[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

বাবা! কেমন আছ? প্রতি-উত্তর


বাবা! কেমন আছ? প্রতি-উত্তর
এখানে ভাল বা মন্দ থাকার কোন অবকাশ নেই। প্রথাগত জাগতিক বোধ আমার ক্ষেত্রে হয়তো পেন্ডুলামের দোলা দিতে পারে না। উত্তর পুরুষ থেকে নাম পুরুষ পর্যন্ত যে স্মৃতিগাথা রচিত হয়েছে, সেখানে অবস্বাদে রক্তের আত্নজ খেলা করে। রক্ত কথা বলে বলেই আবহমানকাল ধরে চলমান সহজাত প্রবৃত্তি আর স্বভাব মলিন হবে না, হবার না। অন্তর প্রকোষ্ঠে লালিত আবেশ তমসে কখনো ধূসর হবে না। রক্তিম আবেশে ভালবাসার রক্তে রঙ্গিন লেপটে যাওয়া জামার বোতাম খুলে দেখ আমি ছিলাম, আমি আছি, আমিই থাকব।
জীবন কভু ব্যার্থতার সাতকাহন হতে পারে না। অঙ্কের ভুলে জীবনের বাঁধ সৃষ্ট হয় না, হতে পারে না। পতিব্রত পালনে বেহুলার নৌকার চলমান গতি অথবা একেলব্যের ছুড়ে দেওয়া তীর যেমন খুঁজে নিতে পারে গন্তব্যের সন্ধান, ঠিক সেভাবেই সংসারে দোদুল্যমান পেন্ডুলাম খুঁজে নিতে পারে ভালবাসার গোলাপি আবেগ। জীবনের ঝরাপাতায় অনেক অচেনা কথা থাকে, হয়তো সেই বাকে জীবন থমকে দাঁড়ায়। এরপর শীতলতা, তারপর গভীরতা, কিছুটা নির্মমতা, সহজাত বাস্তবতা, তাকে আশ্রয় করে করে একটি অলস কাহন জন্ম নেই, যাকে আমরা আত্নবিস্মৃতি বলে থাকি। যেদিন তুমি প্রথম স্কুলে গিয়েছিলে সেদিন আমার কাছে তোমার দেয়া বইয়ের বোঝা আমার কাছে শিমুল তুলার মত হালকা মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল আমার ছোট্ট সেনাপতি আজ জীবন যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছে। তুমি পারবে। বল বাবার এই বিশ্বাস কি মিথ্যা হতে পারে? হ্যা সত্য আমি তোমার তীব্র এ্যামোনিয়া জলের গন্ধকে অবহেলা করেছিলাম, অবহেলা করেছিলাম তোমার চিৎকার। তখন ধরতে চাইনি তোমার কোমল অঙ্গুলি। কেন বলতে পারো? আমি তো চেয়েছিলাম আমার ছোট্ট সেনাপতির হাতে কড়া পড়ে শক্ত হোক হাত। বইয়ের বোঝা কাঁধে বহে বহমান হও জীবনের রথে। আজ বড় জানতে সাধ হয় আমি কি ভুল ছিলাম? মেধার আকর থেকে তুমি সাধনায় তুলে এনেছিলে সোনাঝরা সাফল্য আর দুরন্ত ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে তুমি প্রমান করেছিলা তুমি জীবন যুদ্ধের কালজয়ী দুরন্ত সেনাপতি। কোনদিন কি লক্ষ্য করেছিলে তুমি বাড়ি ফিরে আসলে আমার বুকে প্রশান্ত গাঢ় সুখের নিঃশ্বাস। হয়তো তুমি অভিমানী মনে সুখ নামের কইতর ধরতে দৌড়ে বেড়েয়েছিলে বাহান্ন হাজার তিপান্ন গলি >>> আমি বাঁধা দিতে চাইনি, কারণ আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজে থেকে খুজে নাও আমার বুকের লোমশপৃষ্ঠ যেখানে তোমার আশ্রয় করা সুখ বসত করছে। তুমি বলেছিলে বাহান্ন হাজার তিপান্ন গলি পেরিয়ে আজ তোমার উপলদ্ধি শূণ্য থলি!! থলির মাঝে কি আমার ভালবাসার পূর্ণতা দেখতে পাও না! মনে রেখ শূন্যতা হল পূর্ণতার জন্মদাতা।
কম্পিত অধরে কান্নার রেশ তুলে তুমি বাস্তবতার রূঢ় তর্জনি তুলে আমাকে ইশারা করেছ। তুমি হয়তো জানো না তুমি যখন আমার ছোট্ট শিশু ছিলে তখন তুমি রুগ্ন ছিলে। সারাটি দিন তোমাদের জন্য হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে এসে রাতে তোমাকে আমার বুকের উপর করে রাত কাটিয়ে দিতাম। যখন তুমি অসুস্থ থাকতে সারাটি রাত ধরে আমি ঘর থেকে বারান্দায় হেঁটে কাটিয়ে দিতাম, আর তুমি কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যদি দাঁড়িয়ে পড়তাম তুমি কেঁদে উঠতে, তাই আমি চলমান হয়ে পথের মত গন্তব্যহীন হাঁটতে থাকতাম। একবার ভেবেছ কি আমি বাবা কোনদিন তোমার কাছে বলেছি ও আমার পরানের ময়না আমাকে একটি রাত ঘুমাতে দাও। সত্য এটা আমি তোমাকে বেদম প্রহার করেছিলাম। যখন তুমি জেদ ধরেছিলে দাদীর সাথে ফুফু বাড়ি যাবে আমি নিষেধ করেছিলাম, মনে হয়েছিল সেখানে তোমার যত্ন হবে না, কেউ তোমার মাথার চুল আঁচড়ে দেবে না, বলবে না হ্যারে তোর কি খিদে পাইছে, রাতে কেউ তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে না। এত অনাব্যবহারে তুমি ভাল থাকবে না। আমি নিষেধ তুমি শুনতে চাওনি, তখন মনে হয়েছে আমি জনক, আমার কি কোন মূল্য নেই? কেন তুমি অবাধ্য হলে আমার কথার? আমি মউল ফুলের সুবাস পেয়েছিলাম তখন অসাড় হয়ে বেদম প্রহারে তোমাকে রক্তাক্ত করে তুলেছিলাম। আমি ডাক্তার ডাকতে পারিনি লজ্জায়। তুমি কি জানো সেদিন রাতে দরজা বন্ধ করে আমি জীবনের প্রথম ও শেষবারের মত ডুকরে ডুকরে কেদেছিলাম। তোমাকে আমি ঠিক ততটায় ভালবাসতাম ঠিক যতটা না নিজের জীবনকে ভালবাসতাম।
শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আজ তোমাকে ভালবাসার তত্ত্বের শেষ কথা বলি। আমি জনক রাতে তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে প্রার্থনা করতাম, “ হে খোদা তুমি আমার কলিজাকে দীর্ঘায়ু করো, প্রয়োজনে আমার হায়াৎ কমিয়ে তুমি তাকে দান করো। সুখের বাগানের শ্রেষ্ঠ গোলাপ তুমি তাকে দান করো। কাটাগুলো আমাকে বিদ্ধ করো।” আমি জানি মহাপ্রতাপশালী আমার দোয়া কবুল করেছেন, তাই তুমি চাইলেও আমি তোমাকে কাছে ডাকতে পারি না। অবিনাশী দিন আর কালের সাক্ষী রাতের দোহাই তুমি নক্ষত্র হয়ে হারাবে না, চাঁদ হয়ে থাকবে। আজো দোয়া করি তোমার জন্য ছোট্টপাখি সাফল্যের চুম্বন যেন তোমার কপোল, তোমার চিবুক, তোমার অভিমানী ওষ্ঠ ছুঁয়ে যায়। সতত ভালবাসা তুমি বল বাবার দোয়া কি মিথ্যা হতে পারে? আমার দোয়া ধনুকের তীর হয়ে ছুটে গেছে, তাই তুমি তোমার ধনুকভাঙ্গা পণ ফিরিয়ে নাও।
>>>>>
>>>>>>>
>>>>>>>>>

আমার সনেট কবিতা সমগ্র


মে ২৬, ২০১২

কিছু খন্ডিত চিত্র নিয়ে সনেট বিন্যাসে আমার আয়োজন।। আলোচনা-সমালোচনায় আমার কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন।

১।।

হৃদয়ের স্বপ্নকথা স্বপ্ন ঝরা রাতে
চাঁদমুখ ফিকে হয় গভীর নিশিতে
আলো,ছায়া,মায়া, কায়া হয়েছে বিলীন
তবু থাকে স্বপ্নকথা ধূসর রঙ্গিন
জীবন বাস্তবতায় গভীর বেদনা
তারপর স্বপ্নকথা থাকে শুধু দেনা
ভালবাসা ভাললাগা হৃদয়ের কথা
ভালবাসা অবশেষে একবুক ব্যাথা।।
এরপর ফিরে আসি তোমার অধরে
সব যেন খুজে পায় যুগল নয়নে
ডুবে থাকি দিশেহারা চুলের আধারে
তুমি আমি ভালবাসা হৃদয়ের বন্ধনে
গেঁথেছি যে ফুল মালা পরেছ কি গলে
আনি হাসি আনি কান্না তব ধরাতলে।

বিন্যাস-ককখখগগঘঘ ঙচঙচছছ।

২।।

ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি হয়ে আছি
ভালোবাসা শব্দটিতে অনেক কুয়াশা
তপ্ত বালুকাবেলায় আমি বসে আছি
ভালোবাসা শব্দটিতে থাকে শুধু আশা
উড়ঁতে চাই তোমার আকাশের পানে
সৃজিত হয়ে প্রণয় থাকে বাহুডোরে
যেতে যেতে বহুদূর জীবন সোপানে
হয়েছি পাগলপারা ভালোবাসা তরে।
রক্তিম বিস্বাদ লাগে নীল সন্ধ্যারাগে
বসে আছি বসে রবো আঁধার আমার
ভালোবাসা সিক্ত হবে তব অনুরাগে
থেকে বহুদূর তবু ছায়ার ভিতর
রোমান্সের ছোঁয়া পাই তার ছোঁয়া নিয়ে
দুখগুলো হেরে যায় ব্যার্থ চাঁদ ছুঁয়ে।

বিন্যাস-কখকখগঘগঘ ঙচঙচছছ।

৩।।

বৃষ্টিস্নাত বৃক্ষতলে একাকি দাঁড়িয়ে
অসহায় আনমনে তোমাকে হারিয়ে
অতীত অবগাহনে অসীম সান্তনা
একমুঠো অবস্বাদে পেয়েছি বেদনা
অপরাধ অনুযোগে দোষী তুমি আমি
কোন দোষে দোষী আমি জানে অন্তর্যামী
বেদনার বালুচরে আমি অসহায়
খুজে ফিরি সান্তনায় তোমায় আমায়।।
বারে বারে স্মৃতি তুমি এসেছ ফিরিয়া
বৃষ্টিস্নাত বৃক্ষতলে ছিলেম দাড়িয়া
চলে গেলে একা করে বাধিঁনি পিঞ্জরে
বুঝিনি তো কখনও চলে যাবে দূরে
জীবনের বারতায় ফোটেনি কো ফুল
ভালবাসা ছিল বুঝি হৃদয়ের ভুল।।

বিন্যাস- ককখখগগঘঘ ঙঙচচছছ।

শিকড়ের সন্ধানে


শিকড়ের সন্ধানে


শিকড়ের সন্ধানে আমি হেঁটে চলেছি
পথ থেকে পথে,
পাহাড় দেখে বলেছি,
আমার শিকড়ের সন্ধান?
পাহাড় নির্লিপ্ত নেই উত্তর
হয়তো এটাই উওর।

চলার পথে থমকে দেখি আকাশ
তাকে শুধাই
আমার শিকড় কই?
আকাশ বলে দেখ বিশালতা দেখ ভাবনা
আমি জানি এর মাঝে, উত্তর পাব না।

পথের মাঝে বহে গেল বাতাস
বলল কানে কানে
শুধু গানে গানে
শিকড়ের মুক্তি সন্ধানে!

শিকড়ের সন্ধানে গিয়েছি সাগরের কাছে
হয়ত তার কাছে উত্তর আছে
সাগর সেত গর্জনে দীর্ঘশ্বাস দিয়েছিল
জীবনের মানে শিকড়, বলেছিল?

পথের বাকে বাকে ঘুরে ঘুরে
পথিক বেশে
যখন সন্ধ্যা আসে
বসে বসে ভাবি
কোথায় শিকড়ের দাবি?

রাতের নিরবতায় কিছুটা মৌনতা
তাকে শুধাই
আমার শিকড় কই?
দিয়েছিল একরাশ কাল
বলেছিল উত্তর না জানাই ভাল!
এসেছে নতুন সকাল নতুন সম্ভাবনা,
নাকি শিকড়ের সন্ধানে ব্যার্থ কামনা?
আমি জানি না।

পথের মাঝে মাঝে ঘুরে ঘুরে
ক্লান্ত অবসরে
ফুলের কাছে গিয়েছি
তাকে বলেছি
আমার শিকড় কোথায়?
ফুল, দিয়েছিল সুবাস
বলেছিল গন্ধ বিলাও তারপর উত্তর দাও
জীবনের মানে?
চকিত প্রিয়ার চোখে চোখ রেখে
হাতে হাতে রেখে
বলেছিলাম বলতে পার
শিকড়ের সন্ধান আমার?
অধরে হাসির ফোয়ারা ফুটিয়ে বলেছিল
যাও তুমি শৈশবের কাছে
তার কাছে উত্তর আছে।

ক্লান্ত থেকে ক্লান্ত হয়ে
শৈশবের কাছে আশ্রয় নিয়ে
যখন দাড়ালাম যখন বললাম
আমার শিকড়ের সন্ধান?
শৈশব করেছিল আমাকে আলিঙ্গন।
বলেছিল
শিকড় তোমার আমার সেত মায়ের স্বপ্নে বোনা ছিল।

শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১২

একটি খোলা জানালা...




 একটি খোলা জানালা
একটি খোলা জানালা

ব্যস্ত শহরে হাজারো স্বপ্নের ভীড়ে
সময় যেন ক্লান্ত থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাই নীড়ে
ব্যস্ত শহরে একটি খোলা জানালা
বসে আছি বসে রব আমি একেলা।

প্রতিটি জানালার আড়ালে কত অধ্যায় জমা
হয়ত একটি জানালায় ভালোবাসার প্রতিমা
হয়ত একটি জানালায় বিষাধের উপমা
হয়ত একটি জানালায় জীবনের আলো জ্বলছে
হয়ত একটি জানালায় জীবন আধারে ডুবছে।

আর,
প্রতিটি জানালার একটা নিজস্ব গল্প থাকে
প্রতিটি জানালা যেন বেঁচে থাকার চিত্র আঁকে
তবুও,
শত অভিযোগে একটি জানালা খোলা
শত হতাশায় একটি জানালা খোলা
খোলা জানালা যেন জীবনের অবহেলা।

একটি খোলা জানালায় হঠাৎ আছড়ে পড়ে বেদনা
তবুও জীবনের খোলা জানালা বন্ধ হবে না
আবার আসবে ভোর খোলা জানালায় রোদ্দুর
তাই আমি বসে থাকি খোলা জানালা ও স্বপ্ন নিয়ে তোর।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

দুষ্টু ভূতের কান্ড


দুষ্টু ভূতের কান্ড

মে ২৪, ২০১২


নীরুদের বাড়ীর সামনে বিশাল বিশাল তিনটা তাল গাছ আছে, এই গাছগুলো নীরুর দাদীর নিজ হাতে লাগানো তাই নীরুদের বাড়ীটা বানানোর সময়ই দাদু সেই গাছ তিনটাকে কাটতে দেন নি। স্ত্রীর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য। গাছ তিনটা বেশ ভালই তাল পাওয়া যায়, নীরুরা নিজেরাও খায় পাড়া প্রতিবেশীকেও দেয়।
নীরু ৭বছরের মেয়ে, ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। বাবা মা দুজনই ডাক্তার, তাই তারা খুব ব্যস্ত থাকেন, বাড়ীতে নীরু দাদু আর আয়ার কাছেই থাকে। নীরু স্কুলের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী, এখন পর্যন্ত ক্লাসে কখনো সে দ্বীতিয় হয়নি। দাদু নীরুকে অসম্ভব আদর করেন এই কারণে নীরু যেমন ভাল ছাত্রী তেমনি ভাল একটি মেয়ে, সে খুব বাধ্য এবং শান্ত স্বভাবের। নীরু স্কুল থেকে ফিরে দাদুকে প্রতিদিন পেপারের হেডলাইনগুলো পড়ে শুনায়, দাদু চোখে কম দেখে তাই। আর দাদুও নীরু পেপার পড়ে না দিলে পেপার পড়েন না। নীরুর স্কুলে ১ম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে আর দুই সপ্তাহ পরে, তাই নীরু একটু বেশী পড়াশুনায় ব্যস্ত, পরীক্ষায় তাকে প্রথম যে হতেই হবে।
নীরুদের সেই তিনটি তালগাছে দুটো ভূত পরিবারের বসবাস, দুটো পরিবারের একটাই সন্তান, তার বয়সও ৭বছর। ভূতগুলো কিন্তু কোন রকম মানুষের কোন ক্ষতি করে না, তাই নীরুরা জানে না যে ওই তাল গাছে ভূত থাকে। ভূতের বাচ্চাটাকে তার বাবা মা আদর করে নিপ্পু ডাকে। একমাত্র সন্তান বলে একটু বেশী আদর পায় এই নিপ্পু, আর এই আদরে সে মহা দুষ্টু হচ্ছে দিনকে দিন। সারাদিন নিপ্পুর বাবা মা আর চাচারা বাইরে থাকে খাবার জোগাড় করার জন্য, নিপ্পু একা গাছে থাকে। একদিন নিপ্পু নীরুর বারান্দায় তাকিয়ে দেখে নীরু খুব মন দিয়ে পড়াশুনা করছে কোন দিকে তাকাচ্ছেও না। নিপ্পুর মাথায় দুষ্টামি খেলে গেলো। সে আস্তে করে গাছ থেকে নীরুর বারান্দায় নেমে আসল। নিপ্পুকে নীরু দেখতে পায়নি কারণ ভূতদের কখনো দেখা যায় না। নিপ্পু নীরুকে জ্বালাতন করার বুদ্ধি বের করল আর সেই ভাবে তার দুষ্টামি শুরু করল।
নীরু তার অংক বই থেকে অংক করছিল, প্রথম সাময়িকে পৃষ্ঠা ১ থেকে ৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অংক করতে হবে, এই পৃষ্ঠা থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন হবে। নীরু একমনে অংক করছিল। হঠাৎ নীরু খেয়াল করলো সে তো একটু আগেই ১২নম্বর পৃষ্ঠার অংক করে ফেলেছে সে তো ১৭নম্বর পৃষ্ঠার অংক করছিল তাহলে এই পৃষ্ঠা কে উল্টালো। নীরু বাইরে তাকিয়ে দেখে না সে রকম তো বাতাস নেই, তাহলে পৃষ্ঠা কি করে উল্টে গেলো। নীরুর ভাবনা দেখে নিপ্পু মিটি মিটি হাসতে লাগল কারণ পৃষ্ঠাতো সে উল্টে দিয়েছে নীরু তো টেরই পায়নি। নীরু আবার তার পড়ায় মন দিল।
নিপ্পু একটু পরে তার বাসায় ফিরে গেলো কিন্তু মাথায় হাজারটা দুষ্টু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল তার। সে ঠিক করলো প্রতিদিন নীরুকে সে জ্বালাবে। নীরুকে জ্বালিয়ে সে মজা নিবে। যা ভাবা সেই কাজ। তার পরের দিন আবার সে নীরুর রুমে গেলো। নীরু ড্রয়িং করছিল। নদীর পানিতে নৌকা ভাসছে আর দূরে মাঝি নৌকা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবার পরীক্ষায় টিচার এই থিম দিয়েছে। তাই নীরু তার ড্রয়িং বুকে একমনে নদী আর নৌকার ছবি আকছিল। হঠাৎ নীরু খেয়াল করে দেখে তার নদীর ছবি কেমন করে যেনো কালো কালিতে ভরে গেছে। নীরু খুব অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল, সে তো ওখানে হালকা নীল রং দিয়েছিল, তাহলে এই কালো রং হলো কি করে?? নীরু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো, নীরুকে দেখে নিপ্পুর সে কি হাসি, কিন্তু সেই হাসির শব্দ নীরুর কানে পৌছাল না।
আরেকদিন নীরু দুপুরে রুমে বসে গল্পের বই পড়ছিল, দাদু ঘুমে, আর আয়া গোছলে গিয়েছে, এমন সময় নিপ্পু বাসায় এসে হাজির, ভাল করে পুরো বাড়ী তাকিয়ে নিপ্পু তার দুষ্টামি শুরু করলো। প্রথমে রান্না ঘরে ঢুকে ঢেকে রাখা খাবারগুলোর ঢাকনা সরিয়ে দিল, তার পরে সবজীর ডালি নীচে ফেলে দিল, এর পরে ড্রয়িং রুমে এসে টিভি অন করে দিয়ে সাউন্ড বাড়িয়ে দিল, ঠিক এমন সময় নীরুর বাবা আর মা বাসায় ফিরে আসলো, তারা তালা খুলে দেখে ড্রয়িং রুমে টিভি চলছে আর নীরু দাড়িয়ে টিভি দেখছে, আসলে নীরু এতো জোরে কে টিভি ছেড়েছে তাই দেখতে ড্রয়িং রুমে এসেছিল, কিন্তু নীরুর বাবা মা ভাবলো নীরুই টিভি ছেড়ে দেখছে। নীরুর মা খুব রাগ হলেন আর নীরুকে বকা দিতে লাগলেন, নীরু বার বার বলতে মা সত্যি আমি টিভি ছাড়িনি, আর ওদিকে আয়া গোছল সেড়ে রান্না ঘরে ঢুকে খাবারের এমন অবস্থা দেখে নীরুর মা কে বলল নীরুই এই কাজ করেছে, সে তো সব খাবার ঢেকে রেখে গিয়েছিল। নীরুর খুব কান্না পেলো, সে তো এমন দুষ্টামি করে না, আর সে কখনো মিথ্যা কথাও বলে না কারণ দাদু তাকে শিখিয়েছে মিথ্যা বলা অন্যায় পাপ। তবু কেনো মা তার কথা বিশ্বাস করলো না, সে আর দাদু ছাড়াতো বাসায় কেউ ছিল না তবে কে করল এমন দুষ্টামি। নীরুকে যখন ওর মা বকছিল নীপ্পু মহা উল্লাসে আনন্দ করছিল আর ভাবছিল কি মজা নীরু বকা খাচ্ছে।
এই ভাবে প্রতিদিন নীপ্পু কোন না কোন দুষ্টামি করে যায় আর নীরু বকা খায়। এই বকা খাওয়ার ফলে নীরু খুব কষ্ট পেতে লাগলো, যা সে করেনা তার জন্য কেনো তাকে বকা খেতে হবে আর মা বাবা কেনো তাকে মিথ্যাবাদি বলবে। এই সব কারণে নীরুর পড়ার প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেলো। সে ঠিক মতো পড়াশুনা করতে পারছিল না।
পরীক্ষার দিন, নীরু স্কুলে গিয়েছে পরীক্ষা দিতে, প্রশ্ন হাতে পেয়ে নীরুতো চোখ ছানাবড়া, কয়েকটা প্রশ্ন কমন পড়েছে বাকীগুলোর উত্তর কিছুতেই সে লিখতে পারছিল না। নীরু খুব কাদতে লাগল, নীরুর কান্না দেখে নিপ্পুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো, সে ভাবতে লাগল তার কারণেই নীরুর আজ এই অবস্থা, নীপ্পু তখন বুদ্ধি বের করল কি করে নীরুর পরীক্ষা ভাল করা যায়। ভূতদের যেহেতু দেখা যায় না তাই সে প্রশ্নগুলোর উত্তর যে বই এর পাতায় আছে সে পাতাটি নীরুর সামনে এমন ভাবে ধরলো নীরু ছাড়া আর কেউ দেখতে পাবে না, আর নীরুকে করুণ স্বরে সব খুলে বলল, তার দুষ্টামির কারণে নীরুর আজ এই অবস্থা, সে নীরুর কাছে ক্ষমা চাইলো। নীরু নীপ্পুর কথায় হেসে দিল আর বলল নীপ্পু আমি কখনো নকল করিনি নকল করা অন্যায় তাই আমি নকল করবো না, এই পরীক্ষাটি হোক না খারাপ তবু নিজে যা পারি তাই লিখবো, তুমি ভেবনা, পরের পরীক্ষা আমার অনেক ভাল হবে আমি পরীক্ষায় প্রথম হবোই।
নীরুর কথা শুনে নিপ্পু খুব লজ্জা পেলো, নীরু কতো ভাল একটা মেয়ে সুযোগ পেয়েও সে দেখে লিখলো না আবার তাকে ক্ষমা করেও দিল। নীরুর এই আচরণ দেখে নীপ্পু মনে মনে ওয়াদা করলো সে আর কখনো কাউকে এইভাবে জ্বালাবে না এই রকম দুষ্টামি করবে না।
নীরু কোন রকম পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে আসলো, আর নীপ্পু তার বাসায় ফিরে গেলো। নীরুকে আর কখনো নিপ্পু জ্বালাতন করেনি, নীরু পরের সব পরীক্ষা খুব ভালভাবে দিল।
নিপ্পু আর নীরু খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেলো, নীরু নিপ্পুকে লেখা পড়া শেখাতে লাগল, দাদু তাকে যে সব উপদেশ দেয় তা নিপ্পুকে সে বলে যেনো নিপ্পু কখনো আর কোন অন্যায় দুষ্টামি না করে, যাতে করে নীপ্পুর জন্য আর কারো কোন ক্ষতি না হয়। তাদের এই বন্ধুত্বের কথা কেউ জানে না কারণ নীরু কাউকে কিছু বলে না, আর নীরু জানে কাউকে বললেও তো কেউ বিশ্বাস করবে না।
নিপ্পু এর পর থেকে খুব ভাল হয়ে চলতে লাগল। তার এই পরিবর্তন দেখে নিপ্পুর বাবা মা ও খুব খুশী হল। ভূত হলেও তাদের মনমানষিকতা ভাল ছিল আর নিপ্পু সেই মানষিকতার হচ্ছে দেখে বাবা মা চাচারাও খুব খুশী হল।
(গল্পটি ব্লগের ছোট্ট ব্লগারদের উৎস্বর্গ করা হলো। ওদের একটু ভাল লাগলে আমার লেখার স্বার্থকতা)

সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

অপ্সরী কান্তার বর্ষবরণ ...





কান্তা। আমাদের অপ্সরী কান্তা।
গতকাল পহেলা বৈশাখ কান্তার বয়স ৬ মাস হলো। ওর জীবনের প্রথম বর্ষবরণ। নববর্ষে কান্তা পরেছিলো ২০ বছর আগেকার লাল-সবুজ পেড়ে হলুদ শাড়ি। আমার ছোটবেলার শাড়ি এটা। তখন অনেকটা দুষ্টুমি করেই তুলে রেখেছিলাম, আমার মেয়ে পরবে বলে।




কান্তা পৃথিবীতে আসার প্রায় দেড় বছর আগেই ওকে নিয়ে গল্প-কবিতা লেখা শুরু। তখন ওর নাম লিখতাম “অপ্সরী”। এখন সে ই “অপ্সরী-কান্তা” । কখনও লিখেছি আমি, কখনও বা ভাইয়া। ভাইয়া আর আমার যৌথ প্রচেষ্টায় লেখা তেমনি একটা ছড়াঃ

** ছোট্ট পরী অপ্সরী **

আকাশ থেকে নেমে এলো
ছোট্ট একটা পরী,
বাবা-মায়ের চোখের মণি
নাম তার অপ্সরী।


দুরন্ত সে, মিষ্টি ভারী,
লক্ষ্মী মেয়ে আছে,
খুব আদুরে, ঘুরে ঘুরে
ফ্রক ছড়িয়ে নাচে ।


ডাকি তাকে ময়না-টিয়া,
আরও কতো নামে,
মিছামিছি ভান করিয়া
খুঁজি ডানে বামে।


চুলে ঝুঁটি, ফোকলা দাঁতে
হেসে ফেলে ফিক,
মানিক সোনা, হীরার কণা,
চাঁদের বুড়ি ঠিক।


বড় মামা এলে পরে
ভীষণ খুশি তার,
টাট্টু ঘোড়া, কাঁধে চড়া,
কে পায় নাগাল আর !


যে ই মা তাকে খাবার খেতে
ব্যস্ত করে তোলে,
এক লাফে সে ওঠে গিয়ে
বড় মামার কোলে।


দিনের শেষে বাবা তাহার
যেই ফিরেছে ঘরে,
জড়িয়ে ধরে চুমু সে খায়
বাবার কপাল ‘পরে।


বুকের সাথে জাপটে তারে
বাম হাতে আলগোছে,
ক্লান্ত বাবা কপাল থেকে
ডান হাতে ঘাম মোছে।


ঘরে ফিরে চোখ পড়ে যেই
সোনা মেয়ের মুখে,
বিশ্ব জয়ের শক্তি-সাহস
ফেরে বাবার বুকে।








আমার কান্তার মঙ্গলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।