অসমাপ্ত যবনিকা ............... (গল্প)
ক.
বন্যার খুব খারাপ লাগছে, চারিদিকে এত মানুষ, ব্যস্থতা, কোলাহল! কয়েকটা ষন্ডামার্কা ছেলে কেমন ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। শাড়ির আচঁলটা একটু টেনে দিল বন্যা। দিহানের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সেই কখন থেকে এই ভারী সুটকেসটা নিয়ে ষ্টেশনে একা দাড়িয়ে আছে। দিহানের বিকেল সাড়ে পাচটায় আসার কথা, এখন বাজে প্রায় সাতটা। অথচ এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ নেই। এ সময় ভেঁপু বাজাতে বাজেতে ট্রেন চলে এল। মানুষজন উঠছে নামছে, সবাই কেমন অস্থির, হুড়মুড়িয়ে উঠানামায় ব্যস্থ, কারো দিকে কারও খেয়াল নেই। বন্যার নিজেকে একেবারে অসহায় অনুভব করল। সেকি ট্রেনে উঠবে? উঠে সে কোথায় যাবে? দিহানের যে খালার বাড়িতে যেয়ে উঠার কথা ছিল সে জায়গাটা কোথায় তাও তার জানা নেই। বাড়ি ফেরার পথও তো নেই। সেই দরোজা সে নিজের হাতেই ব্ন্ধ করে এসেছে। অস্বস্তিটা বাড়ছে আরও। ট্রেনটা বেশীক্ষন থাকবে না, দিহান কি আসবেই না? নাকি এসে গেছে তার চোখে পড়েনি, হয়ত ট্রেনে ওঠে গেছে, ভেবেছে বন্যাও উঠেছে, ট্রেন ছাড়লে খুঁজে বের করা যাবে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বন্যা।
এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন শিস দিয়ে উঠল-'মাইরি একদম খাসারে!'
নাহ! এখানে এভাবে আর থাকা যাবে না। কেনো কিছু না ভেবেই ট্রেনে উঠে পড়ল বন্যা।
খ.
টাকা যোগার করতে খুবই ঝক্কি ঝামেলা গেছে দিহানের। বাড়ি থেকে ওর খরচের জন্য মাসে মাসে যে দুইহাজার টাকা আসে তার মাত্র পাচশ ছিল। আর ছিল টিউশনির তিনহাজার। সেটাও খরচ হয়ে গেল সজীবের এক্সিডেন্টের ফলে। তখন ভোররাতে হসপিটালের বারান্দায় দিহানের চোখে মুখে সুর্যান্ত সময়। বন্যাকে কথা দেয়া পাচটার সময় এ কথা মনে পড়তেই কুকড়ে যায় তার তথাকথিত সাহসী মন। সজীবের এক্সিডেন্টটাও এমন সময় হল। বন্যায় সাথে সব প্ল্যান করে মেসে ফিরেই দুসংবাদটা শুনতে হল। এ শহরে সজীবের তো আর কেউ নেই দিহান ছাড়া। রাতেই ছুটতে হল তাকে। ভোররাতে ডাক্তার যখন বলল সজীব বিপদমুক্ত তখন ঘাতক লাইটেসের ড্রাইভারে প্রতি সন্ধারাতের সেই ক্রোধ নেই দিহানের। নেই রাতের সেই সাহসী মন ও। সজীবকে ছেড়ে কিভাবে সে যাবে সে বন্যার কাছে? বেচারার এই দুঃসময়ে পাশে দাড়ানোর তো কেউ নেই, মুখচোরা মানুষ সজীব, তার বন্ধুবান্ধব বলতেও ওই এক দিহানই। মুহুমুহু মনে পড়ে সজীবের যন্ত্রনাকাতর করুন মুখ। 'আমাকে বাঁচা দিহান। ভাইরে তুই আমারে বাচা। আমার মার আমি ছাড়া কেউ নাই। আমাকে বেঁচে থাকতে হবে দিহান।'
সজীবের আর্তনাদ নাড়িয়ে দেয় দিহানের হ্রদয়ের ভীত। এই একা ছেলেটা বেঁচেই আছে শুধু তার মায়ের জন্য, নিজের জন্য না, তার চোখের সামনে ও এভাবে মরে যেতে পারে না। আর দিহানের জন্যও তো ও কম করেনি। অনার্স ফার্স্ট পার্ট পরীক্ষার দুদিন আগে পক্স হানা দিল দিহানকে। তখন ওকে সমস্ত অনুপ্রেরনা আর সেবা যত্ন দিয়ে সারিয়ে তুলেছিল ওই সজীবই, যখন ছোয়াছুয়ির ভয়ে আর কেউ কাছেই ভিরছিল না। মেসে থাকা ছাত্রের পরীক্ষার আগে অসুখ হলে কি যে ভোগান্তি তা দিহান মাত্রই জানে।
দুতিন বড়লোক বন্ধুর কাছ থেকে কহাজার টাকা যোগার করতে করতে বিকেল হয়ে আসে। দিহানের অস্থিরতা শুরু হয়। পাঁচটা বাজতে আর ঘন্টা খানিক বাকী। সজীবকে আরেকবার দেখে ভয় পেয়ে যায় দিহান। কেমন জানি প্রানশুন্য মুখ। ডাক্তার সজীবকে দেখে যে ভাবভঙ্গি করলেন তাতে খারাপ আশংকা হল দিহানের। আধঘন্টা পর মারা গেল সজীব। আর হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেল দিহান। প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে
পাথর হয়ে গেছে ও। ভুলে গেল বন্যার কথা, তার এতদিনের ভালোবাসার কথা যে চীরজীবন তার সাথে চলার জন্য ঘর ছেড়ে চলে এসেছে। সন্ধা সাতটায় বন্যা যখন ট্রেনে উঠল দিহান তখন ছুটোছুটি করছে সজীবের জন্য। সজীবের লাশকে কয়েকটা দিন টিকিয়ে রাখতেই হবে। সজীবের স্নেহময়ী মা তার ছেলের মুখ শেষবারের মত দেখবেন না এটা সে কিছুতেই হেত দেবে না। সজীবের আর্তি মনে হতে চোখ গড়িয়ে জল নামে দিহানের।
ট্রেন ছুটে চলেছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। শুধু বন্যার গন্তব্য অনির্দিষ্ট। কিন্তু কেন জানি নিকট ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুই ভাবছে না বন্যা। ট্রেনের জানালা দিয়ে রাতের প্রকৃতি দেখতে দেখতে ঘুমে তলিয়ে গেল বন্যা।
বন্যার খুব খারাপ লাগছে, চারিদিকে এত মানুষ, ব্যস্থতা, কোলাহল! কয়েকটা ষন্ডামার্কা ছেলে কেমন ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। শাড়ির আচঁলটা একটু টেনে দিল বন্যা। দিহানের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সেই কখন থেকে এই ভারী সুটকেসটা নিয়ে ষ্টেশনে একা দাড়িয়ে আছে। দিহানের বিকেল সাড়ে পাচটায় আসার কথা, এখন বাজে প্রায় সাতটা। অথচ এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ নেই। এ সময় ভেঁপু বাজাতে বাজেতে ট্রেন চলে এল। মানুষজন উঠছে নামছে, সবাই কেমন অস্থির, হুড়মুড়িয়ে উঠানামায় ব্যস্থ, কারো দিকে কারও খেয়াল নেই। বন্যার নিজেকে একেবারে অসহায় অনুভব করল। সেকি ট্রেনে উঠবে? উঠে সে কোথায় যাবে? দিহানের যে খালার বাড়িতে যেয়ে উঠার কথা ছিল সে জায়গাটা কোথায় তাও তার জানা নেই। বাড়ি ফেরার পথও তো নেই। সেই দরোজা সে নিজের হাতেই ব্ন্ধ করে এসেছে। অস্বস্তিটা বাড়ছে আরও। ট্রেনটা বেশীক্ষন থাকবে না, দিহান কি আসবেই না? নাকি এসে গেছে তার চোখে পড়েনি, হয়ত ট্রেনে ওঠে গেছে, ভেবেছে বন্যাও উঠেছে, ট্রেন ছাড়লে খুঁজে বের করা যাবে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বন্যা।
এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন শিস দিয়ে উঠল-'মাইরি একদম খাসারে!'
নাহ! এখানে এভাবে আর থাকা যাবে না। কেনো কিছু না ভেবেই ট্রেনে উঠে পড়ল বন্যা।
খ.
টাকা যোগার করতে খুবই ঝক্কি ঝামেলা গেছে দিহানের। বাড়ি থেকে ওর খরচের জন্য মাসে মাসে যে দুইহাজার টাকা আসে তার মাত্র পাচশ ছিল। আর ছিল টিউশনির তিনহাজার। সেটাও খরচ হয়ে গেল সজীবের এক্সিডেন্টের ফলে। তখন ভোররাতে হসপিটালের বারান্দায় দিহানের চোখে মুখে সুর্যান্ত সময়। বন্যাকে কথা দেয়া পাচটার সময় এ কথা মনে পড়তেই কুকড়ে যায় তার তথাকথিত সাহসী মন। সজীবের এক্সিডেন্টটাও এমন সময় হল। বন্যায় সাথে সব প্ল্যান করে মেসে ফিরেই দুসংবাদটা শুনতে হল। এ শহরে সজীবের তো আর কেউ নেই দিহান ছাড়া। রাতেই ছুটতে হল তাকে। ভোররাতে ডাক্তার যখন বলল সজীব বিপদমুক্ত তখন ঘাতক লাইটেসের ড্রাইভারে প্রতি সন্ধারাতের সেই ক্রোধ নেই দিহানের। নেই রাতের সেই সাহসী মন ও। সজীবকে ছেড়ে কিভাবে সে যাবে সে বন্যার কাছে? বেচারার এই দুঃসময়ে পাশে দাড়ানোর তো কেউ নেই, মুখচোরা মানুষ সজীব, তার বন্ধুবান্ধব বলতেও ওই এক দিহানই। মুহুমুহু মনে পড়ে সজীবের যন্ত্রনাকাতর করুন মুখ। 'আমাকে বাঁচা দিহান। ভাইরে তুই আমারে বাচা। আমার মার আমি ছাড়া কেউ নাই। আমাকে বেঁচে থাকতে হবে দিহান।'
সজীবের আর্তনাদ নাড়িয়ে দেয় দিহানের হ্রদয়ের ভীত। এই একা ছেলেটা বেঁচেই আছে শুধু তার মায়ের জন্য, নিজের জন্য না, তার চোখের সামনে ও এভাবে মরে যেতে পারে না। আর দিহানের জন্যও তো ও কম করেনি। অনার্স ফার্স্ট পার্ট পরীক্ষার দুদিন আগে পক্স হানা দিল দিহানকে। তখন ওকে সমস্ত অনুপ্রেরনা আর সেবা যত্ন দিয়ে সারিয়ে তুলেছিল ওই সজীবই, যখন ছোয়াছুয়ির ভয়ে আর কেউ কাছেই ভিরছিল না। মেসে থাকা ছাত্রের পরীক্ষার আগে অসুখ হলে কি যে ভোগান্তি তা দিহান মাত্রই জানে।
দুতিন বড়লোক বন্ধুর কাছ থেকে কহাজার টাকা যোগার করতে করতে বিকেল হয়ে আসে। দিহানের অস্থিরতা শুরু হয়। পাঁচটা বাজতে আর ঘন্টা খানিক বাকী। সজীবকে আরেকবার দেখে ভয় পেয়ে যায় দিহান। কেমন জানি প্রানশুন্য মুখ। ডাক্তার সজীবকে দেখে যে ভাবভঙ্গি করলেন তাতে খারাপ আশংকা হল দিহানের। আধঘন্টা পর মারা গেল সজীব। আর হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেল দিহান। প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে
পাথর হয়ে গেছে ও। ভুলে গেল বন্যার কথা, তার এতদিনের ভালোবাসার কথা যে চীরজীবন তার সাথে চলার জন্য ঘর ছেড়ে চলে এসেছে। সন্ধা সাতটায় বন্যা যখন ট্রেনে উঠল দিহান তখন ছুটোছুটি করছে সজীবের জন্য। সজীবের লাশকে কয়েকটা দিন টিকিয়ে রাখতেই হবে। সজীবের স্নেহময়ী মা তার ছেলের মুখ শেষবারের মত দেখবেন না এটা সে কিছুতেই হেত দেবে না। সজীবের আর্তি মনে হতে চোখ গড়িয়ে জল নামে দিহানের।
ট্রেন ছুটে চলেছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। শুধু বন্যার গন্তব্য অনির্দিষ্ট। কিন্তু কেন জানি নিকট ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুই ভাবছে না বন্যা। ট্রেনের জানালা দিয়ে রাতের প্রকৃতি দেখতে দেখতে ঘুমে তলিয়ে গেল বন্যা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন