[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১২

* * * ..শাড়ীর আঁচলে রক্তে লেখা একদিন.. * * *

* * * ..শাড়ীর আঁচলে রক্তে লেখা একদিন.. * * *

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৪:৩১








একটু ভুলের কারনে হাতের ধাক্কা লেগে কাঁচের গ্লাস পড়ে যেতেই ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল .... কিভাবে কি হলো ভাবতে ভাবতে আনমনে তুলতে গিয়ে কাঁচের খোঁচা লেগে হাত কেটে রক্তের ধারা টপ টপ করে পড়তে শুরু করলো .... ব্যান্ডেজ বাধলেও কেন যেন রক্ত এই বাধ মানতে চাইছিলো না ... চুইয়ে চুইয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিল রক্তের ধারা ... সাদা ব্যান্ডেজ লাল হচ্ছিল আর সেই রক্তের মাঝেই যেন ফুটে উঠলো এক পুরানো স্মৃতির টাটকা অনুভব ....

বাঙ্গালী মেয়েদেরকে শাড়ি পরা দেখলে কেন জানি আগে থেকেই ভালো লাগতো, মনে হতো এটাতেই ওদের আসল সৌন্দর্য প্রকাশ পায় ... মনের এ গোপন কথাটি আমার বান্দরনী দোস্তটা কোন এক ভাবে জেনে গিয়েছিল .... তাকে আমি কখনোই বলিনি এ কথা ... তার পরেও সে জানলো কিভাবে ? ..... যাই হোক একদিন সে করলো কি , রাতে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো -- কাল একটু সময় হবে ?

আমি বললাম -- কতক্ষন সময়? কি কাজ ?
সে বললো -- খুব জরুরী না, তোর সাথে একটু ঘুরতে ইচ্ছা করছে ... আসতে পারবি ?

আমি বললাম -- আচ্ছা ঠিকাছে, কিন্তু সন্ধ্যার পরে ছাড়া যে পারবো না ?
সে বললো -- অসুবিধা নাই, তুই এসে আমাকে নিয়ে যাস বাসা থেকে তাহলে আম্মু যেতে দিবে ...

আমি বললাম -- আচ্ছা তুই রেডী থাকিস, আমি কিন্তু বসবো না, তোকে নিয়েই আমি বের হয়ে যাবো ... ঠিকাছে ?
সে বললো -- ঠিকাছে আমি রেডী হয়েই থাকবো।

পরদিন সন্ধ্যায় ওদের বাসার সামনে এসে নিচে রিক্সা থেকে নামিনি, এমন সময় শুনি ৬ তলার উপর থেকে চিৎকার করে বান্দরনীটা বলছে -- তুই রিক্সা ছাড়িস না, আমি আসছি ...

একটু পরে দেখি বাসন্তী রং এর শাড়ী পড়ে রাজকন্যা নীচে হাজির .... সেদিন ওকে আসলেই খুব সুন্দর লাগছিল ... মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সে আমাকে বকা দিয়ে বলে -- জানি তোর শাড়ী অনেক পছন্দের তাই বলে এমন হা করে তাকায়ে থাকবি নাকি ? চলেন রিক্সাওয়ালা ভাই ... আপনি আপনার মতো চলতে থাকেন আমরা কোথাও থামবো না ....

আমি জিজ্ঞেস করলাম -- কি হয়েছে, আজকে এত সাজুগুজু করে শাড়ী পরে রিক্সায় ঘোরার ম্যুড হলো যে ?
সে বললো -- এই শাড়ীটা নতুন কিনেছি, তোর শাড়ী অনেক পছন্দ না ? তাই ভাবলাম নতুন শাড়ী পরে তোর সাথে একটু ঘুরি ... কেমন হয়েছে শাড়ীটা ?

আমার আসলে শাড়ীটা এত ভালো লেগেছিল যে বলার মতো না ... কিন্তু ওর সামনে প্রকাশ না করার জন্যই বললাম -- কি একটা ঘোড়ার ডিমের কালারের শাড়ী কিনেছিস, এ তো বুড়ীরা পরে ... তুই কি বুড়ী নাকি ?
এ কথা শোনার পরেও সে একেবারেই রাগ না করে বললো -- তুই না আমাকে মাঝে মাঝে বুড়ি ডাকিস ? তাহলে তো ঠিকই আছে ... এটা আমার জন্যই বানানো হয়েছে ... তাই না?

আমি মনে মনে ভাবছি কিরে বাবা, কাহিনী কি ... আজকে এর ম্যুড এত্তো ভালো ক্যান রে বাবা ... আর সাথে সাথে ওকে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে খোচা দিচ্ছিলাম ... কিন্তু কোন ক্রমেরই সে ঐ দিন রাগছিলো না বরং আমার কথা কানেই তুলছিলো না ... অথচ অন্যদিন এমন কোন কথা বলা তো দুরের কথা খোচা মারার কথা মনে আসার সাথে সাথে ওর ধমক খাওয়া লাগে ... আবার রিক্সাওয়ালাও আমাদের কথা শুনে মজা পাচ্ছিলো আর বারবার ঘুরে পিছন ফিরে তাকাচ্ছিল ... উনাকে বললাম -- ভাই পিছনে না তাকিয়ে একটু সাবধানে চালান ...

একসময় বলা নেই কওয়া নেই আকাশ ফেটে বৃষ্টি শুরু হলো ... আমি রিক্সার হুড তুলে দিতে চাইলাম কিন্তু তা সে তুলতে দিবে না ... আরে ! কি মুসকিল ... বলে নাকি তার বৃষ্টিতে ভেজার ম্যুড হয়েছে তার ...
আমি মনে মনে বলি -- আজকে এর মাথাটা পুরা গেছে !!!!

ঝম ঝম বৃষ্টিতে ৫০ মিটার সামনের কিছুই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিলো না , রাস্তায় কোথাও কোথাও হাটু পানি জমে গেছে .... হঠাৎ কোনো এক ঢাকনা খোলা ম্যানহোল পানি কারনে দেখা না যাওয়ায় আমাদের রিক্সার একটি চাকা এর মধ্যে পড়তেই কাত হয়ে পড়লো ... ওদিকে বান্দরনীর ম্যুড এতই ভালো ছিল যে সে ঠিকমতো ধরে বসতেই নাকি ভুলে গিয়েছিলো .... ফলাফল হিসেবে রিক্সা কাত হতেই সে ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলো ... কোনক্রমে ওর নিচে পড়াটা বাচাতে গিয়ে শেষমেষ নিজেই পড়ে গিয়ে একটা রাম-ধাক্কা আর কিছুটা ঘষা খেলাম রাস্তার পাশের লোহার রেলিং এ ... তবে হাত দুটো সামনে দিয়ে ব্যালান্সটা ঠিক করে চুড়ান্ত পতনটা ঠেকালাম...

অন্ধকারে ঠিক বুঝিনি ব্যাথা পেয়েছি কিনা ...তবে, ওখান থেকে হেটে একটু সামনে আসতেই বাম হাতটা কেমন জানি চটচটে অনুভূত হচ্ছিলো, ভাবছিলাম বৃষ্টির পানি এমন আঠালো তো হয় না, এরপরে হাতটা উপরে তুলে তাকিয়ে দেখি টাটকা রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে আমার হাত ...

তাড়াতাড়ি পাশের একটি টং এর দোকান থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে ফেলছি আর দেখার চেষ্টা করছি কতটুকু কেটেছে .... এর মাঝেই হঠাৎ পাগলিটা এক টুকরা কাপড় এগিয়ে দিয়ে বললো -- আয় তো, তোর হাতটা বেধে দেই, রক্ত পড়া কমে যাবে ... এর পরে সামনে গিয়ে ফার্মেসী থেকে ব্যান্ডেজ করে নিস ...

কাপড়টা হাতে নিতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল ... আমি বেখেয়ালে রক্ত ধুচ্ছিলাম আর সেই ফাকে পাগলীটা নিজের নতুন শাড়ীর আচল ছিড়ে ফেলেছে ... সেটা দিয়েই আমার হাত বাধতে বলছে ...

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, বললাম -- তোর নতুন শাড়ী ....
সে বললো -- তোর হাতের রক্ত বন্ধ করাটা আমার কাছে এই শাড়ীর চেয়ে বেশী জরুরী ... যা করতে বলছি কর তো ... এটা তো তোর জন্যই কিনেছিলাম...

আমি অবাক হয়ে বললাম -- মানে ?
সে আমার হাত বাধতে বাধতে বললো -- মনে আছে কয়েকদিন আগে আমার সাথে তুই শপিং এ গিয়ে এই শাড়ীটা দেখে বলেছিলি খুব "সুন্দর শাড়ী" ... এ জন্যই কালকে গিয়ে শাড়িটা কিনে আজকে তোর সাথে বেড়াতে বের হলাম ...

বান্দরনী দোস্তটা আমার হাতে শাড়ীর আচলের ব্যান্ডেজ বাধা শেষ করে মধুমাখা হাসি দিয়ে বললো -- দেখ ! ... শাড়ীটা আমি তোর জন্য কিনেছিলাম ... আর এখন শাড়ীটা আমাদের দু-জনকেই কেমন সুন্দর করে পেচিয়ে রেখেছে ...

এর পরেও দেখি আমার হাতে রক্তের প্রবাহ ওর নতুন শাড়ীর আঁচলকে লাল করে দিচ্ছে ... এটা দেখতেই সে নিঃশব্দে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ঐ রক্ত মাখা হাত ধরেই হাটতে শুরু করলো একসাথে .... পাশাপাশি

কোন মন্তব্য নেই: