ভালোবাসা ৪২০
দুজন তরুণ-তরুণী একে অপরকে খুব ভালোবাসত। তাদের ভালোবাসা ছিল খুব গভীর। ধরা যাক, তাদের নাম শুভ ও মাধবী।
একদিন শুভ যখন মাধবীর ফেসবুক ওয়ালে লিখল, জানু, আই লাভ ইউ!
তখন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা সেই ওয়ালপোস্টে লাইক দিল। লাইকসংখ্যা দেখে মাধবীর সে কী আনন্দ! অন্যদিকে হিংসুটে সমাজ একটা dislike বাটনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করল। এ সুযোগে বিরোধীদলীয় ষড়যন্ত্রকারীরা dislike বাটনের একটা spam link তৈরি করে ফেসবুকময় ছড়িয়ে দিল। আপনারা এখনো তার ভুক্তভোগী।
একদিন মাধবী বলল, ওগো, তুমি আমাকে এত আদর করে ফেসবুকে poke দাও কেন? আমার এত্ত ভালো লাগে! তোমার poke পেয়ে আমি বারবার শিহরিত হই!
শুভ খুশি হয়ে বলল,
আমার ঘরের দরজা খুলে দেখো, টেবিলের ওপরে আমার পিসির মাউস তো শুধু তোমাকে poke দেওয়ার জন্যই! যত দিন আমার মাউস অক্ষত থাকবে, তত দিন তোমায় দিয়ে যাব ভালোবাসার poke; প্রমিজ!
যা-ই হোক, ভালোই চলছিল তাদের প্রেম। সারা দিন ইনবক্স মেসেজিং, দিনে ১০-১২টা ওয়ালপোস্ট, পাঁচটা স্ট্যাটাস, একটা নোট। আহা! একেই তো বলে প্রেম!
শুভর পরিবার মেনে নিলেও হঠাৎ ঝামেলা করলেন মাধবীর বাবা-মা। তাঁরা কিছুতেই এ সম্পর্ক মেনে নিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে পালিয়ে তারা বিয়ে করে ফেলল।
তারা একটা গ্রুপ খুলল। closed গ্রুপ। মেম্বার শুধু তারা দুজন। সেখানেই তারা ঘরসংসার শুরু করল। গ্রুপের ওয়ালেই সব সাংসারিক কাজকর্ম, ভালোবাসার আদান-প্রদান সম্পন্ন হতে থাকল।
একসময় তাদের পরিবারের লোকজন এ খবর জেনে গেল। মাধবীর মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
হায়রে। আমার পোড়া কপাল। কত ইচ্ছা ছিল মেয়ের বিয়েতে ফেসবুকে একটা event খুলব। কত লোককে invite করব। কিছুই হলো না রেএএএএ!
মাধবীর বাবা রেগে গিয়ে বললেন,
আমি এ বিয়ে মানি না। বিয়ের প্রমাণ কোথায়? বিয়ের একটা রীতিনীতি আছে। সমাজের কাছে আমি মুখ দেখাব কীভাবে? বিয়ে করতে হলে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে হয়। সেখানে ছেলেমেয়ে উভয় পক্ষকে confirm করতে হয়। তোমরা তা করোনি।
শুভ বলল,
মাই ডিয়ার ফাদার ইন ল, আমরা তা করেছি! আপনাকে বহু আগে আমরা block করেছি। তাই আপনি দেখেননি।
মাধবীর বাবা আরও রেগে বললেন,
কী, এত বড় স্পর্ধা! কোথায় সেটা? আমাকে দেখাও।
শুভ নিজের প্রোফাইল থেকে তাঁকে হিস্টোরিক্যাল ওই পোস্ট দেখাল। মাধবীর বাবা অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, ছোহ! ওই পোস্টে মাত্র ১১ জন লাইক দিয়েছে। এত কম লাইকে বিয়ে সম্পন্ন হয় না।
এবার শুভ চিৎকার করে উঠল,
ফাদার ইন ল, আমাদের ফ্রেন্ডলিস্ট গরিব হতে পারে, কিন্তু আমাদের হূদয়ে ভালোবাসা আছে। ভুলে যাবেন না, লাইক দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না!
মাধবীর বাবা রাগে-ক্ষোভে বললেন,
ছোটলোক ফেসবুকার কোথাকার! জাকারবার্গ আমার বন্ধু। আমি এখনই তোমার নামে রিপোর্ট করব!
এ কথা শুনে মাধবী কেঁদে ফেলল।
না, বাবা, নাআআআ! তুমি আমার নামে রিপোর্ট কোরো। তবু তোমাদের জামাইয়ের ক্ষতি কোরো না। আমার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস তুমি মুছে দিয়ো নাআআআ! তোমার দোহাই লাগে...
মাধবীর বাবা বললেন, ছি! মেয়ে, তোমার এত অধঃপতন! আমি আজই তোমাকে আমাদের ফেসবুক ফ্যামিলির daughter লিস্ট থেকে রিমুভ করব। মাধবীর মা, আমার ল্যাপটপটা নিয়ে এসো।
মাধবীর মা ভয়ে ভয়ে ল্যাপটপ এনে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাধবীর বাবা ফেসবুকে লগইন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন ল্যাপটপের ওপর।
মাধবীর মা বললেন, ওগো, তুমি
শান্ত হও। তোমার ল্যাপটপের
শরীর ভালো না। এত অস্থির হলে যদি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়!
আর এদিকে শুভ মাধবীর হাত ধরে বলল, চলো মাধবী, আমরা আমাদের ছোট্ট গ্রুপে ফিরে যাই। আভিজাত্যের বড়াই থাকলে ভালোবাসা জন্মায় না।
তারা ফিরে গেল তাদের ছোট্ট গ্রুপে।
এরপর একদিন দুর্বৃত্তরা মাধবীর বাবার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ফেলল। হ্যাকাররা সেই আইডি ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করতে লাগল। এতে মাধবীর বাবার মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেল।
কিছুদিন পরে বহু কষ্টে বন্ধু জাকারবার্গের সহায়তায় আইডি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হলেন তিনি।
কিন্তু এরপর থেকে ডেইলি লাইক সংখ্যা কমে গেল। মাধবীর বাবা বুঝতে পারলেন যে এত দিন
তিনি যা পেয়েছেন তা শুধুই খ্যাতি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তাঁর
খ্যাতি শেষ হয়ে গেছে।
তিনি কারও ভালোবাসা, শ্রদ্ধা
পাননি। আসলেই লাইক দিয়ে
ভালোবাসা কেনা যায় না।
একদিন শুভ যখন মাধবীর ফেসবুক ওয়ালে লিখল, জানু, আই লাভ ইউ!
তখন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা সেই ওয়ালপোস্টে লাইক দিল। লাইকসংখ্যা দেখে মাধবীর সে কী আনন্দ! অন্যদিকে হিংসুটে সমাজ একটা dislike বাটনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করল। এ সুযোগে বিরোধীদলীয় ষড়যন্ত্রকারীরা dislike বাটনের একটা spam link তৈরি করে ফেসবুকময় ছড়িয়ে দিল। আপনারা এখনো তার ভুক্তভোগী।
একদিন মাধবী বলল, ওগো, তুমি আমাকে এত আদর করে ফেসবুকে poke দাও কেন? আমার এত্ত ভালো লাগে! তোমার poke পেয়ে আমি বারবার শিহরিত হই!
শুভ খুশি হয়ে বলল,
আমার ঘরের দরজা খুলে দেখো, টেবিলের ওপরে আমার পিসির মাউস তো শুধু তোমাকে poke দেওয়ার জন্যই! যত দিন আমার মাউস অক্ষত থাকবে, তত দিন তোমায় দিয়ে যাব ভালোবাসার poke; প্রমিজ!
যা-ই হোক, ভালোই চলছিল তাদের প্রেম। সারা দিন ইনবক্স মেসেজিং, দিনে ১০-১২টা ওয়ালপোস্ট, পাঁচটা স্ট্যাটাস, একটা নোট। আহা! একেই তো বলে প্রেম!
শুভর পরিবার মেনে নিলেও হঠাৎ ঝামেলা করলেন মাধবীর বাবা-মা। তাঁরা কিছুতেই এ সম্পর্ক মেনে নিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে পালিয়ে তারা বিয়ে করে ফেলল।
তারা একটা গ্রুপ খুলল। closed গ্রুপ। মেম্বার শুধু তারা দুজন। সেখানেই তারা ঘরসংসার শুরু করল। গ্রুপের ওয়ালেই সব সাংসারিক কাজকর্ম, ভালোবাসার আদান-প্রদান সম্পন্ন হতে থাকল।
একসময় তাদের পরিবারের লোকজন এ খবর জেনে গেল। মাধবীর মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
হায়রে। আমার পোড়া কপাল। কত ইচ্ছা ছিল মেয়ের বিয়েতে ফেসবুকে একটা event খুলব। কত লোককে invite করব। কিছুই হলো না রেএএএএ!
মাধবীর বাবা রেগে গিয়ে বললেন,
আমি এ বিয়ে মানি না। বিয়ের প্রমাণ কোথায়? বিয়ের একটা রীতিনীতি আছে। সমাজের কাছে আমি মুখ দেখাব কীভাবে? বিয়ে করতে হলে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে হয়। সেখানে ছেলেমেয়ে উভয় পক্ষকে confirm করতে হয়। তোমরা তা করোনি।
শুভ বলল,
মাই ডিয়ার ফাদার ইন ল, আমরা তা করেছি! আপনাকে বহু আগে আমরা block করেছি। তাই আপনি দেখেননি।
মাধবীর বাবা আরও রেগে বললেন,
কী, এত বড় স্পর্ধা! কোথায় সেটা? আমাকে দেখাও।
শুভ নিজের প্রোফাইল থেকে তাঁকে হিস্টোরিক্যাল ওই পোস্ট দেখাল। মাধবীর বাবা অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, ছোহ! ওই পোস্টে মাত্র ১১ জন লাইক দিয়েছে। এত কম লাইকে বিয়ে সম্পন্ন হয় না।
এবার শুভ চিৎকার করে উঠল,
ফাদার ইন ল, আমাদের ফ্রেন্ডলিস্ট গরিব হতে পারে, কিন্তু আমাদের হূদয়ে ভালোবাসা আছে। ভুলে যাবেন না, লাইক দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না!
মাধবীর বাবা রাগে-ক্ষোভে বললেন,
ছোটলোক ফেসবুকার কোথাকার! জাকারবার্গ আমার বন্ধু। আমি এখনই তোমার নামে রিপোর্ট করব!
এ কথা শুনে মাধবী কেঁদে ফেলল।
না, বাবা, নাআআআ! তুমি আমার নামে রিপোর্ট কোরো। তবু তোমাদের জামাইয়ের ক্ষতি কোরো না। আমার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস তুমি মুছে দিয়ো নাআআআ! তোমার দোহাই লাগে...
মাধবীর বাবা বললেন, ছি! মেয়ে, তোমার এত অধঃপতন! আমি আজই তোমাকে আমাদের ফেসবুক ফ্যামিলির daughter লিস্ট থেকে রিমুভ করব। মাধবীর মা, আমার ল্যাপটপটা নিয়ে এসো।
মাধবীর মা ভয়ে ভয়ে ল্যাপটপ এনে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাধবীর বাবা ফেসবুকে লগইন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন ল্যাপটপের ওপর।
মাধবীর মা বললেন, ওগো, তুমি
শান্ত হও। তোমার ল্যাপটপের
শরীর ভালো না। এত অস্থির হলে যদি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়!
আর এদিকে শুভ মাধবীর হাত ধরে বলল, চলো মাধবী, আমরা আমাদের ছোট্ট গ্রুপে ফিরে যাই। আভিজাত্যের বড়াই থাকলে ভালোবাসা জন্মায় না।
তারা ফিরে গেল তাদের ছোট্ট গ্রুপে।
এরপর একদিন দুর্বৃত্তরা মাধবীর বাবার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ফেলল। হ্যাকাররা সেই আইডি ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করতে লাগল। এতে মাধবীর বাবার মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেল।
কিছুদিন পরে বহু কষ্টে বন্ধু জাকারবার্গের সহায়তায় আইডি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হলেন তিনি।
কিন্তু এরপর থেকে ডেইলি লাইক সংখ্যা কমে গেল। মাধবীর বাবা বুঝতে পারলেন যে এত দিন
তিনি যা পেয়েছেন তা শুধুই খ্যাতি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তাঁর
খ্যাতি শেষ হয়ে গেছে।
তিনি কারও ভালোবাসা, শ্রদ্ধা
পাননি। আসলেই লাইক দিয়ে
ভালোবাসা কেনা যায় না।
মাধবীর বাবা তাঁর ভুল স্বীকার করলেন। বুকে টেনে নিলেন শুভ ও মাধবীকে। ফ্যামিলি লিস্টে এই দুজনকে অ্যাড করে নিলেন। এরপর তিনি তাঁর বিশাল বিশাল ফেসবুক পেজের adminship দিয়ে দিতে চাইলেন জামাই শুভকে।
তবে শুভ একজন আদর্শ ফেসবুকার। সে জীবনেও মাধবী ছাড়া কোনো নারীকে ফ্রেন্ড রিকোয়স্টে পাঠায়নি। তাই নিজ আদর্শে অবিচল শুভ হাসিমুখে মাধবীর বাবার এ উপহার প্রত্যাখ্যান করল।
তারপর ফাদার ইন ল আর
মাদার ইন লকে দুখানা
শ্রদ্ধা-মিশ্রিত fb poke (সালামের আরেক version) দিয়ে বিদায়
নিল শুভ।
তারপর সুখে-শান্তিতে ছোট্ট
গ্রুপে ঘরসংসার করতে লাগল শুভ আর মাধবী। মাঝেমধ্যে মায়াবী সন্ধ্যায় সূর্যের বিদায়ক্ষণে গিটার
হাতে মাধবীর প্রোফাইলে চোখ
রেখে শুভ গেয়ে ওঠে—
পড়ে না চোখের পলক!
কী তোমার pro pic-এর ঝলক!
দোহাই লাগে pro pic তোমার
একটু hide করো!
আমি মরেই যাব
ডিঅ্যাক্টিভেটেড হব
লগইন করাতে পারবে না কেউ!
********************************************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন