[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

বাঁকা মনের সোজা লেখা

বাঁকা মনের সোজা লেখা



সব কলমেই লেখা হয় যদি থাকে কালি
সব মরু- জমিনেতে হরেক পদের বালি।
সব সাগরেই মাছ থাকে যদি থাকে জল
প্রাণ না থাকলে পরেই হয় কিরে নিশ্চল?

কালি শুধু লেখার জন্য প্রধান শর্ত নয়
লেখক এবং কলমটিও সঠিক হতে হয়।

সাগর তীরেও বালু থাকে, সেতো নয় মরু
বৃক্ষহীন মরু বুকেও জন্মায় কিছূ তরু।

জল আছে নামও সাগর তবু মাছ নেই
লবন ভরা  সাগরটিকে মৃত নাম দেই।

প্রাণ আছে বৃক্ষরাজির , তবুও চলে কই
জীবন নেই তবু চীর সজীব থাকে বই।

জানা সব সত্য হয়না, চিন্তাও বেশ মিছে
কবি মরে যাবে তবুও কবিতা রবে পিছে।

আমি তোমার মনের ভিতর

 

 

আমি তোমার মনের ভিতর

“আগে জানলে, তোমাকে বিয়েই করতাম না।“
“কি জানলে?”
“এই মেজাজ আর এই চেহারা ওয়ালা মেয়েকে পাগল ছাড়া আর কেও বিয়ে করে?”
“তা হলে প্রেমে পড়ে মজনু হয়েছিলে কেন? আবার যে দুই বার স্যুইসাইট করতে নিয়েছিলেন জনাব। সেই কথা নতুন করে মনে করে করিয়ে দিতে হবে না-কি?”
“সেই মেয়ে তো আর এখনকার তুমি না?”
“দেখ বেশী মাথা গরম করিয়ে দিও না। তুমি যেই অহনার প্রেমে পড়ে দিওয়ানা হয়েছিলে, সে ছিল আমার বাবার আদরের দুলালী। অনেক আদর-যত্নে বড় করেছিল। আর সেই আদরের দুলালীকে দিনে দিনে ধবংস করে তুমি আজকের অহনাকে বানিয়েছ”।
“কি বললে, আমি তোমাকে ধবংস করেছি। ঠিক আছে যাও বাবার বাড়ি যেয়ে আলালের ঘরে দুলালী হয়ে থাক যেয়ে।“
“কি, কি বললে? আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলছ?”
“তা বলবো কেন?  তুমিই তো বললে আমি তোমাকে ধবংস করে দিয়েছি।”
“ঠিক আছে, আমি আজকেই চলে যাব।”
ব্যাস আরম্ভ হয়ে গেল, পারিবারিক তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আরেক পর্ব। একেবারে সম্মুখ যুদ্ধ।
প্রতিপক্ষ দুই নিয়মিত পরাশক্তি অহনা আর কাজল।

দুই পক্ষের শান্তিকালীন সময় বেশী দিন স্থায়ী হল না। এর আগের বড় যুদ্ধের পরে অহনা চলে গিয়েছিল বাবার বাসায়। যাবার সময় বলে গিয়েছিল, চল্লিশ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বিবাহ করে দেখিয়ে দিবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে আকাশের মেঘ তাদের বাঁচিয়ে দিল। অহনা অন লাইন ম্যাচিং সার্ভিসকে বললো, তার এমন ছেলের দরকার, যে ছেলে মেঘের সাথে কথা বলতে পারে। শেষে দেখা গেল, কাজলই এক মাত্র সে রকম ছেলে, যে মেঘের কথা বুঝে। তার পরে দু জনের মিলমিশ হয়ে গেল।
তিন মাসের মধ্যেই প্রথম সংঘর্ষ লাগলো। অহনা এখন কম্পিউটারে বেশী সময় কাটায়। ফেসবুক, ই-মেল, ফার্ম ভিল আর কত কি। কাজল প্রথমে অবাক হল। যে মেয়ে মাত্র কয়েক দিন আগে পর্যন্ত কম্পিউটারের আশে পাশে পর্যন্ত যেত না, সে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাচ্ছে সেখানে। আড়িপেতে দেখল, বিষয়টা কি? যে রকম সন্দেহ, অনেকটা সে রকম আবিষ্কার করলো। এখনো অহনাকে অন লাইন ম্যাচিং সার্ভিস থেকে ঠিকানা পাওয়া ছেলেরা ইমেল করছে। অহনা ওদের উত্তর দিচ্ছে। কেও কেও আবার ফেসবুকের বন্ধু পর্যন্ত হয়েছে। ব্যাপারটা ভাবতেই কাজলের শরীরটা রি রি করে উঠলো।  কে জানি বলেছিল, মেয়েদের ভালবাসা নদীর মত। তা শুধু বহেই যায়।  অহনার ভালবাসা কি কাজলকে ছাড়িয়ে চলে গেছে অনেক দূর! এ গুলো ভাবতেই কাজলের মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। কিছু একটা প্রচণ্ড শব্দ করে ভেঙ্গে ফেলতে পারলে খুব ভাল হত।
অহনা দেখল, বাড়ি ফিরে আসার পরে, প্রথম কয়েক দিন কাজল তাকে খুব মনযোগ দিল। সাথে সাথে থাকা, বেড়াতে যাওয়া,  গল্প করা, সুযোগ পেলেই হাত ধরে বসে থাকা আর কত কি। কয়েক বার ছাদে যেয়ে মেঘের সাথে কথা পর্যন্ত তারা বলেছে। ঠিক সে-ই প্রেম করার দিনগুলোর মত। কিন্তু কাজল আবার আগের চেহারা পেতে থাকলো। ছুটির দিনে দেরী করে ঘুম উঠা, খাবার টেবিলে বসে মোবাইলে বন্ধুদের সাথে কথা বলা। অহনার সব কথা ভুলে যাওয়া রোগটা কাজলের ফিরে আসলো। মামাকে জাপানে চিঠিটা পোস্ট করেছ, গ্যাসের বিল দিয়েছ, কলের পানি বন্ধ হচ্ছে না, সারা দিন টিপ টিপ করে পড়ছে, মিস্ত্রিকে ডেকেছ?——– এ রকম সব প্রশ্নের উত্তর কাজল কি দিবে, অহনার একেবারে তা জানা। ‘মনে ছিল না, ভুলে গেছি’। অহনা  গজ গজ করতে থাকে, সব কাজই যখন ভুলে যাও, তখন বিয়ে করার কথাটা মনে রেখেছিলে কি করে।  এ রকম লোকের সাথে আর যাই হোক ঘর করাটা মুশকিল।

দুই পক্ষের কথা বার্তা বিভিন্ন মেয়াদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকবার অনশন ধর্মঘট পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু কোন আন্দোলনের ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। যখনই এক পক্ষের মনে হচ্ছে বেশী ছাড় দেয়া হয়ে গেছে, তখনই আবার নতুন করে আক্রমন করা হচ্ছে। দুই পক্ষই কোন নতুন সুযোগ হাত ছাড়া করতে রাজী না।
এ রকম কঠিন অবস্থার মধ্যে প্রকৃতির আরও কিছু রসিকতা করার ইচ্ছে হল। ঘুমের মধ্যে এ পাশ ওপাশ করতে কাজল সশব্দে নাক ডাকার অভিষেক করলো। অহনা ধাক্কা দিয়ে কাজলকে এপাশ থেকে ওপাশ করলে, মিনিট পাঁচেকের জন্যে নাক ডাকা বন্ধ থাকলো। তার পরে আবার নতুন উদ্যমে আরম্ভ হল।  বেচারা অহনার ঘুম হারাম হয়ে গেল। মানুষ আবার এত জোরে নাক ডাকে ন-কি!
অহনা প্রথমে কয়েক দিন সহ্য করার চেষ্টা করলো। ভাবল তুলির মত অভ্যাস হয়ে যাবে। তুলি একবার গল্প করেছিল, তার স্বামীও একবার হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা আরম্ভ করলো। কয়েক দিন সমস্যা হলেও, তুলির এখন নাক ডাকার শব্দ শুনতে ভালই লাগে। কেমন একটা ঘুম পাড়ানির গানের মত মনে হয়। কিন্তু অহনার বেলায় হল ঠিক উল্টো। রাতের বেশীর ভাগ সময় না ঘুমিয়ে কাটাতে হলো।
অনেকটা বাধ্য হয়ে, অহনা বেশ মিষ্টি করে বলল, তুমি কি একটু ডাক্তার চাচার সাথে দেখা করতে পার? কথাটা শুনে কাজল ভাবল, নিশ্চয়ই অহনার কোন সমস্যা হয়েছে। দুর্বল প্রতিপক্ষের সাথে তো আর যুদ্ধ করা চলে না। মনে মনেই ‘সিস ফায়ার’ ঘোষণা করলো। এখন থেকে যুদ্ধ বিরতি কিংবা যুদ্ধ একেবারে বন্ধ। জানতে চাইলো, কেন, কেন ডাক্তার চাচাকে কি বলতে হবে?
অহনা খুব নরম করে বলল, যেয়ে বল, তুমি ঘুমালে ভীষণ নাক ডাকছ, আমি ঘুমাতে পারছি না। এর জন্যে তোমাকে ওষুধ দিতে। কাজল ধরে নিল, তাকে ছোট করার জন্যে এইটা অহনার অবশ্যই নতুন একটা কৌশল। বেশ জোরেই উত্তর দিল, আমি নাক ডাকি আর আমি জানি না। আর উনি শুনতে পান। কাজল ‘সিস ফায়ার’ উঠিয়ে নিয়ে একটা নোংরা ধরনের অস্ত্র ব্যাবহার করলো, স্বপ্ন দেখার মাত্রা কিছুটা কমালে সব ঠিক হয়ে যাবে। কাল্পনিক নাক ডাকার শব্দে আর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না।
বিজ্ঞানের সুফল আর কুফল নিয়ে যদি কখন বিতর্ক হয়, তবে পরের দিনের ঘটনা তার একটা বিশাল বড় উদাহরন হতে পারে। ওই দিন রাতেই, অহনা মোবাইল ফোনের ভিডিও অপশনে যেয়ে, কাজলের নাক ডাকা রেকর্ড করলো। সকালে কাজলকে ভিডিও দেখাল। কাজল দেখে কিছু বলল না, কিছু একটা একটা চিন্তা করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। বুঝল, অহনার কাছে ঘায়েল হয়েছে। বক্সিং খেলায় চিৎপটাং হয়ে নক আউট হয়ে যাবার দশা।
রাতে কাজল বালিশ, কাঁথা নিয়ে বসার ঘরে সোফায় যেয়ে ঘুমাল।

অহনা প্রথমে এক হাত নিতে পারাতে খুশীই হল। যাক বাবা, অনেক দিন পরে একটু আরাম করে ঘুমান যাবে। আর যাই হোক, এত শব্দের তার ঘুমান সম্ভব না। এই সব ভাবতে ভাবতে আসলেও অহনা ঘুমিয়ে পড়ল। আহ কি আরাম। পৃথিবীতে ঘুমের থেকে প্রশান্তির জিনিষ কি আর কিছু আছে?
স্বপ্নের মধ্যে মনে হতে থাকলো, সে নাক চুলকানোর কিছু একটা দেখছে।  একটু পরে মনে হতে থাকলো, নাকটা মনে হয় বাস্তবেই চুলকাচ্ছে।  চোখ খুলে বুঝার চেষ্টার করতে লাগলো, স্বপ্নের নাক চুলকানি কেন বাস্তব মনে হচ্ছে।  কিন্তু, সেই সুযোগটা বেশীক্ষণের জন্যে পেল না। আরম্ভ হল, হাচ্চু, হাচ্ছু, হাচ্ছু। এক, দুই, তিন,…………একুশ, বাইশ……তেত্রিশ। শুধু নাক না, গলা, চোখ সব চুলকাচ্ছে। বুঝল এলারজি এ্যাটাক। বিয়ের পরে এই প্রথম। পৃথিবীর কোন ওষুধ এখন কাজ করবে না।
কাজল পাশের ঘর থেকে ছুটে আসলো। ভয় পেয়ে গেল। যুদ্ধের সব কথা ভুলে যেয়ে মানবতা এসে মনে ঠায় নিল। চল, চল, তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। অহনা হাচ্চুর ফাঁকে ফাঁকে বললে, একটু… পরে… কমে… আসবে………।
পরের দিন নাস্তার টেবিলে, অহনা কাজলকে তার এলারজি এ্যাটাকের কথা বলল। এই সমস্যা না বলে কয়েই আসে। বেশ কয়েক বছর আসে নি।  কিন্তু আসলে কিছুক্ষণ খুব যন্ত্রণার মধ্যে থাকে। কাজল ভাবল, কালকের ঘটনার প্রতিশোধ এত অল্প সময়ের ব্যাবধানে আসলো। ভাগ্যটা সুপ্রসন্ন মনে হল। বুকের ছাতিটা ফুলিয়ে বলল, আমার নাক ডাকার শব্দে একটা মানুষের ঘুমের সমস্যা হয়েছিল। আর তোমার হাচ্ছুর শব্দে পুরো পাড়ার মানুষ ঘুম থেকে উঠে বসেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম বলে ওপেনিং ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করার মহা প্রসাদ পেল। আহ, কি আনন্দ! প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করা গেল।

কাজল বসার ঘরে অপেক্ষা করছে। এই বুঝি অহনা বের হয়ে গেল। মাথার মধ্যে কত চিন্তা কাজ করছে। এক সময়কার লাস্যময়ি অহনা  আর তার সাথে হাসি মুখে কথা বলে না। তার সব কিছুতেই মহা বিরক্তি। এখন দু জন দুই ঘরে শোয়। এটা কি কোন দাম্পত্য জীবন হল। একটু নরম শরীরের ছোঁয়া নে পেলে কি আর ঘুমান যায়। কিন্তু অহনা যখন ওই সবের কোন মর্যাদা দিতে পারে না, তখন আবার কিসের কি?
ঘণ্টা খানেক বসে, উঁকি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো অহনার এত সময় লাগছে কেন।  অবাক কাণ্ড। অহনার কানের মধ্যে হেড ফোন দিয়ে একটা গল্পের বই পড়ছে। কি অদ্ভুত, ওর না চলে যাবার কথা। দেখা যাক আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে।
পরের বার যেয়ে দেখা একই অবস্থা। অহনা একেবারে বইয়ের মধ্যে ঢুকে আছে। মাঝে মাঝে আবার মুচকি মুচকি হাসছে। হয়তো হাসির কোন গল্প। কাজল যেয়ে অহনার পিঠে টোকা মেরে, হাতের ইশারায় বলল, কি ব্যাপার, তোমার যাবার কি হল?
অহনা একেবারে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, কানের হেড ফোন খুলে, বইটা পাশে রেখে কাজলের দিকে তাকাল। সেই, সেই দৃষ্টি। আগে যখন ওরা প্রেম করত, তখন কোন কারণে যদি এক দিন যদি দু জনের দেখা না হত, সেই দৃষ্টি।  অহনা সেই অপলক দৃষ্টি দিয়ে কত হাজার কথা না বলত। কোথায় ছিলে, কেমন ছিলে, তোমাকে না দেখে চোখটা শুকিয়ে পাথর আর বুকটা মরুভুমি হয়ে গেছে। একেবার কাজলের বুক ছিদ্র হয়ে গলে পড়তে লাগলো। এখন বললে, কাজল, অহনার জন্যে সুন্দরবন থেকে নিজের হাতে একটা মায়াবী চোখের হরিন নিয়ে আসতে পারে। আরেক কথায় এভারেস্টের চূড়ায় যেয়ে এক মুঠো বরফ নিয়ে আসতে পারে। এই মেয়েকে ছেড়ে এক মুহূর্ত থাকা সম্ভব না।
কাজলের অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। অহনা কাজলের কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল, তোমার পাশের সোফায় গত তিন রাত একটা মেয়ে যেয়ে ঘুমায়, তা কি তুমি জান। আসলে অহনা, গত কয় রাত কাজল ঘুমিয়ে যাবার পরে তার পাশের সোফায় যেয়ে শোয়, আবার সকালে কাজলের উঠার আগে চলে আসে। অহনা বলতে লাগলো, তোমার নাক ডাকার শব্দ, এখন আমার তুলির মত, ঘুম পাড়ানির গান মনে হয়।
কাজলের সাথে সাথেই অহনার সব কিছু মিষ্টি মনে হতে লাগলো। এ যে চিনির থেকে বেশী মিষ্টি, গুড়ের থেকে বেশী মিষ্টি, মধুর থেকে বেশী মিষ্টি। এই মিষ্টিতে কোন ক্লান্তি নাই। এ যে একেবারের অন্য রকম মিষ্টি।  যে এ মিষ্টির সাধ এক বার পেয়েছে, সে-ই শুধু জানে এ কি রকম মিষ্টি।
পারিবারিক তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ অনির্দিষ্ট কালের জন্যে মুলতবী হয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১২

কাব্যগল্প: এই যে একটু শুনুন

কাব্যগল্প: এই যে একটু শুনুন
তখনো ভাঙেনি শিশিরগুলো ভোরের সবুজ ঘাসের পাতা থেকে,
শুভ্রতায় ঝলঝলে ভোরের রক্তিম উদিত সূর্যের কিরনে পরশ ছোঁয়ে নিচ্ছে,
গমের শিষে এই শিশিরের খেলায় দেখেছিলাম এক ত্রিশোর্ধ বয়সী সুবর্ণা নারীকে।
শুভ্র মুখায়বে লাবণ্য সোনালী বর্ণের মুগ্ধকর চেহেরার ভিতর খেলছিল-
সৌন্দর্যের বিলাস;
হাতে ক্যামেরা,হালকা লাল-সাদা ফুটি ফুটি বৃত্তের হাতাওয়ালা গেঞ্জিটা পরায়,
উদ্দাম বুক,মাথায় সুন্দর মানানসই এক টুপি,
মনে হচ্ছিল বারবার রাত্রির আকাশে থেকে এই দিনের শুরুতেই,
খসে পড়েছে একটি অদ্ভুত নক্ষত্ররুপী এক মায়াবি নারী,
এই দিবালোকে হেলমেট টুপিতে তাকে মানিয়েছে এতটা মাধুর্য্যবতী,
যে রুপের বর্ণনা করতে ভাষাহীনতায় কিছুটা সময়ের জন্য হয়ে যাচ্ছি বাকরুদ্ধ!

ফাল্গুনের উতলা বসন্তের প্রারম্ভ দিনের মিষ্টি সকাল,
বাড়ীর উঠোনের গাছগুলোতে দেখেছিলাম কিছু ফুটন্ত রক্তিম শিশির ঝরা গোলাপ,
ইচ্ছে ছিল দু’তিনটি গোলাপ ছিঁড়ে বের হই ভোরে ভোরেই,
এখন প্রতিটি ভোর হলেই হিমালিয়াকে জানাতে হয় মুঠোফোনে শুভ সকাল,
এরপর একগুচ্ছ লাল গোলাপের শুভেচ্ছার সাথে আমার সজীব ভালবাসা নাও,
তারপর…..?
থাক বলব না;আমি এখন স্যুটিং স্পটে,দাড়িয়ে আছি এশিয়া হাইওয়ে রোডে,
রোডের পাশে বিস্তৃত ক্ষেতে দেখতে পাচ্ছি গমের শিষে ঝলক ঝলক শিশির বিন্দু,
আস্তে আস্তে জড়ো হতে শুরু করেছে নানা বয়েসী মানুষের ঢল,
চলচ্চিত্র স্যূটিং,
চলচ্চিত্র স্যূটিং! হিমালিয়া রাতেই অবাক প্রশ্নে উচ্ছাস ঝেরে বলে ছিল,
হ্যা তেঁতুলিয়ায় চলচ্চিত্র স্যূীটং!
সে স্যূটিংয়ে আমিও একজন বাস যাত্রী হিসেবে শট দিতে যাচ্ছি,
এমনি একটা দৃশ্য দেখার জন্য শ্রাবণের বিরামহীন বৃষ্টির মত,
জড়ো হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই তেতুলিয়ার আপামর মানুষ।

কিসের স্যুটিং ভাই,নাটকের? কেউ একজন প্রশ্ন করে উঠে,
কোন নায়ক-নায়িকা এসেছে বলতে পারেন ভাই,বলে উঠে আরেকজন!
ওহ্ ফাটাফাটি ব্যাপার তো;তেতুলিয়া কি স্যুটিং স্পট হয়ে গেল নাকি,
এশিয়া হাইওয়ে রোড! পরিচালকের চয়্যেস এর তুলনা করা যায় না;
অদ্ভুত চলতো আরেকটু সামনে বলে এগিয়ে যায় কলেজ ছাত্র সিমন,
বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি হাজারও দর্শকের কৌতুহলী চোখের পাতার দিকে,
সূর্যের কিরণে আনন্দের ঝিলিকে মাতিয়ে তুলছে এই অবুঝ গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষগুলো।
রাস্তার দু’ধার। উপচে পড়া লোকারণ্যের কৌতুহলী দর্শকের ভিতর,
রাস্তার মাঝ বরাবর ক্যামেরা বসিয়ে ব্যস্ত কয়েক ক্যামেরা ম্যান,
গ্লুকোজ বিস্কুতের একটা বিজ্ঞাপনের সর্ট নিতে দু’দুটি মিনিবাস ভাড়া করা,
শটের পর শট,নায়কের ডান হাতে ব্যাগ,ব্যস্ত হয়ে পড়ে মধুখালি বাস ধরতে,
ক্লান্তির অবসাদে ব্যাগ থেকে গ্লুকোজ বের করে খেয়ে ফের মধুখালির বাস ধরা-
ঘড়ির দিকে নায়কের দৃষ্টিতে ধরা পরে ফেল পরার তীব্র যাতনার,
মধুখালির বাসটা কি সে একটি গাড়ি ওভারট্যাক করে ধরতে পারবে??

আমি হাটছি,গায়ে আমার কোর্ট-প্যান্ট,কালো স্যু,যাত্রি হই মাঝে সাঝে,
কবিত্ব মন,লেখার জগতে হারিয়ে যাই কখনো কখনো,
জীবনটাই তো এক নাট্য মঞ্চ,হতে পারে বিশাল গল্পের খন্ড খন্ড চলচ্চিত্রের,
এক একটি শট নেওয়া ঘটনার পর ঘটনা;
আমার সামনে সেই শুভ্রময়ী নক্ষত্রের মত উজ্জল তারকা,
হাতে ক্যামেরা,ক্ষণে ক্ষনে চোখে নিয়ে ক্যাপচার করেন হয়তো পরিকল্পনা দৃশ্যগুলো,
আমি অবাক হইনা;তবে লজ্জিত হই,কারণ উনার বুকের পোষাক নেহায়তই বেমানান,
তবু মেনে নিতে হয়,এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জগতে একটু খোলা-মেলা না থাকলে,
নারীর সৌন্দর্য্যে পরিস্ফুটন হয়না;
তাছাড়া একজন প্রডিউসর বলে কথা;আমি অপারগ হলেও মেনে নেই,
এই নষ্ট সভ্যতার অশালীন সংস্কৃতির অর্ধেক নষ্টচারিতা;
আমার কথা বলতে মন চায়,উনার কন্ঠ শুনতে মন উতলা হয়,
এই একুশ শতাব্দির প্রযুক্তি সভ্যতায় চলমান জীবনের ঘটনাগুলোই তো,
জীবন নাটকের মাত্রায় হতে পারে এক একটি দীর্ঘ সিনেমা।

দু’পায়ের মৃদু শব্দ,পড়ন্ত দুপুরের উষ্ণানুভবে গলা শুকিয়ে আসে,
ক্রমশ; বিদায় নিতে শুরু করেছে পাগল দর্শকগুলো,ওরা কি তাহলে বুঝেছে?
আবার পিছনে পড়ে যাই ওই শুভ্রময়ী নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বলা তারকার,
মন থেকে কেউ একজন বলে উঠে-এই যে শুনুন,
জ্বি কাকে ডাকছেন? আমাকে-
জ্বি আপনাকে,
আপনার পরিচয়?
আমি কবিতার কৃষক,বুনন রোপার মত কবিতার চারা লাগাই,
ভাষার জৈব সারে বাম্পার ফলনে আমার এক একটি কবিতা হয়ে উঠে,
বলিষ্ঠ,সুঠাম গোচের চারাগাছগুলোর মত,
কি কীটনাশক স্যার ব্যবহার করেন উত্তর আসে?
রাসায়নিক স্যার ব্যবহার করিনা,যার কারণে আমার কবিতা নগ্নতার পরশ পায় না,
ভাষায় ব্যবহার করি জৈব সার,উৎকৃষ্ট ভাষার চলমান ঘটনাগুলোই,
আচ্ছা আপনার পরিচয়?
ওই যে বললাম কবিতার কৃষক,যদি পরিচয় দেই,
জ্বি বলুন-
না থাক,আমি সামান্য নিভৃত চারী কবি,
আমাকে একটি কবিতা শুনাবেন?
না-
মানে?
আপনাকে আমার ভাল লাগছে না;
কেন?
বলব না; ওই যে স্যুটিং শুরু হয়ে গেছে,আমাকেও যদুখালির বাস ধরতে হবে,
সমস্যা নেই,বাস আবার আসবে?
স্যরি ম্যাডাম বলে আমি আজকের স্যুটিংয়ের নায়কের মত বাস ধরার জন্য দৌড়াতে থাকি
এই যে শুনুন বলে পিছন থেকে ডাকতে থাকে ওই শুভ্রময়ী উজ্জল তারকা।

05.03.12

বাবাকে আজ স্বপ্ন দেখেছি




বাবাকে আজ স্বপ্ন দেখেছি
মার্চ ০৭, ২০১২









১। বাবাকে আজ স্বপ্নে দেখেছি সাদা জোব্বা আর পাগড়িতে
সু-উচ্চ মসজিদের পাশে, শ্বেত পাথরে বাধানো শানের উপর।
সাদা দাড়িতে গাঁড় মেহেদির লাল রং, হাতে তসবি
কথা হয়নি বাবার সাথে, শুধু দূর হতে দাঁড়িয়ে দেখেছি ।



২। মনের বাসনার কথা জানাতে পারেনি, বলতে চেয়েছিলাম
আমার ছেলের কথা, আমার নিজের কথা, সবার কথা
একবার এক পলক তাকিয়ে, মুচকি হেসেছিল, কি যেন
বলতে চেয়েছিল, আমি বুঝতে পারিনি,কিন্তু কেন ?


৩।
বাবা, আমিতো তোমাকে কম ভালবাসিনি? তোমার শূন্যতাকে
এই বুকে ধারন করে চলেছি প্রতিনিয়ত, তবে কেন না দেখার
ভান করলে? আমি জানি তুমি ভাল আছি,যারা জোব্বা পরে,
হাতে তসবি থাকে, তারা সব সময় ভাল থাকে না কি?


৪।
তোমাকে স্বপ্নে দেখে সারাদিন আজ কি যে আনন্দে কেটেছি
তা আমি ছাড়া এই পৃথিবির দ্বিতীয় মানুষ আর কেউ জানেনা,
জানবেনা কোনদিন, কারন এ আনন্দ একান্তই আমার
আমি জানি কেন তুমি আমার সাথে কথা বলনি বাবা।

মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১২

ভালবেসে থাকো যদি


ভালবেসে থাকো যদি

6869c094026db6715f4c8764cc631b06

ভালবেসে থেকে যদি আমাকে,তোমার
অন্তরের নিবিড় নিরজনতায়,পুস্পি কানন পাশে
,প্রতীক্ষা-সুন্দর হয়ে কাটিও সময়
অবিচল নিরদিধায়।

যখন আসবে ফুলের বসন্ত,গন্ধ শুঁকে
ভূলে যেওনা আমাকে ফসলী প্রান্তরে
মৌ-মৌ গন্ধে।

ভূলে যেওনা বিলাসী মেহগিনি কাঠের
চেয়ারে বা টেবিলে কখনো-
অথবা যেওনা ভুলে সৌখিন ঘড়িতে
কিংবা টরচের আলোর মতো দিবালোকে।

ভালবেসে থাক যদি মনে রেখো জীবনের
অন্যতীরে,
অনুরিক্ত বেদনার সুরে-সুরে।

RAISINA TUMI

 


RAISINA TUMI

Chotto pathshala raisina tumi
Chittoranjan park e, delhi-er buke.
Nirbhoy dariye chele ek din tumi .
Bengla bhasar marjada Harate debo na bole.
Tabur tele, teener chaunir niche ,
Sabuj ghashe ....golaper gandhe
Chile tumi koto abujh.
Chotto shishura chutito khushite
Kochi ghasher upor dulite dulite.

Choto shishura aaj r choto nei ,Hoyeche anek boro.
Tabu r tiner chauni nei, Hoyeche dalan anek boro,
Shib mondirer pashe.
Hoyeche keu daktar, shikkhok, engineer
Koreche school ke gorbito/Schooler naam koreche uccho.

Hobe ki r………???
Chitto ranjan raisina pore,
Akash choya pakhir moto hote,
Korbe ki r keu school nam uccho ,Hobe ki r raisina tumi gorbito….?
Dhoshe poreche aaj- khoshe poreche aaj ,Raisinar dewal Dhulor moto.
Tai to boro dukkho lagche,Koshto hocche mone.
Shunle pore loke bole ,Tomar chele meye ki ,Raisinay pore…?

Ache kichu samajer Nami -dami thikedar,
Tader safollo karme ,
Aaj raisina dhulay dhusarito Hote choleche—
Raisina ajj bhoye kape tharo-tharo,
Ei bujhi ei holo raisinar samapto.

Fees er takay bhorechey nijer tijori
Shikkhar naam e dicche ,Shikkharthider fanki.
Ekhon jara porche tader hobe ki goti….?
Koreche jara raisiner ajj ei durgoti,
Tader koro sukho bicer, Khule- khule dao tader sada dhuti
……