[url=http://www.gulfup.com/?AomQ4i][img]http://www.gulfup.com/G.png[/img][/url]

মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১২

ভালোবাসা ৪২০

 

ভালোবাসা ৪২০

দুজন তরুণ-তরুণী একে অপরকে খুব ভালোবাসত। তাদের ভালোবাসা ছিল খুব গভীর। ধরা যাক, তাদের নাম শুভ ও মাধবী।
একদিন শুভ যখন মাধবীর ফেসবুক ওয়ালে লিখল, জানু, আই লাভ ইউ!
তখন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা সেই ওয়ালপোস্টে লাইক দিল। লাইকসংখ্যা দেখে মাধবীর সে কী আনন্দ! অন্যদিকে হিংসুটে সমাজ একটা dislike বাটনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করল। এ সুযোগে বিরোধীদলীয় ষড়যন্ত্রকারীরা dislike বাটনের একটা spam link তৈরি করে ফেসবুকময় ছড়িয়ে দিল। আপনারা এখনো তার ভুক্তভোগী।

একদিন মাধবী বলল, ওগো, তুমি আমাকে এত আদর করে ফেসবুকে poke দাও কেন? আমার এত্ত ভালো লাগে! তোমার poke পেয়ে আমি বারবার শিহরিত হই!
শুভ খুশি হয়ে বলল,
আমার ঘরের দরজা খুলে দেখো, টেবিলের ওপরে আমার পিসির মাউস তো শুধু তোমাকে poke দেওয়ার জন্যই! যত দিন আমার মাউস অক্ষত থাকবে, তত দিন তোমায় দিয়ে যাব ভালোবাসার poke; প্রমিজ!

যা-ই হোক, ভালোই চলছিল তাদের প্রেম। সারা দিন ইনবক্স মেসেজিং, দিনে ১০-১২টা ওয়ালপোস্ট, পাঁচটা স্ট্যাটাস, একটা নোট। আহা! একেই তো বলে প্রেম!
শুভর পরিবার মেনে নিলেও হঠাৎ ঝামেলা করলেন মাধবীর বাবা-মা। তাঁরা কিছুতেই এ সম্পর্ক মেনে নিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে পালিয়ে তারা বিয়ে করে ফেলল।
তারা একটা গ্রুপ খুলল। closed গ্রুপ। মেম্বার শুধু তারা দুজন। সেখানেই তারা ঘরসংসার শুরু করল। গ্রুপের ওয়ালেই সব সাংসারিক কাজকর্ম, ভালোবাসার আদান-প্রদান সম্পন্ন হতে থাকল।
একসময় তাদের পরিবারের লোকজন এ খবর জেনে গেল। মাধবীর মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
হায়রে। আমার পোড়া কপাল। কত ইচ্ছা ছিল মেয়ের বিয়েতে ফেসবুকে একটা event খুলব। কত লোককে invite করব। কিছুই হলো না রেএএএএ!

মাধবীর বাবা রেগে গিয়ে বললেন,
আমি এ বিয়ে মানি না। বিয়ের প্রমাণ কোথায়? বিয়ের একটা রীতিনীতি আছে। সমাজের কাছে আমি মুখ দেখাব কীভাবে? বিয়ে করতে হলে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে হয়। সেখানে ছেলেমেয়ে উভয় পক্ষকে confirm করতে হয়। তোমরা তা করোনি।

শুভ বলল,
মাই ডিয়ার ফাদার ইন ল, আমরা তা করেছি! আপনাকে বহু আগে আমরা block করেছি। তাই আপনি দেখেননি।
মাধবীর বাবা আরও রেগে বললেন,
কী, এত বড় স্পর্ধা! কোথায় সেটা? আমাকে দেখাও।
শুভ নিজের প্রোফাইল থেকে তাঁকে হিস্টোরিক্যাল ওই পোস্ট দেখাল। মাধবীর বাবা অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, ছোহ! ওই পোস্টে মাত্র ১১ জন লাইক দিয়েছে। এত কম লাইকে বিয়ে সম্পন্ন হয় না।
এবার শুভ চিৎকার করে উঠল,
ফাদার ইন ল, আমাদের ফ্রেন্ডলিস্ট গরিব হতে পারে, কিন্তু আমাদের হূদয়ে ভালোবাসা আছে। ভুলে যাবেন না, লাইক দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না!
মাধবীর বাবা রাগে-ক্ষোভে বললেন,
ছোটলোক ফেসবুকার কোথাকার! জাকারবার্গ আমার বন্ধু। আমি এখনই তোমার নামে রিপোর্ট করব!

এ কথা শুনে মাধবী কেঁদে ফেলল।
না, বাবা, নাআআআ! তুমি আমার নামে রিপোর্ট কোরো। তবু তোমাদের জামাইয়ের ক্ষতি কোরো না। আমার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস তুমি মুছে দিয়ো নাআআআ! তোমার দোহাই লাগে...

মাধবীর বাবা বললেন, ছি! মেয়ে, তোমার এত অধঃপতন! আমি আজই তোমাকে আমাদের ফেসবুক ফ্যামিলির daughter লিস্ট থেকে রিমুভ করব। মাধবীর মা, আমার ল্যাপটপটা নিয়ে এসো।

মাধবীর মা ভয়ে ভয়ে ল্যাপটপ এনে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাধবীর বাবা ফেসবুকে লগইন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন ল্যাপটপের ওপর।
মাধবীর মা বললেন, ওগো, তুমি
শান্ত হও। তোমার ল্যাপটপের
শরীর ভালো না। এত অস্থির হলে যদি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়!
আর এদিকে শুভ মাধবীর হাত ধরে বলল, চলো মাধবী, আমরা আমাদের ছোট্ট গ্রুপে ফিরে যাই। আভিজাত্যের বড়াই থাকলে ভালোবাসা জন্মায় না।
তারা ফিরে গেল তাদের ছোট্ট গ্রুপে।
এরপর একদিন দুর্বৃত্তরা মাধবীর বাবার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ফেলল। হ্যাকাররা সেই আইডি ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করতে লাগল। এতে মাধবীর বাবার মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেল।
কিছুদিন পরে বহু কষ্টে বন্ধু জাকারবার্গের সহায়তায় আইডি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হলেন তিনি।
কিন্তু এরপর থেকে ডেইলি লাইক সংখ্যা কমে গেল। মাধবীর বাবা বুঝতে পারলেন যে এত দিন
তিনি যা পেয়েছেন তা শুধুই খ্যাতি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তাঁর
খ্যাতি শেষ হয়ে গেছে।
তিনি কারও ভালোবাসা, শ্রদ্ধা
পাননি। আসলেই লাইক দিয়ে
ভালোবাসা কেনা যায় না।
 

মাধবীর বাবা তাঁর ভুল স্বীকার করলেন। বুকে টেনে নিলেন শুভ ও মাধবীকে। ফ্যামিলি লিস্টে এই দুজনকে অ্যাড করে নিলেন। এরপর তিনি তাঁর বিশাল বিশাল ফেসবুক পেজের adminship দিয়ে দিতে চাইলেন জামাই শুভকে।
তবে শুভ একজন আদর্শ ফেসবুকার। সে জীবনেও মাধবী ছাড়া কোনো নারীকে ফ্রেন্ড রিকোয়স্টে পাঠায়নি। তাই নিজ আদর্শে অবিচল শুভ হাসিমুখে মাধবীর বাবার এ উপহার প্রত্যাখ্যান করল।

তারপর ফাদার ইন ল আর
মাদার ইন লকে দুখানা
শ্রদ্ধা-মিশ্রিত fb poke (সালামের আরেক version) দিয়ে বিদায়
নিল শুভ।

তারপর সুখে-শান্তিতে ছোট্ট
গ্রুপে ঘরসংসার করতে লাগল শুভ আর মাধবী। মাঝেমধ্যে মায়াবী সন্ধ্যায় সূর্যের বিদায়ক্ষণে গিটার
হাতে মাধবীর প্রোফাইলে চোখ
রেখে শুভ গেয়ে ওঠে—

পড়ে না চোখের পলক!
কী তোমার pro pic-এর ঝলক!
দোহাই লাগে pro pic তোমার
একটু hide করো!
আমি মরেই যাব
ডিঅ্যাক্টিভেটেড হব
লগইন করাতে পারবে না কেউ!
 
********************************************************************

দৃষ্টি সীমাহীন


দৃষ্টি সীমাহীন




































MAJHE MAJHE MONE HOY...





মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমার সব...
                তোমাকে না দ্যাখিলে কষ্ট হয় অনুভব....

Mon (Official Vidio)By Fa Sumon & Nirjhor _album_Valobashar Diney



CHOKHER POLOKE


Bol Tui Amay Chere Kothay Jabi- Zooel Ft Kona *HD*





mon_by_Dj RiDwAn




সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১২

একা নীলাঞ্জনা আর কিছু প্রলাপ..



একা নীলাঞ্জনা আর কিছু প্রলাপ
ঘুম ভাঙ্গতেই দু এক ফালি মেঘ ছুঁয়ে যায়
আরেকটা দিন অন্য রকম ইচ্ছে ডানা
বুকের ভিতর উথাল পাথাল বৈশাখী ঝড়
শরীর ভেজা চুমুর দাগে নীলাঞ্জনা।

এক একটা দিন এমন ভাবে শুরু হয়, কোন কিছুই ভাল লাগে না। কেনো ভাল লাগে না জানি না কারণ খুঁজে পাইনি কোনদিন। জাস্ট ভাল লাগে না। ঠিক এই রকম এক একটাদিনে ঘুম ভাঙ্গলেই তোর কথা মনে পড়ে নীলাঞ্জনা।এখোনো কি তুই আদুরে বিড়াল এর মত কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকিস?

নীলাঞ্জনার বুকের তিল এ চাঁদ নেমে আয়
পাহাড় চূড়োয় দাঁড়িয়ে থাকি বিপদ সীমায়
এদিক ওদিক জল চুঁইয়ে যায় ফল্গু ধারায়
গোপন গুহায় তোর শরীরেও জল ছুঁইয়ে যায়।

যেদিন প্রথম তোর শরীরের গন্ধ নিয়েছিলাম সেদিন তোর বুকের ওই কালো তিলটা আমাকে ঈশারা করেছিলো। সেদিন বুঝেছিলাম বিপদ আছে তোর শরীরের কোণায় কোণায়।সাঁতার জানা সত্ত্বেও যে কোন মূহুর্তেই ডুবে যেতে পারি অসীম অতলে।মাঝে মাঝে তুই বড্ডো দুঃসাহসী হয়ে যাস। তোর উত্তঙ্গু পাহাড় চূড়ায় তোর নাভীর হাল্কা ভাঁজে যখন ঘামের বিন্দু চিক চিক করে আমি অপলক তাকিয়ে থাকি।আর গোল্ড ফ্লেক এর ধোঁয়া উড়িয়ে তোর চোখে দুষ্টুমি ফুটে ওঠে, কি দেখছিস? ডুব দিবি, সাঁতার জানিস তো?
সমস্ত রাত জেগেই থাকি

ঘুম আসেনা, কফির কাপে র শব্দ চুমুক
তোর কি কিছুই মনে পড়েনা?

এখন কি তোর কিছুই মনে পড়ে না নীলাঞ্জনা? সেদিন গুলো? তোর সাথে প্রথম আলাপের দুপুর বেলা। প্রথম দেখেই চমকে উঠেছিলাম, নীল ফেডেড জিন্স হাল্কা গোলাপী টি-শার্ট এর বোতাম খোলা দুঃসাহসে।এখনো কি তোর জয়ের মেঘবালিকা সাজতে ইচ্ছে করে?কলকাতার রাস্তায় বৃষ্টির জল জমলে এখনো কি তুই বাচ্ছাদের মতো সেই জলে খালি পায়ে ঢেউ তুলিস?

কিছু কিছু সর্ম্পকের মধ্যে থাকে ঘাস
ফুলপাতা, আঁকিবুকি নখের আঁচড়
কিছু নীল রং এলোমেলো বিছানা বালিশ
চাদরের ফুল ছাপে লিখে রাখা
তবু মনে রেখো।

তোর আর আমার এই সর্ম্পকের কি নাম নীলাঞ্জনা? প্রেম বন্ধুত্ব নাকি আরো বেশি কিছু। নাকি হাজার মুখের ভীড়ে পরিচিত মুখ চেনা কেউ? আজ তুই নেই আমার সাথে আমার পাশে, কিন্তু সত্যিই কি নেই তুই?আমার আগোছালো ঘরের দেওয়ালে তুই, আমার আমার বিছানা বালিশ চাদরে তোর প্রিয় স্পর্শ, তোর শরীরের গন্ধ।আমার বই খাতা, লেখার টেবিল এমনকি জানলার বাইরের আকাশেও তোর উপস্থিতি।

জলের পোষাক খোলো!
হেঁটে হেঁটে ফিরে যাও একা
তোমার পায়ের ছাপ
কারা যেন দেখেছে দূরবীনে
কারা যেন অন্ধকারে
প্রশ্নচিহ্ন রেখেছে দরজায়
সকলে প্রমাণ চায় আবিস্কার করে।
শরীর আসার আগে
শরীর যাওয়ার পরে
যেটুকু ভূখন্ড পড়ে থাকে!
আমি কিন্তু দেখেছি তোমায়
জলের পোষাকে!

পাহাড়িয়া মেঘেদের ছৌনাচ এখন এই মহানাগরিক আশমানে।আর আবোল তাবোল বৃষ্টি ধারাপাত --- এই আবগারি আবহাওয়ার নিজস্ব নেশা-পাঠশালা।হাঁপর ঠ্যালা শহরিয়া কেজো বাতাসে মোহময় সোঁদাগন্ধ অফুরাণ।আর গোল্ডফ্লেকের ঝাঁঝালো নিকোটিন স্বাদ ঠোঁট থেকে ক্রমশ আলজিভে অনায়াস। স্নায়বিক তরল্যের সব অনিশ্চিত গতিপথ খুঁজে নেওয়া – এই টাপুর টুপুর বৃষ্টি বিকেলে।বৃষ্টিছাঁও মাটি থেকে একটা হা-ক্লান্ত গরম ভাপ উঠে আসছে। উঠে এসে ছড়িয়ে যাচ্ছে রাস্তায়, ফুটপাথে, ঘাসের ডগায় আর চলমান শরীরে শরীরে হলুদ সবুজ লাল নীল গোলাপী কমলা – সব রঙ্গীলা ছাতার আড়ালে মুখর হচ্ছে গল্প ও না-গল্পরা পারস্পারিক। বৃষ্টিভেজা জেব্রা পেরোচ্ছে নীল জিন্স আর সাদা শার্টের কলেজ পড়ুয়া দলছুট এক তরুণী। কাধেঁর ব্যাগে নিস্পৃহ ভিজে যাচ্ছে সব ভৌগলিক ল্যাটিচিউড-লঙ্গিচিউড, ঐতিহাসিক সব যুদ্ধক্ষেত্র, আঙ্কিক সব জটিল জ্যামিতি কিংম্বা পারমুটেশন্-কম্বিনেশন্। আর ভিজে যাচ্ছেন রবিঠাকুর ও বায়রন পৌনপুনিক সহাবস্থানে।

তোমার সুরক্ষা চাই আর কিছু নয়
আমার শরীর জুড়ে আদিগন্ত পাপ
প্রতিদিন মরি তাই দিনে আর রাতে
আমার ভুলের থেকে আরো দূরে যাও
আমার কাছেতে শুধু নামটুকু থাক
প্রিয় নাম গায়ে মেখে পাপক্ষয় করি
তোমার সুরক্ষাটুকু নিশ্চিত হলে
বিষন্ন শরীর জুড়ে বৃষ্টি নেমে আসে

ভিজে যাচ্ছি তুমি আমি আমরা সবাই। ভিজে যাচ্ছে আমাদের সব না-বলা কথা, না-লেখা কবিতা আর আমাদের সব গোপন ভালোবাসা মন্দবাসার ব্যক্তিগত গদ্য।আমাদের বুকের অন্ধকার অবচেতনে গান গেয়ে চলেছে এক বাউন্ডুলে বৃষ্টি-বাউল! বৃষ্টিস্নাতা সেই তরুণীটির সাদা জামার আপাত স্বচ্ছতা ফুঁড়ে, ফুটে উঠেছে  অন্তর্বাসের লাজুক বিপন্নতা।আর নেশা-পাঠশালায় তখন আদিম আপেলের সেই পুরনো গল্পটা।পরিত্যক্ত কে যেন একা একা মাউথ্অরগানের মরমীয়া সুরে বুনে চলেছে আযান্ত্রিক এক বৃষ্টি-বিষাদ। সমস্ত দিন আজ টুপ টুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। সকাল থেকেই আকাশটা আজ কালো রঙের ছোঁয়ায় নিজেকে সাজিয়েছে। আর এমন বৃষ্টিদিনে একছুটে তোর কাছে পৌঁছতে মন চাইছে নীলাঞ্জনা। কিন্তু তা আর সম্ভব নয় এটা বোধহয় বৃষ্টিও জেনে গেছে।তাই তো আজ সারা দিন ধরে আমাকে নিয়ে খেলেছে বৃষ্টি। বারবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে বৃষ্টি ভেজা সেই দিন গুলোর কাছে। কখনো শুশুনিয়া পাহাড়ের দিন গুলোতে কখনো গড়িয়ার তোর ফ্ল্যাট এর দিন গুলোতে আবার কখনো বা বৃষ্টির গন্ধ মাখতে মাখতে তোতে আমাতে কলকাতার রাস্তায় পাগলা চক্কর মারার দিনগুলোতে।আর আমি নিরুপায় হয়ে দৌড়ে বেড়িয়েছি কখনো শুশুনিয়া থেকে গড়িয়া, কখনো নন্দন থেকে রাসবেহারীর সাট্‌ল ট্যাক্সিতে। তুইও কি আমার মতো স্মৃতি তড়িত আজ নীলাঞ্জনা? নাকি নাকি সেদিন গড়িয়ায় মোড়ে দাঁড়িয়ে আমার মতো স্মৃতি গুলোকেও ঝেড়ে ফেলেছিস মন থেকে একটা একটা করে। আজ সারাটা দিন বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে আমার PC তে বেজেছে রবি ঠাকুরের সেই পাগল করা গান, যা তোর ভীষণই প্রিয় ছিল, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়.........’।কিন্তু আজ কাকে বলব আর কী ই বা বলবো নীল? আমাদের সব কথা ফুরিয়েছে আজ।

এই তো রচিছ পথ যে পথে ছলনাও থাকে
আমি তার বুঝেছি কিছুবা, হয়তো অনেক
জানি
'ভালোবাসি' মানে ভালোবাসা নয় কখনো কখনো
দূরে যাওয়ার জন্যও আসতে হয় কাছে
অথবা
চিঠির জবাবে না লেখা কথার মতোই
লুকিয়ে থাকে কিছু রহস্য-গোপন
সব অভিসারে
মেঘের মতোই নেমে আসে
ঝড়ের মতোই উড়ে আসে
পলির মতোই ভেঙ্গে পড়ে
অভিসার শেষে, কপট সময়।

আজ বড়ো অবাধ্য বৃষ্টিটা। ঠিক যেনো চঞ্চল কিশোরীর মতো, তোর মতো, খুনসুটিতে অস্থির করে তুলেছে আমায়। কিছুতেই বাধ মানছে না। যতই রাগ করি চোখ পাকাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ঠিক তোর মতো। আর বারবার আমাকে তোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।ভাবছিস আমি স্মৃতিমেদুরতায় ভুগছি।না, নীল আজ আমাকে বৃষ্টিতে পেয়েছে আজ আমাকে তো’তে পেয়েছে। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে শুশুনিয়ায় এমনই বৃষ্টি ভেজা দিনে আমাদের সফরের কথা। সেদিনের বৃষ্টি টাও ঠিক আজকের মতো ছিল। আর তুইও হঠাৎ করে সেদিন বৃষ্টি হয়ে গেলি। তারপর তুই আর বৃষ্টি মিলিয়ে সেদিন শুশুনিয়া কে ভিজিয়েছিল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম টেন্টে। তোদের ন্ডকারখানা দেখছিলাম। সেদিন আমি ভিজি নি। তুই আমাকে বলেছিলি ভীতু। নীল সেদিন আমি বৃষ্টি কে ভয় পাইনি, ভয় পেয়েছিলাম তোকে। যদি তোকে ছুঁয়ে দিলে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ঝরে যায় তোর শরীর থেকে, সেদিন বৃষ্ট ভেজা তোকে পাহাড়ের কোলে রুপকথার মত লাগছিল যদি ছুঁয়ে দিলে তুই সাধারন হয়ে যাস।তারপর বৃষ্টি থামলে তুই আমাকে ভাসিয়েছিলি আরেক বৃষ্টিতে। সে আগুনে বৃষ্টিতে পুড়তে পুড়তে আমি ভয় পেয়েছি। তোর যে কোনো তল নেই নীল, তোর যে কোনো সীমানা নেই, সব সীমানাই তুই ভেঙেছিস অবলীলায়। আমি পারিনি, আমি সত্যিই পারিনি নীল।আর পারিনি বলেই সেই বৃষ্টির পর তোকে খুব সাধারন লেগেছিল আর পাঁচজনের মতোই, কেন তা জানি না এর কোন উত্তরই নেই আমার কাছে।

ভেবেছি তোমাকে ভোর
অমানিশা কেটে গেলে তোমাকেই
ধরেছি জড়িয়ে
ঠোঁট ছুঁয়ে হাত ছুঁয়ে চোখের কাজল ছুঁয়ে
জেনেছি এ আমার অমল বেঁচে থাকা
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিউলি, জুঁই, রাতের গন্ধরাজ
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিশির ধোয়া কোমল বকুল
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ছুঁয়ে হাত বলেছি এ আমার গোলাপ গোলাপ
পঁচনের কাল আসে ফুলেরও একদিন!
এ আমি না, ভাবিনি কখনো।

আমার কি সেদিন সাহসী হওয়া উচিত ছিল নীলাঞ্জনা? তাহলে কি আজকের দিনটা অন্য রকম হতো। আজকের এই বৃষ্টি মুখর দুপুর বেলা আমার পাশেই থাকতিস তুই? কিন্তু তোর সেই অসাধারন্ত্ব থাক্তো কি? আমি তো তোকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো চাই নি, আর পাঁচ জনের মতো আমিও তোকে ভালবাসি নি। তুই আমার কাছে রূপকথা, আমার ভালোবাসাও ছিল তেমনি এক জাদু কাঠির স্পর্শ। কিন্তু সত্যিই কি আমরা ভালো বেসেছিলাম?তা হলে আমাদের এই ভালবাসা কেনো সাধারন প্রেম কাহিনীর পরিনতি পেল? গড়িয়া হাটের মোড়ে সেদিন তুই আমাকে দাঁড়করিয়ে রেখে চলে গেছিলি। বলেছিলি, ‘আজ আসি, আমাদের দেখা হবে আর কোনদিনই। ভালো থাকিস’। তারপর চলে গিয়েছিল সোজা কোন দিকে না তাকিয়ে। জানিশ তারপরও বহুক্ষন আমি দাঁড়িয়েছিলাম ভীড়ের মধ্যে। বারবার মনে হচ্ছিল; এই বুঝি তুই ভীড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে বলবি, ‘ কি বে শালা এখানে দাঁড়িয়ে কি মারাচ্ছিস? চ’ একটু মাল টেনে আসি’।কিন্তু তুই আসিস নি। সত্যি বলতো নীলাঞ্জনা ভালোবাসা আসলে কি? আমরা কি সত্যিই ভালোবাসা মানে বুঝি? আজ এই প্রশ্নটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে নীল। অথচ দ্যাখ সাহস করে বলতেও পারছি না কেমন আছিস নীল, প্লিজ তুই ফিরে আয়।।কিন্তু আমি জানি তোর ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে আমার সারা শরীরে, আমার ঘরে, আমার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগোছালো ভাবে আজো আমি সব গুছিয়ে উঠতে পারিনি সেই সব ভালোবাসা। জানি গুছিয়ে রাখলে ভালো হতো, কিন্তু থাক, ওগুলো ছড়ানোই থাক। গুছিয়ে নিলে সে বড় সুখের হতো, কিন্তু তোর চলে যাওয়া সে বড়ো

............

ভালোবাসা লেখা হয় কবিতায় কবিতায়
পাখির ঠোঁটের সুর তুলে আনা
ফিদার ছবিতে
মাধুরীরর কোমর ও নাভিতে
ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া
চৌরাশিয়ার বাঁশি, আহা ভালোবাসি
ভালোবাসা ছড়ানো ছিটানো কত না
চিঠিতে, গল্পে পাতায় পাতায়
লেখা হয় রমনায় চন্দ্রিমা উদ্যানে
গাছের বাকল তুলে নখের আঁচরে
ভালোবাসা চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো
আকাশে বাতাসে দেহে চোখের পাতায়
একবার যদি কেউ কুড়িয়ে কুড়িয়ে
এ অমল ভালোবাসা হৃদয়ে করত জমা
আহা! কত সুখ হত।।

রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১২

যার জন্য এত আয়োজন


যার জন্য এত আয়োজন



জানি ছোয়া গুলো এখন অনেক দূরে,
তবুও ছুতে চায় মন।


যার জন্য এত আয়োজন,
আসবেনা জানি ফিরে সে ক্ষণ।


শূন্য নাওয়ে তার জন্য
ভালবাসার বৈঠা প্রয়োজন।
সন্ধ্যাবেলা সন্ধ্যাতারা
দেখে দেখে মন ভাবে।
আঙুলে গুনে কত দিন ফুরাবে,
কবে তারে কাছে পাবে।

প্রতীক্ষা জ্বালায় জ্বলছে দিন
তার বিরহ কে বোঝে।

যার যেথায় ব্যথা
তার চোখের জল তার ব্যথা সাজে।

*****************************************

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

আমি আসব ফিরে কোন এক রাতে






নিজেকে ছেড়ে পালানোর আর কোন পথ খোলা নেই ,
মেঘ ছুয়ে দুরে যেতে ইচ্ছের আশাই এখন সামনে।
তবুও অশ্রু লুকাই মেঘের ছায়ায় সন্ধ্যা খুজি ,
শূন্য দিয়ে সুত্রপাত জীবনের শেষ প্রান্ত শূন্য ,
তথাপী জানালা খুলে নিঃশ্বাস নেই , তারা হীন নির্জন
আধারে। ক্ষু্দ্র স্বপ্নজালে অস্থিরতার বিশাল ফোকর।
পথে পথে হেটে অনেক ক্লান্ত আজ আমি ,
ফিরে যাবার পথটই দীর্ঘ করেছি প্রাপ্তি শুধু
ঘরছাড়া ধূলোমাখা দীর্ঘশ্বাস।একটু জোৎস্না রেখো
আমি আসব ফিরে কোন এক রাতে।

নিরন্তর নিঃস্বার্থ তোমার জন্য ....



নিরন্তর নিঃস্বার্থ তোমার জন্য
উৎসর্গ আমার বুবু রাতজাগা পাখিকে



নিঃশব্দের ভাষায় তোমায় লেখা চিঠি .............
দেখবেনা জানি,কিছু ভাষা মনের জন্য,
কিছু কথা না শোনার জন্য,আবেগের ভাষা
কে জানে,হৃদয় অনুভবে খুজে নেয়,বুঝে নেয়
দু চোখের দৃষ্টি।
শব্দহীন সন্ধ্যার পথে চোখের জল ফিরে যায়
অনেক চাওয়ার,অনেক পাওয়ার আবেশে।
হৃদয়ে বর্ষা,ব্যথার ব্যকুলতার সুরে,


গহীনে গোপনে মম স্বপনও জুড়ে আজি কত কথা
ফুরানো দিন, মমতাহীন,সাজে যত ব্যথা।
দেখি যদি তোমায় তব চলেছ একেলা,
ভুলি দিবানিশী ভুলিব বেলা অবেলা,
নিরন্তর নিঃস্বার্থ তোমার জন্য আমার এ পথচলা।







অনেক দিনের বৃষ্টির সাধ ছিল,মনের উঠোন শুকিয়ে চৌচির
স্বপ্ন তৃষিত শূন্য দৃষ্টি।
আশার বর্ষন শেষে আজ রোদ উঠেছে সাঝের মায়ায়।
দুঃখ জীর্ন শূন্যতা,অবহেলার অংক উত্তরহীন,
বহুকালের অসহায় সমীকরন অশ্রু ফোটা আড়ালে,
তুমি দেখনি।
কত জীবন ভগ্নাংশের শেষফল রাতজাগা পাখির পালকের
উষ্ঞতায় জমেছিল,আজ ছুয়ে গেল সে ,ভালবাসা আর মমতায়।


বুবু ভাল থেকো অনেক ভাল।
যদি আমার সব সুখ দিয়ে তোমার একটু কষ্ট মুছতে পারি,
তবে অশ্রুটুকু আমায় দিও।
বর্ষা আমার ভাল লাগে সাঝসন্ধ্যা তুমি নিও।



হে নগ্নতমা তুমি


হে নগ্নতমা তুমি

২৯ শে জুলাই, ২০১২







হে নগ্নতমা তুমি বিরাজমান কখনো আলো কখনো আধারে।
সুখ ভেবে নীল রং ছোয়াই,
দুঃখ জড়াই কালো মেঘে।
কষ্ট যে কত রঙের...আমি এক সাজে
সে আসে ভিন্ন সাজে।

সব মিলে বেদনার রংধনু আমার আকাশে।
আপন মানুষের জন্য আবেগ
নিঃস্বার্থ গোধূলী লগ্নের মত মায়াবী।

তথাপী বাধন ছিড়ে স্তব্ধতার দৃষ্টি আমি বয়ে চলি,
কেমন করে জানি সব স্মৃতির পাতায় জমতে থাকে।
হারিয়ে গিয়েও হারেনা কোথায় যেন এক টুকরো কষ্ট
পড়ে থাকে কখনো কখনো ডুকরে কাঁদে।

অবর্তমান তুমি অস্ত্বিত্তে আকাশের মত,
সময়ের সকল দুয়ারে দাড়িয়ে, তুমি আজ
আমি হীন স্বপ্ন পূজায়।

গোপন দোসর



২৬ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:১৬

এরপরেও আমাকে বিশ্বাস করছো?
একের পর এক ভুল করলে আমিই করেছি!
শেষ পর্যন্ত সবকিছু নিজের মতো করে
তুমিই সমাধান করে দিচ্ছো!
আমি কি অপারগ দেখো, দেখো আমি কেমন!!
তোমার জন্য এতোটুকু ত্যাগ
দায়িত্ব বোধ থেকে কিছু যে করবো
সেই সুযোগটাও তুমি করে দিচ্ছ আমাকে!
আমি নিচ্ছি, এটাকে ঋণ না ভালোবাসা বলে?


তুমি আমার পাশে ছিলে বলেই
এতো দ্রুত বহুদিন সময় কেটে গেলো!
আর কাউকে বা কোন প্রয়োজন মনে আসে নি,
কেউ জানবে না, বুঝবে না তোমার মতো!
কি রাত, কি দিন, কি সূর্য ঢাকা ঘোলা মেঘ, ধূসর
জানি, তারপরেও তুমিই পাশে থাকবে!
জানি, অবশেষে তুমিই আমার সমধান
আমার সুখ অথবা কষ্ট অগোচরের গোপন দোসর।

আমাকে আমি



কেউ কারো স্থান থেকে নেমে এসে
আমাকে সান্ত্বনা বা অনুরাগ জানাবে তা চাচ্ছি না,
যে আমাকে ভেঙেছে, যে আমাকে গড়তে চায়
একমাত্র সে-ই জানবে আমার কোথায়
কখন কীভাবে কষ্ট হয়,
এই যে তুমি অথবা তুমি জাতীয় কেউ
আমাকে জেনেছো, ভাবছো আমি এমন তেমন;
এসবই অযথা এবং তুচ্ছ বিবেচিত হবে
কারণ, আমি নিজেই এখন পর্যন্ত আমাকে
আমার কিছুকে বুঝতে পারি নি।

তোমার মুখ..


তোমার মুখ



আমার হাতের ওপর তোমার মুখটি
তুলে ধরলাম-
দেখলাম, আবেগে বোজা তোমার চোখ।
দেখা হ'লো না।

কতবার বললাম তোমার কানে,
কানে কানে ;-
দেখলাম, রক্তলাজে ফিরিয়ে নেওয়া তোমার চোখ!
দেখা হ'লো না।

তোমার খোঁপা দিলাম খুলে,
জড়িয়ে নিলাম আমার মুখে, চোখে, বুকে-
দেখলাম, পরসুখে দু-হাতে ঢাকা তোমার চোখ!
দেখা হ'লো না।

যাবার সময়-
পার হয়ে যাচ্ছিলাম
একটি দুটি ক'রে সব-কটি সিঁড়ি!
হঠাৎ ফিরে তাকালাম...
দেখলাম, চোখের জলে ভেজা তোমার চোখ!
দেখা হ'লো না।

উড়ন্ত রুমালের নন্দনতত্ত্ব...

 

উড়ন্ত রুমালের নন্দনতত্ত্ব


মেয়েটি একবার শুধু
আমার হাতের তালুতে ঢেলেছিলো
প্রকৃতি ও প্রেমের সরল শব্দকোষ।


সেই থেকে নির্বোধ আঙ্গুলের ভাঁজে ভাঁজে
মানবিক পৃথিবীর যাবতীয় হরিৎ প্রান্তর।


বিন্যস্ত বনের শাখায় প্রবল বর্ষণের পরে
ঝকমকে পত্রালির মিছিলে আমি
হয়ে গেছি ছায়াডোবা চনমনে রোদ।


উড়ন্ত রুমালের নন্দনতত্ত্ব জানে কি মেয়েটি?
জানে কি সফেদ চাদরের ময়দানে
শিল্পনিরপেক্ষ যুদ্ধে হেরে যাবার অভিনয় করে
কী ভীষণ রকম জিতে গেছি আমি!
মেয়েটি একবার শুধু চোখে ঢেলেছিলো আলো।

তারপর থেকে বর্ণান্ধ চোখেরা আমার
খেলাচ্ছলেই সরিয়ে দিয়েছে
পৃথিবীর তাবৎ অন্ধকার।

রাঙ্গা বউ রঙ্গিলা...

 

রাঙ্গা বউ রঙ্গিলা

 
রাঙ্গা বউ রঙ্গিলা
কি জাদু দিলা
‘এই মোর’ ভালবাসা সব নিলে
হেরিনু আমি তব পুষ্প দিলে।


মন বঁধুয়ারে!
যেইদিন তুমি এসেছ ওগো জীবনে আমার!
সেইদিন থেকে জেনেছে এই মন ‘তুমি যে আমার’!


রাঙ্গা বউ রঙ্গিলা
কি জাদু দিলা
ঘুচে গেল মোর সব আঁধার
পরোয়া করিনা কোন বাধার!

মন বঁধুয়ারে!
যেইদিন তুমি লিখিয়েছ নাম আমার জীবন খাতায়
সেইদিন থেকে বসে গেছ তুমি আমার হৃদয় পাতায়!


রাঙ্গা বউ রঙ্গিলা
কি জাদু দিলা
আমি ফিরে ফিরে আসি শুধু তোমারি কাছে
পরোয়া করিনা কোনও-কে কি বলিল পাছে!
মন বঁধুয়ারে!
ওগো প্রিয়া! প্রিয়দর্শিনী! যেইদিন থেকে এসেছ তুমি জীবনে মোর
‘এই মোর’ মন বলে, সেইদিন থেকে মধুময় হল আমার প্রতিটি ভোর!

তিন তিতলী....


তিন তিতলী....

“মেঘ বলেছে যাবো যাবো” বইটি দ্বিতীয় বারের মত শেষ করেছি। সময়টা ২০০৭ সাল। আমি তখন নবম শ্রেনীতে। টার্ম এন্ড পরীক্ষা শেষ। ভ্যাকেশন আর চার পাঁচ দিন পর। এই সময়টা সবাই গল্পের বই পড়ে কাটায়। স্যার রাও কিছু বলেনা। হাতে কোন বই না থাকায় তৌফিকের কাছ থেকে নিয়ে এই বইটিই আবার পড়লাম। প্রথম পড়েছিলাম সপ্তম শ্রেনীতে। দ্বিতীয় বার পড়তে গিয়ে অজানা অনুভূতি টের পেলাম। তিতলী নামের মেয়েটির প্রেমে পড়লাম। এবং তা ভয়াবহ ভাবে। মাথার ভেতর তখন তিতলী তিতলী। বাস্তব জীবনে তিতলীকে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজে পেলাম ২০০৯ সালে। ফেসবুক নামের ভার্চুয়াল জগতে। তিনজন তিতলীকে পেয়েছিলাম। একজন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের,একজন ফেনী গার্লস ক্যাডেটের এবং একজন ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেটের। তিন তিতলীর সাথেই আমার বিচ্ছিন্ন কিছু স্মৃতি আছে। এরমধ্যে প্রথম দুই তিতলী আমার ক্লাসমেট। সবেমাত্র ফেসবুকে একাউন্ট খুলেছি। সারাক্ষন অনলাইনে থাকি। রংপুরের তিতলীর সাথে আমার টুকটাক কথা হয়। আমি তাকে তেতুল নামে ডাকি। মোটামুটি মধুর সময়। একটা সময় ছুটি শেষ হয়। আমাকে ফিরে যেতে হয় ক্যাডেট কলেজে। তিতলী নামের ভূত তখনো মাথায়। ক্যাডেট কলেজে বসে লিখে ফেলি তিতলী নিয়ে চার লাইনের একটি কবিতা,

“তেতুল বনে উঠেছে জোছনা আবার নতুন করে
সেই জোছনা বিলিয়ে দিলাম তিতলী তোমার তরে
জোছনা হয়ে জড়াবো তিতলী তোমার এলো চুলে
জোছনা ভরা এই লগনে খোপা রেখো খুলে. . . .”


কবিতাটি তিতলীকে দিতে পারিনি। ছুটি শেষে বাসায় ফিরে দেখি তিতলী আমার ফ্রেন্ড লিস্টে নাই। থাকার কথাও না। দীর্ঘ তিন মাসের অনুপুস্থিতি একটা মানুষকে ভোলানোর জন্য অনেক। তাও যদি মানুষটা ভার্চুয়াল জগতের হয়। তিতলীরা কারো জন্যে অপেক্ষা করতে পারেনা। এক মুহূর্তের পাশে না থাকলে এরা অন্য কাউকে বেছে নেয়। অনেক কাল তিতলীর কোন খোঁজ নেই। হয়তো ভালোই আছে।

পরের দুই তিতলী সম্পর্কে অনেক কিছুই বলতে আমি অপারগ। সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক কিছু কারনে। ফেনীর তিতলী ছিল আমার ভালো বন্ধু। অন্য দুই তিতলীর সাথে ফেসবুকে পরিচয় হলেও এই তিতলীর সাথে পরিচয় মুঠোফোনে। ক্যাডেট হবার সুবাধে ভালো সম্পর্ক। মেয়েটিও ভালো। গান জানে। হুমায়ূন আহমেদ এর অন্ধ ভক্ত। অল্প দিনেই সম্পর্ক বেশ ভালো হয়ে যায়। তুই তোকারী সম্পর্ক। সুন্দর সময়। কোন এক ছুটি শেষে এসে দেখি সে আমার মুঠোফোন আর ধরেনা। এক দিন,দুই দিন,তিন দিন. . .একটা পর্যায়ে বুঝতে পারলাম সে আমার সাথে কথা বলতে চায়না। কাউকে জোড় করে কিছুই আমি করাইনা। আমিও ফোন দেইনা। একসময় ফেসবুকে তাকে পেয়ে যাই হুট করেই। আমার মুঠোফোন নম্বর নেয়। আবার কথা হয়। পেছনের অতীত ভুলে যাই। আবার বন্ধুত্ব। ইচ্ছে ছিল তিতলী নামের কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হলে তাকে মেঘ বলেছে যাবো যাবো বইটি উপহার দেব। তিতলীকে মনের কথা জানাই। সে ইচ্ছে পূরনের সুযোগ দেয়। তবে মেঘ বলেছে যাবো যাবো বইটি তার কাছে থাকায় সে অন্য বই দাবী করে। আমি তার জন্যে ‘তেতুল বনে জোছনা’ বইটি কিনি। বইয়ের মলাটে লিখে দেই সেই কবিতাটি,
তেতুল বনে উঠেছে জোছনা আবার নতুন করে. . . .

কবিতাটি তিতলী নিশ্চই পড়েছিল। কোন এক অজ্ঞাত কারনে তিতলী আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কবিতা পড়ে তিতলীর অনুভূতি জানা আর হয়ে ওঠেনি। অনেক কাল পরে তিতলীর সাথে আমার হঠাত্‍ দেখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে। প্রথম এবং শেষ দেখা। ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই অবাক হই। অনেক কথার ভীড়ে হারিয়ে যায় আসল কথাটি। কবিতার কথা আর জিজ্ঞেস করা হয়না। একসময় হুট করেই তিতলীর কাছ থেকে বিদায় নেই। ফিরে আসার সময় হঠাত্‍ মনে হয়,তিতলীর মুঠোফোন নম্বরটা চাই. . . . . .

অনেক কিছু ভেবে আর চাওয়া হয়ে ওঠেনা। কিছু ইচ্ছে অপূর্ন রেখে দিতে হয়। আবারো হয়তো আমাদের দেখা হবে,চলমান বাস্তবতায়,ঢাকা শহরের ব্যস্ত কোন রাস্তায়. . . .

তৃতীয় এবং সর্বশেষ তিতলী ছিল আমার চেয়ে বয়সে একবছরের বড়। নায়িকা টাইপ চেহারা। চোখে মুখে twilight এর বেলা বেলা একটা ভাব। খুব সাধারন ভাবে দেখেই বোঝা যায় এই মেয়ে ভীষন অহংকারী হবে। যার কাছে ছেলেরা কাগজের নৌকার মত। একটি গেলে খুব সহজেই আর একটি চলে আসবে। এক প্রকার ভয়ে ভয়েই তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। একসেপ্ট ও করে। পরে জানতে পারি সে সে বাংলাদেশের মেয়েদের সবচেয়ে নিয়মতান্ত্রিক এবং আক্ষরিক অর্থে সেরা কলেজের অধিনায়ক। বিশাল ব্যপার। পার্ট থাকা স্বাভাবিক। আমি কবি মানুষ। ফেসবুকে তখন ছ্যাঁকা খাওয়া স্ট্যাটাস দেয়ার কারনে বন্ধু এবং পরিচিত মহলে প্রচুর টীজ খাই। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার সাথে কথা বলার দুঃসাহস করি। টুকটাক কথা হয়। হায়,হ্যালো পর্যায়ের। আমার চ্যাটের রিপ্লাই দেয় এটাই আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়।মেয়েটাকে যতটা অহংকারী ভেবেছিলাম ততটা না। কিছুটা শান্ত শিষ্ট কিছুটা চঞ্চল মেয়ে। ততদিনে আগের দুই তিতলী কারো সাথে আমার যোগাযোগ নেই। নতুন এক তিতলী,নতুন এক অনুভূতি। হঠাত্‍ করে মনে হয় এই সেই তিতলী যার প্রতিচ্ছায়া আমি মেঘ বলেছে যাবো যাবো বইতে পাই। এই প্রথম মনে হয় গল্পের কোন চরিত্রকে আমি বাস্তবে দেখছি। হুমায়ূন আহমেদ এই মেয়েকে দেখলেও হয়তো তাই বলতো। তিতলী আমার বড় হওয়ার সুবাধে আপু ডাকতে হয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমরা একটা নির্দিষ্ট কম্যুনিটির অর্ন্তভূক্ত হওয়ায় সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্ক মেইনটেইন করতে হয়। তিতলী আপুর সাথে সম্পর্ক ভালোই হয়। মানুষকে কাছে টানার এক দারুন ক্ষমতা তার আছে। আর হয়তোবা এজন্যেই কলেজ জীবনে সে কলেজ অধিনায়ক হবার মত সম্মান টা পেয়েছে। তিতলী আপুর সাথে যত সহজে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে তত সহজেই তা ভেঙে যায়। প্রথম প্রথম তাঁর ওয়ালে কবিতা পোষ্ট করতাম। যেখানে তুমুল কমেন্টস এ আমরা মেতে উঠতাম। এরপর কোন এক ছুটিতে এসে দেখি তিনি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই। কারন কিছুটা অজ্ঞাত কিছুটা অনুমেয়।

অনুমেয় কারন গুলোকে কল্পনা স্তরেই রেখে দিয়েছি। আমি আর এর কারন ঘাঁটাতে যাইনি। কিছু রহস্য অমীমাংসিত থেকে যাওয়াটাই ভালো। এর অনেক কাল পরে একটি অনুষ্ঠানে তিতলী আপুর সাথে আমার দেখা হয়। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসে মাঝামাঝি বাকরুদ্ধ এই আমাকে অবাক করে দিয়ে তিতলী আপু কৌতুহলের সুরেই জিজ্ঞেস করে, ক্যামন আছো কবি? আমাকে চিনতে পেরেছো?
তিতলীদের চিনতে অসুবিধা হয়না। হুমায়ূন আহমেদ তৈরি তিতলী উপন্যাসের কালি আর পাতাকে ছাড়িয়ে জীবন্ত হয়ে আছে এই বাংলার আকাশে বাতাসে। প্রতি পূর্নিমায় তিতলীরা জোছনা বিলাস করে। পাশে থাকে নতুন কেউ। আর তিতলী প্রেমী কবিরা লিখে যায় আপন মনে,

তেতুল বনে উঠবে জোছনা আবার নতুন করে
সেই জোছনা বিলিয়ে দেব তিতলী তোমার তরে
জোছনা হয়ে জড়াবো তিতলী তোমার এলো চুলে
ছোছনা ভরা এই লগনে খোঁপা রেখো খুলে. . . . .


অস্বচ্ছ জোছনার আবছায়া মায়াবী আলোয় তিতলীরা খোপা খুলে রাখে কিনা,মাঝেমাঝে জানতে ইচ্ছে. . . . .
(উদাসী কবি)

নিষিক্ত প্রভাতে..

 

নিষিক্ত প্রভাতে



আমাকে নতুন কিছু খুঁজে বের করতে হবে! এমন কিছু, যেটা একদম নতুন। মাঝে মাঝেই ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গে যায়, বুকটা ব্যথা করে ওঠে আর আশেপাশের সব অচেনা মনে হয়। বারান্দা দিয়ে হলুদ রোদ অল্প তাপে গায়ে এসে লাগে, আমি মশারীর ভেতর বসে অনেকটা সময় পার করে দেই। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। ভাবতে থাকি, আমাকে কি যেন খুঁজে বের করতে হবে! নতুন কিছু! অতীত ঘেঁটে কিছু একটা মেলানর চেষ্টা করি। কিন্তু সেটা যে কি...

একসময় খুব ক্যারাম খেলতাম আর প্রচ্ছন্ন গর্বে চেয়ে দেখতাম আশে পাশের কোন বন্ধুই ক্যারাম খেলায় পারছে না আমার সাথে। এমন কি বড়রাও। আর ছোট কাকু যে কিনা বরিক পাউডার দিয়ে সরল রেখা টেনে আমাকে প্রথম খেলা শিখিয়েছিল, সেই ছোট কাকুও আমার কাছে বারে বারেই হেরে যাচ্ছে দেখে আমি যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাবে মুখ গোমড়া করে রাখতাম সারা-বেলা। তখন ২ টাকা করে, রাস্তার ওপাড়ের ক্লাবে ক্যারাম খেলা হতো। ক্লাস এইট আসলে নিয়মিত ক্লাবে যাওয়ার জন্য তেমন ভালো সময় না। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া “রবিন”রা এলো। চশমা পড়া ছেলেটা যে এক সপ্তাহের মাঝে বোর্ড আর তাল গাছ মিলিয়ে মোট নয়বার আমাকে হারিয়ে দেবে তা বুঝি নি। তাও আবার ৩বার নীলে হেরেছিলাম। আমার স্মৃতি শক্তি খুবই দুর্বল, মুখস্থ করতে পারতাম না বলে ইসলাম শিক্ষা আর সমাজে বরাবরই কম নম্বর পেতাম, কিন্তু ভোরের হালকা তাপে হতবাক আমি দেখতে থাকি, রবিনের স্মৃতিটা বেশ অমলিন হয়ে আছে। এই এতো দিন পরেও...

এক দুপুরে আম্মু কেঁদে কেঁদে বলেছিল, “খোকন, রবিন আর নেই, এই মাত্র খবর এলো মারা গিয়েছে!” কি আশ্চর্য রবিন সাত দিন ধরে হসপিটালে ছিল, আম্মু-আব্বু দু দিন পর পর ওকে দেখতে গেলেও আমি একবারও দেখতে যাইনি। হাতের ভেতর লাল রঙের গুটিটা ধরে বসে থাকতাম বিকেল পর্যন্ত “এবার রবিন এলে ওকে আমি এমনিতেই রেডটা দিয়ে দেব আর রেড কভারও দিতে হবে না” রবিন আর আসে নি কোন দিন! সব মনে পড়ে যায়...

এরপর আমি আর কোন দিন ক্যারাম বোর্ড খেলেছি বলে মনে পড়ে না। সূর্যের আলো গায়ে এসে পড়তে থাকে আমিও বসেই থাকি। মাথার উপরে ফ্যানটা শোঁ শোঁ করে ঘুরে চলছে। হঠাৎ তরস্বিনীকে মনে পড়ে যায় নাকি অন্য সব চিন্তারাই অযাচিত ভাবে তরস্বিনীর ভাবনা থেকে আমাকে খানিক ফিরিয়ে রাখে, আমি এবার তা মেলানর চেষ্টা করতে থাকি। এই তো সামনে তরস্বিনীর বিয়ে! কিন্তু এটা অতোটা ইম্পরট্যান্ট না! গুরুত্ববহ হচ্ছে, আমাকে অবশ্যই নতুন কিছু একটা খুঁজে বের করতে হবে! নতুন কিছু একটা! কিন্তু সেটা যে কি...
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে...


অনেক সবুজের প্রান্তে তুমি থাকো একাকী
আমি ধূসর ধূসর হয়ে জেগে থাকি,
অনেক মানুষের ভিড়েও তুমি থাকো একাকী
আমি অনেক আশা নিয়ে বসে থাকি।


(শিরোনামহীন)

শূন্য নিশি

 

শূন্য নিশি




রাতের আকাশ, শূন্য উঠান, নিশি মেঘের বাণ,
হাস্না হেনা শুনছে জেগে, জোছনা পালার গান।

তারার দেশে, ঘুম আবেশে, রাত্রি জেগে রয়,
ঘুম পাড়ানি হালকা বাতাস, মৃদু সুরে বয়।

চাঁদের প্রেমে, আঁধার নামে, উদাস মনের ঢেউ,
নদীর ধারে, কাশবনে আজ, একলা বসে কেউ।

রাতের নদী, নিরবধি, ঢেউ খেলে তার জলে,
চাঁদের আলোয়, অবুঝ মনে, দুঃখ পাহাড় ঢলে।

তন্দ্রা মোহে, আচ্ছাদিত, শুকতারা সাম্পান,
রাতের বুকে, মুখ লুকিয়ে, রোদের অভিমান।

চাঁদের সাথে আড়ি আমার, অন্ধকারে ফেরা,
শূন্য নিশি, দেয়না স্বপন, ঘুমের কাঁথা ছেড়া।

শেষ ট্রেনে আজ ফিরছি বাড়ি, শুন্য তেপান্তর,
শূন্য নিশি, আমার চোখে বাঁধবি কি তুই ঘর...

রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১২

ভালবাসায় মনোনিবেশ


ভালবাসায় মনোনিবেশ

যদি আমার তরে তোমার হৃদয়
করো ভালবাসায় মনোনিবেশ;
তবে দূর করো আজি মনোবেদনা
জাগুক হৃদয়ে স্বপ্নীল মনোবাসনা।


পশ্চাতে ঠেলে দাও নির্ভয়ে পুরোনো
হৃদয়ের সবটুকু মান-অভিমান;
তোমার প্রতি বাড়বে মম মনোধিকার
ভালবাসা আজি দু’জনার সমোধিকার।

করো চরিতার্থ নিশীতে স্বপ্নালোকের
মাঝে তোমার শত কামনা-বাসনা;
তোমার তৃষায় দূরীভূত হোক বেদনা
জাগুক যুগল মনে ভালবাসার চেতনা।


স্বপ্নের বিভোরে খুলে দাও তোমার
অবরুদ্ধ করা তমাট মনোমন্দির;
রাখ অটুট চিরতরে ভালবাসার মনোবল
ঘুচে যাক দুঃখ-ঝরুক চোখের নোনাজল।

শীতল করো মন ভালবাসায় রাঙ্গিয়ে
জীবনের গদ্যে-পদ্যে হৃদয় মনোরঞ্জন;
প্রেম যেন না হয় মিছে শুধু মরীচিকা
স্বপ্ন যেন না হয় প্রেমহীন বিভীষিকা।

সব মেঘ গর্জনে আমি রইবো তোমার পাশে

 

সব মেঘ গর্জনে আমি রইবো তোমার পাশে
 

আজ দুইদিন ধরে পৃথিশার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি । ওর সামনে পড়তে চাচ্ছি না । কেমন জানি একটা অস্বস্তি খেলা করছে বুকের ভিতর ।
কি সহজ সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল ওর সাথে আর এখন কেমন জানি হয়ে গেল । হয়তো কিছুই হয় নি কিন্তু নিজের কাছে কিছুতেই সহজ হতে পারছি না । স্যার ঢোকার পরপরই ক্লাস রুমে ঢুকেছি তাই পৃথিশা কথা বলার সুযোগ পায় নি । এখন স্যার ক্লাস রুম থেকে বেরোনোর সাথে সাথে বের
হয়ে যেতে হবে যাতে পৃথিশা আমাকে ডাকার সুযোগ না পায় । কিন্তু যেমনটি ভাবলাম তেমনটি হল ।
ক্লাস রুম থেকে বের হতে যাবো ঠিক এমন সময়ই পেছন থেকে ডাক শুনতে পেলাম
-এই আবির । দাড়া বলছি ।
পৃথিশা ডাকছে । ডেকে যখন ফেলেছে দাড়াতেই হল । আমার সামনে এসে বলল
-মোবাইল হারিয়ে ফেলছিস ?
-মোবাইল হারাবো কেন ?
-কাল আর পরশু মিলে কত বার ফোন দিয়েছি ?
আমি হিসাবটা জানি । পরশু দিন থেকে ও কম করে হলেও সত্তর বার ফোন দিয়েছে । মেসেজও পাঠিয়ে অনেক গুলো ।
আমি ধরি নি ।
বলতে গেলে ধরতে পারি নি । অস্বস্তির জন্য ।
-সাইলেন্ড ছিল তো বুঝতে পারি নি ।
-পরে তো দেখেছিস । ব্যাক করিস কেন ?
-আসলে ........
-থাক মিথ্যা কথা বলতে হবে না । আমি দুদিন ধরে দেখছি তুই আমাকে এড়িয়ে চলছিস । কারনটা বলবি ?
-কই না তো এড়িয়ে চলছি না তো । এড়িয়ে চলবো কেন ? আশ্চর্য ।
-আমার সাথে মিথ্যা কথা বলার ট্রাই করিস না । এখন পালাচ্ছিলি কেন ?
-পালাবো কেন আশ্চর্য ?
-আমি তোর বিহেবিয়ার খুব ভাল করে জানি । তুই যখন কিছু লুকাতে চাস তখন তুই কথার শেষে বারবার আশ্চর্য লাগাস । আর তোর নাক ঘামতে থাকে ।
কথা সত্য । নাকে হাত দিয়ে দেখলাম সত্যি নাক ঘামতেছে ।
-না সত্যি এখন আমার একটা জরুরী কাজ আছে । এখনই যেতে হবে ।
মনে হল না যে পৃথিশা আমার কথা বিশ্বাস করেছে । বলল
-ঠিক আছে যা । তবে বিকাল বেলা দেখা করবি ।
আমি বলতে যাচ্ছিলাম টিউশনি আছে কিন্তু আমার বলার আগেই পৃথিশা বলল
-আমি জানি আজ তোর টিউশনি নাই ।
তারপর কি মনে হল পৃথিশা আমার আর একটু কাছে এসে দাড়াল । আমার হাতটা ধরে বলল
-আমার হাত ছুয়ে কথা দে যে দেখা করবি । বল ।
আমি অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলাম ।
ওর চোখের দিকে তাকাতেই অস্বস্তিটা আরো বেড়ে গেল । কি গভীর চোখেই না ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে । এই দৃষ্টিটা আমার একদমই পরিচিত নয় ।
-আচ্ছা আমি কথা দিলাম । আসবো ।
পৃথিশা ক্লাস রুমের ভিতরে চলে গেলো । আমি পালালাম ওখান থেকে ।

বলতে গেলে পৃথিশা আমার সব থেকে ভাল বন্ধুদের একজন । একজন বলছি কেন ও ই সব থেকে ভাল বন্ধু আমার । ওর সব থেকে যে দিকটা আমার ভাল লাগে সেটা ও সব কিছু সোজা সুজি বলে । কোন ঘুরিয়ে পেচিয়ে না । একজনকে ওর পছন্দ না সরাসরি বলবে যে পছন্দ না । কথা ঘোরাবে না । আর ও কোন কিছুতে লুকোছাপা করতো না । একটু এক গুয়ে । যা একবার বলবে তা করবেই ।
এমন একটা মেয়ের সাথেই ছিল আমার বন্ধত্ব । ওর সাথে সময় বেশ ভালই কাটছিল । আমাদের সম্পর্কটা বেশ সহজ আর স্বাভাবিক ছিল । আমরা একসাথে পড়তাম খেতাম ঘুরতাম গল্প করতাম । কি চমৎ‍কারই না দিন কাটছিল !
কিন্তু সব কিছু কেমন পরিবর্তন হয়ে গেল দুদিন আগে । দুদিন আগে ওর সাথে সোঁনার গায়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম । আমাদের প্লান ছিল বিকালের মধ্যেই ফেরত্‍ আসবো । সোঁনার গা দেখার পর আমরা পাশের একটা গ্রামের পথ ধরে হাটছিলাম ।
সত্যি বলতে ওর সাথে হাটতে খুব ভাল লাগছিল । পৃথিশাকে হাসি খুশি লাগছিল । কিন্তু হঠাত্‍ ওর মুখটা কালো হয়ে গেল । আমি বললাম
-কি হল ? তোর মুখটা ওমন কেন হয়ে গেল কেন ??
ও আকাশের দিকে ইশারা করে বলল মেঘ জমছে ।
-তো কি হয়েছে ? আমরা গ্রামের কোন ঘরে আশ্রয় নিয়ে নেবো । সমস্যা কি ?
-না না চল । জলদি চল ।
-কেন ? দেখ না কি চমৎ‍কার একটা আবাহাওয়া । আর একটু থাকি না ?
কিন্তু পৃথিশার চেহারায় কেমন জানি একটা অস্বস্থিরতা দেখতে পেলাম । ও বারবার বলতে লাগল
-চল আবির । প্লিজ চল ।
আর থাকা গেল না । ওকে নিয়ে রওনা দিলাম । কিন্তু এতো দ্রুত সারা আকাশ কালো হয়ে গেল যে আমরা খুব বেশি যেতে পারলাম না । পুরো আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল । আর বিদ্যুৎ‍ চমকাতে লাগল । বাধ্য হয়ে একটা বড় বটগাছের নিচে দাড়াতে হল ।
একটু পর খুব জোড়ে বিদ্যুৎ‍ চমকাতে লাগলো । আমি অবাক হয়ে দেখলাম পৃথিশা কেমন জানি ভয় পাচ্ছে । প্রতিটা বর্জ্যপাতের সাথে ওর চেহারায় কেমন একটা ভয়ে চিহ্ন দেখা দিচ্ছে । বাচ্চা মেয়ে মত ভয়ে কুড়রে উঠছে ও ।
আমি ওর হাত ধরলাম ।
-কি হয়েছে পৃথু ? এমন করছিস কেন ?
ঠিক তখনই খুব জোড়ে বাজ পড়ল । পৃথিশা এতোই ভয় পেলো যে আমাকে জড়িয়ে ধরল । এতো জোড়ে জড়িয়ে ধরল যে আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগা আরাম্ভ করল ।
প্রতিবার বাজ পড়ছিল আর ও আরো একটু একটু করে আমাকে জড়িযে ধরছিল । কি করবো ঠিক মাথা কাজ করছিল না । তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম যে ও বর্জ্যপাতে ভয় পাচ্ছিল । আমার জড়িয়ে ধরে ও আশ্রয় খোজার চেষ্টা করছিল । যতক্ষন আকাশে মেঘ ডাকছিল ও আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল । তবে শেষের দিকটা ওর ভয় পাওয়ার মাত্রটা একটু কম ছিল ।
মেঘ ডাকা কমে গেলে আমরা ঢাকা দিকে ফিরে আসি । পুরো রাস্তা ধরে ও এক দম চুপ করে থাকল । আমার হাতটা একটা বারের জন্যও ছেড়ে দেয় নি । মনে হচ্ছিল যেন বাচ্চা একটা মেয়ে । কোন কিছু দেখে ভয় পাচ্ছে । তাই আমার হাত ধরে রেখেছে ।
ওকে হলে পৌছে দিলাম কিন্তু আমার মনের ভিতর একটা অস্বস্তি রয়েই গেল । বার বার ঐ সময়ের কথা আমার মনে পরছিল । পৃথিশা কিভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল ।
এই অনুভুতিটা আমি কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছি না । তাই বিকেল বেলা যখন ওর সাথে দেখা হল খুব অস্বস্তি লাগছিল ।

আমি বসে ছিলাম জারুল গাছটার নিচে । পৃথিশা কেমন এলোমেশো পা ফেলে এগিয়ে আসছিল । কিছু একটা ভাবছিল । কাছে আসতে ওকে বললাম
-কেমন আছিস ? কেন জানি ওকে তুই করে বলতে একটা কষ্ট হচ্ছিল ।
-ভাল । পৃথিশা হাসল ।
আমার কাছে এসে বসল । কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকল । একসময় বলল
-কিছু বলছিস না কেন ?
-কি বলব ? তুই না বললি কি যেন বলবি ।
পৃথিশা আরো কিছুক্ষন চুপ করে থাকল । তারপর হঠাৎ‍ করে বলল
-তুই খুব অবাক হয়ে ছিলি না ?
- হুম ? কি বললি ?
-ঐ দিন যে তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম । অবাক হয়েছিলি ?
-একটু হয়েছিলাম ।
-এই জন্য আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলি ?
-পালাবো কেন ? আশ্চার্য !
পৃথিশা হেসে ফেলল ।
-তুই আসলেই একটা গাধা । ঠিক মত মিথ্যা কথাও বলতে পারিস না ।
আমি কিছু বললাম না । ও আবার বলল
-জানিস আবির আমি মেঘ ডাকা খুব ভয় পাই । সেই ছোট বেলা থেকে । এতো ভয় লাগে আমার । এই জন্য তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম । ভয়ে ।
-ঠিক আছে সমস্যা নাই ।
-জানিস আগে এতো ভয় পেতাম । মাঝে মাঝে তো অজ্ঞান হয়ে যেতাম ।
-এতো ভয় কেন পাস ?
-জানি না ।
-ওকে সমস্যা নাই । চল কিছু খাওয়া যাক ।
আমি উঠে দাড়ালাম ।
-আবির বস । আমি এখনও কথা শেষ করি নি ।
আমি আবার বসে পড়লাম । ও বলল
-আমি সারা জীবন মেঘ ডাকাকে এতো ভয় পেয়েছি তোকে কিভাবে বোঝাবো ? কিন্তু সেদিন যখন তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম প্রথম প্রথম খুব ভয় লাগছিল । কিন্তু একটা সময় এসে আমি লক্ষ্য করলাম আমার আর ভয় লাগছে না । আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম । তোমার বুকে আমি নিজেকে এতো নিরাপদ বোধ করছিলাম যে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না ।
পৃথিশা চুপ করে থাকল কিছুক্ষন ।
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।
-আবির ?
-হুম ।
আমি পৃথিশার দিকে তাকালাম । ওর ঠোট দুটো কাঁপছে । কিছু যেন বলতে চাইছে । কিন্তু বলতে পারছে না । ওর চোখ দুটো নির্বাগ চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখের ভিতে পানি জমতে শুরু করেছে ।
আমি হঠাৎ‍ করে বুঝে ফেললাম ও কি বলতে চায় ।
হঠাৎ‍ করে সেই অস্বস্তিটা চলে গেল ।
ওখানে কেমন যেন একটা ভাল লাগা আমার পুরো মন কে স্পর্শ করল । ওকে বললাম
-তোকে কিছু বলতে হবে না ।
ওর হাত দুতো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম
-আমি সব সময় তোর পাশে থাকবো ।

পৃথিশার চোখ দিয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ল । আমি সেই অদ্ভুদ ভাল লাগা অনুভূতি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।


অননিতার গল্প

 

অননিতার গল্প

অননিতা যখন এস্টেটার গেটের সামনে দাড়াল তখন বিকেল ছুই ছুই করছে । রোদ আছে কিন্তু রোদের তেজ অনেকটা কম । অবনিতা নামটা আবার পড়ল ।
মামুন এস্টেট । অননিতা আরো একবার ঠিকানা টা মিলিয়ে নিল । হুম এটাই সেই জায়গা ।
গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই একটা লোক এগিয়ে এল । পোষাক দেখে মনে হল দারোয়ান হবে হয়তো ।
-কার কাছে যাইবেন ?
-এখানকার এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মাহাফুজ করিম , ওনার বাংলাটা কোন দিকে বলতে পারেন ?
দারোয়ান গোছের লোকটা প্রথমে কি যেন ভাবল । কিছু যেন মনে করার চেষ্টা করছে ।
অননিতার ভয় হল হয়তো লোকটা বলবে মাহাফুজ করিম নামে এই চা বাগানে কেউ চাকরী করে না ।
-আবির স্যারের কতা বুলছেন ?
অননিতার জানে পানি এল । এতো দিন পর আবিরকে খুজে পাওয়া গেল ।
-হ্যা । আবির । আমি ওর ওয়াফ । মানে স্ত্রী ।
লোকটা হাসল ।
-মেমসাব ওয়াপের মানে জানা আছি । লোকটা আবার হাসল ।
-আপনি একটু খাড়ান আমি ভ্যান লিয়ে আসছি । সারের বাংলো একে বায়ে শেষ মাথায় ।
লোকটা বেশ সাহায্য করল । নিজেই ভ্যান নিয়ে এল । ব্যাগটাও অননিতাকে তুলতে দিলো না । বলল
-আপনে আবির সারের ওয়াইপ । আপনাকে ব্যাগ তুলবেন আর হামি চাইয়ে চাইয়ে দেখমু তা হবি না ।
ভ্যানটা যখন এস্টেট টার মাঝ খান দিয়ে যাচ্ছিল অননিতা চারিপাশে তাকিয়ে দেখছিল । চারি পাশে কি শান্তির একটা ছায়া রয়েছে । আবিরের সব সময় এমন একটা চা বাগানে চাকরি করার স্বপ্ন ছিল । ওর আগেই বোঝা উচিত্ ছিল । তাহলে আরো আগে ওকে খুজে পাওয়া যেত ।
গত কাল তুহিন যখন ফোন করে আবিরের ঠিকানাটা দিল ওর প্রথমে বিশ্বাসই হয় নি । প্রায় দুইমাস ধরে আবির গায়েব । কোন খোজই পাওয়া যাচ্ছিল না ।
অননিতা কোথায় খোজ করে নি ? প্রথমে ভেবেছিল হয়তো আবির ওর গ্রামের বাড়ি গিয়েছে । কিন্তু না । ওখানে সে যায় নি । তারপর ওর যত বন্ধুবান্ধব আছে সবার বাসায় ও গিয়েছিল । সম্ভাব্য সব জায়গায় ও আবির কে খুজেছে । কিন্তু আবির যেন একেবারেই হাওয়া হয়ে গিয়েছিল ।
প্রথম প্রথম অননিতার মনে হত আবির হয়তো ওর সাথে ফান করছে । কিংবা ওর উপর অল্প স্বল্প রাগ করেছে । রাগ পড়ে গেলেই চলে আসবে । কিন্তু এক সপ্তাহ পরেও যখন আবির এল না তখন অননিতা খুব টেনশনে পড়ে গেল ।
-এই যে আবির সারের বাংলু ।
অননিতা ভ্যান থেকে নেমে পড়ল । লোকটাকে টাকা দিতেই লোকটার ৩২টা দাঁত আনন্দে বের হয়ে গেল । বাংলোর সিড়ি পর্যন্ত ওর ব্যাগ পৌছে দিল ।
বাংলোটা বেশ সুন্দর । সিমসাম ছোট । অননিতার মনটা ভাল হয়ে গেল । একে তো আবিরকে পাওয়ার আনন্দ তার উপর এতো সুন্দর একটা পরিবেশ । অননিতার মনে হল আজকের দিনটা ওর জন্য খুব আনন্দের ।
বাংলোর মেইন দরজা খোলাই ছিল । ওর সারা শব্দ পেয়ে একটা বুড়ো মত লোক বেরিয়ে এল ।
-কাকে চান ? লোকটা এই প্রশ্নটা করেই খানিক চুপ করে থাকল । ওর চেহারাটার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন । একটু পর বুড়োর মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল । বলল
-অনেকটা পথ এসেছেন । ক্লান্ত নিশ্চয় ? আমার সাথে আসেন ।
-আমি আসলে আবির .......
অননিতা বলতে গেল । বুড়ো মত লোকটা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কে । আমি স্যারের বাবুর্চি । স্যারের সব দেখাশুনা আমিই করি । স্যারের আসতে আরো কিছু সময় লাগবে । আপনি ফ্রেস হয়ে নিন । এইটা স্যারের রুম ।
অননিতা আর কোন কথা বলল না । তবে একটু অবাক হল । বুড়ো ওকে চিনল কিভাবে ? যাক পরে এক সময় জিজ্ঞেস করতে হবে ।
অননিতা আসলেই অনেক ক্লান্ত ছিল । সারাটা দিন জার্নির উপরই ছিল । তুহিনের কাছ থেকে খরব পেয়ে ও আর দেরি করে নি একটুও । কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই চলে এসেছে । ওর কেবল মনে হচ্ছিল যে কোন ভাবেই আবিরের কাছে ওকে যেতে হবেই ।
ফ্রেস হবার পর ওর ক্লান্তিটা একটু কম মনে হল । বিছানার এসে গা এলিয়ে দিল ।
চোখ যখনই সিলিংয়ের দিকে গেল একটা ধাক্কার মত খেল ও । পুরো বিছানার সমান বড় একটা পেইন্টিং সিলিংয়ে আটকানো । যেই বিছানায় শোবে সরাসরি চোখ পরবে পেইন্টিং টার দিকে । অননিতা চমকালো । কারন পেইন্টিংটা ওর নিজের ।
আবির সব সময় ঘুম থেকে উঠে ওর মুখ দেখতে চাইতো । ও বলত আমি যাকে সব চেয়ে ভালবাসি প্রতি দিন যেন তার চেহারা দেখেই আমার ঘুম ভাঙ্গে । এখানেও যেন ঘুম ভাঙ্গার পর আবির ওকেই দেখতে পায় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে । আর এই জন্য বুড়ো বাবুর্চি ওকে চিনতে পেরেছে ।
অননিতা একটু চোখ বুজল । আজ প্রায় দুই মাস পর ও যেন একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারছে ।

অননিতা সব সময় একটু উশৃঙ্খল টাইপের ছিল । সব কিছুতেই ওর যা ইচ্ছা তাই করতো । কারো বাধা শুনতো না । কিন্তু অননিতা সব সময় ওর বাবাকে দেখে ভয় পেত । যদি ওর বাবা ওর কোন কাজেই বাঁধা দিতো না কিন্তু বাবার রাগ কে ও খুব ভয় পেত । তাই যখন ওর বাবা ওর বিয়ের জন্য আবির কে নিয়ে এল অননিতা আপত্তি করার সাহসই পায় নি ।
বিয়ের পর ওরা আলাদা বাসায় উঠে এল । অননিতা আরো আবিষ্কার করল যে আবির খুবই ভাল একটা ছেলে । ও যেন আরো একটু ছাড় পেয়ে গেল । আগে তো বাবা নজর দাড়ি ছিল । তাই কোন কিছু করতে হলে একটু ভয় ভয় করতো । বিয়ের পর সেই ভয়টুকুও রইল না । আবির সারাদিন অফিস করত । সন্ধ্যায় বাসায় এসে ওর সাথে সময় কাটাতো ।
সারা দিনে কোথায় ছিল কি করছিলে এমন কিছুই জিজ্ঞেস করতো না । মোট কথা অননিতা খুব আনন্দেই ছিল । আর একটা ব্যাপার অননিতা খ্যাল করলে আবিরের সঙ্গ ওর ভাল লাগছে । ও যতই বাইরে বাইরে থাকুক অন্য মানুষের সাথে মিশুক , আবিরের সাথে কাটানো সময় গুলো ওর কাছে বেশ মধুরই মনে হত । সব থেকে বড় কথা অননিতা খুব ভাল করে টের পেত আবির ওকে ভালবাসতে শুরু করেছে । ব্যাপারটা অননিতা নিজেও খুব উপভোগ করত ।
এভাবেই ওর দিন গুলো কাটছিল কিন্তু একদিন এর স্বন্দ পতন হল । ঐ দিন অননিতার এক বান্ধবীর বাসায় পার্টি ছিল । বেশ রাতই হয়ে গেছিল । বাসায় আসছিল না দেখে আবির নিজেই পার্টিতে হাজির হয় । অননিতা তখন ড্রিংস করায় ব্যস্ত । আবীব মোটামুটি জোড় করেই ওকে বাসায় নিয়ে এল ।
অননিতা বোধহয় একটু বেশিই ড্রিংস করে ছিল । বাসায় এসেই আবীরের উপর ঝাপিয়ে পড়ল । আবীর কে বলল
-তোমার সাহস তো কম না ! তুমি কোন সাহসে আমাকে নিয়ে আসলে ?
-অননি আমি তোমার হাসবেন্ড । এই অধিকার আমার আছে ।
-হাসবেন্ড মাই ফুট । আমার বাপের অফিসে চাকরী করে আমার বাপের তা খেয়ে এমনকি আমার বাপের দেওয়া ফ্লাটে থেকে তুমি কোন সাহসে আমার উপর অধিকার ফলায় । এক্ষনি তুমি বের যাও আমার বাসা থেকে । আমি তোমার মুখ যেন আর না দেখি ।
অননিতার যদিও হুস ছিল না , তবুও আবীরের কাছে কথা গুলো খুব খারাপ লেগেছিল । ঐ রাতের বেলা ও বাসাতেই ছিল কিন্তু সকাল হতেই ব্যাগ গুছিয়ে ঐ বাসা থেকে বের হয়ে গেল ।
সকালে অননিতার ঘুম ভাঙ্গলে রাত্রের সব কথা ওর মনে পড়ে যায় । ও ভেবে রাখে যে সন্ধ্যায় আবীর যখন অফিস তখন অফিস থেকে আসবে তখন ওকে সরি বলবে । বেচারা নিশ্চই অনেক কষ্ট পেয়েছে ।
কিন্তু যখন সন্ধ্যার পরেও যখন আবীর যখন বাসায় আসল না , অননিতার কেমন যেন একটা ভয় করতে লাগল । ওর ভয়টা সত্যি হল যখন বাড়ির কাজের লোকটা বলল যে আবীর সকাল বেলা বড় একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছে ।
অননিতা ভয়তে ওর বাবাকে কিছু বলতেও পারছিল না । ঠিক সাত দিন পর অননিতার বাবা ওকে ফোন করল । ফোনে বলল
-কি ব্যাপার আবীর কই ?
অননিতা কিছু বলতে পারল না ভয়তে । ওর বাবা বলল
-ও আজকে রিজাইন করেছে । ওর মোবাইল ও অফ পাচ্ছি । কি হয়েছে বলত ?
অননিতা বলল
-আব্বু ও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ।
-কেন বাড়ি ছেড়ে যাবে কেন ?
অননিতা বুঝল আর চুপ করে থেকে লাভ নেই । আস্তে আস্তে সব বলে দিল । সব শুনে অননিতা বাবা খুব রাগ করল । অননিতাকে বলল
-তুই আবীরকে খুজে কে খুজে আনবি তারপর আমার সামনে আসবি ! এর আগে আমি তোর মুখ দেখতে চাই না ।
তারপর থেকেই অননিতা ওকে পাগলের মত খুজে বেড়াচ্ছে ।

প্রতিদিনই অফিস থেকে বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । আবীর চায় আরো ব্যস্ত থাকতে । সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওর সময়টা ভালই কেটে যায় । কাজের মধ্যে ডুবে থাকে । কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে আর সময় কাটতে চায় না কিছুতেই । কেমন যেন সব কিছু থেমে যায় ।
ও ভাবে নি যে অননিতাকে ও অতো খানি মিস করবে ? মাঝে মাঝে মনে হয় ঐ দিন ওভাবে চলে না আসলেও তো হত । অননিতা ড্রাঙ্ক ছিল । কি বলতে কি বলেছে ! কিন্তু কথা গুলো ওর ঈগোতে বড় লেগেছিল ।
অননিতার উপর প্রচন্ড এক অভিমান জন্মে ছিল বুকে । যাকে ভালবাসা যায় তার উপর তো অভিমান করা যায় ।
সন্ধ্যার কিছু পর কাজ শেষ হল । সারা দিন অনেক পরিশ্রম হয়েছে । বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দিতে হবে । আবীরের কাছে এই চা বাগানের চাকরীরা অনেক আকর্ষনীয় ছিল । আবীর অনেক দিন থেকেই এরকম একটা চাকরীর চেষ্টাই ছিল । ইচ্ছা ছিল এরকম একটা চাকরী হলে অননিতাকে নিয়ে চলে আসবে । তারপর দুজনে মিলে খুব সুন্দর একটা জীবন কাটাবে ।
কিন্তু অননিতাকে ছাড়া এই আকর্ষনীর চাকরীটা মোটেই খুব বেশি আকর্ষনী মনে হচ্ছে না । এই চা বাগানের সৌন্দর্য আবীরকে খুব আনন্দ দিতে পারছে না । আবীর খুব ভাল করে বুঝতে পারছে ওর সামনের দিন গুলো আরো কষ্ট নিয়ে আসবে ।
ও বাসার দিকে রওনা দিল । ইদানিং আর একা একা বাইরে বেশি ভাল লাগে না । নিজের শোবার ঘরটাই ওর কাছে এখন ভাল লাগে । যখন ও নিজের বিছানায় শোয় তখন ও অননিতা মুখটা দেখতে পায় ।
কি যে ভাল লাগে ওর ! বাসার কাছে চলে এসেছে এমন সময় ওর ফোনটা বেজে উঠল ।
তুহিন ফোন করেছে ।
-বল ।
-দোস্ত একটা কাজ করে ফেলেছি ।
-কি করেছিহ ?
-অননিতাকে তোর ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি ।
আবীর কিছু বলতে গিয়েও বলল না । তুহিন আবার বলল
-প্লিজ রাগ করিস না । ও তোর ঠিকানা পাগলের মত খুজতেছিল । খুব অস্থির হয়ে গিয়েছিল । আমি আর না দিয়ে থাকতে পারি নি । প্লিজ কিছু মনে করিস না । আর কত দিন ওর উপর রাগ করে থাকবি ?
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
ফোন রাখার পর আবীরের কেন জানি একটু আনন্দ বোধ হচ্ছে । ওর মনে হচ্ছে দু এক দিনের মধ্যে অননিতা ওর এখানে চলে আসবে । ওর এই কথা মনে হতেই খুব ভাল লাগতে লাগল ।

আবীর যখন ওর বাংলোতে পৌছিয়ে তখন বেশ অন্ধকার । বাংলোতে কোন আলো জ্বালানো হয় নি ।
-এই সগির মিয়া এতো আলসে হয়েছে ! সন্ধ্যার সময় আলোটাও জ্বালাতে মনে থাকে না । বাংলোর সিড়িতে উঠে বলল সগির মিয়া ! লাইট জ্বালাও নি কেন ? সন্ধ্যার ঘরবাড়ি অন্ধকার কেন ? ঠিক তখনই আলো জ্বলে উঠল ।

আবীর খুব চমকে উঠল । ওর ঘরের চৌকাঠের সামনে অননিতা দাড়িয়ে আছে । কেমন চোখ ছলছল চোখে ।
আবীরের প্রথমে মনে হল ওর হয়তো চোখে ভুল । অননিতা একটুও দেরি করল না সরাসরি ওকে জড়িয়ে ধরল ।
আবীর কোন কথাই বলতে পারল না । কেবল একটা আনন্দের অনুভূতি ওকে ঘিরে ধরল । আবীর ভেবেছিল অননিতা আসবে কিন্তু একেবারে আজকেই আসবে ও ভাবতেই পারে নি ।
একসময় আবীর অনুভব করল যে অননিতা কাঁদছে ।
-কাঁদছো কেন ?
-কাঁদবো না তো হাসবো ? গাধার মত কথা বলবা না ।
আবির হাসলো ।
ফোপাতে ফোপাতেই বলল
-তুমি এমন করে আমাকে কেন কষ্ট দিলে ? আমি কি ইচ্ছে করে ওসব বলেছিলাম । তুমিতো জানতে আমি ড্রাঙ্ক ছিলাম । আমার কথায় এতো রাগ করলে কেন ? কেন এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে এলে ? আমার কথা একবারও মনে পড়ে নি ?
আরো কতশত অভিযোগ !
আবীর কোন কথা বলে না ।
অননিতাকে আরো নিবির করে জড়িয়ে ধরে । ওর বুকের স্পন্দন দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চায় তোমাকে ছেড়ে আর কোন দিন যাবো না । দুরে ছিলাম কিন্তু মনটা তো তোমার কাছেই পড়ে ছিল । কতক্ষন ওরা একে ওপরকে জড়িয়ে ধরেছিল ওদের নিজেদের কোন সময় জ্ঞান ছিল না । সগির মিয়ার কথায় খ্যাল হল ।
-রাতে কি খাবেন স্যার ?

আমাদের অর্পা আর অরন্য..

আমার ছোট বাবা.... অর্পা


আমার ছোট বাবা.... অর্পা

অরন্য  আমার ছোট সোনা বাবা.....
এইত 16 ই জুলাই এল এ পৃথিবীতে....





অভীমান যত মনে সব মুছেদিল ও এসে পৃথিবীতে......
অনেক miss লক্ষি সোনা...

 

আমি বৃষ্টি দেখেছি

আমি বৃষ্টি দেখেছি

নীলুর বৃষ্টি অনেক পছন্দ ছিল । বৃষ্টি হলে আর কোন কথা নাই । ওর মাথায় কি এক অদ্ভূদ চিন্তা ছিল যে বৃষ্টি হলে ওকে ভিজতেই হবে । কোন সময় জ্ঞান নাই । বৃষ্টি মানে ভিজতেই হবে ।
ইনফ্যাক্ট ওকে আমি প্রথম লক্ষ্য করি এই বৃষ্টিতে ভেজা নিয়েই । একদিন ক্লাস করছিলাম । ও আমার পরেই বসে ছিলাম । হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাকল ।
-এই অপু ? এই ?
এমনি চিনতাম ওকে । কিন্তু এর আগে কখনও কথা হয়নি ওর সাথে ।
-এই শোন না !
আমি একটু অবাক হলাম । একটু বিরক্তও । কোন দিন কথা বলি নি । প্রথম কথাতেই তুই ।
-কি ?
-আমার বই আর খাতাটা একটু রাখতো !
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলু বের হয়ে গেল । আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না ! বাইরে ততক্ষনে ঝুম বৃষ্টি আরাম্ভ হয়েছে । একটু পর লক্ষ্য করলাম নীলু বাচ্চা কয়টা ছেলে মেয়েদের সাথে বৃষ্টির ভিজছে । বলতে গেলে নাচা নাচি করছে ।
এতো বড় একটা ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে যে এমন করে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে আমার ধারনার বাইরে ছিল ।

উহু ! নিজের মনকে আবারও একটা ধমক দিলাম । আমি আবারও নীলুর কথা ভাবতে শুরু করেছি । সকালবেলাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে ওর কথা আর ভাববো না । কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ওর কথা আবার ভাবতে শুরু করেছি । আসলে সব দোষ এই হতচ্ছাড়া বৃষ্টিটার । সেই দুপুর বেলা থেকে একভাবে ঝড়েই যাচ্ছে ।
আর আমার কেবল মনে হতে লাগল ঐ বৃষ্টিটা আমাকে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলছে আমি তোমার খুব প্রিয় একজনের খুব প্রিয় ছিলাম ।
আমি চোখ ফিরিয়ে নেই । ঘরের সব জানালা বন্ধ করে দেই । আমি বৃষ্টি দেখবো না । ফুল ভলিউমে টিভি ছেড়ে দেই । বৃষ্টির শব্দও আমি শুনতে চাই না । আমি এমন কিছু করতে চাই না যা আমাকে নীলুকে মনে করিয়ে দেয় । আমি ওকে মনে করতে চাই না ।
কেন মনে করবো ওকে ? যে আমাকে একা রেখে চলে গেছে তার কথা আমি কেন মনে করবো ? আমি মনে করবো না । সোফার উপর বসতে ইচ্ছা হয় না । সবুজ কার্পেটার উপর শুয়ে পড়ি ।
নীলু খুব শখ করে এই কার্পেটটা কিনেছিল । নষ্ট হয়ে যাবে বলে বসার ঘরে এটা বিছায় নি । সোবার ঘরটাতে বিছিয়েছিল । প্রথম যেদিন কার্পেটটা পাড়ে নীলুর আনন্দ দেখে কে !!
বাচ্চা মেয়ে দের মত খুশিতে ওর চোখমুখ আনন্দে ভরে ছিল । আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দেখো না কি সুন্দর লাগছে ! মনে হচ্ছে সবুজ একটা মাঠে চলে এসেছি ।
আমি এখন ভাবছি অন্য কথা । আমি তখন আসসোস করছি এতোগুলো টাকা বেড়িয়ে গেল বলে ! অবশ্য আফসোসের খুব বেশি কারন ছিল না । আমার নিজের টাকা না বাপের টাকা । তবুও নতুন সংসারে এখনও কতকিছু কেনা বাকি ! আগে ব্যাচেলার ছিলাম তাই কোন ব্যাপার ছিল না ।
-কই বল না কেমন ?
-ভাল কিন্তু একটু বেশি বিলাশিতা হয়ে গেল না ?
নীলু মুখ একটু মলিন হল ।

আরে দুর ! যত চাচ্ছি ওকে ভাববো না তত ওর ভাবনা চলে আসছে । আমি সবুজ কার্পেট থেকে বিছানায় উঠে এলাম । ওর কথা কিছুতেই ভাববো না । আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি । ঘুমালে হয়তো ওর ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবো ।

-কি করছ ?
নীলুর কণ্ঠ । কিন্তু ওর কন্ঠ কিভাবে আসবে ? নিশ্চই আমার কল্পনা ।
-কিছু করছি না ।
নীলুর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।
-সত্যি কিছু করছো না ?
-না । তোমার সাথে কোন কথা নাই । তুমি চলে যাও ।
-বাব্ব বাহ আমার উপর রাগ করছ ?
-হুম । রাগ করেছি ।
নীলু আবার হেসে উঠল ।
-হাসছো কেন ?
হাসি মিশ্রিত কণ্ঠ নীলু বলল
-তুমি আমার উপর রাগ করতেই পারবে না । সেই ক্ষমতা তোমার নেই ।
কোন জুটসই জবাব না পেয়ে বলল
-তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল ?
-কই গেলাম ? এই তো আমি তোমার কাছে । তোমার সাথে কথা বলছি ।
-না তুমি বলছ না । তুমি আমার কল্পনা ।
-আচ্ছ ? তাই ?
নীলু আবার হেসে উঠল । বলল
-আচ্ছা তুমি যা বল তাই । এখন চল বাইরে খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু ভিজি ! চল না !
বৃষ্টির কথা উঠতেই আমি ভিজতে গেলাম । কিন্তু নীলুকে কোথাও দেখতে পেলাম । নাম ধরে ডাক দিলাম । কিন্তু ও কোন জবাব দিল না ।
ওর নাম নিতে নিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল । পুরো ঘর কেমন অন্ধকারে ছেয়ে আছে । টিভি চলছিল । এখন বন্ধ । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে তুমুল বেগে । আওয়াজ আসছে । কারেন্ট চলে গেছে বোধহয় ।
বাধ্য হয়েই জানালা খুলে দিলাম । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে ।
আমার নীলুর পছন্দের বৃষ্টি !

ঐ দিন পর নীলু পরপর দুদিন ক্লাসে আসল না । তৃতীয় দিন একটা টিউটিরিয়াল ছিল । ঐ দিন নীলুকে আবার দেখলাম । কিন্তু চেহারার একি অবস্থা ? ও কাছে এসে ওর খাতা পত্র চাইল । দিতে গিয়ে বললাম
- চেহারার একি অবস্থা ? শরীর খারাপ নাকি ?
নীলু শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর ।
বই গুলো নিয়ে ও ঘুরতে যাবে ঠিক এমন সময় ও কেমন জানি দুলে উঠল । আমি না ধরলে হয়তো মাথা ঘুরে পরে যেত । ওর গায়ে তখন আকাশ পাতাল জ্বর ।
-একি তোমার গায়ে তো খুব জ্বর !
নীলু আবার শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর । আমাকে একটু বেঞ্চে বসিয়ে দিবে প্লিজ ।
-তোমার গায়ে খুব জ্বর । এখন বসতে হবে না । ডাক্তারের কাছে চল আগে ।
-এখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে । আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না । তুমি পরীক্ষা দাও ।
-আরে এরকম টিউটিরিয়াল আরো হাজারটা আসবে । আগে ডাক্তারের কাছে চল ।

ওকে একপ্রকার জোর করেই ক্যাম্পাসের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম । টিউটিরিয়াল দেওয়া হল না । ডাক্তারের কাছ থেকে যখন বের হয়েছি এখন ওর অবস্থা আরো খারাপ । কেমন যেন লাগছিল । ওকে এই অবস্থা ছেড়ে আসতে কেন জানি মনে চাচ্ছিল না । ও বলল
-আমাকে একটু হলে রেখে আসবে ?
-হুম । কোন হলে থাকো ?
ও হলের নাম বলল ।
-তোমার রুম মেইট আছে এখন রুমে ?
নীলু একটু হাসল ।
-আছে । অন্তত ১০০ আছে ।
-মানে কি ?
-আমি গন রুমে থাকি ।
-ও মাই গড ! এ অবস্থায় তো তোমাকে গনরুমে রাখা যাবে না । ঢাকায় কোন আত্মীয় আছে তোমার ?
-নাহ ।
-তাহলে ?
-তাহলে কিছু না । আমাকে হলেই রেখে আসো ।
-না । তুমি আমার সাথে চল ।
-কোথায় ?
-আমার বাসায় চল ।
নীলু আমার দিকে তাকাল । কি যেন ভাবল ? তারপর বলল
-তোমার বাসায় সমস্যায় হবে না ? মানে আমি একটা মেয়ে !
-কোন সমস্যা নাই । আমি ফ্লাট ভাড়া করে থাকি ।
ও আর কথা বলল না । অবশ্য ওর সে অবস্থা ছিলও না । নীলুকে বাসায় নিয়ে আসলাম ।
মোটামুটি পাঁচ দিন ওর অবস্থা বেশ খারাপ ছিল । একবার ভাবলাম হাসপাতালে নিয়ে যাই । আবারও ডাক্তার ডেকে আনলাম । পাঁচদিন পর ওর জ্বর ছেড়ে গেল ।
ঐ দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলু রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে বললাম
-কি করছ তুমি ?
নীলু খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-রুটি বানাচ্ছি । দেখছ না ?
-দেখতে তো পাচ্ছি । কিন্তু কেন করছ ?
-আশ্চর্য মানুষ রুটি কেন বানায় ? খাওয়ার জন্য !
-আরে বাবা তুমি কেন করছ ? তোমার শরীর খারাপ । তোমার বিশ্রাম নেওয়ার দরকার । আর কাজ করার জন্য বুয়া তো আছে । একটু পরই চলে আসবে ।
নীলু হাসল ।
-অনেক বিশ্রাম করেছি । আর কত ? তাছাড়া জ্বর নেই ।
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর কপালে হাত দিলাম জ্বর দেখার জন্য । আসলেই জ্বর নেই ।
ওর কপাল থেকে হাত সরিয়ে নেবার সময় ওর চোখে চোখ পড়ল । ঠিক তখনই আমার মনের মধ্যে কেমন জানি একটা অস্বস্তি হল ।
আমি কিভাবে এতো সহজে ওর গায়ে হাত দিয়ে ফেল্লাম ? এই পাঁচ দিনে তো কতবার ওর জ্বর মেপেছি, একবারও এই অস্বস্তিটাতো আসে নি ! তাহলে এমন কেন অস্বস্তি লাগছিল ?
আমার জানা নেই । ওকে ওভাবে রুটি বানানো অবস্থায় দেখে আমার মনে আরো অদ্ভুদ একটা অনুভূতি হল ।
নাস্তা খাওয়ার সময় অনেক কথা হল ওর সাথে । বলা চলে ওখান থেকে আমাদের মেলামেশা শুরু হল । তারপর থেকে ওর সাথে অনেক সময় কাটাতে লাগলাম । আমরা সবকিছু শেয়ার করতাম ।


বৃষ্টির বেগ মনে হচ্ছে বেড়েছে । এরকম বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই । ওকে কিছুতেই ধরে রাখার উপায় ছিল না । বৃষ্টিতে ও ভিজবেই । আমি জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই । বৃষ্টির ফোটা আমার হাতে পড়তে লাগল ।
-এভাবে ভিজলে কি হয় ?
নীলুর কথা যেন আবার শুনতে পেলাম ।
-কিভাবে ভিজবো ?
-তুমি মনে হচ্ছে জানো না ? মনে নেই এই ছাদটাতে আমরা একবার বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম !

আমার এই বাসাটা একে বারে ফ্লাট বললে ভুল হবে । তিন ইউনিটের বাড়িতে বাড়িওয়ালা কেবল এক ইউনিট কোন রকম করে ফেলে রেখেছে । পুরো ছাদটাই বলতে গেলে ফাকা পরে আছে । নীলুর এই ফাকা ছাদটাও অনেক পছন্দ ছিল । ও প্রায়ই আসতো ।
বাচ্চা মেয়েদের মত ছাদে উপর লাফালাফি করতো । একা একা এক্কা দোক্কা খেলতো । আমি হাসতাম কেবল ।
ঐ দিন সকালবেলা আমার বাসায় এসে হাজির । কাঁদে ছোট একটা ব্যাগ । আমি জিজ্ঞেস করলাম
-ব্যাগে কি ?
ও বলল
-শাড়ি । আজ খুব বৃষ্টি হবে । শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজবো আজ ।
কেমন যেন একটু অন্য রকম লাগছিল ওকে । বুয়া আসলেও ওকে বিদায় করে দিল । দুপুরের রান্না ও নিজেই করল । দুপুরের দিকেই বৃষ্টি আরাম্ভ হল । আমি জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি এমন সময় নীলু এসে হাজির । ওকে দেখে একটু অবাক হলাম । এর আগে কখনও ওকে শাড়িতে দেখি নি ।
কালো ব্লাউজের সাথে কালো শাড়ি আর কপালে কালো বড় একটা টিপ । আমি খানিকটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম এক ভাবেই । নীলু একটা কালো পাঞ্জাবী আমার দিকে এগিয়ে বলল
-নাও এটা পর ।
-কার এটা ?
-তোমার জন্য কিনেছি । নাও জলদি পরো এখন । আজ তোমার সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো ।
কালো পাঞ্জাবী পরে বৃষ্টি নেমে পড়লাম । বৃষ্টির ফোটা গুলো কেমন সিরসরে অনুভূতি জাগাচ্ছিল মনে । কালো শাড়ি পরা নীলু আমার আগে আগে হাটছিল । একটা সময় আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরল । আমার দিকে তাকাল গভীর ভাবে ! নীলুর ঐ গভীর দৃষ্টিতে কি ছিল জানি না আমার পুরো পৃথিবীটা যেন এলো মেলো হয়ে গেল ।
সেদিন ঠিক কি করেছিলাম আমার আজও ঠিক মনে পড়ে না । কি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম ।
কেবল এই টুকু মনে আছে ওকে খুব গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম । আর পাগলের চুম খেয়েছিল ওকে ! বৃষ্টির জলে যেন দুজন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলাম ।

-কি হল ভিজবে না বৃষ্টিতে ?
-না ভিজবো না ।
-কেন ? চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
-তুমি ভিজো ।
-তুমি না ভিজলে আমি কিভাবে ভিজি ?
-সেদিন কিভাবে ভিজেছিলে ?
হঠাৎ আমার কন্ঠস্বর তীব্র হয়ে ওঠে ।
-কেন সেদিন ভিজেছিলে ?
আমি আবার জানতে চাই চিৎকার করে ।
কোন জবাব আসে না ।

নীলুকে তার কিছুদিন পরেই বিয়ে করে ফেলি । ওকে আর কিছু ভাল লাগতো না তখন । একটা পলক না দেখলে কেমন জানি অস্থির লাগতো । বিয়ের পর আমাদের জীবনটা আরো সুন্দর হয়ে ওঠে । দুজন দুজনকে একটা পলকের জন্য চোখের আড়াল করতাম না ।
একসাথে ভার্সিটি যেতাম একসাথে আসতাম । একসাথে খেতাম , একই প্লেটে খেতাম , গোসল করতাম একসাথে বিকেল হলে ওর সাথে ছাদে ছোটা ছুটি করতাম ।
ওর ছেলেমানুষী যেন আরো বেড়ে গেল । আগে বৃষ্টি হলেতো কেবল ও একা ভেজার জন্য লাফাতো তখন আমাকেও ভিজতে হত ওর সাথে ।
বৃষ্টির প্রতি এমন পাগলামো দেখে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম । বিরক্ত হওয়ার প্রধান কারন টা হল প্রত্যেকবার বৃষ্টি ভেজার পরই ওর জ্বর আসতো । মাঝে মাঝে তো জ্বর গায়ে নিয়েও বৃষ্টিতে নেমে পড়ত । তখন খুব চিৎকার চেচামেচি করতাম । কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হত না ।
ঐ দিন ঠিক একই কাজটা করেছিল । নীলুর গায়ে আগে থেকেই দুদিনের জ্বর ছিল । রাত তখন বারটা কি সাড়ে বারটা হবে । সারাদিন ক্লাস নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম । বিকেল বেলা আবার নীলুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম । ডাক্তার বৃষ্টিতে ভিজতে সাফ মানা করে দিয়েছে ।
তবুও নীলু আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলল
-এই বাইরে না খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
ওকে ধমক দিলাম । ডাক্তার কি বলেছে মনে করিয়ে দিলাম । চুপচাপ ঘুমাতে বলে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকাল বেলা বাথরুমে ভেজা কাপড় দেখে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তারমানে রাতের বেলা ও আমাকে না জানিয়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে । মেজাজটা খারাপ হল ।
নীলুকে বকার জন্য শোবার ঘরে গিয়ে দেখি নীলু প্রায় অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে আছে । ওর গায়ে আকাশ পাতাল জ্বর ।
কি করবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না । জ্বল পট্টি দিয়েও কাজ হচ্ছিল না ।
জ্বর কমছিল না কিছুতেই । উপায় না দেখে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম । স্ট্রাচারে যখন ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন অল্প ক্ষনের জন্য ওর হুস ফিরেছিল । আমি তখন ওর হাত ধরা । ও ফিসফিস করে বলল
-আমার উপর রাগ রেখো না কেমন ! তোমার কথা শুনিনি বলে আমার উপর রাগ রেখো না ।
-তোমার উপর কখনও রাগ করেছি আমি বল ?
-তুমি ভাল থেকো ।
আমি আর কথা বলতে পারলাম না । নার্সরা ওকে আইসিইউ এর মধ্যে নিয়ে গেল । আমি শেষ বারের মত ওর চোখে জল দেখতে পেলাম ।

- কই চল । বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে তো ?
-আমি ভিজবো না ।
-প্লিজ চল না !
আমি চুপ করে থাকি । কেন জানি আমার কান্না আসে !
-কই চুপ করে আছো কেন ? চল ! ঐ কালো পাঞ্জাবীটা পরো । কাবাডের বাম পাশের ড্রায়ারে আছে ।
ওকে কথা দিয়েছিলাম ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি না । ও ভাল থাকতে বলেছিল কিন্তু আমি ভালও থাকতে পারছি না ওকে ছাড়া ।
আমি কালো পাঞ্জাবীটা পরে নিই । বৃষ্টির ফোটা আমার মনে আজও কেমন একটা শিহরন জাগায় ! যেন ও এখনও আমার পাশে বৃষ্টিতে ভিজছে । ওর খুব পছন্দের বৃষ্টি ।