[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১১

মেঘ-ডম্বর শাড়ি


মেঘ-ডম্বর শাড়ি...

  1. কুপির আলোয় মুখ দেখা যায়
    কুসম নামের মেয়েটি মলিন, ব্যথার ভাষা চোখে মুখে
    দীর্ঘ কালো কেশের বেশে ওঁচা আঁধার খেলে চলে
    লোভের দ্বারে কুকুর-বিড়াল দাঁড়িয়ে থাকে
    মলিন মুখের মেয়েটি দেখে…
    গোলাপ থেকে পাপড়ি খসে
    গাছ থেকে সেই ফুল
    মালি বলে নিজের দোষে গোলাপ করলো ভুল
    কবর-বেদীর কাচা ঘাসে সূর্য কিরণ নাচে হাসে
    মৃত জনের ঘুম ভেঙ্গে যায়
    লাশ গুলে তাই মুক্তি পায়
    কোন বাতাসের লাগলো দোলা
    নাচে চাঁদের মুক্ত-মনি সোনার খনি
    কুসুম নামের মেয়েটি এমনি…
  2. পথের ধারে বিলাপ করে ভুখা ও অনাদ্র মন
    বাতাস গুলো বেজায় ভারী ‘আনন্দ সঙ্গম’
    নদীর জলে কেশের স্নান
    রুদ্র স্বরের মেঘের স্নান
    কোথায় যাবে মেয়েটি?
    প্রশ্ন যখন পাহাড় করে
    প্রশ্ন যখন সাগর করে
    প্রশ্ন যখন প্রশ্ন হয়ে একলা একলা ঘোরে
    উওর সন্ধানে…
    মুখোশ নামের মানুষ গুলো লেবুর জলে ঠোঁট লুকিয়ে
    হাসে!
    অবাক দেশে রূপ আর যৌবন একই কোষে বাঁচে!
    মুখোশ হাসে, মুখোশ হাসে
    অবাক দেশে, অবাক দেশে
  3. চন্দ্র গেছে সমুদ্র সৈকতে
    মুক্তা, ঝিনুক কড়ির মালা পেলে
    সাজাবে যে বাসব ঘর, সবাই হবে পর!
    উল্টো স্রোতে মাঝি ও মাল্লার তরীর প্রাণ সংহার
    মেয়েটি কি করবে?
    দুধে নিজেকে ডোবাবে
    নাকি বেঁচে থাকার চেয়ে ওপাড়ে চলে যাবে?
    প্রশ্ন থেকেই যায়…
  4. বাগান বিলাস ঘ্রাণহীন ছলনায় জড়িয়েছে সৌন্দর্য
    মন ভালো নেই পাপ থেকে অধিকতর নিচের অবস্থার
    থাকবার কথাও নয়… থাকেও না
    চিলেকোঠার দ্বার খোলা, একটা শব্দ শোনার প্রতিক্ষায়
    “ভালোবসি”
    ধানের চিটে
    ধান চ্যাপ্টা চিঁড়া
    ধান আঁটি ও ভগ্নাংশ গুলো
    মূল্যহীন বস্তু আধারে মূল্য লুকিয়ে রয় নীরবে-দৃষ্টি গোপন করে
    মেয়েটি কি তাহলে মূল্যহীন, পাপ নাকি ভ্রমে জড়ানো কুৎসিত?
  5. সবুজের কাছে মেয়েটি রূপের পরীক্ষা দিয়েছিল
    পাস করে গেছে
    নদীর কাছে মেয়েটি অশ্রুর পরীক্ষা দিয়েছিল
    পাস করে গেছে
    আকাশের কাছে মেয়েটি উদারতার পরীক্ষা দিয়েছিল
    পাস করে গেছে
    বৃক্ষের কাছে ছায়ার পরীক্ষা দিয়েছিল
    পাস করে গেছে
    সকল পরীক্ষায় মেয়েটি পাস করে গেছে
    তারপরও তার চলতি পথে এত বাধা কেন?
  6. গাভীর ওলানে মুখ লুকিয়ে বাছুর কি চায়?
    মেয়েটির চাওয়াও এর থেকে বেশী ছিল না
    বসন্ত আসবে ভেবে কোকিল কণ্ঠে মুক্ত ঝরে!
    মেয়েটির কণ্ঠে এর চেয়েও মধুর ছিল শ্রোতা মুগ্ধ করবার
    সময় ও সুযোগের অভাবে অহেতুক শ্রম
    পরিণামে বাতাস দেয় না…
  7. জড়সড় হয়ে কসুম বিছানার এক কোণায়
    মুখে মগবাজারের খিলি পান
    ঠোঁট লালের আস্তরণে বর্ণীল
    পুর মুখ মেকাপের নিচে ঢাকা পড়ে আছে
    যেন প্রকৃতির উপর মানব সৃষ্ট অতি প্রকৃতি…
    ইচ্ছা মতন আঁকা আমার তুলিতে আপন রূপের শরীর
    তেল চিটচিটে শরীরে বিরক্তি আর ক্লান্তির ছাপ
    প্রভু ভক্ত নয় এমন কুকুরের মুখে এভাবে কত দিন?
    কত কুসুম আঁশটে হয়ে যায়…
    লবণ বেশী হওয়া তরকারীতে যতই পানি ঢালি
    মুখ, মন, জিহ্বা কেবল লবণের স্বাদ পায় ও নেয়!
  8. নীল আকাশ নীল বিষে ছন্ন ছাড়া
    খেজুর রসে মাদকতা আসে না, চাই পচা তালের রস
    রসে রসালো মাদকতা, মুক্ত মনা পাখি সব করে ওঠে কলরব
    শুরু হবে শুরুতেই শেষ~~
    ঘাস ফড়িং নেচে চলে ডালে ডালে
    মনের মত আনচান করে দেবীমূর্তির লাল চোখ
    যেন মুহুর্তেই স্বর্গীয় বৃক্ষ থেকে ছিড়ে পড়বে
    একটা আধ পাকা আপেল!
    আপেলের দেহে জ্বর থাকবে
    আপেলের দেহে উষ্ণতা থাকবে
    আপেলের শরীরে এক টুকরো দাগ লেগে থাকবে
    দাঁতের দাগ…
    নখের দাগ…
    সবে মাত্র ক্ষত চিহ্নের স্পষ্ট দাগ
    বিষদ ছোঁয়ানো নীল দাগ
    জ্বালাময় ইস্পাতের শরীরে লেগে থাকা দাগ
    তপ্ত বালুতে পোড়া পিঠের দাগ
    এত দাগ!
    এত এত দাগ!
    এত এত দাগ নিয়ে মেয়েটি বাঁচতে পারবে তো?
  9. পেরেকের পর পেরেক ঠুকে যাচ্ছে একের পর এক
    অবলা অনুভূতি নিতান্তই ভোতা অস্ত্রের মত ঘুমিয়ে গেছে
    কবুতর ডাকতে ভুলে গেছে
    মেঘ দেখেও ময়ূর সামান্য বিচলিত নয়
    দক্ষিণের বায়ুতে অতৃপ্ত হাহাকার
    মৃদু মন্দা মনের বাসর কোন শ্রাবণ সন্ধ্যায়?
    শেফালী ফুটতেই মলিন কেন?
    বকুল ফুল দেবদাসের ন্যায় মাতাল হয়ে পড়ে আছে নিচের
    পৃথিবীতে!
    পিপিলিকার মত আগাম খাদ্য সংগ্রহ করে মেয়ের লাভ কোথায়?
    ঐ জীবনের কুসুম অত খাদ্য কি করবে?
    চাহিদার অতিরিক্ত কোন কিছু যেমনটা ভালো তেমনটা খারাপ…
  10. পূর্ণিমার আলোক উজ্জ্বল রাতের আকাশে নেমে আসে স্বর্গীয় হুর পরী
    কুসুমের ঠিকানা কোথায়?
    কোন পাত্রের আকার ধারণ করে কুসুম কুসুমিত হবে?
    সকল ক্রিয়ার বিপরীত একটি প্রতিক্রিয়া থাকে
    বিজ্ঞানের তত্ত্ব কথাকে সত্যি প্রমাণ করবে কে?
    মেয়েটা আঁচলে মুখ লুকিয়ে স্বর্গের পাতিলে রাখা খানা-পিনার
    চিত্রকল্প চোখে ভাসাতে পারে
    কিন্তু খাবার জন্য যে দম চাই
    যে তীব্র আকাঙ্খা থাকা চাই
    স্নেহ পদার্থের দিকে ঝোঁক চাই
    পারস্পারিক সমঝোতা চাই
    মেয়েটার এসব কিছুই নাই…!
    সরল-তরল দৃষ্টি
    ভালো লাগার শূন্য জ্ঞান
    বিপরীত পাত্রের দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকা
    কোন মানবীর পরিচায়ক?
  11. রিমঝিম বর্ষায় আকাশ কাঁদে
    সাথে মেঘলা মেয়ের চোখ ও ব্যথিত বুক
    বুদ্ধিদীপ্ত মরীচিকা ভ্রমে মেঘলা মেয়ের মন ও মানসিকতা
    অনেকাংশে দেয়ালের পিঠে ঠেকে গেছে…
    দিন চলে যায়
    রাতের পর রাত
    এক একটি রাত যেন সাদা সূর্যে স্নান করে
    নিকষ আলোয় আলেয়ার মুখে একটা তিল
    তিলটা আগে ছিল বুকের কাছে
    সরতে সরতে এসে দাঁড়িয়েছে ওষ্ঠের ঠিক নিচে
    সামান্য নিচে
    চুম্বন ক্ষেত্রের অনেকটা কাছাকাছি…
    এভাবেই সময়ের সাথে মেয়েটি বদলে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে…
  12. পোড়া মাটি ফলকে পুড়তে পুড়তে দুঃখ গুলোর
    রং ও রূপ পাল্টেছে
    রংয়ের শরীর নীল থেকে গাড় নীল
    রূপের শরীর এলোপাতাড়ি ধূসর
    স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ যখন মুখোমুখি বিবাদে জড়ায়
    তখনি বানান ভুল হয়~
    একটি শুদ্ধ বানান একটি বিশুদ্ধ পাপড়ি
    ভুল হলেই যেন খসে পড়ে
    জন্মান্ধের মত… পিপিলিকার পিঠের উপর
    দুঃখ হয় দুঃখের জন্য
    কিভাবে কুসুমের দেহে আশ্রয় নিয়েছে?
    কি নির্বোধের মত মাথা গেড়ে
    সর্বনাম, অব্যয় সাত পাঁচ ভুলে
    কিভাবে আশ্রয় নিয়েছে দুঃখ?
  13. চিহ্নিত পথের একোন আগুনের লেলিহান শিখা?
    দাউ দাউ করে সর্বনাশা আগুন জ্বলছে
    আগুনের সাথে সাথে পানি জ্বলছে!
    পানির সাথে ‘অক্সিজেন জ্বলছে’!
    রূপের সাথে কামনা জ্বলছে
    ঘিয়ের সাথে জিহ্বা জ্বলছে
    জিহ্বার সাথে ঠোঁট
    ঠোঁটে চুম্বন
    জ্বলছে…
    পায়ে
    পায়ে শৃঙ্খল
    পায়ে পৃথিবীর ফাঁদ
    ফাঁদে বিদ্যমান আছে মৃত্যু
    মৃত্যুতে কচি শালিকের ডাক
    ডাকের মাঝে লুকিয়ে আছে জীবন্ত কিংবদন্তি
    ক্ষমা করো মেয়ে, ঘুমন্ত চোখে তোমায় নারী ভবা যায় না!
  14. সেত সেতে নর্দমার শ্যাওলা ঘোলা পানিতে পৃথিবীর চোখ
    আকাশটা নেমে এসেছে দৃষ্টি শোষণে
    নীড় সন্ধানী পাখি নীড় খোঁজে
    চৌরাস্তার মোড়ে নতুন গজানো অসুধের দোকানে
    এখন নাকি “জন্ম বিরতিকরণ পিল” মেলে…
    কার জন্ম?
    কিসের জন্ম?
    কোথায় জন্মাবে?
    কেন অহেতুক সব প্রশ্ন বান!
    তার চেয়ে বরং ষোল কলা তৃপ্তির জন্য
    মেয়েটা এক খান পিলের পাতা চাই~~
    কত সহস্র বছর আগে পৃথিবীর পায়ের তলায়
    এসব অত্যাধুনিক প্রতিষেধক-প্রতিরোধক
    নর্দমার শ্যাওলা তাড়ানোর জন্য ছিল না…
    যা ছিল তা ছিল না বলাই ভালো!
    সম্পর্ক ছিল…
    “ভালোবাসা” শব্দে পবিত্রতা ছিল
    এখন যা আছে তা হয়তো আগামীতেও থাকবে!
    পুতুল খেলা আছে
    খেলা শেষে পুতুল ছুঁড়ে ফেলার রীতি-রেওয়াজ আছে
    মেয়েটি কি পূর্বের জনমে ফিরে যাবে?
  15. শুরুটা নরম কোমল জাম্বুরার ফাঁপা অংশের মত ছিল
    এক সাগর চিংড়ি মাছে লম্ফঝম্ফ দেখবার মত
    শুকনো কাঠে চিঁড়ে ভেজে না
    আবার ভেজা চিঁড়ায় স্বাদ মেলে না
    মেয়েটি কোন পথ বেঁচে নেবে?
    জীবনের অন্তিম মুহুর্তে কাক ও কোকিল বন্ধু
    জীবনের অন্তিম মুহুর্তে জন্ম ও মৃত্যু বন্ধু
    লোভ ও প্রাপ্তি নিবিড় মায়ায় আচ্ছন্ন বন্ধু
    তেজপাতার দেহে মাটি বাসা দিয়েছিল
    পুঞ্জিভূত স্বপ্নরা কবিতা লিখেছিল
    মেয়েটির চোখে তখনো জল ছিল
    জলে বিষ ছিল
    “পান কর নর পিশাচ”
    তোর নারাঙ্গ নিশ্চিত খসে যাবে বিষের নীলে…
    (সংক্ষেপিত…)

কোন মন্তব্য নেই: