অনেক দিন পরে এমন সরু আর হিলহিলে কোমর দেখল অনিরুদ্ধ। মেয়েটা রোগা নয়, একদমই ঠিক ঠিক। লম্বা, ছিপছিপে চেহারা, মাথার চুলগুলো এলোমেলো, গায়ের রং একটু চাপা, নাক-চোখ শার্প। সুশ্রী। একঝলক তাকালেই বোঝা যায় বেশ বুদ্ধিমতী। সেই সঙ্গে একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে– শাড়ি পরার অভ্যেস নেই। তবে শাড়ি পরেছে, কারণ নির্ঘাত শাড়ি পরতে হয়। শাড়ি পরার কায়দাটা অনেকটাই লো-ওয়েস্ট জিনস পরার মতো। এত নিচে ঠিক কেউ শাড়ি পরে না। তাই জন্যে ওর কোমর অনেকটাই উন্মুক্ত।
মেয়েটার কানে মোবাইল, এক ঝাপড়া চুল কান আর কাঁধ ঢেকে ঝুলছে। কথা বলছে হিন্দিতে। অনর্গল। বাস স্টপে বেশ ক’দিন পর পরই মেয়েটার সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে অনিরুদ্ধর। অথবা এভাবে বলা যায় মেয়েটার সঙ্গে কোন সময় দেখা হতে পারে অনিরুদ্ধ জেনে গেছে। সেই সময়টাই সে এসে দাঁড়াচ্ছে বাস স্টপে। সেই একইভাবে শাড়ি পরা। কোমর থেকে গোঁজা শাড়ি ভীষণ বিপজ্জনকভাবে আটকে, যেন যে কোনও মুহূর্তে খুলে যেতে পারে।
মধ্য চল্লিশের অনিরুদ্ধ ঘোষ। বাস স্টপে আরও অনেকের চোখ মেয়েটার দিকে। ঠিক মেয়েটার দিকে নয়, বরং বলা যায় মেয়েটার কোমরের দিকে। অনিরুদ্ধের ভেতরটা চিড়বিড় করে ওঠে। সব দেখছে দেখো, যেন সিনেমা দেখছে।
রোজকারের মতো একই বাসে ওঠে অনিরুদ্ধ। আজ সিট পেয়ে যায় মেয়েটার মুখোমুখি। হঠাৎ মেয়েটা বলল, ‘আজ আমাদের কপাল ভাল বলুন, পর পর ফাঁকা বাস।’
‘এখানে একটু অপেক্ষা করলে ফাঁকা বাস পাওয়া যায়।’ অনিরুদ্ধ বলল।
‘ওরে বাবা! ফাঁকা বাস আসে। কিন্তু সবাই হুড়মুড় করে এমন ওঠে, আর সিট পাই না।’
‘হ্যাঁ, তা তো উঠবেই।’
‘ছেলেরা সব সিট পাবে। যদি একটা-আধটা থাকে তখন বসি। কটা বাস ছাড়ব বলুন। ছেলেদের সঙ্গে আমি পারি!’
‘ঠিক কথা।’
‘কিন্তু আমি একটা জিনিস দেখেছি, আপনি কখনও বাসের সিট পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন না, কেন?’
‘ইচ্ছে করে না।’
‘ইশ আপনার ইচ্ছে করলে আমার ভাল হত, আপনি আগে উঠে আমার সিট রাখতেন।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন