘুমে, আর আয়া গোছলে গিয়েছে, এমন সময় নিপ্পু বাসায় এসে হাজির, ভাল করে পুরো বাড়ী তাকিয়ে নিপ্পু তার দুষ্টামি শুরু করলো। প্রথমে রান্না ঘরে ঢুকে ঢেকে রাখা খাবারগুলোর ঢাকনা সরিয়ে দিল, তার পরে সবজীর ডালি নীচে ফেলে দিল, এর পরে ড্রয়িং রুমে এসে টিভি অন করে দিয়ে সাউন্ড বাড়িয়ে দিল, ঠিক এমন সময় নীরুর বাবা আর মা বাসায় ফিরে আসলো, তারা তালা খুলে দেখে ড্রয়িং রুমে টিভি চলছে আর নীরু দাড়িয়ে টিভি দেখছে, আসলে নীরু এতো জোরে কে টিভি ছেড়েছে তাই দেখতে ড্রয়িং রুমে এসেছিল, কিন্তু নীরুর বাবা মা ভাবলো নীরুই টিভি ছেড়ে দেখছে। নীরুর মা খুব রাগ হলেন আর নীরুকে বকা দিতে লাগলেন, নীরু বার বার বলতে মা সত্যি আমি টিভি ছাড়িনি, আর ওদিকে আয়া গোছল সেড়ে রান্না ঘরে ঢুকে খাবারের এমন অবস্থা দেখে নীরুর মা কে বলল নীরুই এই কাজ করেছে, সে তো সব খাবার ঢেকে রেখে গিয়েছিল। নীরুর খুব কান্না পেলো, সে তো এমন দুষ্টামি করে না, আর সে কখনো মিথ্যা কথাও বলে না কারণ দাদু তাকে শিখিয়েছে মিথ্যা বলা অন্যায় পাপ। তবু কেনো মা তার কথা বিশ্বাস করলো না, সে আর দাদু ছাড়াতো বাসায় কেউ ছিল না তবে কে করল এমন দুষ্টামি। নীরুকে যখন ওর মা বকছিল নীপ্পু মহা উল্লাসে আনন্দ করছিল আর ভাবছিল কি মজা নীরু বকা খাচ্ছে।
এই ভাবে প্রতিদিন নীপ্পু কোন না কোন দুষ্টামি করে যায় আর নীরু বকা খায়। এই বকা খাওয়ার ফলে নীরু খুব কষ্ট পেতে লাগলো, যা সে করেনা তার জন্য কেনো তাকে বকা খেতে হবে আর মা বাবা কেনো তাকে মিথ্যাবাদি বলবে। এই সব কারণে নীরুর পড়ার প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেলো। সে ঠিক মতো পড়াশুনা করতে পারছিল না।
পরীক্ষার দিন, নীরু স্কুলে গিয়েছে পরীক্ষা দিতে, প্রশ্ন হাতে পেয়ে নীরুতো চোখ ছানাবড়া, কয়েকটা প্রশ্ন কমন পড়েছে বাকীগুলোর উত্তর কিছুতেই সে লিখতে পারছিল না। নীরু খুব কাদতে লাগল, নীরুর কান্না দেখে নিপ্পুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো, সে ভাবতে লাগল তার কারণেই নীরুর আজ এই অবস্থা, নীপ্পু তখন বুদ্ধি বের করল কি করে নীরুর পরীক্ষা ভাল করা যায়। ভূতদের যেহেতু দেখা যায় না তাই সে প্রশ্নগুলোর উত্তর যে বই এর পাতায় আছে সে পাতাটি নীরুর সামনে এমন ভাবে ধরলো নীরু ছাড়া আর কেউ দেখতে পাবে না, আর নীরুকে করুণ স্বরে সব খুলে বলল, তার দুষ্টামির কারণে নীরুর আজ এই অবস্থা, সে নীরুর কাছে ক্ষমা চাইলো। নীরু নীপ্পুর কথায় হেসে দিল আর বলল নীপ্পু আমি কখনো নকল করিনি নকল করা অন্যায় তাই আমি নকল করবো না, এই পরীক্ষাটি হোক না খারাপ তবু নিজে যা পারি তাই লিখবো, তুমি ভেবনা, পরের পরীক্ষা আমার অনেক ভাল হবে আমি পরীক্ষায় প্রথম হবোই।
নীরুর কথা শুনে নিপ্পু খুব লজ্জা পেলো, নীরু কতো ভাল একটা মেয়ে সুযোগ পেয়েও সে দেখে লিখলো না আবার তাকে ক্ষমা করেও দিল। নীরুর এই আচরণ দেখে নীপ্পু মনে মনে ওয়াদা করলো সে আর কখনো কাউকে এইভাবে জ্বালাবে না এই রকম দুষ্টামি করবে না।
নীরু কোন রকম পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে আসলো, আর নীপ্পু তার বাসায় ফিরে গেলো। নীরুকে আর কখনো নিপ্পু জ্বালাতন করেনি, নীরু পরের সব পরীক্ষা খুব ভালভাবে দিল।
নিপ্পু আর নীরু খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেলো, নীরু নিপ্পুকে লেখা পড়া শেখাতে লাগল, দাদু তাকে যে সব উপদেশ দেয় তা নিপ্পুকে সে বলে যেনো নিপ্পু কখনো আর কোন অন্যায় দুষ্টামি না করে, যাতে করে নীপ্পুর জন্য আর কারো কোন ক্ষতি না হয়। তাদের এই বন্ধুত্বের কথা কেউ জানে না কারণ নীরু কাউকে কিছু বলে না, আর নীরু জানে কাউকে বললেও তো কেউ বিশ্বাস করবে না।
নিপ্পু এর পর থেকে খুব ভাল হয়ে চলতে লাগল। তার এই পরিবর্তন দেখে নিপ্পুর বাবা মা ও খুব খুশী হল। ভূত হলেও তাদের মনমানষিকতা ভাল ছিল আর নিপ্পু সেই মানষিকতার হচ্ছে দেখে বাবা মা চাচারাও খুব খুশী হল।
(গল্পটি ব্লগের ছোট্ট ব্লগারদের উৎস্বর্গ করা হলো। ওদের একটু ভাল লাগলে আমার লেখার স্বার্থকতা)

সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

অপ্সরী কান্তার বর্ষবরণ ...





কান্তা। আমাদের অপ্সরী কান্তা।
গতকাল পহেলা বৈশাখ কান্তার বয়স ৬ মাস হলো। ওর জীবনের প্রথম বর্ষবরণ। নববর্ষে কান্তা পরেছিলো ২০ বছর আগেকার লাল-সবুজ পেড়ে হলুদ শাড়ি। আমার ছোটবেলার শাড়ি এটা। তখন অনেকটা দুষ্টুমি করেই তুলে রেখেছিলাম, আমার মেয়ে পরবে বলে।




কান্তা পৃথিবীতে আসার প্রায় দেড় বছর আগেই ওকে নিয়ে গল্প-কবিতা লেখা শুরু। তখন ওর নাম লিখতাম “অপ্সরী”। এখন সে ই “অপ্সরী-কান্তা” । কখনও লিখেছি আমি, কখনও বা ভাইয়া। ভাইয়া আর আমার যৌথ প্রচেষ্টায় লেখা তেমনি একটা ছড়াঃ

** ছোট্ট পরী অপ্সরী **

আকাশ থেকে নেমে এলো
ছোট্ট একটা পরী,
বাবা-মায়ের চোখের মণি
নাম তার অপ্সরী।


দুরন্ত সে, মিষ্টি ভারী,
লক্ষ্মী মেয়ে আছে,
খুব আদুরে, ঘুরে ঘুরে
ফ্রক ছড়িয়ে নাচে ।


ডাকি তাকে ময়না-টিয়া,
আরও কতো নামে,
মিছামিছি ভান করিয়া
খুঁজি ডানে বামে।


চুলে ঝুঁটি, ফোকলা দাঁতে
হেসে ফেলে ফিক,
মানিক সোনা, হীরার কণা,
চাঁদের বুড়ি ঠিক।


বড় মামা এলে পরে
ভীষণ খুশি তার,
টাট্টু ঘোড়া, কাঁধে চড়া,
কে পায় নাগাল আর !


যে ই মা তাকে খাবার খেতে
ব্যস্ত করে তোলে,
এক লাফে সে ওঠে গিয়ে
বড় মামার কোলে।


দিনের শেষে বাবা তাহার
যেই ফিরেছে ঘরে,
জড়িয়ে ধরে চুমু সে খায়
বাবার কপাল ‘পরে।


বুকের সাথে জাপটে তারে
বাম হাতে আলগোছে,
ক্লান্ত বাবা কপাল থেকে
ডান হাতে ঘাম মোছে।


ঘরে ফিরে চোখ পড়ে যেই
সোনা মেয়ের মুখে,
বিশ্ব জয়ের শক্তি-সাহস
ফেরে বাবার বুকে।








আমার কান্তার মঙ্গলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

বুবুর অভাব


বুবুর অভাব



আজও সেথা পাখি ডাকে
ফুল ফোটে শোভাতে,
শিশিরেরা টুপটাপ
ঝরে পড়ে প্রভাতে।


শেফালিকা ঝরে ঝরে
সাদা হয় ভূমিতল,
নেচে নেচে উড়ে ফেরে
প্রজাপতি চঞ্চল।


সাঁঝ হলে চাঁদ আসে
বাঁকা হাসি হাসিয়া,
জোনাকিরা মেতে ওঠে
তারে ভালোবাসিয়া।


চাঁদ যেথা জোসনার
রুপারং চাদরে,
পৃথিবীকে রাণী করে
ঢেকে দেয় আদরে।


তারার প্রদীপ জ্বেলে
আকাশের পরীসব,
কার যেন পথ চেয়ে
নেই ঠোঁটে কোন রব।


সেখানে, সে ছোট গাঁয়ে
ছোট এক আঙিনায়,
জোসনারা দোল বেঁধে
উঁকি দেয় সন্ধ্যায়।


সেথা এক ছোট মেয়ে,
ছোট হাত, ছোট পা,
আলুথালু ছোট চুল,
বড় চোখ, নাঙা গা।


উঠোনের একধারে
সন্ধ্যায় কি আশায়
টলমল চোখে চেয়ে
বসে থাকে হোগলায়।


যুগল ভ্রমরা যেন
তার কালো দুই চোখ,
চঞ্চল মন তার
খুঁজে মরে কতো লোক !


এ উঠোনে যার কোলে
শুয়ে-বসে এতোকাল,
রূপকথা শুনে, হেসে
টোলে ভরে যেতো গাল;


অপূরণ র’লে কভু
একটা অভাব তার,
অবহেলে গেলে কেউ
একখানা আবদার,


ছুটে এসে মুখ ঢেকে
যে বুবুর আঁচলে,
একাকার করতো সে
জলে আর কাজলে।


আজ সেই বুবু তার
মুখ চুমে হাসে না;
তারে আজ কেউ আর
অত ভালোবাসে না।


বুকে টেনে বুবু তার
অভিমান ভুলাতো,
যে চুলে বুবুর হাত
স্নেহ-ছোঁয়া বুলাতো;


সে চুলে বাতাস যেন
দোলা দিয়ে বলে যায়,
“বড় হলে সব বুবু
এমনি তো চলে যায়” ।


বুবু আজ সংসারী
আছে ঘর আছে বর,
রূপকথা বলিবার
কোথা তার অবসর !


বুবু নেই, যেন–কোন
ভালোবাসাবাসি নেই,
ছোট মন ভার তার,
মুখে সেই হাসি নেই।


চুপচাপ বহুক্ষণ
বসে থেকে জোসনায়,
অবশেষে ছোট মেয়ে
ছোট পায়ে ঘরে যায়।


বুবু ফের আসবেই
ছোট মনে বিশ্বাস,
ছোট বুকে ঝড় তোলে
চেপে রাখা নিঃশ্বাস।


_____০০০_____

এদিকে বুবুর চোখে
টলমল করে জল;
মনে পড়ে ছোট মুখ,
ছোট পা – ছোট মল।


*********************
১৬ মার্চ, ২০০৪ ইং।

 বুবু, শান্তার জন্য

বাঁধন দেবো .



বাঁধন দেবো
অক্টোবর ১২, ২০০৭



কভুও তুমি কোন কালে
আমায় ছেড়ে চাইলে যেতে,
তোমায় কিছু না জানিয়েই
অদৃশ্য ফাঁদ রাখবো পেতে,


ফাঁদের মাঝেই বাঁধন দিয়ে
তোমায় আমি রাখবো ধরে,
যেথায় থাকো থাকবে আমার
আপন হয়ে চিরতরে ।


এই যে মহাবিশ্বটাকে
আমার “হৃদয়” করে নেবো,
সেই হৃদয়ে তোমায় আমি
শ্বাশত এক বাঁধন দেবো।


বিশ্বরূপী হৃদয় ছেড়ে
কোথাও যেতে পারবে না যে,
এই জনমে, সব জনমে,
থাকতে হবেই হৃদয়-মাঝে।

জ্যামিতিক ভালোবাসা



জ্যামিতিক ভালোবাসা

মে ১৪, ২০১২



হাসান, সেইসব ছেলেদের মধ্যে একজন যাদের জীবন কখন ও থেমে থাকে না ।
যথেষ্ট মেধাবী, হ্যান্ডসাম এবং সদা হাস্যজ্জল একটা ছেলে সে । মোটামুটি সবার কাছেই জনপ্রিয় একটা মানুষ । আর মেয়ে মহলে ছিল তার অপ্রকাশিত আলাদা একটা স্থান । যদিও সে কখনো সে স্থান এর ধার কাছ দিয়েও মারায়নি । এটা নিয়ে তার মাথা বেথাও ছিল না । কিন্তু এ স্থান এর জন্য দু একবার যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েনি সে তা না, কিন্তু তার জন্মসুত্রে পাওয়া বিবেক নামক বস্তুটা একটু বেশি ছিল বলেই রক্ষা ।
যাই হোক, সবার কাছে ভাল ছেলে হিসেবেই তার পরিচিতি ছিল ।
হাসান এর খুব অদ্ভুত একটা নেশা ছিল ঘুরে বেরানোর । নতুন জায়গাতে যাওয়ার প্রতি ছিল অদম্য আগ্রহ । এ জন্যই তার এমন কিছু বন্ধু হয়েছিল, যারা তার লাইফ এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যায় । এদের একজন রাহাত ।
রাহাত, হাসানের খুব ই ক্লোজ ফ্রেন্ড । দুজনের মাঝখানেই খুব কম ই কিছু ছিল যা একজন আর একজনের টা জানতো না।
এবং তারা দুজন এর মধ্যে একটা জিনিস কমন ছিল আর তা হল দুজন ই ক্লাস এ মারাত্মক ইরেগুলার । কিন্তু হাসান এক্সাম এ পাস করে যেত এর আগের রাত্রে পড়ে । আর রাহাত এর পাশ?? ওকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিত, ” হাসান আছে না পাশে!!!”
এমনি একদিন এক্সাম শেষে বাইরে এসে দাড়িয়ে থাকে রাহাত।
সেই পুরান কাহিনি…
হাসান এখন ও এক্সাম গার্ড এর সাথে কথা বলছে। কারণটাও বেশি কিছু ছিল না, রাহাত ওর খাতা দেখে লিখছিল আর স্যার খাতা নিয়ে গেছে গেছেন হাসানের !!!
রাহাত কে খুব টেন্সড হয়ে দাড়াতে দেখল পুষ্পিতা । চশমাটা ঠিক করতে করতে রাহাত এর কাছে গেল ।
“কিরে, ঐ রকম বলদের মত দাড়িয়ে আছিস কেন?”, জিজ্ঞাসা করল সে ।
এতক্ষন ওকে খেয়াল করেনি, কণ্ঠ শুনে চমকে গেল।
“এইতো, হাসানের একটু ঝামেলা আর কি!!! স্যারের সাথে কথা বলছে।” আর দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল রাহাত।
“ঝামেলা মানে!! আবার তোকে দেখাতে যেয়ে স্যারের কাছে ধরা খেয়েছে?” হেসে দিল পুষ্পিতা।
ওর হাসির দিকে তাকিয়ে রইল সে , এত সুন্দর করে হাসি আর কাউকে হাসতে দেখেনি সে। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে। সাঁরা জীবন দেখতেও চায় । কিন্তু হাসিতা হয়তো আর এক জনের জন্য, যে গাধাটা এই মুহূর্তে স্যারর সামনে কাঁচুমাচু করে হয়ে সরি চাচ্ছে ।
“ওয়াও!! আমি তো সেলেব্রিটি হয়ে গেলাম ! দুজন আমার আগমনের জন্য অপেক্ষারত …”, হাসতে হাসতে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল ।
“স্যার কি বলল?”, আগ বারিয়ে বলে ফেলল পুষ্পিতা । বলেই বুঝল বেপারটা কেমন জানি হয়ে গেছে ।হাসান ওর দিকে একটা এলিয়েনের দৃষ্টি দিয়ে রাহাতের দিকে ফিরল।
“সেই পুরান গ্যাঁজ । এক্সাম হল এ দেখাদেখি করা যাবে যাবে না । অনৈতিক কাজ… ব্লা ব্লা…”
রাহাত খেয়াল করল পুষ্পিতার মুখ টএ কেমন স্তিমিত হয়ে গেল ।
“পুষ্পি, চল আজ কে তিনজন এ এক সাথে লাঞ্চ করি”, ওকে খুশি করার জন্য কথাটা বলল।
“আমি রাজি।”, হাসান ের মুখ থেকে বের হল কথাটা । ” কিন্তু বিল দিতে হবে ওকে”, আঙ্গুল তুলে ইশারা করল পুষ্পিতার দিকে… হেসে দিল পুষ্পিতা ।
অবাক হয়নি রাহাত । যে ছেলে একটু আগেই ওকে নেগ্লেক্ট করে মন খারাপ করল, এখন তার কথাতেই হাসছে!! কিন্তু অবাক হল পুষ্পিতা । নিজেকে পাগল মনে হল তার…
“আচ্ছা, আমি কি এখন চলে যাব!!!”, কাশি দিয়ে একটু মজা করতে চাইল রাহাত ।
ভুরূ কুচকে গেল রাহাতের । পুষ্পিতা লজ্জায় আর এক দিকে তাকাল।
“নাহ ভাই, ভয় পাইছি । গেলে তোর জিনিস টাকে নিয়ে যা, নাহলে আজকেও তাহলে একজন কাঁদতে কাঁদতে নিজের সব পরার বই ছিরে ফেলবে। আর তার মা আমাকে ফোন করে কিছু অসম্ভব রেকুয়েস্ট করবেন।” মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল কথাটা হাসান।
কিন্তু ইফেক্ট হল অন্য রকম ।
“হাসান তুমি…” কথাটা কথাটা শেষ না করেই অন্য দিকে দৌড়ে ছুটে গেল পুষ্পিতা । রাহাত বুঝল আজ কে আসলেই অনেক কান্না করবে ওর পুষ্পি।
“দোস্ত, প্লিজ, মেয়েটা তোকে অনেক লাইক করে… এরকম করিস কেন?” হাসানের দিকে তাকাল রাহাত।
“দেখ, আমি তো ওকে আর লাইক করি না। আর তাছাড়া , তুই ওকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করিস। এইটা সে বুঝে না?”একটু বিরক্তই হল যেন হাসান,”তোকে ছাড়া ও চলতে পারবে না। এখন যা, গিয়ে কান্না থামা।”
বলেই গটগট করে ছলে গেল রাগ দেখিয়ে। রাহতা ও দ্রুত পুষ্পিতা কে খুজতে লাগলো।
“আর এ গাধি, যাদের কে বেশি ভালবাসবি, তারাই বেশী কষ্ট দিবে”, ফাকা ক্লাসে একা বসে থাকা পুষ্পিতার মাথায় হাত রেখে বলল সে, “এটাই পৃথিবীর নিয়ম”
“আমার সাথেই এমন কেন হয় বলতো?”, ফোপাতে ফোঁপাতে বলল সে, “জানিস, আমার এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে।”
“থাপ্পর মেরে দাত ফেলিয়ে দিব”, চিৎকার করে উঠল রাহাত,”এই ধরনের কথা আমার সামনে আর বলবি না”
“তা ই মার।”কমে আশা ফোঁপানিটা আবার বেরে গেল,”তুই যদি কাউকে ভালবাসতি, বুঝতি আমার অবস্থাটা কি!”
হেসে দিল রাহাত। মেয়েটা জানেই না যে সে তাকে কতটা ভালবাসে । কতটা ভালবাসলে একজন তার ভালবাসার মানুষটির সুখের জন্য তার বন্ধুর হাত এ তুলে দিতেও কুণ্ঠা বোধ করে না।
“ধুর গাধী, তুই কিছুই জানিস না।”, আবার হাসল রাহাত,”আমিও একটা মেয়েকে প্রচণ্ড ভালবাসি, এত বেশি ভালবাসি যে তার জন্য প্রতি রাত কাঁদি”
হটাত কান্না থেমে গেল পুষ্পিতার । জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকলো রাহাত এর দিকে, যেন ভুত দেখছে!
“কি বললি? ত্র মাত ভুত এর সাথে কে প্রেম করবে???”চোখে পানি নিয়ে এক অদ্ভুত হাসি দিল সে।
“হিহি। কেন…দুনিয়াতে পেত্নির অভাব আছে?”, ভাব নাওয়া কন্থে বলল সে।
“আহেম আহেম। তা মেয়েকে দেখাবি না?” চশমাটা বেঞ্ছ থেকে তুলে পরতে পরতে বলল পুষ্পিতা।
“একদিন দেখাবোনে…অনেক সুন্দর রে মেয়েটা”, কণ্ঠটা কেমন জানি ধরে এল ওর।
“আমার থেকেও? হিহি…” ভেংচি কাটল পুষ্পিতা ।
“হ্যাঁ রে। তর মতই। অন্নেক সুইট একটা মেয়ে… জানিস, ওর হাসিটা ওর থেকেও অনেক বেশী সুন্দর…শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে…মনে হয় এই মেয়েটাকে ছাড়া আমি বাচতে পারব না… ওকে জীবনে না পেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব…”, একটু থামল সে,”জানিস, জীবন এ একবার ই হাত ধরেছি ওর।… একবার পিছন থেকে এসে চোখ বন্ধ করে ধরছিল…বুঝতে পেরেছিলাম কে…তবু হাত টা ধরে না ছেনার অভিনয় করছিলাম…। বোকাটা বুঝতে পারেনি।”
ক্রিং ক্রিং…
পুষ্পিতার মোবাইল বাজছে।
“আম্মু কল দিছে রে… যাই, তোর গল্প কাল শুনব”, বলেই রাহাত এর হাত টা ধরল সে,”তুই অনেক লাকি রে। তোকে খুব হিংসা হচ্ছে”, কথাটা বলে চলে গেল সে।
অনেক কষ্টে আটকে রাখা চোখের পানি গুলোকে এবার বিশ্রাম দিল রাহাত…। একটু বেশি ই কি বলে ফেলছে!!! ক্লাস ৭ এর সেই হাত ধরার কথাটা বোধ হয় মনে নেই ওর… মনে জানি নাও আসে সেই প্রার্থনা করল…
ভার্সিটি গেট ক্রস করতেই শুনতে পেল রাহাত নাম এ কে জানি ডাকছে। পাশে তাকাতেই দেখল বরকত এর দকানে হাসান নাম এর মর্কট টা বসে আছে।
“তো মিস্তিরি লাভগুরু, আজ কে কিছু হল!!” চেচাল হাসান, হাসছে সে।
“কি আর হবে…চল হাটতে হাটতে কথা বলি”
“আমার প্লান সাক্সেস্ফুল??”, বিজয়ের হাসি দিল হাসান।
“মানে?…” যারপনাই অবাক হল রাহাত,”কি দরকার ছিল মেয়েটাকে কাঁদানোর?”
“ধুর বাদ দে…এখন কাহিনি ক…”
দুজন এ হাটতে শুরু করল…
কএকদিন পর বিকালবেলা।
“কফি হাট” এ বসে আছে রাহাত। হাসান ওর মা কে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে গেছে। এখন হয়তো ইয়া লম্বা লাইন এ বসে আছে । তাই একা একা ড়আরকাজ নাই দেখে কফি খেতে চলে এসেছে সে। হাত এ মোবাইল। ফেসবুক এ গুতাগুতি করছে। হটাত এক জোড়া পরিচিত হাত এসে চোখ বন্ধ করে ফেলল ওর।
চিনতে পারল রাহাত ।
“কে? মৌ?”, মিথ্যাটা খুব নিখুত হল …
“তাহলে তোর জিএফ এর নাম মৌ!!”, হেসে দিল পুষ্পিতা ।
চোখ থেকে হাত টা সরিয়ে ওর দিকে ফিরল রাহাত।
“কত্ত খারাপ”, অবাক হওার ভান করল সে, “নাম টা বের করে নিলি? বাট প্লিজ আর কাউকে বলিস না”
“ওকে ওকে… বলব না…কিন্তু আমাকে দেখাবি না তোর বউকে?”
“আর এ, দেখাব তো…সবুরে মেওওা ফলে” বলল রাহাত, “আচ্ছা তোকে আজ কে এত খুশি লাগছে কেন বলতো!! সেজে গুজে এসেছিশ যে।”
“আই এম ইন এ রিলেশনশিপ ইয়ার।”, খুসিতে অনেকটা চেচাল পুষ্পিতা।
“মানে?” আহত দেখাল রাহাত, “হাসানের কি হবে?”
“আমার চোখ খুলে গেছে” বিদ্বানের মত বলল সে, “যে আমাকে ভালবাসে না, তাকে আমি কেন ভালবাসব। তাই…?”
হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রাহাত ।
“দুরের ঐ আকাশের থেকে বাগানের প্রজাপতির রংটাই বোধ হয় অনেক বেশি সুন্দর…আগে বুঝতাম না”, একটানা বলে গেল সে,”আর এখানে আসছি কেন জানিস? আজ আমাদের ফার্স্ট ডেটিং… একটু পরেই ও চলে আসবে।”
হটাত কি জানি হল রাহাতের…ধাম করে উথে দারাল…”যাই রে” বলেই গটগট করে হেঁটে বের হয়ে গেল সে…
পুষ্পিতা যাতে দেখতে না পারে ওর চোখের পানিগুলো…
খুব কস্ট লাগছে রাহাত এর। চোখ থে নিঃশব্দ অশ্রুধারা ই তার প্রমাণ। আজ বোধ হয় র থাম্বেও না…
সে কল্পনা করতে পারেনি…এতদিন যখন সে হাসান কে ভালবাসত, এমন লাগেনি কখন ও… অথচ আজ আর কারো কথা শুনে অন্তর টা কেমন জানি আয়নার মত ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল…
ফোন টা বেজে উঠল… পচকেত থেকে বের করতেই দেখে পুষ্পিতার…
“ঐ হাদারাম, চলে গেলি কেন? দেখলি না আমার বর কে!”, অপাশ থেকে রাগত কণ্ঠ শুনল রাহাত,” যাই হোক, তোর উইশ। … ইচ্ছা হলে এফবি তে আমার রিলেশন স্ট্যাটাস এ ওর নাম টা দেখে নিশ”, খট করে কেতে দিল ওপাশ থেকে।
আসলেই ত…কি করল রাহাত এতা… পুষ্পিতার বেস্ট ফ্রেন্ড ও…কিন্তু আজ কের দিনে ওকে এভাবে হার্ট করে চলে আসলো কি করে সে…!!!!
কি মনে করে ফেসবুক এ ঢুকল রাহাত…
নিউজ ফিড টা চেক করতেই দেখতে পেল, “সাদিয়া সুলতানা পুষ্পিতা ইন এ রিলেশনশিপ”…
কমেন্ট চেক করল, ওয়াল দেখল, নাহ কারো নাম তো খুজে পেল না…।
:O
“এটা কি হতে পারে!!” নিজে নিজেই ভাবল সে… তবু খুতখুতে মন টাকে সান্তনা দিতে রিলাশন ফোল্ডার া গেল সে…স্পস্ট দেখতে পেল …
“ইউ হ্যাঁভ এ রিলাশনশিপ রিকুয়েস্ট। সাদিয়া সুলতানা পুষ্পিতা ওয়ান্টস টুঁ বি উয়র গার্ল ফ্রেন্ড”……………………………………………………………………………
আবারো ফোন দিয়েছে পুষ্পিতা…প্রথম বার ধরল না রাহাত…। দ্বিতীয়বার যখন ধরল , ওপাশ থেকে চিৎকার ভেসে আসলো,
“আমাকে পেয়েছিস কি…এতক্ষন ওয়েট করে থাকতে পারবো না …জলদি জলদি প্রপোজ কর…। নাইলে আর জিন্দেগি তে সামনে আসবি না…।”ধরে আসা টানা কণ্ঠে বলে গেল রাহাতের পুস্পি।
আর নিজেকে আটকাতে পারল না রাহাত, “I LOVE YOU পুষ্পিতা, I LOVE YOU more than you can imagine”, অস্রুসিক্ত কণ্ঠ ভেসে আসলো…
“হুম। আর ইংলিশ বলতে হবে না…এখন ই দৌড় দিয়ে কফি হাট এ ”আসো” । … বিএফ এর ওয়েট করে থাকতে ভাল লাগছে না, রাখি।”
একটু পর ই একজন সুখী মানুষ কে দৌড়াতে দেখা গেল …খেয়াল করলে বুঝা যেত , ছেলেতার চোখ থেকে পানি পরছে…অথচ মুখে এক রাশ হাসি… বিশ্বজয়ের হাসি…
আর ওদিকে কফি হাট এ বসে থাকা মেয়েটা কেও সুখী লাগছিল…
কিন্তু কাকে যেন একটা মেসেজ টাইপ করে সেন্ড করল…
সেন্ট বক্স এ লেখা এল, “thank you Hasan”

রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

I LOVE MOM


A mother’s work is never done
 She works from morning until dawn
 She spreads her love
 And keeps you warm
 But only once a year we say
 Mother we wish you 'Happy Mothers Day'