বুবুর অভাব
আজও সেথা পাখি ডাকে
ফুল ফোটে শোভাতে,
শিশিরেরা টুপটাপ
ঝরে পড়ে প্রভাতে।
শেফালিকা ঝরে ঝরে
সাদা হয় ভূমিতল,
নেচে নেচে উড়ে ফেরে
প্রজাপতি চঞ্চল।
সাঁঝ হলে চাঁদ আসে
বাঁকা হাসি হাসিয়া,
জোনাকিরা মেতে ওঠে
তারে ভালোবাসিয়া।
চাঁদ যেথা জোসনার
রুপারং চাদরে,
পৃথিবীকে রাণী করে
ঢেকে দেয় আদরে।
তারার প্রদীপ জ্বেলে
আকাশের পরীসব,
কার যেন পথ চেয়ে
নেই ঠোঁটে কোন রব।
সেখানে, সে ছোট গাঁয়ে
ছোট এক আঙিনায়,
জোসনারা দোল বেঁধে
উঁকি দেয় সন্ধ্যায়।
সেথা এক ছোট মেয়ে,
ছোট হাত, ছোট পা,
আলুথালু ছোট চুল,
বড় চোখ, নাঙা গা।
উঠোনের একধারে
সন্ধ্যায় কি আশায়
টলমল চোখে চেয়ে
বসে থাকে হোগলায়।
যুগল ভ্রমরা যেন
তার কালো দুই চোখ,
চঞ্চল মন তার
খুঁজে মরে কতো লোক !
এ উঠোনে যার কোলে
শুয়ে-বসে এতোকাল,
রূপকথা শুনে, হেসে
টোলে ভরে যেতো গাল;
অপূরণ র’লে কভু
একটা অভাব তার,
অবহেলে গেলে কেউ
একখানা আবদার,
ছুটে এসে মুখ ঢেকে
যে বুবুর আঁচলে,
একাকার করতো সে
জলে আর কাজলে।
আজ সেই বুবু তার
মুখ চুমে হাসে না;
তারে আজ কেউ আর
অত ভালোবাসে না।
বুকে টেনে বুবু তার
অভিমান ভুলাতো,
যে চুলে বুবুর হাত
স্নেহ-ছোঁয়া বুলাতো;
সে চুলে বাতাস যেন
দোলা দিয়ে বলে যায়,
“বড় হলে সব বুবু
এমনি তো চলে যায়” ।
বুবু আজ সংসারী
আছে ঘর আছে বর,
রূপকথা বলিবার
কোথা তার অবসর !
বুবু নেই, যেন–কোন
ভালোবাসাবাসি নেই,
ছোট মন ভার তার,
মুখে সেই হাসি নেই।
চুপচাপ বহুক্ষণ
বসে থেকে জোসনায়,
অবশেষে ছোট মেয়ে
ছোট পায়ে ঘরে যায়।
বুবু ফের আসবেই
ছোট মনে বিশ্বাস,
ছোট বুকে ঝড় তোলে
চেপে রাখা নিঃশ্বাস।
_____০০০_____
এদিকে বুবুর চোখে
টলমল করে জল;
মনে পড়ে ছোট মুখ,
ছোট পা – ছোট মল।
*********************
১৬ মার্চ, ২০০৪ ইং।
বুবু, শান্তার জন্য ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন