নিষিক্ত প্রভাতে
২৮ জুলাই ২০১২, ৪:০৯ পূর্বাহ্ন
একসময় খুব ক্যারাম খেলতাম আর প্রচ্ছন্ন গর্বে চেয়ে দেখতাম আশে পাশের কোন বন্ধুই ক্যারাম খেলায় পারছে না আমার সাথে। এমন কি বড়রাও। আর ছোট কাকু যে কিনা বরিক পাউডার দিয়ে সরল রেখা টেনে আমাকে প্রথম খেলা শিখিয়েছিল, সেই ছোট কাকুও আমার কাছে বারে বারেই হেরে যাচ্ছে দেখে আমি যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাবে মুখ গোমড়া করে রাখতাম সারা-বেলা। তখন ২ টাকা করে, রাস্তার ওপাড়ের ক্লাবে ক্যারাম খেলা হতো। ক্লাস এইট আসলে নিয়মিত ক্লাবে যাওয়ার জন্য তেমন ভালো সময় না। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া “রবিন”রা এলো। চশমা পড়া ছেলেটা যে এক সপ্তাহের মাঝে বোর্ড আর তাল গাছ মিলিয়ে মোট নয়বার আমাকে হারিয়ে দেবে তা বুঝি নি। তাও আবার ৩বার নীলে হেরেছিলাম। আমার স্মৃতি শক্তি খুবই দুর্বল, মুখস্থ করতে পারতাম না বলে ইসলাম শিক্ষা আর সমাজে বরাবরই কম নম্বর পেতাম, কিন্তু ভোরের হালকা তাপে হতবাক আমি দেখতে থাকি, রবিনের স্মৃতিটা বেশ অমলিন হয়ে আছে। এই এতো দিন পরেও...
এক দুপুরে আম্মু কেঁদে কেঁদে বলেছিল, “খোকন, রবিন আর নেই, এই মাত্র খবর এলো মারা গিয়েছে!” কি আশ্চর্য রবিন সাত দিন ধরে হসপিটালে ছিল, আম্মু-আব্বু দু দিন পর পর ওকে দেখতে গেলেও আমি একবারও দেখতে যাইনি। হাতের ভেতর লাল রঙের গুটিটা ধরে বসে থাকতাম বিকেল পর্যন্ত “এবার রবিন এলে ওকে আমি এমনিতেই রেডটা দিয়ে দেব আর রেড কভারও দিতে হবে না” রবিন আর আসে নি কোন দিন! সব মনে পড়ে যায়...
এরপর আমি আর কোন দিন ক্যারাম বোর্ড খেলেছি বলে মনে পড়ে না। সূর্যের আলো গায়ে এসে পড়তে থাকে আমিও বসেই থাকি। মাথার উপরে ফ্যানটা শোঁ শোঁ করে ঘুরে চলছে। হঠাৎ তরস্বিনীকে মনে পড়ে যায় নাকি অন্য সব চিন্তারাই অযাচিত ভাবে তরস্বিনীর ভাবনা থেকে আমাকে খানিক ফিরিয়ে রাখে, আমি এবার তা মেলানর চেষ্টা করতে থাকি। এই তো সামনে তরস্বিনীর বিয়ে! কিন্তু এটা অতোটা ইম্পরট্যান্ট না! গুরুত্ববহ হচ্ছে, আমাকে অবশ্যই নতুন কিছু একটা খুঁজে বের করতে হবে! নতুন কিছু একটা! কিন্তু সেটা যে কি...
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে...
অনেক সবুজের প্রান্তে তুমি থাকো একাকী
আমি ধূসর ধূসর হয়ে জেগে থাকি,
অনেক মানুষের ভিড়েও তুমি থাকো একাকী
আমি অনেক আশা নিয়ে বসে থাকি।
(শিরোনামহীন)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন