"তুমি বল" !! "না তুমি বল" !! -এই কি করছ ? -কিছু করছ না । -ডিস্টার্ব করলাম না তো? - নাহ । সমস্যা নাই বল । তন্নী একটু চুপ করে থাকল । তারপর বলল -বিকালে কি তুমি ফ্রী আছো ? -কেন বল তো ? আহা! প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন কর কেন ? বল না বিকালে তোমার কোন কাজ আছে কি না ? আমি কিছুক্ষন ভাবলাম । তারপর বললাম -নাহ । কোন কাজ নাই । বল কি বলবা ? তন্নী বলল -আজকে বিকালটা কি আমাকে দেওয়া যায় ? -মানে ? -মানে আমার সাথে বিকাল বেলা একটু দেখা করবা ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না তন্নী ঠিক কি বলতে চাইছে । বললাম -দেখো সপিংটপিংয়ে যেতে পারবো না কিন্তু । -সপিংয়ে যেতে হবে না । তোমাকে ট্রিট দিবো । -খাওয়াবা ? -হুম । -কোন স্পেশাল কারন ? কারন তো আছে । -আমাকে একা খাওয়াবা ? -হুম । আমি বললাম -এই সুযোগতো আমি কখনও মিস করি না । বল কি খাওয়াবা ? -তুমি যা খেতে চাও ! -দেখো কিন্তু । -আচ্ছা বাবা দেখবো । -ওকে দেন , সি ইউ এট ফাইফ পিএম । - সি ইউ । তন্নী ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পর মনে হল তন্নী হঠাত্ খাওয়াতে চাচ্ছে কেন ? অবশ্য তন্নী এমনিতেই প্রায়ই খাওয়ায় আমাদের । কিন্তু আজ আমাকে স্পেশাল ভাবে খাওয়াচ্ছে । আজ কেই বলবে নাকি ? কে জানে ?
তন্নী মেয়েটাকে আমি আগে মোটেই পছন্দ করতাম না । ওর পোষাক ওর কথা বার্তা ওর আচরন কোন কিছুই আমার ভাল লাগতো না । বড় লোকের মেয়েতো সব কাজে একটু বেশি বেশি । আর এতো ঢং , দেখলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যেত । তাই পারত পক্ষে আমি তন্নীকে এড়িয়ে চলতাম । তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে তন্নী দেখতে খুব সুন্দর ছিল । তাই আমাদের ক্লাসের ছেলেগুলা সব হ্যাংলার মত ওর আসেপাশে ঘুড়ঘুড় করতো । আমার বন্ধুরাও ছিল । অস্বীকার করবো না যে ওর চেহারা আমার ভাল লাগতো না । কিন্তু যখন ভার্সিটিতে আসতো এক বস্তা মেকআপ আর পারফিউন মেখে আসতো । আর কথা বলত এমন ঢং করে বিরক্তিতে মন ভরে উঠতো । তাই ওর আসেপাশে আমি ঘেসতাম না । কিন্তু ভাবতেও কত অবাক লাগে এই মেয়েটার সাথে এখন আমার কত ভাব । অবশ্য ওর সাথে মেলামেশাটা খুব বেশি দিনের নয় । কয়েক মাস আগে আমার ইউনিভার্সিটিতে রিসার্স মোথোডোলজি নিয়ে একটা ওয়ার্ক সপ হয়েছিল । কিছু ভলানটিয়ারের দরকার ছিল । তা কি মনে করে নাম লেখালাম । ওয়ার্কসপে এসে দেখি আমাদের ক্লাস থেকে পনের জনের মত ছেলে মেয়ে এসেছে । তাদের মধ্যে তন্নীও ছিল । ওকে দেখে একটু অবাকই হলাম । এই রকম কাজেও ওর ইন্টারেস্ট আছে ? যাক ভাল । ওয়ার্কসপের সাতটা দিন কাটল বেশ ভালই । নতুন একটা অভিজ্ঞতা হল । হাসি তামাশা আড্ডাও হল খুব । এ কয়টা দিনে আমার কেন জানি মনে হল তন্নীকে আমি যেমনটা মনে করেছিলাম ও হয়তো তেমনটা না । কিন্তু তবুও ওর কাছ থেকে একটু দুরে দুরেই থাকলাম । বড় লোকের মেয়ে কখন কি মনে হয় বোঝা মুশকিল । কাছে না যাওয়াই ভাল । ওয়ার্কসপের শেষ দিনে আমরা সবাই মিলে আড্ডা মারছিলাম এমন সময় আড্ডার মাঝখানে তন্নী উঠে দাড়াল । সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল -এই কয়দিনে তোমাদের সাথে আমার দারুন সময় কেটেছে । কাল আমার জন্য একটা বিশেষ দিন । তোমাদের সবাইকে আমি দাওয়াত করলাম । তোমরা সবাই অবশ্য অবশ্যই আসবে । ঠিক হল পরদিন বিকালে সবাই স্টার কাবাবে মিলিত হবে । তন্নী সবাই খুব ভাল করে বলল আসার জন্য । আমাকেও বলল এবং বেশ আন্তরিক ভাবেই বলল । কিন্তু আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে যাবো না । আর আমার এ রকম পার্টিফার্টি ভাল লাগে না । কিন্তু ব্যপারটা যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ হল না । তন্নীর ফোন এল পরদিন দুপুর বেলা । রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে তন্নী বলল -তুমি আসছো তো ? সবাইকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি । কেবল তুমি বাকি ছিলে । পাঁচ টার মধ্যে চলে এসো কেমন ! -ইয়ে মানে আমার হয়তো আশা হবে না । তন্নী কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম -আসলে আমার একটা কাজবেঁধে গেছেতো । তন্নী বলল -আমি জানতাম তুমি এমন কিছু একটা বলবে ? আরো কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল -আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমাকে ? -বল । -তুমি আমাকে পছন্দ কর না কেন বলতো ? শুধু এবার না আমি প্রত্যেক বার দেখেছি তুমি সব সময় আমাকে কেমন যেন একটা ইগনোর কর । কেন এমন টা কর ? আমার জানা মতে আমি কোন দিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি নি । তাহলে কেন এমনটা কর ? একটানা কথা বলে তন্নী চুপ করলো । আসলে ও যা বলল তা মোটামুটি ঠিক । ওকে ইগনোর যে কেন করি তার কোন সুনির্দিষ্ট কারন আমার নিজেরও জানা নাই । তাহলে কেন করি ? -আসলে আমি .... -তোমাকে কোন কৈফত দিতে হবে না । কৈফত চাওয়ার অধিকার আমার নেই । কিন্তু এই আমি খুব আশা নিয়ে তোমাকে দাওয়াত করেছিল । আমার মনে হয়েছিল যে এবার হয়তো তুমি আসবে । তন্নীর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছিল যেন ও কাঁদছে । কিংবা এখনই কেঁদে ফেলবে । ও আর কথা বলল না । ফোন রেখে দিল । একটা অপরাধ বোধে সারাটা মন কেমন যেন বিষাদ হয়ে রইল । বারবার মনে হতে লাগল যে কিছু নিশ্চয় আমি ঠিক করছি না । পরদিন সকাল বেলা ভার্সিটি তে গিয়ে আর এক কাহিনী শুনলাম । কালকে তন্নীর জন্মদিন ছিল । আর কালকের পার্টি ও ক্যান্সেল করে দিয়েছে কেবল আমি যাই নি বলে । আমি বড় আশ্চর্য হলাম । এমনতো হবার কথা না । আর আমি এমন কোন ইম্পর্টেন্ট মানুষ না যে আমার না আশাতে পুরো পার্টি হবে না । তন্নীর এক বান্ধবীর কাছে সব কিছু জানতে পারলাম । আসলে আমি যে ওকে পছন্দ করি না এটা ওকে পীড়া দিচ্ছিল । ও কেবল জানতে চাচ্ছিল ঠিক কি কারনে আমি ওকে ইগনোর করি ! আমার কাছাকাছি আসার জন্যই কেবল ওয়ার্ক সপে গেছিল । ও কেবল বোঝাতে চেয়েছিল যে সে খারাপ কেউ না । সবাই যেমন ওর সাথে মেশে আমি কেন তার সাথে মিশি না । ওর বান্ধবী আরো বলল যে ও কাল আসলেই অনেক কষ্ট পেয়েছে । কথা গুলো জানার পর আমার আসলেই খারাপ লাগতে লাগল । আসলেই মেয়েটার সাথে একটু অন্য রকম আচরন করা হয়ে গেছে । এখন এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যে ওকে সরি বলা । খুজে বের করলাম ও কোথায় আছে । চার তলায় ক্লাস রুমের বাইরে ও বসে ছিল । আমি যেতেই আমার দিকে একটু তাকাল । ওর চোখ গুলো কেমন ফোলা ফোলা লাগল আমার কাছে । নিশ্চই কেঁদেছে । আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম । - হাই ! একটু হাসার চেষ্টা করলাম । তন্নী শুকনো গলায় বলল -হাই! - তুমি পুরো প্রোগ্রাম ক্যান্সিল কেন করলা ? এমন পাগলামো কেউ করে ? মানুষের কাজ থাকতে পারে না ? -তুমি কি এই কথা বলার জন্য এখানে এসেছ ? -আসলে আমি কাল কেন আসতে পারি না তা বলতে এসেছি । -কেন বলতে এসছো ? আমি কি তোমার কাছে কারনটা জানতে চেয়েছি ? -না তা না । কিন্তু আমার কারনে কারো জন্ম দিনের প্রোগ্রাম নষ্ট হবে , এটা আমার কাছে ঠিক ভাল লাগছে না । নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী লাগতাছে । তন্নী খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । -এই বোধটা আছে তোমার ? আচ্ছা একটা কথার উত্তর দিবে ? -বল । -আমি কি কখনও তোমার সাথে থারাপ ব্যবহার করেছি ? অথবা তোমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ কিছু বলেছি ? না । -এ কথা কেন বলছ ? -তাহলে এক্সেক্টলি কি কারনে তুমি আমাকে অপছন্দ কর বল ! -অপছন্দ করি কে বলল ? -তোমাকে বলতে হবে কেন ? তোমার আচরনে স্পষ্টই বোঝা যায় । -না বিশ্বাস কর । এমন টা মোটেই নয় । আমার একটা জরুরী কাজ ছিল । -মিথ্যা কথা বলার দরকার নাই । আমি আগেই বলেছি আমার কাছে কৈফত দেবার দরকার নাই । -সত্যিই আমি মিথ্যা কথা বলছি না । -আচ্ছা তাহলে প্রমান কর । -কি করতে হবে বল । -আমি এখনও আমার জন্ম দিনের কেক কাটি নি । আমায় সাথে এখন চল । -কোথায় ? -যেখানে আমি নিয়ে যাবো । আমি কেবল হাসলাম । তারপর থেকে তন্নীর সাথে সম্পর্কটা কেমন যেন বদলে গেল । খুব চট করেই তন্নী খুব কাছে চলে এলো ।
আবার মোবাইলটা বাজছে ! মোবাইল স্ক্রিনে তন্নীর হাসি মাখা মুখটা ভেসে আছে । -বল । -আসছো তো ? -আরে বাবা আসছি তো । -তোমার কোন ভরসা নাই । -আচ্ছা এই কথা কেন বলছ ? আমি কি আগের মত আছি বল । -উউউমম । - আচ্ছা আজ কি বিশেষ দিন বল তো ? জন্ম দিন তো কদিন আগে গেল । আজকে কি ? তন্নীর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । -জন্মদিন ছাড়া কি মানুষের জীবনে আর কোন বিশেষ দিন থাকে না ? আচ্ছা তুমি আসো তোমাকে বলব ।
বিকেল বেলা ওর সাথে দেখা হল । জারুল গাছের নিচে ও দাড়িয়ে ছিল । এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল । আমাকেই খুজতে ছিল বোধহয় । আমি ওর পাসে গিয়ে টুক করে ওকে চমকে দিলাম । -এমন করে কেউ আসে ? আমি হাসি কেবল । ওর দিকে তাকালাম । ওকে বেশ সুন্দর লাগছে । -তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে । আর ..... ও একটু হাসল । বলল -আর ? -আর বেশ উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন মেয়ে মনে হচ্ছে । -উচ্চ তাপমাত্রা ? আমি হাসলাম । -সহজ ভাষায় বললে তোমাকে আজ হট লাগছে । এবার তন্নী একটু লজ্জা পেল । আমি বললাম -কই বল তোমার বিশেষ দিনটা কি ? আমরা জারুল গাছের নিচে পেতে রাখা বেঞ্চে বসলাম । ও প্রথমেই কিছু বলল না । কিছুটা সময় নিয়ে ও বলল -আমাদের বন্ধুত্ব্য টা তোমার কাছে কেমন মনে হয় ? আমি হাসলাম । -এই কথা কেন বলছ ? -বল না ! ওর চেহারায় কেমন যেন অস্থিরতা দেখলাম । -ভাল লাগে । অবশ্যই ভাল লাগে । -জানো অপু তোমার প্রতি আমার আলাদা একটা আকর্ষন গোড়া থেকেই ছিল । তারপর তোমার সাথে বন্ধুত্ব্য হবার পর থেকে তোমার সাথে কথা বলার পর থেকে আমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি । হঠাত্ হঠাত্ সব কিছু কেমন জানি লাগে । কোন কারন ছাড়াই হাসি ! আপনা আপনি চোখে পানি আসে । আমি কিছুদিন থেকে আমার এই আচরন কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না । -তাই ? আমি হাসলাম । বললাম -তোমার তো সাইক্রাটিস দেখানো দরকার । সত্যি বলছি । আমার পরিচিত একজন ভাল ডাক্তার আছে । যাবে নাকি ? তন্নী একটু যেন আহত হল । -যাবে না ? -অপু তুমি খুব খারাপ । আগেও আমাকে কেবল কষ্ট দিতে আজ দাও । এই বলে ও উঠে পড়ল । -আমি তোমার সাথে আর কথাই বলবই না । -আরে আরে যাও কই ? ওকে আবার বসালাম । ওর দিকে তাকিয়ে বললাম -তুমি যে কথা কাল রাতে বুঝতে পেরেছ , যে কথাটা বলার জন্য আজ আমাকে এখানে ডেকেছ তা আমি অনেক আগে থেকেই জানি । বুঝেছ ? তন্নী একটু আদুরে গলায় বলল -জানো ?? -হুম । -সত্যি ? -হুম । -তাহলে বলনা কেন ? -কেন বলবো ? তুমি বল । -তুমি বল । -না তুমি বল । -তুমি । -তুমি । -না তুমি বল । আমি বললাম -আমি বলব না । তুমি বলবা ! -না তুমি বলো ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন