[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১২

রোদ জ্বলা দুপুরে..


রোদ জ্বলা দুপুরে..

#
আরেকটি সকাল..
হারিয়ে গেল,
মরুভুমি উষ্ণতায়..

গাছের একটি পাতা-ও,
নড়ছেনা যেন আজ..

অলস সময় বয়ে যায়,
বালুঘড়ি নিয়মে..

দেয়ালে ঝোলানো,
মরচে ধরা ঘড়ি..
সময় জানাবে কীসে?
সে তো,
কেবলি অতীতের গান গায়..

বন্ধ দরজায়,
মাথা কুটে মরে..

সুখ-রাংতা মোড়ানো;
হতাশায় বাঁধা,
বুনো গাংচিল..

তবু-ও;
জানালা গলে আসে,
এক ফালি রোদ্দুর..

অগোচোরে, পড়ে থাকে..
চোখের আড়াল, ভুলে যাওয়া ক্ষণ..
গাছের ফাঁকে রোদের ঝিলিক; 

একলা পুকুর, সিমাহীন হাতছানি..
দুরে, অনেক দুরে..
রোদে পুড়ে যায়;
তবু বসে ঠায়,
কোন এক দাড়কাক..

একদিন, শীত আসবে..
প্রতীক্ষায়, বয়ে চলে..
রোদ-জ্বলা বিষণ্ণ দুপুর..। 

আঁধার আলোর বৃষ্টিবিলাস..



আঁধার আলোর বৃষ্টিবিলাস..


কোন এক ঘুম ঘুম দিনের শেষে..
দুচোখের পাতায়;
তখনো -
ফেলে আসা দিনের,
স্বপ্নছোঁয়ার স্মৃতি..।

সবুজের ক্যানভাসে,
কোন চীরসবুজ শিল্পীর;
কোমল তুলির অমর আঁচড়..

আঁধার গড়ানো শহরের,
সকল আলো গড়ানো প্রান্তরে..

হৃদয়ের স্পন্দনে যখন,
যুদ্ধজয়ের গান..
পঁচিশ হাজার তিনশ এগারো থেকে,
সতের কোটি হয়ে যায় -
ওরা এগারো জন..।

ঘুম ভেঙ্গে দিয়ে যায়,
আনন্দ আভার পরশে;
মৃদু আলো হাসির সুর..

অনেক দেরি হয়ে যাওয়া,
সন্ধ্যার রাস্তায়..

বিকেলের নরম আলোর পথে,
হঠাত্‍ মেঘলা মনের ছায়া..।

দিনের আলো নিভতেই,
মেঘেদের হাঁতছানি..

কত্ত কত দিনের শেষে,
পাগলা হাওয়া -
আবারো এলোমেলো চুল..।

জানলার কাঁচে,
উড়ে যাওয়া পর্দার গায়ে জল;
ভালবাসা মেঘকণা..
মেঘবালিকাকে,
না বলা কথার উত্তর -
মেঘের চিঠি..।

ধোঁয়া উড়া কফি টেবিল জুড়ে -
স্মৃতির রাজ্যপাট,
কাছের দুরের যত প্রিয়মুখ;
প্রিয়ক্ষণ..।

মনের আকাশ বোঝাই,
ফেলে আসা দিনের গান;
সকরুন প্রিয় সুর..


তখন নেমেছে আঁধার,
ভালবাসায়..বৃষ্টিতে..।

একান্ত নীরব ........




তোমার কাছে চাইনি কিছু,
জানাই নি মোর নাম,
তুমি যখন বিদায় নিলে
নীরব রহিলাম
একলা ছিলেম কুয়ার
ধারে নিমের ছায়াতলে,
কলস নিয়ে সবাই তখন
পাড়ায় গেছে চলে
আমায় তারা ডেকে গেল,
আয় গো বেলা যায়
কোন্ আলসে রইনু বসে
কিসের ভাবনায়।।
পদধ্বনি শুনি নাইকো
কখন তুমি এলে,
কইলে কথা ক্লান্তকন্ঠে
করুণচক্ষু মেলে
তৃষাকাতর পান্থ আমি
শুনে চমকে উঠে
জলের ধারা দিলেম
ঢেলে তোমার করপুটে
মর্মরিয়া কাঁপে পাতা,
কোকিল কোথা ডাকে
বাবলা ফুলের গন্ধ ওঠে
পল্লীপথের বাঁকে।।
যখন তুমি শুধালে নাম
পেলেম বড়ো লাজ
তোমার মনে থাকার
মতো করেছি কোন্ কাজ!
তোমায় দিতে পেরেছিলাম
একটু তৃষার জল,
এই কথাটি আমার মনে
রহিল সম্বল
কুয়ার ধারে দুপুরবেলা
তেমনি ডাকে পাখি,
তেমনি কাঁপে নিমের পাতা
আমি বসেই থাকি।।


বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

ছেঁড়া পাতার ফুটো...



তবু কঙ্কালের শোষণ-পেষণ ,
বিরক্ত কণ্ঠে নিকোটিনের জন্যে হাঁকডাক ।
তোমাদের আঙ্গিনায় থাকা কুকুরটার মত ।

কপালে যদি বিষফোঁড়া ওঠে
চাইলেও কি তখন সেজদায় যাওয়া যায় ?

মরচেধরা লোহার কাস্তে ,
বহুদিনের স্মৃতি দিয়ে ঠাঁসা ।
কিন্তু এত স্মৃতিও ঘরের
অধিকার দিতে ব্যর্থ ।

আমি আজও আশা নামের একটা শব্দকে
নিজ অভিধানে নিতে চাইছি ।
স্বপ্নে কখনোবা সে আসে ,
কিন্তু আমার প্রিয়জনেরা কখনো আমায়
কুম্ভকর্ণ হতে দেয় না ।

যেদিন আমার ছায়া আর আমার নয়,
সে দিনটার অপেক্ষায় আছি ।
সেদিনের আগে হারতে চাই না ।

বৃষ্টি মুহূর্ত



 অনেক দিন পরে এমন সরু আর হিলহিলে কোমর দেখল অনিরুদ্ধ। মেয়েটা রোগা নয়, একদমই ঠিক ঠিক। লম্বা, ছিপছিপে চেহারা, মাথার চুলগুলো এলোমেলো, গায়ের রং একটু চাপা, নাক-চোখ শার্প। সুশ্রী। একঝলক তাকালেই বোঝা যায় বেশ বুদ্ধিমতী। সেই সঙ্গে একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে– শাড়ি পরার অভ্যেস নেই। তবে শাড়ি পরেছে, কারণ নির্ঘাত শাড়ি পরতে হয়। শাড়ি পরার কায়দাটা অনেকটাই লো-ওয়েস্ট জিনস পরার মতো। এত নিচে ঠিক কেউ শাড়ি পরে না। তাই জন্যে ওর কোমর অনেকটাই উন্মুক্ত।
মেয়েটার কানে মোবাইল, এক ঝাপড়া চুল কান আর কাঁধ ঢেকে ঝুলছে। কথা বলছে হিন্দিতে। অনর্গল। বাস স্টপে বেশ ক’দিন পর পরই মেয়েটার সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে অনিরুদ্ধর। অথবা এভাবে বলা যায় মেয়েটার সঙ্গে কোন সময় দেখা হতে পারে অনিরুদ্ধ জেনে গেছে। সেই সময়টাই সে এসে দাঁড়াচ্ছে বাস স্টপে। সেই একইভাবে শাড়ি পরা। কোমর থেকে গোঁজা শাড়ি ভীষণ বিপজ্জনকভাবে আটকে, যেন যে কোনও মুহূর্তে খুলে যেতে পারে।
মধ্য চল্লিশের অনিরুদ্ধ ঘোষ। বাস স্টপে আরও অনেকের চোখ মেয়েটার দিকে। ঠিক মেয়েটার দিকে নয়, বরং বলা যায় মেয়েটার কোমরের দিকে। অনিরুদ্ধের ভেতরটা চিড়বিড় করে ওঠে। সব দেখছে দেখো, যেন সিনেমা দেখছে।
রোজকারের মতো একই বাসে ওঠে অনিরুদ্ধ। আজ সিট পেয়ে যায় মেয়েটার মুখোমুখি। হঠাৎ মেয়েটা বলল, ‘আজ আমাদের কপাল ভাল বলুন, পর পর ফাঁকা বাস।’
‘এখানে একটু অপেক্ষা করলে ফাঁকা বাস পাওয়া যায়।’ অনিরুদ্ধ বলল।
‘ওরে বাবা! ফাঁকা বাস আসে। কিন্তু সবাই হুড়মুড় করে এমন ওঠে, আর সিট পাই না।’
‘হ্যাঁ, তা তো উঠবেই।’
‘ছেলেরা সব সিট পাবে। যদি একটা-আধটা থাকে তখন বসি। কটা বাস ছাড়ব বলুন। ছেলেদের সঙ্গে আমি পারি!’
‘ঠিক কথা।’
‘কিন্তু আমি একটা জিনিস দেখেছি, আপনি কখনও বাসের সিট পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন না, কেন?’
‘ইচ্ছে করে না।’
‘ইশ আপনার ইচ্ছে করলে আমার ভাল হত, আপনি আগে উঠে আমার সিট রাখতেন।’

শারদ আকাশ মায়াবিকেল



শারদ আকাশ ছিল সেদিন ;
ছিল তুলোর মত মেঘমালাদের অবিশ্রান্ত লুটোপুটি।
তুমি- আমি ; শুধু আমরা দুজন বসে ছিলাম
বিকেলের সোনারোদ চুম খাওয়া জলের ধারে ।

কি অদ্ভুত নির্লিপ্ত দুটি হৃদয় ;
তুমি- আমি আমরা দুজন পাশাপাশি ।
স্থির দৃষ্টির গহীনে পৃথিবীর তাবৎ পিপাসা-
কত শতকথা- স্বপ্নকথা, ভিড় করেছে মনের কোনে;
হয়তঃ তোমারও ।

শান্ত সেই পুকুরের জল কান পেতেছে;
কান পেতেছে পাড়ে দাঁড়ানো সারি সারি বৃক্ষরাজি -
যেখানে পাতা ঝরে পড়ার মর্মর ধ্বনিতে চকিত হয় পথিক;
নিরবতা মোড়ানো অখণ্ড সেই মায়াবিকেল।
একজোড়া শালিখ খুব সন্তর্পণে দিয়েছে উঁকি
পাতার আড়াল থেকে-
রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এসেছে দলবেঁধে;
এসেছে জ্যোৎস্নার জোনাকিরা।

নিঃশব্দে আসা শব্দরাশি নিভৃতে বেঁধেছে বাসা কণ্ঠনালীর নিচে;
তবু ভাঙ্গেনি নিরবতা।
না তুমি না আমি ।
বিভোর গভীর স্বপ্নবৃষ্টিতে ভিজেছে হৃদয়;
যেন কেটেছে অনন্ত প্রহর !!

মৃদু বাতাসে শিরশির দেহে সবুজ পাতাদের অবনত মুখ।
ভীষণ প্রসন্ন সেই শারদ আকাশ ছিল সেদিন।

না তোমার কপালে ছিলনা কোন টিপ;
না কোন সাজ সরাঞ্জম।
বিন্দু বিন্দু ক্লান্তিঘাম; কি ভীষণ গর্বে ফুটেছে-
মেতেছে নিজেদের অস্তিত্ব দীর্ঘায়িত করার প্রতিযোগিতায় ।
আমার ভেতরে বয়েছিল যৌবনা ব্রক্ষ্মপুত্রের শান্ত প্রবাহ;
কি মায়া মেখেছে প্রকৃতি তোমার ওই মুখে !
যেখানে বড় অসহায় আমার শব্দভেলা;
এ যেন নিজের মাঝে আপন হাতে গড়া মায়াদ্বীপে
কাশফুলেদের নরম আদর ছোঁয়া ।

তোমার আজন্ম কাজলমাখা চোখ জোড়া ;
যে চোখে তাকিয়ে কেটে যেতে পারে সহস্র শতাব্দী-
যেখানে নিঃশঙ্ক চিত্ত্যে রাখতে পারি জমা
আমার এই এক জীবনে সঞ্চিত সকল দুঃখমালা।