আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, রোদ্দুরে সোনার রঙ লেগেছে, প্রকৃতিও উৎসবের জন্য সেজেগুজে তৈরী। খুশির ঈদ গেল, দুর্গাপূজোও এলো বলে। দোকানে দোকানে ঝলমলে রঙিন পোষাকের প্রদর্শনী, ভিড় রাস্তা জ্যাম। আমি কেন জানি না এই ভিড়ে কিছুতেই নিজেকে মেলাতে পারি না। আমার অনেক খারাপের এটাও অবশ্যই একটা। ধর্মীয় ব্যাপারে আমার বরাবরই আগ্রহ কম। যদিও দূর্গাপূজো এখন একটা সাস্কৃতিক ইভেন্ট। কত পুজো সংখা বেরবে। কত গানের তৈরী হবে। প্যান্ডেল্গুলোও এক একটা শিল্প।কিন্তু চার পাশটা যেন কেমন যেন বিষিয়ে যাচ্ছে। রুগির আত্মীয়-স্বজন ডাক্তার পেটাচ্ছে, আবার ডাক্তাররা রুগি পেটাচ্ছে। এক ভয়াবহ অরাজক অবস্থা। বাজার অগ্নিমূল্য, সাধারণ মানুষ কি ভাবে দিন গুজরান করে সেটাই ভেবে পাই না। এথচ এটা কিন্তু কোন ইস্যু হচ্ছে না। কেজো লোকের এ নিয়ে বোধহয় বিশেষ ভাবনা নেই। আমার মতো অকেজো লোক গালে হাত দিয়ে বসে ভাবি, কিন্তু তাতেতো কোন সুরাহা হবে না। কারন সামর্থের অভাব। যদি সামর্থ থাকত অযোধ্যার ওই জায়গাটা বড় একতা বোমা মেরে বড় দিঘী বানিয়ে দিতাম। কাশ্মীর থেকে সৈন্য ফেরত নিয়ে এসে কাশ্মীরিদের বলতাম, “তোদের যা খুশী কর, আমরা চললাম।”। বিমল গুরুঙ্গএর কান ধরে বলতাম, “যা বাবা নেপালে যা, ওখানে অনেক পাহার ঠার আছে, সেখনে গিয়ে ৭৭ দিন বনধ ডাক”। এগুলো করলে তার প্রতিক্রিয়ায় কি হতো জানি না, সেটা ভাবার দরকারও নেই। কারন এগূলোতো আর আমি করতে যাচ্ছি না সত্যি সত্যি, কারন আমারতো ক্ষমতাই নেই। তবে একজনের একটা ডায়লগ ধার করে বলি, “ক্ষমতা পেলে সব দু’মিনিটে সমাধান করে দেব”।
যাই হোক সম্প্রতি আবহমান ছবিটা দেখলাম। ভালো লাগল ছবিটা। ছোট ছোট পরিমিত সংলাপ আর টুকরো টুকরো দৃশ্য সাজিয়ে গল্প দাড়িয়েছে। গল্পতো গৌণ, প্রতি পরতে একটা জীবনের যে ছবি, যে বিতর্ক, সেটা আমাদের ভাবায়, ভাবতে বাধ্য করে। ছবির শুরুতেই একটা অসাধারন ফ্রেমে অনিকেত আর তার ছেলে, “কেন এই তো ভালো (ভিডিও মাধ্যম) পছন্দ না হলে মুছে ফেলো আবার শ্যুট করো আবার মুছে ফেলো”। আমি এটা প্রায়ই বন্ধু মহলে বলতাম, জীবনটা যদি টেপ রেকর্ডারের মত হত, মুছে ফেলে আবার রি-রেকর্ড করে নিতাম”। আমার কথাটা কে যেন ঋতুপর্ন ঘোষকে বলে দিয়েছে। আর টেপ রেকর্ডারটা পালটে ভিডিও করে চালিয়ে দিলো? সে যাই হোক সত্যিই যদি জীবনটা এরকম হত, অপছন্দের পর্যায়টা মুছে ফেলে আবার নতুন করে শ্যুট করা যেত, বেশ হত তাই না। আবার ভাবি যে কি হত? মানুষ কি এর মধ্যে দিয়ে নিখুঁত মানুষ হত বা হওয়ার চেষ্টা করত? না আরো আরো সম্পদ সৃষ্টির পথের ভুলগুলোকে সংশোধন করত? আমরা প্রাচীন কাল থেকেই দেখেছি মানুষ অত্যন্ত possessive, এটা মানুষের একটা অন্যতম রোগ, যার থেকে বিভিন্ন উপসর্গের উৎপত্তি। আমাদের আর একটা মূল সমস্যা হলো আমাদের চেনা ছকের বাইরে কাউকে থাকতে দেখলে আমাদের অস্বস্তি হয়, প্রানপণে আমরা তাকে আমাদের পরিচিত ছাঁচে এনে ফেলার চেষ্টা করি। আর নিখুঁত মানুষ বলছি সেটাই বা কি জিনিষ, তার সঙ্ঘা কি? মানুষের সমাজ-অনুমোদিত যে আদর্শ আচরন বিধি সেটাতো স্থানু নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা অনেক বদলেছে-বদলাতে থাকবেও। সাধু-সন্ত, সমাজপতি কারোরই ক্ষমতা নেই তাকে আটকে রাখার। অনেক কিছু বলে ফেললাম বিচ্ছিন্নভাবে। জানি তাতে কোন নিরবিচ্ছিন্ন ছবি ফুটে উঠলো না। কি আর করা- মন বিক্ষিপ্ত থাকলে (মন কি শুধু ফয়সালেরই খারাপ হয়, আমার হতে নেই?) লেখাও সেরকমই হবে। আজ এটুকুই থাক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন