[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১২

বর্ষায় ফিরে যাই পুরানো দিনে


বর্ষায় ফিরে যাই পুরানো দিনে
স্মৃতি, ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু এর পরিধী এতো বিশাল যে শেষ হতে চায় না। স্মৃতি কাতর মানুষদের জন্য এই স্মৃতি কখনো সুখের কখনো দুখের। শৈশব, কৈশোর, যুবা বয়সের অনেক কথা অনেক না বলা কথা একটা সময় আমাদের উকি দেয়। হয়তো তা কখনো কাদায় কখনো হাসায়।
যাক অনেক কাব্যিক ডায়লগ মারলাম এবার আসল ঘটনায় আসি। আমি আমার জীবনের খুব মজার এবং আমার জন্য স্মরনীয় একটি ঘটনা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

ঘটনাটি সম্ভবত ক্লাস থ্রি কি ফোরের সঠিক সময়টা ঠিক মনে নেই, যাই হোক, আমার ছোট ভাই আমার চেয়ে দুই বছরে বড়, ও বড় হলেও আমাদের বেড়ে উঠা এক সাথে হয়েছে ও তখন আমার খেলার সাথী, বন্ধু যাই বলেন তাই ছিল। আমরা দুই ভাই বোন ইবলিশের রাজা আর রানী ছিলাম, দুজন মিলে যে কতো দুষ্টামি করেছি তা ভাবলে আজো হাসি। যা বলছিলাম, আমরা তখন মিরপুর দুই নম্বর এ থাকতাম থানাটা এখন যেখানে তার সাথে যে বাজার আছে (তখন বাজার ছিল না ফাকা ছিল) সেখানে আমাদের বাসা ছিল, সেই সময় এতো ঘনবসতি ছিল না, আমাদের বাড়ীর সামনে ফাকা জায়গা ছিল সেই ফাকা জায়গায় অনেকে টিনের চালা করে থাকতো, তারা সবাই কোন না কোন কাজ করতো তাদের একজন ছিলেন আচার বিক্রি করতেন, উনি নিজে আচার বানাতেন, চালতা, বড়ুই, তেতুল, করমচা, আম সহ সিজনাল সব ফলের আচার। সেই আচার বিক্রি করতেন আমাদের স্কুলের সামনে, ওই আচার বেশ মজার ছিল। আমরা তার বাসার সামনে থাকতাম বলে পরিমানে সব সময় একটু বেশী পেতাম। এই রকম এক বৃষ্টির দিন, তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, স্কুলে যেতে পারিনি, স্কুলে না যাওয়ার কারণে তো আমরা দুই ইবলিশ মহা খুশী কিন্তু সেই খুশীতে পানি ঢেলে দিলেন বড়দা , বড়দা কড়া হুকুম নাস্তা করে পড়তে বসো। আমরা দুইজন জানালার পাশে বসে পড়ছিলাম আর বার বার চোখ বাইরে যাচ্ছিল, বাইরে ঠিক না ওই আচার ওয়ালার আচারের গাড়ীর উপর, প্রচন্ড বৃষ্টি তাই আচার ওয়ালা আচারের গাড়ী পলিথিনে ঢেকে বাইরে রেখে তার ঘরে বসে আছেন। আমরা দুজন চোখাচোখি করে কথা বলছি ইশারা যাকে বলে, দুজনই চোখের ভাসা বুঝে গেলাম যে এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ নয়। বড়দা আমাদের পড়তে বসিয়ে সম্ভবত বাজারে গেলেন, আর যাই কোথায়, দুই ভাই বোন বই খাতা বন্ধ করে দে ছুট। বৃষ্টিতে ভিজছি মজা করে, এর পরে দুজনের পরিকল্পনা মাফিক আচারের গাড়ীর সামনে গিয়ে দাড়ালাম, ধীরে ধীরে গাড়ীকে ঢেলে একটু আড়ালে নিয়ে গেলাম, তখন ওখানে রাস্তায় বসানোর জন্য বড় বড় পাইপ রাখা ছিল, দুই জন আচার বয়াম খুলে আচার নিয়ে ওই পাইপে ঢুকে চুকচুক করে খেতে লাগলাম, মোটামুটি আচার শেষ করে আচারের গাড়ীটা আচার ওয়ালার বাসার সামনে রাখতে গিয়ে খেলাম ধরা। আর কি রেহাই আছে। আচার ওয়ালা আমাদের দুইজনকে ধরে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলো বড়দা ততোক্ষন বাসায় এসে হাজির। দরজায় কড়া নাড়তে বড়দাই দরজা খুললেন দেখলেন বৃষ্টিতে ভেজা আমার দুইজন সারা হাতে আচার লাগানো আর আচার ওয়ালা আমাদের সাথে। বড়দার আর বুঝতে কোন কিছু আর বাকী রইল না। আচার ওয়ালাকে বললেন মা বাসায় আসলে আচারের দাম দিয়ে দিবেন।
বড়দা ছোটভাইকে বেদম মার মারলেন আমাকে মারার আগে আমি হাচি দেয়া শুরু করলাম, আমার ছোট বেলায় ব্রন্কাইটিসের সমস্যা ছিল এতো বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা বসে গেলো যার দরুন হাচি আসছিল সেই হাচির কারণে আমাদের যে দেখাশুনা করতো ডলি আমাকে তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে কাপড় পাল্টে দিতে লাগলো বড়দা ছোট ভাইকে এতো মারছিল যে তা দেখে ডলি ভয়ে বড়দাকে বলল মুক্তিরতো জ্বর এসেছে ওকে মাইরেন না। বড়দা ডলির কথা বিশ্বাস করে আমাকে ধমক দিয়ে ছেড়ে দিল। মা অফিস থেকে ফিরে সব শুনে আচার ওয়ালাকে ডেকে আচারের টাকা দিলেন আর ক্ষমা চাইলেন। তবে মা খুব বকে ছিলেন আমাদের।
ছোট ভাই কিন্তু এই যে মার খেলো এর প্রতিশোধ আরেকদিন নিয়েছিল এই রকম আরেকদিন বৃষ্টির দিনে আচার চুরি করে। অবশ্য আচারওয়ালা সেবার আর ধরতে পারেনি।

খুব বৃষ্টি দেখলে ঘটনাটা খুব মনে পড়ে আর একা একা হাসি। ছোট বেলায় আমাদের কতো কি যে ঘটনা আছে যা এখন মনে পড়ে আমাদের একটু হলেও হাসায়। আজ তেমন একটি দিন, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে আমার এই ঘটনাটি মনে পড়লো তাই আমি শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে, কিন্তু আমি একা কেনো শেয়ার করবো ?? চলুন আজকে সবাই মিলে বর্ষার আড্ডা দেই, শেয়ার করি এই রকম মজার সব ঘটনা সবাই সবার সাথে।

তো হয়ে যাক বর্ষার আড্ডা।

কোন মন্তব্য নেই: