স্বপ্নওয়ালা...
১৩ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১২:১৪
খুব সম্ভব ৯০ বা ৯১ সালের কথা।
আমি তখন নিতান্তই তরুন, কিশোরও বলা চলে। সেসময় নিজের ব্যস্ত ছোটাছুটিটা জমে উঠেছে রীতিমত। বাসার ২টা ট্রাক পালা করে ট্রিপে পাঠাই, ছুটে বেড়াই আরও অন্যান্য কাজে, রাতে কড়কড়ো টাকা গুনি। বড় ভাল লাগে ময়লা টাকাগুলোর দিকে লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে। পাড়ার মোড়ে ছোট্ট একটা স্টল, সেটাতে বিকেলের সামান্য একটু অবসর কোনাভাঙা চায়ের কাচে ডুবে যেত। কদিনে চাওয়ালার সাথেও সখ্যতা হয়েছিল বেশ। দোকানের একমাত্র কর্মচারীটা বেশ ফুটফুটে, নয় কি দশ হবে মেয়েটার বয়স, আরও কম হতে পারে। লোকটার নিজের মেয়ে। উজ্জল হলুদ ফ্রকের মতই জ্বলত ওর চোখমুখ। কৌতুহলের বসে একদিন জেনে ফেলি ও পড়ত ক্লাস থ্রিতে। বই কেনার টাকা ওদের কাছে বিলাসীতা। অগত্যা বাপের কাজে সাহায্য করা। কেমন একটা বিষাদ সহসা ছেয়ে ধরে আমাকে। এত সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে যে স্বপ্নকে ধারন করে হয়ে উঠতে পারে স্বপ্নের যোগ্য ধারক সামান্য কটা টাকার জন্য....।আমার বয়ষ তখন অল্প, অথচ স্বাধ-আহ্লাদ, আকাংখা, আবেগের কমতি নেই। সেই আবেগের ছটায় মেয়েটা আবার স্কুলে ভর্তি হল, নতুন বই কিনে মুখে হাসি ফুটিয়ে টুংটাং করে পড়া শুরু করল। অবসরে অশিক্ষিক বাপের ক্যাশ সামলাল।
এরপর কাজের চাপে, অর্থের তাপে, সময়ের আবর্তে একসময় হারিয়ে যায় সবকিছু। সেই চাওয়ালা আর তার ছোট্ট স্বপ্নওয়ালা মেয়ে কোথায় জানি চলে গেছে। আর আমিও রীতিমত ভুলতে বসেছি তাদের কথা..শুধু নিজের অজান্তেই মেয়েটার মধ্যে ধারন করে ফেলেছি নিজের স্বপ্ন। মনে হত ও বেড়ে উঠুক। ওর চলা স্বাচ্ছন্দময় হোক।কেমন এক আত্মতৃপ্তির অজানা শক্তি ফুয়েলের মত এগিয়ে দিত আমাকে।
একযুগেরও বেশী কেটে গেছে, একদিন হটাৎ ওই বাপ বাসায় এসে উপস্থিত। ভুলে যাওয়া স্মৃতিটাকে ঝালাই করে নিতে একটু সময় গেলেও চিনে ফেলে একটু বিরক্তই হলাম আমি। এ কেমন লোক ওই ঘটনার পর একবারও যোগাোগ করল না। লোকটা জানায় তার লজ্জার কথা।উত্তরনের কথা।অন্য একটা শহরে তার চায়ের দোকানটা ভালই চলে। আমার দেয়া মেয়েটার পড়ার জন্য এককালীন টাকাগুলো থেকে কিছু টাকা সে দোকানটাতেও লাগিয়েছিল। মেয়েটা...তোমার মেয়েটা...? প্রশ্ন করতেই আবেগে হারায় লোকটা। চোখমুখ মুছে জানায় আবদার। সেদিনের সেই ছোট্ট খুকি আজ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন বিকম পাস করে চাকরির আশায় আমাদের শহরের একটা বেসরকারী ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়েছে। এখন আমার একটু উদ্যোগ মেয়েটার চাকরী নিশ্চিত করতে পারে, কেননা ওই ব্যাংকের লোকেরা আমার বন্ধুস্থানীয়।
মুহুর্তে আমি পেয়ে যাই এক আশ্চর্য জগৎ, কর্মব্যস্ততায় যা কখনওই ধরা দেয়না কোন ফাকে। এক পলকেই মনে পড়ে ছোট্ট কচি মুখটার কথা।ও এতবড় হয়ে গেছে? আমার ছোট্ট একটা সুপারিশে ও ভাল একটা কাজ পেয়ে হয়ে উঠবে পরিবারের উন্নতির সিড়ি। পাল্টে যাবে ওর ভবিষ্যৎ ও ধারন করবে আমার স্বপ্ন স্বাদ। হঠাৎ কেন জানি, নিজের এইটে পড়ুয়া মেয়ের মুখের সাথে মিশে যায় মেয়েটার মুখ, আমার মনে, অস্ফুট কন্ঠে বলি আমি, 'আমার মেয়ে চাকরীটা পাবে, অবশ্যই পাবে।
আমি তখন নিতান্তই তরুন, কিশোরও বলা চলে। সেসময় নিজের ব্যস্ত ছোটাছুটিটা জমে উঠেছে রীতিমত। বাসার ২টা ট্রাক পালা করে ট্রিপে পাঠাই, ছুটে বেড়াই আরও অন্যান্য কাজে, রাতে কড়কড়ো টাকা গুনি। বড় ভাল লাগে ময়লা টাকাগুলোর দিকে লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে। পাড়ার মোড়ে ছোট্ট একটা স্টল, সেটাতে বিকেলের সামান্য একটু অবসর কোনাভাঙা চায়ের কাচে ডুবে যেত। কদিনে চাওয়ালার সাথেও সখ্যতা হয়েছিল বেশ। দোকানের একমাত্র কর্মচারীটা বেশ ফুটফুটে, নয় কি দশ হবে মেয়েটার বয়স, আরও কম হতে পারে। লোকটার নিজের মেয়ে। উজ্জল হলুদ ফ্রকের মতই জ্বলত ওর চোখমুখ। কৌতুহলের বসে একদিন জেনে ফেলি ও পড়ত ক্লাস থ্রিতে। বই কেনার টাকা ওদের কাছে বিলাসীতা। অগত্যা বাপের কাজে সাহায্য করা। কেমন একটা বিষাদ সহসা ছেয়ে ধরে আমাকে। এত সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে যে স্বপ্নকে ধারন করে হয়ে উঠতে পারে স্বপ্নের যোগ্য ধারক সামান্য কটা টাকার জন্য....।আমার বয়ষ তখন অল্প, অথচ স্বাধ-আহ্লাদ, আকাংখা, আবেগের কমতি নেই। সেই আবেগের ছটায় মেয়েটা আবার স্কুলে ভর্তি হল, নতুন বই কিনে মুখে হাসি ফুটিয়ে টুংটাং করে পড়া শুরু করল। অবসরে অশিক্ষিক বাপের ক্যাশ সামলাল।
এরপর কাজের চাপে, অর্থের তাপে, সময়ের আবর্তে একসময় হারিয়ে যায় সবকিছু। সেই চাওয়ালা আর তার ছোট্ট স্বপ্নওয়ালা মেয়ে কোথায় জানি চলে গেছে। আর আমিও রীতিমত ভুলতে বসেছি তাদের কথা..শুধু নিজের অজান্তেই মেয়েটার মধ্যে ধারন করে ফেলেছি নিজের স্বপ্ন। মনে হত ও বেড়ে উঠুক। ওর চলা স্বাচ্ছন্দময় হোক।কেমন এক আত্মতৃপ্তির অজানা শক্তি ফুয়েলের মত এগিয়ে দিত আমাকে।
একযুগেরও বেশী কেটে গেছে, একদিন হটাৎ ওই বাপ বাসায় এসে উপস্থিত। ভুলে যাওয়া স্মৃতিটাকে ঝালাই করে নিতে একটু সময় গেলেও চিনে ফেলে একটু বিরক্তই হলাম আমি। এ কেমন লোক ওই ঘটনার পর একবারও যোগাোগ করল না। লোকটা জানায় তার লজ্জার কথা।উত্তরনের কথা।অন্য একটা শহরে তার চায়ের দোকানটা ভালই চলে। আমার দেয়া মেয়েটার পড়ার জন্য এককালীন টাকাগুলো থেকে কিছু টাকা সে দোকানটাতেও লাগিয়েছিল। মেয়েটা...তোমার মেয়েটা...? প্রশ্ন করতেই আবেগে হারায় লোকটা। চোখমুখ মুছে জানায় আবদার। সেদিনের সেই ছোট্ট খুকি আজ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন বিকম পাস করে চাকরির আশায় আমাদের শহরের একটা বেসরকারী ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়েছে। এখন আমার একটু উদ্যোগ মেয়েটার চাকরী নিশ্চিত করতে পারে, কেননা ওই ব্যাংকের লোকেরা আমার বন্ধুস্থানীয়।
মুহুর্তে আমি পেয়ে যাই এক আশ্চর্য জগৎ, কর্মব্যস্ততায় যা কখনওই ধরা দেয়না কোন ফাকে। এক পলকেই মনে পড়ে ছোট্ট কচি মুখটার কথা।ও এতবড় হয়ে গেছে? আমার ছোট্ট একটা সুপারিশে ও ভাল একটা কাজ পেয়ে হয়ে উঠবে পরিবারের উন্নতির সিড়ি। পাল্টে যাবে ওর ভবিষ্যৎ ও ধারন করবে আমার স্বপ্ন স্বাদ। হঠাৎ কেন জানি, নিজের এইটে পড়ুয়া মেয়ের মুখের সাথে মিশে যায় মেয়েটার মুখ, আমার মনে, অস্ফুট কন্ঠে বলি আমি, 'আমার মেয়ে চাকরীটা পাবে, অবশ্যই পাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন