[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১১

অতীত স্মৃতির পাতায় ভর করে আসে "প্রবাসী ঈদ"!
হাসনাত | অগাষ্ট ৩০, ২০১১
ঈদ মানেই অনাবিল আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি ।
ঈদ মানেই সকল বেদনা দুঃখ কষ্ট ভুলে এক চিলতে হাসি।
ঈদ মানেই যেন আলোর ঝর্ণাধারা,
ঈদ মানেই সকলকে একসাথে কাছে পাওয়া ।
বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ।তার প্রত্যেকটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙ্গশালা। যেদিকে চোখ যায়-অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলেফলে ভরা গাছপালা, তৃন গুল্মশোভিত বন-বনানী ও শ্যামল শস্যেক্ষত- এই অনুপম রূপসুধা পান করে সকলের হৃদয়ে এক অভিনব আনন্দের শিহরন জাগে। কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা ভেদ করে পাকা শস্যের সোনালি সুন্দর মুখখানা বের হয়ে আসছে, আবার কোথাও বিশালদেহ বটবৃক্ষ প্রান্তরের এক স্থানে উধ্বর্বাহু হয়ে মৌন তাপসের মত দাঁড়িয়ে সুশীতল ছায়া দিয়ে পথিকের ক্লান্তি দুর করছে । কোথাও তালগাছ এক পায়ে দাড়িঁয়ে আকাশ থেকে নীলিমা ছিনিয়ে আনার জন্যে ওপর দিকে হাত বাড়িয়েই চলছে, আবার কোথাও দীঘির কাকচক্ষু কালো পানিতে লাল সাদা শাপলা ও কুমুদ ফুঁটে অপরূপ সৌন্দর্য বিস্তার করছে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য বৈচিত্র্য সবার মন যেমন আনন্দে ভরে দেয় তেমনি ঈদের আনন্দও বাংলার মানুষের মন প্রান কানায় কানায় ভরিয়ে দিতে প্রতি বছরই ঈদ আসে তার আনন্দের বার্তা নিয়ে।

প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল চলছে। তাই গ্রীষ্মের তীব্রতা কিছুটা কমে আসছে। শরতের চাঁদনী রাতে বনের গাছ-পালা, নদী তীরের কাশবন,গৃহস্থের কুটির,গতিশীল নদীস্রোত নতুন নতুন রূপে আমাদের চোখে ধরা দেয়। নানা রকমের ফুল ফোঁটে। শরতের শেষে কিছুটা শীতের আমেজ শুরু হয়।শীতের সোনালী আমেজকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ আসছে তার আগমনী বার্তা নিয়ে। ঈদের আগমন শীতের ঝরা পাতার মতো আমাদের জীবনের দুঃখ কষ্টের করুন স্মৃতি গুলোও ঝরে যাবে।অতীতের সমস্ত দুঃখ বেদনার দাগ ভুলে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশ পিছনে ফেলে আবার নতুন রূপে, নতুন সাজে আমাদের মাঝে ফিরে আসছে পবিত্র ঈদ। ঈদ আরবী শব্দ। এর অর্থ খুশি, আনন্দ-উৎসব। রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর সকল মুসলিমদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সরূপ সকলের মাঝে আনন্দ বিলিয়ে দিতে আসে ঈদ। ঈদ মহাখুশি ও চরম আনন্দের একটি মহিমান্বিত দিন।
মূলত, ঈদ মানুষের জীবনে নিয়ে আসে পরম আনন্দ আর পেছনে থাকে এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। ঈদের সীমাহীন আনন্দ উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে পরম করুনাময়ের উদ্দেশে নিজেকে নিবেদিত করতে হবে আর মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ত্যাগের, ভ্রাতৃত্বের, ঐক্যের, সম্প্রীতির এবং সৌহার্দ্য-সহমর্মিতার মহান আদর্শ অনুধাবন করতে হবে।
জীবনের দীর্ঘযাত্রায় অতীতের ঈদের স্মৃতি বাংলার মাটি ও মানুষের মতো আমার অস্তিত্বে গভীর নোঙর বেঁধে আছে আজও। সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল নাকো চাঁদ! জীবনের প্রথম প্রবাস গমন, সাময়িক কিছু আনন্দ থাকলেও বেদনার যেন কোনও কমতি ছিল না। তখন শীতকাল। প্রচণ্ড শীত কুয়াশার চাদর দিয়ে ডেকে রেখেছিল গোটা পৃথিবীটাকে। আকাশের সূর্যের সঙ্গে সেদিন পৃথিবীর কোনও মিলন ঘটেনি। ঠিক ওদের মানসিক অবস্থা আর আমার মানসিক অবস্থার মধ্যে কোনও দূরত্ব ছিল না। বিদায় যে বড় কঠিন, বড় নির্মম সেদিন তা অনুভব করেছিলাম হাড়ে হাড়ে। দেশপ্রেম কি, বন্ধুত্ব কি, আত্মার সম্পর্ক কি? ভালবাসা কি? ভালবাসার রূপ, রঙ, গন্ধ, বর্ণ সবকিছু সেদিন মন অনুভব করেছিল একান্ত করে। সেদিন অনেকেই বোবা কান্নায় কেঁদেছিল। সবচেয়ে বড় একা হয়ে গিয়েছিল আমার সন্তান আমার দ্বিতীয় আত্মা। সে আমার কোলে আমার গলা ধরে সবার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে মাঝে মাঝে আমার গালে চুমু দিচ্ছিল। আর আমি যেন অনেকটা বোবা পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন বিদায়ের বাঁশির সকরুণ সুর আজও আমাকে নীরবে কাঁদায়। আমি হারিয়ে যেতে থাকি ভাবনার অতল গভীরে। আমার স্মৃতিমাখা সে দিনগুলো যেন আজও স্মৃতি হয়ে ভেসে বেড়ায় মনের জানালায়।আমার ঢাকার কর্মব্যস্ত জীবন কেটেছে বেশিটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলে। ঈদের ছুটি কাটাতে যখন গ্রামের বাড়ীতে আসতাম তখন গ্রামের পুরনো বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতাম পদ্মার তীরে। সেখানে আড্ডা চলত মাঝ রাত পর্যন্ত। জানি না আজ আর সে আড্ডা জমে কিনা, আমার জানা নেই হয়তোবা জমে নয়তোবা নয়। হয়তোবা বন্ধুরা আমার শূন্যতা অনুভব করে, নয়তো নয়! কিন্তু আমি আজও অতীতের সেই সোনাঝরা দিনগুলো হৃদয়ের ক্যানভাস থেকে কিছুতেই মুছতে পারিনি। সবাই হয়তো ভুলে গেছে, কেননা বড় বড় আনন্দ উৎসবের দিনগুলোতে তারা কেউ একটা এসএমএস দিয়েও মনে করে না। প্রথম প্রথম দেশের বন্ধুদের প্রচুর চিঠি লিখতাম। কিন্তু কখনো উত্তর পায়নি। ঈদ আসলে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠাতাম। এখন তাও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছি তাদের কাজ থেকে সাড়া না পেয়ে। তারপরও অতীত স্বপ্নকে লালন করি সযতনে বুকের গভীরে।

স্বপ্নই সবাইকে বাঁচিয়ে রাখে প্রবাসের আত্মীয় পরিজনহীন একাকী পরিবেশে। স্বপ্ন! স্বপ্ন সবাই দেখে,কেউ জেগে কেউবা ঘুমিয়ে। ঘুমের মাঝে স্বপ্ন সবার কাছেই আসে। আমার কাছে প্রতি রাতেই আসে। বিচ্ছিন্ন খন্ড খন্ড স্বপ্ন। স্বপ্নতো আর সাজিয়ে গুছিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আসে না। যে রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনা, সে রাতটা আমি ধরে নেই আমার বিনিদ্র রজনী কেটেছে । ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখিনি সে আমার জীবনে কখনো ঘটেনি। ঘুম বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্নের একটা সময় সীমা আছে সেটা কখনো দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে না। কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলি অনেক দীর্ঘ হয়, অন্তত আমার কাছে সেটা মনে হয়।আমার স্বপ্ন আমার বাস্তব চিত্রের সাথে মিলে মিশে আমাকে কঠিন ভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ফেলে আসা অতীতে।

কর্মব্যস্ততার এই প্রবাসে মানুষের জীবনে অবসরের বড় অভাব। তবুও প্রতিদিন জীবনের এই পথ চলতে গিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোনো না কোনো সময় মন ছুটে যায় কোনো স্মৃতির পাতায়_ যা সীমাবদ্ধ থাকে না কোনো একটি মধুর বা বেদনাবিধুর স্মৃতিতে। ঈদ এলে সেটা আরো ভারাক্রান্ত করে এ হৃদয়কে। আসলে আমাদের জীবনে এমন পূর্ণ অবসর নেই তাই চিন্তাধারাগুলো এখন আর একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এক বর্ষণমুখর দিনে সোনার হরিনের আশায় দেশ ত্যাগ করি। এই প্রবাসে ঈদে যখন অবসরের স্বাদ নিতে চাই তখনই ফেলে আসা অতীতের কিছু মুখ ভেসে ওঠে স্মৃতির আয়নায়। একদিন যার কথা শুনতে চাইনি, আজ ঈদ অবসরে তার মধুর স্মৃতি বেশী মনে পড়ে। এখন ইদের অবসরে পড়ন্ত বিকেলে যখন আরব সাগরের তীরে গিয়ে দাঁড়াই, রাতের আঁধারে যখন ছোটখাটো অবসরগুলো কাটে তখন সেই সুখস্মৃতিগুলোই যেন স্থান করে নেয় সমস্ত মনজুড়ে। মনেপড়ে, সেই অগোছালো জীবনে ছিলো না কোন স্থিরতা। পরিচিত হলো দুটো মন সময়ের পথ ধরে এগিয়ে চললো তারই ধারাবাহিকতা। ওই মধুর স্মৃতি, সে আসবে বলে কত স্বপ্ন এঁকেছি জীবনের বাঁকে বাঁকে। এখনও যেন সেই স্বপ্নের রাজ্যে আছি।

মাঝে মাঝে ভিড় করে স্কুল কলেজের ফেলে আসা সেই দিনগুলো এবং আরও কতস্মৃতি। কিন্তু সব স্মৃতিকে ভাসিয়ে সামনে চলে আসে স্বদেশে ঈদ আনন্দের স্মৃতি, মায়ের সেমাই, বাড়ীর পাশের ঈদগাহে নামাজ শেষে দীর্ঘক্ষন হাততুলে মোনাজাতের স্মৃতি। প্রবাস জীবনের কর্মব্যস্তার মাঝে শুরু হল নতুন এক পথচলা। এখনও যেন স্বাপ্নিক চোখে ভেসে আসে নানা রঙের রাঙ্গায়িত স্বপ্নের সেই দিনগুলো_যা ঈদ আসলে দিয়ে যায় মৃদু আনন্দের ছোঁয়া। অবসরের মুহূর্তে ভেসে চলি ফেলে আসা সেই দিনগুলোতে।

যতবার ভেবেছি, অতীতকে আর মনে রাখব না, মুছে যাক মনের পাতা থেকে অতীতের সব বস্তা পঁচা স্মৃতিগুলো। চোখের পানি দিয়ে মুছে পরিস্কার করে ফেলব। কিন্তু অতীতকে ফেলে নিজকে আরো বিভ্রান্ত করে হারিয়ে ফেলেছি।
জানি, মানুষের জীবনের সকল আশা-আকাঙ্খা, সাধ-স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটে তখন শুধু বিগত দিনের স্মৃতিগুলোকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকা যায় না।স্মৃতির মধ্যে সুখ নাই, শান্তনা নেই। আছে শুধু ব্যথা, বেদনা আর দীর্ঘশ্বাস। স্মৃতি, সেতো অতীত। সুখের হোক আর দুঃখের হোক, বর্তমানে তার উপস্থিতি দুঃখজনক। শুধু আমি কেন, পৃথিবীর যে কোন মানুষ যে কোন মুহুর্তে একবার যদি অতীতের সকল সাগর মন্থর করে তাহলে তার ভেতরে একটু না একটু বেদনার উদ্রেক হবেই।

প্রবাস জীবনের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যখন দেখি পেছনের দিনগুলো ধূসর ধূসর, আর সেই ধূসরতার শরীর থেকে হঠাৎ হঠাৎ কোনও ভুলে যাওয়া অতীত স্বপ্ন আচমকা সামনে এসে দাঁড়ায় বা কোনও স্মৃতি টুপ করে ঢুকে পড়ে আমার প্রবাসী একাকী নির্জন ঘরে, আমাকে কাঁপায়, আমাকে কাঁদায়। যে স্বপ্নগুলো অনেককাল মৃত, যে স্বপ্নগুলোকে এখন আর স্বপ্ন বলে চেনা যায় না, মাকড়শার জাল সরিয়ে ধুলোর আস্তর ভেঙ্গে কি লাভ সেগুলোকে নরম আঙুলে তুলে এনে। জানি সব, তবুও আমার প্রবাসের জীবন আমাকে বারবার পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, আমি আমার অতীত জুড়ে মোহগ্রস্থের মতো এখনো হাঁটি। দুঃস্বপ্নের রাতের মতো এক একটি রাত আমাকে ঘোর বিষাদে আচ্ছন্ন করে রাখে এখনও। সন্ধ্যা রাতের তারা হয়তো আর আলো জ্বালবে না হৃদয় নিকুঞ্জে। পাল তোলা নৌকা আর বয়ে চলবে না জীবন গঙ্গায়।
তারপরও দিগন্ত জুড়ে এক ফালি সরু চাঁদের অপেক্ষায় দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদের আনন্দ-বারতা। রমজানের একটি মাসের সিয়াম সাধনায় পরে এলো খুশির ঈদ। বাঁধ ভাঙা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়। আর আবেগ প্রবন বাংগালী মুসলমানের ঈদ মানে এক মহা উৎসব। চাদরাত থেকেই শুরু হয়ে যাবে এই বর্নিল আয়োজনের। টিভির পর্দায় গেয়ে উঠবে……
‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ
আপনারে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ’…।
ঘুমকাতুরে চোখ উৎসবের আমেজে প্রতিক্ষার প্রহর গুনবে ঈদের সোনালী সকালের। গৃহিনীরা সদা ব্যস্ত থাকবে সুস্বাদু সেমাই, ফিরনি, পায়েস, পোলাও, কোরমা সহ মুখরোচক খাবারের আয়োজনে। বাড়ীর তরুনীরা ঘরটাকে সাজিয়ে নিবে নিপুন কারুকাজে। সময় করে মেহেদিতে হাত রাঙাবে তরুনী, কিশোরী এমনি কি প্রান পুরুষের দল। ঈদের সকালে গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে পৌছে যাবে ঈদগাহে। নামাজের পরে ঈদ মোবারক আর কোলাকুলির সৌহার্দ্যে, সম্প্রিতি আর ভালোবাসার এক বন্ধনে নতুন করে আবদ্ধ হবে সবাই। এরপর গভীর রাত অবধি উৎসবের জোয়ারে ভেসে যাবে সব। আজ কোন দুঃখ নেই। ছোট বড়, ধনী গরীব যার যার পরিসরে সবাই ঈদের আনন্দে রঙ্গীন হবে মহা উৎসব। বাংলাদেশের এই ঈদের আমেজ অনেকটাই অনুপস্থিত আমাদের প্রবাসী জীবনে। তাই তো ঈদের দিনে নষ্টালজী পেয়ে বসে অনেকের মাঝে। ফেলা আসা হারানো দিনের ঈদের আনন্দ এখন কেবলই স্মৃতি।ঈদের সকালে ঘর থেকে বের হলে মনের ভিতরের ঈদের আনন্দ আর থাকে না। সবাই ব্যস্ত যার যার মত। প্রবাসে আমরা সংখ্যালঘু , তাই ঈদের আনন্দ অনুভুতিগুলি মনের গহীনেই আটকে থাকে ।এর বাহ্যিক আবরণটা খোলসা হয় না কখনও।
তারপরও এত যান্ত্রিকতার মাঝেও ঈদ প্রবাসীদের জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে।প্রবাসে ঈদের আমেজ খুজে পাওয়া যায় ঈদের নামাজের আসরে গিয়ে। সকালে ঈদের নামাজ, তারপর নতুন বাহারী পোষাক আর ঘরোয়া পরিবেশে রকমারী সুস্বাদু খাবার খেয়েই ঈদের আনন্দ শুরু হয়। প্রবাসের ভিন্ন পরিবেশে তাই ঈদের বাহ্যিক আবরণটি ঘরের বাহিরে তেমন ভাবে দেখা যায় না।তাই প্রবাসের মুলধারার জীবন দর্পনে ঈদ তেমন প্রভাব ফেলে না। তবুও বাংগালী মুসলমানদের অন্তরে ঈদ লালিত হয় আবেগ অনুভূতি আর ভালবাসার অফুরন্ত উচ্ছাস নিয়ে। তারপরও ঈদের ছুটির অবসরে প্রীতিময় সামাজিকতার আঙ্গিকে ভরে উঠে প্রবাসীদের মন।

সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদের আগমন সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। জীবনের দুঃখবোধের সমস্ত গ্লানি মুছে যাক, জীবন গাঙ্গে বয়ে চলুক পূর্ন আনন্দের অমীয় ধারা।

ঈদ মোবারক………

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১১

নিঃসঙ্গ প্রহর


নিঃসঙ্গ প্রহর

নিঃসঙ্গ প্রহর
বিষণ্নতার সুর বাজে বেহালার তারে,
শীতার্ত সারসী কাঁদে নিঃশব্দ প্রহরে।
জোনাকীর মৃদু আলো হিজলের বনে,
মেঘের আঁচলে লুকায় চাঁদ ঐ গগনে।
মায়াবী হরিণী চোখ আমরণ তৃষ্ণায়,
মরীচিকা বিভ্রমে মরে কস্তুরী আশায়।
নিবিড় স্পর্শে কাতর লজ্জাবতী লতা,
ভ্রমরের গুঞ্জরণে জাগে প্রণয়ের ক্ষুধা।
প্রেমিক মীনের সন্তরণ সবুজ শৈবালে,
বিরহের পদাবলী রচে প্রাচীন ফসিলে।
নৈঃশব্দের প্রহর ভাঙ্গে নূপুরের ঝংকার,
ঝারবাতির জলসাঘরে মদ্যপ জমিদার।
নিস্তব্ধতার খোলসে ঢাকা পেঁচার উচ্ছাস,
শুকনো পাতার ভাঁজে বাদুরের দীর্ঘশ্বাস।
রাতের শিশিরে সতেজ ঘাসের আকুতি,
সোনারোদে ছড়ায় যত আবেগের দ্যুতি।
নিঃসঙ্গতার প্রহর শেষে বিষণ্ন এই মন,
একাকিত্ব ভুলে নেয় রোদের আলিঙ্গন।

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১১

রাতের তাঁরার সাথে কথা ও আমার বাবা


রাতের তাঁরার সাথে কথা ও আমার বাবা

এ.এইচ.বিদুয়ান
গতকাল গভির রাতে আকাশের তারার সাথে কথা
বলেছি।তারাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমার বাবা
কেমন আছে তোমরা কি জান? ওরা বলেছিলো
ভালো আছে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমাদের সাথে
কি বাবার দেখা হয়? কথা হয়?
আমি আবার বলেছিলাম আচছা বাবা কি আগের মত অসুস্থ থাকে?
বাবা কে কি এখনো রক্ত দিতে হয়?বাবা কি ব্যাথ্যা পায়?
“ওরা হেসে বলেছিল ধুর তুমি একটা গাধা”
আমি বললাম কেন? তারারা বলল তোমার বাবা
যেখানে আছে সেখানে কোন মানুষ
অসুস্থ হয়না। আমি আনন্দে পাগলের মত হাসি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসি।
মনে মনে বলি বাবা আর অসুস্থ থাকেনা?
রাত অনেক হয়ে যায়,তারারা বলে
“তুমি তোমার বাবা কে অনেক মিস কর তাইনা?
আমি বলি হাঁ।ওদের বলি আমার বাবা কে একটা সংবাদ দিতে পারবে?
ওরা বলে পারব।
বল কি বলতে হবে?বাবা কে বল “আমি বেশ কয়দিন ধরে অসুস্থ”।
আমার জন্য বাবা কে একটু দোয়া করতে বলো।
ওরা বলে ঠিক আছে। আমরা এখন যাব।
ভাল থেকো————————-।
তারারা হারিয়ে যায় আকাশের ওপারে।

শুক্রবার, ২০ মে, ২০১১

হারিয়ে যাওয়া বন্ধূ .........

হারিয়ে যাওয়া বন্ধূ

আমার একটি বন্ধু ছিলো
সোহেল ছিলো তার নাম,
তার পরিবার গরীব ছিলো
সমাজে ছিলো না তাদের দাম।


আমি যখন স্কুলে পড়ি
তখন তার সাথে পরিচয়,
আমি ক্লাসে ফাস্ট ছিলাম না
কিন্তু রোল ছিলো তার নয়।


তার বাবা গরীব কৃষক
ছিলনা নিজের জমি,
বর্গা নিয়ে চাষ করতো
অন্য লোকের ভুমি।


ক্লাসের ফাঁকে তাকে কাঁদতে দেখতাম
বলত এটা তার দুঃখ নয়,
কিছুদিন পর বুঝলাম
এটা ছিলো না তার অভিনয়।


অনেকদিন যাবত সে স্কুলে আসে না
খবর নিতে গেলাম তার বাড়ি,
পড়ালেখা হবে না আর
বাবা তার দিয়ে গেছেন আড়ি।


পকেটে আমার টাকা নেই
কে দিবে পড়ালেখার খরচ,
পড়ালেখা করে হবে কি?
সমাজে আমাদের নেই কোন গরজ।


আমার সাথে থাকবে সে
করবে সে জমিতে কাজ,
বিরক্ত না করে চলে যাও
নিজের বাড়ি ফিরে যাও আজ।


তার বাবার কথা শুনে
পেলাম অনেক কষ্ট,
আমার বন্ধুর স্বপ্নগুলো
হয়ে গেলো নষ্ট।


সেই থেকে সে হারিয়ে গেলো
আর এলোনা আমাদের কাছে,
আমরা নাকি শিক্ষিত আর সে মুর্খ
তাই সে থাকল না আমাদের পাশে।


সেকি আমাকে ভুলে গেলো
বুঝল না বন্ধুত্বের মায়া,
এখনো আমার পাশে খুঁজে বেড়ায়
শুধুই তার ছায়া।

********************************

রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১০

এই শোন........শোন না একটু.........

এই শোন........শোন না একটু.........

১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৪

রাত তিনটা বাজে তখন বেলার টেবিলের থাকা ঘড়িটাতে। আর উপারে থাকা রাজ এর ঘড়িতে রাত দশটা। বেলা অনেক চেষ্টা করছে ঘুময়ে পরতে কিন্তু পারছে না। কিন্তু রাজ এর সাথে কথা না বলে তো কোন দিনও ঘুমাতে পারেনি বেলা। তবে আজ কিভাবে ঘুমাবে? অনেক রাগ লাগছে অভিমানে মন ভরে যাচ্ছে। কি করছে ও? বাসায় ফিরেসে, নাকি কাজে আছে। নাকি রাতের খাবার রান্না করছে? না আবার শয়তান টা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে? সত্যি যদি রাজ আমাকে ফোন না দিয়ে ঘুমিয়ে পরে....... তবে ওর সাথে আমি তিন দিন কথা বলবো না। না সেটা আমি পারবো না......... ওকে অনেক বকে দেব..... সেটাও পারি না........ এতো সুন্দর করে কথা বলে........ এতো দুরে থেকেও আমাকে ভালাবাসায় ভরে রাখে......।

এই গতকাল রাতে গাড়ী নিয়ে শহরে গেছে। আমার সাথে একটু কথা বলে কার নিয়ে বের হয়ে গেছে। আমি অনেক রাগ করি। কিন্তু অনেক জরুরী কি কাজ যেন তাই ও চলে যায়। আমার অনেক খাহারপ লাগছিল। সেটা একমাত্র রাজ ই ভালো জানে। আর তাই হাইওয়ে তে উঠে আমাকে ঠিক কল দিয়েছিল। আমি বলছিলাম ড্রাইভ করার সময়ে তুমি কথা বলতে পারো না তবে কেন কল দিয়েছ। আমাকে অনেক আদর দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে বলল একটু কথা বলি। আর আমাকে আগেই বলে দিল আন্ডার পাস এ ঢুকলে নাকি নেট থাকে না। আর কল কেটে গেলে আর কল দেবে না। ২০ মিনিট কথা বলার পর লাইন টা কেটে গেল। শয়তান টা সত্যি র কল দিলো না। সারা দিনেও একটা এস এম এস ও করলো না।

সকাল থেকেই আম্মু বাসায় ছিলো না। সারাও দেখলাম কেমন মন ভার ভার করে আছে। জানতে চাইলাম কিছু বলে না। আপুর বাসায় গেলাম কেউ বাসায় নাই সবাই নাকি রাজ দের বাসায় গেসে। আপুর ননদের সাথে অনেক সময় গল্প করে বাসায় চলে আসি। হাতের কাজ শেষ করে হুমায়ন পড়েছি অনেক সময়।

এতো রাতে বসার ঘরে আস্তে আস্তে কথা বলে কে? বেলা যথেষ্ট বিরক্ত হলো। কাথা দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমানোর বৃধা চেষ্টা করতে লাগলো। """ কি ব্যাপার আমাকে ভুলে গিয়ে তুমি ঘুমিয়ে পড়লে?""" রাজ এর কন্ঠ!!!!!!!!!!! নিশ্চিত ঘুমিয়ে পড়েছি আমি আর স্বপ্ন দেখছি শয়তান টাকে , মুখে বলে বেলা। "" বেলা বউ চোখ মেলে দেখো শয়তান তোমার সামনে দাড়িয়ে""

মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০১০

ফুল ঝরা কবিতা

ফুল ঝরা কবিতা
আমি কবিতার কাছে হেরে গেলাম,
যেখানে শুরু করে বসিয়েছিলা কলমের আঁচর
শৈল্পের নৈপনিতে এঁকেছিলাম এক একটি কবিতা
সাজানো এক ফুল বাগানের মতো।
সেখানেই গিয়ে দেখি আজ ঝরা ফুলের নি:শব্দ কান্না
নৈ:শব্দ অনুভবে আমিও চোখের জলে ভিজিয়েছি ললাট
তীব্র অস্থিরতায় ঘেমেও ছিলাম তিক্ত অনুভবে,
যা বলার ভাষা প্রকাশ করার মত আমার উপায় ছিল না।

আমি ঝরা ফুলের মতো কবিতার কান্নাও শুনেছি
হার মেনেছি তার সীমাহীন ভালবাসায়,
অশরীরী আত্নায় তাকে দেখেছি কত অগনিত বার
নির্জন তিমিরে তার ছায়া রুপী আত্নাকে মানবীতে দেখেছি।
সে আর এখন আমার কাছে আসে না;
অথচ নির্জন জোস্না রাত আসলেই তার অপেক্ষার প্রহর কাটি
তেপথের পাড়ে যে ছায়াকৃত খুদে বৃক্ষ
সেখানে মাঝে মাঝে ছুটে যাই তাকে কামনা করে,
এখন আর সে আসে না;তার অশরীরী আত্নাও আমাকে ভর করে না;
তার কি কিছু হয়েছে? না আমি কবিতার কাছে হেরে গেলাম?