[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১১

প্রতিক্ষার জন্য
এক নিষ্ঠুর শরৎ এর বিকেলে
প্রতীক্ষাকে সাজিয়ে গুছিয়ে তোমার জন্য বসে আছি
আসবে বলে অনেক আদোরে শিউলি ফুটিয়েছি, দোলনাটাকে
দিয়েছিলাম বিশ্রাম, রংধনু কে আকাশে আটকে রেখেছি
এক বিকালে যুগল হয়ে দেখবো বলে।
কত ভ্রমর আসে গুন গুন করে
চর দখলের জন্য ঘোরে চারপাশে কিন্তু
যার জন্য চর হয়ে নদীর পাশে পরে আছি
তার দেখাই নেই।
বারন্ত সময় ঘুটঘুটে কালো হয় কৃষ্ণপক্ষ রাতে।
প্রতিক্ষার অবসান হলেও থেকে যায়
আরো এক প্রতিক্ষা নিজেকে নিয়ে ভাবনার জন্য
ভালোই হলো আসছে হেমন্তে এই প্রাপ্তির পান্ডুলিপি নিয়ে
তোমার দুয়ারে হাজির হবো।
ভুল ভূগোলের স্মৃতি নিয়ে,
দেখবো শরৎ থেকে হেমন্ত তে
প্রতিক্ষাতে কি সুখ আছে।

valobashaste vhoy naay

ভালোবাসতে ভয় নেই
Add caption
আমার এখন ভালোবাসি বলতে ভয় হয়
ভালোবাসতে ভয় হয় না;
জীবনের যে ধাপ গুলো শুকিয়ে যায়
সেই আরশীতে মুখ দেখতে ভয় পাই
তবুও তো সাধ জাগে নিজেকে নিংড়ে
কিংবা আগুনে পুড়ে দেখে নিতে
সত্যি ভালোবাসি কিনা।
তারপর প্রকাশ,
কারন প্রকাশে যদি জমে যায় অচেনা গন্ধ
তবে মর্জদা হীন হয়ে ভালোবাসা
তাসের আসরে জোকার হবে।
তার থেকে সেই ভালো
বুকে জমিলো ধোঁয়া
বুকেরও আগুনে ।
ডুবে যাওয়া চেতনা গুলোর
জেগে ওঠা চরে বালুর আস্তরন
সেখানে জমে না পরাজয়ের জল,
শুধু ভালোবাসার শিকড় বসিয়ে
তুমি দখল করে নিলে যে ভূমি
তার উপরে আগাছা হয়েই থেকে যাই,
সর্বদা এক ভয় নিয়ে
কখন কে এসে মাড়িয়ে দিয়ে যায়।
রসে বশে সম্পৃক্ত সংসারে
এখনো আমি ভালোবাসি বলতে ভয় পাই
কিশোর পাগল হয়ে ভালোবাসতে ভয় পাই না ।

শিশির ভেজা বসন্ত

শিশির ভেজা বসন্ত
Photobucket
[ছবিঃ আপেল ফুল। সাধারণের চেয়ে একটু বেশী শীত না পরলে যে ফুল ফোটে না। এই ছবিটি নেয়ার জন্য আমাকে লন্ডনে তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল]
তোমাকে জানতে চেয়েছি
পৌষের হিমেল বাতাসে
চৈতী খর দহনে
বৈশাখী ঝড় জলে
আর শরতের সুনীল আকাশে।
Photobucket
ছবিঃ আপেল ফুলের কলি।
তোমাকে দেখতে চেয়েছি
জ্যোৎস্না রাতে ধবল চাঁদের পাশে
কাজল মেঘের গহনে
অবাক বিস্ময় বিহ্বলে
পাপড়ি ছড়ানো পথের দেশে।

Photobucket
ছবিঃ কাচা আপেল গাছে ঝুলছে।
স্বপনের সুদূরে সোনালী নদী
ওপাড়ে বয়ে চলে ঝিলিমিলি শান্তি
মরু প্রান্তরে, কাটে অমানিশা!
পথ ভোলা পথিকের পথের দিশা
প্রতীক্ষার জ্বলন্ত অগ্নিগিরি নিয়ে বুকে
বসে আছি, দেখব শিশির স্নাত তোমাকে।

একটি ছবি, একটি গান ও কিছু সৃতি

একটি ছবি, একটি গান ও কিছু সৃতি

উপরের ছবিটা এক দেখলাম আমাদের প্রিয় ব্লগার মুরুব্বীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে। গান খুব ভালোবাসি বিধায় ছবিটা দেখার সাথে সাথেই সে গানের কথা মনে পড়লো, তা হল আকবরের গাওয়া তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রান জুড়িয়ে আসে, আরও কিছু সময় তুমি থাকো আমার কাছে।
গানটা মনে হতেই নেটে খুজলাম হাত পাখা নিয়ে কি লেখা আছে? পেয়ে গেলাম বিবেকবার্তা তে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখা :
“হাজার হাজার বছর ধরে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে হাত পাখা। কবি-সাহিত্যিক, বাউল শিল্পীরা হাতপাখা নিয়ে বিভিন্ন গান, কবিতা ও গীত রচনা করেছেন এবং তুলে ধরেছেন এর সৌন্দর্যমন্ডিত ঐতিহ্য। হাতপাখা নিয়ে মজার মজার রূপকথা, গল্প-কাহিনীও আমাদের সমাজে প্রচলিত।
রোদেলা দুপুরে কিশোরীর দল কারুকার্য মন্ডিত তালপাখা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। মধ্যবয়সী -তরুণী গাছের ডালে বা আড়ালে বসে তালপাখা হাতে দূরের রাখাল ছেলেটির বাঁশির সুর শুনছে। কৃষক মাঠ থেকে ফেরার পর কৃষানী ব্যস্ত হয়ে পড়ছে হাতপাখার শীতল পরশে বা বাতাসে তাকে জুড়িয়ে দিতে। নতুবা মধ্যবর্তী সুন্দরী ললনা প্রিয়জনের জন্য বুনছে নকঁশা ও কারুকার্য মন্ডিত সুন্দর হাতপাখা।
এ হাত পাখার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে তার আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সব কাহিনী। এগুলো তো আবহমান গ্রাম বাংলার চিরাচরিত অতি পরিচিত দৃশ্য। প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক দাপটে নাগরিক জীবনে হাতপাখার প্রচলন খুব বেশী না হলেও তীব্র গরমে যখন শহরবাসী বিপর্যস্ত তখন ক্ষনিকের জন্য হলেও মনে করিয়ে দেয় হাতপাখার শীতল পরশ বা বাতাসের কথা।
ইচ্ছে করে হাতে একটা তালপাখা নিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে হারিয়ে যাই গভীর অরণ্যে। আমাদের গ্রাম বাংলার লোকজ সংস্কৃতিতে হাতপাখার প্রচলন বহুদিনের হলেও শহরজীবনে এর প্রচলন খুব বেশী দিনের নয়। এখন আমরা প্রায়ই দেখতে পাই হাতপাখার নৃত্য। শহরের সুন্দরী, শিক্ষিতা ফ্যাশন সচেতন তরুণীর হাতে কারুকার্য মন্ডিত বাহারি রঙের হাতপাখা। আজকাল হাত পাখা ফ্যাশনের উপাদানে পরিণত হয়েছে। আসুন জেনে নিই- রকমারি ধরণের হাত পাখার কথা। বানাতে ইচ্ছা করলে কীভাবে বানাবেন, কোথায় পাবেন, দরদামইবা কেমন?

হাতপাখার ধরণঃ বিভিন্ন ধরণের হাত পাখার মধ্যে তালপাতার হাতপাখার প্রচলনই বেশি। এছাড়াও বাহারী রঙ ও ডিজাইনের হাত পাখা দেখতে পাই। প্লাষ্টিক বেত, মোতাইক, কাগজ দিয়ে বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের হাতপাখা তৈরী করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ হাত পাখার হাতল হিসেবে জুড়ে দেয়া হয় বাঁশের চিকন পাখা, বেত, লাঠি ইত্যাদি। তবে আজকাল কাপড় ও সুতার কারুকার্যমন্ডিত বাহারি ধরণের হাত পাখা পাওয়া যায়। যদি বানাতে চান- নিজের পছন্দ ও ইচ্ছামতো হাত পাখা বানাতে চাইলে আপনাকে প্রথমে নির্বাচন করতে হবে আপনি কী উপকরণ দিয়ে এবং কী ধরণের পাখা বানাবেন। যদি তালপাতার পাখা বানাতে চান তাহলে বাজার থেকে যেনতেন তাল পাতার পাখা এনে এর রূপ ও সৌন্দর্য পাল্টে দিতে পারেন আপনার নিজস্ব মেধা ও মননের মাধ্যমে। এর জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে হরেক রকমের রঙ ও সুতা, ফলস, শাড়ির পাড় ও লেস।
এখন আপনার নিজের পছন্দমতো বানিয়ে নিন একটি হাতপাখা। যা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শীতল বাতাসে প্রশান্তি জোগাবে। এছাড়া আপনি বানাতে পারেন বাঁশ, বেত ও মোতাইকের সাহায্যে চারকোনা অথবা গোলাকার লম্বা হাতলযুক্ত হাত পাখা। তাছাড়া সুন্দর ও নকঁশা কারুকার্যমন্ডিত হাত পাখা বানিয়ে প্রিয় জনকে উপহারও দিতে পারেন। কোথায় পাবেন- শহরের বিভিন্ন মোড়ে বাহারি ধরনের হাতপাখা বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে চকবাজার, রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, পুলিশ লাইন, কুমিল্লা রেল ষ্টেশন, টমছমব্রীজ অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন বিপনি বিতানেও হাতপাখার সন্ধান মেলে। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসব, মেলায় এবং ফ্যাশন হাউসে নকশা ও কারুকার্যমন্ডিত সুন্দর হাতপাখা পাওয়া যায়। দরদামঃ হাত পাখার দর-দাম স্থান ও মান ভেদে হয়ে থাকে। তবে শহরের বিভিন্ন ফুটপাত থেকে ১০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে হাতপাখা কিনতে পারবেন। মেলা, উৎসব এবং বিপনি বিতান থেকে হাতপাখা কিনতে গেলে দাম একটু বেশিই পড়বে।

সেই সাথে পেয়ে গেলাম তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রান জুড়িয়ে আসে, আরও কিছু সময় তুমি থাকো আমার কাছে।গানটির মিউজিক ভিডিও, যত দূর মনে পড়ে দেশের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি তে দেখানো হয়েছিলো।

মজার ব্যপার হল এই গানটির মিউজিক ভিডিও দেখতে গিয়েই চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছু মজার সৃতি। এই মিউজিক ভিডিও টি যেখানে চ্রিত্রায়িত হয়েছে, সেখানেই ব্লগারস ফোরাম এর বার্ষিক বনভোজন ২০১১ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।




পুরো বাড়ীটার ছবি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করতে পারেন : যেখানে ব্লগারস ফোরাম এর বার্ষিক বনভোজন ২০১১ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
কেন কিছু বলিনি সেদিন
Add caption
যেতে যেতে থেমেছিলে একবার
বুঝেছিলাম সে তো সংকেত ছিল ফিরবার
কিছু কথা মনে ছিল বলতে গিয়েও
বলতে পারিনি
ক্ষতি হবে জানতাম এতটা ভাবিনি,
শূণ্য হব জানতাম—–এতটা ভাবিনি।

ভেবেছিলাম আমি ভালোবাসি তোমাকে
ভালোবাসা ছেড়ে দিলেই ভুলে যাব তোমাকে
এতটা কঠিন হবে ভুলে যাওয়া তোমাকে
বুঝতে পারিনি
অনুশোচনা হবে জানতাম এতটা ভাবিনি,
শূণ্য হব জানতাম—এতটা ভাবিনি।

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

নন্দিতা, এই লেখা তোমার জন্য...

নন্দিতা, এই লেখা তোমার জন্য...
নন্দিতার সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিলো খুব সাধারণভাবে। আমি ঢাকা থেকে বাসে করে সিরাজগঞ্জে আসছিলাম, আমার পাশের সিটটাতেই বসেছিলো নন্দিতা। বয়স আঠারো-উনিশের মতো হবে (মেয়েদের বয়স বলার ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সময়ই আমার ধারণা ভুল হয়ে থাকে), একটু লম্বাই হবে, ধরুন পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি, দেখতে শিল্পা শেঠীর মতো-হ্যাঁ, ঠিক এই নামটাই আমার মনে হলো। বাস ছাড়ার পাঁচ মিনিট আগে সে বাসে উঠলো, বিদায় দিতে সাথে এসেছিলো গুরুগম্ভীর স্বভাবের একজন বয়স্ক ব্যক্তি, কথা শুনে মনে হলো মামা সম্পর্কীয়।
দূরপাল্লার যাত্রাগুলোতে বাসে পাশের সিটে কোনো সুন্দরী থাকলে সময়টা খুব খারাপ কাটে না, কথা বলা হোক বা না হোক, আড়চোখে তাকাতে তাকাতে আর মেয়েটিকে নিয়ে নানা চিন্তা করতে করতে কখন যেনো গন্তব্যস্থল এসে যায়। সেবার অবশ্য এরকম কিছু হয়নি, হয়নি নন্দিতার জন্য। বাস ছেড়েছে দশ মিনিটও হয়নি, নন্দিতা আমার দিকে ফিরে সুন্দর একটি হাসি দিয়ে রিনরিনে কন্ঠে বলল, ‘আমি নন্দিতা, থাকি সুনামগঞ্জে, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকাতে মামার কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আপনি?’ আমি নন্দিতার সাবলীল কথা বলার দক্ষতায় প্রচন্ড বিমোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ডাক্তার, এটা শোনার পর বাচ্চা মানুষের মতো বায়না ধরলো বিভিন্ন অপারেশনের গল্প শুনবে। কথায় কথায় এক সময় জানিয়ে দিলো ছোটবেলায় তার খুব ডাক্তার হবার ইচ্ছে ছিলো, বন্ধুরা যখন ডাক্তার-রোগী খেলতো, সবসময় সে ডাক্তারই হতো। কমার্সের ছাত্রী হওয়াতে সেই স্বপ্নটা একটা বড় ধাক্কা খেলো। কোথা থেকে যে সময় পেরিয়ে গেলো, আমরা বুঝতেই পারলাম না। যমুনা সেতু পার হয়ে বাস সয়দাবাদে আসলে আমি নেমে গেলাম। নন্দিতা জানালার পাশে বসে হাত নাড়িয়ে হাসিমুখে বিদায় নিলো। আর আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার হাসপাতালের দিকে রওয়ানা দিলাম।
সেই ঘটনার প্রায় চার মাস পর। বিভিন্ন রকম ব্যস্ততায় নন্দিতাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। একদিন হঠাৎ করে লাল সালোয়ার কামিজ পরে মোহনীয় রুপে হাসপাতালে এসে আমার সামনে হাজির। প্রথমে চিনতেই পারি নি, ‘আমি নন্দিতা’ বলার পর একটু লজ্জাই পেলাম। মিষ্টি হেসে আমার হাতে একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘ভাইয়া, অবশ্যই আসবেন কিন্তু।’ কার্ডটা খুলে দেখি নন্দিতার বিয়ের কার্ড, ওর দিকে তাকাতেই দেখি লজ্জায় ওর ফর্সা গালটা রক্তিম হয়ে উঠেছে। জানালো বিয়ের পর ঢাকাতেই থাকবে, ওর স্বামী ঢাকাতে একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে ভালো বেতনের চাকরি করে। এই অল্প বয়সে ওকে বিয়ে দেবার রহস্যটা এবার বুঝতে পারলাম।
বিয়েতে আমি যেতে পারি নি, ঐ সময়ে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য ঢাকাতে থাকায়। এরপর অনেকদিন আর দেখা হলো না নন্দিতার সাথে, অবশ্য দেখা হবার কথাও না।
প্রায় এক বছর পর। একদিন ছুটিতে ঢাকায় গেলে আমার এক বন্ধু বিকেল বেলায় আমাকে নিয়ে তার এক বন্ধুর বাসায় এলো একটি জরূরী কাজের কথা বলে, আমাকে অনেকটা জোর করেই নিয়ে আসলো। নন্দিতা! এবার আর চিনতে কষ্ট হয় নি। বুঝতে পারলাম আমাকে ষড়যন্ত্র করেই আনা হয়েছে চমকে দেবার জন্য, আমিও চমকিত হলাম। আমার বন্ধুবরের বন্ধুর স্ত্রী নন্দিতা। কোনো একদিন কথা প্রসঙ্গে আমার বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পেরেছে আমার কথা, অতএব আমাকে না জানতে দিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে আসা। নন্দিতার স্বামী ভদ্রলোকটিকে আমার ভালোই লাগলো। চমৎকার করে কথা বলেন, প্রাণখোলা ধরনের। হাসি, ঠাট্টায়, গল্পে রাতের খাবারের সময় হলে নন্দিতা না খাইয়ে ছাড়তে চাইলো না। আমার বন্ধুর আবার ভোজন রসিক হিসেবে খুব নাম ডাক, তাই অনুরোধটা এড়ানো গেলো না।
নন্দিতা যখন খাবারের ব্যবস্থা করতে গেলো, তখন ওর স্বামী বললো নন্দিতার ব্রেইন টিউমার হয়েছে, আগামী সপ্তাহে ঢাকার একটা বড় হাসপাতালে অপারেশন হবে। আমি চমকে গেলাম। কিছুক্ষন কোনো কথাই বলতে পারলাম না। রাতে খাবারের টেবিলে নন্দিতা অনেক মজার মজার কথা বললো, খাবারটাও দারুন হলো। কিন্তু কোনো কথাই আমি আর মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারলাম না, খাবারটাও গলা দিয়ে ঢুকতে পারলো না। বাকীটা সময় ফ্যাল ফ্যাল করেই তাকিয়ে রইলাম।
দুই সপ্তাহ আগে নন্দিতার অপারেশন হলো, আমি গত সপ্তাহে ঢাকায় গেলে ওকে দেখতে হাসপাতালে গেলাম। ওকে কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে। সেই আগের মতোই চঞ্চল, ছটফটেই আছে। আমি যাবার পর বলল, ‘ভাইয়া, আমার হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টে জিবিএম, গ্রেড-ফোর এসেছে। আমার স্বামী আমাকে জানতেই দেই নি। আমি নিজে ফাইলে রিপোর্ট দেখলাম। এরপর মোবাইলে ইন্টারনেটে দেখলাম খুব বেশী হলে দেড়-থেকে দুই বছর বাঁচবো। দেখুন তো ভাইয়া, রাব্বি (নন্দিতার স্বামী) সারাক্ষন মনমরা হয়ে থাকে। আমি ওকে বললাম, এই দুইটা বছর আনন্দে বেড়াই, আর ও বলছে কি রেডিও না কেমোর জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবে। আমার চিন্তায় সারাক্ষন অস্থির হয়ে থাকে। আপনি একটু ওকে বোঝান তো।’ আমি আবারও ফ্যাল ফ্যাল হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এক সময় নন্দিতা বললো, ‘ভাইয়া, বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর হলো, এখনো কোনো বাবু নেন নাই! তাড়াতাড়ি নিয়ে নেন, আমি দেখে যাই। আর মেয়ে হলে নাম রাখবেন নন্দিতা, কি রাজী আছেন তো?’ ওর পাশে বেশীক্ষন থাকাটা খুব কষ্টকর হয়ে উঠলো। আমি ব্যস্ততার কথা বলে চলে আসলাম। কেবিনের দরজায় এসে পিছনে তাকিয়ে দেখি, রাব্বি গভীর মমতায় নন্দিতার বিছানার পাশে বসে ওর হাত ধরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম। এমন সময় মুষলধারে বৃষ্টি নামলো। আমি আশে পাশে কোথাও ঠাঁই খুঁজলাম না। বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটতে থাকলাম। এক সময় লক্ষ্য করলাম বৃষ্টির পানির সাথে আমার চোখের পানিও মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।