[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

দুষ্টু ভূতের কান্ড


দুষ্টু ভূতের কান্ড

মে ২৪, ২০১২


নীরুদের বাড়ীর সামনে বিশাল বিশাল তিনটা তাল গাছ আছে, এই গাছগুলো নীরুর দাদীর নিজ হাতে লাগানো তাই নীরুদের বাড়ীটা বানানোর সময়ই দাদু সেই গাছ তিনটাকে কাটতে দেন নি। স্ত্রীর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য। গাছ তিনটা বেশ ভালই তাল পাওয়া যায়, নীরুরা নিজেরাও খায় পাড়া প্রতিবেশীকেও দেয়।
নীরু ৭বছরের মেয়ে, ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। বাবা মা দুজনই ডাক্তার, তাই তারা খুব ব্যস্ত থাকেন, বাড়ীতে নীরু দাদু আর আয়ার কাছেই থাকে। নীরু স্কুলের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী, এখন পর্যন্ত ক্লাসে কখনো সে দ্বীতিয় হয়নি। দাদু নীরুকে অসম্ভব আদর করেন এই কারণে নীরু যেমন ভাল ছাত্রী তেমনি ভাল একটি মেয়ে, সে খুব বাধ্য এবং শান্ত স্বভাবের। নীরু স্কুল থেকে ফিরে দাদুকে প্রতিদিন পেপারের হেডলাইনগুলো পড়ে শুনায়, দাদু চোখে কম দেখে তাই। আর দাদুও নীরু পেপার পড়ে না দিলে পেপার পড়েন না। নীরুর স্কুলে ১ম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে আর দুই সপ্তাহ পরে, তাই নীরু একটু বেশী পড়াশুনায় ব্যস্ত, পরীক্ষায় তাকে প্রথম যে হতেই হবে।
নীরুদের সেই তিনটি তালগাছে দুটো ভূত পরিবারের বসবাস, দুটো পরিবারের একটাই সন্তান, তার বয়সও ৭বছর। ভূতগুলো কিন্তু কোন রকম মানুষের কোন ক্ষতি করে না, তাই নীরুরা জানে না যে ওই তাল গাছে ভূত থাকে। ভূতের বাচ্চাটাকে তার বাবা মা আদর করে নিপ্পু ডাকে। একমাত্র সন্তান বলে একটু বেশী আদর পায় এই নিপ্পু, আর এই আদরে সে মহা দুষ্টু হচ্ছে দিনকে দিন। সারাদিন নিপ্পুর বাবা মা আর চাচারা বাইরে থাকে খাবার জোগাড় করার জন্য, নিপ্পু একা গাছে থাকে। একদিন নিপ্পু নীরুর বারান্দায় তাকিয়ে দেখে নীরু খুব মন দিয়ে পড়াশুনা করছে কোন দিকে তাকাচ্ছেও না। নিপ্পুর মাথায় দুষ্টামি খেলে গেলো। সে আস্তে করে গাছ থেকে নীরুর বারান্দায় নেমে আসল। নিপ্পুকে নীরু দেখতে পায়নি কারণ ভূতদের কখনো দেখা যায় না। নিপ্পু নীরুকে জ্বালাতন করার বুদ্ধি বের করল আর সেই ভাবে তার দুষ্টামি শুরু করল।
নীরু তার অংক বই থেকে অংক করছিল, প্রথম সাময়িকে পৃষ্ঠা ১ থেকে ৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অংক করতে হবে, এই পৃষ্ঠা থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন হবে। নীরু একমনে অংক করছিল। হঠাৎ নীরু খেয়াল করলো সে তো একটু আগেই ১২নম্বর পৃষ্ঠার অংক করে ফেলেছে সে তো ১৭নম্বর পৃষ্ঠার অংক করছিল তাহলে এই পৃষ্ঠা কে উল্টালো। নীরু বাইরে তাকিয়ে দেখে না সে রকম তো বাতাস নেই, তাহলে পৃষ্ঠা কি করে উল্টে গেলো। নীরুর ভাবনা দেখে নিপ্পু মিটি মিটি হাসতে লাগল কারণ পৃষ্ঠাতো সে উল্টে দিয়েছে নীরু তো টেরই পায়নি। নীরু আবার তার পড়ায় মন দিল।
নিপ্পু একটু পরে তার বাসায় ফিরে গেলো কিন্তু মাথায় হাজারটা দুষ্টু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল তার। সে ঠিক করলো প্রতিদিন নীরুকে সে জ্বালাবে। নীরুকে জ্বালিয়ে সে মজা নিবে। যা ভাবা সেই কাজ। তার পরের দিন আবার সে নীরুর রুমে গেলো। নীরু ড্রয়িং করছিল। নদীর পানিতে নৌকা ভাসছে আর দূরে মাঝি নৌকা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবার পরীক্ষায় টিচার এই থিম দিয়েছে। তাই নীরু তার ড্রয়িং বুকে একমনে নদী আর নৌকার ছবি আকছিল। হঠাৎ নীরু খেয়াল করে দেখে তার নদীর ছবি কেমন করে যেনো কালো কালিতে ভরে গেছে। নীরু খুব অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল, সে তো ওখানে হালকা নীল রং দিয়েছিল, তাহলে এই কালো রং হলো কি করে?? নীরু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো, নীরুকে দেখে নিপ্পুর সে কি হাসি, কিন্তু সেই হাসির শব্দ নীরুর কানে পৌছাল না।
আরেকদিন নীরু দুপুরে রুমে বসে গল্পের বই পড়ছিল, দাদু ঘুমে, আর আয়া গোছলে গিয়েছে, এমন সময় নিপ্পু বাসায় এসে হাজির, ভাল করে পুরো বাড়ী তাকিয়ে নিপ্পু তার দুষ্টামি শুরু করলো। প্রথমে রান্না ঘরে ঢুকে ঢেকে রাখা খাবারগুলোর ঢাকনা সরিয়ে দিল, তার পরে সবজীর ডালি নীচে ফেলে দিল, এর পরে ড্রয়িং রুমে এসে টিভি অন করে দিয়ে সাউন্ড বাড়িয়ে দিল, ঠিক এমন সময় নীরুর বাবা আর মা বাসায় ফিরে আসলো, তারা তালা খুলে দেখে ড্রয়িং রুমে টিভি চলছে আর নীরু দাড়িয়ে টিভি দেখছে, আসলে নীরু এতো জোরে কে টিভি ছেড়েছে তাই দেখতে ড্রয়িং রুমে এসেছিল, কিন্তু নীরুর বাবা মা ভাবলো নীরুই টিভি ছেড়ে দেখছে। নীরুর মা খুব রাগ হলেন আর নীরুকে বকা দিতে লাগলেন, নীরু বার বার বলতে মা সত্যি আমি টিভি ছাড়িনি, আর ওদিকে আয়া গোছল সেড়ে রান্না ঘরে ঢুকে খাবারের এমন অবস্থা দেখে নীরুর মা কে বলল নীরুই এই কাজ করেছে, সে তো সব খাবার ঢেকে রেখে গিয়েছিল। নীরুর খুব কান্না পেলো, সে তো এমন দুষ্টামি করে না, আর সে কখনো মিথ্যা কথাও বলে না কারণ দাদু তাকে শিখিয়েছে মিথ্যা বলা অন্যায় পাপ। তবু কেনো মা তার কথা বিশ্বাস করলো না, সে আর দাদু ছাড়াতো বাসায় কেউ ছিল না তবে কে করল এমন দুষ্টামি। নীরুকে যখন ওর মা বকছিল নীপ্পু মহা উল্লাসে আনন্দ করছিল আর ভাবছিল কি মজা নীরু বকা খাচ্ছে।
এই ভাবে প্রতিদিন নীপ্পু কোন না কোন দুষ্টামি করে যায় আর নীরু বকা খায়। এই বকা খাওয়ার ফলে নীরু খুব কষ্ট পেতে লাগলো, যা সে করেনা তার জন্য কেনো তাকে বকা খেতে হবে আর মা বাবা কেনো তাকে মিথ্যাবাদি বলবে। এই সব কারণে নীরুর পড়ার প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেলো। সে ঠিক মতো পড়াশুনা করতে পারছিল না।
পরীক্ষার দিন, নীরু স্কুলে গিয়েছে পরীক্ষা দিতে, প্রশ্ন হাতে পেয়ে নীরুতো চোখ ছানাবড়া, কয়েকটা প্রশ্ন কমন পড়েছে বাকীগুলোর উত্তর কিছুতেই সে লিখতে পারছিল না। নীরু খুব কাদতে লাগল, নীরুর কান্না দেখে নিপ্পুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো, সে ভাবতে লাগল তার কারণেই নীরুর আজ এই অবস্থা, নীপ্পু তখন বুদ্ধি বের করল কি করে নীরুর পরীক্ষা ভাল করা যায়। ভূতদের যেহেতু দেখা যায় না তাই সে প্রশ্নগুলোর উত্তর যে বই এর পাতায় আছে সে পাতাটি নীরুর সামনে এমন ভাবে ধরলো নীরু ছাড়া আর কেউ দেখতে পাবে না, আর নীরুকে করুণ স্বরে সব খুলে বলল, তার দুষ্টামির কারণে নীরুর আজ এই অবস্থা, সে নীরুর কাছে ক্ষমা চাইলো। নীরু নীপ্পুর কথায় হেসে দিল আর বলল নীপ্পু আমি কখনো নকল করিনি নকল করা অন্যায় তাই আমি নকল করবো না, এই পরীক্ষাটি হোক না খারাপ তবু নিজে যা পারি তাই লিখবো, তুমি ভেবনা, পরের পরীক্ষা আমার অনেক ভাল হবে আমি পরীক্ষায় প্রথম হবোই।
নীরুর কথা শুনে নিপ্পু খুব লজ্জা পেলো, নীরু কতো ভাল একটা মেয়ে সুযোগ পেয়েও সে দেখে লিখলো না আবার তাকে ক্ষমা করেও দিল। নীরুর এই আচরণ দেখে নীপ্পু মনে মনে ওয়াদা করলো সে আর কখনো কাউকে এইভাবে জ্বালাবে না এই রকম দুষ্টামি করবে না।
নীরু কোন রকম পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে আসলো, আর নীপ্পু তার বাসায় ফিরে গেলো। নীরুকে আর কখনো নিপ্পু জ্বালাতন করেনি, নীরু পরের সব পরীক্ষা খুব ভালভাবে দিল।
নিপ্পু আর নীরু খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেলো, নীরু নিপ্পুকে লেখা পড়া শেখাতে লাগল, দাদু তাকে যে সব উপদেশ দেয় তা নিপ্পুকে সে বলে যেনো নিপ্পু কখনো আর কোন অন্যায় দুষ্টামি না করে, যাতে করে নীপ্পুর জন্য আর কারো কোন ক্ষতি না হয়। তাদের এই বন্ধুত্বের কথা কেউ জানে না কারণ নীরু কাউকে কিছু বলে না, আর নীরু জানে কাউকে বললেও তো কেউ বিশ্বাস করবে না।
নিপ্পু এর পর থেকে খুব ভাল হয়ে চলতে লাগল। তার এই পরিবর্তন দেখে নিপ্পুর বাবা মা ও খুব খুশী হল। ভূত হলেও তাদের মনমানষিকতা ভাল ছিল আর নিপ্পু সেই মানষিকতার হচ্ছে দেখে বাবা মা চাচারাও খুব খুশী হল।
(গল্পটি ব্লগের ছোট্ট ব্লগারদের উৎস্বর্গ করা হলো। ওদের একটু ভাল লাগলে আমার লেখার স্বার্থকতা)

কোন মন্তব্য নেই: