[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

নন্দিতা, এই লেখা তোমার জন্য...

নন্দিতা, এই লেখা তোমার জন্য...
নন্দিতার সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিলো খুব সাধারণভাবে। আমি ঢাকা থেকে বাসে করে সিরাজগঞ্জে আসছিলাম, আমার পাশের সিটটাতেই বসেছিলো নন্দিতা। বয়স আঠারো-উনিশের মতো হবে (মেয়েদের বয়স বলার ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সময়ই আমার ধারণা ভুল হয়ে থাকে), একটু লম্বাই হবে, ধরুন পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি, দেখতে শিল্পা শেঠীর মতো-হ্যাঁ, ঠিক এই নামটাই আমার মনে হলো। বাস ছাড়ার পাঁচ মিনিট আগে সে বাসে উঠলো, বিদায় দিতে সাথে এসেছিলো গুরুগম্ভীর স্বভাবের একজন বয়স্ক ব্যক্তি, কথা শুনে মনে হলো মামা সম্পর্কীয়।
দূরপাল্লার যাত্রাগুলোতে বাসে পাশের সিটে কোনো সুন্দরী থাকলে সময়টা খুব খারাপ কাটে না, কথা বলা হোক বা না হোক, আড়চোখে তাকাতে তাকাতে আর মেয়েটিকে নিয়ে নানা চিন্তা করতে করতে কখন যেনো গন্তব্যস্থল এসে যায়। সেবার অবশ্য এরকম কিছু হয়নি, হয়নি নন্দিতার জন্য। বাস ছেড়েছে দশ মিনিটও হয়নি, নন্দিতা আমার দিকে ফিরে সুন্দর একটি হাসি দিয়ে রিনরিনে কন্ঠে বলল, ‘আমি নন্দিতা, থাকি সুনামগঞ্জে, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকাতে মামার কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আপনি?’ আমি নন্দিতার সাবলীল কথা বলার দক্ষতায় প্রচন্ড বিমোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ডাক্তার, এটা শোনার পর বাচ্চা মানুষের মতো বায়না ধরলো বিভিন্ন অপারেশনের গল্প শুনবে। কথায় কথায় এক সময় জানিয়ে দিলো ছোটবেলায় তার খুব ডাক্তার হবার ইচ্ছে ছিলো, বন্ধুরা যখন ডাক্তার-রোগী খেলতো, সবসময় সে ডাক্তারই হতো। কমার্সের ছাত্রী হওয়াতে সেই স্বপ্নটা একটা বড় ধাক্কা খেলো। কোথা থেকে যে সময় পেরিয়ে গেলো, আমরা বুঝতেই পারলাম না। যমুনা সেতু পার হয়ে বাস সয়দাবাদে আসলে আমি নেমে গেলাম। নন্দিতা জানালার পাশে বসে হাত নাড়িয়ে হাসিমুখে বিদায় নিলো। আর আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার হাসপাতালের দিকে রওয়ানা দিলাম।
সেই ঘটনার প্রায় চার মাস পর। বিভিন্ন রকম ব্যস্ততায় নন্দিতাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। একদিন হঠাৎ করে লাল সালোয়ার কামিজ পরে মোহনীয় রুপে হাসপাতালে এসে আমার সামনে হাজির। প্রথমে চিনতেই পারি নি, ‘আমি নন্দিতা’ বলার পর একটু লজ্জাই পেলাম। মিষ্টি হেসে আমার হাতে একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘ভাইয়া, অবশ্যই আসবেন কিন্তু।’ কার্ডটা খুলে দেখি নন্দিতার বিয়ের কার্ড, ওর দিকে তাকাতেই দেখি লজ্জায় ওর ফর্সা গালটা রক্তিম হয়ে উঠেছে। জানালো বিয়ের পর ঢাকাতেই থাকবে, ওর স্বামী ঢাকাতে একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে ভালো বেতনের চাকরি করে। এই অল্প বয়সে ওকে বিয়ে দেবার রহস্যটা এবার বুঝতে পারলাম।
বিয়েতে আমি যেতে পারি নি, ঐ সময়ে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য ঢাকাতে থাকায়। এরপর অনেকদিন আর দেখা হলো না নন্দিতার সাথে, অবশ্য দেখা হবার কথাও না।
প্রায় এক বছর পর। একদিন ছুটিতে ঢাকায় গেলে আমার এক বন্ধু বিকেল বেলায় আমাকে নিয়ে তার এক বন্ধুর বাসায় এলো একটি জরূরী কাজের কথা বলে, আমাকে অনেকটা জোর করেই নিয়ে আসলো। নন্দিতা! এবার আর চিনতে কষ্ট হয় নি। বুঝতে পারলাম আমাকে ষড়যন্ত্র করেই আনা হয়েছে চমকে দেবার জন্য, আমিও চমকিত হলাম। আমার বন্ধুবরের বন্ধুর স্ত্রী নন্দিতা। কোনো একদিন কথা প্রসঙ্গে আমার বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পেরেছে আমার কথা, অতএব আমাকে না জানতে দিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে আসা। নন্দিতার স্বামী ভদ্রলোকটিকে আমার ভালোই লাগলো। চমৎকার করে কথা বলেন, প্রাণখোলা ধরনের। হাসি, ঠাট্টায়, গল্পে রাতের খাবারের সময় হলে নন্দিতা না খাইয়ে ছাড়তে চাইলো না। আমার বন্ধুর আবার ভোজন রসিক হিসেবে খুব নাম ডাক, তাই অনুরোধটা এড়ানো গেলো না।
নন্দিতা যখন খাবারের ব্যবস্থা করতে গেলো, তখন ওর স্বামী বললো নন্দিতার ব্রেইন টিউমার হয়েছে, আগামী সপ্তাহে ঢাকার একটা বড় হাসপাতালে অপারেশন হবে। আমি চমকে গেলাম। কিছুক্ষন কোনো কথাই বলতে পারলাম না। রাতে খাবারের টেবিলে নন্দিতা অনেক মজার মজার কথা বললো, খাবারটাও দারুন হলো। কিন্তু কোনো কথাই আমি আর মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারলাম না, খাবারটাও গলা দিয়ে ঢুকতে পারলো না। বাকীটা সময় ফ্যাল ফ্যাল করেই তাকিয়ে রইলাম।
দুই সপ্তাহ আগে নন্দিতার অপারেশন হলো, আমি গত সপ্তাহে ঢাকায় গেলে ওকে দেখতে হাসপাতালে গেলাম। ওকে কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে। সেই আগের মতোই চঞ্চল, ছটফটেই আছে। আমি যাবার পর বলল, ‘ভাইয়া, আমার হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টে জিবিএম, গ্রেড-ফোর এসেছে। আমার স্বামী আমাকে জানতেই দেই নি। আমি নিজে ফাইলে রিপোর্ট দেখলাম। এরপর মোবাইলে ইন্টারনেটে দেখলাম খুব বেশী হলে দেড়-থেকে দুই বছর বাঁচবো। দেখুন তো ভাইয়া, রাব্বি (নন্দিতার স্বামী) সারাক্ষন মনমরা হয়ে থাকে। আমি ওকে বললাম, এই দুইটা বছর আনন্দে বেড়াই, আর ও বলছে কি রেডিও না কেমোর জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবে। আমার চিন্তায় সারাক্ষন অস্থির হয়ে থাকে। আপনি একটু ওকে বোঝান তো।’ আমি আবারও ফ্যাল ফ্যাল হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এক সময় নন্দিতা বললো, ‘ভাইয়া, বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর হলো, এখনো কোনো বাবু নেন নাই! তাড়াতাড়ি নিয়ে নেন, আমি দেখে যাই। আর মেয়ে হলে নাম রাখবেন নন্দিতা, কি রাজী আছেন তো?’ ওর পাশে বেশীক্ষন থাকাটা খুব কষ্টকর হয়ে উঠলো। আমি ব্যস্ততার কথা বলে চলে আসলাম। কেবিনের দরজায় এসে পিছনে তাকিয়ে দেখি, রাব্বি গভীর মমতায় নন্দিতার বিছানার পাশে বসে ওর হাত ধরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম। এমন সময় মুষলধারে বৃষ্টি নামলো। আমি আশে পাশে কোথাও ঠাঁই খুঁজলাম না। বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটতে থাকলাম। এক সময় লক্ষ্য করলাম বৃষ্টির পানির সাথে আমার চোখের পানিও মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

অন্ধকার পথ, পিছনে বন্ধ দরজা

অন্ধকার পথ, পিছনে বন্ধ দরজা

রাত দুইটা বাজে। বারান্দাতে অস্থিরভাবে পায়চারি করছে দিব্য। দিব্য, দেশের একজন প্রথম সারির প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক। অগুনতি ভক্ত তার, বেশীর ভাগই অবশ্য উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীরা। দিব্যের লেখায় এদেরকে নিয়ে অনেক কথা থাকে, এদের মনের কথা স্থান পায়, এদের চাহিদা, দুঃখ, কষ্ট, হাসি, আনন্দ-বেদনা সব চলে আসে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, এই বয়সের পাঠকেরা যা পড়তে চায়, দিব্য সেটাই লিখতে পারছে। এটা অনেকেই পারে না, পারে না তাদের হৃৎস্পন্দন বুঝতে। দিব্য বুঝতে পারে, এটা ওর খুব বড় একটা গুণ। তাই দিব্য এত জনপ্রিয়।
আর কিছুদিন পরেই একুশের বইমেলা। দিব্যকে কমপক্ষে তিনটা উপন্যাস লিখতে হবে, প্রকাশকরা প্রায় প্রতিদিনই তাড়া দিচ্ছে। কিন্তু দিব্য কিছুই লিখতে পারছে না। কাগজ, কলম নিয়ে টেবিলে বসছে, বসেই থাকছে, সাদা কাগজগুলো কালো আঁকিবুকিতে আর ভরে উঠছে না। একবার ওর মনে হলো রাইটার্স ব্লক হয়েছে, কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সে কবিতা লিখতে পারছে, তাও খুব সুন্দর প্রেমের কবিতা। অথচ দিব্য কবিতা আগে কখনো লেখেনি বা লিখতেও জানত না। একবার ভাবে এবার কবিতার বই লিখবে, পরক্ষনেই মনে হয় পাঠকরা ওর উপন্যাসই পড়তে চায়। মনটাকে সুস্থির করতে বারান্দাতে পায়চারি করতে গিয়ে আরো অস্থির হয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর অভিজাত এলাকার এপার্টমেন্টের ছয় তলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে দিব্যের অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়। এই নিশুতিরাত ওকে যেনো কি মনে করিয়ে দিচ্ছে। মধ্যবয়স্ক দিব্যের মনে পড়ে যাচ্ছে মেহেরের সাথে সেই উচ্ছ্বল দিনগুলোর কথা।
ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিলো মেহের। শুধু সুন্দরী নয়, চৌকসও বটে। পড়াশোনা, খেলাধুলা, বিতর্ক সবকিছুতেই ছিলো মেহেরের পদচারণা। সে তুলনায় মফস্বল থেকে আসা দিব্যই ছিলো কিছুটা ম্রিয়মান। কিন্তু লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে প্রকাশিত ওর ছোট গল্পগুলো পড়ে মেহেরের কাছে সেই দিব্যই হয়ে উঠলো স্বপ্নের রাজকুমার। তারপর মেঘনার জল অনেক দূর গড়িয়ে গেলো। তিন বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর বিয়ে করে থিতু হতে না হতেই ফুটফুটে অপর্ণার বাবা হয়ে গেলো দিব্য, ততদিনে অবশ্য লেখক হিসেবেও যথেষ্ট নাম যশ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। হিমেল হাওয়ার ঝাপটায় দিব্যের ভাবনায় ছেদ পরলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে ঢুকে বিছানার দিকে তাকাতেই কেমন যেনো কুঁচকে গেলো দিব্য।
বিছানাতে কেঁচোর মতো জট পাকিয়ে মেয়েটা শুয়ে আছে। দীঘল কালো চুলগুলো এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে চারপাশে, কিছু চুল দিয়ে ঢেকে আছে একপাশের গালের কিছু অংশ। গভীর ঘুমে মগ্ন সে। শরীরে একটি সুতাও না থাকাতে প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে বুকের ছন্দময় উঠানামাটা দিব্যের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। পাশের বেডসাইট টেবিলের উপর রাখা ল্যাম্পের আলোয় কেমন যেনো অপার্থিব লাগছে। কী যেনো নাম মেয়েটার, দিব্য মনে করতে পারছে না। হঠাৎ ওর মনে হলো মেয়েটার নামই জিজ্ঞেস করা হয় নি, সন্ধ্যা থেকে একসাথে আছে অথচ মেয়েটার নামই জানা হয়নি ওর! অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেয়েটার মায়াময় মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার বারান্দাতে চলে আসলো দিব্য।
আকাশে মেঘের গুরু ডাক। হয়তো বৃষ্টি নামবে, নতুবা নয়। একটা সিগারেট ধরালো দিব্য, বেনসন এন্ড হেজেস ব্রান্ডের। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আনমনে হাসলো সে। মেহেরের দিব্যকে পছন্দ করার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা ছিলো সে অধূমপায়ী। কিন্তু বিয়ের পর রাত জেগে জেগে উপন্যাস লিখতে লিখতে, প্লট চিন্তা করতে করতে কখন যে হাতে সিগারেট উঠে এলো সেটা ও বুঝতেই পারেনি। এরপর আরো কত কি- হাতে চলে আসলো বোতলও। জনপ্রিয়তার সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে দিব্যের রুচিবোধও অনেক উপরে উঠে এলো! প্রথম দিকে মেহের মনক্ষু্ন্ন হলেও কিছু বলতো না। কিন্তু যখন মধ্যরাতে সাহিত্যিক বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে অর্ধ মাতাল হয়ে বাসায় ফিরতো, মেহের উত্তপ্ত হয়ে উঠতো। সেই উত্তাপে ছোট্ট অপর্ণা ঘুম থেকে জেগে উঠে অবাক বিস্ময়ে বাবা-মায়ের দিকে তাকাতো, কাঁদতেও যেনো ভুলে যেতো। অপর্ণার যখন আলাদা রুম হলো, তখন আর ঘুম থেকে উঠতো না, কারণ সে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। শুধু ভাবতো, বাবা খুব জনপ্রিয় না হলেই মনে হয় ভালো হতো। সময় যেনো কীভাবে গড়িয়ে যায়। অপর্ণা যখন ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করলো, বন্ধু-বান্ধবীদের মধ্যে ওর বাবার অসম্ভব জনপ্রিয়তা দেখে ওর মায়ের অসহায় মুখটাই চোখের সামনে ভেসে উঠতো।
মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। সেই বৃষ্টির কিয়দংশ ছিটে ফোঁটা দিব্যের গায়েও লাগছে। বিছানাতে শুয়ে থাকা মেয়েটার কথা আবার মনে পড়লো। এতক্ষন খেয়াল করেনি, এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা বোধহয় অপর্ণার সমবয়সী। গত সন্ধ্যায় যখন ক্লাবে মেয়েটাকে দেখে, ওর কেমন যেনো নেশার মতো লেগেছিলো। মেয়েটিকে দেখে কোনো বড়লোকের বখে যাওয়া মেয়ে মনে হয়নি তখন। দিব্যের সাথে যখন দিব্যের উপন্যাসগুলো নিয়ে গল্প করছিলো, দিব্য মন্ত্রমুগ্ধের মতো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলো। রাতে যখন দ্বিধান্বিত কন্ঠে বাসায় আসার আমন্ত্রন জানালো, কী সহজেই না রাজী হয়ে গেলো! হেসে উঠলো দিব্য, অনেকদিন পর বিছানাতে এত তৃপ্তি পেলো সে, মেহেরের কাছ হতে যা প্রায়শই পেতো না। এই যুগের মেয়েরা বোধহয় এরকমই। দিব্যের মতো একজন মধ্যবয়স্ককেও, যার মাথার চুলে কিছুটা পাকও ধরেছে, মুহূর্তের মধ্যে উন্মাতাল করে ফেলতে পারে।
এই ব্যাপারটা যেদিন থেকে সে বুঝতে পেরেছিলো, সেদিন থেকেই তার শুরু হয়েছিলো মেহেরের সাথে লুকোচুরি খেলা। কোনো কোনো রাত বাসায় আসতো না, আসলেও ভোর রাতের দিকে এসে চুপিসারে শুয়ে পড়তো। মেহেরের ততদিনে অনেক কিছুই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু যেদিন দিব্যের মোবাইলে দিপ্তী নামের এক মেয়ের কামোদ্দীপক মেসেজ পড়লো, সেদিন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না। না, সে দিব্যের সাথে কিছুই করে নি, কারণ এই পুরুষ শাসিত সমাজে সে প্রতিবাদ করে কিছুই করতে পারবে না, বরঞ্চ নির্যাতিত হয়ে খবরের কাগজের শিরোনাম হবে। তাই সে তার স্বপ্নের রাজকুমারের ঘর ছেড়ে এসে, বুক ভাঙ্গা কষ্ট নিয়ে নিজের জীবনকে আপন গতিতে চলতে দিলো। তার মেয়েটা হয়েছে তার ন্যাওটা, তাই অপর্ণাও চলে আসলো তার সাথে। সেই থেকে দিব্য একা।
হঠাৎ মৃদু শব্দে পিছনে ফিরে দেখলো দরজার পর্দা ধরে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। ঘুম জড়ানো মায়াবী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘ঘুমাবে না?’ মেয়েটিকে চমকে দিয়ে দিব্য ওর নাম জানতে চাইলো। কিছুটা অদ্ভুত কন্ঠে মেয়েটা বললো, ‘মেহের’! দিব্য তাকিয়ে থাকলো মেয়েটির দিকে, তারপর বললো, ‘আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। সকাল হলে আর বৃষ্টি থেমে গেলে তুমি চলে যেয়ো’।
রাত চারটার ঢাকা শহরে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালিয়ে এক বাসার সামনে এসে থামলো দিব্য। তিনবার কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দাঁড়ালো মেহের।
- কেমন আছো মেহের? কেমন আছে অপর্ণা?
- এত রাতে তুমি?
- বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে, না ভিতরে বসতে বলবে?

মেহের হেসে ফেললো। হাসলে মেহেরকে খুবই সুন্দর লাগে এই মধ্যবয়সেও। সে হেসেই বললো, ‘তোমাকে ভিতরে আসতে বলার সাধ্য আমার নেই। মেয়ে বড় হয়েছে, আমি তোমাকে ভিতরে আসতে বললে আমি ওর কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো। আর সবচেয়ে বড়ো কথা তোমাকে ভিতরে বসতে বলার ইচ্ছেও আমার নেই, সে তুমি যাই মনে করো। ভোর প্রায় হয়ে এলো, অপর্ণা এখনই ঘুম থেকে উঠবে, আমি চাই না, সে তোমাকে দেখুক’।
মেহেরের দিকে কিছুক্ষন স্থির তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে দিব্য বের হয়ে আসলো। গাড়ির দিকে না এগিয়ে এই মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই ভোরের আলোতে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলো, কিন্তু দিব্যের মনে হলো সে অন্ধকার পথে হাঁটছে। একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

ভোর রাতের স্বপ্ন ভেসে আসে

ভোর রাতের স্বপ্ন ভেসে আসে


ভোর রাতের স্বপ্ন ভেসে আসে
‍নিত্য আমার পথে
আমারই ঘুরপাক খাওয়া,
উন্মত্ত সভ্যতার রমরমায় প্রতিনিয়ত
ক্ষুধার্ত হই;
ক্রমশ অস্থির,দুর্বল হয়ে পরছি!
ভয় পাচ্ছি কেন? শরীরে “ঘা”,
উচাটন মন;
ভাবনার দো’টানায় বিভক্ত হচ্ছি কেন?
বিবেক আমার মুক্তি চায়
চারপাশে বিপন্ন বিদ্রোহ,
তাকে ঢেকে রাখে নগ্ন মেয়ে মানুষের শরীর
ভণ্ডামির বর্ণচোরা আদর্শে ডুবছে সমাজ।

তবু, একই পথে ঘুরপাক খাওয়া
পারছিনা এগুতে,সমুখে সীমাহীন দিগন্ত
চর চর করে বাড়ছে বয়স,
ক্রমশ বাড়ছে মৃত্যু ভয়,দুর্বল করছে শরীরের ব্যাধি
শরীরের ভিতরে যত গোলমাল।

মৃত শরীরটাকে বয়ে নিয়ে যায়
যেখানে সব আঁধার প্রান্তর!
নিদ্রাহীন চোখে,
ভোর রাতের স্বপ্ন ভেসে আসে;
তেপান্তরের মাঠে শিশুরা লাল বল নিয়ে করছে খেলা,
তাদের সেই উচ্ছ্বল তায়
বাঁচবার ক্ষীণ আশা জাগে;

ঘুম ভেঙ্গেছে তখনও হাসছি
সকাল হয়েছে তখনও হাসছি
ঠোঁট চেপে তখনও হাসছি।

চাঁদ

চাঁদ

Add caption
একটা কিছু দেখি আমি
একটা কিছু দেখি
সন্ধ্যা যখন ঘোমটা দিয়ে আসে
রঙ তুলিতে রাঙিয়ে আকাশ
মিষ্টি করে হাসে
নীল পাখিরা গানের সুরে সুরে
ডিগবাজী খায়
হাওয়ায় উড়ে উড়ে।

ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আমি যখন দেখি
একটা কিছু দেখি
আমার সাথে পাড়ার ছেলে-মেয়ে
চোখ মেলে চায় দূরে
বিশাল আকাশ ফুরে
বহুদিনের স্বপ্নগুলো উড়ে
নীল আকাশটা রাঙিয়ে দিলো
রঙে
বাহারী এক ঢঙে
ঢঙের মাঝে
রঙের মাঝে একটা কিছু আঁকা
হ্যাঁ হ্যাঁ একটুখানি বাঁকা
চাঁদ উঠেছে পিপুল গাছের নাকে
রূপার আলো ছড়িয়ে পাতার ফাঁকে।

বন্ধু তোমার বিষন্নতার আঙ্গিনায় আমি হবো খুশির ঘাসফুল

বন্ধু তোমার বিষন্নতার আঙ্গিনায় আমি হবো খুশির ঘাসফুল


Add caption
প্রেম সে,তো চাইলেই পারি; আছে প্রকৃতির ভূবনে;
আছে চারপাশে হাওয়ার মতো; আছে উত্তাল তরঙ্গ হয়ে।
আমি নিরাশার ঘুড়ি আকাশে উড়িয়ে বসে আছি নিরবে;
আমি নিঃশব্দে আঁকি নিজের জমে থাকা কথা।

আমি বন্ধু হতে চেয়েছি
আমি প্রেমী হতে চাইনি; আমি প্রেম চাইনি; তোর সঙ্গ চেয়েছি।
প্রেম তুলিনি শূন্য মনের ঝুড়িতে;
আমি ভাসতাম না এইভাবে শূন্যের তেপান্তরে।
যখন তোর মনটা থাকতো বিষন্নতার আঙ্গিনা; আমি হতাম তখন খুশির ঘাসফুল;
আমি দেয়াল হতাম নোনা জলের; তোর কষ্ট সেথায় কাটতো সাতার।
প্রেম আসতো পরির মতো,কখনও বা ভোরের আকাশের তারা;
সূর্য উঠলেই যার সারা।

আমি বন্ধু হতে চেয়েছি পেয়েছি তোর প্রেম;
আমি তো প্রেম চাইনি; চাইনি হতে আবেগের রঙ্গিন ফুল।
হেরেছি আমি জীবন খেলায় একটু একটু করে;
হয়ে আছি ভাস্কর্য।

পারিনি অনেক কিছুই, হয়তো পারতামও না, আমার আকুলতা ছিলো সামান্যতায়;
কারো বন্ধু হবো; সকাল আর সন্ধ্যের দুরত্বে নয় পুরো সময় আমার থাকবে তাকে ঘিরে।
কিন্তু হায় আমি নিরালায়; আমি দু’হাত তুলে ডাকি তোকে
বন্ধুত্বের যোগ-বিয়োগের খাতা খুলে তুই প্রেমের অংক কষতে চাস আমার গায়।
তুই বন্ধুর পথে প্রেম নিয়ে আছিস বসে; আমি তাই থমকে যাই
খুজে ফিরি সেই মানুষকে আমি হাতরাই সেই সুর আমার আকুলতা বলে,
দাড়াও পথিক তোমার আঁচলে একটু বন্ধুত্ব হবে কি ?
নাহ ;প্রেম চাইনা।
প্রেমের নীড়ে ডাকে তাদের দু’হাত পাশ কাটে যখন এক পক্ষকাল।
আবার ফিরে এসে দাঁড়াই সেই পথের ধারে;
যে পথে তোর স্পর্শ আছে;

তোর সামনে দাড়াবো হাতে রাখবো হাত।
তোর চোখ চাইনা;
আমি চলবো এক পথে তোর সাথে;
যে পথে থাকবে না বিরহ; থাকবে শুধু তোর আর তোর কথা
প্রেম নেবোনা বন্ধু তোর আকুলতা হোক সন্ধ্যে রাতের অনুভূতি;
থাকবো আমি তাতেই মিশে।

সময় করে কখনোবা মন খারাপ হলে পড়ে নিস রেখে দেয়া সেই চিঠিটা;
আমি প্রেমপত্র লিখতে পারিনি; হয়তো জানিনা ;
তাই সরল করে লেখা বন্ধুত্বের নদীতে ভাসা এক তরীর গল্প।
আমি আবেগের নদীতে সাম্পান ভাসিয়েছি, তবে সে আবেগ হার মানেনি ভালোবাসার স্রোতে।
আমি প্রেমের সাগরে বন্ধুত্বের জাহাজে তোকে নিয়ে ভাসবো।
আমি প্রেম চাইনা; তাই ডাকিস আমায় যখন নোনা জলের ভূবন থাকবে তোর চারপাশে
যখন বিরহী হতে চায় তোর মন বিষন্নতার নীল নদীতে।
না পারার দলে গিয়েছি ভীড়ে তাই থাকবো না তোকে ভূলে;
তুই তো গিয়েছিস প্রেমের সাগরে চলে।

আমি তবুও বসে আছি নিয়ে অনুভূতির তিক্ত আকাশ,
হয়তো আসবি ফিরে যখন থাকবেনা তোর আবেগের কোন টান।
রাত নামবে সন্ধের আঙ্গিনায়,ব্যাস্ততার শেষ হবে সেই রাতের গায়
যে রাতে আমার অনুভূতি তোকে ভীষন করে ভাবাবে
খুজে ফিরে কাঁদবি; একটা শূণ্যতা তোকে আকুলতা জাগাবে

বন্ধু তোমার বিষন্নতার আঙ্গিনায় আমি হবো খুশির ঘাসফুল

বন্ধু তোমার বিষন্নতার আঙ্গিনায় আমি হবো খুশির ঘাসফুল


প্রেম সে,তো চাইলেই পারি; আছে প্রকৃতির ভূবনে;
আছে চারপাশে হাওয়ার মতো; আছে উত্তাল তরঙ্গ হয়ে।
আমি নিরাশার ঘুড়ি আকাশে উড়িয়ে বসে আছি নিরবে;
আমি নিঃশব্দে আঁকি নিজের জমে থাকা কথা।
আমি বন্ধু হতে চেয়েছি
আমি প্রেমী হতে চাইনি; আমি প্রেম চাইনি; তোর সঙ্গ চেয়েছি।
প্রেম তুলিনি শূন্য মনের ঝুড়িতে;
আমি ভাসতাম না এইভাবে শূন্যের তেপান্তরে।
যখন তোর মনটা থাকতো বিষন্নতার আঙ্গিনা; আমি হতাম তখন খুশির ঘাসফুল;
আমি দেয়াল হতাম নোনা জলের; তোর কষ্ট সেথায় কাটতো সাতার।
প্রেম আসতো পরির মতো,কখনও বা ভোরের আকাশের তারা;
সূর্য উঠলেই যার সারা।
আমি বন্ধু হতে চেয়েছি পেয়েছি তোর প্রেম;
আমি তো প্রেম চাইনি; চাইনি হতে আবেগের রঙ্গিন ফুল।
হেরেছি আমি জীবন খেলায় একটু একটু করে;
হয়ে আছি ভাস্কর্য।
পারিনি অনেক কিছুই, হয়তো পারতামও না, আমার আকুলতা ছিলো সামান্যতায়;
কারো বন্ধু হবো; সকাল আর সন্ধ্যের দুরত্বে নয় পুরো সময় আমার থাকবে তাকে ঘিরে।
কিন্তু হায় আমি নিরালায়; আমি দু’হাত তুলে ডাকি তোকে
বন্ধুত্বের যোগ-বিয়োগের খাতা খুলে তুই প্রেমের অংক কষতে চাস আমার গায়।
তুই বন্ধুর পথে প্রেম নিয়ে আছিস বসে; আমি তাই থমকে যাই
খুজে ফিরি সেই মানুষকে আমি হাতরাই সেই সুর আমার আকুলতা বলে,
দাড়াও পথিক তোমার আঁচলে একটু বন্ধুত্ব হবে কি ?
নাহ ;প্রেম চাইনা।
প্রেমের নীড়ে ডাকে তাদের দু’হাত পাশ কাটে যখন এক পক্ষকাল।
আবার ফিরে এসে দাঁড়াই সেই পথের ধারে;
যে পথে তোর স্পর্শ আছে;
তোর সামনে দাড়াবো হাতে রাখবো হাত।
তোর চোখ চাইনা;
আমি চলবো এক পথে তোর সাথে;
যে পথে থাকবে না বিরহ; থাকবে শুধু তোর আর তোর কথা
প্রেম নেবোনা বন্ধু তোর আকুলতা হোক সন্ধ্যে রাতের অনুভূতি;
থাকবো আমি তাতেই মিশে।
সময় করে কখনোবা মন খারাপ হলে পড়ে নিস রেখে দেয়া সেই চিঠিটা;
আমি প্রেমপত্র লিখতে পারিনি; হয়তো জানিনা ;
তাই সরল করে লেখা বন্ধুত্বের নদীতে ভাসা এক তরীর গল্প।
আমি আবেগের নদীতে সাম্পান ভাসিয়েছি, তবে সে আবেগ হার মানেনি ভালোবাসার স্রোতে।
আমি প্রেমের সাগরে বন্ধুত্বের জাহাজে তোকে নিয়ে ভাসবো।
আমি প্রেম চাইনা; তাই ডাকিস আমায় যখন নোনা জলের ভূবন থাকবে তোর চারপাশে
যখন বিরহী হতে চায় তোর মন বিষন্নতার নীল নদীতে।
না পারার দলে গিয়েছি ভীড়ে তাই থাকবো না তোকে ভূলে;
তুই তো গিয়েছিস প্রেমের সাগরে চলে।
আমি তবুও বসে আছি নিয়ে অনুভূতির তিক্ত আকাশ,
হয়তো আসবি ফিরে যখন থাকবেনা তোর আবেগের কোন টান।
রাত নামবে সন্ধের আঙ্গিনায়,ব্যাস্ততার শেষ হবে সেই রাতের গায়
যে রাতে আমার অনুভূতি তোকে ভীষন করে ভাবাবে
খুজে ফিরে কাঁদবি; একটা শূণ্যতা তোকে আকুলতা জাগাবে