এপ্রিল ২৭, ২০১২
অনলাইনে বন্ধুত্ব— ব্যাপারটা একদম পছন্দ ছিলনা আমার। এক রাতে হঠাৎ করেই ছেলেটার সাথে অনেক কথা শেয়ার করে ফেললাম , কেন যেন মনে হছিল, সে আমার খুব ভাল বন্ধু হতে পারবে। আর হয়েছিলও তাই। প্রায় তিন ঘন্টা চ্যাট করার পর তাকে আমি লিখলাম , “can I call you TUMI?” আমাকে অবাক করে দিয়ে সে লিখল, “না,তুমি না ‘তুই’!” ব্যাস,সেই থেকে আমাদের বন্ধুত্বের শুরু।
আমি ব…ই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি, পশ্চিম বাংলার লেখকদের লেখার সাথে যথেষ্ঠ পরিচয় থাকলেও, দেশীয় লেখকদের বই খুব কমই পড়া হয়েছিল আমার। কারণ, আশেপাশের দোকানগুলোতে পশ্চিম বঙ্গের ফটোকপি বইগুলো রাখা হয়, যা দামে সস্তা আর এগুলোর ক্রেতাও তাই বেশি। এই কথাগুলো বন্ধুকে জানাতেই সে ঢকার নীল ক্ষেত,আজিজ মার্কেট আর নিউ মার্কেট ঘুরে বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিন আর দেশীয় লেখকদের বই কিনে পাঠাল। অস্বীকার করবোনা, লিটল ম্যাগাজিনের সাথে সেটাই ছিল আমার প্রথম পরিচয়! আর তা সম্ভব হল আমার এই অনলাইন বন্ধুটির মাধ্যমেই।
বন্ধুটা অনেক স্বেচ্ছা সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশ নিত দেখে অনেক ভাল লাগতো, ইচ্ছে করত, আমিও অংশ নিই। প্রতি মাসের পাঁচ তারিখে সে মনে করিয়ে দিত, ‘ আজ আমাদের বন্ধুত্বের ২ মাস, কিংবা ৪ মাস পূর্ণ হল!” অথচ আমার একদমই মনে থাকতনা কবে ৫ তারিখ আসে,আবার চলেও যায়। একদিন শুনতে পেলাম সে আর তার মামনি দেশের বাইরে চলে যাছে। প্রথমে কথাটা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু একদিন সত্যিই বন্ধুটা ভিসা পেয়ে গেল। সেদিন কেন যেন আচমকা চোখ দিয়ে জল বের হয়ে এল! আর সেদিনই বুঝতে পারলাম আমি তাকে বন্ধুত্বের খুব গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসিয়ে ফেলেছি, যা আগে বুঝিনি!
আমাদের মাঝে ঝগড়া হত প্রচুর, একজন আর একজনকে সবসময় খোঁচা মেরে কথা বলতাম। ফেসবুকে কোন গ্রুপে কিংবা ব্লগারদের আড্ডায় আমাদের ঝগড়াটা ছিল সবার কাছে বেশ উপভোগ্য ব্যাপার, অনেকে আবার বিরক্তও হয়ে যেতেন। বন্ধু চিন্তায় ছিল, বিদেশে চলে গেলে তার সংগ্রহের গল্পের বইগুলোর কী হবে? যেহেতু আমি প্রচুর গল্পের বই পড়ি তাই সে আমাকে তার অর্ধেকেরও বেশি বই দিয়ে দেয়! কেউ কোন কিছু গিফট করলে ভদ্রতাবশত আমরাও তাকে কিছু উপহার দিতে চেষ্টা করি, কিন্তু বই আমি এত্ত ভালোবাসি আর ব্যাপারটা এতই অপ্রত্যাশিত ছিল আমার কাছে যে বন্ধুকে এর বদলে কী দেয়া যায় কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলামনা। বইগুলো আমার কাছে এত দামী যে এগুলোর বদলে সামান্য একবেলা ফাস্টফুড খাইয়ে কিংবা কোন শো পিস উপহার দিয়ে তাকে ছোট করতে মন চাইছিলনা।
জানতাম আর দেখা হবে না আমাদের, আর তাই এমন ভাব করতে লাগলাম আমি আর মামুন, যেন আমরা খুবই আনন্দিত, যেন কোন বন্ধু বিদেশে চলে যাওয়া খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা! এটা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কোন মানে থাকতে পারেনা! যদিও মন খুব খারাপ ছিল এবং তার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারছিলাম্ না, কারণ তাকালেই হয়তো কেঁদে দিব একগাদা ভীড়ের মাঝেই! যাকে চলে যেতেই হবে তাকে আর শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে কী লাভ?
একদিন বন্ধুটা চলেও গেল দেশের বাইরে, সেটা মার্চ মাসের কোন এক দিনে। জানতাম,ফেসবুকে ঠিকই যোগাযোগ থাকবে,শুধু অভ্যাসবশত যখন তখন তাকে খেজুড়ে আলাপ করার জন্য ফোন দিতে বলতে পারবোনা, তামিম পরপর দুটো ছক্কা মারলে সাথে সাথেই মেসেজ দিয়ে আমার আনন্দানুভূতিটা তাকে জানাতে পারবোনা। মার্চের ৫ তারিখ চলে এল, ফেসবুকের সামনে বসে ছিলাম, এই বুঝি বন্ধুটা বলবে, আজ আমাদের বন্ধুত্বের ‘এত’ মাস হল। কিন্তু না,কারো কোন সাড়াশব্দই পেলাম না। বিদেশে গিয়ে মাত্র ২ দিনেই ভুলে গেল সবকিছু? হতাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, পরদিন সকালে উঠে ফেসবুক খুলতেই ইনবক্স এ দেখতে পেলাম বন্ধুর মেসেজ, “দোস্ত, আজ আমাদের বন্ধুত্বের সাত মাস পূর্ণ হল!” আরে! তাইতো! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার বন্ধুটা আমেরিকায় যেয়ে আমার সময় থেকে এখন ১০ ঘন্টা পিছিয়ে আছে, আর তাই এই সামান্য দেরী হল মেসেজ পাঠাতে…। আর আমি কী ভাবছিলাম!!