[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১২

আমি ডুবে যেতে চাই তোর মাঝে

 

আমি ডুবে যেতে চাই তোর মাঝে


কাননিকা জুড়ে অজস্র বুনোফুলে আমি তোর ছায়া দেখি
খজ্যোতি যেমন টিপটিপ করে জ্বলে নিভে
তেমনি আমার বুকে তুই জ্বলতে থাকিস অবিরাম;
আমি ব্যাথাতুর কপিঞ্জল হয়ে
ঘুরে বেড়াই
জনপদ থেকে জনপদে।

কোন দুরদেশে তূই;
কোন কুহেলী মায়ায় জড়িয়েছিস আমায়,
আমার ব্যাথার নদী;
আমি তোর ভালবাসার ঝর্নাধারায় স্নান করতে চাই
অবিরল ভিঁজে যেতে চাই;

আমি সব শ্রান্তি পেছনে ফেলে
কঞ্চুলী সরিয়ে তোর কবোষ্ণ বুকের গন্ধ নিতে চাই;
কষিত ভালোবাসার ছায়া দেখতে চাই।

অবিরাম শ্রাবন ধারা বয়ে যাক -
আমি ডুবে যেতে চাই তোর মাঝে!

আমি যেন কেমন আছি ?


 


 মা বাবার সাথে আমি...

 মা বাবার সাথে আমি...


বাবা ভাইয়া আমি আর ভাবী


ভাল লাগা একটা ছবি

ভাইয়া এবং আব্বা..


 উমবা হজ্ব করার পর তুলা ছবি


 উমবা হজ্ব করার পর তুলা ছবি


আমার সাথে বড় আপা


আমি যেন কেমন আছি ?




এ স্বাধীণতা হায়

 
এ স্বাধীণতা হায়

“শালা, দিলো সকাল সকাল মেজাজটা খিঁচড়ে। ঢ্যামনা বুড়ো শালা, যত সব কেত্তন, কি না বালের স্বাধীনতা, সকাল বেলা উঠে পতাকা মারাও, প্রভাত ফেরি যাও, ওঠো গো ভারত লক্ষ্মী গাও।ইল্লি আরকি যতসব ঢ্যমনা বুড়োর কারবার”। সকাল বেলা পঞ্চুদার চায়ের দোকানে ঢুকতেই শ্যামের কথা গুলো কানে এসে বাজলো। জিঞ্জাসা করলাম কিরে শ্যাম সকাল সকাল কাকে খিস্তি করছিস। শ্যাম বলে উঠলো “আর বলো না শুভ দা, আমার বাপটা, সালা বুড়ো ঘাটের মরা সকাল বেলা ঘুম থেকে তুলে বলে আজকে তো ১৫ই আগাষ্ট স্কুলে যা পতাকা তোল পাড়ার প্রভাত ফেরিতে যা।তুমি বলো আজকে সালা ছুটির দিন একটু বেলা করে ঘুমাবো তা নয় দিলো সাত সকালে ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে কোন আক্কেল আছে সালার। নিজে তো বুড়ো হাবড়া সালা ঘুম হয় না রাতে সক্কাল সক্কাল উঠে পড়ে। তা বলে কাঁচা ঘুমটার একেবারে পেছন মেরে দেবে? আজকে শালা ছুটির দিন কোথায় ১১টায় ঘুম থেকে উঠবো, চা খাবো, তারপর একটু মেয়ে দেখতে বেরোবো, দুপুরে সালা মাংস দিয়ে ভাত মারবো, তারপর দুপুরে ক্লাবে গিয়ে তাস পেটাবো আর সন্ধ্যে বেলা হলে একটু মাইরি লাল জল হবে না, তা নয়, সালা ভোর বেলা উঠে প্রভাত ফেরি মারাতে হবে, পেছন ফাটিয়ে ৫ মাইল হেঁটে লোক দেখাতে হবে। মাইরি সালা কোন রসকষ নেই গুরু”।পঞ্চুর চা খেয়ে দাম মিটিয়ে শ্যাম কে একটা হাসি দিয়ে বেড়িয়ে এলাম। মাঠে যাবো একটু। রাস্ত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শ্যাম এর কথা গুলোই ভাবছিলাম। সত্যিই তো, আজ ১৫ই আগষ্ট, আরেকটা ছুটির দিন।একটু আয়েশ করে ঘুমানো তারপর নিয়ম ভাঙা রুটিন, দুপুরে মাংসভাত রাতে রঙ্গিন জল, তা নইলে আর স্বাধীনতা দিবস কেনো।শ্যামের বাবা গোপালবাবু পুরোন মানুষ, তিনি বুঝবেন কেনো এসব।তাঁর বাবা গান্ধীজির আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেল খেটেছেন। তিনি কি করে বুঝবেন ছেলের স্বাধীনতা আসলে কি।

আমরাই কি বুঝি স্বাধীনতা আসলে কি? আমরা মানে যারা বি.এ, এম.এ পাস করে নিজেদের শিক্ষিত বলি তারাই বা বুঝি কোথায় স্বাধীনতা দিবসের মানে। আমরা শুধু পাড়ায় পতাকা তুলি, বাচ্চাদের লজেন্স বিলি করি তারপর প্রভাত ফেরি করি, গালার শিরা ফাটিয়ে গাই স্বদেশী গান, তাও ঐ ২৬সে কি ২৩সে কিংম্বা ১৫ই অথবা নিদেন পক্ষে ওই ২সরা। বছরের আর বাকি কটা দিন কোথা থাকে আমাদের স্বাধীনতা বোধ, কোথায়ই বা যায় আমাদের আদর্শ।ওই শ্যামের ভাষায় বলা যাতে পারে ছিঁড়তে।১৫ই এলে কি বা ছিঁড়ে ফেলি আমরা? কি না অরকুট কিংম্বা ফেস বুকে ইউটিউব থেকে চাড্ডি দেশাত্ববোধক গানের লিঙ্ক, কি গোটা কয়েক এসএমএস পাড়ায় দুটো ফ্ল্যাগ ব্যাস আমাদের স্বাধীনতা বোধ ওখানেই শেষ। বছরের আর বাকি কটা দিন কি করি আমরা? না সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠি অফিসে যাই সন্ধ্যেবেলা হরির চায়ের দোকানে গুলতানি মারি, বাঞ্চত সচিনের ১০০য় ১০০ হবে কিনা, সৌরভটাকে মাইরি ডালমিয়া খেয়ে নিল, সিপিএম সালা ৩০ বছর বাংলার কল কেলিয়ে দিল,মমতা মাইরি পরিবর্তন আনতে পারবে, মনমোহন সনিয়ার আঁচল ধরে রাজনিতীর বৈতরণী পার হবে, নইলে পাশের বাড়ির বৌদির বুক দুটো পুরো চম্পা একঘর মাইরি। কালু দার শালীটাকে দেখেছিস উফফ দেখেলই মনে হয় খেয়ে ফেলি, মিনতি বৌদির পেছন খানাও মাইরি পুরো তানপুরা।ব্যাস আমাদের স্বাধীনতা তাই ওই মিনতি বৌদির পেছনেই ঢুকে যায় কিংম্বা পাশের বাড়ির বৌদির বুকে ঝুলে থাকে।আর আমাদের নেতারা! হাঃ হাঃ হাঃ সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ!! তাদের সময় কোথায়। একে ন্যাশানাল ছুটি সকালে এখানে পতাকা উত্তোলন ওখানে বক্তৃতা আর বিকেলে কোন শ্যামা তন্বীর বক্ষলগ্না। বাকি বছরের ৩৬৫ দিন প্রতিশ্রুতি, প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি।মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যি কি আমরা স্বাধীন, এর চেয়ে তো অনেক ভালো ছিলো পরাধীন ভারত।

বলতে পারি কি আজ জোর দিয়ে আর কবে আমরা সাবালক হবো, কবে পুরোপুরি স্বাধীন হবো। নাকি একশো বছরের পরাধীনতা আমাদের মেরুদন্ডটাকে তুবড়ে দিয়ে গেছে, গোলামী আমাদের মজ্জাগত। তা নইলে মাত্র 162,419,950 কোটির জনসংখ্যার একটা দেশ পাকিস্থান, যাদের চাল থেকে সূচ সমস্তই ধার করা তারা বারবার এসে আমাদের বুকে তান্ডব চালিয়ে যায় কি করে। আবার আমরাই গর্ব করি আমাদের রক্ষণ প্রহরীদের, তারা নয় তাদের কাজ করেছেন, কিন্তু সাধারন মানুষ 1,210,193,422 ভারতবাসী

কতটা করেছি? শুধু যে করিনি তা নয় বরং যে করতে গেছে তারপাশেও আমরা দারাবার মত সামান্য মূল্যবোধটুকুও দেখাতে পারিনি। এই যে আন্না হাজারে করাপশান এর বিরুদ্ধে লড়ছেন বুকে হাত দিয়ে কি আজ জোর গলায় বলতে পারছি ১২১ কোটির ১কোটিও তার পাশে দাঁড়িয়েছি। নাঃ পারছি না জোর গলায় বলতে। কারন আমাদের গলার জোর শুধু মাত্র পাড়ার চায়ের দোকানে মঞ্চে সভা সমিতিতে। এর বাইরে আমাদের গলার আওয়াজ বেরোয় না। তাইতো মাত্র ৫ জন লোক এসে আমাদের এই বিশাল দেশটার একটা রাজ্যে অনায়াসে মৃত্যু তান্ডব চালিয়ে যেতে পারে। কারণ আমাদের যে সর্ষের মধ্যেই ভূত। তা ওঝা ভুতা তাড়াবে কিসের জোরে।

আমরা শুধু নাটক দেখতেই ব্যাস্ত, একদিন কেউ এসে আমাদের উদ্ধার করবে কিংম্বা স্বর্গ হতে কোন অবতার অবতীর্ণ হবেন এই আশায় আমরা গীতা আউড়ে যাই “য়দা য়দা হি ধর্মস্য গ্লানীরভবতি ভারথ, অভ্যুত্থানম অধার্মস্য তদাৎমানম সৃজম আহম, পরিত্রানয় সাধুনাম, বিনাশায় চ দুস্কৃতম,

ধর্মসন্থাপনায়র্থ সম্ভামি য়ুগে য়ুগে। চমতকার। আমরা শুধুই নাটকের পট পরিবর্তনের আশায় বসে থাকি।

“রাজা আসে যায় রাজা বদলায়

লাল জামা গায়ে নীল জামা গায়ে

এই রাজা আসে ওই রাজা যায়

জামা কাপড়ের রঙ বদলায়

দিন বদলায় না।

গোটা পৃথিবীটাকে গিলে খেতে চায়

সেই যে ন্যাংটো ছেলেটা

কুকুরের সাথে ভাত নিয়ে তার লড়াই

চলছে চলবেই

পেটের ভিতর কবে যে আগুন

জ্বলছে এবং জ্বলবে।

রাজা আসে যায় আসে আর যায়

শুধু পোশাকের রঙ বদলায়

শুধু মুখোশের ঢঙ বদলায়

পাগলা মেহের আলি

দুই হাতে দিয়ে তালি

এই রাস্তায় ওই রাস্তায়

এই নাচে ওই গান গায়

সব ঝুট হ্যায়। সব ঝুট হ্যায়। সব ঝুট হ্যায়

জননী জন্মভূমি।

সব দেখে সব শুনেও অন্ধ তুমি

সব জেনে সব বুঝেও বধির তুমি”।।

সত্যি সব ঝুট হ্যায়। সব মিথ্যা। এই যে আজ আমরা গর্ব করে বলছি আমরা তৃতীয় বিশ্ব। বলতে পারো কিসের বিশ্ব, যে দেশে আজো জাতপাতের নামে আগুন জ্বলে, যে দেশে আজো কন্যা ভ্রুণহত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটে যে দেশে নাকি আজো অনার কিলিং এর মতো তান্ডব হয় তারা আবার নিজেদের কে বিশ্ব বলে সম্বোধন করে। হায়রে আমার বিদ্যাসাগর হায়রে রামমোহন। এঁনারা থাকলে বোধহয় একটাই কথা বলতেন ‘হা হতস্মিঃ’।শ্যাম বলে বাল, আর আমি দাঁত কেলাই। আপনারাও কেলান কিম্বা বগলে চুল নিয়ে দুহাত তুলে উর্দ্ধবাহু নাচুন, আর মাইকে শাকিরা বাজুক শাকালাকা বেবি সাকালাকা বেবি।কোন অধিকার নেই আমাদের স্বাধীনতা পালন করার, কোন অধিকার নেই নিজেদের স্বাধীন বলার।সাধে কি আর মেহের আলির মতো মানুষ বলে ‘সব ঝুট হ্যায়’। সত্যিই তো সব মিথ্যে। ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ মিথ্যে, নেতাজির লড়াই মিথ্যে, রাসবিহারি, কানাইলাল, প্রফুল্লচাকি মিথ্যে, মিথ্যে তাদের বলিদান, মিথ্যে তাদের সমস্ত লড়াই। তারচেয়ে আমি বা আপনি আপনারা শালা আজ কোন ইংরেজের বাথরুম সাফ করতাম, কিম্বা তাদের পেছন চুলকাতাম সেটাই ছিলো অনেক ভালো। কি হবে এ মিথ্যে স্বাধীনতা দিয়ে স্বধীন হবার ভড়ং করে। কোন লাভ নেই। আজ ৬৪তম স্বাধীনতা কাল ৬৫ তম হবে তারপরের বছর ৮৫ তম তারপর ১০০তম স্বর্ণ রজত হিরক বালছাল জয়ন্তী। কিন্তু যতদিন না আমরা স্বাবালক হব যতদিন না আমরা সচেতন হব এ স্বধীনতার কোন দাম নেই। আমাদের স্বাধীনতা দিবস শুধু আর পাঁচটা ছুটির দিনের মতো আরেকটা ছুটির দিন হবে। আমরা দেরি করে ঘুম থেকে উঠবো, চা খাবো, লুঙ্গি পরে বাজারের থলি হাতে পোঁদ চুলকাতে চুলকাতে বাজার যাবো কচি পাঠা কিম্বা মুরগি নিয়ে বাড়ী ফিরবো। পাড়ায় পতাকা তুলবো, চায়ের দোকনে দেশোদ্ধার করবো, দুপুরে বাড়ী ফিরে মাংস দিয়ে ভাত সাঁটাবো, বউকে একটূ আদর করবো বিলেকে হুইস্কি সহযোগে মিনতি বৌদির পেছন দেখবো কিংম্বা পাশের বাড়ীর টুসির বুক, তারপর রাতে বাড়ী ফিরে বৌকে পাশে নিয়ে বীর্য ত্যাগ করে আরামসে ঘুমোবো পরের দিনের দিনগত পাপক্ষয় করতে। আর আমাদের স্বাধীনতা ওযে বললাম হয় মিনতি বৌদির তানপুরা পাছায় নয়তো টুসির বুকের জোড়া ফলের মতো দুলতে থাকবে আর আমরা দেখে যাবো আর দাঁত কেলাবো।।

সোকাল বেলায় উঠি উঠি করচি

আর আধপোড়া বিড়িট্যায় টান দিচ্চি

মনে হলো – কারা যেনো চিঁচাচ্চে

ধরফঁড়াই কোপাট টো খুলে বেড়ায় দেখি

জিঞের সারি পারা মানুষ গুলান

“লেতাজি জিন্দাবাদ” দিতে দিতে যেচ্চে।

শকুন পারা দৃষ্টি লিয়ে, পেরথম হতে শ্যেষত্‌ক

ড্যাবডেবাঁই চারিপানে চেয়ে দ্যেখল্‌ম

কিন্তুক কোন লেতারই টিকিটো প্যেলম নাই

হু- শ্যেষ পানে চেঁয়ে দেখি

আধ ডাগুরে মিয়্যা গুলান বিধবার পারা শাড়ি পিনে

ঘাড় দুল্যাই দুল্যাই গাইছে ---

“ওঠো গো ভারত নক্ষী”।

তা মা নক্ষীরা; ভারতনক্ষী কি আর উঠতে পারবেক

নক্ষীছাড়ার দলতো উহার পিন্ডি চটকাই দিইচে

মায়ের ভান্ডার ফাঁক করে

বৌ বিটারা সিন্দুক গুঁছাই লিইচে

এ লেতাজিরাই তো মা টো বেঁধে রোখে

বিদেশে দাদন খাইচে

ওই মাটো কি আর উঠতে পারবেক গো মা নক্ষীরা।

বউটোকে বুললেম, ‘ ও বুদির মা

বিটিটো কেনে পাঠালি উদের মিছিলে’?

গল করা ঝুড়িটো কেঁকাল হতে নামায়ে

ঝাঁটাটো মুখের গোড়ায় নেড়ে

বউটো বললেক, “ আ মরণ ডোকলা মিন্‌সে

বুড়াকালে ভেমরতি হইচে

বলি এ লেতা তোর রাও আদবানি সুখরাম লয়

এ হলো লেতাজি সুভাস

দ্যাশের তরে জিবন বিকাইছে,

তার নামে এসকল কইতে তোর নাজ লাগেনা?

‘ক’ আরেক বার ‘ক’

ঝেঁটিই দাঁত কটান ফেলিদি”।

ভুলটো বুঝতে পেরে হাতটো কোপালে ঠেঁকাই

মনে মনে বুললেম – “হা লেতাজি

দোষ লিওনা, ক্ষমা কইরো”।।
 

আন্না আর না



আন্না আর না“বহিনচোদ গাঁড় তোড় দেঙ্গে তুমহারে”।সত্যি কথা বলতে কি চমকানোর কথা নয় তবুও চমকালাম। কে রে বাবা। দিল্লীর রাস্তাঘাটে মা বোন তোলাটা জলভাত শুধু নয় প্রায় দুদুভাতও বলা চলে। তাহলেও আমি চমকালাম। কেনো, কারন যেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি সেটা এই মুহুর্তে ভারতের তীর্থক্ষেত্রের রুপ নিয়েছে, এবং স্বয়ং কল্কী অবতারের জায়গা নিয়েছেন আন্না মানে আন্না হাজারে। ভুল বললাম কি? মাইরি বলছি আনন্দবাজার পড়া বাঙ্গালী পাঠককুল ক্ষমা করবেন, বুকে ঠুকে মা কালি মা দূর্গা, মা সরস্বতী মায় লক্ষীমায়ের পেঁচাটারও দিব্বি দিয়ে বলছি আমার বাঙালী (পড়ুন বরিশ্যাইল্যা বাঙাল) উচ্চারণে হাজার জিভের জড়তা কাটিয়েও কিছুতেই অন্না বলতে পারলাম না। দেখি এক ইউপি জাঠ গালি দিচ্ছে প্রবল বিক্রমে। কেসটা কি জানার জন্য পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। দেখি একদল ওই কুড়ি বাইশ বছরের আমাগো ভাষায় পোলাপান সেই গালির লক্ষ। “শালো ঘনা মাস্তি চাড়ি গয়া ক্যা, থারো সমঝ মে না আবে ক্যে কেহ রাহা হু ডান্ডা দেকে সামঝাউ ক্যে, গাঁড় মে এইস্যা ডান্ডা দেঙ্গে না কি............ । আর থাকতে পারলাম না, জাঠ বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করার সুবাদে যেটুকু জাঠ অ্যাকসেন্ট জানতাম তার দ্বারাই জিঞ্জাসা করলাম “আরে চাচে কে হুয়া (ভাগ্যিস হুক্কা হুয়া বলে নি তাহলেই চিত্তির আর কি), কদি ডাঁট কাহে রাহে হো?বাচ্চা হ্যায়। “বাচ্চা নেহি সালা কুত্তাকে বাচ্চা কহো বেটা। সালা আন্না হুয়া পার অনশন পর হ্যায় আর ইয়ে লোগ হিয়া পর মস্তি করনেকো আয়া”। মুচকি হাসলাম, এর বেশি আর কিই বা করতে পারি। চারদিকে তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায় এই যে অনশন মেলা লেগেছে তার কতটুকুই বা বোঝে আজেকের আমাদের প্রজন্ম। কালা ধন ওয়াপাস লাও, লোকজনপাল বিল পাস করো এই লোকজনপাল বিলের কতটুকু জানি আমরা? সারাদিন মেট্রোতে বাসে ট্রামে রাস্তাঘাটে সর্বত্র গাঁন্ধী টুপি তে টি-শার্ট এ ম্যায় আন্না হুঁ লেখা মানুষের ভীড়। রামলীলা ময়দানে কাতারে কাতারে লোক সবাই ভাসছে জোয়ারে। কিন্তু এর মধ্যে হাতে গুনে কতজন বলতে পারবে যে আমি বুঝি কেনো আমি এখানে এসেছি।


অদুরেই পালিকা বাজার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ইন্ডিয়াগেট, লালকিলা চাঁদনি চক। কাতারে কাতারে মানুষ। বেশির ভাগই ফিচকে ছোঁড়া কিছু বাবা মায়ের পেছন পাকা আদরের সন্তান। মেট্রোতে কয়েকজন তরুনী কে দেখলাম, হাতে মেট্রো শপ থেকে কেনা বার্গার মাথায় আমি আন্না লেখা টুপি পরনে জামা কাপড় না থাকারই মত। সারা মেট্রোর কামারা জুড়ে তারা স্লোগান দিচ্ছে সাথে আবার বক্ষলগ্ন প্রেমিক। যব তক সুরজ চাঁন্দ রহেগা আন্না তুমহারা নাম রহেগা, মনমোহন জিসকা তাউ হ্যায় ও সরকার বিকাউ হ্যায়, সনিয়া জিসকা মাম্মি হ্যায় ও সরকার নিকাম্মি হ্যা্‌য়, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। মাইরি বলছি আমার চোদ্দ পুরুষের দিব্বি দিয়েবলছি ওই মেয়েদের ঘিরে সারা মেট্রো কামরা জুড়ে যে কজন মানুষ স্লোগান দিচ্ছিল, তারা যতটা না আন্নার কথা মনে করে স্লোগান দিচ্চিল তারচেয়ে বেশি দিচ্ছিলো অমন ডাঁসা পরিপুষ্ট ৩২ আর ৩৪ এর ব্রায়ের (পাঠক মা শেতলার দিব্বি আমি কিন্তু মোটেই পার্ভাট নই, তবে হ্যাঁ আমিও যে দেখি না তা নয় সুযোগ পেলে কিন্তু আমিও ছাড়ি না) ফাঁকে রাখা আন্নার দিকে তাকিয়ে দিচ্ছিল। একবার ইচ্ছে হয়েছিল বলি মামনীরা এই যে আন্না আন্না করছো তা হাতে বার্গার আর ডান বুকে প্রেমিক কে লোটকে কেন মা? যাও না একদিন আন্নার পাশে বসে অনশন করে দেখো না কেমন লাগে তবে নাহয় বুঝবো মর্দ (নারীবাদীরা শুনে ফেললেন নাতো আজকাল বড্ড ভয় নারীবাদীরা হাব্বী কেলাচ্ছে শুনেছি)কা বাচ্চা থুরি ইন্সান কা বাচ্চা। কিন্তু পাঠক কুল সত্যি বলতে কি তাদের বুকে মনিহারি ব্যাচ এর মতো ঝুলতে থাকা মুসকো মার্কা বয়ফ্রেন্ডদের দেখে লোভ সামলাম, কারন আমার এই ২৭ কোমর ৩২ ছাতি চেহারায় যদি অই জিম সুশোভিত মাসলওয়ালা একটা হাত এসে পড়ে তাহলে চোদ্দ পুরুষ তো দূর অস্ত আমার আগামী বংশধর জন্মাবার আগে দুবার ভাববে। রামলীলা ময়দানের দিকে তাকিয়ে দেখুন যে হাজার হাজার মাথা দেখা যাচ্চে তাদের দিকে একবার তাকান তারা কারা? কলেজ পড়ুয়া অফিস ফেরতা বাবু বারমুডা পরিহিতা তরুণী। তাদের একজন কেও ডেকে জিঞ্জাসা করুন দাদা আপনি এখানে কি করছেন কলেজ পড়ুয়ারা বলবে আবে ইয়ার সব আ রাহা হ্যায় থোড়া হমভি আ গয়ে মস্তি মারনে। অফিস ফেরতা বাবু বলবেন সালে আ গয়ে ব্যস আন্ন টোপী (এখন আর গান্ধি টুপি নয়) লাগাকে মোবাইল মে ফোটে খিচেংগে আউর ঘর সে নিকালতে ওক্ত বেটা বোলা থা পাপা মুঝে আন্না ওয়ালা টোপী চাহিয়ে টোপি উসকো দে দেঙ্গে। আর তরুণী তারা আবার এককাঠি ওপরে। তাদের বক্তব্য শুনবেন? “আরে ইয়ার তুম গান্ডু হো ক্যা, ইয়ে তো মওকা হ্যায়, অফিসে মে বোলা আন্না কে পাস জা রাহা হুঁ, বস মানা নেহি কার সকতে সব কই যা রাহা হ্যায় রোকেঙ্গে তো অফিসমেহি আন্দোলন চালু হো জায়েগা। বস মে টিকট নেহি লাগেগি। হিয়া পর বয়ফ্রেন্ড কো বুলা লিয়া থোড়ি পিকচার উকচার খিঁচয়াঙ্গে খানা পিনা হোগা ফির ইন্ডিয়াগেট পর যায়েঙ্গে কিসি অন্ধেরে কোনে ব্যাঠকে হে হে হে হে সমঝ গায়ে না”। আমি কেনো মামনী হোল ইন্ডিয়া সমঝ গয়ে, দিলওালে সিনেমার গুলসন গ্রোভারের কথা মতো স্বপ্না কে আশিক স্বপ্না কে সাথ গানা গায়েগা জিস পর সুর হোগা তাল হোগা পর বোল নেহি হোগা। পাঠক ছবিটা এখানেই শেষ নয়। পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত।
ফিরে আসছি বাসে করে সেখানেও আন্না সমর্থকদের পরাক্রম অব্যাহত। “ সন্দিপ জিসকা পোতা হ্যায় ও সরকার খোটা হ্যায় (সন্দিপ দিক্ষিত), শীলা (শীলা কি জওানী র শীলা নয় দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষীত) জিসকি নানী হ্যায় ও সরকার কমীনি হ্যায়” কানে বেজে যাচ্ছে। এর মধ্যে বেচারা কন্ডাক্টর চেয়ে বসিলেন ভাড়া, “মাদারচোদ তুনে ভাড়া ক্যায়সে মাঙ লিয়া বে, সালে বেটি চোদ দিখতা নেহি কাহা সে আ রাহে হ্যায় হম লোগ, আঁখে কিয়া তেরি বিবি কি ভোসরা মে চলি গয়ি ক্যা”। লে হালুয়া তুমি গেছ বার্গার পিজা মারিয়ে আন্নার মজা দেখতে তার জন্য বেচারা কন্ডাক্টর না খেয়ে মরে কেনো। দিনের শেষে মালিককে পয়সা না দিলে সে বেচারার একদিন কা দেহারি মিলবে না। তাহলে? তোমরা তো অন্যায়ের প্রতিবাদে সামিল হতে গেছিলে মহামান্য পাবলিক তাহলে এখানে যে অন্যায় টা করছো তার কি হবে? কোন বোকাচোদা তোমাকে মাথার দিব্বি দিয়েছিল যে তুমি যাও আন্নার অনশনে তাও যদি বুঝতাম আন্নার ১৫ দিনের জায়গায় তুমি একদিনও অনশন করেছো। তাও যদি বুঝতাম তুমি পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে বন্দে মাতারম বলে লাঠি খেয়েছো। কিছুই না খালি পেঁয়াজি।

বলতে পারেন মহামান্য পাব্লিক এই যে ১৫ দিন ধরে আপনারা আন্না নামক মহাজাগরনের ছবিটি দেখলেন তাতে আপনার কন্ট্রিবউশান টা ঠিক কি? কিছুদিন আগেই আন্না ডাক দিয়েছিলেন একদিন কি খানা দে দো, অর্থাৎ কিনা একদিনের একবেলার খাবারের টাকাটা আপনারা দিন দেশের জন্য। কজন দিয়েছিলেন? আজকের ছিলিম ফিগারের তাড়নায় খাওয়া ছেড়ে দেওয়া মেয়েটিও দেয়নি একটা টাকাও। পাবলিক আপনারা কি শুধুই আমজনতা নাকি শুধু “পাব লিক্‌”।সালা হুজুগে বাদর নাচের বাদরের থেকেও তো অধম। সেই বাদর টা তবু নিস্ফল লাফান ঝাপান করে মালিকের পেটের ভাত জোগায় আর আপনারা? শুধুই দর্শক। “আমরা আর কি করতে পারি” সুলভ কথাবার্তা বলে দিন গুনবেন কবে আসবেন যিশু কিংবা কৃষ্ণ নেতাজি, আন্না। আর যখন তারা আসবেন আপনারা শুধুই দর্শক। বাঞ্চত আপনারা সোজা কথায় যাকে বলে চোখে প্রেমিকার মাই কানে বাপের বাড়া আর মুখে বউয়ের পোঁদ গুজে বসে থাকুন। দোহাই আন্না খামোকা নিজেকে কষ্ট দেবেন না। যাদের কথা ভেবে আপনি লড়ছেন তারা নিজেরাই তো দোষী কাকে ছাড়বেন কাকে বাদ দেবেন? লোকজনপাল বিল অনেক পরে আগে ঘুনের মতো বাসা বেঁধে থাকা মানুষের ভিতরের অন্যায় প্রবনতা কে মারুন, আগে মানুষ কে বলুন বাসে ট্রামে রাস্তা ঘাটে নিজেদের মানুষ প্রতিপন্ন করতে। হাওড়া স্টেশানে অসুস্থ বৃদ্ধ মারা যায় কেউ চোখ ফেরায় না, দিল্লীতে অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য লিফট চেয়ে অপদস্থ হয় এক তরুণী, মুম্বাইয়ে রেস্তোরার বাচ্চা বয় মালিকের লাথি খেয়ে মারা যায়, সারা ভারতের দিকে চেয়ে দেখুন একজনও মানুষ নেই। নিদেন পক্ষে মান কিংম্বা হুশ কোনটাই নেই। তাই আন্না প্লিজ আর না আর না।।
 

কবিতার উঠোণ...

কবিতার উঠোণ


কবিতা সর্ম্পকে বস্তুতঃ আমি কিছুই জানি না। কোন কোন সকাল আমার বিকেল বলে মনে হয়, আর কোন কোন বিকেল সকালের মতো। কিন্তু এই মনে হওয়া , কেন যে আমার মধ্যে ঘটে জানি না। যেভাবে জানি না, কি ভাবে প্রথম আমি লিখে ফেলেছিলাম কিছু শব্দ। সে শব্দের সমাহার কবিতা হয়েছিল কিনা তাও জানি না। সমস্ত যৌবন ধরে আমি শুধু একটা ‘না’ এর সাথে দ্বৈরথ করে চলেছি। একটা ‘না’। ক্রমেই আমার স্মৃতি লুপ্ত হয়ে আসছে। কয়েক বছর আগেও আমি বহু প্রয়োজনীয় কথা মনে রাখতে পারতাম। এখন প্রয়োজনের ভার হাল্কা হয়ে আসছে। কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারিনা। কঠোপনিষদের কথা মাঝে মাঝে মনে হয় – যখন নচিকেতা বিশ্বরহস্য নাকি ব্রক্ষ্মের স্বরুপ জানতে চাইছেন – তখন যম বলছেন আমার কথা শ্রবণ কর। হয়তো এর থেকেই কোনও উত্তর বেরিয়ে আসবে।

কবিতা সর্ম্পকে আমার ভাবনা আসলে ‘না’ ভাবনাই। যে নেতি আমাদের দিয়ে লিখিয়ে নেয় কথা। শব্দের পর শব্দ। এক একটি রুপের আভাস। শুধু এটুকু বলতে পারি প্লেটোর ‘গণরাজ্যে’র ‘না বাসিন্দা’ কবি কিন্তু আমাদের দর্শনে অন্যভাবে উত্থাপিত। সেখানে কবি সম্বন্ধে বলা হচ্ছে -- ‘কবিং পুরাণ মনুশাসিতরম্ অনোরনিয়া’ অর্থাৎ কবি একজন সত্যদ্রষ্টা। তবে এ তো গেল শাস্ত্রের বাদানুবাদ। আমি কবিতা সর্ম্পকে কিছুই জানি না। শুধু জানি যখন আমাদের পুরোনো বাড়িটার ছোট্ট ঘরে অন্ধকার বাক্স-প্যাঁটরার ওপর শীতের দুপুরের এক চিলতে আলো এসে পড়ে। দু-একটি আরশোলা ফরফর করে উড়ে যায় রান্নাঘরের দিকে কিংবা একটি টিকটিকি বিনীত চিৎকারে জানিয়ে দেয় দুপুরের বয়স – তখন আমার ভিতর কীরকম যেন হয়ে যায়। হয়তো বা ঠিক সেইদিন বহুকালের না পারাগুলি একত্র হয়ে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় কয়েকটি বাক্য। এর বেশী আমার আর কিছুই বলার নেই কবিতা বিষয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয় কি লিখছি কেন লিখছি? লেখা গুলো কি আদৌ কবিতা? বুঝি না। এক এক সময় মনে হয় লিখতে বসে আজ আর লিখব না, নিশব্দ বসে থাকব, নিশব্দের কি কোন শব্দ হয়? রোজ আমি বসি খাতা কলম নিয়ে কোন দিন শব্দ এসে ধরা দেয় কোন কোন দিন বা সাদা পাতায় ঝরে পড়ে একরাশ নিশব্দ।

নিশব্দে থেকো।
আজন্ম বধিরতা নিয়ে।
নিশব্দই এক একটি শব্দ তৈরি করে।...

আবার কখনো কখনো লিখতে বসে শব্দেরা প্রশ্নের আকার নেয়। আমার যন্ত্রনারা ভীড় করে এসে প্রশ্ন তোলে। এই যে জীবন যন্ত্রনারা ভীড় করে আসে কলমে
এ যন্ত্রনার মুখ কি আমার আদৌ চেনা?

অন্তঃকরণে অভিমানে
রক্ত ঝর্না গুপ্ত প্রবাহিনী
এ যন্ত্রনার মুখ
আমি চিনি?

যখন মাঝ রাতে সমস্ত পাড়া ঘুমে আচ্ছন্ন ঠিক তখনই আমি এসে বসি আমার লেখার টেবিলটায়। কোন কোন দিন আমার নিজের জীবন কে লিখতে ইচ্ছে করে
কোন কোন দিনে ফেলে আসা জীবনের দিকে তাকাই। তখন মনের কার্নিশে ভীড় করে আসে নানা প্রশ্ন জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা বিতর্ক। কখনো উত্তর পাই কখনো বা পাই না। আবার কখনো উত্তর পেলেও মনে হয় বোধ হয় ঠিক উত্তর পেলাম না তখন আবার ভীড় জমায় সেই একই প্রশ্নরা আবার আমি নতুন করে শুরু করি উত্তর খোঁজা এভাবেই জমে ওঠে জীবনের পাওয়া না পাওয়া সব প্রশ্ন উত্তরের খেলা।


কয়েকটি বিতর্ক রইলো। মাঝরাতে সবুজ জড়ানো
লতা ও গুল্মের মতো অন্ধকার। জানি
প্রতিটি প্রশ্নের গ্রাসে আহরিত প্রতিটি অজস্র নিরুত্তর
ক্ষমা করে। ভালোবাসে। পুনর্বার ক্ষুধিতের মতো
প্রসারিত হয়।

এক এক সময় পাগলের প্রলাপের মতো লিখে চলি, লিখেই চলি। কখনো সেই লেখা শব্দের মধ্যে জন্ম নেয় কবিতা কিংম্বা গল্প বা অন্য কিছু। আবার কখনো কিছুই লেখা হয় না কিছু অর্থহীন শব্দ ছাড়া। এই যেমন এখন লিখে চলেছি। কি লিখছি কেনো লিখছি জানি না। কলমের ডগায় ভীড় করা শব্দদের একের পর এক বসিয়ে যাচ্ছি পর পর। কি এদের ভবিষ্যত কিংম্বা আদৌ কোন ভবিষ্যত আছে কিনা কে জানে। শুধু মনে হয় নিশুতি রাতে রোজ আমি সহবাস করি শব্দের শরীরে। আর এক সময় সেই সহবাস শেষে শব্দের সমস্ত শরীর জুড়ে আমার সমস্ত টেবিল জুড়ে আমার সমস্ত আত্মা জুড়ে উঠে আসে জন্মানোর গন্ধ।

সমস্ত শরীর থেকে জন্মানোর গন্ধ উঠে আসে
সহবাস
অগুরু মেখেছে কিংম্বা কাঁচা চন্দনের গন্ধ ঊরু ও জঙ্ঘায়
হঠাৎ শরীর থেকে গৈরিক শাড়ির টুকরো চুরি হয়ে যায়
লবঙ্গের কাত্থ মাখে ধমনীরা।

এক এক দিন ভাবি আজ একটা প্রেমের কবিতা লিখব, কিংম্বা একটা প্রেমের গল্প, কিন্তু লিখব বললেই তো আর লেখা হয়ে ওঠে না। হয়ত লিখতে বসলাম, কিন্তু মাঝ পথেই কলম অবাধ্য হয়ে ওঠে, বেঁকে বসে আর লিখবে না, তখন প্রেমের জায়গায় লিখে বসে বিদ্রোহের কবিতা। অথচ আমি তো বিদ্রোহের কবিতা লিখতে চাই নি। আমার মন মানে না কিন্তু কলম এগিয়ে চলে তর তর। আমি তাল রাখতে পারিনা, আমার অবশ মন কলমের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হয়। সাদা পাতার উপর আমার কলম ওগরাতে থাকে অক্ষরের তেজ।

কলমে ঠিকরে পড়ে অক্ষরের তেজ
হীরের টুকরোর মত কঠিন কথার খাঁজে খাঁজে
আকাঁড়া সত্যের মুখ, জ্বালা ধরায়, টুটি চেপে ধরে বলে
কান ধরে ওঠবোস কর দশবার।

হাল ছেড়ে দি। অথচ কি যন্ত্রনা। মিনিট দশেক আগেই আমি লিখতে চেয়েছিলাম একটা আস্ত প্রেম।আমি বারবার পিছন দিকে তাকাতে চাই কিন্তু কলমের কাছে আমি নিরুপায়, যেনো ও আমাকে একটা নির্দিষ্ট লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছে।এক চুল ও এদিক ওদিক হবার যো নেই। যেনো এর বাইরে পা দিলেই আমি হারিয়ে ফেলব আমার সব অস্তিত্ব।বাধ্য হয়েই তাই ফিরে আসি বারবার বারবার।

পিছনে তাকাই নি আর, ছায়া দেখে ভুল পথে চলে যেতে যেতে
ফের ফিরে আসি লক্ষণরেখার মধ্যে আত্মরক্ষার তাগিদে।

কখন মনে হয় আমি তো প্রেমের কবিতা লিখতে চেয়েছি, কিংম্বা অন্য কিছু কিন্তু যাই লিখিনা কেনো আমার কলম কেনো বারবার আমাকে টেনে ধরে অন্য কিছু লেখায়? কেনো কেনো কেনো, তবে কি ওই প্রেম ফুল পাখি ঈশ্বর এসব কিছু নয় আমার মন আসলে বিদ্রোহের খোঁজ করে। সব কিছুকে ভেঙ্গে তছনছ করতে চায়। কিন্তু আমি ভয় পাই আর তাই বোধ হয় আমার বাইরের মুখোশের মতো আমার মনের আয়নায় আমি পরাতে চাই প্রেমের মুখোশ। আর আমার কলম আমাকে টেনে হিছড়ে দাঁড় করায় সত্যের মুখোমুখি।

কথাগুলি অক্ষরের ঠিকানা ধরে খুঁজে পায়
টেনে নিয়ে আসে বাইরে
প্রখর রৌদ্রের তেজে মুখ দেখে
নিজেকে দেখায়
সে শুধু অক্ষর নয় ভাঁজে ভাঁজে আকাঁড়া সত্যের মুখ।

এক সময় আমার মনের আর কলমের সব যুদ্ধ থেমে যায়। ভয় পেতে পেতে এক সময় মরিয়া হয়ে উঠে আমি দাঁড়াই মুখোমুখি সত্যের। নিজেকে চিনতে পারি। বুঝতে পারি ভয় পেতে পেতে এক সময় সত্যকে আমি অস্বীকার করেছি, ভুলে থাকতে ছেয়েছি আমার আসল ভাবনা কে আর তাই আমার অবচেতন মন কলমের সাথে ষড়যন্ত্র করে আমার সমস্ত লেখার টেবিল জুড়ে বিদ্রোহ করে চলে।

এই অপরাহ্ন বেলায় তাকে দেখে চিন্তে পারি
সে বড় অবুঝ রাখাল
ছায়া পেলে সেও নিদ্রা যায়।

সে কখনো আসবেই ভাবতে ভাবতে বিদ্ধ হয়েছে আমার চরাচর। সে কি ভীষণ নিষাদ? নাকি তীরন্দাজ? কে সে? যার লক্ষে থেকেছি আমি অবিচল স্থির। মাছের সূক্ষ্ম চোখে অর্জুন যে প্রতিদিন তারই সম্মানে খুলে রাখো টুপি, নতজানু হও অরণ্য চূড়ায় – এসব কথা লিখতে গেলে মোহনা প্রেমিক নদী কে ঈর্ষা করি, সমুদ্রে এত জল তবু নদীকে খাবেই সে জেনে ও বুঝে মেঘে মেঘে বেলা বাড়ার দিকে তাকাই, সময়ের হিমবাহ ক্রমশ গলে, ভাবনার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, পারাপারের একমাত্র লেভেল ক্রশিং বেশির ভাগ বন্ধ, ফিসফাস শুনি............

মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১২

ভালোবাসা ৪২০

 

ভালোবাসা ৪২০

দুজন তরুণ-তরুণী একে অপরকে খুব ভালোবাসত। তাদের ভালোবাসা ছিল খুব গভীর। ধরা যাক, তাদের নাম শুভ ও মাধবী।
একদিন শুভ যখন মাধবীর ফেসবুক ওয়ালে লিখল, জানু, আই লাভ ইউ!
তখন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা সেই ওয়ালপোস্টে লাইক দিল। লাইকসংখ্যা দেখে মাধবীর সে কী আনন্দ! অন্যদিকে হিংসুটে সমাজ একটা dislike বাটনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করল। এ সুযোগে বিরোধীদলীয় ষড়যন্ত্রকারীরা dislike বাটনের একটা spam link তৈরি করে ফেসবুকময় ছড়িয়ে দিল। আপনারা এখনো তার ভুক্তভোগী।

একদিন মাধবী বলল, ওগো, তুমি আমাকে এত আদর করে ফেসবুকে poke দাও কেন? আমার এত্ত ভালো লাগে! তোমার poke পেয়ে আমি বারবার শিহরিত হই!
শুভ খুশি হয়ে বলল,
আমার ঘরের দরজা খুলে দেখো, টেবিলের ওপরে আমার পিসির মাউস তো শুধু তোমাকে poke দেওয়ার জন্যই! যত দিন আমার মাউস অক্ষত থাকবে, তত দিন তোমায় দিয়ে যাব ভালোবাসার poke; প্রমিজ!

যা-ই হোক, ভালোই চলছিল তাদের প্রেম। সারা দিন ইনবক্স মেসেজিং, দিনে ১০-১২টা ওয়ালপোস্ট, পাঁচটা স্ট্যাটাস, একটা নোট। আহা! একেই তো বলে প্রেম!
শুভর পরিবার মেনে নিলেও হঠাৎ ঝামেলা করলেন মাধবীর বাবা-মা। তাঁরা কিছুতেই এ সম্পর্ক মেনে নিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে পালিয়ে তারা বিয়ে করে ফেলল।
তারা একটা গ্রুপ খুলল। closed গ্রুপ। মেম্বার শুধু তারা দুজন। সেখানেই তারা ঘরসংসার শুরু করল। গ্রুপের ওয়ালেই সব সাংসারিক কাজকর্ম, ভালোবাসার আদান-প্রদান সম্পন্ন হতে থাকল।
একসময় তাদের পরিবারের লোকজন এ খবর জেনে গেল। মাধবীর মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
হায়রে। আমার পোড়া কপাল। কত ইচ্ছা ছিল মেয়ের বিয়েতে ফেসবুকে একটা event খুলব। কত লোককে invite করব। কিছুই হলো না রেএএএএ!

মাধবীর বাবা রেগে গিয়ে বললেন,
আমি এ বিয়ে মানি না। বিয়ের প্রমাণ কোথায়? বিয়ের একটা রীতিনীতি আছে। সমাজের কাছে আমি মুখ দেখাব কীভাবে? বিয়ে করতে হলে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে হয়। সেখানে ছেলেমেয়ে উভয় পক্ষকে confirm করতে হয়। তোমরা তা করোনি।

শুভ বলল,
মাই ডিয়ার ফাদার ইন ল, আমরা তা করেছি! আপনাকে বহু আগে আমরা block করেছি। তাই আপনি দেখেননি।
মাধবীর বাবা আরও রেগে বললেন,
কী, এত বড় স্পর্ধা! কোথায় সেটা? আমাকে দেখাও।
শুভ নিজের প্রোফাইল থেকে তাঁকে হিস্টোরিক্যাল ওই পোস্ট দেখাল। মাধবীর বাবা অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, ছোহ! ওই পোস্টে মাত্র ১১ জন লাইক দিয়েছে। এত কম লাইকে বিয়ে সম্পন্ন হয় না।
এবার শুভ চিৎকার করে উঠল,
ফাদার ইন ল, আমাদের ফ্রেন্ডলিস্ট গরিব হতে পারে, কিন্তু আমাদের হূদয়ে ভালোবাসা আছে। ভুলে যাবেন না, লাইক দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না!
মাধবীর বাবা রাগে-ক্ষোভে বললেন,
ছোটলোক ফেসবুকার কোথাকার! জাকারবার্গ আমার বন্ধু। আমি এখনই তোমার নামে রিপোর্ট করব!

এ কথা শুনে মাধবী কেঁদে ফেলল।
না, বাবা, নাআআআ! তুমি আমার নামে রিপোর্ট কোরো। তবু তোমাদের জামাইয়ের ক্ষতি কোরো না। আমার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস তুমি মুছে দিয়ো নাআআআ! তোমার দোহাই লাগে...

মাধবীর বাবা বললেন, ছি! মেয়ে, তোমার এত অধঃপতন! আমি আজই তোমাকে আমাদের ফেসবুক ফ্যামিলির daughter লিস্ট থেকে রিমুভ করব। মাধবীর মা, আমার ল্যাপটপটা নিয়ে এসো।

মাধবীর মা ভয়ে ভয়ে ল্যাপটপ এনে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাধবীর বাবা ফেসবুকে লগইন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন ল্যাপটপের ওপর।
মাধবীর মা বললেন, ওগো, তুমি
শান্ত হও। তোমার ল্যাপটপের
শরীর ভালো না। এত অস্থির হলে যদি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়!
আর এদিকে শুভ মাধবীর হাত ধরে বলল, চলো মাধবী, আমরা আমাদের ছোট্ট গ্রুপে ফিরে যাই। আভিজাত্যের বড়াই থাকলে ভালোবাসা জন্মায় না।
তারা ফিরে গেল তাদের ছোট্ট গ্রুপে।
এরপর একদিন দুর্বৃত্তরা মাধবীর বাবার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ফেলল। হ্যাকাররা সেই আইডি ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করতে লাগল। এতে মাধবীর বাবার মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেল।
কিছুদিন পরে বহু কষ্টে বন্ধু জাকারবার্গের সহায়তায় আইডি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হলেন তিনি।
কিন্তু এরপর থেকে ডেইলি লাইক সংখ্যা কমে গেল। মাধবীর বাবা বুঝতে পারলেন যে এত দিন
তিনি যা পেয়েছেন তা শুধুই খ্যাতি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তাঁর
খ্যাতি শেষ হয়ে গেছে।
তিনি কারও ভালোবাসা, শ্রদ্ধা
পাননি। আসলেই লাইক দিয়ে
ভালোবাসা কেনা যায় না।
 

মাধবীর বাবা তাঁর ভুল স্বীকার করলেন। বুকে টেনে নিলেন শুভ ও মাধবীকে। ফ্যামিলি লিস্টে এই দুজনকে অ্যাড করে নিলেন। এরপর তিনি তাঁর বিশাল বিশাল ফেসবুক পেজের adminship দিয়ে দিতে চাইলেন জামাই শুভকে।
তবে শুভ একজন আদর্শ ফেসবুকার। সে জীবনেও মাধবী ছাড়া কোনো নারীকে ফ্রেন্ড রিকোয়স্টে পাঠায়নি। তাই নিজ আদর্শে অবিচল শুভ হাসিমুখে মাধবীর বাবার এ উপহার প্রত্যাখ্যান করল।

তারপর ফাদার ইন ল আর
মাদার ইন লকে দুখানা
শ্রদ্ধা-মিশ্রিত fb poke (সালামের আরেক version) দিয়ে বিদায়
নিল শুভ।

তারপর সুখে-শান্তিতে ছোট্ট
গ্রুপে ঘরসংসার করতে লাগল শুভ আর মাধবী। মাঝেমধ্যে মায়াবী সন্ধ্যায় সূর্যের বিদায়ক্ষণে গিটার
হাতে মাধবীর প্রোফাইলে চোখ
রেখে শুভ গেয়ে ওঠে—

পড়ে না চোখের পলক!
কী তোমার pro pic-এর ঝলক!
দোহাই লাগে pro pic তোমার
একটু hide করো!
আমি মরেই যাব
ডিঅ্যাক্টিভেটেড হব
লগইন করাতে পারবে না কেউ!
 
********************************************************************