[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১১

মা তোমার কোলে ঘুমাব (প্রথম পর্ব)
মন খারাপ করে তিতাসের পাড়ে বসে আছে ইমতিয়াজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেরি না করে বাসায় চলে আসে, তাহলে অন্তত দু’টা দিন বেশি থাকা যাবে মা’র কাছে। ছোট মাত্রায় অনেক বড় আসা। কিন্তু মার কাছে তার শান্তিটা পাওয়া হয়ে উঠেনা। ইমতিয়াজের বাবা ওর কাছে তিন লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন ঢাকাতে যেহেতু ছোট দুই ছেলে পড়ালেখা করে, তাদের সেমিষ্টার ফি ও অন্যান্য কিছু খরচ বাবদ ব্যবহার করবেন। কিন্তু ইমতিয়াজের ভাবনায় ঢুকে পড়ে একটা মস্ত ভূল ভাবনা। কিছু লোকের কথায় সে ঐ টাকা বাবা-মাকে না বলে একটা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে বসে। ভাবে ছোটদের সেমিষ্টার ফি দিতে আরো ছয় মাস আছে। এর মধ্যে কোন একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। নিজেরও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার একটা পথও তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু ভূল তো ভূলই। কথায় আছে না- লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। আবার তারাতারির কোন কাজ ভাল নয়। ঠিক এমনটায় হল। তার টাকাগুলু আটকে যায়। প্রতিষ্ঠানটা সরকারি বিভিন্ন ঝামেলায় পড়ে ধ্বংসের পথে। টাকা ফেরত পাওয়ার নম্ভাবনা অনেকটায় মিলিয়ে যায়।
এই সবের জের ধরে ইমতিয়াজের বাবা ওর সাথে প্রায়ই রাগারাগি করেন। এবার ঈদে বাসায় আসার পর একটু বেশিই করে ফেলেছেন। গত রাতে ইমতিয়াজ খেতে পর্যন্ত পারেনি। সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হওয়াতে ওর বাবা এসে যাতা গালাগালি করে অফিসে চলে যান। প্রচন্ড মন খারাপ হয় ইমতিয়াজের। নদীর পাড়ে এসে গোপনে নিভৃতে কাঁদতে থাকে।
এখন আর কোন কিছু ভাল লাগে না। প্রতিনিয়তই মনে হয় মরে যায়। কিন্তু পারে না। মাকে এত বেশি ভালবাসে; এটা আসলে ব্যাখ্যা করা যায় না। কোন কিছু করতে গেলেই মার কথা আগে মনে হয়। শুধু ঐ কাজটাই মাকে না বলে করা। আর তাই এখন সম্পূর্ণ পৃথিবীটা অনর্থক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে জীবনটা হল একটা ভাসমান কচুরি পানা। যার ভাসতে ভাসতে জীবন কাটে, শেষ হয় পচেঁ।
সারা দিন বাসায় যাওয়া হয়নি, খাওয়াও হয়নি। ফলে সন্ধায় বাসায় ফিরার পর ইমতিয়াজ দেখে মা কাদঁছে। ভাত নিয়ে টেবিলে বসা। সেও খায়নি। ঘরে ঢুকতেই মা ওকে টেনে নিয়ে খেতে বসালেন। নিজের হাতে খেতে নিলে মা ওকে না দিয়ে নিজে খাওয়াতে শুরু করলেন। কিন্তু খাওয়াটা আর শেষ করা যায়নি। ঐ দিক থেকে বাবা চেচিয়ে বলতে লাগলেন- ” গাধাটাকে খাইয়ে লাভ কি? এর চেয়ে যদি একটা কুত্তা পালতাম অনেক বেশি ভাল হত। যা বলতাম তাই শুনত। এইডা তো কুত্তা থেকে অধম।” গলা দিয়ে ভাত আর নামে না ইমতিয়াজের। চোখ দিয়ে দর দর করে পানি পরতে থাকে।
সকালে বাবা মাকে বলছে- ” গাধাটাকে বলিও বিদেশে চলে যেতে। সব ঠিক করে দিতেছি। যা টাকা লাগে দিমুনে। দান মনে করেই দমু। ফেরত দেওয়া লাগব না। এর বদলে যদি কিছু কামায় করতে পারে। অর পিছে যা খরচ করছি তার কিছুটা উছুল হইব। যা খরচ করছি তা দিয়া আলিশান দু’টা বাড়ী করতে পারতাম।” এই কথা বলে অফিসে চলে যায়। কষ্টে ইমতিয়াজের বুকটা মোচর দিয়ে উঠে। কারণ মাকে ছেড়ে সে কখনো দূরে থাকে পারে না। ঢাকাতেই থাকতে ওর অনেক কষ্ট হয়। সময় পেলেই চলে আসে। এর আগে অনেক বার বিদেশে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু মাকে ছেড়ে যেতে হবে তাই নাকচ করে দিয়েছে। আর আজ নিজে মাকে গিয়ে বলে-” মা, মাগো আমি বিদেশ যাব।” এই কথা বলতেই চোখে পানি এসে যায়। চোখের পানি মুছতে মুছতে আবার বলে-” বাবাকে বলিও দান হিসাবে যদি দেয় তবে চিলে যাব। যে দেশেই হোক চলে যাব।”

যারা বিদেশে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে, তাদের যাতে অনেক কষ্ট হয়, অনেক সময় লাগে। এমন কি মাসের পর মাস, অনেক সময় বছর ও ফুরিয়ে যায়। আর ইমতিয়াজের মাসো ঘুরেনি। সব ব্যবস্থা হয়ে গেল। রাতে আর ঘুম আসে না। বুক ভেঙ্গে কাঁন্না আসে। মাকে ছেড়ে যেতে চাইছে না মন। বার বার কেন যেন মনে হচ্ছে মৃত্যু বুঝি খুব কাছে চলে এল ইমতিয়াজের।
আগামীকাল ফ্লাইট। সব গুছিয়ে নিচ্ছে ইমতিয়াজ। মা-বোন সবাই কাদঁছে। কিন্তু ইমতিয়াজ নির্বিকার। যেন একটা রোবট। কোন অনুভুতি নাই। চোখে পানিও নাই। কেমন যেন হয়ে গেছে।
রাতের বেলায় সবাই যখন ঘুমানুর চেষ্টা করছে ইমতিয়াজ তখন বারান্দায়। এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে। আর ভাবছে, ইউরোপের আকাশ কি এই রকই, ও খানে কি মা আছে?? এই সব প্রশ্নের সাথে শুধু মনে হচ্ছে সে বুঝি আর বাচঁবে না। পরের দিন দুপুরে সবার কাছ থেকে অদ্ভুত এক নির্বিকার বিদায় নেয় ইমতিয়াজ। শুধু মার সামনে গিয়ে বলে-” মা, তুমি যদি আমাকে ভালবাস তা হলে নিজের যত্ন নিও। আর আমার জন্য একটা দোয়াই করিও , আমি যেন মরার আগে তোমার কোলে ফিরে আস্তে পারি। আমার শান্তির ঘুমটা যেন তোমার কোলে হয়।” মাকে আর ধরে রাখা যায়নি। হাউ-মাউ করে কাদতে শুরু করে।ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে-” আমার ছেলেকে কোথাও যেতে দিব না। আমার ছেলেকে কোথাও যেতে দিব না।” কিন্তু ইমতিয়াজ মাকে ছাড়িয়ে সামনে যেতে থাকে। পিছনে মার কান্নার আওয়াজ কানে এসে বারি খায়। প্রতি বারই মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠে।
বড় বড় প্লেনগুলু ইমতিয়াজকে নিয়ে আকাসে উড়াল দেয় নতুন এক অজানা ঠিকানায়।

কোন মন্তব্য নেই: